০৬. ডাইনিং টেবিলের এক দিকে

ডাইনিং টেবিলের এক দিকে সুব্রতবাবু আর বাবাই বসার পর পরই তাতাই প্রশ্ন করে, আমার পাশে কে বসবে?

শিবানী বলেন, তোর পাশে শিল্পী বসবে।

আমার পাশে বিনোদিনী বসবে?

তাতাই সঙ্গে সঙ্গেই বলে, অসম্ভব! এই অসামান্যা নটীকে পাশে নিয়ে আমি খেতে পারব না।

দুর্বাও সঙ্গে সঙ্গে চাপা হাসি হাসতে হাসতে তাতাইয়ের একটা কান ধরে বলে, আর যদি আমাকে নটী বিনোদিনী বলেছ তাহলে তোমার পিঠে দুম দুম। করে…

তাতাই গলা চড়িয়ে বলে, ও বড়মা, এতে শুধু নটী বিনোদিনী না, এতো আরেক ফুলন দেবী।

ওর কথা শুনে সবাই হেসে ওঠেন।

দুর্বা হাসি থামিয়ে ওকে বলে, আমি তোমাকে সমস্ত মন-প্রাণ-উজাড় করে দিলাম আর তুমি আমাকে…

হোল্ড ইওর টাংগ! ছলনাময়ী।

তাতাই না থেমেই বলে, সমস্ত মন-প্রাণ-হৃদয় দেবে কি করে? আগেই তো ওসব দিয়ে এসেছ তোমার ইহকালের পরকালের বিকাশদাকে।

আবার সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন।

দুর্বা কোনমতে হাসি চেপে সুব্রতবাবুর দিকে তাকিয়ে বলে, ছেলে, আমি বলে দিচ্ছি, তোমরা এই অসভ্য ছেলেকে সামলাও; তা না হলে…

ঠিক সেই সময় টেবিলের উপর খাবার দাবার দেখেই তাতাই বলে, এইসব রান্নাবান্না দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন যেন কেউ আমাকে বিরক্ত না করে।

কিছুক্ষণ পর সুব্রতবাবু বলেন, হ্যাঁরে তাতাই সোনা, তুই দেড়-দু’মাস থাকবি তো?

না, না জ্যেঠু আমি সামনের রবিবারেই ফিরব।

সে কি?

শিবানী বলেন, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এসেছিস?

হ্যাঁ, তার বেশি থাকার উপায় নেই। প্রফেসর রাও চান না, পাশ করার পর। চাকরি-বাকরি শুরু করার আগে একটা দিনও নষ্ট করি।

ভারতী বলেন, তুই আবার কবে আসবি?

জানি না বড়মা। প্রফেসর পারমিশন না দিলে তো আসতে পারব না।

পাঁচ-সাত মিনিট পরে ভারতী প্রশ্ন করেন, তুই প্রফেসরের কাছে ক’দিনের ছুটি চেয়েছিলি?

তাতাই একটু হেসে বলে, আমি আসার ব্যাপারে কিছুই বলেনি। প্রফেসর নিজেই আমাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে বললেন, এক সপ্তাহের জন্য কলকাতা ঘুরে এসো। আমি জানি, বাড়িতে সবাই তোমাকে একটু কাছে পাবার জন্য হা করে বসে আছেন।

সুব্রতবাবু সঙ্গে সঙ্গে বলেন, উনি তোকে ঠিক নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন, তাই না?

জ্যেঠু, তার চাইতেও অনেক বেশি। উনি যে আমাকে কি স্নেহ করেন, কি ভালবাসেন, তা বলা যায় না।

আরো কত কথা হয় খেতে বসে।

ওদের খাওয়া শেষ হবার পর ভারতী আর শিবানী খেতে বসেন। ওদের ঠিক সামনে বসে তাতাই।

একটু পরে দুর্বা এসে ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়ায়।

টুকটাক নানা কথাবার্তার মাঝখানে দুর্বা বলে, আচ্ছা তাতাই, জ্যান্ত মানুষের পেট কাটতে ভাল লাগে?

তোমার ভুড়ি কাটাকুটি করে যে আনন্দ পাবো, তা কি অন্যের পেট কেটে পেতে পারি?

দেখছ বড়মা, ও পদে পদে আমাকে কেমন অপমান করছে?

আমি তোমাকে অপমান করলাম?

আমার পেটকে ভুড়ি বলে…

ওর কথার মাঝখানেই তাতাই বলে, শুধু ভুড়ি না, তুমি একটি আস্ত আড়াই মনি আলুর বস্তা!

তাতাই!

দুর্বা গলা চড়িয়ে বলেই দুহাত দিয়ে ওর মাথার চুল ধরে টান দেয়।

আঃ! কি আরাম! এবার পা দুটো টিপে দাও তো।

পা না, আমি তোমার গলা টিপে দেব।

তা তুমি দিতে পারো। আজকাল তোমাদের মত মেয়েরা হরদম এর ওর গলা টিপে খতম করে সোনা-দানা-টাকাকড়ি নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

দুর্বা একটু হেসে বলে, বড়মা, দেখছ, তোমাদের আদরের তাতাইসোনা কনন ডয়েল-ফেলুদার চাইতেও বড় গোয়েন্দা হয়েছে।

তাতাই বলে, বড়মা আলতু-ফালতু মেয়ের কথায় কান না দিয়ে আমার কথা শোনো!

হ্যাঁ, বল।

আমি একেক দিন একেক জনের কাছে শোব।

হ্যাঁ, শুবি; তোকে কে বাধা দিচ্ছে?

আজ ভাইদার কাছে, কাল জ্যেঠুর কাছে, মঙ্গল, বুধ তোমাদের দুজনের কাছে, বৃহস্পতি-শুক্র তোমাদের দু’জনের মাঝখানে আর যাবার আগের রাত্রে আবার ভাইদার কাছে…।

দুর্বা মুখ টিপে হেসে বলে, আমার কাছে কবে শোবে?

দিনে-দুপুরে মা-বড়মার সামনেই তুমি আমার গলা টিপে মারতে চাইছিলে; তোমার সঙ্গে রাত কাটাবার আগেই আমার হার্ট অ্যাটাক হবে।

যাইহোক ভারতী-শিবানীর খাওয়া শেষ হতেই তাতাই বাবাইয়ের পাশে শুয়ে পড়ে। দু’জনে টুকটাক কথাবার্তা বলে। একটু পরেই দুর্বা এসে তাতাইকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে, সরে শোও।

কেন?

আগে একটু সরে যাও; তারপর বলছি।

তাতাই একটু সরে যেতেই দূর্বা ওর পাশে শোয়।

ভাইদা, প্লীজ পুস হার অফ।

ও কি আমার পাশে শুয়েছে যে ওকে আমি সরিয়ে দেব?

হা ভগবান! কি বিপদে পড়লাম! এমন বেহায়া মেয়ে তো আমি জীবনে দেখিনি।

শেষ পর্যন্ত বাবাইয়ের অনুরোধে আবার ওদের যুদ্ধ বিরতি হয়। তিনজনে অনেকক্ষণ গল্পগুজব করে।

তারপর হঠাৎ উঠে পড়েই দুর্বা ডান হাত দিয়ে তাতাইয়ের গাল টিপে আদর করে আর এক গালে চুমু খেয়ে বলে, বয়ফ্রেন্ড গুড নাইট।

.

পুরো একটা সপ্তাহ কি করে যে উড়ে গেল, তা কেউই টের পেলেন না। এই সাতদিন যেন স্বপ্নের মতো কেটে গেল।

রবিবার এয়ারপো।র্ট রওনা হবার আগে তাতাই জ্যেঠু বড়মা আর মাকে দু’হাত দিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে, প্রণাম করে। বলে, সত্যি, প্রাণভরে আনন্দ করলাম এই সাতদিন। তাছাড়া মনের সুখে খেলাম।

ওরা তিনজনেই বলেন, এর মধ্যে যদি আসতে না পারিস, তাহলে রেজাল্ট বেরুবার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের খবর দিবি।

বাবাই আর দুর্বা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওরা তাতাইকে নিয়ে এয়ারপোর্ট যাচ্ছে।

তাতাই হিপ পকেট থেকে পার্স বের করে বলে, মা, বড়মা, দুই মাসীকে ডাক দাও।

দুই মাসী আসতেই তাতাই ওদের হাতে দুশ করে টাকা দিয়ে বলে, তোমরা দারুণ খাইয়েছ।

এবার তাতাই পার্স থেকে দু’শ টাকা বের করে দুর্বার সামনে ধরে বলে, মাসীদের দিলাম আর তোমার মত কাজের মেয়েকে দেব না, তা তো হয় না।

সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন।

দুর্বা কোন মতে হাসি থামিয়ে বলে, আচ্ছা বয়ফ্রেন্ড, তুমি কি এখনও আমার পিছনে না লেগে শান্তি পাচ্ছো না?

.

তাতাই চলে যাবার পর সবার মনেই এক বিচিত্র শূন্যতা। সবার মুখেই এক কথা, ও এলে যেন উৎসব শুরু হয়ে যায়। কি আনন্দেই মাতিয়ে রাখে সবাইকে।

দুর্বা বলে, এতদিন শুধু ওর কথা শুনেছি, চিঠি পড়েছি, ছবি দেখছি; তাতেই ওকে ভাল না বেসে থাকতে পারিনি কিন্তু এই এক সপ্তাহ দিন-রাত্তির ওকে কাছে পেয়ে আমি সত্যি পাগল হয়ে গেছি।

ও মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, আমি জানতাম ও রূপে গুণে, স্বভাব-চরিত্রে লেখাপড়ায় ওর তুলনা হয় না কিন্তু ও যে এমন করে সবাইকে ভালবাসতে পারে, কাছে টেনে নিতে পারে, তা ভাবতে পারিনি।

ভারতী বলেন, হ্যাঁ, দূর্বা, তুমি ঠিকই বলেছ।

দুর্বা একটু ম্লান হেসে বলে, তাতাইকে যে ভালবাসবে, তার পক্ষে ওকে ছেড়ে থাকা সত্যি খুব কষ্টকর।

শিবানীও একটু ম্লান হেসে বলেন, তাতে আমরা প্রতি মুহূর্তে মর্মে মর্মে উপলবদ্ধি করি।

পরের দিনই সোমবার। ন’টা থেকে সাড়ে ন’টার মধ্যেই সুব্রতবাবু, বাবাই আর ভারতী-শিবানী বেরিয়ে গেলেন। দুর্বা কঁকা বাড়িতে টিকতে পারে না। সারাদিন শুধু তাতাইয়ের কথা ভাবে।

বিকেলের দিকে ভারতী আর শিবানী কলেজ থেকে ফিরে এলেন।

দুর্বাকে দেখেই ভারতী একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তাতাই চলে যাওয়ায় এমনই মন খারাপ যে আমি আর শিবানী পড়াতে পারিনি।

আমি যে কি করে সারা দুপুর একলা একলা কাটিয়েছি, তাও তোমরা ভাবতে পারবে না। শুধু তাতাইয়ের কথা ভেবেছি।

হ্যাঁ, মা, তা তো হবেই।

একটু পরেই বাবাই ফিরে আসে।

ওকে দেখেই শিবানী বলেন, তুই আজ এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি?

ছোট মা, তাতাইয়ের জন্য একদম মন ভাল না। আজ কোন কাজে মন লাগেনি। কোনমতে সময় কাটিয়ে চলে এলাম।

কি আশ্চর্য! ছ’টা বাজতে না বাজতেই সুব্রতবাবুও ফিরে এলেন। সবাই অবাক!

দুর্বা প্রশ্ন করে, ছেলে, তোমার কি শরীর ঠিক নেই?

মা জননী, শরীর ঠিকই আছে কিন্তু তাতাই সোনার জন্য…

ওনাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ভারতী বলেন, সবারই এক অবস্থা।

তবু দিন যায়, যায় দিনের পর দিন। দেখতে দেখতে একটা না, দু-দু’টো মাস কেটে যায়।

.

সেদিন শনিবার।

বাবাই বাড়ি ফিরেছে সাতটা নাগাদ। সুব্রতবাবু এলেন প্রায় পৌনে আটটায়।

বাবাই চা খেয়ে দশ-পনের মিনিট খবরের কাগজের খেলার পাতা দেখেই বাথরুমে গেল স্নান করতে। স্নান করার পর ও ক্লান্তিতে একটু শোয়।

দুর্বা ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, কিছু খাবে?

না।

একটু পরেই ভারতী ছেলের ঘরে এসে বলেন, বাবাই, আমি শিবানীর কাছে যাচ্ছি। তোরা খাবার আগে আমাকে ডাক দিস।

আমি টি. ভি. তে একটু খেলা দেখব তুমি ময়নাকে বলে যাও।

হ্যাঁ, ওকেও বলেছি।

যাইহোক আটটা বাজার একটু পরেই বাবাইয়ের মোবাইল বেজে ওঠে।

বাবাই উঠে বসতে বসতেই আপনমনেই বলে, এখন আবার কে ফোন করে? যাইহোক ও নম্বরটা খেয়াল না করেই বোতাম টিপে বলে, হ্যালো।

ওদিক থেকে তারস্বরে চিৎকার করে তাতাই বলে, ভাইদা, আমি এবারও প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল পাচ্ছি। একটু আগেই রেজাল্ট বেরল।

বাবাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ও উত্তেজিত হয়ে বলে যায়, ন’টায় স্টার নিউজ দেখো। আমি আর প্রফেসর রাও এক্ষুনি ওদের স্টুডিওতে যাচ্ছি। আমাদের ইন্টারভিউ হবে।

তাতাইয়ের কথা শেষ হতেই বাবাই ঘর থেকে ছুটে ছোট মা-র কাছে যেতে যেতে পাগলের মতো চিৎকার করে বলতে শুরু করে, মা! মা! ও ছোটমা! ও বাবা! ভাইয়া আবার প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল পাচ্ছে। স্টার নিউজে নটায় ভাইয়ার ইন্টারভিউ।

সুব্রতবাবু বাথরুম থেকে বেরুবার পর পরই বাবাইয়ের চিৎকার শুনেই বাচ্চা ছেলের মতো লাফাতে লাফাতে ও বাড়ি যেতে যেতে সারা পাড়াকে জানিয়ে দেন, আমাদের তাতাইসোনা হ্যাজ ডান ইট এগেন! তাতাইসোনা হ্যাজ ডান ইট এগেন।

ওদিকে আনন্দে খুশিতে শিবানী আর ভারতী চোখের জলের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন।

শিবানী হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই ভারতাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ছেলেটা আমার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট আজ দূর করে দিল। আজ আর আমার কোন দুঃখ নেই।

আনন্দে খুশিতে দুর্বা স্তব্ধ। ওর শুধু মনে হচ্ছে, ছুটে গিয়ে তাতাইকে জড়িয়ে ধরতে, আদর করতে।

সুব্রতবাবু শিবানীর ঘরে পা দিয়েই চিৎকার করেন, ও বৌমা, তপুর ছবিতে প্রণাম করে বলল, তাতাই সোনা হ্যাজ ডান ইট এগেন! তাতাই সোনা ওর স্বপ্ন সার্থক করেছে।

হ্যাঁ, শিবানী ছুটে গিয়ে স্বামীর বড় ছবিতে মাথা ঠেকিয়ে ঝর ঝর করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, ওগো, তোমার তাতাইসোনা আবার প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল পাবে। শুধু তোমার আশীর্বাদেই তোমার ছেলে দু’-দু’বার প্রেসিডেন্টস গোল্ড মেডেল পেলো।

ওদিকে বাবাই পাগলের মতো চারদিকে ছোটাছুটি করে চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে, ভাইয়া আবার প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছে। ন’টার স্টার নিউজ দেখুন। ভাইয়ার ইন্টারভিউ হবে।

সারা পাড়ার লোক ভেঙে পড়েছে শিবানীর বাড়িতে। ছেলে-মেয়ে বুড়ো বুড়ী সবার মুখেই এক কথা, সত্যি অকল্পনীয়। তাই আমাদের প্রেস্টিজ বাড়িয়ে দিলো।

বাবাইকে হঠাৎ সামনে দেখেই সুব্রতাবু গলা চড়িয়ে বলেন, ওরে, শিগগির টি. ভি. ঠিক কর।

ছোট মা-র ঘরে তো…

ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সুব্রতবাবু বলেন, ওরে না, না, বৌমার ঘরে না। তপুর ঘরে টি. ভি. থাকবে। তপু স্টার নিউজে ছেলের ইন্টারভিউ শুনবে না?

ও ঘরে তো সবার বসার জায়গা…

সুব্রতবাবু এবার বেশ রেগেই বলেন, ওরে বাবা, আমরা সবাই মেঝেতে বসব।

বাবাই সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের বাড়ির কয়েকজনের সাহায্যে তপোব্রতর ঘরে টি. ভি. এনে সব ব্যবস্থা করে।

মাঝখানে পাঁচ মিনিট সবাই অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে। শুধু ঐ ঘরে না, জানলা-দরজার সামনেও অনেকে দাঁড়িয়ে। সুব্রতবাবু হঠাৎ চিৎকার করেন, বাবাই, সাউন্ড খুব জোরে করে দিবি।

বাবাই আগেই স্টার নিউজ চ্যানেল ঠিক করে সাউন্ড অফ করে রাখলো।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, এসে গেছে।

টি. ভি. স্ক্রীনে নিউজ রিডারের ছবি ভেসে উঠতেই সবাই রুদ্ধশ্বাসে সেদিকে তাকিয়ে।…

দিস ইজ স্টার নিউজ-আয়াম সোনিয়া ভর্মা–দ্য হেডলাইন্স : পাকিস্তানী ইনফিলট্রেটর্স হ্যাভ কিলড থার্টি ফাঁইভ মেম্বার্স অব এ ম্যারেজ পার্টি ইন জম্মু ইলেভেন হেভিলি আর্মড টেরোরিস্ট কিলড তামিলনাড়ু প্ৰমালগেটেড অর্ডিনান্স টু চেক অ্যাকটিভিটিজ অব এল. টি. টি. ই. সাপোটার্স ইন্ডিয়া বিট ইংল্যান্ড ইন ফাইন্যাল টেস্ট-রাহুল দ্রাবিড় ম্যান অব দ্য সিরিজ।

সোনিয়া একটু হেসে বলেন, নাউ দেয়ার ইজ এ গুড নিউজ। ডক্টর শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় হাজ ক্রিয়েটেড হিস্ট্রি বাই উইনিং প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল টোয়াইস-ফাস্ট ফর গেটিং রেকর্ড মার্কস ইন সার্জারি ইন দ্য ফাইন্যাল এম. বি. বি. এস অ্যান্ড নাউ ফর টপিং ইন এম. এস. একজামিনেশন অব অল ইন্ডিয়া ইনিস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস।…

উই উইল টক টু ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যান্ড প্রফেসর রাও-এ লিভিং লিজেন্ড ইন দ্যা ফিল্ড অব সার্জারি লেটার অন।…

বিশদ খবর পড়া শুরু হতেই বাবাই শিবানীকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে ওঠে, ছোটমা, ভাইয়া আমাদের পাগল করে দেবে।

শুধু ঘরের ভিতর না, চারদিকে কত লোকজন কিন্তু কারুর মুখে কোন কথা নেই। সবাই মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ তবে সবার চোখেই আনন্দাশ্রু।

বিস্তৃত খবরের পর খেলার খবরও শেষ হলো।

এইবার ভাইয়া আসবে।

সুব্রতবাবু গর্জে ওঠেন, চুপ কর।

না বিজ্ঞাপনের বিরতি।

আবার টিভির পর্দায় সোনিয়া ভার্মার ছবি ভেসে ওঠে; কয়েক মুহূর্ত পরই দেখা যায় তাতাই আর প্রফেসর রাও-কে।…

নাউ লেট মী ইন্ট্রোডিউস-অন মাই রাইট ইজ ডক্টর শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়…

ও সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত জোড় করে নমস্কার করে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি দর্শক শ্রোতাদের।

…অ্যান্ড অন মাই লেফট ইজ প্রফেসর রাও।

সোনিয়া তাতাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, নাউ টেল আস ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় হু ইনস্পার্ড ইউ মোস্ট টু অ্যাচিভ দিস হিস্টোরিক সাকসেস।

…ফ্রাঙ্কলি স্পিকিং, আই ডোন্ট নো এনিথিং অ্যাবাউট ক্রিয়েটিং হিস্ট্রি। ইয়েস আই হ্যাভ ডান ওয়েল। টু পার্সনস, হাভ ইনস্পায়ার্ড মী। ফার্স্ট-মাই ফাদার লেট ডক্টর তপোব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। উনি ফাইন্যাল এম. বি. বি. এস. পরীক্ষায় সার্জারিতে রেকর্ড নম্বর পেয়ে গভর্নরস গোল্ড মেডেল পাবার পর ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির এম. এস. পরীক্ষায় প্রথম হবার জন্য দ্বিতীয় বারও গভর্নর গোল্ড মেডেল পান…

…আই সী…।

…উনি এম, এস, পাশ করার দু’চার বছরের মধ্যেই কলকাতার একজন বিশিষ্ট সার্জেন হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। আনফরচুনেটলি হি ডায়েড ইন অ্যান অ্যাকসিডেন্ট হোয়েন হি ওয়াজ ওনলি থার্টিওয়ান।

…ও মাই গড!

তাই একটু ম্লান হেসে বলে, আই ওয়াজ বর্ন ফিড মাস আফটার মাই ফাদার্স ডেথ।

…ইউ আর এ পসথুমাস চাইল্ড? …ইয়েস, আই অ্যাম।

তাতাই দু’চার সেকেন্ড থেমেই বলে, আই ডোন্ট থিংক আই হ্যাভ মাচ টাইম টু টক অ্যাবাউট হিম তবু একটা বিশেষ ব্যাপার না বলে পারছি না।…

…ইয়েস, প্লীজ টেল আস।

…যাস্ট সেকেন্ডস বিফোর স্টাটিং অপারেশন, স্ক্রাব নার্স গিভ মী দ্য স্ক্যালপৈল-ফর ওপেনিং দ্য অ্যাবডোমেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে একবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিই চারদিকে দেখে নিই লাইফ সেভিং সিস্টেম আর পাশের সহকর্মী ও নার্সদের। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি দেখি, বাবা সামনে দাঁড়িয়ে একটু হেসে ইসারা করে বলেন, শুরু করো। ব্যস! সঙ্গে সঙ্গে আমি ছুরি দিয়ে পেট কাটতে শুরু করি।

…দেন?

…অপারেশনের শেষে স্ক্রাব নার্সের হাতে নিডল আর ক্যাঙ্গা ফেরত দেবার পর মুখ তুলতেই দেখি বাবা এক গাল হেসে থামস আপ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারি, ইয়েস, অপারেশন ইজ সাকসেসফুল!

সোনিয়া বলে, রিয়েলী ভেরি ইনস্পায়ারিং! নাউ হু ইজ দ্য সেকেন্ড পার্সন, টু ইনস্পায়ার ইউ?

…মাই টিচার, মাই গুরু, মাই ফস্টার ফাদার অ্যান্ড মাই দেবতা প্রফেসর রাও! আই কান্ট টক অ্যাবাউই হিম, আয়াম নট কোয়ালিফায়েড টু টক অ্যাবাউট হিম। তবে শুধু একটুকু বলি, হস্টেলে আমার পড়ার টেবিলে মাত্র দু’জনের ছবি আছে।

কার কার?

আমার বাবার আর প্রফেসর রাও-এর। আমি রোজ ঘুম থেকে উঠে ওদের দু’জনকে প্রণাম করি; আবার রাত্রে ঘুমুতে যাবার আগে আমি আমার দুই পরম আরাধ্য দেবতার ছবিতে প্রণাম করি।…

…রিয়েলী ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, ভেরি ইন্সপায়ারিং। সোনিয়া সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন করে, হোয়াট অ্যাবাউট ইওর ফ্যামেলী মেম্বার্স?

…তাতাই এক গাল হেসে বলে, ইয়েস! ফার্স্ট মাই গ্রেট জ্যেঠু…

ইওর সিনিয়র আংকল?

দ্যাটস্ রাইট। হিজ লাভ, অ্যাফেকশান, অ্যান্ড টলারেন্স ফর অল মাই হুইমজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ ইজ অ্যাজ ভাস্ট অ্যাজ স্কাই, অ্যাজ ডিপ অ্যাজ আটলান্টিক।

দেন?

আয়াম এক্সট্রিমলি ফরচুনেট টু হ্যাভ টু মাদার্স-বড়মা অ্যান্ড মা।

সোনিয়া সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করে, বড়মা ইজ ইওর সিনিয়র আংকলস ওয়াইফ?

…দ্যাটস রাইট। মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন কিন্তু আমি দু’জনেরই বুকের দুধ খেয়েছি। মা কলেজে গেলে…

ইজ সী এ প্রফেসর?

মা-বড়মা দুজনেই ঐতিহাসিক বেথুন কলেজের লেকচারার।

ইয়েস গো অন।

আমি যখন খুব ছোট, তখন একজন কলেজে যেতেন। আরেকজন আমাকে দেখতেন। আমার চাইতে আমার দাদা পাঁচ বছরের বড়। তাইতো আমি যখন জন্মেছি, তখন বড়মার বুকে দুধ ছিল না। কোন কারণে আমি খুব কান্নাকাটি করলেই বড়মা আমাকে স্তন্য দান করতেন কিন্তু কি আশ্চর্য! দুধ না থাকলেও বড়মার স্তন্যপান করে আমি নিশ্চয়ই এমন কিছু আনন্দ তৃপ্তি বা শান্তি পেতাম যে আমার কান্না থেমে যেতো।

তাতাইয়ের ইন্টারভিউ চলার সময় পিছন দিক থেকে কে যেন ফ্ল্যাশ জ্বেলে ছবি তোলে কিন্তু কেউই পিছনে ফিরে দেখেন না। সে অবকাশ কারুর নেই।

আবার তাতাই বলে, রাতের শিশির চোখে দেখা যায় না কিন্তু সকালে ভিজে ঘাস দেখে জানা যায় সারা রাত শিশির পড়েছে। মা আর বড়মা ঠিক রাতের শিশিরের মতোই দিবারাত্র আমাকে আশীর্বাদ করে থাকেন। এদের দু’জনের আশীর্বাদই আমার জীবনের সব চাইতে মূল্যবান পুঁজি।

হোয়াট আউট ইওর এলডার ব্রাদার?

ইয়েস মাই ভাইদা! হি ইজ এভরিথিং টু মী। হি ইজ মাই ফ্রেন্ডফিলজফার অ্যান্ড গাইড। আই কান্ট প্লে উইদাউট হিম, আই কান্ট এনজয় উইদাউট হিম, আই কান্ট শিপ উইদাউট হিম, আই কান্ট এনটার একজাম হল উইদাউট সীয়িং হিজ ফেস, আই কান্ট অ্যাপিয়ার উইদাউট হিজ পেন…

তাতাই সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে দুটো পেন দেখিয়ে বলে, অন্যান্য পরীক্ষার মতো এবারও পরীক্ষা শুরু হবার দিন সকালে যথারীতি ভাইদা আমার হস্টেলে এসে হাজির ও দুটো নতুন দামী কলম দিলো।…

ও একটু হেসে বলে, ভাইদার দেওয়া কলম দিয়ে পরীক্ষা দিই বলেই আমার রেজাল্ট এত ভাল হয়।

সোনিয়া দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে, প্রফেসর রাও, ইউ হ্যাভ সীন মেনি মেনি গুড স্টুডেন্ট অব সার্জারি। হোয়াট ইজ দ্য স্পেশালিটি অব ডক্টর ঝন্দ্যোপাধ্যায়?…

…ইয়েস শুভ ইজ স্পেশ্যাল। অর্জুনের লক্ষ্যভেদের কথা সবাই জানে। অর্জুন ঐ মাছের চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায়নি, ঠিক সেই রকমই হচ্ছে শুভর ডেডিকেশান টু সার্জারি।…

সোনিয়া একটু হেসে বলে, ইউ কল হিম শুভ?

ইয়েস! নো ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় টু মী, নট ইভন শুভব্রত।

প্রফেসর রাও মুহূর্তের জন্য থেমেই বলেন, শুভ’র ধ্যান-জ্ঞান-ভালবাসা হচ্ছে সার্জারি; সার্জারি ওর প্রেম, সার্জারি ওর স্বপ্ন, সার্জারি ওর দেবতা।

হোয়াট এ গ্রেট কমপ্লিমেন্ট ফ্রম এ লিজেন্ডারী প্রফেসর টু হিজ হিস্ট্রি-মেকিং স্টুডেন্ট!

সোনিয়া সঙ্গে সঙ্গেই বলে, এনিথিং এলস, প্রফেসর রাও?

ইয়েস!

প্রফেসর রাও চোখ দুটো বড় বড় করে বলেন, অপারেশনের সময় শুভ’র হাত আর আঙ্গুলের মুভমেন্ট দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই।…

হোয়াই?

মুভমেন্ট আর সো ডেলিকেট অ্যান্ড আর্টিটিক যা ভারত নাট্যমের বিখ্যাত ডান্সারদের মধ্যে দেখা যাবে না।…

ডিড হি লার্ন অল দিজ ফ্রম ইউ?

নো নো, ইট ইজ পিওরলি জেনেটিক। শুভ এই অসামান্য ক্ষমতা পেয়েছে তার বিখ্যাত বাবা ও অসামান্যা গর্ভধারিণীর কাছ থেকে। অভিমন্যু যেমন মাতগর্ভে থাকার সময়ই যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিল, ঠিক সেইরকম মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই শুভ এই অনন্য দক্ষতা অর্জন করে।

সোনিয়া মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, প্রফেসর রাও, হোয়াট ইউ থিংক অব ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ফিউচার?

সোনিয়া, তোমাকে আর তোমার মাধ্যমে সারা দেশকে আমি বলে দিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শুভ ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সার্জেন হবেই হবে।

সোনিয়া ডান দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়েই বলে, বাই দ্য ওয়ে ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ডু ইউ প্ল্যান টু ওয়ার্ক ইন ইউনাইটেড স্টেট হোয়ার ইউ উইল হ্যাভ বেটার ফেসিলিটিজ অ্যান্ড অ্যাট দ্য সেম টাইম আর্ন মোর?

তাতাই বেশ জোর করেই বলে, সার্টেনলি নট। আই মে গো অ্যাব্রড ফর প্রফেশন্যাল রিজন বাট আই উইল নেভার নেভার গো টু এ ফরেন কান্ট্রি টু আর্ন ইভন এ পেনি।

ও মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, ডাক্তারী-এঞ্জিনিয়ারিং থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বা সমস্ত রাজ্য সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। এই টাকা আসে পাহাড়ের দুর্ভেদ্য জঙ্গলের বস্ত্রহীন

আদিবাসী, সব চাইতে অনুন্নত গ্রামের দরিদ্রতম পরিবার থেকে মালাবার হিল এর সহস্র সহস্র কোটিপতির কাছ থেকে।…

ইয়েস ইউ আর রাইট।

প্রফেসর রাও হ্যাজ নট ওনলি টট আস সার্জারি, হি হ্যাজ অলসো ট আস টু লাভ দিস কান্ট্রি অ্যান্ড কান্ট্রিমেন। আমি আমার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমার দেশের মানুষের সেবা কর।

ভেরি গুড!

আরো একটা কথা বলতে চাই।…

ইয়েস টেল আস।

আমি শুধু বাধাধরা ডিউটি আওয়ার্সে কাজ করব না। খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম করার পর আবার হাসপাতালে যাব এবং ইমাজেন্সী ও অপারেশন থিয়েটারে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাবো। যেখানে সে সুযোগ পাবো না, সেখানে কাজ করব না।

আর ইউ রেডি টু গো টু ভিলেজেস?

সার্টেনলি।

তাতাই দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলে, আমি যদি আমার গুরুর কণা মাত্র আশীর্বাদ পেয়ে থাকি তাহলে মুক্ত কণ্ঠে বলতে পারি, কোন বড় শহরের চাকচিক্য, বড় হাসপাতাল আর বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে আমাকে কেনা যাবে না।

ও মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, তাছাড়া আমি কখনই অনন্তকাল চাকরি করব। কিছুকাল চাকরি করার পর আমি আমার সাধ্যমতো দেশের মানুষের সেবা করবো।

সোনিয়া খুশির হাসি হেসে বলে, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ফর ইওর ইনস্পায়ারিং ইন্টারভিউ প্রফেসর রাও, উই আর রিয়েলী ভেরি হ্যাপি দ্যাট ইউ কুড ম্যানেজ টু কাম টু আওয়ার স্টুডিও।

সোনিয়া মুহূর্তের জন্য না থেমেই বলে, দেয়ার ইজ এ ফ্লাশ! প্রেসিডেন্ট ডক্টর এ-পিজে আবদুল কালাম অ্যান্ড প্রাইম মিনিষ্টার অটল বিহারী বাজপেয়ী হ্যাভ সেন্ট মেসেজেস অব কনগ্রাচুলেশনস্ টু ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ফর দিজ রিমাকেবল অ্যাচিভমেন্ট। ডিটেলস্ অব দা মেসেজে আর কামিং ইন।…দ্যাটস অল ফর দ্য মোমেস্ট! গুড বাই!

.

আনন্দে খুশিতে গর্বে সবার বুক ভরে যায়। সবার চোখেই জল। সঙ্গে সঙ্গে কতজনের কত গুঞ্জন। এরই মধ্যে শিবানী আস্তে আস্তে এগিয়ে যান স্বামীর বড় ছবির সামনে। কয়েক মুহূর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন স্বামীর দিকে। তারপরই হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই হঠাৎ চিৎকার করে বলেন, শুনলে? শুনলে তোমার ছেলের কথা? তুমি আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়েছ, সবাইকে ঠকিয়েছ কিন্তু ছেলেকে ফাঁকি দিতে পারলে না। সারাজীবন তুমি ছেলের কাছে বন্দী থাকবে; কোনদিন তুমি ওর কাছ থেকে পালাতে পারবে না।

হঠাৎ কে যেন আবার ছবি তোলে।

বাবাই তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফার ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে, আপনিই কি আগেও ছবি তুলছিলেন?

হ্যাঁ।

কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারছি না।

আমি স্টেটসম্যান থেকে এসেছি।

স্টেটসম্যান?

হ্যাঁ।

বসুন, বসুন।

না, না, আমি বসব না।

স্টেটসম্যানের ফটোগ্রাফার মুহূর্তের জন্য থেমেই বলেন, আমি ঘণ্টা খানেক আগেই অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছি। যেহেতু আমি এই সল্টলেকেই থাকি, তাই অফিস থেকে ফোন করে আপনাদের এখানে আসতে বলল।

আপনি একটু মিষ্টি মুখ না করে…

প্লীজ আমাকে এক্ষুনি অফিসে গিয়ে এই ছবি তৈরি করে দিতে হবে।

উনি সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যান।

এদিকে টেলিফোনের বিরাম নেই। আবার বাড়ির সামনে লোকে লোকারণ্য!

বাবাই চিৎকার করে, ময়না, বাবার ঘরে টেলিফোন বাজছে শুনতে পাচ্ছো না?

পাড়ার এক মাসীমা বলেন, দুর্বা শিবানীর টেলিফোন অ্যাটেন্ড করছে।

বাবাই এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা চড়িয়ে বলে, এই শিখা, তুই বাবার ঘর থেকে কর্ডলেস আর আমার মোবাইল…

হ্যাঁ, হ্যাঁ, বাবাইদা, ধরছি।

কিন্তু যেভাবে দুটো টেলিফোনই বেজে চলেছে, ও দুটো টেলিফোন সামলাবে কি করে?

শিখা কর্ডলেসে কথা বলতে বলতেই ইসারায় তানিয়াকে ডেকে মোবাইলটা ওর হাতে দেয়।

কতজনের ফোন আসে তার ঠিকঠিকানা নেই। বেথুনের অধ্যক্ষা-লেকচারার প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রী থেকে শুরু করে জানা-অজানা অসংখ্য মানুষের কাছ থেকেও। আরো আরো অনেকের ফোন আসে।

সবাইকেই বলা হয়, বাড়িতে ও বাড়ির সামনে লোকে লোকারণ্য; এখন শিবানী দেবীর পক্ষে কথা বলা অসম্ভব।

এরই মধ্যে পর পর এসে হাজির আনন্দবাজার, টেলিগ্রাফ, প্রতিদিনের রিপোর্টার-ফটোগ্রাফাররা।

হঠাৎ এসে হাজির মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। উনি শিবানী, ভারতী আর সুব্রতবাবুর গলায় খুব সুন্দর তিনটে মালা পরিয়েই ওদের প্রণাম করে বলেন, আপনাদের ছেলের জন্য আজ সারা দেশের কাছে পশ্চিম বাংলার মুখ উজ্জ্বল হলো। আর সল্টলেকের সবাই মনে করছে, তাদের ঘরের ছেলে ভারত জয় করেছে।

উনি বেরিয়ে যেতে না যেতেই সল্টলেক পৌরসভার চেয়ারম্যান আর অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এসে হাজির। ওরা বিদায় নিতে না নিতেই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অম্লান দত্ত রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধীজির এক দুর্লভ ছবি নিয়ে হাজির। ঐ ছবিটা শিবানী দেবীর হাতে দিয়ে বলেন, চিকিৎসা জগতে শুভব্রত বাঙ্গালির দুর্নাম ঘুচিয়ে এক নয়া নজীর সৃষ্টি করলো। গুরুদেব আর গান্ধীজির এই দুর্লভ ছবিটা ছেলেকে দিয়ে বলবেন, এই দু’জন অসামান্য মহাপুরুষের মতো ওকেও বিশ্বের দরবারে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।

ঠিক এই মুহূর্তেই সারা ঘর দিনের আলোয় ভরে গেল ছ’সাতটি টি. ভি. ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য।

ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে মিষ্টি বিতরণ। সবার মুখেই মিষ্টি কিন্তু কেউ জানে কারা কিনেছে, কারা দিচ্ছে।

বাড়ির সামনে তখন সব বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষের ভীড়।

হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়; হাতে জবা ফুলের মালা ও আরো কি যেন। গাড়ি থেকে নামলেন আরো কয়েকজন। তাদের মধ্যে চারজনের হাতে চারটি হাঁড়ি আর অন্যদের হাতে বিরাট বিরাট ফুলের মালা।

শিবানী আর ভারতাঁকে প্রণাম করে ওদের দুজনের কপালে কালীঘাটের মায়ের সিঁন্দুর দেবার পর মায়ের গলার মালা দেন ওদের হাতে। তারপর দুজনের গলায় বিরাট দুটো মালা পরিয়ে দু’জনের হাতে দু’হাঁড়ি মিষ্টি দিয়ে মমতা বলেন, আজ থেকে আপনারা দুজনে সমস্ত বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের মা-বড়মা হলেন। আর একটা কথা।

ওরা দু’জনেই মমতার মুখের দিকে তাকান।

মমতা বলেন, আজ পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েদের মনে বড় হতাশা; ওরা যেন অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। শুভব্রত এইসব ছেলেমেয়েদের মনে নতুন আশা জাগিয়ে দিল, ওদের মুখে হাসি আর মনে আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে।

মমতা সুব্রতবাবুকে প্রণাম করে গলায় মালা পরিয়ে হাতে মিষ্টির হাঁড়ি দিয়ে বলেন, আজ আপনাদের ছেলে প্রমাণ করে দিল, বড় হতে হলে চাই জ্যেঠু বড়মা, চাই ভাইপো, চাই সংসারে অনেক গুরুজন, অনেক দাদা-দিদি।

ঠিক বলেছেন।

মমতা বাবাইয়ের গলায় মালা আর হাতে মিষ্টির হাঁড়ি দিয়ে বলেন, তুমি কিন্তু আমারও ভাইদা; তোমাকে আমি হাতছাড়া করতে পারব না।

মমতা হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারতী-শিবানীর দিকে তাকিয়ে বলে, ভাইদার বিয়ে হয়নি?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, হয়েছে।

দুর্বা পাশেই ছিল। ওকে দেখিয়েই শিবানী বলেন, এই হচ্ছে ভাইদার স্ত্রী।

ওর দু’হাত ধরে মমতা একগাল হেসে বলেন, তার মানে তুমিই শুভব্রতর গার্লফ্রেণ্ড!

দুর্বা এক গাল হেসে বলে, আমি ওর প্রেয়সী, ও আমার বয়ফ্রেন্ড।

মমতা সারা মুখে খুশির হাসি ছড়িয়ে বলেন, একে এই মা-বড়মা, তারপর ওই জ্যেঠু, তার উপর ভাইদা ছাড়াও এইরকম অসাধারণ সুন্দরী প্রেয়সী না পেলে কি শুভব্রত হওয়া যায়?

মমতা চলে যাবার দশ মিনিটের মধ্যেই পুলিশের পাইলট গাড়ির হর্নে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় এসে থামে শুভব্রতদের বাড়ির সামনে। আগে থেকেই পাঁচ-ছ’জন পুলিশ ছিল বাড়ির সামনে। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছবার কয়েক মিনিট আগেই এক দল পুলিশ নিয়ে এসেছেন এস. পি.। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি থামার আগেই জিপসীগুলো থেকে লাফ দিয়ে নেমেছে কার্বাইনধারী কমান্ডো বাহিনী। মুখ্যমন্ত্রীর পার্সোনাল সিকিউরিটি অফিসার বিদ্যুত গতিতে গাড়ির সামনে থেকে নেমেই খুলে ধরেন পিছনের দরজা। গাড়ি থেকে নামলেন বুদ্ধদেব ভট্টচার্য। পিছনে এক সিকিউরিটি অফিসারের হাতে সুন্দর এক বাস্কেট ফুল।

বুদ্ধদেববাবু একবার দু’হাত জোড় করে সমবেত জনতাকে নমস্কার করেই শিবানী দেবীর বাড়িতে ঢুকে যান।

শিবানী দেবীর হাতে ফুলের বাস্কেট তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্টার টি, ভি’তে খবর আর শুভব্রতর ইন্টারভিউ শুনলাম। নিঃসন্দেহে ও অভাবনীয় কৃতিত্ব অর্জন করেছে কিন্তু অনেক বেশি ভাল লেগেছে দেশে থেকে দেশবাসীর সেবা করার সঙ্কল্পর কথা শুনে। ঠিক এই ধরনের ছেলেমেয়েই আজ আমাদের দরকার।

বুদ্ধদেববাবু একটু থেমে বলেন, আর একটা বলে যাই। শুভব্রত যদি পশ্চিমবঙ্গে কাজ করতে চায়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমাদের সরকার সব রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি।

শিবানী বলেন, ও ফোন করলেই আমি আপনার কথা জানিয়ে দেব।

মুখ্যমন্ত্রী এবার বলেন, একটা জরুরী আলোচনার মাঝখানেই আমি চলে এসেছি। তাই আমি আর থাকতে পারছি না। এখনই যাচ্ছি। তবে দরকার হলে অফিসে বা বাড়িতে ফোন করবেন।

উনি সবাইকে নমস্কার করে বিদায় নেন। মুখ্যমন্ত্রীচলে যেতেই খবরের কাগজের রিপোর্টার ফটোগ্রাফার আর টি. ভি.-র রিপোর্টার ক্যামেরাম্যানরাও বিদায় নেন কিন্তু বাড়ির সামনে তখন কয়েক হাজার মানুষ। সবার দাবী-মা-বড়মা, জ্যেঠু আর ভাইদাকে দেখব। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা ওদের প্রণাম করতেও চায়।

যাইহোক আশেপাশের বাড়ির সজল, প্রদীপ্ত, শিখা, তানিয়া আর মাধুরীবৌমার একান্ত অনুরোধে আস্তে আস্তে ভীড় কমতে শুরু করে।

স্নান করে সবাই যখন খেতে বসলো তখন রাত প্রায় একটা বাজে।

তারপরও কি ওদের চোখে ঘুম আসে?

আজ শিবানীর এক পাশে ভারতী, আরেক দিকে দুর্বা। শিবানী বলেন, আমরা সবাই এমন একটা দিনের জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করছিলাম, তাই নারে ভারতী?

তাতাই সোনা এমনভাবে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে সাধারণ মানুষকে পর্যন্ত মুগ্ধ করবে, তা হয়তো আমরা ভাবিনি কিন্তু ও যে। অসাধারণ কিছু করবে, তা তো আমরা সবাই জানতাম।

দূর্বা বলে, তবে তোমরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে, বহু পূণ্যের ফলে প্রফেসর রাও-এর মত অসামান্য অধ্যাপকের অমন অভাবনীয় স্নেহ-ভালবাসা পাওয়া যায়।

ভারতী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তবে তাতাই সোনার মত হনুমান ভক্ত ছাত্র পাওয়াও খুব দুর্লভ ব্যাপার।

এইসব টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতেই শিবানী আর ভারতী ঘুমিয়ে পড়েন কিন্তু ঘুম আসে না দুর্বার। জানলা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে আবছা চাঁদের আলোয় দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখতে দেখতে কত কি মনে হয়। ওর মন ছটফট করে বয়ফ্রেন্ডকে একটু কাছে পাবার জন্য, প্রাণভরে আদর করার জন্য। বার বার বলতে ইচ্ছে করে, বয়ফ্রেন্ড, সত্যি আমি তোমাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসি। তুমি যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছ, তার জন্য আমার যেমন আনন্দ হচ্ছে, ঠিক সেইরকম গর্ব হচ্ছে।

.

পরদিন কলকাতার সব খবরের কাগজের শুধু প্রথম পাতায় না, অধিকাংশ কাগজেরই প্রথম পাতার প্রধান খবর তাতাইয়ের ইতিহাস সৃষ্টি। সঙ্গে দুতিনটেছবি। স্টেটসম্যান ছেপেছে স্বামীর ছবির সামনে শিবানী। টেলিগ্রাফ খুব বড় করে ছেপেছে মুখ্যমন্ত্রী আর শিবানীর ছবি; আনন্দবাজার আর প্রতিদিন ছেপেছে শিবানীদের সঙ্গে মমতা ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ছবি। সব কাগজেই মোটা মোটা অক্ষরে ছাপা হয়েছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মহারাষ্ট্র কর্নাটক অন্ধ্র তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীদের শুভেচ্ছা বার্তা।

।বাবাই আর দুর্বা খবরের কাগজগুলো পড়ছিল; শুনছিলেন সুব্রতবাবু, ভারতী আর শিবানী।

হঠাৎ বাবাই বেশ জোরেই বলে, ও ছোটমা, কাল রাত্তিরেই হস্টেলে গিয়ে ভাইয়াকে অভিনন্দন জানিয়েছেন হেলথ মিনিষ্টার শত্রুঘ্ন সিনহা, তপন সিকদার আর দিল্লির চীফ মিনিষ্টার।

ঠিক সেই সময় শিবানীর ঘরের টেলিফোন বেজে ওঠে।

মা!

তাতাইসোনা!

ছেলের কণ্ঠস্বর শুনেই উত্তেজনায় চিৎকার করে ওঠেন শিবানী।

সবাইকে ডাক দাও।

সবাই এখানে আছে।

সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন টেলিফোনের সামনে।

তাতাই বলে, জ্যেঠু আমার কথা শুনতে পারছো?

সুব্রতবাবু বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, সবাই শুনতে পারছে।

ও জ্যেঠু দারুণ খবর আছে।

আবার দারুণ খবর?

সুব্রতবাবু উত্তেজিত না হয়ে পারেন না।

তাতাই বোধহয় হাসতে হাসতেই একটু উত্তেজিত হয়ে বলে, প্রেসিডেন্ট ডক্টর কালাম নিজের হাতে চিঠি লিখে আজ রাত্তিরে আমাকে আর স্যারকে ডিনারে নেমন্তন্ন করেছেন।

সবাই এক সঙ্গে বলেন, বলিস কিরে?

হ্যাঁ, জ্যেঠু, আমিও অবাক হয়ে গেছি। তবে উনি তো ভি. ভি. গিরি-ফকরুদ্দীন বা সঞ্জীব রেড্ডীর মতো না; ডক্টর কালাম যে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের সব চাইতে ভাল বন্ধু, তা তো সবাই জানে।

সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

প্রেসিডেন্টের ডেপুটি মিলিটারী সেক্রেটারি কর্নেল ডি’সুজা নিজে এসে এই মাত্র ঐ চিঠি দিয়ে বললেন, আমাকে আর স্যারকে নিয়ে যাবার জন্য আসবেন ঠিক সাতটায়। ডক্টর কালাম ডিনারের আগে অন্তত এক-দেড় ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

শিবানী বলেন, তাতাই সোনা, তোর সম্মানের কথা যত শুনছি, ততই আমাদের গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।

বাবাই চিৎকার করে বলে, ভাইয়া, কাল রাত্তিরে ছোট মা-র কাছে বুদ্ধদেব ভট্টচার্য মমতা ব্যানার্জী, সুভাষ চক্রবর্তী, প্রফেসর অম্লান দত্ত থেকে আরো কতজন ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ এসেছিল…

বলো কি ভাইদা?

আজ কলকাতার সব কাগজের প্রথম পাতার প্রধান খবর তুই; অনেক ছবিও ছাপা হয়েছে।

তার মানে কলকাতার লোক খুশি?

ভারতী বলেন, খুশি কিরে! আনন্দে গর্বে সবাই ভেসে যাচ্ছে।

সুব্রতবাবু প্রশ্ন করেন, হারে, তাতাই সোনা, দিল্লির কাগজে তোর খবর ভাল করে ছেপেছে?

হ্যাঁ, দিল্লির সব কাগজেই প্রথম পাতায় আমার ছবি দিয়ে খবর ছেপেছে।

শিবানী বলেন, ওরে, তুই দু’একদিনের জন্য আমাদের কাছে আসবি না?

আসব তো নিশ্চয়ই; তবে কবে আসব, তা এখনই বলতে পারছি না।

দুর্বা বলে, বয়ফ্রেন্ড, প্লীজ তাড়াতাড়ি এসো; আমরা আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।

প্রেয়সী, আমি কলকাতায় এসেই তোমাকে নিয়ে সোজা সুইজারল্যান্ড যাবো।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, এসো; আমি রেডি।

ভাইদা হাউ হাউ করে কান্নাকাটি করবে না তো?

ও যা ইচ্ছে করুক; আমরা চলে যাবো।

না, প্রেয়সী, তা হয় না। আমরা সুইজারল্যান্ড গেলে ভাইদাকে ধেই ধেই করে নাচতে হবে।

ওর কথা শুনে সবাই হেসে ওঠেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *