আপনি কি শুশুক দেখেছেন? কেউ কেউ বলে শিশু। দেখেছেন শিশু? নৌকায়। যাচ্ছেন, ভুস করে নদীর পানিতে কিছু একটা ভেসে উঠেই ড়ুবে গেল। অবশ্যই দেখেছেন। এই শুশুক যে ডলফিনের প্রজাতি তা কি জানেন?
জানেন না?
শুশুক হলো ডলফিনের একটা প্রজাতি। এই প্রজাতি জন্মান্ধ। এর জন্মান্ধ হবার পেছনের কারণটা জানেন? শুশুক থাকে নদীতে। এদেশের নদীর পানি প্রচণ্ড ঘোলা। এই পানিতে যে বাস করে সে কিছু দেখতে পায় না। কাজেই তার চোখ থাকা না-থাকা একই। প্রকৃতি তখন কী করল–শুশুকের চোখ বাতিল করে দিল। বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা? উইপোকার মতো আরেকটি অন্ধ প্রজাতি জন্ম নিল। উইপোকা যে জন্মান্ধ তা জানেন না? প্রাণীজগতের অনেক প্রজাতিই জন্মান্ধ।
এখন লজিকে আসুন। মনে করুন আপনাকে নির্জন নির্বাসন দেয়া হয়েছে। আপনাকে খাবার দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু কেউ আপনার কাছে আসে না। মানুষ তো দূরের কথা, পশুপাখিও না। মনে করুন কুড়ি বছর এইভাবে কেটে গেল। আপনার ভেতর ভালোবাসার যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, তার কোনোরকম ব্যবহার হলো না। তখন প্রকৃতি কী করবে? আপনার ভালোবাসার ক্ষমতা বাতিল করে দেবে না? শুশুকের বেলায় যে-রকম হয়েছিল? বিশ বছর পর আপনি যদি আত্মীয়স্বজনদের কাছে ফিরে যান তখন দেখবেন কারো প্রতি কোনো ভালোবাসা, আকর্ষণ বিকর্ষণ কিছুই বোধ করছেন না।
আমার ক্ষেত্রেও হয়তোবা সে-রকম কিছু ঘটেছে। প্রকৃতি আমার ভেতর থেকে ভালোবাসার ক্ষমতা তুলে নিয়েছে। আনন্দিত হবার দুঃখিত হবার ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি শুশুক প্রজাতির মতো অন্ধ হয়ে গিয়েছি।
অর্থাৎ আমার মানসিকতার স্বাভাবিক গঠনের অবনতি ঘটেছে। মানুষের ক্ষেত্রে যে এরকম ঘটবে তার উল্লেখ কিন্তু আমাদের ধর্মগ্রন্থে আছে। সূরা ইয়াসিনে আল্লাহপাক বলছেন—‘আমান নুআম্মিরহু নুনাক্কিছহু ফিল খালাক।’ যার অর্থ হলো, ‘আমি যাহাকে জীবনদান করি তাহার স্বাভাবিক গঠনে অবনতি ঘটাই।’ বুঝতে পারছেন কিছু?
আমি আল্লাহ বিশ্বাস করি কি করি না, এই বিষয় নিয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলব না। আমার বিশ্বাসের সঙ্গে আমার গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সিজিওফ্রেনিক রোগীরা ধর্মবিশ্বাসী হয়। তারা গভীর বিশ্বাসে ধর্মকর্ম করে। কঠিনভাবেই করে। সাইকিয়াট্রিস্টরা যখন কোনো রোগীর সিজিওফ্রেনিয়া হয়েছে। বলে সন্দেহ করেন তখন তার প্রথম প্রশ্নই থাকে–’আপনি কি ধর্মকর্ম করেন? ধর্মের নিয়মকানুন কঠিনভাবে পালন করেন? নিশিরাতে প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন?
এই প্রশ্নগুলির উত্তরে আপনি যদি হ্যাঁ বলেন তাহলে সাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রলোকের মনে বিরাট আনন্দ হবে। তিনি মনে মনে বলবেন, ‘তরে পাইছি’।
আপনার কি মনে আছে–শুরুতে আপনাকে বলেছিলাম যে, আমি আবারো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাই? রূপার তথাকথিত ভাইয়ের কথা বলছি। প্রথমবার গিয়েছিলাম তার বাসায়, এবার যাই তাঁর চেম্বারে। মজার ব্যাপার হলো তিনি কিন্তু আমাকে চিনতে পারেন না। একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য হচ্ছে সিজিওফ্রেনিকদের স্মৃতিশক্তি খুব ভালো হয়, সাইকিয়াট্রিস্টদের স্মৃতিশক্তি হয় দুর্বল এবং ডেনটিস্টদের আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে সবচে’ বেশি।
সাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রলোক বললেন, কাইন্ডলি আপনার নামটা বলুন।
আমি নাম না বলে বললাম, স্যার, আমি বিরাট মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আপনি আমাকে সারিয়ে তুলুন। টাকা-পয়সা যা লাগে দেব। টাকা পয়সা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। আমি একজন ধনবান ব্যক্তি।
ভদ্রলোকের চোখ চকচক করে উঠল। আমাদের দেশে সাইকিয়াট্রিস্টরা রোগী পান না। অন্য ডাক্তাররা যেখানে টাকা গুনতে গুনতে হাতে ঘা করে ফেলেন, সাইকিয়াট্রিস্টদের সেখানে দেখা যায় উড়ন্ত মাছির সাইকোএনালিসিস করে সময় কাটাতে।
সাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রলোক আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, আপনার সমস্যা কী?
আমার সমস্যা হলো আমি একজন সিজিওফ্রেনিয়ার রোগী।
আপনি কিসের রোগী সেটা আমি ঠিক করব। আপনার কী করে ধারণা হলো যে আপনি সিজিওফ্রেনিয়ার রোগী? যে রোগী সে কি তার রোগ বুঝতে পারে?
আমি বললাম, কেন পারবে না? আমার যদি রোজ কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে, প্লীহা বড় হয় তাহলে আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে।
সিজিওফ্রেনিয়া চোখ বন্ধ করে ডায়াগনোসিস করার রোগ না। আপনি দয়া করে অল্প কথায় আপনার সমস্যাগুলি বলুন।
অল্প কথায় বলব?
হ্যাঁ, অল্প কথায় বলুন। আপনি কি একা এসেছেন? সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসেন নি? মানসিক রোগীরা কখনো নিজের কথা গুছিয়ে বলতে পারে না।
স্যার, আমি ইচ্ছা করেই কাউকে আনি নি। কারণ আমি এমনসব কথা আপনাকে বলব যা তৃতীয় কোনো মানুষের শোনা উচিত না। স্যার, আমি কি শুরু করব?
হ্যাঁ, শুরু করুন।
অল্প কথায়?
হ্যাঁ, অল্প কথায়। প্লিজ।
আমি মজার গল্প বলছি এমন ভঙ্গিতে শুরু করলাম আমাদের বাড়িতে একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আমার স্ত্রীর বড়বোন মারা গেছেন এবং সবচে’ ছোট বোনটিও মারা যাবে মারা যাবে করছে। বড়বোন মারা গেছেন ভূতের ভয়ে। ছোটটি খুব সম্ভব মারা যাবে পিচ্ছিল ছাদ থেকে পিছলে উঠানে পড়ে। তৃতীয় মৃত্যু অর্থাৎ আমার স্ত্রীর মৃত্যুও অতি শিগগির ঘটবে, এই নিয়ে আমি চিন্তিত। আপনাদের সাইকিয়াট্রিস্টের ভাষায় এই মানসিক অবস্থাটির নাম হয়তো প্যারনয়া। কল্পিত বিপদের আশঙ্কায় অস্থির হওয়া। একের পর এক সবাই মারা যাচ্ছে–এরকম টেনশনের শিকার হওয়া।
কিছু মনে করবেন না, আপনি কি আমার কাছে আগে কখনো এসেছিলেন? আপনি কি সেই ব্যক্তি যে সারারাত টেলিফোন করে আমাকে জ্বালাতন করেছে?
আমি খুব বিস্মিত হয়েছি এরকম ভঙ্গি করে বললাম, আপনি ধরে ফেলেছেন। স্যার! জি এসেছিলাম। আমার স্ত্রী রূপাকে নিয়ে আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম। স্যার, আপনার তো অসাধারণ স্মৃতিশক্তি। আমি মুগ্ধ! সাইকিয়াট্রিস্টদের ভেতর এমন স্মৃতিধর মানুষ দেখা যায় না। আগের আমল হলে আপনার পায়ের ধুলা নিতাম। এই আমলে যে পায়ের ধুলা নেয় সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে।
ভদ্রলোকের ভুরু কুঁচকে গেল। তিনি গভীর সন্দেহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি বললাম, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি আমার উপর খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। আমি কি চলে যাব? না-কি অতি সংক্ষেপে আমার সমস্যাটা আপনাকে জানাব।
আপনার সমস্যাটা কী?
আমি ডাক্তারের দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে গলার স্বর নামিয়ে বললাম, আমি স্যার দু’জন স্ত্রীর সঙ্গে সংসার কাটাচ্ছি। একজনের নাম তো আপনাকে আগেই বলেছি, তার নাম রূপা; আরেকজনের নাম কাঁসা। একটা হলো নোবেল। মেটাল, অন্যটা শংকর ধাতু।
ডাক্তার আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন, আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন।
আমি আহত গলায় বললাম, সময় নষ্ট করছি?
অবশ্যই সময় নষ্ট করছেন। এখন আপনার কথা আমার পুরোপুরি মনে। পড়েছে। আপনি মনগড়া সব স্বপ্নের কথা বলে প্রথম দিন আমাকে চূড়ান্ত রকমের বিরক্ত করেছিলেন। আবারো বিরক্ত করতে এসেছেন।
স্যার, আমি কি চলে যাব?
অবশ্যই চলে যাবেন।
আপনার ফিস দিতে হবে না?
না, দিতে হবে না।
পাঁচশ’ টাকার একটা নোট দিয়ে যাই? আপনার সময় নষ্ট করেছি। সময়ের মূল্য।
দয়া করে আপনি উঠুন। আমাকে রোগী দেখতে হবে।
স্যার, আমি তো একজন রোগী। মানসিক রোগী।
আপনি রোগী না। আপনি মানসিকভাবে অতি সুস্থ একজন মানুষ।
চট করে এরকম সিদ্ধান্তে কী করে এলেন জানতে পারি?
মানসিক রোগীরা আর যাই পারুক রসিকতা করতে পারে না। হিউমার বোঝার এবং করার ক্ষমতাটা তাদের প্রথমেই নষ্ট হয়। আপনার সেই ক্ষমতা পুরোপুরি আছে।
এমন কি হতে পারে না স্যার–আমার যে সিজিওফ্রেনিয়া হয়েছে সেটা ভিন্ন। প্রজাতির? শুশুক যেমন ডলফিনেরই একটি প্রজাতি। ডলফিনের চোখ আছে। শুশুক জন্মান্ধ। হয়তো আমার হয়েছে শুশুকটাইপ সিজিওফ্রেনিয়া।
কেন বিরক্ত করছেন?
স্যার, মাঝে মাঝে মানুষকে বিরক্ত করতে আমার খুব ভালো লাগে। মাছি হতে ইচ্ছা করে।
তার মানে?
মানুষকে সবচে’ বিরক্ত করতে পারে মাছি। সেই জন্যেই মাছি হতে চাই। মাছি হয়ে সবাইকে বিরক্ত করে মারব।
আপনি কি দয়া করে উঠবেন? প্লিজ।
আমি উঠলাম। এ দেশের একজন বড় সাইকিয়াট্রিস্টের কাছ থেকে Clean bill of mental health নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম।
আমার আনন্দ হচ্ছে। আমার মনে কোনো রোগ নেই–এই ভেবে আনন্দ না। ডাক্তার আমার রোগ ধরতে পারছেন না–এই ভেবে আনন্দ। মানসিক অসুখ সম্ভবত একমাত্র অসুখ যে অসুখ ডাক্তাররা ধরতে না পারলে খুব আনন্দ হয়।
আমি ডাক্তার হলে ভালো করতে পারতাম। আধি ডাক্তারের কথা বলছি। মন-বিশেষজ্ঞ। রোগীর সঙ্গে দু’একটা কথা বলেই চট করে বলে দিতে পারতাম রোগীর কী হয়েছে। Silence of the lambs ছবিটা দেখেছেন? ডা. হানিবলের কথা মনে আছে?
না না, নিজেকে আমার কখনো ডা. হানিবল মনে হয় না। আমি নিজেকে বুদ্ধিমান এবং মজার একজন মানুষ বলে মনে করি। যে মানুষটির চিন্তা করার ক্ষমতা ভালো। সিদ্ধান্তে পৌঁছার ক্ষমতাও ভালো এবং লোকচরিত্র সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে। যে মানুষটা জানে দুই-এর সঙ্গে দুই মিলালে কখন চার হয়, কখন বাইশ হয়।
আপনি নিশ্চয়ই আমাকে অহঙ্কারী ভাবছেন। আমি অহঙ্কারী না। আমি এমন একজন যার নিজের উপর আস্থা আছে। আস্থা থাকা দোষের কিছু না। বেশিরভাগ মানুষ বিনয় নামক হাস্যকর গুণের জন্যে নিজের উপর আস্থার ব্যাপারটা চেপে যায়। আমার মধ্যে বিনয়ের ছিটেফোঁটা নাই বলে আমি…
কী হাবিজাবি বলছি! মূল বিষয়ে আসি। মূল বিষয় হলো আমি ডা. হানিবলের মতো মনের ডাক্তার হলে ভালো করতাম। আমার মামা শেখ ইফতেখারের অসুখটা যেভাবে ধরলাম–তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েই আমার মনে হলো সাথীর মৃত্যু তিনি স্বাভাবিকভাবে নেন নি। সামান্য সন্দেহ তাঁর মনে দানা বেঁধেছে। ইংরেজিতে বললে বলতে হয়–A crystal of suspision has formed. A tiny crystal.
কৃস্টালের সমস্যা হলো একটা দানা তৈরি হওয়া মাত্র আরো দানা তৈরি হতে থাকে, দানা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সময় নেয় প্রথম দানাটি।
ইফতেখার মামা তার স্বভাবমতো সব সমস্যা মিটালেন। ডাক্তারি সার্টিফিকেট জোগাড় করলেন ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশনে রোগীর মৃত্যু। মওলানা ডাকিয়ে জানাজার ব্যবস্থা করলেন। আজিমপুর গোরস্তানে কবরের ব্যবস্থা করে সন্ধ্যার পর আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তখনি বুঝলাম একটা ঝামেলা তো হয়েছে। ইফতেখার মামা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন কেন? আমাকে তিনি নিশ্চয়ই সান্ত্বনা দিতে আসছেন না। তিনি জানেন আমার সান্তনার প্রয়োজন নেই। এই জিনিস আমার লাগে না।
মামা কয়েকবার খুকখুক করে কেশে বললেন, বাবা, কেমন আছ?
আমি জবাব দিলাম না। জবাব দেবার প্রয়োজন নেই। আমি কেমন আছি এই সংবাদ সংগ্রহের জন্যে তিনি আসেন নি। তাঁর খুকখুক কাশির মতো প্রশ্নটাও উদ্দেশ্যহীন। তার চোখ দুটিও উদ্দেশ্যহীন মানুষের চোখের মতোই ছটফট করছে। আমি বললাম, আপনি কেমন আছেন?
তিনি আবারো খুকখুক করে কাশলেন। আমি বললাম, আপনার হাত কি ঠিক আছে? বড় ধরনের কোনো মিথ্যা কথা বলায় হাত অবশ হয়ে যায় নি তো?
তিনি মেঝের দিকে তাকিয়ে না-সূচক মাথা নাড়লেন। আমি বললাম, আপনি কি আমাকে বিশেষ কিছু বলতে এসেছেন?
ইফতেখার মামা মেঝে থেকে তার দৃষ্টি উপরে তুললেন, তবে আমার দিকে তাকালেন না। আমার পেছনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেয়েটা মারা গেল কীভাবে?
আমি বললাম, ভয় পেয়ে মারা গেছে। কেউ একজন তাকে ভয় দেখিয়েছে। সেই ভয়টা সে নিতে পারে নি। মনে হয় মেয়েটার হার্ট দুর্বল ছিল।
ইফতেখার মামা বললেন, ও আচ্ছা।
আমি বললাম, ভয় দেখানোটা ছিল একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অংশ। হার্টের রিদমে ভয়ের প্রভাব বিষয়ক পরীক্ষা।
মামা আবারো বললেন, ও আচ্ছা।
আমি বললাম, আপনি আর কিছু জানতে চান?
মামার দৃষ্টি আবারো মেঝেতে নিবদ্ধ হলো এবং তিনি না-সূচক মাথা নাড়লেন। তিনি আর কিছু শুনতে চান না। তিনি যা জানতে এসেছিলেন তারচে’ বেশি জেনে গেছেন।
আমি বললাম, আপনি যদি আর কিছু শুনতে না চান তাহলে বাসায় চলে যান। বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করুন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার শরীর। ভালো না।
ইফতেখার মামা বসেই রইলেন। মামার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে। পুরোপুরি ‘Confused state’-এর একজন মানুষ। এটা খুবই বিপদজনক অবস্থা। মানুষ বেশিক্ষণ কনফিউশান নিতে পারে না। মানব মস্তিষ্ক কনফিউশান থেকে বের হবার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। যদি সে সফল হয় তাহলে ভালো। যদি সফল না হয় তাহলে মস্তিষ্ক কনফিউশানটাকেই সত্যি ধরে নিয়ে তার জগৎটা অতি দ্রুত সাজিয়ে ফেলে। তার জগৎ তখন হয়ে যায় কনফিউশানের জগৎ। A state of total confusion. A state of wrong reality. সেই অবস্থাটা ভয়াবহ।
আমি মামার দিকে ঝুঁকে এসে বললাম, মামা, বাসায় যান।
তিনি বললেন, আচ্ছা।
কিন্তু তিনি আগের জায়গাতেই বসে রইলেন। খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। মানুষটা কনফিউশান থেকে বের হতে পারছে না। তাঁর মস্তিষ্ক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্ক চেষ্টা যে চালাচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে মামার দ্রুত শ্বাস নেয়া দেখে। তাঁর হার্ট অতি দ্রুত রক্ত পাম্প করছে। গ্যালন গ্যালন রক্ত চলে যাচ্ছে মস্তিষ্কে। অক্সিজেনে ভরপুর ধমনীর বিশুদ্ধ রক্ত। মস্তিষ্ক অতিরিক্ত পরিশ্রম করছে, তার অতিরিক্ত খাদ্য দরকার। তার প্রয়োজন বিশুদ্ধ অক্সিজেন।