০৬. অসুখ-বিসুখ

রহমান সাহেব বললেন, তোমার কি অসুখ-বিসুখ?

তাহের নিচু গলায় বলল, জ্বি-না স্যার। ঠাণ্ডা লেগেছে।

চোখ টকটকে লাল, ঠাণ্ডায় চোখ লাল হয় নাকি?

তাহের ফ্যাকাসে ভঙ্গিতে হাসল। কিছু একটা বলা উচিত–কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার গায়ে জ্বর আছে সে বুঝতে পারছে–সব কেমন হলুদ হলুদ লাগছে।

রহমান সাহেব বললেন, কাল তোমার ওখানে যাব বলে ভেবেছিলাম–বৃষ্টি-টৃষ্টি দেখে আর যাইনি। তোমার স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছ তো?

জ্বি স্যার। ওর বড় চাচার বাসায় দিয়ে এসেছি।

গুড। ভেরী গুড।

একা একা থাকতে খারাপ লাগে তো, এই জন্যে নিয়ে এসেছিলাম। অন্যায় হয়েছিল। কিছু মনে করবেন না স্যার।

নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে রাখবে এতে অন্যায় কি? কমপ্লেইন হচ্ছিল। স্যারের কানে গেলে স্যার রাগ করতে পারেন এই জন্যেই, অন্য কিছু না।

আমি বুঝতে পারছি স্যার।

ঠিক আছে, তুমি যাও। ও আচ্ছা শোন, কি একটা জরুরী কথা বলতে চাচ্ছিলাম–ভুলে গেলাম। ঠিক আছে মনে হলে বলব।

আমি কি স্যার ঘন্টাখানিক পরে আসব?

কেন?

কথা যেটা ভুলে গিয়েছিলেন সেটা যদি মনে পড়ে!

আসতে হবে না। এমন কিছু জরুরী কথা না। জরুরী কথা হলে মনে থাকত।

চলে যাব স্যার?

হ্যাঁ। বাড়ি-ঘর ঠিক-ঠাক রাখবে।

অবশ্যই স্যার। এর মধ্যে কি আপনি একবার আসবেন?

আসব। বাড়িটা রঙ করাতে হবে। র মিস্ত্রীকে নিয়ে এসে এস্টিমেট করাতে হবে।

কবে আসবেন স্যার?

দিন-তারিখের দরকার কি, চলে যাব এক সময়। ও আচ্ছা, কথাটা মনে পড়েছে–কামরুলের খবর কি?

তাহেরের বুক ধ্বক করে উঠল–মনে হল সে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। কামরুলের খবর কি? এই প্রশ্নের উত্তরে সে কি বলবে?

তাহেরকে কিছু বলতে হল না। রহমান সাহেব বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন, কুকুর তিনটাকে ইনজেকশন দেয়ার জন্যে তার নিয়ে যাবার কথা–আমি ইনজেকশন আনিয়ে রেখেছি–সে আসছে না কেন? সব সময় এ রকম করে। একবারের জায়গায় দশবার বলতে হয়। ওকে খবর দেবে।

জ্বি আচ্ছা।

স্যার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন ইনজেকশন দেয়া হয়েছে কি না। এক সপ্তাহ আগে তাকে বলেছি, আশ্চর্য, এমন গাফিলতি। তুমি তাকে কালই আসতে বলবে।

জ্বি বলব। তবে কাল বোধহয় আসতে পারবে না। জ্বর হয়েছে। বিছানায় শুয়ে আছে দেখলাম। কাছে অবশ্যি যেতে পারি নাই। কুকুরগুলির কারণে কাছে যেতে ভয় লাগে। কোন দিন এরা আমাকে মেরে ফেলে কে জানে।

রহমান সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, এখন তুমি যাও। তাহের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বের হয়ে এল। জ্বর বোধহয় আরো বেড়েছে। মাথা ঘুরছে। সকালে সে নাশতা না খেয়ে বের হয়েছে। পারুল নাশতা বানিয়েছিল–রুটি, আলু ভাজা। তার খেতে ইচ্ছে করেনি। তার ঘর থেকে বেরুতেও ইচ্ছা করেনি। পারুলই তাকে প্রায় জোর করে বাইরে পাঠিয়েছে। সহজ গলায় বলেছে–এই বাড়িতে থাকলেই তোমার আরো খারাপ লাগবে। গত রাতের কথা মনে পড়বে। তুমি বরং ঘুরে টুরে আস। সন্ধ্যাবেলা যখন ঘরে ফিরবে দেখবে আগের মত খারাপ লাগছে না।

কোথায় ঘুরব?

অফিসে যাও। সবার সঙ্গে গল্প-টল কর। যত গল্প করবে তত দ্রুত তুমি সহজ হবে। তাতে মাথা থেকে রাতের ব্যাপারটা চলে যাবে।

তুমি একা থাকবে?

একা কোথায়? আমার কুকুর তিনটা আছে না? আমি ভালই থাকব, আমার কোন সমস্যা হবে না–তুমি আসার সময় কিছু চা-পাতা নিয়ে এসো। চা-পাতা, আরেকটা বই–শিশুদের নামের বই। বাচ্চাদের নাম রাখার এখন সুন্দর সুন্দর বই পাওয়া যায়। এলফাবেটিকেলী সাজানো। বই-এ নাম, নামের অর্থ সব দেয়া থাকে। মনে থাকবে?

হুঁ, থাকবে।

চা-পাতা আনতে যদি ভুলেও যাও–বই আনার কথাটা কিন্তু ভুললে চলবে না।

তাহের ভুলেনি–তার মনে আছে। তার শরীর খারাপ, মাথা ঘুরছে, গায়ে জ্বর, তারপরে সবকিছুই তার মনে আছে। সে ম্যানেজার রহমান সাহেবের ঘর থেকে লবীতে চলে এল। রিসেপসনিস্ট মেয়েটি আজও সবুজ শাড়ি পরেছে। সম্ভবত তার অনেকগুলি সবুজ শাড়ি। মেয়ে শাড়ির রঙ মিশিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়–সবুজ রঙের লিপস্টিক কি পাওয়া যায়? নিশ্চয়ই যায়। সে তো আর খোঁজ-খবর করে না। খোঁজ-খবর করলে দেখত দোকান ভর্তি সবুজ বরে লিপস্টিক। আজ যখন বইমের দোকানে যাবে তখন সে লিপস্টিকের দোকানে খোঁজ করবে। কিনতে পারবে না, টাকা নেই। দামটা শুধু জানবে। দোকানদার বিরক্ত হবে। ওরা আবার চট করে ধরে ফেলে কে কিনতে এসেছে আর কে শুধু দরদাম করতে এসেছে।

হঠাৎ তাহেরের মন বিষণ্ণ হয়ে গেল–তার মনে পড়ল এখন পর্যন্ত সে পারুলকে কোন উপহার দেয়নি। কোন কিছুই না। এর মধ্যে তার একবার জন্মদিন গেল। তারা তখন সিরাজউদ্দিন সাহেবের বাসায় থাকে। সকালবেলা পারুল বলল, বুঝলেন জনাব, আজ আমার জন্মদিন। আজ অবশ্যই আমার জন্যে কয়েকটা গোলাপ ফুল কিনে আনবেন। বেশি আনার দরকার নেই–যা দাম। দুটা আনলেই হবে। খবর্দার, উপহার-টুপহার আবার আনতে যাবেন না।

তাহের উপহার আনেনি, ফুলও আনেনি। ভুলে গিয়েছিল। জন্মদিনের সেই উপহার আজ কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? কিছু টাকা সঙ্গে আছে। লিপস্টিকের দাম কত সে জানে না–চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ টাকায় হলে কিনে ফেলা যায়। রিসেপসনিস্ট মেয়েটাকে কি সে জিজ্ঞেস করবে লিপস্টিকের দাম কত? রাগ করবে না তো আবার সুন্দরী মেয়েরা সব সময় রেগে থাকে। ব্যতিক্রম অবশ্যি আছে। যেমন পারুল কখনো রাগে না। সে রূপবতী এ কথাটা বোধহয় তার জানা নেই। জানলে সেও সারাক্ষণ রেগে থাকত।

রিসেপসনিস্ট মেয়েটি তীক্ষ্ণ গলায় বলল, এই শুনুন। তাহের তার দিকেই তাকিয়েছিল–সে চমকে উঠল।

আপনি কিছু বলবেন?

জ্বি-না।

কিছু বললেন না, তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? মেয়েদের দিকে এভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যে অভদ্রতা এটা কি আপনার জানা নেই? আজ তো নতুন না, আপনাকে আগেও বলেছি।

তাহের নিজের অজান্তেই বলল, আপনার কি অনেকগুলি সবুজ রঙের শাড়ি?

মেয়েটি হকচকিয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার মুখে কোন জবাব আসছে না। তাহের বলল, সুন্দর করে যে সাজে সে তো অন্যকে দেখাবার জন্যই সাজে। কাজেই মানুষজন যদি তাকে অবাক হয়ে দেখে তাতে রাগ করার কিছু নেই–বরং খুশি হওয়া উচিত।

জ্বরের ঘোরে বোধহয় তাহেরের মাথায় কিছু হয়েছে কিংবা কাল রাতের ভয়াবহ ঘটনার ফলও হতে পারে–কেমন সুন্দর কথার পিঠে কথা বলে যাচ্ছে। মেয়েটিকে কোণঠাসা করে–এক ধরনের আনন্দও সে পাচ্ছে।

রিসেপসনিস্ট মেয়েটি থমথমে গলায় বলল–আপনি কি এই অফিসে কোন কাজে এসেছেন?

জ্বি-না। আমি এখানে কাজ করি। আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই একজন।

কই, আমি তো জানি না। কি কাজ করেন?

আমি দারোয়ান। বড় সাহেবের বাড়ি পাহারা দেই। উত্তরখানে উনার একটা বাড়ি আছে। আমি ঐ বাড়ির পাহারাদার। পাহারাদার শুনেই এমন ছোট চোখে তাকাবার দরকার নেই। ছোটবেলায় বই-এ পড়েননি–পৃথিবীর কোন কাজই ছোট না। আপনার কাজের যে মর্যাদা একজন গোর খোদকের কাজেরও একই মর্যাদা।

প্লীজ, আপনি আমাকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছেন। আর করবেন না।

জ্বি আচ্ছা–আর বিরক্ত করব না। ইচ্ছা থাকলেও করা যাবে না। আমাকে নিউ মার্কেটে বইয়ের দোকানে যেতে হবে–একটা বই কিনতে হবে। শিশুদের নামের উপর একটা বই–যেখানে নাম সব এলফাবেটিকেলী সাজানো থাকে–নামের অর্থ দেয়া থাকে। আমরা স্ত্রী বেবী এক্সপেক্ট করছেন–এখনো দেরি আছে। মেয়েরা বাচ্চার নাম-টাম নিয়ে আগেভাগেই চিন্তা করতে ভালবাসে।

রিসেপসনিস্ট মেয়েটি তীব্র দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তার চোখে সামান্য হলেও ভয়ের ছায়া। ভয়ের এই ছায়াটি কি জন্যে তাহের পরতে পারছে না। তার এলোমেলো কথা বলার জন্যে? না-কি জ্বরে তার চেহারা অন্য রকম হয়ে গেছে সে জন্যে? ভয় পাওয়া মানুষকে আরো ভয় পাইয়ে দিতে ইচ্ছে করে। তাহেরেরও করছে, তবে সে বুঝতে পারছে না–ঠিক কি করলে মেয়েটা আরো ভয় পাবে। তাহের হাই তুলল। সুন্দরী মেয়েদের সামনে কোন পুরুষ কখনো হাই তুলে না। তাহের তুলছে। কারণ মেয়েটিকে এখন আর তার তেমন সুন্দর লাগছে না। তাহের সহজ গলায় বলল–যাই, পরে কথা হবে। দারোয়ানের সঙ্গে অনেক কথা বলায় আপনি যদি মনে করে থাকেন আপনার সম্মানহানি হয়েছে, তাহলে ভুল করবেন–আমি দারোয়ান হলেও শিক্ষিত দারোয়ান। এম. এ. পাশ। জিওগ্রাফী। এম. এ. অনার্স, দুটাতেই থার্ড ক্লাস, এই জন্যে কলেজে চাকরি হল না। প্রাইভেট কলেজেও লেকচারার-এর চাকরির জন্য অনার্স এম. এ.-এর একটাতে মিনিমাম সেকেন্ড ক্লাস লাগে। যাই, কেমন?

মেয়েটি শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

তাহেরের মাথা ঘুরছে। বুক জ্বালা করছে। মুখে টুক টুক ঝঝ। এসিডিটি নিশ্চয়ই। কিছু খাওয়া দরকার। খিদে হচ্ছে না–খাবে কি? খিদে হলে অফিস কাটিনে ঢুকে একটা সিঙারা খেয়ে নিত। নিউ মার্কেটে বই কেনার পর কয়েকটা চক্কর লাগালে খিদে হতে পারে।

 

বইয়ের দাম ত্রিশ টাকা। দোকানদার পাঁচ টাকা কমিশন দিল। না চাইতেই দিল। না চাইলে এই যুগে কেউ কমিশন দেয় না। বইয়ের দোকানদার দিয়েছে। তাহের তার ভদ্রতায় মুগ্ধ হয়ে গেল। সে আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল, ভাই, মেনি মেনি থ্যাংকস। আমি দরিদ্র মানুষ তো–পাঁচটা টাকা আমার কাছে পাঁচশ টাকার মত।

আপনার কি শরীর খারাপ?

জ্বী, শরীর খুবই খারাপ। বলতে গেলে সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজেছি। রাতেই জ্বর এসেছে।

বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে শুয়ে থাকেন।

তাই করব। এক্ষুণি রওনা দেব–বাড়ি অবশ্যি শহরের বাইরে। যেতে যেতে দুঘণ্টা লাগবে। ভাই যাই। এগেইন মেনি মেনি থ্যাংকস।

তাহের সরাসরি বাড়ির দিকে রওনা হল না। নিউমার্কেটে দুটা চক্কর দিল। আরো কি যেন তার কেনার কথা। মনে পড়ছে না। মনে করার জন্যে চক্কর দেয়া। পারুল বই ছাড়াও আরো কি যেন কিনতে বলেছে। সেটা কি? লিপস্টিক? না, লিপস্টিক না। লিপস্টিকের কথা কেউ তাকে বলেনি— এটা তার নিজের মাথায় এসেছে। আচ্ছা, লিপস্টিকের খোঁজটা নিয়ে গেলে হয় না? তাহের জমকাল করে সাজানো একটা দোকানে ঢুকে পড়ল।

ভাই, আপনাদের কি লিপস্টিক আছে?

আছে। কোন কোম্পানীর, কি রঙ?

যে কোন কোম্পানীর হলেই হবে।

রঙটা কি?

সবুজ রঙ।

সবুজ রঙ?

জ্বি সবুজ। গাঢ় সবুজ–কলাপাতার মত সবুজ।

সবুজ রঙের লিপস্টিক হয় না।

লাল ছাড়া অন্য কোন রঙের হয় না?

হবে না কেন? হয়। মেরুন আছে, মেটে রঙ আছে, হালকা ব্লু আছে, কালো আছে–সোনালী আছে।

সোনালা রঙের লিপস্টিক আছে?

জ্বি আছে। দেখবেন?

একটু দেখান না—প্লীজ।

কিনবেন?।

দামে পুষলে কিনব। পঞ্চাশ-পাঁচপঞ্চাশ টাকার ভেতর যদি হয়।

সোনালী রঙের লিপস্টিকের দাম তেত্রিশ শ টাকা।

কত বললেন?

তেত্রিশ শ টাকা। তিন হাজার তিন শ–সঙ্গে একটা লাইনার আছে। লাইনারটার দাম আলাদা।

লাইনার কি?

পেন্সিলের মত একটা জিনিস। লিপস্টিক দেয়ার পরে লাইনার দিয়ে বর্ডারের মত দিতে হয়। তাহলে লিপস্টিক ছড়িয়ে যায় না।

লাইনারটার দাম কত?

আটশ। তবে লিপস্টিক আর লাইনার একসঙ্গে কিনলে চার হাজারে দেয়া যাবে।

তাহের হতভম্ব গলায় বলল, সত্যি বলছেন না ঠাট্টা করছেন?

দোকানী সহজ গলায় বলল–ঠাট্টার কোন ব্যাপার না। খদ্দেরের সঙ্গে ঠাট্টা করা যায় না।

আমি আপনার খদ্দের না। আমি কোনদিন এই জিনিশ কিনতে পারব না। ভাই, যদি কিছু মনে না করেন–সোনালী রঙের লিপস্টিকটা আমি দূর থেকে একটু দেখব। হাতও দেব না।

হাত দিন। হাত দিয়ে দেখতে অসুবিধা কি? এটা তো আর আগুন না যে হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে।

তাহের গভীর আগ্রহে সোনালী রঙের লিপস্টিক হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছে। সামান্য এতটুক একটা জিনিশ, ঠোঁটে লাগানো হয়–এর দাম তেত্রিশ শ টাকা।

ভাই, এই লিপস্টিকের বিশেষত্ব কি?

বিশেষত্ব কিছু না। নামী কোম্পানী র‍্যাভলন। নন স্টিক। ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে চা খেলে চায়ের কাপে লিপস্টিকের দাগ লাগবে না।

চায়ের কাপে লিপস্টিকের দাগ পড়ে যায় এই তথ্যই তাহেরের জানা ছিল না। এই পৃথিবীতে কত কিছুই না আছে জানার।

কেউ কি এই লিপস্টিক কেন?

কেন কিনবে না? হরদম কিনছে। না কিনলে আমরা বাঁচব কি ভাবে?

ভাই, মেনি মেনি থ্যাংকস।

দুপুর হয়ে গেছে। মাথায় উপরে গনগনে সূর্য। এই রোদে বাসে করে রওনা হতে ইচ্ছা করছে না। পার্কের কোন বেঞ্চিতে ছায়ার মধ্যে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। আসলে বাড়ি ফিরতেই ইচ্ছা করছে না। তারপরেও ফিরতে হবে–পারুল বেচারী একা আছে। না জানি কত ভয় পাচ্ছে। কি জানি সে কিনতে বলেছিল মনে পড়ছে না। জরুরী কথা মনে পড়ে না। শুধু অদরকারী কথা মনে পড়ে। তাহের হেঁটে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা হল। ঘুমে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে–কে জানে। হাঁটতে হাঁটতে ঘুমিয়ে পড়বে কি-না।

 

তাহের বিকেল পর্যন্ত ঘুমালো। পাকের লম্বা বেঞ্চে শুয়ে দীর্ঘ সুম। আরামের ঘুম। অনেকদিন এত আরাম করে সে ঘুমায়নি।

তাহের ঘুম ভাঙার পর অবাক হয়ে দেখল তাকে ঘিরে ছোটখাট একটা ভিড়। একজন পানওয়ালা, এই প্রচণ্ড গরমে সুয়েটার পরা এক বুড়ো লোক, মাস্তান টাইপ দুটা ছেলে। বুড়ো ভদ্রলোক বললেন, কি হয়েছে?

তাহের বেঞ্চিতে উঠে বসল। সে আরাম করে ঘুমুচ্ছিল। এর বেশি তো কিছু হয়নি। গায়ে জ্বর ছিল–টানা ঘুম দেয়ায় ঘরটা সেরে শেছে বলে মনে হয়। তাকে ঘিরে এই জটিলার কারণটা কি?

বুড়ো ভদ্রলোক ঝুঁকে এসে বললেন, ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছিলেন। তাহের বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, স্বপ্ন দেখছিলাম।

সে উঠে দাঁড়াল। দ্রুত সরে পড়া উচিত। বুড়ো ভদ্রলোক বললেন, বই ফেলে যাচ্ছেন তো।

তাহের বইটা হাতে নিল। বইটা সে কিছুক্ষণ আগে কিনেছে এটা মনে করতে তার কিছুটা সময় নিল। আশ্চর্য, সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

মস্তান ধরনের ছেলে দুটির একটি বলল, ব্রাদার, শরীর ঠিক আছে তো?

জ্বি, ঠিক আছে।

পার্কে এইভাবে ঘুমাবেন না। পকেট থেকে মানিব্যাগ হাপিস হয়ে যাবে। মানিব্যাগ পকেটে আছে?

জি, আছে।

তাহের হাঁটা ধরেছে। একবার পেছন ফিরল–লোকগুলো এখনো তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে কৌতূহল। ঘুমের মধ্যে সে এমন কি করেছে যে লোকগুলো এখনো তাকিয়ে আছে? সাধারণত ভয়ংকর কোন স্বপ্ন দেখলেই মানুষ চেঁচিয়ে উঠে। সে কোন দুঃস্বপ্ন দেখেনি। শান্তির একটা ঘুম ঘুমিয়েছে।

এখন কটা বেজেছে? তাহেরের হাতে ঘড়ি নেই। সময়টা জানা থাকলে ভাল হত। ফিরতে ইচ্ছা করছে না। রাত হোক, সে রাতের অন্ধকারে ফিরবে। এমন ভাবে কবে যেন কেউ তাকে না দেখে। এতক্ষণ কি করবে? হাঁটবে রাস্তায় রাস্তায়? মন্দ কি?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *