মালাউনটার আসার কথা ছিলো
মালাউনটার আসার কথা ছিলো, সে এলো না; কাল ওর দোকান আর চাউল কল কীভাবে পুড়বে, সে দৃশ্য আমি দেখতে থাকি।
এমন সময় দেখি মালাউনটা কথা রেখেছে, দশটার দিকে সে এসেছে, সঙ্গে তার মেয়ে কণকলতা।
কণকলতাকে আমি প্ৰথমে চিনতে পারি নি, হরিপদর সঙ্গে বোরখাপরা একটি মেয়েলোক দেখে চমকে উঠেছিলাম। হরিপদ পাল আর মূর্তিটুর্তি বানায় না, ওতে আর পয়সা নেই, দুর্গাটুর্গা বানালেই তো রাতে গিয়ে আমার জিহাদিরা ভেঙে দেয়। বাজারে ওর বড়ো দুটি দোকান রয়েছে, একটি চাউল কলও আছে; আমি জানি হুণ্ডি করে সে টাকা পাঠায় চন্দননগরে, আমাকেও বেশ দেয়; না দিয়ে ওর উপায় নেই। তাই ভালো আছে।
হরিপদীর বিধবা মেয়েটির ওপরই আমার প্রথম চোখ পড়েছিলো।
তার ওপর সবারই চোখ পড়ে, যেমন রাস্তার পাশে কালীমূর্তির ওপর চোখ না পড়ে পারে না। মোটাগোটা, দারুণ মাজা, দারুণ দুধ, দারুণ ঠোঁটযুক্ত শক্ত কালো ঝকঝকে তাজা মেয়ে; একটা মারাত্মক কালী, কাজেও কালীর মতোই, জিভ দিয়ে বুকের সব রক্ত শুষে নিতে পারে; বাইশ-তেইশ বছর হবে। ওকে দেখে আমার মনে হয় ও যদি রাস্তার পাশে কালীমন্দিরে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, তাহলে ও আসল কালীকেও ছাড়িয়ে যেতো; তখন পুজোরীর সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যেতো। তবে আমরা কালীমন্দিরগুলো চুরমার করে দিয়েছি, দেশে কোনো মন্দির থাকবে না; তাই ও মন্দিরে না দাঁড়িয়ে চাউল কল দেখাশোনা করছে। দেবীরা এখন নানা পেশায় নিয়োজিত।
একদিন হরিপদার চাউল কলেই ওকে প্রথম দেখি।
হরিপদ নাম রাখতে শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাহেবের মতোই প্ৰতিভাবান, ফুল পুষ্প মালা লতা ছাড়া আর কিছু সে বোঝে না; এই মেয়েটার নাম রেখেছে সে বকুলমালা, ওকে দেখলেই ওর গায়ে কালো বকুলের গন্ধ পাওয়া যায়। আমি কখনো কৃষ্ণবকুল দেখি নি, কিন্তু বকুলমালা হচ্ছে কৃষ্ণ বকুলের মালা, হয়তো আফ্রিকায় বা দক্ষিণ ইন্ডিয়ায় ফোটে। বকুলমালা বিএ পাশ, যেটা আমি সাম্যবাদে সর্বাহারায় যোগ দেয়ার জন্যে করতে পারি নি, একটা মুর্খ বুড়োর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো, সেটা ওর ওপর উঠতে পেরেছিলো কি না জানি না, না পারারই কথা, ওর ওপরে উঠতে হলে হিলারি তেনজিং দরকার, তবে বছরখানেকের মধ্যেই চিতায় ওঠে।
বকুলমালা এখন রক্তজবার মতো লাল টকটকে শাড়ি পরে চাউল কলি দেখাশোনা করে; রক্তজবার লাল আর ওর কালীর কালো মিলে এক রোজকেয়ামতের রঙ সৃষ্টি হয়; কলের ভেতরে একপাশে তার ছোটো অফিস ঘর, বেশ আছে মনে হয়। ওকে ঠিক রাখার জন্যে, সুখে রাখার জন্যে একটা কলই দরকার, হরিপদ তা বুঝতে পেরেছে।
আমি ঢুকতেই সে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আচ্ছালামুয়ালাইকুম, আসেন হুজুর।’
আমি বলি, ‘ওয়ালাইকুমছালাম।‘
বকুলমালা বলে, ‘হুজুর, আপনে একদিন আসবেন, এইটা আমি জানতাম; কত দিন আপনের দিকে চাইয়া রাইছি, একবারও আপনে চান নাই। আপনে কি সব সোম আল্লার দিকেই চাইয়া রন নি?’
আমি বলি, ‘তুমি আমাকে চেনো না কি? আর এতো সুন্দর ছালাম দিতে কখন শিখলে?’
বকুলমালা বলে, ‘আপনেরে চিনিব না, কী যে কন। ভগবানরে না চিনতে পারি, আপনেরে না চিন্না পারি না।’
আমি বলি, ‘কেনো?’
বকুলমালা বলে, ‘আপনে জামাঈ জিহাদে ইছলামের বড় নেতা, বড় হুজুর, আপনেরে চিনুম না? আর ছালামের কতা কন, এখন ত আমরা বারো আনি মুছলমান হয়েই গেছি–লাই লাহা ইল্লাল্লা মুহম্মদের রছুলুল্লা। আরো শোনবেন?–আলিফ লাম মিমা জালোকাল কিতাবা লা রায়বা ফিহা হুদাল্লিল মুত্তাকিন।’
বছর দশেক আগে এটা আমি বলতে পারতাম না।
আমি বলি, ‘মাশাল্লা, চমৎকার, মারহাবা।’
বকুলমালা বলে, ‘হুজুর আপনেরে আমি পছন্দ করি, আপনে দেখতে অন্য জিহাদিগো মতন না, আপনে হিরোগো মতন।’
বকুলমালা রক্তজবার মতো হাসতে থাকে, মেয়েটিকে অসামান্য মনে হয়, আমার সঙ্গে এতো সহজে কেউ রসিকতা করতে পারে না।
আমি বলি, ‘তোমার কথায় বড়ো রস, তুমি বড়ো সরস।‘
বকুলমালা বলে, ‘হুজুর, আল্লার রহমতে আমার সব কিছুতেই রস, চাউল কলের ঝকঝক্কিার মইদ্যে তা বোজন যাইব না।’
আমি বলি, ‘তোমার পুরো মুছলমানই হওয়া উচিত, তোমার মুখে কালাম শুনে আমি মুগ্ধ হচ্ছি, মুছলমান হয়ে যাও না কেনো? আল্লা তোমাকে রহমত দেবেন।’
বকুলমালা বলে, ‘তা ত হইতে চাইছিলামই, ভাইগ্যে হইল না। আল্লা ত রহমত দিল না।’
আমি বলি, ‘কেনো? আল্যা সব সময়ই রহমত দেন।‘
বকুলমালা বলে, ‘কলেজে পড়নের সময় একটা মুছলমান ক্লাশমেটের সঙ্গে প্যাট ভইর্যা এক বছর প্রেম করছিলাম, ভাবছিলাম মুছলমান হইয়া যামু, নিজের নাম রাকুম মোছাম্মৎ উজমাতুন্নেছা।’
আমি বলি, ‘বেশ চমৎকার নাম রেখেছিলে, রাখলে না কেনো?’
বকুলমালা বলে, ‘আহা, আমার লাভার মোহাম্মদ তমিজুদ্দিন মিয়া, যে আমারে অনেকগুনি কালাম শিগাইছিল, সে আমার প্যাট বানাই দিয়া কাঁইট্যা পড়লো, আমি একলা গিয়া চিৎ অইয়া এম আর করলাম। তারপর একটা মূর্খ খোজা বুড়ার সঙ্গে বিয়া হইল, সেইটার ত জোর আছিল না, দারাইত ত না, তবে হে আমারে বেশি কষ্ট দেয় নাই, আমারে মইর্যা বাচাইলো।’
আমি বলি, ‘তুমি ও তোমার দেহখানা আল্লাপাকের অদ্ভুত সৃষ্টি।’
বকুলমালা তার চাউল কলের চাকার থেকেও প্রখরভাবে চোখ ঘুরিয়ে বলে, ‘আল্লাপাকের অদ্ভুত সৃষ্টিটা পুরাপুরি দেখনের সাধ হইছে হুজুরের?’
আমি বলি, ‘খালি দেখলে কি হবে?’
বকুলমালা বলে, ‘আল্লাপাকের অদ্ভুত সৃষ্টি কি খালি দেখনের লিগা, সেইটার একটু রস না খাইলে আল্লাপাক বোজার হইব। হুজুরের কি ইচ্ছা?’
আমি বলি, ‘আল্লার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। তোমার রস তোমাদের খেজুর গাছের রসের থেকেও মিঠা হবে।’
বকুলমালা বলে, ‘হুজুররে কি খাজুরের রস খাওয়ান যায়?’
আমি বলি, ‘কিসের রস খাওয়াবে?’
বকুলমালা বলে, ‘খাড়ি আঙ্গুর বেদানার রস, পাক পাকিস্থানেও এই রকম আঙ্গুর বেদানার রস পাইবেন না, হুজুর।’
আমি বলি, ‘কয়েক গেলাশ খাওয়ার তিয়াষ হচ্ছে।’
বকুলমালা বলে, ‘তাইলে সন্ধ্যার পর আইসেন, কোনো অসুবিদা হইব না; তয় হুজুর, একটা কতা দিতে হইব।’
আমি বলি, ‘কী কথা?’
বকুলমালা বলে, ‘বাবার দোকান দুইডা আর চাউল কনডা একটু দেকবেন, হুজুর, আমাগো বাড়িডাও একটু দেখবেন, তাইলেই অইব।’
আমি বলি, ‘আমি কি দেখছি না?’
বকুলমালা বলে, ‘হুজুর, আপনে দেকছেন। বইল্যাই ত অহনও টিইকা আছি আপনের রহম থাকলে কোনো ডর নাই; এখন তা দিকে দিকে আপনের তালেবানরা মালাউনগো বাড়ি পুড়তেছে, মাইয়ালোকগো জিনা করতেছে, আর আপনেগো মেইন পার্টির সৈন্যদের কতা না অয় ছাইর্যাই দিলাম।’
আমি বলি, ‘তোমাদের বাড়িতে তো তা হয় নি।’
বকুলমালা বলে, ‘না, হয় নাই, বাবায় অবশ্য বলছে আমাগো ডর নাই, আপনের লগে বাবার খাতির আছে, বাবায় সামান্য কিছু আপনেরে দিছে, নাইলে আমিই আপনের কেছে যাইতাম।’
আমি বলি, ‘আল্লার রহমতে তোমাদের ডর নাই, আমি আছি; তবে তুমি আমার কাছে যদি আগেই যেতে তোমার বাবার একটি কড়িও দিতে হতো না।’
বকুলমালা বলে, ডরে যাই নাই, হুজুর, আপনের বকুলমালা পছন্দ না ট্যাকার থলি পছন্দ, তা বুজতে পারি নাই।’
আমি বলি, ‘আমি দুটোই পছন্দ করি, তবে তুমি গেলে তোমার বাবার থলেটা হয়তো নিতাম না, আমি দয়া করতেও পছন্দ করি।’
বকুলমালা বলে, ‘আইজ রস খাইতে আইসেন, হুজুর।’
সেই সন্ধ্যায় বডিগার্ড নিয়ে হরিপদর বাড়ি যাই, বকুলমালা আমাকে তার ঘরে নিয়ে যায়; ঘরটি বকুলমালার মতোই। মালাউনগুলো এতো বালামছিবতের মধ্যেও সব কিছু গুছিয়ে রাখে, এটা বেশ বিস্ময়কর।
তার দেহটি মালাউনদের কষ্টি পাথরের শিলামূর্তির মতো, আর তার শক্তি কালীমাতার থেকেও বেশি। ভাগ্য ভালো আমি তার স্বামী নই, নইলে সে আমার কলজেটা ছিড়ে রক্ত খেতো, তার জিভটা দিয়ে সে সারা দুনিয়ার রক্ত চেটে খেতে পারে, আমার কলজেটা তো সামান্য। বকুলমালা এখন আমার প্রিয় রক্ষিতা, স্বেচ্ছাবন্দিনী, এমনকি বাদি বলাই ভালো; এতে দোষ নেই, আমি পাক বইপত্র পড়ে দেখেছি, এতে কোনো গুনাহ নেই, এটা জায়েজ। তার কালো রঙটার প্রতি আমার একটা মোহ আছে, সৌন্দৰ্য শুধু শাদায়, এটা আমি বিশ্বাস করি না, বকুলমালার রঙ কালো কিন্তু দেহখানি তেলতোলে, আর সেটি মরা লাশের মতো নয়, ওই দেহের সংস্পর্শে দেহে কুয়ৎ জন্মে।
বকুলমালার সঙ্গে সঙ্গম করা ভৈরবীর সঙ্গে সঙ্গমের সমান।
বকুলমালার ছোটাবোন কণকলতাটিকে লতার মতো দুলতে ঝুলতে বুলতে ফুলে ফুলে ভরে উঠতে দেখতে দেখতে ওই লতার প্রতিও আমার একটু আগ্ৰহ জন্মে, গাছের ডালে ঝুলে থাকা স্বর্ণলতা চিরকালই আমাকে ব্যাকুল করেছে; তাই বকুলমালার সামনেই জড়িয়ে ধ’রে তাকে আমি আদর করি, এতেও কোনো দোষ নেই, বকুলমালাও এতে দোষ দেখে না; সতেরো বছরের কণকলতা বকুলমালার থেকে ভিন্ন; বকুলমালা রক্ত খেতে চায়, ও হয়তো ওদের দেবী কালীর বকুলমালারূপ, জিভা ভরে রক্ত, আর কণকলতা রক্ত খেতে দিতে চায়, কণকলতা গা বেয়ে ঝুলে থাকতে চায় স্বৰ্ণলতার মতো, ওর রঙটাও কণকলতার, ও সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতা।
বকুলমালা হচ্ছে মহাকালী, আর কণকলতা লক্ষ্মী বা সরস্বতী বা দুৰ্গা, হয়তো মরুভূমি থেকে বিতাড়িত লাৎ বা মানৎ।
তাই আজি কণকলতাকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম হরিপদকে। কালীদেবীকে অনেক দেখেছি, একটু লক্ষ্মী সরস্বতী দুৰ্গা দেখার সাধ হয়।
হরিপদকে আমি বাইরের ঘরে বসিয়ে রাখি, আমার বডিগার্ডরা তাকে কোক পান সিগারেট দিয়ে আপ্যায়ন করবে।
হরিপদ বলে, ‘হুজুর, একটা কতা আছে আপনের লগে।‘
আমি অন্য দিকে নিয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘বলো, কী কথা?’
হরিপদ বলে, ‘দেইখ্যেন, হুজুর, মাইয়াডার জানি প্যাট না অয়।‘
আমি বলি, ‘পিল খাওয়াও না?’
হরিপদ বলে, ‘কি কইলেন, হুজুর?’
আমি বলি, ‘পিল, মায়াবড়ি না সতী বড়ি, কী যেনো নাম। এখন মালাউন মাইয়াদের জন্মের দিন থেকেই পিল খাওয়া দরকার, নইলে তাদের পেট থেকে একের পর এক মমিন বেরোবে।’
হরিপদ বলে, ‘তা তা জানি না।’
আমি বলি, ‘তোমারই তো ওগুলো কিনে আনা উচিত, পিতার কর্তব্য পালন করা উচিত।‘
হরিপদ বলে, ‘বাপ হইয়া কি কইর্যা আমি মাইয়াগো খাইতে দেই?’
আমি বলি, ‘অসুবিধা কী? এটাই তো এখন প্ৰধান খাদ্য।‘
হরিপদ বলে, ‘হুজুর, কি যে কন।’
আমি বলি, ‘চিন্তা করো না, আমার ঘরে সুলতান আছে।‘
হরিপদ সুলতান চেনে না মনে হয় বা হয়তো চেনে, সে খুশি হয়।
হরিপদ বলে, ‘হুজুর, চৈদ্দ পুরুষের দ্যাশে আর থাকতে পারুম না মনে অয়। বাপদাদার ভিড়ামাডি ছাইরা চইল্যা যাইতে অইব মনে অয়।’
আমি বলি, ‘কেনো পারবে না? আমি তো আছি।’
হরিপদ বলে, ‘হুজুর, আরো কহন নিতে আসুম?’
আমি বলি, ‘ফজরের আগে, আজানের আগে এসো।‘
হরিপদ বলে, ‘আচ্ছালাতু খাইরুম মিনাননাইউম শোননের আগেই আমি আসুম হুজুর, রাইতে আমার ঘোম হইব না।’
আমি বলি, ‘তোমার মেয়ের ঠিকই ঘুম হবে, তাকে আমি ভালো করে ঘুম পাড়াবো, তোমার মেয়ের কথা তুমি কতোটা জানো? বাপের কাজ মেয়ে জন্ম দেয়া, মেয়েকে নিয়ে আসা, দিয়ে যাওয়া, মেয়ে কীভাবে ঘুমোবে তা বাপের জানার কথা নয়।’
হরিপদ বলে, ‘জি, হুজুর; আমার কলডারে একটু দেইখ্যেন, দোকান দুইডারে দেইখ্যেন, ঘরবাড়িড়া একটু দেইখ্যেন, আপনের আতেই সব সাইপ্যা দিলাম।’
আমি বলি, ‘তোমার কল, মেয়ে, দোকান, বাড়ি নিয়ে চিন্তা কোরো না; তোমার মেয়ে সুন্দর ঘুমোবে, পারলে এখন তুমি গিয়ে ঘুমোও।’
হরিপদ চ’লে যায়, ঘরে ঢুকে দেখি কণাকলতা বোরখা পরেই দাঁড়িয়ে আছে, মুখটিও খোলে নি। আমি ঢুকতেই সে নাচের ভঙ্গিতে মুখের পর্দাটি সরিয়ে বলে, ‘জাহাপনা, আমারে দেখতে কেমন লাগছে?’
আমি বলি, ‘তুমি বোরখা পেলে কই?’
কণকলতা বলে, ‘কি যে কন, হুজুর, একটা ক্যান, আমার তিনটা বোরখা আছে, হিজাব আছে; আর হুজুরের বিবি হওনের জন্যে আসছি, বেশিরম বেলেহাজ হয়ে ত আসতে পারি না। আমারে বিবিজান মনে হইতেছে না?’
আমি বলি, ‘কণকলতা, তুমি বেহেশতের হুর, তুমি উর্বশী।’
কণকলতা বলে, ‘তাইলে আমারে বিবি কইর্যা লন, হুজুর।’
আমি বলি, ‘তোমার রঙ্গ আমার পছন্দ তোমার দেহটির মতোই।‘
কণকলতা বলে, ‘জাহাপনা, আপনে ত সব দেখেন নাই, আইজ আপনে পাগল হইয়া যাবেন। তয় আমারে একটু সুরা পইরা আপনের বিবি বানান।’
কণকলতা আমাকে চেনে, আমিও কণকলতাকে চিনি।
ওর ঠোঁট আর বুক দুটি আমার ভালোভাবেই চেনা, ওগুলো আমি খেয়েছি, সেদ্ধ ডিমের ভর্তা বানিয়েছি, ভর্তা আমি ভালোই বানাতে পারি; দাঁত দিয়ে কেটেছি, আমার দাঁতগুলো স্নায়ুহীন নয়, ওগুলোরও বোধ আছে, স্তনে দাঁতের লাল দাগ আমার চুনির থেকেও সুন্দর লাগে, আর সব সৌন্দৰ্যই আমার খেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে, শুধু দেখে আমার সুখ হয় না; আর মহান আল্লাই জানেন আমার কোনো যেনো মালাউনদের গন্ধ ভালো লাগে, ওর গন্ধ নিয়েছি, কোনো ফুলের সঙ্গে ওই গন্ধ মেলাতে না পেরে আমি বিহবল হয়েছি।
শুধু সারাদেহটি আর নিচের মধুঝর্নাটি চিনি না; বকুলমালার ঘরে অতোটা দেখতে আমার খারাপ লেগেছে। আজই ওকে আমি ভালো করে দেখবো, ওর ঝর্নধারায় ভাসবো; বকুলমালার গাঙটা একটু বেশি প্রশস্ত, অনেকটা মেঘনার মতো; কণকলতারটি দিনাজপুরের কাঁকড়া নদীটিার মতোই হবে, ওর কথা ভাবলেই আমার কাঁকড়া নদীটার কথা মনে পড়ে।
ওর ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে? দুই ধার উঁচু তার ঢালু তার পাড়ি?
আমি সালোয়ার পাঞ্জাবি খুলে লুঙ্গি পরি, লুঙ্গি পরার সময় আমার লুঙ্গিটা টেনে ফেলে খিলখিল করে হেসে ওঠে। কণকলতা।
কণকলতা জীবনকে সুন্দরভাবে নিয়েছে, আমাকে ও সামান্য ক’রে ফেলেছে। কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আপনের আলহজ মওলানা ছাহেব হুজুরট দেখি এখনই খাড়া তালগাছ হইয়া আছে।’
আমি বলি, ‘খাঁটি মমিনের হুজুর এমনই হয়, তার কোনো অবসর নেই, আর এখন তো আমাদের সব সময় দণ্ডায়মান থাকা দরকার।’
কণকলতা হাসতে হাসতে বলে, ‘হুজুর, জাহাপনা, আপনে আমারে বিছমিল্লা আলহামদুলিল্লা রাহমানের রাহিম শয়তানের রাজিম বইল্যা শাদি কইর্যা লন; আমি আপনের চাইরডা বিবির একটা হইয়া থাকি, আপনেরে আমার ভাল লাগে, আপনের সঙ্গে পেয়ার করতে আমি সুখ পামু, আমার দেহডা সুন্দর, আপনের দিলডা সুন্দর, আমারে বউ পাইলে আপনের দিলও সুক পাইব।’
আমি বলি, ‘আমার কোনো বিবি নেই।’
কণকলতা খিলখিল করে হাসে. বলে, ‘তাইলে আমারেই আপনের এক নম্বর বিবি কইর্যা লন, হুজুরের বিবি হইতে আমার ভাল লাগবো, আমার নাম রাইখ্যেন বিবি রহিমা।‘
আমি বলি, ‘কণকলতা।’
কণকলতা বলে, মালাউন হইয়া থাকতে আমার ভাল লাগে না, আইজ এইডার লগে কাইল অইডার লগে হুইতে হইতে আমি বেশ্য হইয়া যামু, বেশ্যা অইতে আমার ভাল লাগবে না, দৌলতদিয়া গিয়া আমি থাকতে পারুম না।’
আমি বলি, মুছলমান হ’তে চাইলে পরে আমার কোনো জিহাদির সঙ্গে তোমার শাদি দিয়ে দেবো, সে তোমাকে খাঁটি মুছলমান বানাবে।’
কণকলতা বলে, ‘সে কি আপনের মতন পারব? আমি ত আপনের হুজুররেই চাই, ওই হুজুররেই আমি ছেজদা করতে চাই, পারবেন হুজুর? আর আপনের জিগাদিগো দেকলে আমার বমি আহে।‘
আমি বলি, ‘তারা মমিন মুছলমান, বমি আসবে কেনো?’
কণকলতা বলে, ‘মমিন মালাউন দেকলেও আমার বমি আহে, মমিন মুছলমান দেকলেও আমার বমি আহে।’
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কি পিল খাও?’
কণকলতা খিলখিল ক’রে বলে, ‘পিল খামু ক্যান?’
আমি বলি, ‘যদি পেট হয়ে যায়?’
কণকলতা বলে, ‘তাইলে তা আলহামদুলিল্লা। আইজ আমি আইছি প্যাডে একটা পাক মমিন নেওনের জন্যে, হুজুরের পোলা নেওনের জন্যে, যে এক সময় পাহাড়ের মতন মুছলমান হইয়া দুনিয়ায় ইছলাম কায়েম করব, যে দ্যাশটারে পাকিস্থান বানাইব।’
আমি বলি, ‘এখন আমি পোলা চাই না।‘
কণকলতা খিলখিল করে বলে, ‘আল্লায় না কইছে একটা বীজও নষ্ট অইতে দেওন যাইব না? প্ৰত্যেকটা বীজ থিকা মমিন মুছলমান বানাইতে হইব, যাতে জীবন ভইর্যা জিহাদ করতে পারে? আইজ আমি একটা মমিন পোলা চাই।‘
আমি বলি, ‘তুমি এসব জানলে কী করে?’
কণকলতা বলে, ‘হুজুর, জানুম না ক্যা? এই পাক দ্যাশে থাকুম আর ইছলাম জানুম না, তা কি কইর্যা অয়? আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতোয়ানির রাজিম, লাই লাহা ইল্লাল্লা মুহম্মদের রছুলুল্লা। আলহামদুলিল্লাহে রাব্বিল আলামিন, আররাহমনির রাহিম, মালিকি ইয়াওমিদ্দিন, ইয়াকানা বুদু ওয়া ইয়াকানাস্তাইন।’
আমি বলি, ‘তুমি কাফের নও, খাটি মুছলমান, বেহেশতের আওরাত।’
কণকলতা বলে, ‘হুজুর, আমার বাপের দোকান দুইডা আর কলডা জানি না পোড়ে, আমাগো ঘরবাড়ি জানি না পোড়ে।’
আমি বলি, ‘পুড়বে না, আল্লার রহমতে পুড়বে না।‘
কণকলতার দেহটি কণকলতার মতোই; একবার ছেঁড়াফাড়া ভাঙাচোরার পরই ও ঘুমিয়ে পড়ে, মেয়েটির মনে হয় এইবারই প্ৰথম, আমার হুজুরকে প্রবেশ করাতে বেশ পেরেশান হ’তে হয়, তবে ওই পেরেশানিটাই হলো বেহেশতের সুস্বাদ, মেয়েটা কণকলতার মতোই নরম, শুধু গলতে জানে, গলতে গলতে কণকলতার ধারা হয়ে যায়। বকুলমালা শুধু চায়, আমার রক্ত শুষে খায়, ও জীবন্ত কালী, আমি না পারলেও পারার চেষ্টা করি, বকুলমালা হেসে বলে, ‘একবারেই কাহিল হুজুর? আমার যে আরও দশবার লাগিব’; এই কণকলতা কিছু চায় না; একে শেফালি ফুলের মতো পিষে ফেলা যায়, ওকে নিয়ে শিউলির বিছানায় ঘুমোনো উচিত। পিষে ফেলেছি, ও এখন ঘুমোচ্ছে, ঘুমোলেও ক্ষতি নেই, আমার কাজ আমি করেছি, আবার যদি পারি তখন আমার কাজ আমি করতে পারবো–কয়েকবার পাকিস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। মনে মনে পাক সার জমিন সাদ বাদ গানটা গাইবো, যদিও গানটা আমার ঠিক মনে নেই; শাইতোয়ানির রাজিম বলে কিছু বললেও চলবে।