আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ- তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী আরশের অধিপতি।’ (৪০ : ১৫)
অর্থাৎ- মহিমান্বিত আল্লাহ, যিনি প্রকৃত মালিক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সম্মানিত আরশের তিনি অধিপতি। (২৩ : ১১৬)
অর্থাৎ- তুমি জিজ্ঞেস কর, কে সাত আকাশ এবং মহা আরশের অধিপতি? (২৩ : ৮৬)
অর্থাৎ- ‘তিনি ক্ষমাশীল, প্ৰেমময়, ‘আরশের অধিকারী ও সম্মানিত।’’ (৮৫ : ১৪,১৫)
অর্থাৎ- ‘দয়াময়, ‘আরশে সমাসীন।’ (২০ : ৫)
অর্থাৎ- তারপর তিনি ‘আরশে সমাসীন হন।’ (১০ : ২)
এসব সূরাসহ কুরআনের আরো বহুস্থানে এ আয়াতটি রয়েছে।
অর্থাৎ- ‘যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশ ঘিরে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে
এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থীনা করে বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তােমার দয়া ও জ্ঞান সর্বব্যাপী। (৪০ : ৭)
অর্থাৎ- সে দিন আটজন ফেরেশতা তাদের প্রতিপালকের আরশকে তাদের উর্ধে ধারণ করবে। (৬৯ : ১৭)
অর্থাৎ— ‘এবং তুমি ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে যে, তারা আরশের চারপাশে ঘিরে
তাদের প্রতিপালকের সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেছে। আর তাদের বিচার করা
হবে ন্যায়ের সাথে; বলা হবে, প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য। (৩৯ : ৭৫)
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বিপদকালীন দু’আয় আছে :
অর্থাৎ- আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি মহান পরম সহনশীল। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি আকাশ মণ্ডলীর অধিপতি ও পৃথিবীর অধিপতি। যিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।
ইমান আহমদ (র) আব্বাস ইব্ন আবদুল মুত্তালিব (রা) থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে বাত্হা নামক স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। এ সময়ে একখণ্ড মেঘ অতিক্রম করলে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, : তোমরা কি জান এগুলো কী? আমরা বললাম, মেঘমালা! তিনি বললেন, সাদা মেঘ বলতে পার। আমরা বললাম সাদা মেঘ। তিনি বললেন, : ‘আনোনও (মেঘ) বলতে পার, আমরা বললাম ওয়াল আনান। তারপর বললেন, আমরা নীরব থাকলাম। তারপর তিনি বললেন, : তােমরা কি জান যে, আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে দূরত্ব কতটুকু? আব্বাস (রা) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সম্যক অবহিত। তিনি বললেন, : উভয়ের মাঝে পাচশ বছরের দূরত্ব। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশ পর্যন্ত পাঁচশ বছরের দূরত্ব, প্রত্যেকটি আকাশ পাচশ বছরের দূরত্ব সমান পুরু এবং সপ্তম আকাশের উপরে একটি সমুদ্র আছে : যার উপর ও নীচের মধ্যে ঠিক ততটুকু দূরত্ব; যতটুকু দূরত্ব আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে। তারপর তার উপরে আছে আটটি পাহাড়ী মেষ, যাদের হাঁটু ও ক্ষুরের মাঝে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্বের সমান দূরত্ব। সেগুলোর উপরে হলো আরশ। যার নিচ ও উপরের মধ্যে ততটুকু দূরত্ব, যতটুকু আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে। আল্লাহ হলেন তারও উপরে। কিন্তু বনী আদমের কোন আমলই তাঁর কাছে গোপন থাকে না।
পাঠটি ইমাম আহমদ (র)-এর। আর ইমাম আবু দাউদ ইব্ন মাজাহ ও তিরমিয়ী (র) সিমাক (রা) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমান তিরমিয়ী (র) হাদীসটি হাসান বলে মন্তব্য করেছেন। আবার শুরায়ক সিমাক থেকে এ হাদীসটির অংশ বিশেষ মওকুফ পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাউদ (র)-এর শব্দ হলো :
অর্থাৎ— ‘আকাশ ও পৃথিবীর মাঝের দূরত্ব কতটুকু তা কি তােমরা জান? তারা বলল, আমরা তো জানি না। তিনি বললেন, উভয়ের মাঝে একাত্তর কিংবা বাহাত্তর কিংবা তিহাত্তির বছরের দূরত্ব।।১ অবশিষ্টগুলোর দূরত্ব অনুরূপ।’
ইমাম আবু দাউদ (র) সাহাবী জুবায়র ইব্ন মুতইম (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : জনৈক বেদুঈন একদা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে এসে বললঃ
অর্থাৎ—হে আল্লাহর রাসূল! মানুষগুলো সংকটে পড়ে গেছে, পরিবার-পরিজন অনাহারে দিনপাত করছে এবং ধন-সম্পদ ও গবাদি পশুগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব, আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য বৃষ্টির দু’আ করুন। আমরা আপনার উসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট এবং আল্লাহর উসিলা দিয়ে আপনার নিকট সাহায্য প্রার্থীনা করছি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, : Us, a 3 L• ০৫:৩১, ৭ এL~) ও ধিক তোমাকে, তুমি কি বুঝতে পারছে, কী বলছ! এই বলে রাসূলুল্লাহ (সা) অনবরত আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকেন। এমনকি সাহাবীগণের মুখমণ্ডলে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তারপর তিনি বললেন :
অর্থাৎ-ধিক তােমাকে!! আল্লাহর উসিলা দিয়ে তাঁর সৃষ্টির কারো সাহায্য প্রার্থীনা করা চলে
না। আল্লাহর শান তার অনেক উর্ধের্ব। ধিক তোমাকে! তোমার কি জানা আছে যে, আল্লাহর আরশ তার আকাশসমূহের উপরে এভাবে আছে। এ বলে তিনি তাঁর অঙ্গুলিসমূহের দ্বারা ইশারা
করে গম্বুজের মত করে দেখান। তারপর বললেনঃ
অর্থাৎ-বাহন তার আরোহীর ভারে যেমন মচমচ করে উঠে আরশও তেমনি মচমচ করে উঠে। ইব্ন বাশশার (র)-এর বর্ণনায় রয়েছে :
অর্থাৎ-আল্লাহ আছেন তাঁর আরশের উপর আর আরশ আছে তাঁর আকাশসমূহের উপর।
হাফিজ আবুল কাসিম ইব্ন আসাকির দামেশকী (র) এ হাদীসের বিরুদ্ধে ‘বায়ানুল ওহমি ওয়াত তাখালীতিল ওয়াকিয়ি কী হাদী।সিল আতীত’ নামক একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা রচনা করেছেন
১. সংখ্যা সংক্রান্ত এ সন্দেহটি রাবীর।
এবং হাদীসের রাবী মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক ইব্ন বাশশার-এর সমালোচনায় তিনি তাঁর সর্বশক্তি ব্যয় করেছেন এবং এ ব্যাপারে অনেকের মতামত উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক ব্যতীত অন্য রাবী থেকে ভিন্ন সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। যেমন আবদ ইব্ন হুমায়দ ও ইব্ন জারীর তাদের তাফসীরদ্বয়ে, ইব্ন আবু ‘আসিম ও তাব্বারানী তাদের কিতাবুস সুন্নাহয়, বাযযার তার মুসনাদে এবং হাফিজ জিয়া আল মাকন্দেসী তাঁর ‘মুখতারাত’ গ্রন্থে উমর ইব্ন খাত্তাব (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এসে বলল, আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু’আ করুন, যেন তিনি আমাকে জান্নাতে প্ৰবেশ করান। উমর (রা) বলেন, একথা শুনে তিনি আল্লাহ তা’আলার মহিমা বর্ণনা করে বললেন :
অর্থাৎ—‘নিঃসন্দেহে তাঁর কুরসী আকাশ ও পৃথিবীময় পরিব্যাপ্ত এবং তা নতুন বাহন বোঝার ভারে শব্দ করার ন্যায় শব্দ করে।’
এ হাদীসের সনদ তেমন মশহুর নয়। সহীহ বুখারীতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ
অর্থাৎ-যখন তোমরা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থীনা করবে। তখন ফিরদাউস প্রার্থীনা করবে। কারণ তা সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম জান্নাত। আর তার উপরে হলো দয়াময়ের আরশ। ৫-৩-৫ শব্দটি –হিসেবে ফাত্হা দ্বারাও পড়া হয় এবং যাম্মা দ্বারাও পড়া হয়। আমাদের শায়খ হাফিজ আল মুখী বলেন, যাত্মা দ্বারা পড়াই উত্তম। তখন
রাহমানের’ আরশ’। কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, ফিরদাউসবাসীগণ আরশোর শব্দ শুনে থাকে। আর তাহলো তার তাসবীহ ও তাজীম। তারা আরশের নিকটবর্তী বলেই এমনটি হয়ে
থাকে।
সহীহ বুখারীতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
অর্থাৎ—’সাদ ইব্ন মুআযের মৃত্যুতে রাহমানের আরশ কেঁপে উঠে।’
উল্লেখ করেছেন যে, ‘আরশ লাল ইয়াকুত দ্বারা তৈরি। তাঁর প্রান্তদ্বয়ের দূরত্ব হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ।’
সূরা মাআরিজ-এর (৭০ : ৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, আরশ ও সপ্তম যমীনের মধ্যকার দূরত্ব হলো, পঞ্চাশ হাজার বছরের পথ এবং তার বিস্তৃতি পঞ্চাশ হাজার বছরের পথের সমান।
একদল কালাম শাস্ত্ৰবিদের মতে, আরশ হচ্ছে গোলাকার একটি আকাশ বিশেষ যা গোটা জগতকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এ কারণেই তাঁরা একে নবম আকাশ, ‘আল ফালাকুল আতলাস ওয়াল আসীর’ নামে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু তাদের এ কথাটি যথার্থ নয়। কারণ, শরীয়তে একথা প্ৰমাণিত যে, আরশের কয়েকটি স্তম্ভ আছে এবং ফেরেশতাগণ তা বহন করে থাকেন। কিন্তু আকাশের স্তম্ভও হয় না এবং তা বহনও করা হয় না। তাছাড়া আরশের অবস্থান জান্নাতের উপরে আর জান্নাত হলো আকাশের উপরে এবং তাতে একশটি স্তর আছে, প্রতি দু’স্তরের মাঝে আকাশ ও যমীনের মধ্যকার সমান দূরত্ব। এতে প্রমাণিত হয় যে, আরশ ও কুরসীর মাঝের দূরত্ব আর এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্ব এক কথা নয়। আরেকটি যুক্তি হলো, অভিধানে আরশ অর্থ রাজ সিংহাসন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন : *,, … Β 41% অর্থাৎ তার আছে বিরাট এক সিংহাসন। (২৭ : ২৩) বলা বাহুল্য যে, এ আয়াতে যে আরশের কথা বলা হয়েছে তা কোন আকাশ ছিল না এবং আরশ বলতে আরবরা তা বুঝেও না। অথচ কুরআন নাযিল করা হয়েছে আরবী ভাষায়। মোটকথা, আরশ কয়েকটি স্তম্ভ বিশিষ্ট একটি সিংহাসন বিশেষ যা ফেরেশতাগণ বহন করে থাকেন। তা বিশ্বজগতের উপরে অবস্থিত গুম্বজের ন্যায় আর তাহলো সৃষ্টি জগতের ছাদস্বরূপ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, :
অর্থাৎ-যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চতুষ্পার্শ্ব ঘিরে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থীনা করে। (৪০ : ৭)
পূর্বে উল্লেখিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, তারা হলেন আটজন এবং তাদের পিঠের উপর রয়েছে আরশি। আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-এবং সে দিন আটজন ফেরেশতা তাদের প্রতিপালকের আরশকে ধারণ করবে: তাদের উর্ধে। (৬৯ : ১৭)
শাহর ইব্ন হাওশাব (র) বলেন, আরশ বহনকারী ফেরেশতা হলেন আটজন। তাদের চার জনের তাসবীহ হলো :
আর অপর চার জনের তাসবীহ হলো :
ইমাম আহমদ (র) ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে যে হাদীসটি বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ (সা) উমায়্যা ইব্ন আবুস-সালাত-এর কবিতার নিম্নোক্ত দু’টো পংক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। উমায়্যা যথাৰ্থ বলেছে। পংক্তি দটি হলো :
অর্থাৎ-তাঁর (আরশের) ডান পায়ের নিচে আছে। একজন লোক ও একটি ষাড়। আর অপর পায়ের নিচে আছে একটি শকুন ও ওঁৎ পেতে থাকা একটি সিংহ।
একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ সে যথার্থই বলেছে। তারপর উমায়্যা বললঃ
অর্থাৎ—প্রতি রাতের শেষে লাল হয়ে সূর্য উদিত হয় যার উদয়াচলের রঙ হলো গোলাপী।
আমাদের জন্য আত্মপ্রকাশ করতে সূৰ্য ইতস্তত করে থাকে। অবশেষে আত্মপ্রকাশ করে শাস্তিদানকারী রূপে এবং কশাঘাতকারী রূপে।
শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, সে যথার্থই বলেছে। এ হাদীসের সনদ সহীহ এবং তার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। এ হাদীস প্রমাণ করে যে, আরশ বহনকারীদের বর্তমান সংখ্যা চারজন। অতএব, পূর্বোক্ত হাদীসের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক। এর জবাবে বলা যেতে পারে যে, এ ধরনের এ চারজনের উল্লেখের দ্বারা বাকি চারজনের অস্তিত্বের অস্বীকৃতি বুঝায় না। আল্লাহ সম্যক অবগত।
‘আরশ সম্পর্কে উমায়্যা ইবনুস সালত-এর আরো কয়েকটি পংক্তি আছে। তাহলো :
অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর মহিমা বর্ণনা কর। তিনি মহিমময়, আমাদের প্রতিপালক আকাশে, তিনি মহীয়ান গরীয়ান। সে এমন এক সুউচ্চ ছাদ যা মানুষকে বিস্ময় বিমূঢ় করে দেয়। আর আকাশের উপরে তিনি স্থাপন করে রেখেছেন এমন সুউচ্চ এক সিংহাসন, চর্ম চক্ষু যার নাগাল পায় না। আর তার আশে-পাশে তুমি দেখতে পাবে ঘাড়া উচিয়ে রাখা ফেরেশতাগণ। ১৫-২০ – ১৫-1 এর বহুবচন। এর অর্থ হলো, সে ব্যক্তি উপরের দিকে তাকিয়ে
(፩እ
থাকার দরুন যার ঘাড় বঁকা হয়ে আছে। – ১.J। অর্থ অত্যন্ত উঁচু। –.J। অর্থ হলো সিংহাসন।
আবদুল্লাহ ইব্ন রাওয়াহা (রা)-এর কয়েকটি পংক্তি; যিনি স্ত্রী কর্তৃক দাসীর সঙ্গে যৌন মিলনের অপবাদের মুখে কুরআন পাঠের পরিবর্তে নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করেন।
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিলাম যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং জাহান্নাম হলো কাফিরদের ঠিকানা।
আর আরশ পানির উপর ভাসমান এবং আরশের উপর রয়েছেন বিশ্বজগতের প্রতিপালক। যে আরশ বহন করেন সম্মানিত এবং আল্লাহর চিহ্নিত ফেরেশতাগণ।
ইব্ন আবদুল বার (র) প্রমুখ ইমাম তা বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ (র) জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
অর্থাৎ-’আমাকে আল্লাহর আরশ বহনকারী আল্লাহর ফেরেশতাদের একজনের বিবরণ
দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তার কানের লতি ও কাধের মাঝে সাতশ বছরের পথ।’
ইব্ন আবু আসিমও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর পাঠ হলো :
কুরসী
ইব্ন জারীর (র) বলেন, : হাসান বসরী (র) বলতেন, কুরসী আর আরশ একই কিন্তু এ তথ্যটি সঠিক নয়, হাসান এমন কথা বলেননি। বরং সঠিক কথা হলো, হাসান (র) সহ সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অভিমত হলো এই যে, কুরসী আর আরশ দুটি আলাদা।
পক্ষান্তরে ইব্ন আব্বাস (রা) ও সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রা) সম্পর্কে বর্ণিত যে, তারা …, J%816 = ‘….|| 4.5 এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতেন 4.24 অর্থ x 21. অর্থাৎ আল্লাহর ইলর্ম কিন্তু ইব্ন আব্বাস (রা)-এর প্রকৃত অভিমত হলাে এই যে, কুরসী হচ্ছে আঁল্লাহর কুদরতী কদমদ্বয়ের স্থল এবং আরশের সঠিক পরিমাপ আল্লাহ ব্যতীত কারো জ্ঞাত নেই।
ԿՕ
এ বর্ণনাটি হাকিম। তাঁর মুসতাদরাকে বর্ণনা করে মন্তব্য করেছেন যে, এটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তনুযায়ী সহীহ, যদিও তারা তা বর্ণনা করেন নি।
আবার শুমা ইব্ন মুখাল্লাদ ও ইব্ন জারীর তাদের নিজ নিজ তাফসীর গ্রন্থে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে রিওয়ায়ত করেন যে, কুরসী হলো আরশের নিচে। সুদীর নিজস্ব অভিমত হলো, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কুরসীর পেটের মধ্যে আর কুরসীর অবস্থান আরশের সম্মুখে।
ইব্ন জারীর ও ইব্ন আবু হাতিম যাহাহাক সূত্রে ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, সাত আসমান ও সাত যমীনকে যদি পাশাপাশি বিছিয়ে একটির সঙ্গে অপরটি জুড়ে দেয়া হয়; তাহলে কুরসীর তুলনায় তা বিশাল প্রান্তরের মধ্যে একটি আংটি তুল্য। ইব্ন জারীর বর্ণনা করেন যে, যােয়দ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :
অর্থাৎ-কুরসীর মধ্যে সাত আকাশ ঠিক একটি থালের মধ্যে নিক্ষিপ্ত সাতটি মুদ্ৰা তুল্য। যায়দা বলেন, আবু যর (রা) বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে,
অর্থাৎ—’আরশের মধ্যে কুরসী ধৃ ধূ প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত লোহার আংটির চাইতে বেশি কিছু
নয়।’ হাকিম আবু বকর ইব্ন মারদুয়েহ (র) তার তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, আবু যর গিফারী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-কে কুরসী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন :
অর্থাৎ- ‘যার হাতে আমার জীবন সে সত্তার শপথ! কুরসীর নিকট সাত আকাশ ও সাত যমীন বিশাল প্ৰান্তরে নিক্ষিপ্ত কড়া অপেক্ষা বেশি কিছু নয়। আর কুরসীর তুলনায় আরশ প্রান্তরের তুলনায় কড়ার মত।
সাঈদ ইব্ন জুবায়র (রা) থেকে যথাক্রমে মিনহাল ইব্ন আমরা আমাশ সুফয়ান, ওকী ও ইব্ন ওকী সূত্রে ইব্ন জারীর তার ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, ইব্ন আব্বাস (রা) কে ,1 r. ………। ৬(<% -এ আয়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, পানি কিসের উপর ছিল? জবাবে তিনি বললেন, বাতাসের পিঠের উপর। তিনি আরো বলেন, আসমান ও যমীনসমূহ এবং এ সবের মধ্যকার সমুদয় বস্তুকে সমুদ্র ঘিরে রেখেছে এবং সমুদ্রব্রাজিকে ঘিরে রেখেছে। হায়কাল। আর কথিত বর্ণনা মতে, হায়কালকে ঘিরে রেখেছে কুরসী। ওহাব ইব্ন মুনাব্বিহ থেকেও এরূপ বৰ্ণিত আছে। ইব্ন ওহাব হায়কাল-এর ব্যাখ্যায়
VS
বলেন, হায়কাল আকাশমণ্ডলীর চতুষ্পার্শ্বস্থ একটি বস্তু বিশেষ যা আসমানের প্রান্ত থেকে তাবুর লম্বা রশির ন্যায় যমীনসমূহ ও সমুদ্রসমূহকে ঘিরে রেখেছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কারো কারো ধারণা, কুরসী হলো অষ্টম আকাশ, যাকে স্থির গ্ৰহরাজির কক্ষ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের এ ধারণা যথার্থ নয়। কারণ পূর্বেই এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, কুরসী সাত আকাশ অপেক্ষা অনেক অনেকগুণ বড়। তাছাড়া একটু আগে উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, কুরসীর তুলনায় আকাশ বিশাল প্রান্তরে নিক্ষিপ্ত একটি কড়ার ন্যায়। কিন্তু এক আকাশের তুলনায় আরেক আকাশ তো এরূপ নয়।
যদি এরপরও তাদের কেউ একথা বলে যে, আমরা তা স্বীকার করি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে ফালাক বা আসমান নামে অভিহিত করি। তাহলে আমরা বলব, অভিধানে কুরসী আর ফালাক-এর অর্থ এক নয়। বস্তুত প্রাচীন যুগের একাধিক আলিমের মতে, কুরসী আরশের সম্মুখে অবস্থিত তাতে আরোহণের সিঁড়ির মত একটি বস্তু বিশেষ। আর এরূপ বস্তু ফালাক হতে পারে না। তাদের আরো ধারণা যে, স্থির নক্ষত্ৰসমূহকে তাতেই স্থাপন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। উপরন্তু, এ ব্যাপারে তাদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
লাওহে মাহফুজ ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে আবুল কাসিম তাবারানী (র) বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা) বলেন : অর্থাৎ—’আল্লাহ শুভ্ৰ মুক্তা দ্বারা লাওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেছেন। তার পাতাগুলো লাল ইয়াকুতের তৈরি। আল্লাহ তা’আলার কলমও নূর এবং কিতাবও নূর। প্রতি দিন তাঁর তিনশ ষাটটি ক্ষণ আছে। তিনি সৃষ্টি করেন, জীবিকা দান করেন। মৃত্যু দেন, জীবন দেন, সম্মানিত করেন, অপমানিত করেন এবং যা খুশী তা-ই করেন।
ইব্ন আব্বাস (রা) আরও বলেন, লাওহে মাহফুয্যের ঠিক মাঝখানে লিখিত আছেঃ
অর্থাৎ-’এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তার মনোনীত দীন হলো ইসলাম এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’
অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহতে ঈমান আনবে, তার প্রতিশ্রুতিকে সত্য বলে স্বীকার করবে: এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ করবে; তাঁকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
ইব্ন আব্বাস (রা) আরো বলেন, লাওহে মাহফুজ শুভ্ৰ মুক্তা দ্বারা তৈরি একটি ফলক বিশেষ। তার দৈর্ঘ আসমান ও যমীনের মধ্যকার দূরত্বের সমান। আর তার প্রস্থ পৃথিবীর পূর্ব ও
WL JR
পশ্চিমের মাঝখানের দূরত্বের সমান। তার পরিবেষ্টনকারী হলো মুক্তা ও ইয়াকুত এবং প্রান্তদেশ হলো লাল ইয়াকুতের। তার কলম হলো নূর এবং তার বাণী আরশের সঙ্গে গ্রন্থিবদ্ধ ও তার গোড়া হলো এক ফেরেশতার কোলে।
আনাস ইব্ন মালিক প্রমুখ বলেন, লাওহে মাহফুজ ইসরাফীল (আ.)-এর ললাটে অবস্থিত। মুকাতিল বলেন, তার অবস্থান আরশের ডান পার্শ্বে।
আকাশসমূহ পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যকার বস্তু নিচয়ের সৃষ্টি
আল্লাহ তা’আলা বলেন, :
প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন আর উৎপত্তি ঘটিয়েছেন অন্ধকার ও আলোর। এতদসত্ত্বেও কাফিরগণ তাদের প্রতিপালকের সমকক্ষ দাঁড় করায়। (৬ : ১)
خلق الشموت والأرض في ستة أيام. অর্থাৎ—তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছ’দিনে (ছয়টি সময়কালে) সৃষ্টি করেছেন। (SS 9 a)
এ ধরনের বর্ণনা অন্যান্য বহু আয়াতে রয়েছে। এ ছ’দিনের পরিমাণ নির্ণয়ে মুফাসসিরগণের দু’টি অভিমত রয়েছে। জমহুর-এর অভিমত হলো তা আমাদের এ দিবসেরই ন্যায়। আর ইব্ন আব্বাস (রা)), মুজাহিদ, যাহহাক ও ক’ব আহবার (রা) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, তার প্রতিটি দিন আমাদের হিসাবের হাজার বছরের সমান। এটা হচ্ছে ইব্ন জারীর ও ইব্ন আবু হাতিম-এর বর্ণনা। ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল (র) তাঁর জাহমিয়্যাদের বিরুদ্ধে লিখিত কিতাবে এবং ইব্ন জারীর ও পরবর্তী একদল আলিম দ্বিতীয় মতটি সমর্থন করেছেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। এ অভিমতের পক্ষের দলীল পরে আসছে।
ইব্ন জারীর যাহাহাক ইব্ন মুযাহিম (র) প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে, দিবস ছ’টির নাম হলো-আবজাদ; হাও, য়ায, হুৰ্ত্তী কালমান, সাফাস, কারশাত।
ইব্ন জারীর (র) এদিনগুলোর প্রথম দিন সম্পর্কে তিনটি অভিমত বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদু ইব্ন ইসহাক (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তাওরাত পহীদের অভিমত হলো, আল্লাহ তা’আলা রবিবার দিন সৃষ্টি শুরু করেছিলেন। ইনজীল পন্থীগণ বলেন, আল্লাহ সৃষ্টি শুরু করেছিলেন সোমবার দিন আর আমরা মুসলমানগণ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বলি যে, আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি শুরু করেছিলেন শনিবার দিন। ইব্ন ইসহাক (র) কর্তৃক বর্ণিত এ অভিমতের প্রতি শাফেঈ মাযহাবের একদল ফকীহ ও অন্যান্য আলিমের সমর্থন রয়েছে। এ
বিষয়ে আল্লাহ শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেছেন মৰ্মে আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসটি পরে আসছে।
আর ইব্ন জারীর রবিবার সংক্রান্ত অভিমতটি বর্ণনা করেছেন আবু মালিক, ইব্ন আব্বাস, ইব্ন মাসউদ (রা) এবং আরো একদল সাহাবা থেকে। আবদুল্লাহ ইব্ন সালাম থেকেও তিনি তা বর্ণনা করেছেন। ইব্ন জারীর নিজেও এ অভিমতটি পোষণ করেন। আর তা তাওরাতেরই ভাষ্য। একদল ফকীহও এ অভিমত পোষণ করেন। বলা বাহুল্য যে, রবিবার দিনকে ইয়াওমুল আহাদ বা প্রথম দিন নামকরণ অধিক যুক্তিসঙ্গত। আর এ জন্যই সৃষ্টি কার্য ছ’দিনে সম্পন্ন হয়েছে এবং তার শেষ দিন হলো শুক্রবার। ফলে মুসলমানগণ একে তাদের সাপ্তাহিক উৎসবের দিন রূপে ধার্য করে নিয়েছে। আর এদিনটিই সেদিন, আল্লাহ যা থেকে আমাদের পূর্বের আহলি কিতাবদেরকে বিচুত করে দিয়েছিলেন। পরে এর আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—তিনি পৃথিবীর সব কিছু তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আকাশের
দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তাকে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন, তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত। (২ : ২৯)
অর্থাৎ—বল, তােমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবে। যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাতে চাও? তিনি তো জগতসমূহের প্রতিপালক। তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চারদিনের মধ্যে তাতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের, সমভাবে যাচনাকারীদের জন্য।
তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।
তারপর তিনি আকাশমণ্ডলীকে দুদিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রতি আকাশে তার বিধান ব্যক্ত করলেন, এবং আমি নিকটবতী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্ৰদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। (৪১ : ৯-১২)
এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, পৃথিবী আকাশের আগে সৃষ্ট হয়েছে। কেননা, পৃথিবী হলো, প্রাসাদের ভিত স্বরূপ যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—আল্লাহই তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন এবং তোমাদের আকৃতি করেছেন উৎকৃষ্ট এবং তোমাদেরকে দান করেছেন উৎকৃষ্ট রিযক, এই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। কত মহান জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ! (৪০ : ৬৪)
অর্থাৎ—আমি কি করিনি ভূমিকে শয্যা ও পর্বতসমূহকে কীলক? আমি সৃষ্টি করেছি
এবং দিবসকে করেছি। জীবিকা আহরণের সময়। আর তোমাদের উর্ধদেশে নিমণি করেছি। সুস্থিত সাত আসমান এবং সৃষ্টি করেছি। প্ৰদীপ। (৭৮ : ৬-১৩)
অর্থাৎ-যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশেছিল ওতপ্রোতভাবে; তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণসম্পন্ন সমস্ত কিছু সৃষ্টি
করলাম পানি থেকে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না? (২১ : ৩০)
অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে আমি ফাঁক করে দিয়েছি; ফলে প্রবাহিত হয়েছে বায়ুমালা, বর্ষিত হয়েছে বারিধারা, প্রবাহিত হয়েছে ঝরনা ও নদ-নদী এবং জীবনীশক্তি লাভ করেছে প্ৰাণীকুল। তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—এবং আকাশকে করেছি। সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (২১ : ৩২)
অর্থাৎ আকাশে আল্লাহর সৃষ্টি করা স্থির ও চলমান তারকা রাজি, প্রদীপ্ত নক্ষত্র ও উজ্জ্বল গ্ৰহমালা, ইত্যাকার নিদর্শনাবলী এবং তাতে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর সৃষ্টিকর্তার হিকমতের প্রমাণসমূহ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে; তারা এ সকল প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু তারা এ সকলের প্রতি উদাসীন। তাদের অধিকাংশ আল্লাহে বিশ্বাস করে না; কিন্তু তাঁর শরীক করে। (১২ : ১০৫-১০৬)
অর্থাৎ—তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিনতর, না আকাশ সৃষ্টি? তিনিই তা নির্মাণ করেছেন। তিনি একে সুউচ্চ ও সুবিন্যস্ত করেছেন, তিনি রাতকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং প্রকাশ করেছেন। সূর্যালোক এবং পৃথিবীকে এরপর বিস্তৃত করেছেন। তিনি তা থেকে নির্গত করেছেন তার পানি ও তৃণ এবং পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন; এ সমস্ত তোমাদের ও তোমাদের গবাদি পশুর ভোগের জন্য। (৭৯ : ২৭-৩৩)
এ আয়াত দ্বারা কেউ কেউ পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে আকাশ সৃষ্টির প্রমাণ পেশ করেছেন। কিন্তু এতে তাঁরা পূর্ববতী আয়াতদ্বয়ের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন এবং এ আয়াতের মর্ম উপলব্ধি করতে পারেন নি। কারণ এ আয়াতের মর্ম হলো, পৃথিবীর বিস্তার এবং বাস্তবে তা। থেকে পানি ও তৃণ নির্গত করা আকাশ সৃষ্টির পরে হয়েছে। অন্যথায় এসব পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। যেমন : আল্লাহ তা’আলা বলেন, :
এবং তাতে (পৃথিবীতে) রেখেছেন কল্যাণ এবং তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। (৪১ঃ ১০) অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ফসলের ক্ষেত্র এবং ঝরনা ও নদী-নালার স্থানসমূহ প্ৰস্তুত করে রেখেছেন। তারপর যখন নিম্নজগত ও উর্ধ্ব জগতের আকার সৃষ্টি করেন, তখন পৃথিবীকে বিস্তৃত করে তা থেকে তার মধ্যে রক্ষিত বস্তুসমূহ বের করেন। ফলে ঝরনাসমূহ বের হয়ে আসে, নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং শস্য ও ফল-ফলাদি উৎপন্ন হয়। এ জন্যই তো ২%-কে পানি ও তৃণ বের করা এবং পর্বতকে প্রোথিত করা দ্বারা ব্যাখ্যা করে আল্লাহ তা’আলা।
বলেছেন :
অর্থাৎ-তারপর তিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেন (অর্থাৎ) তা থেকে পানি ও তৃণ নিৰ্গত করেন। তিনি পর্বতসমূহকে যথাস্থানে স্থাপন করে সেগুলোকে দৃঢ় ও মজবুত করে দিয়েছেন। (৭৯ : ৩০-৩২)
(১ম খণ্ড) ৯—
অর্থাৎ— আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমর্তা বলে এবং আমি অবশ্যই মহা-সম্প্রসারণকারী এবং আমি ভূমিকে বিছিয়ে দিয়েছি, আমি এটা কত সুন্দরভাবে বিছিয়েছি। আমি প্রতিটি বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায়-জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করা। (৫১ 88-8s)
:া, অর্থ $3 $’, অর্থাৎ ক্ষমতা বলে। আর আকাশ সম্প্রসারণ করার তাৎপর্য হলো, যা উঁচু তাই প্রশস্ত। সুতরাং প্রতিটি আকাশ তার নিচেরটির চেয়ে উচ্চতর বিধায় নিচেরটি অপেক্ষা তা প্রশস্ততর। আর এ জন্যই তো কুরসী আকাশসমূহ থেকে উঁচু বিধায় তা সব ক’টি আকাশ অপেক্ষা অধিকতর প্রশস্ত। আর আরশ এর সব ক’টি থেকে অনেক বড়।
এরপর LAL, ৯% ০-৩১), অর্থ আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে বিস্তৃত করে স্থির অটল করে দিয়েছি; ফলে তা আর তোমাদেরকে নিয়ে নড়ে না। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা। বলেছেন : ৩৫, ১L.14 4 অর্থাৎ আমি এটা কত সুন্দরভাবে বিছিয়েছি। উল্লেখ্য যে, এ আয়াতগুলোতে প্রতিটি বাক্যের মাঝে যে,, (যার অর্থ, এবং) ব্যবহার করা হয়েছে তা বিষয়গুলো সংঘটনে ধারাবাহিকতা নির্দেশক নয়। নিছক সংবাদ প্ৰদানই এর উদ্দেশ্য। আল্লাহই সম্যক অবহিত। ইমান বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রা) বলেছেন, আমি একদিন নবী করীম (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হই এবং আমার উটনীটি দরজার সংঙ্গে বেঁধে রাখি। এ সময়ে তাঁর নিকট বনু তামীমের কিছু লোক আগমন করলে তিনি বললেন :
অর্থাৎ—সুসংবাদ নাও হে বনু তামীম। জবাবে তারা বলল, সুসংবাদ তো দিলেন, আমাদেরকে কিছু দান করুন- কথাটি তারা দু’বার বলল। তারপরই ইয়ামানের একদল লোকের আগমন ঘটলে তিনি বললেন, : বনু তামীম যখন গ্রহণ করেনি তখন হে ইয়ামানবাসী তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। জবাবে তারা বলল, আমরা গ্ৰহণ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা বলল, আপনার নিকট আমরা এ সৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। নবী করীম (সা) दळलन्?
অর্থাৎ—’আল্লাহ ছিলেন, তিনি ব্যতীত অপর কিছুই ছিল না। তার ‘আরশি ছিল পানির উপর। লিপিতে তিনি সব কিছু লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন এবং আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।’ এমন সময় কে একজন ডেকে বলল, হে হুসায়নের পুত্ৰ! তোমার উটনী তো চলে গেল। উঠে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, উটনীটি মরিচীকার দিকে চলে যাচ্ছে। আল্লাহর শপথ! পরে আমার আফসোস হলো-হায়, যদি আমি উটনীটির পিছে না পড়তাম!
ইমাম বুখারী (র) মাগাষী (যুদ্ধ-বিগ্রহ) এবং তাওহীদ অধ্যায়েও এ হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন। তাতে কোন কোন বর্ণনায় ৩০-৩১)
অর্থাৎ—তারপর তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন। ইমাম
নাসাঈর বর্ণনায় পাঠও এটিই।
ইমাম আহমদ ইব্ন হাম্বল (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)
আমার হাত চেপে ধরে বললেন, :
অর্থাৎ-’আল্লাহ তা’আলা মাটি শনিবার দিন, পাহাড়-পর্বত রবিবার দিন, গাছপালা সোমবার দিন ও অগ্ৰীতিকর বস্তুসমূহ মঙ্গলবার দিন সৃষ্টি করেছেন, বুধবারে নূর (জ্যোতি) সৃষ্টি করেন এবং কীট-পতঙ্গ ও ভূচর জন্তু সমূহকে বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আদমকে সৃষ্টি করেছেন জুমআর দিন আসরের পর। আদমই সর্বশেষ সৃষ্টি, যাকে জুমআর দিনের সর্বশেষ প্রহরে আসর ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।
ইমাম মুসলিম (র) ও নাসাঈ (র) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসাঈ (র) তাঁর তাফসীরে বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন আমার * হাত চেপে ধরে বললেন, :
অর্থাৎ—’হে আবু হুরায়রা!! আল্লাহ আকাশসমূহ, পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যস্থিত বস্তুরাজি ছ’দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর সপ্তম দিনে তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেছেন।
উল্লেখ্য যে, ইব্ন জুরায়জের এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ‘আলী ইব্ন মাদীনী, বুখারী ও বায়হাকী প্রমুখ এ হাদীসটির সমালোচনা করেছেন। ইমাম বুখারী (র) তাঁর আত-তারিখে বলেন, : কারো কারো মতে, হাদীসটি কা’ব আল-আহবার (রা)-এর এবং তাই বিশুদ্ধতর। অর্থাৎ এ হাদীসটি কা’ব আল-আহবার থেকে আবু হুরায়রা (রা)-এর শ্রত হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তারা দু’জন একত্রে বসে হাদীস আলোচনা করতেন। ফলে একজন অপরজনকে নিজের লিপিকা থেকে হাদীস শোনাতেন। আর এ হাদীসটি সেসব হাদীসের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো আবু হুরায়রা (রা) কাব (রা)-এর লিপিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কোন কোন রাবী ভুলক্রমে ধারণা করেছেন। –, 4_LI U.– ০ ১ ২ আবু হুরায়রা সরাসরি রসূলুল্লাহ (সা)
থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং রসূলুল্লাহ (সা) আবু হুরায়রার হাত চেপে ধরেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
আবার এর পাঠেও ভীষণ দুর্বলতা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো এই যে, তাতে আকাশ মণ্ডলী সৃষ্টির উল্লেখ নেই, আছে শুধু সাতদিনে পৃথিবী ও তাঁর অন্তর্বতী বস্তুসমূহের সৃষ্টির উল্লেখ। আর এটা কুরআনের বর্ণনার পরিপন্থী। কেননা পৃথিবীকে চার দিনে সৃষ্টি করে তারপর দু’দিনে দুখান থেকে আকাশসমূহকে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুখান হলো, পানি থেকে উখিত সে বাষ্প যা পানি তরঙ্গায়িত হওয়ার সময় উপরে উঠেছিল, যে পানি মহান কুদরতের দ্বারা যমীনের থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। যেমন আবু মালিক, ইব্ন আব্বাস (রা) ও ইব্ন মাসউদ (রা) এবং আরো কয়েকজন সাহাবা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন : আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। পানির আগে তিনি কিছুই সৃষ্টি করেননি। তারপর যখন তিনি মাখলুক সৃষ্টি করতে মনস্থ করেন তখন পানি থেকে ধোয়া আকারে বাষ্প বের করেন। ফলে তা পানির উপরে উঠে যায়। এই ওঠাকে আরবীতে — L. বলা হয়ে থাকে। তাই এ উপরে ওঠার কারণেই আকাশকে L. বলে নামকরণ করা
श।
তারপর পানি শুকিয়ে একটি যমীনে রূপান্তরিত করেন। তারপর তা পৃথক পৃথক করে দুদিনে (রবি ও সোমবার দিন) সাত যমীনে পরিণত করেন। পৃথিবীকে আল্লাহ তা’আলা একটি মাছের উপর সৃষ্টি করেন। এ সেই ৬, … যার কথা আল্লাহ তা’আলা। تُؤن والقلم وَمَا . 6,681,…. আয়াতে উল্লেখ করেছেন। (৬৮ : ১) মাছ হলো পানিতে আর পানি হলো সিফাতের উপর আর সিফাত হলো এক ফেরেশতার পিঠের উপর, ফেরেশতা হলেন একখণ্ড পাথরের উপর আর পাথর হলো মহাশূন্যে। এ সেই পাথর যার কথা লুকমান (আ) উল্লেখ করেছেন, যা আকাশেও নয় পৃথিবীতেও নয়। মাছটি নড়ে উঠলে পৃথিবী প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। তাই আল্লাহ তা’আলা তার উপর দৃঢ়ভাবে পর্বতমালা প্রোথিত করে দেন, ফলে তা স্থির হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা মঙ্গলবার দিন পাহাড়-পর্বত ও তার উপকারিতা, বুধবার দিন গাছপালা, পানি, শহর-বন্দর এবং আবাদ ও বিনাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পরস্পর ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকা আকাশকে পৃথক পৃথক করেছেন। বৃহস্পতি ও শুক্র এ দু’দিনে তিনি সাত আকাশে পরিণত করেন। উল্লেখ্য যে, জুমআর দিনকে জুম’আ বলে এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, এ দিনে আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির সমাবেশ ঘটানো হয়েছিল এবং প্রত্যেক আকাশে তাঁর বিধানের প্রত্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল।
তারপর তিনি প্রত্যেক আকাশে ফেরেশতা, পাহাড়-পবর্ত, সাগরমালা, তুষার পর্বত ও এমন বস্তু সৃষ্টি করেন, যা তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জ্ঞাত নয়। তারপর আকাশকে নক্ষত্ররাজি দ্বারা
সুশোভিত করে তাকে সুষমামণ্ডিত ও শয়তানের কবল থেকে সুরক্ষিত বানিয়েছেন। তারপর ইচ্ছা মত সৃষ্টি পর্ব শেষ করে তিনি আরশের প্রতি মনোসংযোগ করেন।
বলাবাহুল্য যে, এ হাদীসে অনেকগুলো দুর্বলতা রয়েছে এবং এর বেশির ভাগই ইসরাঈলী বিবরণসমূহ থেকে নেয়া। কারণ, কা’ব আল আহবার উমর (রা)-এর আমলে যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তিনি তার সামনে আহলে কিতাবদের জ্ঞানভাণ্ডার থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। আর উমর (রা) তার মনোরঞ্জনের নিমিত্ত এবং তার অনেক বক্তব্য ইসলামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে মনোযোগের সঙ্গে তা শুনে যেতেন। এ কারণে এবং বনী ইসরাঈলদের থেকে বর্ণনা করার অনুমতি থাকার ফলে অনেকে কাব আল-আহবার-এর বক্তব্য বিবৃত করা বৈধ মনে করেন। কিন্তু তিনি যা বর্ণনা করতেন তার অধিকাংশই প্রচুর ভুল-ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ।
ইমাম বুখারী (র) তার সহীহ গ্রন্থে মুআবিয়া (রা) সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, তিনি কা’ব আল-আহবার সম্বন্ধে বলতেন : তা সত্ত্বেও তিনি যা উদ্ধৃত করতেন। আমরা তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নিতাম। যদিও তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বিবরণ দিতেন না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
এখানে আমরা সে সব বিষয় আনয়ন করব যা তাদের থেকে বড় বড় ইমামগণ বর্ণনা করেছেন। তারপর সে সব হাদীসও উল্লেখ করব, যা তার সত্যতার সাক্ষ্য দেবে কিংবা তা মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করবে। আর অবশিষ্ট কিছু এমনও থাকবে যা সত্যায়নও করা হবে না, প্রত্যাখ্যানও না। আমরা আল্লাহরই নিকট সাহায্য প্রার্থীনা করি এবং তারই উপর ভরসা রাখি। ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : . لما قضی الله الخلق کتب فی کتابه فهو عنده فوق العرش ان
رحمتی غالبات غضنسبی ۰ অর্থাৎ—’আল্লাহ সৃষ্টিকার্য শেষ করে আরশের উপরে তাঁর নিকটে থাকা কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রাখেন যে, নিঃসন্দেহে আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল।’
ইমাম মুসলিম, ইমাম নাসাঈ ও কুতায়বা (র) সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তারপর ইমাম বুখারী (র) সাত যমীন প্রসঙ্গ বর্ণনা করেন।