1 of 3

০৬।১০ ষষ্ঠ কাণ্ড : দশম অনুবাক

দশম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : স্বস্ত্যয়নম
[ঋষি : শন্তাতি দেবতা : যম, ভব ইত্যাদি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

যমো মৃত্যুরঘমারো নিঋথো বঃ শর্বোহস্তা নীলশিখণ্ডঃ। দেবজনাঃ সেনয়োত্তস্থিংসস্তে অস্মাকং পরি বৃন্তু বীরান্ ॥১ মনসা হোমৈরসা ঘৃতেন শৰ্বায়াস্ত্র উত রাজ্ঞে ভবায়। নমস্যেভ্যো নম এভ্যঃ কৃণোমন্যত্ৰাম্মদঘবিষা নয়ন্তু ॥ ২॥– ত্রায়ধ্বং নো অঘবিষাভ্যো বধা বিশ্বে দেবা মরুতে বিশ্ববেদসঃ। অগ্নীষোমা বরুণঃ পূতদক্ষা বাতপর্জন্যয়োঃ সুমতৌ স্যাম ৷৩৷৷

বঙ্গানুবাদ— পাপ অনুসারে প্রাণীবর্গকে দণ্ড প্রদানশালী যে যমদেব, মারণশালিনী মৃত্যু, অঘমার, পিঙ্গল বর্ণশালিনী শর্ব, ক্ষেপ্তা বা ক্ষেপণশীল ও নীলশিখণ্ড দেবতা পাপীগণকে বিনষ্ট করণের নিমিত্ত বিচরণ করছেন; তারা যেন আমাদের পুত্র পৌত্রাদিকে পীড়িত না করেন। ১।

 সঙ্কল্পের দ্বারা ঘৃত ইত্যাদি যুক্ত যজ্ঞের দ্বারা আমি শর্বদেব, অস্ত্র ও তাদের অধিস্বামী রুদ্রদেব এবং পূর্ব মন্ত্রোক্ত নমস্কার যোগ্য দেবতাগণকে নমস্কার করছি। তারা প্রসন্ন হয়ে যে কৃত্যাসমূহে পাপই মারক, তাঁদের দূরে কোথাও অপসারিত করে দিন। ২।

 হে মরুৎ-বর্গ ও বিশ্বদেবগণ! তোমরা পাপযুক্ত কৃত্যাসমূহ ও তাদের মারক সাধনসমূহ হতে আমাদের রক্ষা করো। বরুণ, মিত্র, অগ্নি ও সোম দেবতা আমাদের রক্ষা করুন, বায়ু ও পর্জন্য দেবতা আমাদের উপর অনুগ্রহ বুদ্ধি রক্ষা করুন ॥ ৩

.

দ্বিতীয় সূক্ত : সাংমনস্যম

 [ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা দেবতা : সরস্বতী ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী]

সং বো মনাংসি সং ব্ৰতা সমাকৃতীনর্মমসি। অমী যে বিব্রতা স্থন তা বঃ সং নময়ামসি ॥১॥ অহং গৃভণামি মনসা মনাংসি মম চিত্তম চিত্তেভিরেত। মম বশেমু হৃদয়ানি বঃ কৃপোমি মম মনুষ্মান এত ॥ ২॥ ওতে মে দ্যাপৃথিবী ও দেবী সরস্বতী। ওতৌ মে ইন্দ্রশ্যাগ্নিশ্চধ্যাস্মেদং সরস্বতী ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে পরস্পর বিরোধী বিচারশালী মনুষ্যগণ! আমি তোমাদের মনগুলিকে বিরুদ্ধতাহীন করছি। তোমাদের বিচারসমূহকে বিরোধাভাব হতে দূর করে দিচ্ছি। তোমাদের বিরুদ্ধ কর্ম ও সঙ্কল্পসমূহকে দূর করে দিয়ে তোমাদের পরস্পর অনুকূল করে দিচ্ছি ৷ ১।

হে বিরুদ্ধ মনশালীগণ! তোমাদের মনগুলিকে আমি আপন মনের অনুকূল করে দিচ্ছি। তোমরা অনুকূল চিত্তসমূহের সাথে এই স্থানে আগত হও। আমার কার্যসমূহে মন সংযুক্ত করে তোমরা আমার পথে গমন করো। ২।

দ্যাবা-পৃথিবী আমার অভিমুখে স্থিত হয়ে সম্বন্ধিত হয়েছেন। তার মধ্যে সরস্বতীও বর্তমান রয়েছেন। আমাদের অভীপ্সিত ফলের নিমিত্ত ইন্দ্র ও অগ্নিও কার্যরত হয়েছেন। আমরা তাদের কৃপায় সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হবো৷ ৩৷৷

.

তৃতীয় সূক্ত : কুষ্ঠৌষধি

[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

 অশ্বপো দেবসদনস্তৃতীয়স্যামিতো দিবি। তত্রামৃতস্য চক্ষণং দেবাঃ কুষ্ঠমবম্বত ॥১॥ হিরণ্যয়ী নৌরচরদ্ধিরণ্যবন্ধনা দিবি। তত্রামৃতস্য পুষ্পং দেবাঃ কুষ্ঠামবন্বত ॥ ২॥ গর্ভো অস্যোষধীনাং গর্ভো হিমবতামুত। গর্ভো বিশ্বস্য ভূতস্যেমং মে অগদং কৃধি ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –যেস্থান হতে তৃতীয় দ্যুলোক দেবতাগণের অবস্থানের স্থলরূপ অশ্বত্থ হয়ে থাকে, সেই স্থানে দেবগণ অমৃত বর্ণনশালী কূট (বা কুষ্ঠ) সম্পর্কে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ১।

স্বর্গলোকে সুবৰ্ণ-বন্ধনশালিনী নৌকা চালিত হয়ে থাকে, তার দ্বারা অমৃতের পুষ্প কূটকে সেই দেবতাগণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২

হে অগ্নিদেব! যে ঔষধিসমূহে পাক (অর্থাৎ সকল বীরুধ) আছে; সেই সকলের মধ্যে তুমি গর্ভরূপে স্থিত হয়ে আছ; তুমি হিমবান পর্বতে ও শীতল ঔষধিসমূহে গর্ভ রূপে নিবাস করে থাকো। তুমি আমার এই পুরুষকে (রোগীকে) রোগ হতে মুক্ত করে দাও। ৩৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : চিকিৎসা

 [ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা দেবতা : বনস্পতি, সো ছন্দ : অনুষ্টুপ, গায়ত্রী]

যা ওষধয়ঃ সোমরাজ্ঞীবীঃ শতবিচক্ষণাঃ। বৃহস্পতিপ্রসূতাস্তা নো মুঞ্চংহসঃ ১. মুঞ্চন্তু মা শপথ্যাথো বরুণ্যাত। অথো যমস্য পড়ীশাদ বিশ্বম্মাদ দেবকিন্বিষাৎ। ২ যচ্চক্ষুষা মনসা যচ্চ বাচোপারিম জাগ্রতো যৎ স্বপন্তঃ। সোমস্তানি স্বধয়া নঃ পুনাতু। ৩

বঙ্গানুবাদ –যে ঔষধি অনেক রকমের হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে মুখ্য হলেন সোম, যে রস বীর্যের বিপাকে সম্পন্ন হয়ে থাকে; বৃহস্পতির দ্বারা যা অনেক রোগে প্রযুক্ত হয়ে থাকে, সেই ঔষধি অনেক রকম রোগে প্রযুক্ত হয়ে থাকে, সেই ঔষধিসমূহ আমাদের রোগের মূলীভূত পাপ হতে মুক্ত করুক ॥ ১

জল-রূপ ঔষধি আমাকে (ব্রাহ্মণাক্রোশজনিত) শাপ হতে মুক্ত করুক। বরুণ-সম্বন্ধি মিথ্যা ভাষণের পাপ হতে, যম-সম্বন্ধী পাপ-বন্ধন হতে এবং অন্য সকল দেব-সম্বন্ধী পাপসমূহ হতে (এই ঔষধিসমূহ) আমাদের রক্ষণ-শালিনী হোন। ২।

আমরা জাগ্রত-অবস্থায় ইন্দ্রিয় ইত্যাদির ব্যবহারের দ্বারা বা মনের সঙ্কল্প বিকল্পের দ্বারা যে পাপ করেছি, বাক্যে ও কর্মে যে পাপ সঙ্ঘটিত করেছি, অথবা কেবল স্বপ্নাবস্থায় মনের দ্বারাই যে পাপকর্ম করেছি, আমাদের সেই পাপসমূহ হতে সোম দেবতা পিতৃগণের নিমিত্ত নিবেদিত হবির দ্বারা আমাদের পবিত্র করুন ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যমে মৃত্যুঃ ইতি আদ্যস্য তৃচস্য বাস্তোম্পত্যগণে পাঠাৎ বাস্তোম্পত্যাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ বাস্তোম্পত্যগণ প্রযুক্তো বিনিয়োগোনুসন্ধেয়ঃ। তৎ উক্তং নক্ষত্রকল্পে।.. অত্র সং বো মনাংসি ইতি তৃচেন সাম্মনস্য-কর্মণি গ্রামমধ্যে সম্পাতিতোদকুম্ভনিনয়নং তদ্বৎ সুরাকুম্ভনিনয়নং ত্রিবর্ষবৎসিকায়া গোঃ পিশিতানাং প্রাশনং সম্পাতিতোন্নপ্রাশনং সম্পাতিতসুরায়াঃ পায়নং তথাবিধ প্রসোদকপায়নং চ কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।..অশ্বত্থে দেবসদনঃ ইতি তৃচেন রাজযক্ষ্মকুষ্ঠাদিরোগ শাস্ত্যর্থং কুষ্ঠাখৌষধর্মিশ্রিতং নবনীতং অভিমন্ত্র প্রতিবোমং ব্যাধিতশরীরং প্রলিস্পেৎ…..যা ওষধয়ঃ ইতি তৃচেন ব্রাহ্মণাক্রোশে জলোদরে চ শান্তুর্থং সোমলং অগ্নৌ প্রক্ষিপ্য ব্যাধিতং ধূপয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন তৃচেন মমিশ্রং দধি অভিমন্যু পায়য়েৎ। তথা ক্ষীরং তক্রেন সম্মি অভিমন্ত্র পায়য়েৎ। তথা দধি মধু ক্ষীরং উদাশ্বতং চ একীকৃত্য পায়য়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা, ১০অ, ১-৪)।

টীকা –উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি বাস্তোস্পতি নামক মহাশান্তি কর্মে বিনিযুক্ত হয়। দ্বিতীয় সূক্তটি সাম্মনস্য কর্মে; তৃতীয় সূক্তটি রাজ্যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ইত্যাদি রোগশান্তির নিমিত্ত এবং চতুর্থ সূক্তটির দ্বারা ব্রাহ্মণাক্রোশে ও জলোদর রোগের শান্তিকর্মে বিনিয়োগ হয়। সূক্তস্য বিনিয়োগঃ অংশে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় এগুলির যথাযথ বিনিয়োগ কর্তব্য। এই কর্মে অভিজ্ঞ কর্মকারীর সাহায্য অনিবার্য ॥ (৬কা, ১০অ. ১-৪)।

.

পঞ্চম সূক্ত : অভিভূর্বীয়ঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : দেবগণ, মিত্র বরুণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী]

অভিভূর্যজ্ঞে অভিভূগ্নিরভিভূঃ সোমো অভিভূরিন্দ্রঃ। অভ্যহং বিশ্বাঃ পৃতনা যথাসান্যেবা বিধেমাগ্নিহোত্রা ইদং হবিঃ ॥১॥ সুধাস্তু মিত্রাবরুণা-বিপশ্চিতা প্রজাবৎ ক্ষত্ৰং মধুনেহ পিন্বত। বাধেথাং দূরং নিঋতিং পরাচৈঃ কৃতং চিদেনঃ প্র মুমুক্তমম্মৎ ॥ ২॥ ইমং বীরমনু হর্ষধ্বমুগ্রমিং সখায়ো অনু সং রভধ্বম্। গ্রামজিতং গোজিতং বজ্ৰবাহুং জয়ন্তমত্ম প্রমৃণমোজস্য ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমরা বিজয়াভিলাষী। আমাদের দ্বারা ক্রিয়মান যজ্ঞ শত্রুগণকে (অধীন) করুন। যজ্ঞ সম্পাদক অগ্নিদেব ও সোমদেব শত্রুবর্গকে তিরস্কৃত করুন। আমি বিজয়াকাঙ্ক্ষী সকল শত্রুসেনাকে যাতে জয় করতে পারি, সেই নিমিত্ত এই হব্য প্রদান করছি। ১

হে বিপশ্চিতা অর্থাৎ মেধাবী মিত্র ও বরুণদেব! এই হবিঃ তোমাদের তৃপ্ত করুক। তোমরা দুজনে প্রজাসমূহের সাথে সম্পন্ন শক্তির দ্বারা এই রাজাকে পূর্ণ করে দাও। পাপের কারণরূপা নির্ঋতিকে আমাদের সম্মুখ হতে দূর করো। শত্রুদের পরাজয় রূপ যে পাপ আছে, তা যেন আমাদের না স্পর্শ করে। ২।

 হে সৈনিকগণ। এই পরাক্রমী রাজার পশ্চাতে তোমরাও বীরত্বে পূর্ণ হয়ে ওঠো। হে মরুৎ-বর্গ! এই ঐশ্বর্যবন্ত, শত্রু-বিজেতা, শত্রুগণের গো-ইত্যাদি ধনকে জয়-করণশালী, বাণ-নিক্ষেপণে অভ্যস্ত এই ইন্দ্র সদৃশ রাজার অনুগত হয়ে সংগ্রামের নিমিত্ত প্রস্তুত হও ৩

.

ষষ্ঠ সূক্ত : অজরং ক্ষত্রম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি]

ইন্দ্রো জয়াতি ন পরা জয়া অধিরাজো রাজস রাজয়াতৈ। চকৃত্য ঈড্যো বন্দ্যশ্যোপসদ্যো নমস্যো ভবেহ ৷ ১৷ ত্বামিত্ৰাধিরাজঃ এবং ভূরভিভূতিৰ্জনানা৷ ত্বং দৈবীবিশ ইমা বি রাজায়ুষ্মৎ ক্ষত্রমজরং তে অস্তু ॥ ২॥ প্রাচ্যাদিশমিল্লাসি রাজোতোদীচ্যা দিশো বহছহোসি। যত্র যন্তি স্রোত্যাস্তজ্জিতং তে দক্ষিণততা বৃষভ এষি হব্যঃ ॥ ৩ ৷৷

বঙ্গানুবাদ –এই সংগ্রামে আগত ইন্দ্রের সমান পরাক্রমী রাজা, এই রাজার সহায়তার নিমিত্ত (ইন্দ্রের) জয় হোক। (অর্থাৎ ইন্দ্রের ন্যায় এই রাজা অপরাজেয় হোন)। হে ইন্দ্রদেব! আমরা বীরকর্মশালী স্তুতির পাত্র, অতএব তুমি এই সংগ্রামে আমাদের দ্বারা সেবনীয় (বা পূজনীয়) হও ॥ ১।

হে ইন্দ্রের সমান সম্পন্ন রাজ! তুমি অন্য রাজগণ অপেক্ষা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে অধিক অনুশালী হও। হে ইন্দ্র! তুমি আপন মহিমায় সকল শত্রুকে তিরস্কৃত করতে সমর্থ হও। হে রাজন! তুমি আপন প্রজাগণের অধিপতি হয়ে চিরকাল পর্যন্ত জীবিত থাকো। ২।

হে ইন্দ্র! তুমি পূর্ব উত্তর ইত্যাদি সকলদিকে অধিস্বামী হও। তুমি আমাদের শত্রুবর্গকে বিনাশকারী হও। সম্পূর্ণ পৃথিবী তোমার অধিকারভুক্ত হোক। তুমি অভীষ্টবর্ষক, এই নিমিত্ত এই সংগ্রামে জয়লাভের পক্ষে আমাদের সহায়ক হয়ে ওঠো ॥ ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অভিভুঃ (৬।৯৭) ইন্দ্রো জয়াতি (৬।৯৮) অভিত্বে (৬।৯৯) ইতি তৃচৈঃ সংগ্রামজয়কর্মণি আজ্যহোমং সঞ্জুহোমং ধনুরিঋেগ্নেী ধনুঃসমিদাধানং শরেখেগ্নৌ শরসমিদাধানং সম্পাতিতাভিমন্ত্রিত ধনুঃ প্রদানং বা কুর্যাৎ…ইত্যাদি। (৬কা, ১০অ. ৫-৬)৷

টীকা— উপযুক্ত পঞ্চম ও ষষ্ঠ সূক্ত এবং পরবর্তী সপ্তম সূক্ত সংগ্রামজয়-কর্মে সূত্রানুসারে বিনিয়োগ করণীয়। পঞ্চম সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রের ব্যাখ্যায় সায়ণাচার্যের উক্তি–যদ্বা ইন্দ্রঃ সংগ্ৰামাধিদেবতা স এবাত্র স্থূয়তে–অর্থাৎ এখানে রাজন্ অর্থে সংগ্রামের অধিদেবতা ইন্দ্রের স্তুতি করা হচ্ছে।(৬কা, ১০অ. ৫-৬)।

.

সপ্তম সূক্ত : সংগ্রামজয়ঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ইন্দ্র, সো সবিতা ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]

অভি ত্বে বরিমতঃ পুরা ত্বাংহূরণাঙ্কুবে। হুয়ামিগ্রং চেত্তারং পুরুণামানমেকজম্ ॥ ১। যো অদ্য সেন্যো বধো জিঘাংস ন উদীরতে। ইন্দ্রস্য তত্র বাহু সমন্তং পরি দঃ ॥ ২॥ পরি দন্ন ইন্দ্রস্য বাহু সমন্তং ত্রাতুস্ৰায়তাং নঃ। দেব সবিতঃ সোম রাজসুমনসং মা কৃণু স্বস্তয়ে ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— হে ইন্দ্রদেব! বিস্তৃত শরীরশালী হওয়ার কারণে এবং একবারই সকল ধনের দ্বারা পূর্ণ হওয়ার কারণে, যুদ্ধে পরাজয়ের পূর্বেই তোমাকে আহ্বান করছি। তুমি অত্যন্ত বলী, বিজয়-সাধনের উপায়-সমূহের জ্ঞাতা, বহু নামশালী এবং শূরবীর। ১।

শত্রুবর্গের সেনাসমূহের শস্ত্র আমাদের বিনাশের জন্য প্রস্তুত। অতএব আমরা আপন চারিদিকে ইন্দ্রের বাহুসমূহকে রক্ষার্থে ধারণ করছি। ২।

সেই ইন্দ্র আমাদের রক্ষা করুন, যাঁর বাহুসমূহকে আমরা আপন চারিদিকে ধারণ করছি। হে সবিতাদেব! হে সোম! তোমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ মনঃসম্পন্ন করে দাও, যার দ্বারা আমরা জয় লাভ করতে সক্ষম হই ॥ ৩॥

.

অষ্টম সূক্ত : বিষদূষণম

 [ঋষি : গরুত্মান দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

দেবা অদ্ধঃ সূর্যো অদাদ দৌরদাৎ পৃথিব্যদাৎ। তিঃ সরস্বতীরদুঃ সচিত্তা বিষদূষণম্ ॥১॥.. যদ বো দেবা উপজীকা আসিঞ্চন ধন্বন্দকম্। তেন দেবপ্রসূতেনেদং দূষয়তা বিষম ॥ ২॥ অসুরাণাং দুহিতাসি সা দেবানামসি স্বসা। দিবপৃথিব্যাঃ সস্তৃতা সা চকঞ্জারসং বিষম৷ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –সকলের প্রেরক সূর্যদেব আমাদের স্থাবর-জঙ্গমের বিষ দুরীকরণশালী পদার্থ দান করুন। ইন্দ্র ইত্যাদি সকল দেবতা, আকাশ ও পৃথিবী আমাদের বিষ বিনাশনশালী, পদার্থ দান করুন; ইড়া, সরস্বতী ও ভারতী নাম্নী দেবীগণও আমাদের এমনই (বিষ-বিনাশক) ঔষধিসমূহ প্রদান করুন। ১।

হে দেববর্গ! তোমাদের বল্মীক মৃত্তিকার নির্মাণকারিণী উপজীকা (নামক প্রাণীগণ) জলহীন শুষ্ক স্থানে জল সেচন করে থাকে। সেই জলের দ্বারা এই বিষকে দূরীভূত করো ৷ ২৷৷

হে বল্মীকের মৃত্তিকা! তুমি দেব-দ্বেষী অসুরবর্গের কন্যা এবং দেবগণেরও ভগিনী। অন্তরিক্ষ ও পৃথিবী হতে উৎপন্ন হয়ে তুমি স্থাবর ও জঙ্গম হতে উদ্ভূত জীবসমূহের বিষকে নিবীর্য করে দাও, ॥ ৩ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অভি ত্বে ইতি তৃচস্য সংগ্রামজয়াদিকর্মসু পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ। সূত্রমপি তত্ৰৌবদাহৃতং। তথা অগ্নিষ্টোমে প্রাতঃসবনে অনেন ব্রহ্মা স্তোত্রং অনুমন্ত্রয়েত। ….দেবা অদুঃ ইতি তৃচেন স্থাবরজঙ্গমবিষভৈষজ্যার্থং বল্মীকমৃদঃ সম্পাতিতাভিমন্ত্রিতায়া বন্ধনং উদকেন সহ পায়নং আচমনং প্রলেপনং বা কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা, ১০অ. ৭-৮)।

টীকা –উপযুক্ত সপ্তম সূক্তের মন্ত্ৰত্রয় সংগ্রামজয় কর্মে বিনিযুক্ত হয়। পূর্ব সূক্তে তার সূত্রেরও উল্লেখ আছে। এ ছাড়া এই মন্ত্ৰত্ৰয় অগ্নিষ্টোম যাগে প্রাতঃসবনে অনুমন্ত্রিত হয়ে থাকে। অষ্টম সূক্তের মন্ত্র তিনটির দ্বারা স্থাবর-জঙ্গমের বিষ-ভৈষজ্য কর্মে বল্মীক-মৃত্তিকা অভিমন্ত্রিত পূর্বক জলের সাথে আচমন (পান) বা প্রলেপন করণীয়।…ইত্যাদি।(৬কা, ১০অ.৭-৮)।

.

নবম সূক্ত : বাজীকরণম

[ঋষি : অথর্বাঙ্গিরা দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ]

আ বৃষায়স্ব সিহি বর্ধস্ব প্ৰথয়স্ব চ। যথাঙ্গং বর্ধতাং শেপনে যোষিতমিজহি।১। যেন কৃশং বাজয়ন্তি যেন হিম্ব্যাতুর। তেনাস্য ব্ৰহ্মণপতে ধনুরিবা তানয়া পসঃ।২। আহং তনোমি তে পসো অধি জ্যামিব ধম্বনি। ক্রমস্পর্শ ইব রোহিতমনবগ্নায় সদা ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে পুরুষ! তুমি সেচন-সমর্থ বৃষভের ন্যায় সমান কর্মকারী হও। তুমি দৃঢ় প্রাণযুক্ত ও বিস্তীর্ণ অঙ্গশালী হও। তোমার প্রজনন অঙ্গ পুষ্ট হোক, এবং তোমাতে উপযুক্ত পত্নীর প্রাপ্তি হোক, (অর্থাৎ তুমি তোমার বীর্যকে আপন গর্ভে ধারণ-ক্ষম পত্নীকে লাভ করো ॥১॥

যে জীবন রসের সাথে যুক্ত পুরুষকে বীর্যশালী বলা হয়, সেই রসের দ্বারা রোগার্ত পুরুষকে পোষণ করা হয়ে থাকে। হে ব্ৰহ্মণস্পতি! সেই রসের দ্বারাই এই পুরুষের (প্রজনন) অঙ্গকে পুষ্ট ও সামর্থযুক্ত করো। ২।

হে বীর্যের কামনাশালী পুরুষ! আমি তোমাকে (অর্থাৎ তোমার পুং ৯ জননিন্দ্রিয়কে) মন্ত্র-শক্তির দ্বারা ধনুতে সামান্য জ্যা-বিস্তারের ন্যায় পুষ্ট (বা বিস্তার) করছি। ৩।

.

দশম সূক্ত : অভিসাংমনস্যম

[ঋষি জমদগ্নি (অভিসংমনস্কাম) দেবতা : অশ্বিনদ্বয় ছন্দ : অনুষ্টুপ ]

যথায়ং বাহো অশ্বিনা সমৈতি সং চ বৰ্ততে। এবা মামভি তে মনঃ সমৈতু সং চ বর্তম। ১। আহং খিদামি তে মনো রাজাশ্বঃ পৃষ্ট্যামিব। রেম্মচ্ছিন্নং যথা তৃণং ময়ি তে বেষ্টতাং মনঃ ॥ ২॥ আঞ্জস্য মদুঘস্য কুণ্ঠস্য নলদস্য চ। তুরো ভগস্য হস্তাভ্যামনুবোধনমুত্তরে ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে অশ্বিদ্বয়! যেমন শিক্ষণপ্রাপ্ত অশ্ব আপন চালকের ইচ্ছানুসারে চালিত হয় এবং তার অনুগত হয়ে থাকে, তেমনই আমার স্ত্রীর মনকে আমার দিকে আকৃষ্ট হোক এবং আমারই অধীন থাকুক ॥১॥

 হে নারী! আমি তোমার মনকে আমার দিকে আকর্ষিত করছি। যেমন অশ্ব-স্বামী খুঁটি হতে বন্ধন-রশ্মি উন্মুক্ত করে অশ্বকে আপন দিকে আকর্ষণ করে, যেমন বায়ুর দ্বারা উৎপাটিত শুষ্ক খড়কুটা বায়ুতে আবর্তিত হতে থাকে, তেমনই তোমার মন আমাতেই বিরাজমান থাকুক। ২।

ত্রিকুট পর্বতে উৎপন্ন নীলাঞ্জন, মধূক, কূট ও উশীনর ইত্যাদির (অঞ্জন-সাধন দ্রব্যের) দ্বারা, হে নারী! আমি ভগদেবের হস্তের দ্বারা তোমার অঙ্গ মর্দন করছি ৷৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— আ বৃষায়স্ব ইতি তৃচেন বাজীকরণকামঃ একশাখার্কমণিং সম্পত্য অভিমন্যু অকসূত্ৰেণ বধীয়াৎ। তথা কৃষ্ণমৃগচর্মানং সম্পত্য অভিমন্যু কৃষ্ণমৃগবালেন বর্ধীয়াৎ। সূত্রিতং হি।….যথায়ং বাহ ইতি তৃচেন স্ত্রীবশীকরণকর্মণি বৃক্ষণশরখণ্ডতগরাঞ্জনকুষ্ঠাবাতসমতৃণাদিদ্রব্যাণি পেষয়িত্ব আজ্যেন আলোড স্ত্রিয়া অঙ্গং অনুলিম্পেৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা, ১০অ. ৯-১০সূ)। টীকা –উপযুক্ত নবম সূক্তের দ্বারা বাজীকরণ কামনায় একশাখা-অর্কমণি অভিমন্ত্রিত করে অকসূত্রের দ্বারা বন্ধুন করণীয়। তথা কৃষ্ণমৃগের চর্মে অভিমন্ত্রিত করে কৃষ্ণমৃগের রোমের দ্বারা বন্ধন করণীয়। দশম মন্ত্রটি স্ত্রীবশীকরণকর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই কর্মে বৃক্ষত্ব, শরখণ্ড, গরাঞ্জন, কুষ্ঠ ও বায়ুর দ্বারা উৎপাটিত তৃণ ইত্যাদি পেষণ পূর্বক ঘৃতের দ্বারা মিশ্রণ করে স্ত্রী-অঙ্গে প্রলিপ্ত করণীয় ৷৷(৬কা, ১০অ, ৯-১০)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *