০৬. ইন্দ্রাণী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিল

ইন্দ্রাণী সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠছিল, ঠিক দোতলার বাঁকে ভাস্করের সঙ্গে দেখা। তিরিশ না পেরুতেই ভাস্করের চুলে পাক ধরেছে। লম্বা-চওড়া চেহারা, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, বয়েসের তুলনায় ভাস্করকে একটু বেশি ভারিক্কি দেখায়।

কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

ইন্দ্রাণী তার নাক ও ঠোঁটের মাঝখানের সামান্য ঘাম রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, অনুরাধাদের বাড়িতে। তুমি কখন এসেছ?

অনেকক্ষণ। চলে যাচ্ছিলাম। তোর তো দেখাই পাওয়া যায় না।

বাজে কথা বোলো না। আমার তো বাড়ি থেকে বেরোনোই হয় না।

ইন্দ্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে ভাস্কর আবার ওপরে উঠে এল। বাড়িটা বড়োেবেশি নিস্তব্ধ। এত বড়ো বাড়িতে লোকজন খুব কম। বাবা ডাক্তার। সন্ধ্যে বেলা তিনি পে ক্লিনিকে বসেন। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। ছোটোভাই খঙ্গপুরে পড়ে। এক কাকা আছেন, তিনি প্রায় নির্বোধ, তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়নি।

ইন্দ্রাণীর মায়ের একসময় চিত্রশিল্পী হিসেবে খানিকটা নাম হয়েছিল। পুরোনো খবরের কাগজের পাতায় তাঁর ছবির অনেক প্রশংসা খুঁজে পাওয়া যাবে। এখন আর ছবি আঁকেন না। যেকোনো শিল্পই যদি শেষ পর্যন্ত জীবিকা না হয়, তাহলে তার বিকাশ বেশিদূর হতে পারে না বোধ হয়। স্বতঃস্ফূর্ত শিল্পের আয়ু কম।

তবু সীমন্তিনীর এখনও শিল্পী মেজাজটা আছে। ফর্সা, পাতলা চেহারা, কোনোদিন কেউ তাঁকে একটাও গয়না পরতে দেখেনি, কোনোদিন তাঁর শাড়ি বা চুল আলুথালু থাকে না। আজ অবধি কারুকে ধমকে কথা বলেননি। কখনো খুব রাগ হলে পিয়ানো বাজাতে বসেন। চাকর বাকররা তাঁর কাছ থেকে এত পয়সা চুরি করেছে যে, প্রত্যেকেই দেশে জমি কিনেছে।

ইজিচেয়ারে বসে সীমন্তিনী বই পড়ছিলেন, ভাস্কর আর ইন্দ্রাণী সেই ঘরে এসে ঢুকল। তিনি বই থেকে চোখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছে রে অনুরাধা?

ইন্দ্রাণী বলল, অপারেশন করতে হবে না, তবে প্রায় দু-মাস পা প্লাস্টার করে রাখতে হবে।

আহা মেয়েটার কী দুর্ভোগ।

ইন্দ্রাণীর বান্ধবী অনুরাধার বিয়ে হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। স্বামীর সঙ্গে স্কুটারে চেপে যাওয়ার সময় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। অপরূপ বাতাস দিচ্ছিল তখন, রাস্তায় কারুর মুখে কোনো বিরক্তির চিহ্ন ছিল না, সেই সময়েও মৃত্যু হঠাৎ এসে ভয় দেখিয়ে যায়।

তপনের তো কিছু হয়নি!

বিশেষ কিছু না।

ভাস্কর, তুই মোটরসাইকেলটা এবার বিক্রি করে দে। ভয় করে।

ভাস্কর বেশ তৃপ্তির সঙ্গে হাসল। সে তার মোটরসাইকেলের জন্য গর্বিত বোঝা যায়।

অ্যাক্সিডেন্টের কথা ভাবলে তো কোনো গাড়িই চড়া যায় না।

কিন্তু কলকাতার যা রাস্তা—

ইন্দ্রাণী টেবিলের ওপর পড়ে থাকা চিঠিগুলোতে একবার চোখ বোলালো। একটাও তার নয়, সব কটাই বাবার।

ভাস্করকে সে জিজ্ঞেস করল, তুমি চা খাবে?

দু-বার খেয়েছি। এতক্ষণ তো বসে বসে ছোটোমাসির সঙ্গে গল্প করছিলাম।

কেন, আজ তোমার ক্লাব ছিল না?

অফিসে চাকরিতে ঢোকার পর ভাস্করের একটা বিশ্রী অভ্যেস হয়েছে। একটা পাঁচমিশিলি ক্লাবে গিয়ে প্রত্যেকদিন সন্ধ্যে বেলা তাস খেলে। আগে সে স্কোয়াশ কিংবা টেনিস খেলত।

ভাস্কর ইন্দ্রাণীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে সংক্ষেপে বলল, যাইনি!

তারপর সে সীমন্তিনীর দিকে ফিরে বলল, ছোটোমাসি, ইন্দ্রাণীকে বলব সেই কথাটা?

সীমন্তিনী অল্প হেসে বললেন, বলে দেখ—তু

ই বিলেত যাবি?

আমি? কেন?

যাবি কি না বল না? যেতে ইচ্ছে হয় না?

ইন্দ্রাণী বলল, তুমি যাচ্ছ বুঝি?

ইন্দ্রাণী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, এবার সে ঘরের বাইরে যাবে। ভাস্কর তাকে চোখ দিয়ে আটকে রেখে বলল, না, আমি নয়, আমাকে কে চান্স দেবে? তবে তুই ইচ্ছে করলেই যেতে পারিস!

শুধু ইচ্ছে করলেই!

হ্যাঁ। আমার এক বন্ধুর বন্ধু, বিলেতেই থাকে, এখন এসেছে, খুব সুন্দর চেহারা, ওখানে বাড়ি আছে, তুই যদি তাকে টুক করে বিয়ে করে ফেলিস—তাহলেই আগামী মাসে বিলেত–

ইন্দ্রাণী অবহেলার ভঙ্গি করে বলল, তার মানে সারাজীবন বিলেতে থাকতে হবে? সে আমি মোটেই ভাবতে পারি না।

সীমন্তিনী বললেন, ছেলেটিকে বাড়িতে একদিন ডাকব?

ইন্দ্রাণী বলল, মা, তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?

কী জানি! বোধ হয় পারব!

সীমন্তিনী হেসে আবার বললেন, সব মেয়েরই তো বিয়ে হয়। তোরও হবে নিশ্চয়ই? কলকাতাতেই যে থাকতে পারবি, তার কী কোনো মানে আছে? মণীশের খবর কী রে?

আমি জানি না!

ভাস্কর বলল, আমি জানি!

সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রাণী বলল, বুগনদা, তুমি বোসো। আমি আসছি। চা খাবে না তো ঠিক? আমি কিন্তু খাব।

সিঁড়ি থেকে ঝুঁকে রাঁধুনিকে চা বানাতে বলে ইন্দ্রাণী উঠে এল তিনতলায়। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলের ক্লিপগুলো খুলতে লাগল। আয়নার সামনে দাঁড়ালে একটু দেরি হয়ই। শাড়ি খুলে ব্লাউজের পিঠের দিকে বোতামে যেই হাত দিয়েছে। দরজায় টুকটুক শব্দ হল।

ইন্দ্রাণী আবার শাড়িটা পরে নিয়ে দরজা খুলে বলল, এসো।

ভাস্কর বলল, আমি এবার যাব।

ইন্দ্রাণী তার খাটের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, বোসো।

ভাস্কর বেশ শব্দ করে বসল। চশমাটা খুলে চোখ দুটো রগড়াল ভালো করে। এটা তার মুদ্রাদোষ। তারপর বলল, সিনেমা দেখতে যাবি?

এখন?

কিংবা কাল?

তোমার সেই বন্ধুর বন্ধুটিও বুঝি যাবে?

রেগে গেছিস নাকি?

তুমি বুঝি আজকাল ঘটকালি শুরু করেছ?

না, না, ওটা তো ছোটোমাসিকে খুশি করার জন্য বললাম।

কী করে জানলে মা এতে খুশি হয়?

বাঃ, ওঁর একটা চিন্তা নেই?

সেইজন্য তুমি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যেকথা বলবে!

মিথ্যে নয় ঠিক, ওইরকম একটি ছেলে সত্যিই আছে, কালই নিয়ে আসতে পারি। আর তুই যদি রাজি থাকিস, তাহলে সত্যিই ব্যাপারটা হতে পারে। ছেলেটি শুধু একটি সুন্দরী মেয়ে চায়।

ইন্দ্রাণী চুলের মধ্যে চিরুনি ডুবিয়ে দিয়ে বলল, একেই ঘটকালি বলে। তোমাকে বোকা বোকা দেখাচ্ছে।

ভাস্কর দুটো হাত দু-দিকে ছড়িয়ে পেছন দিকে হেলান দিল। পরিশ্রান্তের মতো বলল, আমি যা করতে চাই, কীরকম যেন ভুল হয়ে যায়। সত্যিই হয়তো আমার এব্যাপারে মাথা ঘামাবার দরকার নেই!

ইন্দ্রাণী জোরে জোরে চুল আঁচড়াচ্ছে। কোনো উত্তর দিল না।

ভাস্কর হঠাৎ যেন মন বদলাল। তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে বলল, আমি চলি!

তখনই চাকর চায়ের কাপ নিয়ে আসায় সে আবার মন বদলে বলল, আচ্ছা, আর একটু চা খেয়েই যাই। আমার জন্যও আর এক কাপ আনো তো!

ইন্দ্রাণী চায়ের কাপ নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের টুলের ওপর বসল। চুলগুলো পিঠের ওপর খোলা। কালো রঙের ব্লাউজ। পায়ের পাতার ওপর ছড়িয়ে আছে শায়ার লেস।

ভাস্কর অন্য সময় খুব হাস্য পরিহাস করে। আজ তার মুখখানা দুঃখীর মতন প্রায়ই অন্যমনস্ক।

সে আস্তে আস্তে বলল, তোর বিয়ে হোক, এটাও আমি চাই। আবার যার সঙ্গেই বিয়ে

হবে, তাকে আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারব না।

ইন্দ্রাণী তবু চুপ করে রইল।

সেইজন্যই আমি মণীশকে সহ্য করতে পারিনি কখনো।

মণীশ? মণীশ তো হারিয়ে গেছে।

তোর মন থেকেও হারিয়ে গেছে?

প্রায়!

আচ্ছা ইন্দ্রাণী, সত্যি করে বল তো, আমার কি এ-বাড়িতে আর আসা উচিত নয়?

কেন?

আমি মানুষটা ভালো না খারাপ? খারাপ হলেও কি খুব খারাপ?

ইন্দ্রাণী এবার হাসল। তার দাঁতগুলো আলোর মতন। যদিও সেই হাসির মধ্যে খানিকটা নিষ্ঠুরতা আছে। ভাস্কর আজ যেকোনো কারণেই একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেই ইন্দ্রাণী তার কথা হেসে উড়িয়ে দিতে চাইছে।

তুমি আজ বড় ছেলেমানুষের মতন কথা বলছ।

ভাস্কর তখন লুব্ধভাবে তাকাল ইন্দ্রাণীর বুকের দিকে। ব্লাউজের ওপরে ইন্দ্রাণীর সোনার মতন স্তনের আভাস। খাঁজকাটা কোমর। এই নারীকে অন্য কেউ নিয়ে যাবে।

একটুক্ষণের মধ্যেই ভাস্কর নিজেকে সামলে নিল। চোখ দুটি স্বাভাবিক করে অন্য দিকে সরালো। আবার ফেরালো ইন্দ্রাণীর মুখে। সেখানেই চোখ রইল।

ইন্দ্রাণী চা শেষ করে বলল, দীপারা বরোদা থেকে ফিরেছে?

অর্থাৎ সে অন্যদিকে কথা ঘোরাতে চাইছে।

ভাস্কর বলল, অনেকদিন। তারপর ইঙ্গিত করে বলল, শোন। ইন্দ্রাণী জায়গা না ছেড়েই বলল, কী?

শোন-না।

এবার ইন্দ্রাণী ভয় পেয়েছে। দরজার দিকে তাকাল।

ভাস্কর হাতের কাপটা মাটিতে নামিয়ে রেখে নিজেই এগিয়ে গেল ইন্দ্রাণীর দিকে। তার কাঁধে হাত রেখে বলল, ভয় নেই আমি কিছু করব না।

ইন্দ্রাণী শরীরটাকে একেবারে স্থির করে বসে রইল। ভাস্কর হাত রাখল ইন্দ্রাণীর থুতনিতে। ইন্দ্রাণী ভাস্করের হাতটা ধরল, ঠেলে সরিয়ে দিল না, ধরেই রইল।

অনেকদিন আগে, ভাস্কর তখন ক্লাস টেনে পড়ে, সামনেই পরীক্ষা, এই সময় তার বাবা বদলি হয়ে গিয়েছিল কানপুর। সেই সময় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভাস্কর কলকাতাতেই থেকে গিয়েছিল তিনমাস ইন্দ্রাণীদের বাড়িতে। তার মা সীমন্তিনীর খুড়তুতো বোন।

সেই সময় অবশ্য ইন্দ্রাণীর ঠাকুরদা-ঠাকুমা দু-জনেই বেঁচে। বাড়িতে আরও অনেক লোকজন ছিল। তবু এক কিশোর এক কিশোরীর সঙ্গে নিরালায় বন্ধুত্ব করতে চাইত। এক পৃথিবী ভরতি কথা জমে থাকত দু-জনেরই বুকে। তিনতলার এই ঘরেই কিশোরটি সেই কিশোরীকে প্রথম চুমু খায়। তাদের দুজনেরই জীবনের প্রথম চুম্বন।

ইন্দ্রাণী সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। লজ্জায় তারপর তিনদিন আর ভাস্করের সামনেই আসেনি। ভাস্করও ঠনঠনের কালীবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিল, এই পাপের জন্য সে তার পরীক্ষার পরেই নিজের হাত কেটে রক্ত দেবে ঠাকুরের সামনে।

পরের সপ্তাহেই ইন্দ্রাণীর ফ্ৰকপরা বুকে নিজের চোখ দুটো চেপে ধরে ভাস্কর। ইন্দ্রাণী নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারেনি। যেন সে কিছুই বুঝতে পারছে না এইভাবে দাঁড়িয়েছিল। যদিও ঝনঝন করছিল তার সারাশরীর। অল্পপরে ভাস্কর যখন তার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়েছিল তখন ইন্দ্রাণী শক্ত করে চেপে রেখেছিল তার ঠোঁট। কিন্তু ভাস্কর যখন তারপর ইন্দ্রাণীর বুকেই চুমু খেতে শুরু করে, তখন ইন্দ্রাণী সেই অসম্ভব ভালোলাগা কিছুতেই অগ্রাহ্য করতে পারেনি।

কয়েকদিন পর, ইন্দ্রাণীর এক মামার বিয়ে হয়েছিল এই বাড়িতে। পাটনা থেকে অনেকে এসেছিল। বিয়ের রাত্রে দোতলার লাইব্রেরি ঘরে ঢালাও বিছানা করে দেওয়া হয়েছিল বাচ্চাদের জন্য। কে আর লক্ষ করেছিল যে অন্ধকারের মধ্যে ইন্দ্রাণী আর ভাস্কর পাশাপাশি চলে এসেছিল কি না। দু-জনে দু-জনের হাত ধরেছিল শক্ত করে, তারপর সেই হাত চলে যায় শরীরের গোপন জায়গায়।

ইন্দ্রাণীকে সম্পূর্ণভাবে দেখবার জন্য ভাস্কর যেদিন বাথরুমের মধ্যে লুকিয়ে বসে ছিল, সেইদিন ইন্দ্রাণী প্রথমে চিৎকার করে উঠতে গিয়ে নিজেই মুখ চাপা দিয়েছিল আগে, তারপর কেঁদে ফেলেছিল। ভাস্করও ক্ষমা চায় তার কাছে। তার পায়ের পাতা চেপে ধরে মাথা নীচু করে বার বার বলেছিল, আমি খারাপ হয়ে গেছি! আমি ভীষণ খারাপ হয়ে গেছি! আমি পরীক্ষা দিতে পারব না! তারপর অনুতাপদগ্ধ দুই কিশোর-কিশোরী প্রতিজ্ঞা করেছিল ঠাকুরের ছবির কাছে, জীবনে তারা কখনো আর এই পাপ করবে না।

কলেজজীবনে ভাস্করই তার বন্ধু মণীশকে নিয়ে আসে এ-বাড়িতে।

মণীশের স্বভাব ভাস্করের ঠিক উলটো। সে ভাস্করের মতন চাপা নয়। ভাস্কর একজন শিল্পী, কলেজজীবনেই সে বেশ ভালো ছবি আঁকা শুরু করেছিল। প্রেরণা পেয়েছিল সীমন্তিনীর কাছে। কিন্তু চাকরি-বাকরির চেষ্টা না করে শিল্পী হিসেবেই পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করত কি না সে-সম্পর্কে মনস্থির করতে পারেনি। তার বাড়ির আপত্তি ছিল। মণীশের মধ্যে কোনো কিছু সৃষ্টি করার প্রবৃত্তি নেই। সে সদা চঞ্চল, একরোখা। ইন্দ্রাণীকে যখন সে ভালোবাসতে শুরু করল, তখন ব্যবহার ছিল নির্লজ্জ। যখন-তখন এবাড়িতে চলে আসত। ইন্দ্রাণীর বাবা মাকেও সে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল, সে কোনো বাধাই মানবে না। এমনকী, অনেক সময় ভাস্করকেও সে বলত, তুই একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়া তো, ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আমার একটা গোপন কথা আছে। গোপন কথা আর কী, হঠাৎ ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ভাস্কর অনুভব করত, এইবার তার বন্ধু মণীশ ইন্দ্রাণীর বুকে মাথা রাখছে। এইবার সে তার কোমরের কাছে জিভ দিয়ে..

ইন্দ্রাণী বলল, না।

ভাস্কর হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষুধার্তের মতন ইন্দ্রাণীর ঠোঁট খুঁজছে। ইন্দ্রাণী হাতের তালু দিয়ে মুখটা ঢাকা দিয়ে বলল, না, বুগনদা এ-রকম পাগলামি কোরো না!

একবার, শুধু একবার।

না। তাহলে মরে যাব, ঠিক মরে যাব।

ভাস্কর আর একটু জোর করতেই ইন্দ্রাণী তাকে একটা ছোটো ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়াল। রূঢ় গলায় বলল, এ-রকম আর কক্ষনো কোরো না।

ভাস্করের কান্ডজ্ঞান ফিরে এসেছে। বিবর্ণ মুখে সে-ও উঠে দাঁড়াল। আস্তে আস্তে বলল, আজকাল ঘেন্না করিস, তাই না?

ইন্দ্রাণী খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে কি ভালো বেসে পারা যায়?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *