০৬. কামালের চোখের অবস্থা খুব খারাপ

কামালের চোখের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে। আগে মাঝে-মাঝে পানি পড়ত, এখন ক্রমাগত পড়ে। রোদে বের হলে যন্ত্রণা হয়। চিনচিনে ব্যর্থ হয়। ঘন কালো রঙের চশমা একটা সে কিনেছে। সেই চশমা চোখে দিলে দিনে-দুপুরে ঢাকা শহর অন্ধকার হয়ে যায়। কাউকে চেনা যায় না। এও এক যন্ত্ৰণা।

ঢাকা শহরে প্রতিটি লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে পথ হাঁটতে হয়। চিনে চিনে। পথ চলা। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না। পথ চলতে হচ্ছে অন্ধের মত। তার মতো মানুষের জন্যে এটা খুবই বিপজ্জনক।

একদিন দুপুরে গুলিস্তানের মোড়ে তাকে পিছন থেকে কে যেন ডাকল, কে কামাল সাহেব না?

এইসব ক্ষেত্রে কামাল কখনো মাথা ঘুরিয়ে পিছন দিকে তাকায় না। দ্রুত সরে পড়তে চেষ্টা করে। সেদিনও তাই করল। প্রায় লাফ দিয়ে চলন্ত একটা বেবিট্যাক্সিতে উঠে পড়ল। বেবিট্যাক্সিওয়ালা তার দিকে ফিরতেই বলল, তাড়াতাড়ি যাও। পিজি। পেটে ব্যথা উঠেছে। মরে যাচ্ছি।

বেবিট্যাক্সিওয়ালা ঝড়ের গতিতে বেবিট্যাক্সি পিজিতে নিয়ে এল। কামাল ভাড়া মিটিয়ে শিশুপার্কের দিকে হাঁটা ধরল। বেবিট্যাক্সিওয়ালা তাকিয়ে রইল হতভম্ব হয়ে। পেটে ব্যথার রুগী শিশুপার্কে যায় কেন?

ঢাকা শহরে কামালের চেনা লোকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এটা তার জন্যে খুবই খারাপ। বছর চারেকের জন্যে এই শহর ছেড়ে অন্য কোথায়ও চলে যাওয়া দরকার। মুশকিল হচ্ছে যেতে ইচ্ছা করছে না। আলস্য এসে গেছে। বেশিরভাগ সময় এখন সে ঘরেই থাকে। খবরের কাগজ পড়ে। ঘুমায়। কিছু জমা টাকা আছে, এইগুলি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে এইভাবেই থাকবে। ঝামেলায় যেতে ইচ্ছা করে না। রোজ সন্ধ্যাবেলা সোমার জন্যে তার কেন জানি খুব খারাপ লাগে। মনে হয়, মেয়েটা বড় ভালো ছিল। আমার সঙ্গে থেকে খুব কষ্ট করে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *