০৬. খোকনের চলে যাবার কথা

০৬.

পরদিন ভোরবেলা খোকনের চলে যাবার কথা। সারারাত ভেন্ট্রিলোকুইজম শুনে শুনে ঘুমাতে অনেক রাত হয়েছে তাই ঘুম থেকে উঠতে সবারই খানিকটা দেরি হল। ঘুম ভাঙতে আরও দেরি হত কিন্তু বিদেশ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে একটা চিঠি এসেছে, সেই লোক দরজা ধাক্কাধাক্কি করে রইসউদ্দিনের ঘুম ভাঙিয়ে দিল।

খাম খুলে রইসউদ্দিন চিৎকার করে শিউলিকে ডাকাডাকি করতে লাগলেন, ভেতরে আমেরিকা থেকে তার ছোট চাচার চিঠি। রইসউদ্দিনকে আমেরিকা থেকে শিউলির ছোট চাচা বিশাল চিঠি লিখেছেন। তিনি খবর পেয়েছিলেন তার ভাই সপরিবারে নৌকাডুবি হয়ে মারা গেছে, শিউলি যে বেঁচে গিয়েছে সেটা তিনি জানতেন না। রইসউদ্দিন যে শিউলিকে দেখেশুনে রাখছেন সেজন্যে ছোট চাচা সারা চিঠিতে কম করে হলেও একশো বার তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ছোট চাচা আমেরিকা থেকে এসে শিউলিকে নিয়ে যাবেন, ভিসার কীসব ব্যাপার আছে সেজন্যে যেটুকু দেরি হবে, তার বেশি একদিনও অপেক্ষা করবেন না। ছোট চাচা লিখেছেন শিউলিকে দেখেশুনে রাখতে রইসউদ্দিনের নিশ্চয়ই খরচপাতি হচ্ছে সেজন্যে তিনি এক হাজার ডলার পাঠালেন। টাকাটা পাঠাতে তাঁর খুব লজ্জা হচ্ছে, কারণ রইসউদ্দিন যে-মানবিক কাজটুকু করেছেন সেটা নিশ্চয়ই টাকা দিয়ে তুলনা করা যায় না।

চিঠির ভেতরে ছোট চাচার কয়েকটা ছবি। তাঁর স্ত্রী বিদেশি হাসিখুশি একজন আমেরিকান মহিলা, দুজন ছেলেমেয়ে। ছোট চাচার বয়স বেশি নয়, ছবিতে দেখা যাচ্ছে বরফের মাঝে ছেলেমেয়েকে আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। চিঠিতে শিউলির কয়েকটা ছবি পাঠানোর জন্য বলেছেন।

রইসউদ্দিন ছোট চাচার চিঠি নিয়ে শিউলিকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। শিউলি একটু ভয় পেয়ে বলল, “কী হয়েছে চাচা?”

“তোমার ছোট চাচার চিঠি এসেছে।”

শিউলি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, “সত্যি?”

“হ্যাঁ। এই দেখা ছবি।”

শিউলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবি দেখল। তার বিদেশি চাচি কী কাপড় পরে আছেন, তার চাচাতো ভাইবোনরা দেখতে কেমন, তার চাচার গায়ের রং কি আরও ফরসা হয়েছে, বরফটা কি একেবারে ধবধবে সাদা, পেছনের গাছে কোনো পাতা আছে কি না–এই ব্যাপারগুলো নিয়ে লম্বা-চাওড়া আলোচনা হল। একটা ছবি যে এত যত্ন করে দেখা যায় সেটা রইসউদ্দিন জানতেন না।

শিউলির চঁচামেচি শুনে বল্টু আর খোকনও ঘুম থেকে উঠে গেছে। তাদের কাছে শিউলি তার ছোট চাচার গল্প করল। আর কিছুদিনের মাঝেই যে ছোট চাচা তাকে আমেরিকা নিয়ে যাবেন আর সে তখন শুধু টিকিস টিকিস করে ইংরেজি বলবে কথাটা সে তাদেরকে কয়েকবার শুনিয়ে দিল। ছোট চাচা তার খরচের জন্যে এক হাজার ডলার পাঠিয়েছেন শুনে শিউলির চোখ বড় বড় হয়ে গেল, এক হাজার ডলার বাংলাদেশী টাকায় কত টাকা সেটা হিসেব করে বের করে বল্টু, খোকন আর শিউলির প্রায় মাথা ঘুরে পড়ে যাবার মতো অবস্থা। ছোট চাচা শিউলির ছবি চেয়েছেন শুনে সাথে সাথেই সেটা কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়ে গেল। বল্টু বলল, “বড় রাস্তার মোড়ে ফটো স্টুডিও আছে। সেখানে গেলেই ছবি তুলে দেবে।”

খোকন মাথা নাড়ল”হ্যাঁ, পেছনে সুন্দর সুন্দর সিনারি থাকে। পানির ফোয়ারা, হরিণ। ফটো তুললে মনে হয় সত্যি সত্যি পানির ফোয়ারার সামনে, হরিণের সামনে ফটো তুলেছে।”

বল্টু বলল, “ফটো তোলার জন্যে টাই ভাড়া পাওয়া যায়।”

শিউলি হি হি করে হেসে বলল, “দূর গাধা। আমি মেয়েমানুষ টাই দিয়ে কী করব?”

রইসউদ্দিন বললেন, “একটা ক্যামেরা থাকলে ভালো হত। তা হলে সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা যেত।”

শিউলি জিজ্ঞেস করল, “আপনার ক্যামেরা নাই চাচা?”

রইসউদ্দিন মাথা নাড়লেন, “নাহ্।”

হঠাৎ শিউলির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বলল, “চাচা! ছোট চাচা আমেরিকা থেকে যে-টাকা পাঠিয়েছেন সেটা দিয়ে একটা ক্যামেরা কিনে ফেলেন।”

রইসউদ্দিন হেসে ফেললেন, বললেন, “ঠিক আছে! তোমার চাচার টাকাটা তোমার জন্যেই থাকুক, একটা ক্যামেরা আমিই কিনে ফেলি। বাসায় একটা ক্যামেরা থাকা খারাপ না।”

শিউলি, বল্টু আর খোকন আনন্দে চিৎকার করে উঠল।

খোকনের রাতটা কাটিয়েই চলে যাবার কথা ছিল কিন্তু ক্যামেরা কেনা এবং সেটা দিয়ে শিউলির ছবি ভোলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে থেকে যাওয়া ঠিক করল। ক্যামেরা জিনিসটা সে দূর থেকে দেখেছে কিন্তু কীভাবে ছবি তোলা হয় সেটা কখনো দেখেনি।

তিনজনকে নিয়ে রইসউদ্দিন স্টেডিয়াম মার্কেটে গেলেন, সেখানে দরদাম করে শেষ পর্যন্ত একটা ভালো ক্যামেরা কিনলেন। এখন বাকি রইল শিউলির ছবি তোলা। স্টেডিয়ামের সামনে এক জায়গায় শিউলকে দাঁড় করানো হল, ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে যেই ক্লিক করবেন তখন বল্টু বলল, “একটা নতুন জামা হলে ভালো হত।”

রইসউদ্দিন থেমে গেলেন, সত্যিই তাই। তিনি পুরুষমানুষ, সারাজীবন বাচ্চাকাচ্চা থেকে একশো হাত দূরে থেকেছেন, তাদের জামাকাপড় খেয়াল করে দেখেননি। শিউলির রং-ওঠা বিবর্ণ ফ্রকটা দেখে মনে হল সত্যিই এই মেয়েটার একটা নতুন কাপড় হলে চমৎকার হত। শিউলির ছোট চাচা এতগুলো টাকা পাঠিয়েছেন, এখন তার জন্যে তো নতুন জামা-কাপড় কেনাই যায়।

রইসউদ্দিন তখন আবার স্কুটারে চেপে শিউলি, বল্টু আর খোকনকে নিয়ে এলেন এলিফেন্ট রোডে। বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান ঘুরে ঘুরে শিউলির জন্যে কাপড়জামা কিনলেন। সাথে আরও দুটি বাচ্চা–তাদের জন্যেও কিনতে হয় কাজেই বল্টু আর খোকনের জন্যেও প্যান্টশার্ট আর জুতো কেনা হল। রইসউদ্দিন বহুদিন জামাকাপড় কেনেননি, বাচ্চা কাচ্চার কাপড় তো একেবারেই কেনেননি, খুব অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন খুব কম দামে বাচ্চাদের জন্যে ভারি সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পাওয়া যায়। দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে জামাকাপড় কিনতে গিয়ে সবার খিদে লেগে গেল, রইসউদ্দিন তখন সবাইকে নিয়ে গেলেন ফাস্ট ফুডের দোকানে। পেট ভরে হ্যাঁমবার্গার আর পেপসি খেল সবাই।

নতুন জামাকাপড় পরার পর সবার চেহারা একবারে পালটে গেল। রইসউদ্দিন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলেন শিউলি মেয়েটির আসলে অপূর্ব মনকাড়া চেহারা, বল্টু এবং খোকনকেও আর পথেঘাটে ঘুরে-বেড়ানো ডানপিটে বাচ্চাদের মতো লাগছে না। তিনজনকে নিয়ে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন একজন ফিরিওয়ালা রইসউদ্দিনকে থামিয়ে বলল, “স্যার বাচ্চাদের ভালো বই আছে, বই নিবেন? আপনার ছেলেমেয়ের জন্যে নিয়ে নেন।” রইসউদ্দিন তখন চমকে উঠে তিনজনের দিকে তাকালেন। তাদের দেখে সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে যে তিনি একজন বাবা, ছুটির দিনে তার তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছেন।

নতুন ক্যামেরা নিয়ে শিউলির ছবি তুলতে গিয়ে দেখা গেল পথেঘাটে ছবি তোলা খুব সহজ নয়। ঠিক ছবি তোলার সময় কোনো-একজন ক্যামেরার সামনে হেঁটে চলে আসে। শিউলির তিনটি ছবি তুললেন রইসউদ্দিন, একটার মাঝে একজন ভিখিরি, একটার মাঝে একজন ফিরিওয়ালা, আরেকটার মাঝে একটা ছাগল ঢুকে গেল। বল্টু তখন বলল”এক কাজ করলে হয়।”

“কী কাজ?”

“শিশুমেলা চলে গেলে হয়।”

“শিশুমেলা?” রইসউদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন, “সেটা কী জিনিস?”

বল্টু চোখ বড় বড় করে বলল, “ফাটাফাটি জায়গা। নাগরদোলা আছে। ভূতের ট্রেন আছে। ছবি ভোলার জন্যে একেবারে ফাস ক্লাস জায়গা।”

শিউলি রইসউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে বলল, “চলেন সেখানে যাই।”

রইসউদ্দিন বললেন, “ঠিক আছে, চলো যাই। বের যখন হয়েছি সবকিছু দেখে আসি।”

সবাই আবার স্কুটারে চেপে চলে এল শিশুমেলায়। টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে চারদিকে শিশুদের হৈচৈ আনন্দ দেখে শিউলি, বল্টু আর খোকনের প্রায় মাথা-খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা। তিনজনে যখন আনন্দে ছোটাছুটি করছে তখন রইসউদ্দিন তাদের কয়েকটা ছবি নিলেন। মেলায় বাচ্চাদের আনন্দ করার নানা কিছু রয়েছে, কেন এইসব বিদঘুঁটে কাজ করে বাচ্চারা আনন্দ পায় সেটা নিয়ে। রইসউদ্দিনের মনে প্রশ্ন ছিল, কিন্তু চোখের সামনে সেটা দেখে অবিশ্বাস করবেন কী করে? ছোট বাচ্চাদের সাথে বোকার মতো একজন বড় মানুষ একটার মাঝে উঠে পড়েছিল, একটা চেয়ারের মতো জায়গা–সেটাকে উপরে-নিচে এবং ডানে বাঁয়ে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ঘোরাতে থাকে। তার ভেতরে বাচ্চাগুলো আনন্দে এবং বয়স্ক মানুষটি আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকে–রইসউদ্দিন দেখলেন বারকয়েক ঝাঁকুনি খেয়ে বয়স্ক মানুষটি হঠাৎ হড়হড় করে বমি করে দিল কিন্তু ছোট বাচ্চাদের আনন্দের এতটুকু ঘাটতি হল না।

নাগরদোলা চেপে, রাইডে চড়ে, নৌকায় উঠে, ভিডিও গেম খেলে, ট্রেন চেপে ছোটাছুটি করে শেষ পর্যন্ত তিনজন ক্লান্ত হয়ে পড়ল। রইসউদ্দিন তাদের সাথে কিছুই করেননি কিন্তু তিনজনের পেছনে পেছনে ঘুরে আরও বেশি ক্লান্ত হয়ে গেলেন। মেলার মাঝে এক কোণায় খাবারের দোকান, সেটা দেখে একসাথে সবার খিদে পেয়ে গেল। বাইরে বেঞ্চে বসে সবাই হট প্যাটিস আর পেপসি খেল।

খেতে খেতে আড়চোখে তাকিয়ে শিউলি দেখল তাদের পাশেই একটা বাচ্চা বসেছে, বাচ্চাটি ভীষণ মোটা। একগাদা খাবার নিয়ে কপাকপ করে খাচ্ছে, তখন পাশে বসে-থাকা মা বললেন, “আর খাসনে বাবা।”

ছেলেটা খাবার-মুখে চিবুতে চিবুতে বলল, “কেন খাব না?”

“পেটের মাঝে ভুটভাট করবে।”

“যাও! বলে বাচ্চাটা তার মায়ের কথা উড়িয়ে দিয়ে আবার গবগব করে খেতে লাগল।

খোকন হঠাৎ মাথা এগিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, “দেখ মজা।”

সাথে সাথে হঠাৎ সবাই স্পষ্ট শুনল ছেলেটার পেট বিকট শব্দে ডেকে উঠল। মা বললেন, “ঐ দেখ তোর পেট কেমন শব্দ করছে।”

ছেলেটা পেটে একটা চাটি মারতেই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। খানিকক্ষণ যেতে আবার পেটের ভেতর বিকট শব্দ, এবারে আগের থেকেও জোরে। তার মা বললেন, “আর খাসনে বাবা!”

ছেলেটা আবার পেটে একটা চাটি মারল, সাথে সাথে শব্দ বন্ধ হয়ে গেল, কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই আবার আরও বিকট শব্দে পেট ডেকে উঠল। ছেলেটা এবারে কেমন যেন সতর্ক হয়ে উঠে দাঁড়াল, বলল, “আর খাব না মা। চলো বাড়ি যাই। পেটের ভেতর কেমন জানি করছে।”

ছেলেটা আর তা মা-উঠে যাবার সাথে সাথেই শিউলি, বল্টু আর খোকন হিহি করে হাসতে শুরু করল, তাদের হাসি আর থামতেই চায় না। কাছেই রইসউদ্দিন। বসেছিলেন, তিনি বুঝতেই পারলেন না কী এমন হাসির ব্যাপার হয়েছে।

রাতে বাসায় ফিরে আসার সময় স্কুটারে বসে বসে তিনজনের চোখেই ঘুম নেমে আসে, আধোঘুমে কেউ-না আবার স্কুটার থেকে পড়ে যায় সেই ভয়ে রইসউদ্দিন তিনজনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখলেন। স্কুটারের ঝাঁকুনিতে বাচ্চাগুলোর মাথা তার বুকের মাঝে ঘষা খেয়ে যাচ্ছিল আর হঠাৎ করে রইসউদ্দিনের বুকের মাঝে কেমন জানি করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে একা একা নিঃসঙ্গভাবে বেঁচে না থেকে তিনিও যদি বিয়ে করে সংসারী হতেন তা হলে এমন হয়তো তার নিজের এরকম কয়জন সন্তান হত, তাদের হাত ধরে তিনি শিশুমেলা নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন তার জন্যে খুব দেরি হয়ে গেছে।

রাত্রিবেলা খাবার পর শিউলি এসে খুব কাঁচামাচু হয়ে বলল, “চাচা!”

“কী হল?”

“আমার ছোট চাচা তো অনেক টাকা পাঠিয়েছে, তা-ই না?”

“হ্যাঁ, পাঠিয়েছেন।”

“এই টাকা খরচ করে–ইয়ে-মানে ইয়ে–”

“কী?”

“খোকনকে আমাদের সাথে রাখতে পারি না?”

রইসউদ্দিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “খোকনের নিজের বাবা-মা ভাই-বোন–”

শিউলি বাধা দিয়ে বলল”কেউ নেই। কেউ নেই তার। দূর-সম্পর্কের ফুপুর সাথে থাকে। সেই ফুপু একেবারে আদর করে না।”

রইসউদ্দিন চুপ করে রইলেন। শিউলি অনুনয় করে বলল, “খোকনকে দেখে মায়া পড়ে গেছে চাচা। যে-কয়দিন আমি আছি আমাদের সাথে থাকুক। আমি যখন চলে যাব তখন বল্টু আর খোকনও চলে যাবে।” শিউলি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমরা কোনোরকম দুষ্টুমি করব না। খুব ভাল হয়ে থাকব।”

রইসউদ্দিন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা।”

“কী কথা?”

“এই শেষ। তোমরা আর নতুন কোনো বাচ্চা আমদানি করতে পারবে না। প্রথমে তুমি, তার পরে এসেছে বল্টু। এখন হল খোকন। এইভাবে যদি একজন একজন করে আসতে থাকে তা হলে কয়েকদিন পর এই বাসায় আর আমার থাকার জায়গা থাকবে না।”

“ঠিক আছে চাচা, আর কেউ আসবে না।”

“মনে থাকে যেন!”

“মনে থাকবে।”

সপ্তাহ দুয়েক পর শিউলির ছবি পেয়ে তার ছোট চাচা আবার বিশাল একটা চিঠি লিখলেন রইসউদ্দিনকে। চিঠির শেষে লিখলেন, “… আপনার পাঠানো ছবিতে শিউলির সাথে আপনার ফুটফুটে দুই ছেলেকে দেখে বড় ভালো লাগল। ছবিতে শিউলির মুখে যে-হাসি দেখেছি সেটি দেখে আমি নিঃসন্দেহ হয়েছি মেয়েটিকে আপনি আপনার নিজের মেয়ের মতো করেই দেখেশুনে রাখছেন। শিউলির বড় সৌভাগ্য সে আপনার মতো একজনের ভালোবাসা পেয়েছে। আপনার জন্যে, আপনার স্ত্রীর জন্যে এবং আপনার ফুটফুটে দুই ছেলের জন্যে অসংখ্য ভালোবাসা।…”

পুরো ব্যাপারটি কেমন করে শিউলির ছোট চাচাকে বোঝাবেন রইসউদ্দিন চিন্তা করে পেলেন না। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা নিয়ে চুপচাপ থাকাই তার কাছে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে হল। সামনাসামনি যখন দেখা হবে তখন ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিলেই হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *