ফার্গো ফোরামে এক জন আবহাওয়াবিজ্ঞানীর ভবিষ্যৎবাণী ছাপা হয়েছে। তিনি হিসেবটিসেব করে বের করেছেন, আরেকটি বরফ-যুগ আসছে। এই বরফযুগের স্থায়িত্ব হবে তিন শ বছর। সমস্ত পৃথিবী বরফে ঢেকে যাবে। সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তাপমাত্রা হবে শূন্যের ত্রিশ ডিগ্রী নিচে।
খবর ছাপা হয়েছে বক্স করে। বিজ্ঞানীর ছবি আছে। হাসি-হাসি মুখের ছবি। বরফ-যুগ আগমনের সংবাদে তাকে মোটেই বিচলিত মনে হচ্ছে না।
পাশা বিরক্ত ভঙ্গিতে বিজ্ঞানীর ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল। বিজ্ঞানীরাও আজকাল সেনসেশন তৈরি করতে চান। সবাই চায়, তারাইবা বাদ যাবে কেন?
খবরের কাগজে পড়বার মতো আর কিছু নেই। ইথিওপিয়ার কয়েকটি বীভৎস ছবি দিয়ে একটি দীর্ঘ ফিচার আছে। সেটি পড়তে ইচ্ছা করছে না। কোথায় কে না। খেয়ে আছে, তা আজকের এই ছুটির সকালে জানতে ইচ্ছা করে না।
প্রথম প্রথম এই পেট-বের-হয়ে-যাওয়া অপুষ্ট শিশুগুলোর ছবি দেখলেই গা কেমন করত। এখন করে না। পত্রিকাওয়ালারা ছবি ছাপিয়ে-ছাপিয়ে মানুষের মমতা নষ্ট করে দিয়েছে।
পাশা অন্যমনস্কভাবে কয়েকটি ছবি দেখল। প্রতিটির নিচে খুব কাব্যিক ক্যাপশন। মায়ের শুকনো দুধ দুহাতে খামচি দিয়ে ধরে আছে একটি শিশু। শিশুটিকে দেখাচ্ছে একটা বড় মাপের পোকার মত। মায়ের মুখ মিসরের মমির মতোই ভয়াবহ। নিচে লেখা-মেডোনা। কোনো মানে হয়?
ছবিটির দিকে তাকালেই মনে হয় সাংবাদিক ভদ্রলোক একটি পুরস্কার আশা করছেন। পুলিটজার পুরস্কার, লা গ্ৰান্দি পুরস্কার, দি র্যাবো অনার। ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের একটি মোম ছবি মানেই অর্থ, সাফল্য এবং পরিচিতি পাশা প্রবন্ধটি পড়ে ফেলল। যা ভাবা গিয়েছিল তাই, বাংলাদেশের নাম এই প্রবন্ধে আছে। প্রবন্ধকার শেষের দিকে দুঃখ করে লিখেছেন ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ–এই সব অঞ্চলে কোনো দিন কি আশা ও আনন্দের সূর্য সত্যি সত্যি উঠবে?
পাশার বিরক্তির সীমা রইল না। ইথিওপিয়ার কথা লিখছ ভালো কথা, আবার বাংলাদেশকে টেনে আনা কেন? মাথায় একটা সূক্ষ্ম যন্ত্রণা হচ্ছে। বিরক্তির কারণেই হচ্ছে। মাঝে মাঝে এই যন্ত্ৰণা দ্রুত ছড়িয়ে যায়। দুটি এক্সট্রা স্ট্রেংথ টাইলানলও ঠিক কাজ করে না। অনেক দিন ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না, এক বার যাওয়া দরকার। পঁয়ত্রিশের পর শরীরের ছোটখাটো অসুবিধাগুলোর দিকেও নজর রাখতে হয়।
পয়ত্রিশের পর মানুষ তার নিজের শরীরকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করতে শুরু করে। হার্ট কি ঠিকমতো বিট করছে? ক্লান্ত হয়ে পড়ছে না তো? লিভার, সে ঠিকঠাক আছে? চোখের মণির উপর ক্যালসিয়াম দানা বাধতে শুরু করে নি তো? রোদের দিকে তাকালে রামধনু ভাসে না তো?
শোবার ঘরে টেলিফোন বাজছে। উঠে গিয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে না। আবার চুপচাপ বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। এটাকেই কি ডিপ্রেশন বলে? পাশা উঠে দাঁড়াল। ততক্ষণে রিংবন্ধ হয়ে গেছে। সে চলে গেল শোবার ঘরে। আবার টেলিফোন আসবে। এমন লোকের সংখ্যা খুব কম, যারা প্রথম বারে না পেলে দ্বিতীয় বার রিং করে না।
আবার রিং হল। আমেরিকান মেয়ের গলা। যান্ত্রিক ভাব আছে গলার স্বরে। তার মানে সে এক জন সেক্রেটারি। প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা করে তাকে টেলিফোনে কথা বলতে হয়।
পাশা চৌধুরী?
হ্যাঁ।
এই টেলিফোন কি আপনার?
মেয়েটি যন্ত্রের মতো পাশার টেলিফোন নাম্বার আওড়াল।
হ্যাঁ, আমার, কী ব্যাপার?
আমি বেল টেলিফোন থেকে বলছি। সুশান আমার নাম!
হ্যালো সুশান।
তুমি কি বেল টেলিফোন থেকে কোনো চিঠি পাও নি?
পেয়েছি।
চার মাসের টেলিফোন বিল বাকি পড়ে আছে। আমরা আর তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করব।
আমি তিন সপ্তাহের আগেই বিল দেবার ব্যবস্থা করব।
ভালো কথা, তুমি এখন থেকে এই টেলিফোনে ওভারসীজ টেলিফোন করতে পারবে না। এই অসুবিধার জন্যে আমরা দুঃখিত।
গুড ডে সুশান।
গুড ডে।
সব অফিস-সেক্রেটারির নাম সুশান হয় কেন, তাই ভাবতে-ভাবতে পাশা বসার ঘরে এল। পত্রিকায় পড়ার আর কিছু নেই। সময় কাটানর মতো ব্যবস্থা করা যায় কি? ছবি দেখলে কেমন হয়? অনেক দিন ছবি দেখা হয় না।
ফার্গো ফোরামে দুটি কলাম জুড়ে আছে ছবির খবর। কোন নামই পরিচিত মনে হচ্ছে না। একটি নাম খানিকটা পছন্দ হচ্ছে–দি ডার্ক। ভূতের কাণ্ডকারখানা হবে। ছবি সম্পর্কে কোনোতথ্য নেই। শুধু লেখা পিজি। প্যারেন্টাল গাইডেন্স। বাবামারা যদি মনে করেন, তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই ছবি দেখতে পারেন।
দুপুরবেলা ভূতের ছবি দেখে খানিকটা ভয় পাওয়া মন্দ কি? বিরক্তির ভাবটা তো কাটবে। ভয় পাওয়ার জন্যে কিছু বুড়োবুড়ি নিশ্চয়ই থাকবে হলে। সামান্য শব্দেই চেচিয়ে উঠে একটা কাণ্ড করবে।
অনেক দিন বুড়োবুড়িদের নিয়ে কোনো ছবি দেখা হয় না। একটা দেখা যেতে পারে।
আবার টেলিফোন বাজছে।
হ্যালো, পাশা চৌধুরী।
বলছি।
আমি বেল টেলিফোন থেকে বলছি–মাইকেল।
হ্যালো মাইকেল।
তুমি আমাদের কাছ থেকে কোনো নোটিশ পাও নি?
পাশা এক বার ভাবল বলে–তুমি যে-খবরটি দিতে চাচ্ছ, তা ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে, আবার দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু সে কিছু বলল না, কথা শুনে গেল।
দেড় হাজার ডলারের মতো ব্যাঙ্কে আছে। চার মাসের টেলিফোন বিল এই মুহূর্তে চেক লিখে দিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু সেটা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
গুড ডে মিঃ পাশা। কাজের মধ্যে বিরক্ত করবার জন্য দুঃখিত। দি ডার্ক ছবিটি দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা দীর্ঘস্থায়ী হল না। আজকাল কোনো পরিকল্পনাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
পাশা ঠিক করল, দুপুরবেলা খানিকটা ঘুমানর চেষ্টা করবে। খাঁটি বাঙালী একটি ব্যাপার। যেখানে সবাই কাজকর্ম করছে, সেখানে নরম বিছানায় আরামের ঘুম।
মেইল বক্সে বেশ কিছু চিঠি-শুয়ে-শুয়ে চিঠি পড়েও খানিকটা সময় কাটান যায়। আজ হচ্ছে ডিসেম্বরের চার তারিখ। ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই এপল গেমস-এর পিআরও টেলিফোন করবে। সেরকমই কথা আছে। পিআরওর কথাবার্তায় বোঝা গেছে এপল গেমস প্রাথমিকভাবে তার খেলাটি পছন্দ করেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ের মিটিংটি হবে ডিসেম্বরের দু তারিখে। পাশা বলেছিল, আমি টাকাপয়সার একটা বড় রকমের ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।
অবস্থা বদলাবার একটা বড়ো সম্ভাবনা আছে মিঃ পাশা। গেমস ডিভিশনের অনেকের ধারণা, এই খেলাটি বড় রকমের হিট হবে। তবে আমাদের হাতে আরো কিছু ইন্টারেস্টিং গেমস-এর সফটঅয়্যার জমা পড়েছে।
সেগুলি কীরকম বলতে পারেন?
না, পারি না।
ভিডিও গেম-এর এই খেলাটি তৈরি করতে পাশার লেগেছে ছ মাস। প্রোগ্রাম লেখা, বদলান, পরীক্ষা করে দেখা। জিনিসটি দাড়িয়ে যাবে আশা ছিল না। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে। খেলাটি এরকম:
ভিডিও ক্যাসেট কম্পুটারে লাগাবার সঙ্গে সঙ্গে একটি মানুষের ছবি ভেসে উঠবে। নিচে লেখা হবে–এই মানুষটির নাম জন। তার সঙ্গে আছে পাঁচ শ ডলার। এই পাঁচ শ ডলার নিয়ে তাকে এক মাস টিকে থাকতে হবে। সে কি পারবে?
তারপর তিনটি লটারির টিকিট ভেসে উঠবে পর্দায়। সে ইচ্ছা করলে একটি টিকিট কিনতে পারে পাঁচ ডলার দিয়ে। জিতে গেলে সে পঞ্চাশ ডলার পাবে। কোন টিকিটটি কিনবে তা নির্ভর করবে যে খেলাটি খেলছে তার ওপর। সে জানে না তিনটির ভেতর কোনটি সেই বিশেষ টিকিট।
তেমনিভাবে আসবে শেয়ার মার্কেট। সে কি শেয়ার কিনবে, না কিনবে না?
লোকটি কি এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করবে, না করবে-না? এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া না করে সে রেলওয়ে স্টেশনেও রাত কাটাতে পারে। কিন্তু সেখানে গুণ্ডাদের হাতে টাকাপয়সা খোয়ানর ভয় আছে।
খেলাটি যথেষ্টই উত্তেজনার। লোকটিকে জিতিয়ে দিতে হলে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে খেলতে হবে। প্রচুর ভেরিয়েশন। খেলাটি এপল গেমস-এর পছন্দ নাহওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সময় খারাপ, হয়তো শেষ মুহূর্তে পিআরও ঠাণ্ডা গলায় বলবে, মিঃ পাশা, আমরা অত্যন্ত দুঃখিত যে, আপনার এত চমৎকার একটি খেলা আমরা নিতে পারছি না।
শেষ পর্যন্ত এই বিশেষ খেলাটি খেলতে হবে পাশাকে। দেড় হাজার ডলারের খেলা। খেলতে হবে সাবধানে। পাশা চিঠির গাদা নিয়ে বসল। দেশের চিঠি এসেছে। তিনটি। এ সব পড়বার কোন অর্থই হয় না। চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায় চিঠির বক্তব্য।
জিনিসপত্র অগ্নিমূল্য। জীবনধারণ করা কঠিন। ইত্যাদি ইত্যাদি। মূল বক্তব্য একটিই। আমাদের বেঁচে থাকার ব্যাপারে তোমার সাহায্য চাই। তোমার উপর আমার দাবি আছে। ভালবাসার দাবি, আত্মীয়তার দাবি। আমাদের দুঃসময়ে তুমি আমাদের দেখবে না?
দেশের চিঠি আগে পড়ার দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছাড়া গেল না। অপরিচিত হাতের লেখার একটি চিঠি খুলল সে। দামী একটা কাগজে গোটা-গোটা করে লেখা। পাশার ফুফাতো বোনের স্বামী। চিঠির বক্তব্য হচ্ছে, আমেরিকা আসবার একটা ব্যবস্থা পাশা ভাইকে করতেই হবে, যেভাবেই হোক। দরকার হলে আমেরিকায় সে কুলিগিরি করবে ইত্যাদি। এই ছেলেটিকে সে চেনে না। ফুফাতো বোনের কথাও ভালো মনে নেই। নাক-বোচা একটা ছোট্ট মেয়ে দেখে এসেছিল। রাত-দিন রান্না-বাটি খেলত। একা-একা সে হাত নাড়ছে, ছাক-ছাঁক শব্দে ডাল বাগার দিচ্ছে–বিচিত্র খেলা। এই মেয়ে বড়ো হয়ে গেছে। বাবা-মার আপত্তি উপেক্ষা করে একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে, ভাবাই যায় না। প্রথম প্রেমের স্বপ্নভঙ্গ ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। পাশা মনে-মনে ঠিক করে ফেলল, ছেলেটির চিঠির জবাব দেবে না। তবে ফুফাতো বোনকে এক শ ডলারের একটা ড্রাফট পাঠিয়ে দেবে। সঙ্গে একটি চিঠি থাকবে যাতে লিখবে–তুমি যে বিয়ে করে ফেলেছ, তা জানতাম না। তোমার ডাল রান্নার ছাঁক-ছাঁক শব্দ এখনো কানে বাজে। এক শ ডলার পাঠালাম। পছন্দসই কোন কিছু কিনে নিও। আর ভালো কথা, তোমার বর আমেরিকা আসতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করণীয় নেই। এখন এ-দেশে আসবার পদ্ধতি আমার জানা নেই। তাকে দেশেই একটা কিছু করতে বল।
দ্বিতীয় চিঠিটি আমিনুল হকের, ইনি জনতা ব্যাঙ্কের কচুক্ষেত শাখার এক জন কর্মচারী। পাশার আত্মীয়। আত্মীয়তার সূত্রটি ভদ্রলোক বিশদভাবে লিখেছেন, তবুও তা পরিস্কার নয়। এই ভদ্রলোক তার ছেলেকে আমেরিকায় ইঞ্জিনীয়ারিং পড়াতে চান। তিনি শুনেছেন, এ-দেশে প্রচুর বাঙালী ছাত্র কাজকর্ম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। ওরা যদি পারে, তার ছেলে কেন পারবে না? তিনি কষ্টটষ্ট করে যেভাবেই হোক ছেলের ভাড়ার টাকা যোগাড় করবেন। ছেলে ভালো, ম্যাট্রিকে তিনটি লেটার নিয়ে ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছে, তবে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দেবার জন্যে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা বেশি ভালো হয় নি। হায়ার সেকেণ্ড ডিভিশন আছে, ইত্যাদি।
তৃতীয় এবং শেষ চিঠিটি বড়োভাইয়ের। তিনি প্রতি মাসে টাকা পাওয়ার পর একটি চিঠি লেখেন, এবং সেখানে টাকাপয়সা ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপার থাকে না। তাঁর চিঠি অনেকটা অফিসিয়াল চিঠির মতো।
তোমার ড্রাফট পেয়েছি। ডলারের বাজার এখন একটু ভালো। প্রতি ডলারে সাতাশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা করে পেলাম। গতবার দর ছিল ছাৰিশ টাকা। তবে শোনা যাচ্ছে, দর এরকম থাকবে না। আমার এক জন পরিচিত এজেন্ট ২৭৮
আছে–কুন্দুস সাহেব। চাঁদপুরে বাড়ি। তিনি আমাকে সব সময় ভিতরের খবর দেন। তিনি বললেন, বাজারে বর্তমানে জার্মান মার্কের অবস্থা ভালো। ডলার এবং পাউণ্ড দুইটির দামই ভবিষ্যতে কমবে। বাসার আর সব খবর ভালো। তোমার খবর জানাবে। গত মাসে কোনো চিঠিপত্র না পেয়ে চিন্তিত আছি। রোজার মাসে কিছু বেশি পাঠাতে পার কিনা দেখবে। তোমার ভাবীর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।
বড়ো ভাইয়ের প্রতিটি চিঠির শেষ লাইন তোমার আবীর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। পনের বছর ধরে এক জন মহিলার শরীর ভালো যায় না কীভাবে সে এক রহস্য।
এবার বড়ো ভাই কী লিখবেন কে জানে? এবারই তাঁকে কোনো টাকা পাঠান হয় নি। মা-র মৃত্যুর পর তিনি একটু ভয় পেয়েছিলেন। তার ধারণা হয়েছিল, হয়ত আমেরিকা থেকে ডলার আসা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই এক বারই তিনি তিন পাতার এক দীর্ঘ চিঠি লিখলেন। সেখানে মার পেছনে শেষের দিকে কীভাবে জলের মত টাকা খরচ হয়েছে, তার বর্ণনা আছে। তিনি যে শেষ পর্যন্ত ছ হাজার টাকা কৰ্জ করলেন, সেই কথাও আছে। ইউনিভার্সিটিতে মেয়ে ভর্তি হয়েছে, তার রিকশা ভাড়াই মাসে যে দু শ টাকা–সেই কথাও আছে।
পাশা যথারীতি ড্রাফট পাঠিয়ে বড়ো ভাইয়ের আশঙ্কা দূর করে। বাকি চিঠিগুলো পড়তে ইচ্ছে করছে না। জরুরী কোনো কিছুই নয়।
আমেরিকায় তাকে জরুরী চিঠি লেখার কেউ নেই। খিদে লাগছে। ঘরে খাবার আয়োজন তেমন কিছু নেই। পনির এবং রুটি আছে। স্যাণ্ডউইচ বানান যায়। সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উঠতে হবে, পনির কাটতে হবে, রুটি গরম করতে হবে। পিৎসা হাটে একটা মিডিয়াম সাইজের পিৎসার অর্ডার দেওয়া যেতে পারে। কেন জানি সেই কষ্টটাও করতে ইচ্ছা করছে না।
ঘরের হিটিং কি কাজ করছে না। কেমন যেন ঠাণ্ডাঠাণ্ডা লাগছে। নাকি সত্যি সত্যি বরফ-যুগ এসে যাচ্ছে। পাশা চাদর টেনে দিয়ে চোখ বন্ধ করল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল সন্ধ্যাবেলায়। কে যেন কলিং বেল টিপছে।
পাশা দরজা খুলে দেখল, রেবেকা দাঁড়িয়ে আছে। মুখ শুকনো। শীতে সে কাঁপছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে কি?