॥ ৬ ॥
পরদিন সকালে উঠে দাঁত-টাত মেজে যেই ঘর থেকে বেরিয়েছি অমনি একটা চেনা গলায় শুনলাম, ‘গুড মর্নিং!’ বুঝলাম জটায়ু হাজির। ফেলুদা আগেই বারান্দায় বেরিয়ে বেতের চেয়ারে বসে চায়ের অপেক্ষা করছিল। লালমোহনবাবু চোখ গোল গোল করে বললেন, ‘ওঃ—কী থ্রিলিং জায়গা মশাই! ফুল অফ পাওয়ারফুল সাস্পিশাস্ ক্যারেকটারস্!’
‘আপনি অক্ষত আছেন তো?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘কী বলচেন মশাই! এখানে এসে দারুণ ফিট লাগছে। আজ আমাদের লজের ম্যানেজারকে পাঞ্জায় চ্যালেঞ্জ করেছিলুম। ভদ্রলোক রাজি হলেন না।’ তারপর এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন, ‘আমার কাছে একটি অস্ত্র আছে সুটকেসে—’
‘গুলতি?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘নো স্যার! একটি নেপালি ভোজালি। খাস কাটমাণ্ডুর জিনিস। কেউ অ্যাটাক করলে জয় মা বলে চালিয়ে দেব পেটের মধ্যে, তারপর যা থাকে কপালে। অনেকদিনের শখ একটা ওয়েপনের কালেকশন করব, বুঝেছেন।’
আমার আবার হাসি পেল, কিন্তু ক্রমেই সংযম অভ্যেস হয়ে আসছে, তাই সামলে গেলাম। লালমোহনবাবু ফেলুদার পাশের চেয়ারে বসে বললেন, ‘আজকের প্ল্যান কী আমাদের? ফোর্ট দেখতে যাচ্ছেন না?’
ফেলুদা বলল, ‘যাচ্ছি বটে, তবে এখানে নয়, বিকানির।’
‘হঠাৎ আগেভাগে বিকানির? কী ব্যাপার?’
‘সঙ্গী পাওয়া গেছে। গাড়ি যাচ্ছে একটা।’
বারান্দার পশ্চিমদিক থেকে আরেকটা ‘গুড মর্নিং’ শোনা গেল। গ্লোব-ট্রটার আসছেন। ‘ঘুম হল ভাল?’
লালমোহনবাবু দেখলাম মন্দার বোসের মিলিটারি গোঁফ আর জাঁদরেল চেহারার দিকে বেশ প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখছেন। ফেলুদা দুজনের আলাপ করিয়ে দিলেন।
‘আরেব্বাস! গ্লোব-ট্রটার?’ লালমোহনবাবুর চোখ ছানাবড়া। ‘আপনাকে তো তা হলে কালটিভেট করতে হচ্ছে মশাই। অনেক লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা আছে নিশ্চয়ই আপনার!’
‘কোন রকমটা চাই আপনার?’ মন্দার বোস হেসে বললেন, ‘এক ক্যানিবলের হাঁড়িতে সেদ্ধ হওয়াটাই বাদ ছিল, বাকি প্রায় সব রকমই হয়েছে।’
মুকুল যে কখন বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে তা টেরই পাইনি। এখন দেখলাম সে চুপচাপ এক ধারে দাঁড়িয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
এবার ডক্টর হাজরাও তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলেন। তাঁর এক কাঁধে একটা ফ্লাস্ক, আরেকটায় একটা বাইনোকুলার, আর গলায় ঝুলছে একটা ক্যামেরা। বললেন, ‘প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার পথ। আপনাদের ফ্লাস্ক থাকলে সঙ্গে নিয়ে নেবেন। পথে কী পাওয়া যাবে ঠিক নেই। আমি হোটেলে বলে দিয়েছি—চারটে প্যাক্ড লাঞ্চ দিয়ে দেবে।’
মন্দার বোস বললেন, ‘কোথায় চললেন আপনারা সব?’
বিকানিরের কথা শুনে ভদ্রলোক মেতে উঠলেন—
‘যাওয়াই যদি হয়, তা হলে সব এক সঙ্গে গেলেই হয়!’
‘দি আইডিয়া!’ বললেন জটায়ু।
ডক্টর হাজরা একটু কাঁচুমাচু ভাব করে বললেন, ‘সবসুদ্ধ তা হলে ক জন যাচ্ছি আমরা?’
মন্দার বোস বললেন, ‘এক গাড়িতে সবাই যাবার প্রশ্নই ওঠে না। আই উইল অ্যারেঞ্জ ফর অ্যানাদার ট্যাক্সি। আমার সঙ্গে মিস্টার মাহেশ্বরীও যাবেন বোধহয়।’
‘আপনি যাবেন কি?’ লালমোহনবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর হাজরা।
‘গেলে শেয়ারে যাব। কারুর স্কন্ধে চাপতে রাজি নই। আপনারা চারজন একটাতে যান। আমি মিস্টার গ্লোব-ট্রটারের সঙ্গে আছি।’
বুঝলাম, ভদ্রলোক মন্দারবাবুর কাছ থেকে গল্প শুনে ওঁর প্লটের স্টক বাড়াতে চাচ্ছেন। অলরেডি উনি কম করে পঁচিশখানা অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লিখেছেন। ভালই হল; এক গাড়িতে পাঁচজন হলে একটু বেশি ঠাসাঠাসি হত। মন্দারবাবু ম্যানেজারকে বলে আরেকটা ট্যাক্সির বন্দোবস্ত করে ফেললেন। লালমোহনবাবু নিউ বম্বে লজে তৈরি হতে চলে গেলেন। যাবার সময় বলে গেলেন, ‘আমাকে কাইন্ডলি পিক আপ করে নেবেন। আমি হাফ অ্যান আওয়ারের মধ্যে রেডি হয়ে থাকছি।’
আগেই বলে রাখি—বিকানিরের কেল্লাও মুকুল একবার দেখেই বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটাই আজকের দিনের আসল ঘটনা নয়। আসল ঘটনা ঘটল দেবীকুণ্ডে, আর সেটা থেকেই বুঝতে পারলাম যে, আমরা সত্যিই দুর্ধর্ষ দুশমনের পাল্লায় পড়েছি।
বিকানির যাবার পথে বিশেষ কিছু ঘটেনি, কেবল মাইল ষাটেক যাবার পর একটা বেদের দলকে দেখতে পেলাম রাস্তার ধারে সংসার পেতে বসেছে। মুকুল গাড়ি থামাতে বলে তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে এসে বলল যে, তাদের চেনে।
এর পরে ফেলুদার সঙ্গে ডক্টর হাজরার কিছু কথাবার্তা হয়েছিল মুকুলকে নিয়ে, সেটা এখানে বলে রাখি। এই সব কথা মুকুল ড্রাইভারের পাশে বসে শুনতে পেয়েছিল কি না জানি না; কিন্তু পেলেও তার হাবভাবে সেটা কিছুই বোঝা, যায়নি।
ফেলুদা বলল, ‘আচ্ছা ডক্টর হাজরা, মুকুল তার পূর্বজন্মের কী কী ঘটনা বা জিনিসের কথা বলে সেটা একবার বলবেন?’
হাজরা বললেন, ‘যে জিনিসটার কথা বার বারই বলে সেটা হচ্ছে সোনার কেল্লা। সেই কেল্লার কাছেই নাকি ওর বাড়ি ছিল। সেই বাড়ির মেঝের তলায় নাকি ধনরত্ন পোঁতা ছিল। যেরকমভাবে বলে তাতে মনে হয় যে এই ধনরত্ন লুকিয়ে রাখার ব্যাপারটা ওর সামনেই ঘটেছিল। এ ছাড়া যুদ্ধের কথা বলে। বলে, অনেক হাতি, অনেক ঘোড়া, সেপাই, কামান, ভীষণ শব্দ, ভীষণ চিৎকার। আর বলে উটের কথা। উটের পিঠে সে চড়েছে। আর ময়ূর। ময়ূরে নাকি ওর হাতে ঠোকর মেরেছিল। রক্ত বার করে দিয়েছিল। আর বলে বালির কথা। বালি দেখলেই কী রকম চঞ্চল হয়ে উঠছে সেটা লক্ষ করেননি?’
বিকানির পৌঁছলাম পৌনে বারোটায়। শহরে পৌঁছবার কিছু আগে থেকেই রাস্তা ক্রমে চড়াই উঠেছে; এই চড়াইয়ের উপরেই পাঁচিল দিয়ে ঘেরা শহর। আর শহরের মধ্যে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো জিনিস হচ্ছে লালচে রঙের পাথরের তৈরি প্রকাণ্ড দুর্গ।
আমাদের গাড়ি একেবারে সোজা দুর্গের দিকে নিয়ে যাওয়া হল। লক্ষ করলাম, যতই কাছে যাচ্ছি ততই যেন দুৰ্গটাকে আরও বড় বলে মনে হচ্ছে। বাবা ঠিকই বলেছিলেন। রাজপুতরা যে দারুণ শক্তিশালী জাত ছিল সেটা তাদের দুর্গের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।
দুর্গের গেটের সামনে গিয়ে ট্যাক্সি থামার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুল বলে উঠল, ‘এখানে কেন থামলে?’
ডক্টর হাজরা বললেন, ‘কেল্লাটা কি চিনতে পারছ মুকুল?’
মুকুল গম্ভীর গলায় বলল, ‘না। এটা বিচ্ছিরি কেল্লা। এটা সোনার কেল্লা না।’
আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। মুকুলের কথাটা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই কোত্থেকে জানি একটা কর্কশ আওয়াজ শোনা গেল আর তৎক্ষণাৎ মুকুল দৌড়ে এসে ডক্টর হাজরাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরল। আওয়াজটা এল কেল্লার উলটোদিকের পার্কটা থেকে।
ফেলুদা বলল, ‘ময়ূরের ডাক। এ রকম আগেও হয়েছে কি?’
ডক্টর হাজরা মুকুলের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ‘কাল যোধপুরেই হয়েছিল। হি কান্ট স্ট্যান্ড পিকক্স।’
মুকুল দেখলাম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে আবার সেই গম্ভীর অথচ মিষ্টি গলায় বলল, ‘এখানে থাকব না।’
ডক্টর হাজরা ফেলুদাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আমি বরং গাড়িটা নিয়ে এখানকার সার্কিট হাউসে গিয়ে অপেক্ষা করছি। আপনারা অ্যাদ্দূর এসেছেন, একটু ঘুরেটুরে দেখে নিন। আমি গিয়ে গাড়িটা ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের দেখা হলে সার্কিট হাউসে চলে আসবেন। তবে দুটোর বেশি দেরি করবেন না কিন্তু, তা হলে ওদিকে ফিরতে রাত হয়ে যাবে।’
ডক্টর হাজরার উদ্দেশ্য সফল হয়নি ঠিকই, কিন্তু আমার তাতে বিশেষ দুঃখ নেই। এই প্রথম একটা রাজপুত কেল্লার ভিতরটা দেখতে পাব ভেবেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
কেল্লার গেটের দিকে যখন এগোচ্ছি তখন ফেলুদা আচমকা থমকে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে একটা চাপ দিয়ে বলল, ‘দেখলি?’
বললাম, ‘কী জিনিস?’
‘সেই লোকটা।’
বুঝলাম ফেলুদা সেই লাল জামা-পরা লোকটার কথা বলছে। কিন্তু ও যেদিকে তাকিয়ে রয়েছে, সেদিকে কোনও লাল জামা দেখতে পেলাম না। অবিশ্যি লোকজন অনেক রয়েছে কারণ কেল্লার গেটের বাইরেটা একটা ছোটখাটো বাজার। বললাম, ‘কোথায় লোকটা?’
‘ইডিয়ট। তুই বুঝি লাল জামা খুঁজছিস?’
‘তবে কোন লোকের কথা বলছ তুমি?’
‘তোর মতো বোকচন্দর দুনিয়ায় নেই। তুই শুধু জামাই দেখেছিস, আর কিছুই দেখিসনি। ইট ওয়াজ দ্য সেম ম্যান, চাদর দিয়ে নাক অবধি ঢাকা। কেবল আজ পরেছিল নীল জামা। আমরা যখন বেদেদের দেখতে নেমেছিলাম, সেই সময় একটা ট্যাক্সি যেতে দেখি বিকানিরের দিকে। তাতে দেখেছিলাম এই নীল জামা।’
‘কিন্তু এখানে কী করছে লোকটা?’
‘সেটা জানলে তো অর্ধেক বাজি মাত হয়ে যেত।’
লোকটা উধাও। মনে একটা উত্তেজনার ভাব নিয়ে কেল্লার বিশাল ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকেই একটা বিরাট চাতাল, সেটার ডানদিকে বুকের ছাতি ফুলিয়ে কেল্লাটা দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের খোপরে খোপরে পায়রার বাসা। বিকানির নাকি হাজার বছর আগে একটা সমৃদ্ধ শহর ছিল, যেটা বহুকাল হল বালির তলায় তলিয়ে গেছে। ফেলুদা বলল যে, কেল্লাটা চারশো বছর আগে রাজা রায় সিং প্রথম তৈরি করতে শুরু করেন। ইনি নাকি আকবরের একজন বিখ্যাত সেনাপতি ছিলেন।
আমার মনের ভিতরটা কিছুক্ষণ থেকে খচখচ করছে একটা কথা ভেবে। লালমোহনবাবুরা এখনও এলেন না কেন? তাদের কি তা হলে রওনা হতে দেরি হয়েছে? নাকি রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে? যাক গে। ওদের কথা ভেবে আশ্চর্য ঐতিহাসিক জিনিস দেখার আনন্দ নষ্ট করব না।
যে জিনিসটা সবচেয়ে অদ্ভুত লাগল সেটা হল কেল্লার অস্ত্রাগার। এখানে যে শুধু অস্ত্রই রয়েছে তা নয়, আশ্চর্য সুন্দর একটা রুপোর সিংহাসনও রয়েছে, যার নাম ‘আলম আম্বালি’। এটা নাকি মোগল বাদশাহদের উপহার। এ ছাড়া রয়েছে যুদ্ধের বর্ম শিরস্ত্রাণ ঢাল তলোয়ার বল্লম ছোরা—আরও কত কী! এক-একটা তলোয়ার এত বিরাট আর এত তাগড়াই যে দেখলে বিশ্বাসই হয় না সেগুলো মানুষে হাতে নিয়ে চালাতে পারে। এগুলো দেখে জটায়ুর কথা যেই মনে পড়েছে, অমনি দেখি আমার টেলিপ্যাথির জোরে ভদ্রলোক হাজির। বিরাট কেল্লার বিরাট ঘরের বিরাট দরজার সামনে তাকে আরও খুদে আর আরও হাস্যকর মনে হচ্ছে।
লালমোহনবাবু আমাদের দেখতে পেয়ে এক গাল হেসে চারিদিকে চেয়ে শুধু বললেন, ‘রাজপুতরা কি জায়েন্ট ছিল নাকি মশাই। এ জিনিস তো মানুষের হাতে ব্যবহার করার জিনিস নয়।’
যা ভেবেছিলাম তাই। সত্তর কিলোমিটারের মাথায় ওদের ট্যাক্সির একটা টায়ার পাংচার হয়। ফেলুদা বলল, ‘আপনার সঙ্গের আর দুজন কোথায়?’
‘ওরা বাজারে কী সব কিনতে লেগেছে। আমি আর থাকতে না পেরে ঢুকে পড়লুম।’
আমরা ফুলমহল, গজমন্দির, শিশমহল আর গঙ্গানিবাস দেখে যখন চিনি বুর্জে পৌঁছেছি, তখন মন্দার বোস আর মিস্টার মাহেশ্বরীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তাঁদের হাতে খবরের কাগজের মোড়ক দেখে বুঝলাম তাঁরা কেনাকাটা করেছেন। মন্দার বোস বললেন, ‘ইউরোপে মধ্যযুগের দুর্গ-টুর্গগুলোতে যে অস্ত্র দেখেছি, আর এখানেও যা দেখলাম, তাতে একটা জিনিসই প্রমাণ করে: মানুষ জাতটা দিনে দিনে দুর্বল হয়ে আসছে, আর আমার বিশ্বাস সেই সঙ্গে তারা আয়তনেও ছোট হয়ে আসছে।’
‘এই আমার মতো বলছেন?’ লালমোহনবাবু হেসে বললেন।
‘হ্যাঁ। ঠিক আপনারই মতো’, মন্দার বোস বললেন, ‘আমার বিশ্বাস আপনার ডাইমেনশনের লোক ষোড়শ শতাব্দীর রাজস্থানে একটিও ছিল না। ওহো—বাই দ্য ওয়ে—’ মন্দারবাবু ফেলুদার দিকে ফিরলেন, ‘আপনার জন্য এইটে এসে পড়েছিল সার্কিট হাউসে রিসেপশন ডেস্কে।’
ভদ্রলোক পকেট থেকে একটা খাম বার করে ফেলুদাকে দিলেন। তাতে টিকিট নেই। বোঝাই যায় কোনও স্থানীয় লোক সেটা দিয়ে গেছে।
ফেলুদা চিঠি খুলতে খুলতে বলল, ‘আপনাকে কে দিল?’
‘আমরা যখন বেরচ্ছি, তখন বাগ্রি বলে যে ছোকরাটা রিসেপশনে বসে, সেই দিল। বললে কে কখন রেখে গেছে জানে না।’
ফেলুদা ‘এক্সকিউজ মি’ বলে চিঠিটা পড়ে আবার খামে পুরে পকেটে রেখে দিল। তাতে কী লেখা আছে কিছুই বুঝতে পারলাম না, জিজ্ঞেসও করতে পারলাম না।
আরও আধঘন্টা ঘোরার পর ফেলুদা ঘড়ি দেখে বলল, ‘এবার সার্কিট হাউসে যেতে হয়।’ কেল্লাটা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না, কিন্তু উপায় নেই।
কেল্লার বাইরে দুটো ট্যাক্সিই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক হল যে এবার আমরা এক সঙ্গেই ফিরব। যখন ট্যাক্সিতে উঠছি, তখন ড্রাইভার বলল ডক্টর হাজরারা নাকি সার্কিট হাউসে যাননি। উয়ো যো লেড়কা থা—ও নাকি বলেছে সার্কিট হাউসে যাবে না।
‘তবে কোথায় গেছে ওরা?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
তাতে ড্রাইভার বলল, ওরা গেছে দেবীকুণ্ডে। সেটা আবার কী জায়গা? ফেলুদা বলল, ওখানে নাকি রাজপুত যোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ আছে।
পাঁচ মাইল পথ, যেতে লাগল দশ মিনিট। জায়গাটা সত্যিই সুন্দর, আর তেমনি সুন্দর স্মৃতিস্তম্ভগুলো। পাথরের বেদির উপর পাথরের থাম, তার উপর পাথরের ছাউনি, আর মাথা থেকে পা অবধি সুন্দর কারুকার্য। এই রকম স্মৃতিস্তম্ভ চারদিকে ছড়ানো রয়েছে কমপক্ষে পঞ্চাশটা। সমস্ত জায়গাটা গাছপালায় ভর্তি, সেই সব গাছে টিয়ার দল জটলা করছে, এ-গাছ থেকে ও-গাছ ফুরুৎ ফুরুৎ করে উড়ে বেড়াচ্ছে আর ট্যাঁ ট্যাঁ করে ডাকছে। এত টিয়া একসঙ্গে আমি কখনও দেখিনি।
কিন্তু ডক্টর হাজরা কোথায়? আর কোথায়ই বা মুকুল?
লালমোহনবাবুর দিকে চেয়ে দেখি, উনি উশখুশ করছেন। বললেন, ‘ভেরি সাস্পিশাস্ অ্যান্ড মিস্টিরিয়াস।’
‘ডক্টর হাজরা!’ মন্দার বোস হঠাৎ এক হাঁক দিয়ে উঠলেন। তাঁর ভারী গলার চিৎকারে এক ঝাঁক টিয়া উড়ে পালাল, কিন্তু ডাকের কোনও সাড়া পাওয়া গেল না।
আমরা কজনে খুঁজতে আরম্ভ করে দিলাম। স্মৃতিস্তম্ভে স্মৃতিস্তম্ভে জায়গাটা প্রায় একটা গোলকধাঁধার মতো হয়ে রয়েছে। তারই মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে ফেলুদাকে দেখলাম ঘাস থেকে একটা দেশলাইয়ের বাক্স কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে পুরল।
শেষকালে কিন্তু লালমোহনবাবুই আবিষ্কার করলেন ডক্টর হাজরাকে। তাঁর চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি, একটা আমগাছের ছায়ায় শেওলা-ধরা বেদির সামনে মুখ আর হাত পিছন দিকে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে কুঁকড়ে পড়ে আছেন ডক্টর হাজরা। তাঁর মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত অসহায় গোঁ গোঁ শব্দ বেরোচ্ছে।
ফেলুদা হুমড়ি খেয়ে ভদ্রলোকের উপর পড়ে তাঁর হাতের বাঁধন আর মুখের গ্যাগ খুলে দিল। দেখেই মনে হল যেটা দিয়ে বাঁধা হয়েছে সেটা একটা পাগড়ি থেকে ছেড়া কাপড়।
মন্দার বোস বললেন, ‘ব্যাপার কী মশাই, এমন দশা হল কী করে?’
সৌভাগ্যক্রমে ডক্টর হাজরা জখম হননি। তিনি মাটিতে ঘাসের উপরে বসে কিছুক্ষণ হাঁপালেন। তারপর বললেন, ‘মুকুল বলল, সার্কিট হাউসে যাবে না। অগত্যা গাড়ি করে ঘুরতে লাগলাম। এখানে এসে তার জায়গাটা ভাল লেগে গেল। বলল—এগুলো ছত্রী। এগুলো আমি জানি। আমি নেবে দেখব।—নামলাম। ও এদিক ওদিক ঘুরছিল, আমি একটু গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে আক্রমণ। হাত দিয়ে মুখটা চেপে মাটিতে উপুড় করে ফেলে হাঁটুটা দিয়ে মাথাটা চেপে রেখে হাত দুটো পিছনে বেঁধে ফেলল। তারপর মুখে ব্যান্ডেজ।’
‘মুকুল কোথায়?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল। তার গলার স্বরে উৎকণ্ঠা।
‘জানি না। একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়েছিলাম বটে আমাকে বাঁধবার কিছুক্ষণ পরেই।’
‘লোকটার চেহারাটা দেখেননি?’ ফেলুদা প্রশ্ন করল।
ডক্টর হাজরা মাথা নাড়লেন। ‘তবে স্ট্রাগ্ল-এর সময় তার পোশাকের একটা আন্দাজ পেয়েছিলাম। স্থানীয় লোকের পোশাক। প্যান্ট-শার্ট নয়।’
‘দেয়ার হি ইজ!’ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন মন্দার বোস।
অবাক হয়ে দেখলাম, একটা ছত্রীর পাশ থেকে মুকুল আপনমনে ঘাস চিবোতে চিবোতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ডক্টর হাজরা একটা হাঁপ ছাড়ার শব্দ করে ‘থ্যাংক গড’ বলে মুকুলের দিকে এগিয়ে গেল।
‘কোথায় গিয়েছিলে মুকুল?’
কোনও উত্তর নেই।
‘কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ?’
‘ওইটার পিছনে।’ মুকুল আঙুল দিয়ে একটা ছত্রীর দিকে দেখাল।
‘ও রকম বাড়ি আমি দেখেছি।’
ফেলুদা বলল, ‘যে লোকটা এসেছিল তাকে তুমি দেখেছিলে?’
‘কোন লোকটা?’
ডক্টর হাজরা বললেন, ‘ওর দেখার কথা নয়। এখানে এসেই ও দৌড়ে এক্সপ্লোর করতে চলে গেছে। বিকানিরে এসে এ রকম যে একটা কিছু ঘটতে পারে সেটাও ভাবিনি, তাই আমিও ওর জন্য চিন্তা করিনি।’
তা সত্ত্বেও ফেলুদা আবার প্রশ্ন করল, ‘তুমি দেখোনি লোকটাকে—যে ডক্টর হাজরার হাত-মুখ বাঁধল?’
‘আমি সোনার কেল্লা দেখব।’
বুঝলাম মুকুলকে কোনও প্রশ্ন করা বৃথা।
ফেলুদা হঠাৎ বলল, ‘আর টাইম্ ওয়েস্ট করে লাভ নেই। একদিক দিয়ে ভালই যে মুকুল আপনার সঙ্গে বা আপনার কাছাকাছি ছিল না। থাকলে হয়তো তাকে নিয়েই উধাও হত লোকটা। যদি সে লোক যোধপুর ফিরে গিয়ে থাকে তা হলে যথেষ্ট স্পিডে গাড়ি চালালে হয়তো এখনও তাকে ধরা যাবে।’
দু মিনিটের মধ্যে আমরা গাড়িতে উঠে রওনা হয়ে গেলাম। লালমোহনবাবু এবার আমাদের সঙ্গে এলেন। বললেন, ‘ও লোকগুলো বড্ড ড্রিংক করে। আমার আবার মদের গন্ধ সহ্য হয় না।’
পাঞ্জাবি ড্রাইভার হরমিত সিং ষাট মাইল পর্যন্ত স্পিড তুলল গাড়িতে। এক জায়গায় রাস্তার মাঝখানে একটা ঘুঘু বসেছিল, সেটা উড়ে পালাতে গিয়ে আমাদের গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ধাক্কা খেয়ে মরে গেল। আমি আর মুকুল সামনে বসেছিলাম। একবার পিছন ফিরে দেখলাম, লালমোহনবাবু ফেলুদা আর ডক্টর হাজরার মাঝখানে কুঁকড়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। তাঁর মুখ ফ্যাকাশে হলেও ঠোঁটের কোণে একটা হাসি দেখে বুঝলাম, তিনি অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়েছেন; হয়তো তাঁর সামনের গল্পের প্লটও মাথায় এসে গেছে।
শ’খানেক মাইল আসার পর বুঝতে পারলাম যে, শয়তানের গাড়ি ধরতে পারার কোনও সম্ভাবনা নেই। সে গাড়িটাও যে নতুন নয়, আর তাতেও যে স্পিড ওঠে না, এ কথা ভাবলে চলবে কেন!
যোধপুর যখন পৌঁছলাম, তখন শহরের বাতি জ্বলে উঠেছে। ফেলুদা বলল, ‘লালমোহনবাবু, আপনাকে নিউ বোম্বে লজে নামিয়ে দেব তো?’
ভদ্রলোক মিহি গলায় বললেন, ‘তা তো বটেই—আমার জিনিসপত্তর তো সব সেখানেই রয়েছে; কিন্তু ভাবছিলুম খাওয়াদাওয়া করে যদি আপনাদের ওখানে…মানে…’
‘বেশ তো’, ফেলুদা আশ্বাসের সুরে বলল, ‘জিজ্ঞেস করে দেখব, সার্কিট হাউসে ঘর খালি আছে কি না। আপনি বরং ন’টা নাগাদ একটা টেলিফোন করে জেনে নেবেন।’
আমি ভাবছি আজকের ঘটনার কথা। শক্ত লোকের পাল্লায় পড়েছি আমরা, সে কথা বেশ বুঝতে পারছি। এ লোকই কি সেই লাল জামা পরা লোক? যে আজ বিকানির গিয়েছিল নীল জামা পরে? জানি না। এখন পর্যন্ত কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় ফেলুদাও পারছে না। যদি পারত তা হলে ওর মুখের ভাবই অন্য রকম হয়ে যেত। অ্যাদ্দিন ওর সঙ্গে থেকে আর ওর তদন্তের কায়দাটা দেখে। আমি এটা খুব ভাল করেই জেনেছি।
সার্কিট হাউসে পৌঁছে যে যার ঘরের দিকে গেলাম। তিন নম্বরে ঢোকার আগে ফেলুদা ডক্টর হাজরাকে বলল, ‘কিছু মনে করবেন না, আমি এই কাপড়টা আমার কাছে রাখছি।’ ডক্টর হাজরাকে যে কাপড়টা দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সেটা ফেলুদা সঙ্গে নিয়ে নিয়েছিল।
হাজরা বললেন, ‘স্বচ্ছন্দে।’ তারপর ফেলুদার দিকে এগিয়ে এসে গলা নামিয়ে বললেন, ‘বুঝতেই তো পারছেন প্রদোষবাবু, ব্যাপার গুরুতর। যেটা আশঙ্কা করা গিয়েছিল, সেটাই হতে চলেছে। আমি কিন্তু এতটা গোলমাল হবে সেটা অনুমান করিনি।’
ফেলুদা বলল, ‘আপনি ভাবছেন কেন? আমি তো রয়েছি। আপনি নির্ভয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। আমার বিশ্বাস, আপনি যদি আজ দেবীকুণ্ডে না গিয়ে সার্কিট হাউসে যেতেন, তা হলে আপনাকে এতটা নাজেহাল হতে হত না। অবিশ্যি মুকুলকে যে কিডন্যাপ করতে পারেনি লোকটা এটাই ভাগ্য। এবার থেকে আমাদের কাছাকাছি থাকবেন, তা হলে দুর্যোগের ভয়টা অনেক কমবে।’
ডক্টর হাজরার মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ভাবটা গেল না। বললেন, ‘আমি কিন্তু আমার নিজের জন্য ভাবছি না। বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার ব্যাপারে অনেক রিস্ক নিতে হয়। ভাবছি আপনাদের দুজনের জন্য। আপনারা তো একেবারে বাইরের লোক।’
ফেলুদা একটু হেসে বলল, ‘ধরে নিন আমিও একজন বৈজ্ঞানিক, আমিও গবেষণা করছি, আর সেই কারণে আমিও রিস্ক নিচ্ছি।’
মুকুল এতক্ষণ বারান্দার এ-মাথা থেকে ও-মাথা পায়চারি করছিল, ডক্টর হাজরা এবার তাকে ডেকে নিয়ে আমাদের গুড নাইট জানিয়ে অন্যমনস্কভাবে তার ঘরে চলে গেলেন। আমরাও আমাদের ঘরে ঢুকলাম। বেয়ারাকে ডেকে ঠাণ্ডা কোকাকোলা আনতে বলে ফেলুদা সোফায় বসে পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বার করে চিন্তিতভাবে সেগুলোকে টেবিলের উপর রাখল। তারপর অন্য পকেট থেকে বের করল একটা দেশলাই—যেটা দেবীকুণ্ডে কুড়িয়ে পেয়েছিল। টেক্কা-মার্কা দেশলাই। বাক্স খালি। সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এই যে রেলে আসতে এতগুলো স্টেশনে এতগুলো পান-সিগারেটওয়ালাকে দেখলি, তাদের কারুর কাছে টেক্কা দেশলাই ছিল কি না লক্ষ করেছিলি?’
আমি সত্যি কথাটা বললাম। ‘না ফেলুদা, লক্ষ করিনি।’
ফেলুদা বলল, ‘পশ্চিম অঞ্চলের কোনও দোকানে টেক্কা দেশলাই থাকার কথা নয়। রাজস্থানে টেক্কা বিক্রি হয় না। এ দেশলাই রাজস্থানের বাইরে থেকে আনা।’
‘তার মানে এটা সেই লাল জামা-পরা লোকটার নয়?’
‘তোর প্রশ্নটা খুবই কাঁচা হল। প্রথমত, রাজস্থানি পোশাক পরলেই একটা লোক রাজস্থানি হয় না। ওটা যে-কেউ পরতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, ওই লোক ছাড়াও আরও অনেকেই আজ দেবীকুণ্ডে গিয়ে কুকীর্তিটা করার সুযোগ পেয়েছে।’
‘তা তো বটেই! কিন্তু তাদের তো কাউকেই আমরা চিনি না, কাজেই ও নিয়ে ভেবে কী লাভ?’
‘এটাও খুব কাঁচা কথা হল। মাথা খাটাতে শিখলি না এখনও তুই। লালমোহন, মন্দার বোস এবং মাহেশ্বরী—এরা কত দেরিতে কেল্লায় পৌঁছেছে সেটা ভেবে দ্যাখ। আর তারপর ভেবে দ্যাখ—’
‘বুঝেছি, বুঝেছি।’
সত্যিই তো! এটা তো আমার মাথাতেই আসেনি। ওদের আসতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেরি হয়েছিল। লালমোহনবাবু বললেন, গাড়ির টায়ার পাংচার হয়েছিল। যদি না হয়ে থাকে? যদি তিনি মিথ্যে কথা বলে থাকেন? কিংবা সেটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, আর লালমোহনবাবু যদি নিদোষ হয়ে থাকেন, মন্দার বোস আর মাহেশ্বরী তো বাজার না করে দেবীকুণ্ডে গিয়ে থাকতে পারেন।
ফেলুদা এবার একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পকেট থেকে আরেকটা জিনিস বার করল। সেটা দেখেই হঠাৎ বুকটা ধড়াস করে উঠল। এটার কথা এতক্ষণ মনেই ছিল না। এটা সেই মন্দার বোসের দেওয়া চিঠিটা।
‘ওটা কার চিঠি ফেলুদা?’ কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘জানি না,’ বলে ফেলুদা চিঠিটা আমার দিকে এগিয়ে দিল। হাতে নিয়ে দেখি, সেটা ইংরেজিতে লেখা চিঠি। মাত্র একটা লাইন—বড় হাতের অক্ষরে ডট পেন দিয়ে লেখা—
‘ইফ ইউ ভ্যালু ইয়োর লাইফ—গো ব্যাক টু ক্যালকাটা ইমিডিয়েটলি।’
অর্থাৎ তোমার জীবনের প্রতি যদি তোমার মায়া থাকে, তা হলে এক্ষুনি কলকাতায় ফিরে যাও।
আমার হাতে চিঠিটা কাঁপতে লাগল। আমি চট করে সেটা টেবিলের উপর রেখে হাত দুটোকে কোলের উপর জড়ো করে নিজেকে স্টেডি করার চেষ্টা করলাম।
‘কী করবে ফেলুদা?’
সিলিং-এর ঘুরন্ত পাখাটার দিক থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে ফেলুদা প্রায় আপন মনেই বলল, ‘মাকড়সার জাল…জিয়োমেট্রি…। এখন অন্ধকার…দেখা যাচ্ছে না…রোদ উঠলে জালে আলো পড়বে—চিক্ চিক্ করবে…তখন ধরা পড়বে জালের নকশা!…এখন শুধু আলোর অপেক্ষা…’