০৬. বাবার ঘরে ডাক পড়েছে

বাবার ঘরে ডাক পড়েছে।

জজীয়তীয়ের অভ্যাস তিনি এখনো ছাড়তে পারেননি। কিছু দিন পর পর তিনি জাজ সাহেবের ভূমিকায় নামেন। অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে হলেও পুরো বিষয়টির নেপথ্যে যে রূপা আছে তা বুঝতে পারছি। তবে কোন্ কোন্ বিষয় আলোচনা হবে তা বুঝতে পারছি না। এ জাতীয় বিচার সভা এর আগেও হয়েছে। শুরুটা হয় আন্তরিক ভঙ্গিতে। টি পটে চা থাকে, চা খাওয়া হয়। টুক টাক কথা হয়। শীতকালে বলা হয়–বেশ শীত পড়েছে। গরমকালে অত্যধিক গরম নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ হয়। চা শেষ হবার পর বাবা তাঁর ইজিচেয়ারে আধশোয়া হয়ে বসেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বারান্দার ইজিচেয়ার এই উপলক্ষ্যে বাবার ঘরে নেয়া হয়। খানিকক্ষণ তাঁর পা নাচে। এক সময় পা নাচা বন্ধ হয়। তিনি চোখ বন্ধ করে বলেন–রঞ্জু, তোমাকে আমার দুএকটা কথা বলার আছে। দেখা যায় দুএকটা না, তাঁর অসংখ্য কথাই বলার আছে। বাবার স্মৃতিশক্তি খুব একটা ভাল বলে আমার কখনো মনে হয়নি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আমার বিষয়ে তাঁর স্মৃতিশক্তি অসম্ভব তীক্ষ্ণ। চার বছর বয়স থেকে আমি কি কি অপরাধ করেছি তা এক এক করে বলা হয়। মোটামুটি চরিত্র বিশ্লেষণ যাকে বলে। সব অপরাধ নিয়ে কথা বলা শেষ হবার পর সেদিনের আলোচ্যসূচি আসে। ঘণ্টা দুই সময় তাতে লাগে। এই দু ঘণ্টা সময় বাবা খুব উপভোগ করেন বলেই আমার ধারণা।

আজ বাবার বিখ্যাত বিচার সভা বসল রাত দশটায়। এই জাতীয় সভায় পরিবারের সকল সদস্যের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। কিন্তু বাবু সভা শুরুর আগেই বলল, আমি থাকতে পারব না। পড়া ফেলে এসেছি। বাবা বললেন, দশ পনেরো মিনিটে তোমার পড়া মাথায় উঠবে না। বোস।

বাবু গম্ভীর গলায় বলল, আমার পড়াশোনার ব্যাপারটা আমি দেখব। এই বিষয়ে কেউ কিছু বললে আমার ভাল লাগে না। আমি ঠিক ঘড়ি দেখে কুড়ি মিনিট থাকব। এর মধ্যে যার যা বলার বলে শেষ করতে হবে।

বলেই বাবু হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল। বাবুর এই সব কাণ্ডকারখানা সভার চরিত্র খানিকটা বদলে দিল। সভা পুরানো রুটিন মত অগ্রসর হল না। আমি অতীতে কি করেছি না করেছি তা আলোচনা করার সুযোগ বাবা পেলেন না। সরাসরি মূল বিষয়ে চলে গেলেন–আমি সবাইকে এখানে ডেকেছি বৌমা সম্পর্কে দুএকটা কথা বলার জন্য।

বাবু বলল, ভাবীর প্রসঙ্গে কথা বলবেন–ভাবী কোথায়?

মা বললেন, তার এখানে থাকার প্রয়োজন নেই।

যার প্রসঙ্গে কথা সে এখানে থাকবে না, তা কি করে হয়?

বাবা বললেন, তুই খুব বিরক্ত করছিস–তার এখানে থাকার প্রয়োজন কেন নেই তা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবি। একটা সিনেমা পত্রিকায় তার একটা ছবি ছাপা হয়েছে। সেটা নিয়েই দুএকটা কথা বলতে চাই।

বাবু বিস্মিত গলায় বলল, ভাবী ছবি করছে, কাজেই সিনেমা পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হবেই। খেলাধুলা করলে স্পাের্টস পত্রিকায় ছবি ছাপা হত।

বাবা বললেন, তুই বেশি বকবক করছিস। যা তুই, তোর ঘরে গিয়ে পড়াশোনা কর।

চলে যা।

বাবু ঘড়ি দেখে বলল, কুড়ি মিনিট এখনো হয় নি। কুড়ি মিনিট হোক, তারপর চলে যাব।

মা বললেন, যে রকম ছবি ছাপা হয়েছে কোন ভদ্রঘরের মেয়ের সে রকম ছবি ছাপা হয় না। পুকুর থেকে উঠে আসছে সারা শরীর ভেজা। শাড়ি গায়ে লেপ্টে আছে। ব্লাউজ নেই–আমার বলতেও ঘেন্না লাগছে। এই পরিবারের একটা সম্মান আছে। দশজনের সঙ্গে মিলে মিশে আমাদের থাকতে হয়। আমার বা তোর বাবার বংশে এ জাতীয় ঘটনা ঘটে নি।

বাবু বলল, তোমাদের বংশে কোন অভিনেত্রী ছিল না বলে এজাতীয় ঘটনা ঘটে নি। অভিনেত্রী থাকলে ঘটত।

বাবু, তুই উঠে যা। তোর মাথা গরম হয়ে আছে।

বাবু ঘড়ি দেখে বলল, এখনো দশ মিনিট আছে। দশ মিনিট পার হোক, তারপর যাব।

দশ মিনিট কেউ কোন কথা বলল না। চারদিক নিস্তব্ধ। দশ মিনিটকে মনে হল অনন্ত কাল। বাবু উঠে যাবার পর মা বললেন, আমি এই বিষয় নিয়ে বোমার সঙ্গে কথা বলেছি। বৌমা বলল, সে নাকি ছবি ছাপানোয় সম্মানহানির কিছু দেখতে পায় নি। আমি তাকে বললাম, এ বাড়িতে থেকে এসব জিনিস করা যাবে না। সে বলল, এ বাড়িতে আমি বেশিদিন থাকব না। অল্প কটা দিন। এই কথার মানে কি তাই আমি জানতে চাই। রঞ্জু, সে এই কথা কেন বলল?

আমি বললাম, জানি না।

সত্যি জানিস না?

না।

এখন তো জানলি। এখন কি করবি?

আমার করার কিছু নেই। ও কি করবে না করবে সেটা ওর ব্যাপার।

তুই তাকে কিছুই বলবি না?

না।

ও যে তোকে যাদু করে রেখেছে তা তুই বুঝতে পারছিস না?

না।

বাবা বললেন, আমার এই বাড়িতে বাস করে তুমি যে উদ্ধত ভঙ্গিতে কথা বলছ তা আমার কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি করবে না করবে তা তোমার ব্যাপার। তবে আমি তোমার জায়গায় হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতাম।

আমি বললাম, কি রকম শাস্তি? খুন করার কথা বলছেন?

বাবা দীর্ঘসময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। যাকে বলে বাক্যহারা। মুনিয়া অস্বস্তি নিয়ে একবার মার মুখের দিকে একবার বাবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। বাবা বললেন, দেখি এক গ্লাস পানি। মুনিয়া পানি আনতে গেল। তার ফিরে আসতে বেশ সময় লাগল। এই সময়টুক বাবা চুপচাপ রইলেন। বোধহয় কি বলবেন, গুছিয়ে নিচ্ছেন।

রঞ্জ!

জ্বি।

আমার অনেকদিন থেকেই মনে সন্দেহ তুমি মানসিক দিক দিয়ে ঠিক স্টেবল নও। আজ নিশ্চিত হয়েছি।

ও।

ইনসেনিটি এক ধরনের অসুখ যা দ্রুত বাড়তে থাকে।

আমি হাসির একটা ভঙ্গি করলাম। বাবা হতভম্ব হয়ে বললেন, হাসছ কেন? চুপ করে থাকবে না। বল কেন হাসছ?

মুনিয়া বলল, বাবা, তুমি বেশি রেগে যাচ্ছ। মা, মিটিংটা আজ থাক।

বাবা বললেন, না আমার কথা শেষ হয়নি। এই বদছেলে সাদা চামড়ার এক মেয়ে বিয়ে করে ধরাকে সরা দেখছে। ওকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বল। সে যেন কালই তার বৌয়ের হাত ধরে বাড়ি থেকে বিদেয় হয়।

আমি শান্ত ভঙ্গিতে ঘরে ফিরে এলাম। রূপা বলল, কি ব্যাপার তোমাদের কিসের মিটিং?

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, তেমন কিছু না।

কোন সমস্যা হয়েছে?

না।

সমস্যা হলে আমাকে বলতে পার। আমি যেহেতু তোমাদের পরিবারের কোন সদস্য না, আমি তোমাদের সমস্যা অবজেকটিভলি দেখতে পারব।

আমি সফিকের বই হাতে নিয়ে ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। রূপা বলল, বইটা রাখ তো। আমার দিকে তাকাও।

আমি তাকালাম।

রূপা বলল, বাবুর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। সে বলল, তুমি নাকি একটা খুন করতে চাও? এ পারফেক্ট মার্ডার। সত্যি?

আমি জবাব দিলাম না।

রূপা বলল, কাকে খুন করতে চাও, আমাকে?

আমি চুপ করে রইলাম।

আপত্তি না থাকলে বলতে পার। আমরা দুজন ব্যাপারটা নিয়ে ডিসকাস করতে পারি। মানুষ হিসেবে তুমি বেশ অদ্ভুত। এই জন্যেই তোমাকে আমার এত পছন্দ। তোমাকে যে আমি প্রচণ্ড রকম ভালবাসি সেটা কি তুমি জান?

না।

তুমি আসলে কিন্তু জান। শুধু মুখে বলছ না। তুমিও আমাকে প্রচণ্ড রকম। ভালবাস, তবে ভালবেসে সুখ পাচ্ছ না। তাই না?

আমি চুপ করেই রইলাম। রূপা বলল, সত্যিকার ভালবাসার একটা বড় লক্ষণ। কি জান? ভালবেসে সুখ পাওয়া যায় না, কখনো না। আমি সারাক্ষণ তোমার পাশে থাকলেও তোমার মনে হবে–নেই নেই। পাশে কেউ নেই। আর তখনি ভালবাসার মানুষকে খুন করে ফেলার ইচ্ছা হয়।

আলোচনা অগ্রসর হল না, লাবণ্য এসে ঢুকল। তার কোলে ছোট্ট বালিশ। রূপা বলল, কি খবর লাবণ্য?

লাবণ্য গম্ভীর গলায় বলল, তোমাদের বিছানায় কি জায়গা আছে?

কেন বল তো?

আমি তোমাদের সঙ্গে ঘুমুব।

প্রচুর জায়গা আছে লাবণ্য, প্রচুর জায়গা।

আমি ঘুমিয়ে পড়লে মা যদি নিতে আসে তাহলে কিন্তু মাকে নিষেধ করবে।

অবশ্যই নিষেধ করব।

লাবণ্য বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ল। এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুনিয়া উপস্থিত হল। সে তার মেয়েকে নিয়ে যেতে এসেছে। রূপা বলল, মেয়েকে তো দেয়া যাবে না।

দেয়া যাবে না মানে?

ও ঘুমুতে যাবার আগে বলে গেছে ওকে যেন তোমার হাতে তুলে দেয়া না হয়। আমি ওকে কথা দিয়েছি।

রাতে ঘুম ভাঙ্গলে কাঁদবে।

কাঁদলে তোমার কাছে দিয়ে আসব। এখন তুমি একে নিতে পারবে না।

আমি আমার মেয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। তুমি কি বলছ?

আজ রাতে পারবে না। অসম্ভব।

সম্ভব অসম্ভব তুমি আমাকে শেখাতে এসো না।

মুনিয়া তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। রূপা আমার দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বলল, ঘুমুতে আস।

আমি বললাম, তুমি ঘুমাও। আমি একটু পরে আসছি। আমি সফিকের উপন্যাস নিয়ে বসলাম।

উপন্যাসটা গত দশদিন ধরে পড়ার চেষ্টা করছি। কয়েক পাতা পড়ার পরই বাধা পড়ে, আবার গোড়া থেকে শুরু করি। প্রথম সাত পাতা আমার দশবার পড়া হয়েছে। এতে মজার একটা ব্যাপার হয়েছে, কোন্ লাইনের পর কোন্ লাইন আমার জানা হয়ে গেছে। একটা পরিচিত গান শুনতে যেমন ভালো লাগে, পরিচিত উপন্যাস পড়তেও দেখি তেমুনি আনন্দ।

রূপা বলল, সত্তর পৃষ্ঠার একটা বই শেষ করতে তোমার এতোদিন লাগছে?

আমি বললাম, বইটা মুখস্ত করার চেষ্টা করছি।

ও আচ্ছা।

রূপা বিছানায় শুতে শুতে বলল, সফিক কি কি তোমার খুব ভালো বন্ধু?

একসময় ছিলো, এখন না।

তোমার বন্ধু বান্ধব তেমন নেই, তাই না?

কিছু কিছু আছে।

নাম বলো তো।

আমি চুপ করে গেলাম। পড়ার মাঝখানে বাধা পড়েছে। আবার গোড়া থেকে পড়া শুরু করা দরকার। ঠিক মন বসাতে পারছি না। রূপা চুল আঁচড়াচ্ছে। বার বার ঐদিকে চোখ চলে যাচ্ছে।

রূপা বলল, চা খাবে?

না।

রূপা বলল, মনে হচ্ছে উপন্যাসটা আবার গোড়া থেকে শুরু করেছে।

হুঁ।

মুখস্ত হয়েছে খানিকটা?

এখনো না। লিখে লিখে প্র্যাকটিস করো। তাড়াতাড়ি হবে।

উপন্যাসটা খুব সুবিধার লাগছে না। নায়ক কোন কাজকর্ম করে না। ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ায়। কখনো সাইকেলে, কখনো পায়ে হেঁটে। মনে হচ্ছে তার হাঁটাতেই আনন্দ। ঝা ঝা দুপুরে শুধু হাঁটে। মাঝে মাঝে একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ সেই বাড়ির বারান্দায় একজন রূপবতী তরুণীকে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কোন কথা হয় না। দেখা হল–এই একমাত্র আনন্দ। রূপবতী তরুণীর যে বর্ণনা আছে তার সঙ্গে রূপার খুব মিল। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর। মিল আরেকটু কম থাকলে ভাল হত। বাঙালী মেয়ের নীলবর্ণ চোখ খুব বিশ্বাসযোগ্যও নয়।

বই বন্ধ করে আমি বারান্দায় এসে দেখি অনিদ্রারোগে আক্রান্ত আমার জাজ সাহেব বাবা ইজিচেয়ারে বসে আছেন। বাবার ঘর থেকে ইজিচেয়ার আবার ট্রান্সফার হয়েছে বারান্দায়। বাবার হাতে চায়ের কাপ। তিনি নিঃশব্দে চা খাচ্ছেন। গভীর রাতের এই চা তিনি নিজে বানান। তার বানানো চা একদিন খেয়ে দেখতে হয়। তাকে কি বলব, বাবা এক কাপ চা বানিয়ে দাও? যদি বলি তিনি কিভাবে রিএক্ট করবেন?

রঞ্জু।

জ্বী।

আজ রাতে তোমার সঙ্গে যেসব কথা বলেছি তার জন্যে আমি দুঃখিত। এবং খানিকটা লজ্জিত।

দুঃখিত এবং লজ্জিত হবার কিছু নেই বাবা। আপনি যা বলেছেন ঠিকই বলেছেন।

না ঠিক বলিনি। তোমার উপর অবিচার করা হয়েছে। আই এ্যাম সরি। চেয়ারটায় বস।

আমি বসলাম। বাবা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন, তোমার প্রতি আমার যে বিশেষ এক ধরনের দুর্বলতা আছে তা-কি তুমি জান?

জানি।

না তুমি জান না। তবে তোমার জানা থাকা প্রয়োজন। জানলে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক সহজ হবে।

আমাদের সম্পর্ক সহজই আছে।

সম্পর্ক সহজ নেই, তা আমি যেমন জানি তুমিও জান। তোমার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতার কারণ বলি। তোমার জন্মের এক মাস পরের ঘটনা। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছি। ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে হাঁটার অভ্যাস নেই। হঠাৎ কি যে হল তুমি আমার কোল থেকে নিচে পড়ে গেলে।

এই ঘটনা আমি জানি, অনেকবার শুনেছি।

না শোনার কোন কারণ নেই। এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। তোমার জীবন সংশয় হয়েছিল। এরপর থেকে তুমি যখন উদ্ভট কিছু কর আমি নিজেকেই দোষ দেই। তোমাকে দেই না। তোমার বিচিত্র কাণ্ড কারখানার জন্যে নিজেকে দায়ী করি। আমার মনে হয় মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলে তোমার বুদ্ধিবৃত্তি ঠিকমত বিকশিত হয়নি। এর ফল খুব শুভ হয় নি। তুমি ভয়বাহ ধরনের প্রশ্রয় পেয়েছ। প্রশ্রয়ের ফল কখনো শুভ হয় না। আমার কথা তো শুনলে—এখন তোমার কি কিছু বলার আছে?

আছে।

বল, আমি শুনব। খুব পেশেন্ট হিয়ারিং দেব।

আমি সহজ গলায় বললাম, বাবা, আপনি কি আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াবেন?

জাজ সাহেব বাবা হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি তাকিয়ে রইলাম সজনে গাছটার দিকে। গাছটা মরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মরছে।

মুনিয়ার ঘর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে কি সব যেন বলছেন। লাবণ্যও জেগে উঠেছে। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে–মামীর ঘরে যাব। মামীর ঘরে যাব।

ছাদের সিঁড়িতে খটখট শব্দ করতে করতে বাবু নেমে এল। তার চোখে মুখে চাপা আতংক। সে আমার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বলল, দাদা, তুমি কি আমার ঘরের দরজায় কড়া নেড়েছ?

কখন?

এই ধর পাঁচ মিনিট আগে?

না।

বাবু চোখ বড় বড় করে বলল, দাদা, একটু আস তো আমার ঘরে।

বাবাকে ইজিচেয়ারে রেখে আমি বাবুর সঙ্গে ছাদে উঠে গেলাম। বাবু বলল, ঘুমুচ্ছিলাম বুঝলে, কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। আমি বললাম, কে? কোন উত্তর নেই। আবার কড়া নাড়া। দরজা খুলে দেখি কেউ নেই। ব্যাপার কি বল তো?

আমি শান্ত স্বরে বললাম, ভূত বলেই তো মনে হচ্ছে।

ভূত মানে? কি বলছ তুমি! ভূত আবার কি?

ভূত হচ্ছে অশরিরী আত্মা। তোদের ফিজিক্স কি ভূত স্বীকার করে না?

দাদা তুমি আমার সামনে থেকে যাও। উদ্ভট সব কথাবার্তা … ভূত! আমি কি কচি খোকা?

আমি বললাম, তুই এক কাজ কর, বাতি নিভিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাক–ভূত হলে আবার কড়া নাড়বে। ওর নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত কোন সমস্যা আছে। তোর সঙ্গে ডিসকাস করতে চায়।

দাদা তুমি নিচে যাও। তোমাকে বলাই ভুল হয়েছে।

আমি আমার ঘরে ঢুকে দেখি–রূপাও জেগে আছে। রাত তিনটা। এই সময়ে বাড়ির প্রতিটি মানুষ জেগে–ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *