মোরগ কোলে বালিকা দুলালির কথা তখন গ্রামের লোকদের মনে পড়ে, দুলালির মৃত্যুর পর তৃতীয় দিনের বিকেলে এ রকম আর একবার তারা ঘোমটা দেয়া চন্দ্রভানকে মিয়াবাড়ির ভিটা থেকে নেমে এসে মোবারক আলির ভিটার দিকে হেঁটে যেতে দেখেছিল এবং সেদিন, তার একটু পর, আবুবকর সিদ্দিক ঢাকা রওনা হয়। গ্রামের লোকেরা বলে যে, আবুবকর সিদ্দিক এই সময়কার ঘটনাবলি ভুলতে পারে না বলে পরবর্তী সময়ে বড় ভাইয়ের প্রেমিকার আবক্ষমূর্তি গড়ে। তারা বলে যে, ঢাকা পৌঁছার পর সে খবরটা মোল্লা নাসিরউদ্দিনকে দেয় এবং পরদিন সকালে সে দেখে যে, চৌকিতে তার পাশে তার ভাই নাই; তখন সে খুব অস্পষ্ট ফোঁপানোর শব্দ শোনে এবং ঘাড় উঁচু করে নিচে মেঝেতে জায়নামাজের ওপর সেজদায় পড়ে থাকা মোল্লা নাসিরকে দেখে। সেদিন আর একটু পর তারা ট্রেন ধরে রওনা হয়, রাত দশটার সময় তারা সিরাজগঞ্জ শহরের বাহিরগোলা স্টেশনে পৌঁছয় এবং সিরাজগঞ্জে অপেক্ষা না করে মাঝরাতে এসে পৌঁছয় সুহাসিনীতে। পরদিন সকালে গ্রামের লোকেরা মোল্লা নাসিরউদ্দিনের আগমনের কথা জানতে পারে, জুম্মা ঘরে ফজরের নামাজ পড়ার পর তারা মোবারক আলির বাড়িতে গিয়ে ভিড় করে এবং দুলালিকে কবর দেয়ার শেষ পর্ব অবলোকন করে। গ্রামের লোকেরা বলে যে, সেদিন সকালে দুলালির দাফনকর্মে শরিক হওয়ার মতোই তাদের প্রবল আগ্রহ হয় মোল্লা নাসিরকে দেখার; কারণ, তারা বলে যে, ঘটনার প্রকৃতি তাদেরকে বড়ই উত্তেজিত করে তোলে, তারা বুঝে উঠতে পারে না, যে পুরুষকে দেখতে পাওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করে একজন নারী মরে যায়, সেই পুরুষটি যখন সব জেনেশুনে সেই নারীর লাশের সামনে এসে দাঁড়ায় তখন সে কেমন ব্যবহার করে। মোবারক আলির বাড়িতে গ্রামের লোকেরা সেদিন মোল্লা নাসিরউদ্দিনকে একটি নিচু টুলে বসে থাকতে দেখে এবং তার মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের একধরনের হতাশা হয়, তারা পরিষ্কার বুঝতে পারে যে, সে নিজেকে ধরে রেখেছে; সকালের ম্লান আলোয় তার চেহারায় কেমন নির্লিপ্ততা লেগে থাকে, সে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলে না, এমনকি গ্রামের লোকেরা যখন বলে, কেমন আছ বাপু, তখনো সে নিরুত্তর থাকে। তাকে দেখে গ্রামের লোকেরা বুঝতে পারে না সে কতটুকু বিষণ্ণ, তবে তাদের মনে হয় যে, সে খুব ক্লান্ত হয়ে আছে। তখন নইমুদ্দিন সরকারকে পুনরায় ধরে আনা হয় এবং তার ইমামতিতে মোবারক আলির উঠোনে পুনরায় দুলালির জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন, মৃত্যুর কত দিন পর গ্রামের লোকেরা তা আর বলতে পারে না, মৃত বালিকার লাশ কবরের আশ্রয়ে নামিয়ে দেয়া হয়। গ্রামের লোকেরা বলে যে, এই সময় তারা মোল্লা নাসিরের সেই সব আচরণ দেখতে পায়, যা দেখবে বলে তারা প্রথম থেকেই আশা করেছিল; গ্রামের লোকেরা যখন দুলালির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যস্ত তখন সে নির্লিপ্তের মতো টুলের ওপর চুপ করে বসে থাকে, জানাজার লাইনে দাঁড়ায় না, কবরে লাশ নামানোর পর বাশ এবং তালাই দিয়ে কবর ঢেকে দিয়ে গ্রামের লোকেরা যখন কবরের গর্তে মাটি ফেলতে থাকে তখন তারা তাকে, ক্যা বাপু আইসো, দুই মুঠ মাটি দেও, বলে ডাকে; কিন্তু সে তাদের কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, বসে থাকা টুল থেকে উঠে গিয়ে কবরে মাটি ফেলার কাজে হাত লাগায় না। সুহাসিনীর লোকেরা বলে যে, দুলালির জন্য মোল্লা নাসিরউদ্দিন আর জীবনে বিয়ে করে না এবং এই ঘটনায় তারা মোটেই অবাক হয় না; কারণ, দুলালির দাফনের দিনই তারা বুঝতে পেরেছিল, মোল্লা নাসিরউদ্দিনের মর্মের কত গভীরে প্রবেশ করেছিল এই বালিকার স্মৃতি এবং মৃত্যুর বেদনা। সেদিন দুলালির দাফন সম্পন্ন হয়ে গেলে গ্রামের লোকেরা ফিরে যাওয়ার পরও মোল্লা নাসিরউদ্দিন বসে থাকে, তখন আবুবকর সিদ্দিক তার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁধের ওপর হাত রাখে এবং তার দিকে নীরবে তাকানো মোল্লা নাসিরকে বলে, চল ম্যাবাই, এহন বাড়িত যাই; আবুবকর সিদ্দিকের এই কথা শুনে একটি সুবোধ শিশুর মতো সে উঠে দাঁড়ায় এবং তার সঙ্গে মোবারক আলির ভিটা ত্যাগ করে আসে। সুহাসিনীর লোকেরা বলে যে, মোল্লা নাসিরউদ্দিনের বিপর্যস্ততার বিষয়ে তারা বুঝতে পেরেছিল, তবু পরদিন সকালে পুরনো অভ্যাসবশত পাঁচজন কৃষক পাঁচটি মোরগের বাচ্চা নিয়ে মিয়াবাড়ির ভিটায় গিয়ে ওঠে, কিন্তু মোল্লা নাসিরউদ্দিন বাড়ির ভেতর থেকে বের হয় না এবং পাঁচটি মোরগের মুক্ষ অছেদিত থেকে যায়; বস্তুত এর পর মোল্লা নাসিরউদ্দিন সুহাসিনীতে আর কোনো দিন মোরগের বিচি কেটে বার করে না। গ্রামের লোকেরা বলে যে, দুলালির মৃত্যুতে মোল্লা নাসিরের অন্তর্গত ক্ষতির ভয়াবহতার স্বরূপ প্রকাশিত হয় যে দিন সে ঢাকা রওনা হয়; সে তিন দিন গ্রামে থাকে, তৃতীয় দিন দুপুরের পর তার সুটকেস গুছিয়ে নিয়ে রওনা হয় কিন্তু মিয়াবাড়ির ভিটা থেকে নেমে সিরাজগঞ্জের রাস্তা ধরে মোবারক আলির বাড়ির দিকে যায়। মোবারক আলির ভিটার পেছনে উত্তর কিনারায় জামগাছের নিচে দুলালির কাঁচা কবরের সামনে সে এসে দাঁড়ায় এবং দুহাত তুলে কবর জিয়ারত করতে থাকে এবং তখন, গ্রামের লোকেরা বলে যে, তার নিজের ওপর ধরে রাখা শেষ নিয়ন্ত্রণটুকু খসে যায়, তার অস্তিত্ব, তার অস্তিত্বের ভেতর থেকে মুক্ত হয়ে এক ঘোরের আবরণে ঢাকা পড়ে; তারা বলে যে, মোবারক আলির পরিবারের লোকেরা দুপুরবেলা বাক্স হাতে মোল্লা নাসিরউদ্দিনকে দুলালির কবরের দিকে যেতে দেখে এবং একসময় তারা তার কথা ভুলে যায়, কিন্তু অনেকক্ষণ পর সূর্য যখন পশ্চিম দিকে গড়াতে শুরু করে মোবারক আলির বাড়ির লোকেরা মোল্লা নাসিরকে তখনো আমগাছের ঘন হয়ে আসা ছায়ার ভেতর, চোখ বুজে আকাশের দিকে দুহাত মেলে ধরে দুলালির কবরের পাশে দাঁড়ানো দেখতে পায়; মোবারক আলির বাড়ির লোকেরা তখন বিচলিত হয়, কিন্তু বুঝতে পারে না তারা কি করবে। এই কথা যখন গ্রামে প্রচারিত হয় তখন দুলালির কবর এবং জিয়ারতরত মোল্লা নাসিরউদ্দিনকে ঘিরে একটি জনতা গড়ে ওঠে এবং তারাও হাত তুলে জামগাছের ছায়ার ভেতর দুলালির কবর জিয়ারত করায় দাড়িয়ে যায়। সুহাসিনীর লোকেরা বলে যে, সেদিন তারা এই বিষয়টিও বুঝতে পারে যে, এই মেয়েটির মৃত্যুতে তাদের অস্তিত্বের ভেতর তারা নিজেরাও কতটা বিপর্যস্ত হয়েছিল; কারণ, তারা বলে যে, মোল্লা নাসিরের সঙ্গে জামগাছের ছায়ায় তারাও সেদিন এক ঘোরের ভেতর ঢুকে যায়। এই খবর যখন মিয়াবাড়িতে পৌঁছয় তখন গ্রামের পশ্চিম দিকে গাছপালার মাথায় হেলে পড়া সূর্য লাল হয়ে উঠেছে এবং তখন আবুবকর সিদ্দিক মোবারক আলির ভিটায় গিয়ে দেখে যে, অপরাহ্নের আধো-অন্ধকারের ভেতর দুলালির কবরকে ঘিরে একদল লোক তাদের দুই করতল আকাশের দিকে উঁচু এবং উন্মুক্ত করে ধরে আছে। সে যখন এই ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করে মোল্লা নাসিরউদ্দিনের কাঁধের ওপর আলতো করে তার কর স্থাপন করে, তখন মনে হয় যেন এক স্বপ্নের ভেতর থেকে জেগে উঠে সে চোখ খুলে তাকায় এবং তখন গভীর মমতায় আবুবকর সিদ্দিকের গলার স্বর ভারি হয়ে আসে; সে বলে, চল বাড়িত যাই ম্যাবাই, আইজ আর তর যাওয়া হইব না; এবং তখন মোল্লা নাসিরউদ্দিনের পেছনে সুহাসিনীর লোকেরা দুলালির কবরের পাশ থেকে উন্মুক্ত প্রান্তরের ওপর বের হয়ে আসে। সেদিন গ্রামের লোকেরা দেখে যে, আবুবকর সিদ্দিক কি এক অসীম মমতায় বড় ভাই নাসিরউদ্দিনকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখে ধীরপায়ে মিয়াবাড়ির দিকে নিয়ে যায় এবং তারা বলে যে, সে নাসিরউদ্দিনের বেদনার কথা ভুলতে পারে না।
একাত্তর সনে সুহাসিনীর পাশ দিয়ে মিলিটারি চলে যাওয়ার এক দিন পর, সকালবেলা আইজ্জল প্রামাণিকের বাইরের কাচারিঘরে সে যখন আলেকজানের মুখের দিকে তাকায়, তখন সে চেহারার ভেতর চোখ রেখে তার মনে হয়, এ রকম বেদনা কি ছিল দুলালির! আলেকজানের মুখের দিকে সেদিন তাকিয়ে তার নিজের যে কষ্ট হয়, সেই কষ্টের ভেতর মোল্লা নাসিরউদ্দিনের কথা তার মনে পড়ে; কারণ, আলেকজানের মুখের দিকে তাকিয়ে, কেবল সেদিন, সেই মুহূর্তে, সে অনুধাবন করতে পারে যে, নারীর জন্য পুরুষ মানুষের যে বেদনা হয়, তার বর্ণ এবং প্রকৃতি ব্যাখ্যাযযাগ্য হয় না; তখন তার সেই বেদনার ভেতর দাঁড়িয়ে সে মোল্লা নাসিরউদ্দিনের বহুদিন পূর্বেকার আচরণের অর্থ মনে হয় যেন বুঝতে পারে। সে-বছর শেষ বুধবার সে যখন যুদ্ধ শেষে সুহাসিনীতে ফেরে তখন মিয়াবাড়ির পেছনের ঘাটে নৌকো থেকে নেমে আলেকজানকে সমাগত জনতার ভেতর দেখতে পেয়ে সে চিৎকার করে ওঠে, কেমন আছিস তুই, তখন আলেকজানের গালের ওপর দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে নামে এবং তারপর আবুবকর সিদ্দিক এমন আচরণ শুরু করে, যার ব্যাখ্যা গ্রামের লোকেরা প্রথমে বুঝে উঠতে পারে না; গ্রামের লোকেরা বলে যে, আবুবকর সিদ্দিকের স্মৃতির ভেতর হেমন্তের দুপুরে সরষে ক্ষেতের ওপর এক চপলা বালিকার নৃত্যের মুদ্রা এবং হাসির ধ্বনি রক্ষিত ছিল; পরবর্তী সময়ে আলেকজানের সঙ্গে তার যখন দেখা হয় তার মনে হয় যে, এই মুখ সুন্দরের চাইতে বেশি কিছু, কিন্তু তখন আলেকজানের বিষাদ এবং চোখের পানি ক্রমাগতভাবে সরষেক্ষেতের ভেতরকার সেই চিত্রটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়; গ্রামের লোকেরা বলে যে, তখন কোনো এক সময়, হয়তো যুদ্ধে যাওয়ার আগে অথবা যুদ্ধ থেকে ফেরার পর, সে এই চিত্রটি পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়; এবং সে চমকপ্রদ সব আচরণ করতে শুরু করে, ঢাকায় তার কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে সে গ্রামে থেকে যায় এবং সুহাসিনীর প্রাইমারি স্কুলের মাষ্টার হয়। গ্রামের লোকেরা বলে যে, আবুবকর সিদ্দিক সুহাসিনীতে সিদ্দিক মাষ্টার বলে পরিচিত হয়ে উঠলেও সে আসলে ছিল চিত্রকর, সে বাংলা ক্লাসে ক খ পড়াতে গিয়ে কোকিল এবং খরগোশ আঁকা শেখাতে থাকে এবং এর পরিণতিতে সুহাসিনী এবং এর আশপাশের গ্রামের বাড়িঘরের চেহারা বদলে যেতে থাকে। ঘরের বেড়া এবং মাটির ভিটা, কাঠকয়লা এবং গোলানো চুন দিয়ে শিশুদের আঁকা মাছ, পাখি আর মানুষের চিত্রে ভরে ওঠে এবং তখন একদিন, আর-এক হেমন্তের বিকেলে, চন্দ্রভান গায়ে একটা সাদা চাদর জড়িয়ে, ফৈজুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের উত্তর দিকে হেঁটে যায়। গ্রামের লোকেরা বলে যে, চন্দ্রভানকে দেখে যদিও তারা বুঝতে পেরেছিল সে কোথায় যায়, তবুও এ বিষয়ে তাদের একধরনের বিভ্রান্তি হয়, কারণ, সবকিছু জানার পরেও আবুবকর সিদ্দিকের আচরণই তাদেরকে বিভ্রান্ত করে; তারা বলে যে, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর একদিন সকালে আইজ্জল প্রামাণিকের বাড়িতে তার আলেকজানের সঙ্গে দেখা হয় এবং তখন তার সঙ্গে একটিও বাক্য বিনিময় না করে সে তাদের বাড়ি ত্যাগ করে আসে এবং তারপর আর একটি বারের জন্যও তাকে আইজ্জল প্রামাণিকের বাড়িতে দেখা যায় না। সে একটি বছর গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, প্রাইমারি স্কুলে মাষ্টারি করে, বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখায়, আবুবকর সিদ্দিক থেকে সুহাসিনীতে সিদ্দিক মাষ্টার হয়ে ওঠে, কিন্তু এক বারের জন্যও আর এই নারীকে দেখে না। কিন্তু গ্রামের লোকের সকল বিভ্রান্তি এবং সংশয় দ্রুত কাটে, কারণ, আইজ্জল প্রামাণিকের বাড়িতে চন্দ্রভানের সফরের পর তারা সব জানতে পারে এবং তারা তখন বলে যে, তারা প্রথম থেকেই ব্যাপারটা জানত, তা না হলে আবুবকর সিদ্দিকের গ্রামে থেকে যাওয়ার কোনো কারণ তারা দেখে না; তারা শুধু বুঝতে পারে নাই সে এক বছরের জন্য এ রকম মুখ দেখাদেখি বন্ধ কেন রেখেছিল। গ্রামের লোকেরা বলে যে, কারণ যা-ই হোক, সেই ক্ষণটি আসে এবং চন্দ্রভান বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়; তারা বলে যে, এক বছর না দেখলেও, একদিন আলেকজানের চার বছরের মেয়ে জয়তুনের কারণে আবুবকর সিদ্দিকের এই বিরহপ্রবণতা দূর হয় এবং তার মনে হয় যে, আলেকজানকে দেখা তার বড় প্রয়োজন। গ্রামের লোকেরা পরে বলে যে, হেমন্তের যে বিকেলে চন্দ্রভান তার ছেলে সিদ্দিক মাষ্টারের সঙ্গে আলেকজানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আইজ্জল প্রামাণিকের বাড়িতে যায়, তার কয়েক দিন আগে ঘটনাটি ঘটে; ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষায় আবুবকর সিদ্দিক বাচ্চাদেরকে যার-যা-খুশি আঁকতে দেয় এবং এই ক্লাসে জয়তুনের আঁকা ছবিটা দেখে আবুকর সিদ্দিকের অজানা সংশয় দূর হয়। সেদিন ক্লাসে ছেলেমেয়েরা তাদের খাতার পাতায় গাছ, পাখি আর মানুষ আঁকে; জয়তুন আঁকে একটি মুখ, চাকার মতো বড় এবং গোল, একটি নারী মুখের মাথার ওপর থেকে ঝাটার শলার মতো সরল এবং শক্ত চুল ছড়িয়ে আছে এবং চোখের গহ্বর থেকে চালের দানার মতো গুঁড়ো গুড়ো অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আবুবকর সিদ্দিক যখন তার কাছে গিয়ে একটু ঝুকে তার ছবি আঁকা দেখে, বালিকাটি একমুহূর্ত থেমে মুখটা তার দিকে তুলে বলে, এইট্যা আমার মা; এই কথা শুনে আবুবকর সিদ্দিকের হৃদয়ে আলোর তরঙ্গের মতো ঢেউ প্রবাহিত হয় এবং সে যখন জানতে চায় ছবিটার চোখের নিচে এগুলো কী, তখন জয়তুন ছবির চুলের ওপর পেন্সিল ঘষে গাঢ় করে তুলতে তুলতে বলে, পানি, এইগুলান পানি, মা খালি কান্দে, এবং এই কথা শুনে আবুবকর সিদ্দিকের হৃদয়ে প্রান্তরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিষণ্ণ বাতাসের মতো হাহাকার জেগে ওঠে। সেদিন আবুবকর সিদ্দিক জয়তুনের আঁকা ছবিটি খাতা থেকে ছিঁড়ে নিয়ে বাড়ি ফেরে এবং দুদিন পর গ্রামের লোকেরা জানতে পারে যে, আলেকজানের সঙ্গে সিদ্দিক মাষ্টারের বিয়ে এবং তখন সুহাসিনী এক উৎসবে মেতে ওঠে। সেদিন বিকেলে পাঙ্গাসির ইমাম সাহেবকে ডেকে আনা হয় বিয়ে পড়ানোর জন্য এবং আইজ্জল প্রমাণিকের বাড়ির ভেতরে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো একটি ঘরে এক হাজার এক টাকার দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে পড়ানোর পর উঠোন ভর্তি কৃষকেরা ইমাম সাহেবের সঙ্গে হাত তুলে মোনাজাত করে, তারপর শেষে একটা করে জিলাপি খেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। গ্রামের লোকেরা বলে যে, মিয়াবাড়িতে নিয়ে আসার পর সেদিন রাতে আলেকজান লম্বা করে ঘোমটা টেনে, দুই বাহুর ভেতর জয়তুনকে নিয়ে তার জীবনের দ্বিতীয় বাসরে প্রবেশ করে, তখন আবুবকর সিদ্দিক এক বছর পর এই নারীর মুখের দিকে তাকায়, এবং এক বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে সুহাসিনীর মাটিতে পা রেখে আলেকজানকে যে কথা জিজ্ঞেস করেছিল, পুনরায় সেই কথা জিজ্ঞেস করে, কেমন আছিস আলেকজান? গ্রামের লোকেরা পরে এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করে, তারা বলে যে, আবুবকর সিদ্দিকের কণ্ঠের ধ্বনি শুনে আলেকজানের নমিত মুখ আবুবকর সিদ্দিকের দিকে উথিত হয়, তার ঘোমটার আঁচল সরে যায় এবং তখন কেরোসিনের হারিকেনের আলোয় পূর্ণিমার চাঁদের মতো ভরা এবং মধুরঙের মুখটি স্বর্গীয় বিভায় প্রকাশিত হয়। এই সময় তার চেহারায় কোনো বিষণ্ণতা অথবা আনন্দ খেলা করে কি না আবুবকর সিদ্দিক তা বুঝতে পারে না, তবে এই সময়, এক বছর আগের মতোই তার বাহুর ভেতর জড়ানো ছিল জয়তুন এবং আবুবকর সিদ্দিকের প্রশ্ন শুনে হারিকেনের আলোয় বিকশিত তার মুখে অশ্রুধারা নেমে আসে। আলেকজানের চোখে বিয়ের রাতে পানি দেখে তার মন খারাপ হয়ে যায়, সে বুঝতে পারে না, আলেকজান কেন এই দিনেও কাঁদে; তখন সে উঠে গিয়ে তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে জয়তুনের আঁকা ছবিটা বের করে এবং ভাঁজ খুলে আলেকজানের সামনে মেলে ধরে বলে, মা খালি কান্দে; গ্রামের লোকেরা বলে যে, তখন আবুবকর সিদ্দিকের অপেক্ষার শেষ হয়, কাকতাড়ুয়ার মতো এই ছবিটার দিকে তাকিয়ে চোখের চিকচিকে অশ্রুর ভেতর আলেকজানের মুখে একটি নীরব হাসি ছড়িয়ে পড়ে এবং আবুবকর সিদ্দিক তার বাসর-রাতে এক বাহুর ভেতর আলেকজান এবং অন্য বাহুর ভেতর জয়তুনকে নিয়ে ঘুমায়। পরবর্তী সময়ে, ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা রাতের পরদিন গ্রামের লোকেরা ঘরের মেঝের ওপর সিদ্দিক মাষ্টার এবং তার দুই দিকে দুই বাহুর ভেতর আলেকজান এবং তাদের ছেলে পরাগের পুড়ে যাওয়া দেহ দেখতে পায়।
পূর্ণিমায় হত্যাকান্ত্রে পরদিন গ্রামের লোকেরা সিদ্দিক মাষ্টারসহ মফিজুদ্দিন এবং তার পরিবারের অন্য সকলকে একটি লম্বা গণকবরে দাফন করে; শুধুমাত্র মোল্লা নাসিরউদ্দিনের কবরটি বিচ্ছিন্ন একা পড়ে থাকে, যতদিন পর্যন্ত না সুহাসিনীর লোকেরা তার কবরের পাশে মৃত দুলালির দ্বিতীয় কবর রচনা করে। সুহাসিনীর লোকেরা বলে যে, মফিজুদ্দিন জীবনে কখনো স্বীকার না করলেও মৃত দুলালির কারণে তার হৃদয়ে এক ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং মোল্লা নাসিরউদ্দিন সংসারবিবাগী হয়ে গেলে এই ক্ষত চিরস্থায়ী তার কবরটির বিষয়ে সে বিশেষ সচেতন এবং স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। গ্রামের লোকেরা বলে যে, দুলালির মৃত্যুর কয়েক বছর পর যখন মোবারক আলি এবং তারপর ছমিরুন্নেছা মারা যায় তখন দুলালির ভাইয়েরা এই গ্রাম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সিরাজগঞ্জের বাহিরগোলা স্টেশনের কাছে শিয়ালকোল গ্রামে জায়গা কিনে সুহাসিনীর ঘর ভেঙে নিয়ে গিয়ে সেখানে ওঠায়। সে সময় মফিজুদ্দিন মিয়া যখন কথাটা শোনে, সে খুব বিচলিত হয়ে পড়ে; তখন সে মোবারক আলির বড় ছেলে আব্দুল জলিলকে একদিন ডেকে পাঠায় এবং সে এলে পরে মিয়াবাড়ির বৈঠকখানায় বসে তাদের ভিটা কেনার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। গ্রামের লোকেরা বলে যে, অন্য ক্ষেত্রে যা-ই হোক, এ ক্ষেত্রে মফিজুদ্দিন মিয়া মোবারক আলির বাড়ির ভিটা কিনতে চায় দুলালির কবরটার জন্যই; কিন্তু আব্দুল জলিল তা বুঝতে পারে না, তার বরং অতীতে মফিজুদ্দিনের সব আচরণের কথা মনে পড়ে এবং সে পরিষ্কার বলে দেয় যে, তাদের বাপ-মায়ের কবরসহ এই ভিটা তারা কোনো অবস্থায়ই মফিজুদ্দিনের কাছে বিক্রি করবে না। গ্রামের লোকেরা বলে যে, মফিজুদ্দিন তখন তার পুরনো পরিচয়ে প্রকাশিত হয় এবং আব্দুল জলিলকে বলে যে, জোলা মোবারক আলির এই ভিটা যদি তারা বেচতে চায় তবে তা তার কাছেই বেচতে হবে, এই গ্রামের অথবা অন্য কোনো গ্রামের কেউ এই ভিটা কিনবে না। সুহাসিনীর লোকেরা বলে যে, মোবারক আলির এই ভিটা কিনতে পারা সুরধ্বনির খাদের জন্য খুবই জরুরি ছিল, কিন্তু মফিজুদ্দিনের কারণে এই জমি তাদের কেনা হয় না, এবং মফিজুদ্দিন যেমন বলেছিল এই ভিটা তেমনি অবিক্রীত পড়ে থাকে; তখন কয়েক বছর পর মোবারক আলির ছেলেরা বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে এবং মফিজুদ্দিনের কাছে তাদের জঙ্গলাকীর্ণ পোড়ো ভিটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে। গ্রামের লোকেরা বলে যে, দুলালির কবর সংরক্ষণ এবং রায়গঞ্জ থেকে আসা রাস্তাকে সুরধ্বনি গ্রামের দিকে যেতে না দেয়া, এর ভেতর মফিজুদ্দিনের কোন ইচ্ছেটা ছিল আসল, তা তারা বলতে পারে না; তবে তাদের মনে হয় যে, মফিজুদ্দিন এই সময় এই দুটো বিষয়ই নিশ্চিত করতে চায় এবং তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সে তা করে। তার মৃত্যুর পর ইদ্রিস খা যখন জেল থেকে বের হয়ে গ্রামে ফেরে তখন গ্রামে প্রথম যে কাজগুলোয় সে হাত দেয়, তার একটি হচ্ছে রায়গঞ্জ থেকে আসা রাস্তাটিকে সুরধ্বনি গ্রাম পর্যন্ত নির্মাণ করা এবং তখন, একদিন সুহাসিনীর লোকেরা যখন মোবারক আলির ভিটার ওপরকার কবর ভেঙে রাস্তা তৈরি করার কথা শোনে, তাদের দুলালির কথা মনে পড়ে যায়।
গ্রামের লোকেরা যখন শোনে যে, একদল মাটিকাটা কামলা গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় মাটি কেটে খাল ভরাট করে রাস্তা বানাতে শুরু করেছে, তারা প্রথমে শুধু একবার ভাবে যে, এতদিন পর এই রাস্তা এবার তাহলে সুরধ্বনি গ্রামে যাবে, তারপর তারা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং বিষয়টি ভুলে যায়। তখন একদিন দুপুরের পর তারা জানতে পারে যে, নির্মীয়মাণ এই রাস্তা মোবারক আলির ভিটার ওপর উঠে এসেছে এবং মাটি কাটা কামলারা ভিটার ওপরকার ছটি কাঁচা কবর ভাঙতে শুরু করেছে; তখন, সেই মুহূর্তে, তাদের বহুদিন পূর্বে মৃত বালিকা দুলালির কথা মনে পড়ে এবং তারা তাদের কাজ ফেলে দ্রুত মোবারক আলির ভিটায় গিয়ে হাজির হয়। তারা যখন মোবারক আলির ভিটায় পৌঁছয়, তারা দেখতে পায় যে, মাটিকাটা কামলারা ইতোমধ্যে পাঁচটি কবর খুঁড়ে হাড়গোড় বের করে এক পাশে জড়ো করেছে এবং সর্ব উত্তরের ছয় নম্বর কবরটিও তারা মাটি খুঁড়ে আলগা করেছে। গ্রামের লোকেরা তারা বলে যে, তারা ঠিক সময়ে গিয়ে হাজির হয়েছিল, ষষ্ঠ কবরটি দেখে তারা চিনতে পারে যে, এটা দুলালির কবর এবং তখন তারা মাটি কাটা কামলাদের নিবৃত্ত করে, এবং তখন তাদের মোল্লা নাসিরউদ্দিন এবং তার নিঃসঙ্গ কবরটির কথা স্মরণ হয়। সুহাসিনীর কৃষকেরা তখন দুটো লম্বা বাঁশের ওপর একটা তালাই ফেলে খাটিয়া বানায় এবং কলাপাতা কেটে এনে তার ওপর পাতে, তারপর তারা কবরের খুঁড়ে তোলা আলগা মাটি সরিয়ে দুলালির অস্থি ও করোটি সংগ্রহ করে কলাপাতার ওপর রাখে। তখন অন্য কবরের হাড়গুলো একটি গর্ত করে পুঁতে ফেলার পর দুলালির হাড়ের ওপর একটি গামছা বিছিয়ে দিয়ে গ্রামের লোকেরা এই খাটিয়া কাঁধে তুলে নেয় এবং গ্রামের রাস্তা ও ফসলের মাঠের ওপর দিয়ে মিয়াবাড়ির ভিটার দিকে যায়। সেদিন মোল্লা নাসিরউদ্দিনের কবরের পাশে দুলালির শেষ অস্থির কবর রচনা করার পর গ্রামের লোকেরা যখন শেষ বিকেলের আলোয় ভিটার ওপর থেকে নেমে আসে, তারা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখে যে, মিয়াবাড়ির ভিটার পাশ দিয়ে পুব আকাশে এক বিরাট পূর্ণিমার চাঁদ সুহাসিনীর বাড়িঘর, পথ এবং ফসলের মাঠের দিকে তাকিয়ে জেগে উঠেছে।
গ্রামের লোকেরা তখন এই পূর্ণিমার কথা বলে। তারা বলে যে, দুলালির অস্থিসমূহ মোল্লা নাসিরউদ্দিনের কবরের পাশে নূতন এক কবরে দাফন করার পর তারা যখন যার যার বাড়িতে ফেরে, সেদিন রাতে তাদের ভিটার বাড়িঘর এবং গাছপালার ওপর অঝোর ধারায় জ্যোৎস্না ঝরে পড়ে। তারা বলে যে, তারা যখন তাদের হাত শোকে তখন তারা তাদের হাতে দুলালির কবরের মাটির সোঁদা গন্ধ পায় এবং দেখে যে, গ্রামের মাথার ওপর দিয়ে, নরম এবং স্মিতমুখী এক বালিকার ভরা মুখের মতো এই চাদ গড়িয়ে যায়। এই চাঁদের কথা যখন গ্রামের লোকেরা বলে তখন তারা তোরাপ আলির কথা শুনতে পায়, সে পুনরায় চাদ সম্পর্কে বহুকাল আগে অর্জিত তার বিদ্যার কথা বলে। সে বলে যে, তার ওস্তাদ তাকে চাঁদের রহস্যের কথা বলেছিল, ওস্তাদ আমাক কইছিল যে, জীবনে যদি চান্দের পাহাড় বড় হয়্যা ওঠে তাইলে তা ভালো এবং খারাপ, দুই-ই, চান্দের আলোর মইদে গেলে কেমন নেশার নাহাল নাগে, বোঝা যায় না, ঘুমায়া, না জাইগা আছি; যা-ই দেহি তাই মনে হয় ঠিক কিন্তু আবার তা ঠিকও না; ভোরাপ আলি বলে যে, দুলালির জীর্ণ হাড় সংগ্রহ এবং সেই হাড়ের নূতন কবর রচনা করার পর, সেদিন রাতে সে তার বাড়ির ভিটার এক পাশে পেশাব করতে বসে, তখন সে চাঁদটিকে পুনরায় দেখে এবং তার আলোয় সে প্লাবিত হয়ে যায়। সে বলে, আমার এমন নাগে এই চান দেইখ্যা, আমি কইব্যার পারি না ক্যামন নাগে; তহন, আমি যহন খাড়া হই, মনে হয় যানি চান্দের আলো না, আমি পানির মইদ্দে ভাইসা উইঠল্যাম; আমার হাতপাউ, সারা শরীল হালকা হয়া যায়; এমন নেশার নাহাল নাগে যে, তহন আমি আমার দোস্তো বাহের তালুকদারের নাম ধইর্যা চিকুর দিয়্যা উঠি, ওই বাহের, বাহের রে; কেন যে এই রহম চিকুর দেই, কইবার পারি না, এমনি দেই; ছাওয়াল-পাওয়াল যেমন বৃষ্টি দেইখলে নাপ পাড়ে, আমারও তেমনি ওই চান্দের আলোয় চিক্কর দিব্যার ইচ্ছা করে, আর আমি চিকুর দিয়া উঠি; এবং সে বলে যে, এরপর সে ঘরে ফিরে আসে। গ্রামের লোকেরা যখন তোরাপের কথা শোনে, তারা স্মরণ করতে পারে না সেদিন তারা তার চিক্কার শুনেছিল কি না, তবে তারা বলে যে, সেদিন নেশা লাগানোর মতো জ্যোৎস্না ছিল সুহাসিনীতে।
এখানে যে ৬ টা চ্যাপ্টার এ সাজানো হয়েছে, এগুলো কি বইয়েরই চ্যাপ্টার নাকি এখানে পড়ার সুবিধার জন্য ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে ?
উনার বেশীরভাগ লেখাই একটানা লেখা। আমরা পড়ার বা পোস্ট করার সুবিধার জন্য ভাগে ভাগ করে নিয়েছি।
শহীদুল জহিরের বয়ানের মধ্যে দিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে। তিনি হৃদয়তন্ত্রের নীরব বীণা বাদক।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের, টিম ইবাংলা-লাইব্রেরী। শহীদুল জহিরকে চিনতাম না, কিন্তু আপনারা তার অমৃত লেখনীর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ফ্রীতে।। অনেক অনেক ধন্যবাদ