ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ভৈষজ্যম
[ঋষি : ভাগলি। দেবতা : সূর্য, গাভী, ভেষজ। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
উৎ সূর্যো দিব এতি পুরো রক্ষাংসি নিজুর্ব। আদিত্যঃ পর্বতেভ্যো বিশ্বদৃষ্টো অদৃষ্টহা, ॥১॥ নি গাবো গোষ্ঠে অসদন নি মৃগাসসা অবিক্ষত। নূর্ময়ো নদীনাং ন্যদৃষ্টা অলিত ॥ ২॥ আয়ুদদং বিপশ্চিতং তাং কথস্য বীরুধ। আভারিষং বিশ্বভেষজীমস্যাদৃষ্টান্ নি শময়ৎ ॥ ৩॥.
বঙ্গানুবাদ— রাত্রির অন্ধকারে যে পিশাচ ইত্যাদি হিংসকগণ উপদ্রব করে থাকে, তাদের বিনাশকরণের নিমিত্ত সূর্যদেব অন্তরিক্ষে উদিত হচ্ছেন। সেই সূর্যকে সকলে সম্মুখে দর্শন করছে, ) কেননা তিনি উদায়চল পর্বতের শিখরের উপর উদয় হচ্ছেন। আমাদের নিকট অদৃশ্যবান। যাতুধানসমূহ (কীটাণু সমুদায়) কেও তিনি হনন করছেন। ১।
সূর্যের উদয়ের পর যে নদীসকল রাত্রিতে দৃশ্যমান হচ্ছিল না, তাদের দর্শন করা যাচ্ছে। সূর্যদেব অন্ধকারাত্মক রাক্ষসগণকে বিনাশ করে ফেলেছেন। এখন আমাদের গাভীগণ নির্ভয় হয়ে গোশালা সমূহে অবস্থান করছে এবং বন্য পশুগুলিও আপন আপন স্থান প্রাপ্ত হয়েছে ॥ ২
শতায়ু-করণশালিনী, রোগ-বিনাশিনী, মহর্ষি কম্বের দ্বারা কথিত এই চিত্তি প্রায়শ্চিত্তি ঔষধি শমীকে আমি রোগ নিবারণার্থে আনয়ন (বা সংগ্রহ) করছি। সেই ঔষধি অদৃষ্ট রাক্ষস ইত্যাদির (কীটাণুগুলির) দ্বারা উৎপন্ন-কৃত এই ব্যাধিত জনের ব্যাধিগুলিকে সম্পূর্ণভাবে বিনাশ করুক ॥ ৩৷৷
.
দ্বিতীয় সূক্ত : সর্বতো রক্ষণম
[ঋষি : বৃহচ্ছুক্র। দেবতা : পৃথিবী, দ্যৌ, শুক্র, সোম, অগ্নি, বায়ু, সবিতা, ভগ, বৈশ্বানর, ত্বষ্টা। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী।]
দৌশ্চম ইদং পৃথিবী চ প্রচেতসৌ শুক্রো বৃহন্ দক্ষিণয়া পিপর্তু। অনুস্বধা চিকিং সোমো অগ্নিবাহূর্নঃ পাতু সবিতা ভগশ্চ ॥১॥ পুনঃ প্রাণঃ পুনরাত্মা ন ঐতু পুনশ্চঃ পুনরসুন ঐতু। বৈশ্বানররা নো অদব্ধস্তনূপা অস্তস্তিষ্ঠাতি দুরিতানি বিশ্বা॥ ২॥ সং বচসা পয়সা সং তনুভিরগন্মহি মনসা সং শিবেন। দৃষ্টা নো অত্র বরীয়ঃ কৃণোত্বনু নো মার্ক্স তন্বো যদ বিরিষ্টম ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –সূর্যদেব দক্ষিণ দিক হতে আমাকে রক্ষা করুন এবং বস্ত্র-ধন ইত্যাদি-যুক্ত দানে। আমাকে পূর্ণ করুন। আকাশ ও পৃথিবীর অভিমানী দেবতা আমাকে অভীপ্সিত ফল প্রদান করুন। পিতৃগণ সম্বন্ধী স্বাধীকারের অভিমানী দেবতা আমাদের নিকট অন্ন ইত্যাদি প্রেরণ করুন। সোম, অগ্নি, বায়ু, সবিতা ও ভগ দেবতা আমাদের কার্যের অনুকূল হোন। ১৷৷
মুখ ও নাসিকায় সঞ্চারণশীল প্রাণরূপ জীবন আমাদের পুনঃপ্রাপ্ত হোক। সকল মনুষ্যের হিতকরী বৈশ্বানর অগ্নিদেব আমাদের পাপকে দূর করে আমাদের শরীর-মধ্যে স্থিত হয়ে রক্ষা করুন। ২।
আমরা সুন্দর অন্তঃকরণের সাথে যুক্ত হবো। দেহের হস্ত পদ ইত্যদি সকল অঙ্গের সাথে যুক্ত হবে। দেহ-কান্তি ও সারভূত রসের সাথে যুক্ত হবে। ত্বষ্টাদেব আমাদের দেহের রোগ-পীড়িত অঙ্গকে রোগরহিত করে আমাদের শরীরকে পুষ্ট করুন। ৩।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –…তত্র উৎ সূর্য ইতি…তৃচেন রক্ষোগ্রহভৈষজ্যার্থং চিত্ত্যাদ্যোষধিসহিতং পূর্ণঘটং অভিমন্ত্র ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ। তথা শমীসহিতোদকেন বা শমীবিম্বসহিতোদকেন বা শীর্ণপর্ণসহিতোদকেন বা অনেন তৃচেন অভিমন্ত্রিতেন ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ। সূত্রিতং হি।..দ্যেশ্চ মে ইতি তৃচেন দুষ্টগণ্ডব্ৰণভৈষজ্যার্থং তৈলং অভিমন্যু তেন ব্রণং অবমৃজ্যাং। তথা এতং তৃচং জপ ৮ ব্রণদেশং হস্তেন অবমৃজ্যাৎ। তথা অনেন তৃচেন স্থূণায়াং ব্রণদেশং ঘর্ষয়েৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি৷ (৬কা, ৬অ. ১-২)।
টীকা— প্রথম সূক্তটির দ্বারা রক্ষোগ্রহভৈষজ্যের জন্য চিত্ত্যাদি ঔষধির সাথে জলপূর্ণ ঘট অভিমন্ত্রিত করে বা শমী ইত্যাদির সাথে জল অভিমন্ত্রিত করে ব্যাধিত জনকে অবসিঞ্চিত করণীয়। দ্বিতীয় সূক্তটির দ্বারা দুষ্ট গণ্ডব্রণ ইত্যাদির ভৈষজ্যার্থে তৈল অভিমন্ত্রিত করে ব্রণদেশে লেপন, ব্রণদেশে হস্তের দ্বারা মৃদু স্পর্শন পূর্বক এই মন্ত্রের জপন, এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে গৃহস্তম্ভে ব্রণদেশ ঘর্ষণ ইত্যাদি করণীয়।… ইত্যাদি। (৬কা, ৬অ. ১-২)।
.
তৃতীয় সূক্ত : অমিত্ৰদম্ভনম
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : অগ্নি ও সোম। ছন্দ : অনুষ্টুপী।]
ইদং তদ যুজ উত্তরমিং শুম্ভাম্যষ্টয়ে। অস্য ক্ষত্ৰং শিয়ং মহীং বৃষ্টিরিব বর্ধয়া তৃণম্ ॥ ১৷ অস্মৈ ক্ষমগ্নীষোমাবম্মৈ ধারয়তং রয়িম। ইমং রাষ্ট্রস্যাভীবর্গে কৃণুতং যুজ উত্তরম্ ॥ ২॥ সবন্ধুশ্চাসবন্ধুশ্চ যো অশ্ম অভিদাসতি। সর্বং তং রন্ধয়াসি মে যজমানায় সুম্বতে ৷৷ ৩৷
বঙ্গানুবাদ –অভিচারদোষ-বিনাশনের ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ কর্মকে অভীপ্সিত ফলের নিমিত্ত সাধিত করছি। আমি ইন্দ্রদেবকে মন্ত্রের দ্বারা সুশোভিত করে প্রসন্ন করছি। বৃষ্টি যেমন ধন-ধান্য ইত্যাদির বৃদ্ধি সাধিত করে, তেমনই, হে ইন্দ্রদেব! অভিচার কর্মের দ্বারা পীড়িত (অথবা অভিচর্যমান) এই পুরুষের ধন, বল, পুত্র, পৌত্র ইত্যাদির বৃদ্ধি করো ॥১।
হে অগ্নি! হে সোম! এই যজমানে বল স্থাপনা পূর্বক একে ধন দান করো। এই যজমানের ফলসিদ্ধি প্রাপ্ত হোক; এই নিমিত্ত আমি এই শ্রেষ্ঠ কর্ম সাধিত করছি ২।
হে ইন্দ্র! যে সগোত্রীয় বা অন্য গোত্রীয় শত্রু আমাদের হিংসা করণের ইচ্ছা করছে, তুমি সেই দুই প্রকার শত্রুকে সোমাভিষব-করণশীল আমার যজমানের বশীভূত করে দাও ৩
.
চতুর্থ সূক্ত : সৌমনস্যম
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : সকল দেবগণ। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]
যে পন্থানো বহবো দেবযানা অন্তরা দ্যাবাপৃথিবী সঞ্চরন্তি। তেষামজ্যানিং যতমমা বহাতি তস্মৈ দেবাঃ পরি ধহে সর্বে ॥১॥ গ্রীষ্মে হেমন্তঃ শিশিরো বসন্তঃ শরদ বর্ষাঃ স্বিতে নো দখাত। আ নো গোষু ভজতা প্রজায়াং নিবাত ই বঃ শরণে স্যাম ॥ ২॥ ইদাবসরায় পরিবৎসরায় সংবৎসরায় কৃণুতা বৃহন্নমঃ। তেষাং বয়ং সুমতৌ যজ্ঞিয়ানামপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম। ৩
বঙ্গানুবাদ –যে পথ সমূহে দেবতাগণই গমন করেন, সেই বিভিন্ন লোক-প্রাপ্তির উপায় স্বরূপ পথ পৃথিবীর মধ্যেই বর্তমান রয়েছে। তার মধ্যে বৃদ্ধি প্রদানশীল যে পথ আছে, এই দেশস্থ সেই পথ, হে দেবতাগণ! তোমরা আমাকে প্রাপ্ত করাও ॥ ১।
গ্রীষ্ম, হেমন্ত, শিশির, বসন্ত শরৎ ও বর্ষার অভিমানী ছয় দেবতা আমাদের সুসাধ্য ধনসমূহে স্থিত করুন। হে ঋতুসমূহ! তোমরা গাভী, পুত্র, পৌত্র ইত্যাদির সাথে আমাদের যুক্ত করো, আমরা আপন গৃহের সমান তোমাদের আশ্রয়ে সমস্ত দুঃখ কারণ রহিত হয়ে থাকবো॥ ২॥
হে মনুষ্যবর্গ! ইদাবৎসর (ত্রিশটি সূর্যোদয়সমন্বিত মাসের একত্ৰীকৃত দ্বাদশ মাস), পরিবৎসর (বৃহস্পতির দ্বাদশ রাশি ভোগ্য কাল রা বৎসর) ও সম্বৎসর (সূর্যের দ্বাদশরাশি অতিক্রমের কাল বা বৎসর)-কে নমস্কারের দ্বারা প্রসন্ন করো। এই যজ্ঞের যোগ্য তাদের কৃপা-বুদ্ধি আমাদের উপর থাকুক এবং তা হতে উৎপন্ন শ্রেষ্ঠ ফলও আমরা প্রাপ্ত হবো॥ ৩॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইদং তৎ যুজে ইতি তৃচেন অভিচারকর্মণি পলাশমধ্যমপর্ণেন ফলীকরনান জুহুয়াৎ। অস্মৈ ক্ষত্রং ইত্যনয়া পৌর্ণমাসযাগে অগ্নীষোমীয়ং চরুং জুহুয়াৎ। সুত্রিতং হি।…যে পন্থানঃ ইতি তৃচেন দেশান্তরং গচ্ছতঃ পুরুষস্য স্বস্ত্যয়নকামঃ সমিদাজ্যপুরোশাদিত্রয়োদশ দ্রব্যাণি জুহুয়াৎ। তথা অনেন তৃচেন স্বস্ত্যয়নার্থং মৗদনৌ দদ্যাৎ। সূত্রিতং হি।..অভিচারিকে কর্মণি ব্রতবিসর্জনার্থং ইদাবৎসরায় ইত্যানয়া আজ্যং জুহুয়াৎ সমিধশ্চ আদধ্যাৎ। (৬কা, ৬অ. ৩-৪)।
টীকা –তৃতীয় সূক্তের দ্বারা অভিচার কর্মে পলাশমধ্যমপর্ণের দ্বারা হোম করণীয়। ঐ সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্রটির দ্বারা পৌর্ণমাস যাগে চরু নির্বপণীয়। চতুর্থ সুক্তের দ্বারা দেশান্তরগত পুরুষের স্বস্ত্যয়নকামনায় এয়োদশ দ্রব্য সহযোগে হোমকরণ, স্বস্ত্যয়নার্থে মন্থিত অন্ন দান ইত্যাদির বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। অভিচারিক কর্মে ব্রতবিসর্জনের নিমিত্ত ইদাবৎসরের উদ্দেশে এই সূক্তের দ্বারা আজ্য হোম ইত্যাদি করণীয় ॥ (৬কা. ৬অ. ৩-৪)।
.
পঞ্চম সূক্ত : সর্পেভ্যোরক্ষণম্
[ঋষি : শন্তাতি। দেবতা : সর্বদেবগণ, রুদ্র। ছন্দ : পংক্তি, অনুষ্টুপ]
মা নো দেবা অহিবধীৎ সতোকাসহপূরুষা। সংযতং ন বি স্পর ব্যাত্তং ন সং যমন্নমো দেবজনেভ্যঃ ১। নমোহ সিতায় মস্তিরশ্চিরাজয়ে। জায় বভ্রবে নমো নমো দেবজনেভ্যঃ। ২। সং তে হম্মি দতা দতঃ সমু তে হা হন্। সং তে জিয়া জিহ্বাং সম্বাস্নাহ আস্যম। ৩।
বঙ্গানুবাদ –হে বিষ-শমনকর্তা দেববর্গ! সর্প যেন আমাদের, আমাদের পুত্র-পৌত্রদের, ভৃত্য ইত্যাদির সাথে হিংসা করতে না পারে। সর্পগণের মুখ যেন দংশনের নিমিত্ত উন্মুক্ত হতে না পারে এবং তাদের বিশ্লিষ্ট মুখ মন্ত্রশক্তির দ্বারা যেন যথাযথ থাকে। সর্প ইত্যাদির বিষের শমন কর্তা দেবতাগণের উদ্দেশে নমস্কার জ্ঞাপন করি। ১৷
তির্যক দিকে বলসম্পন্ন তিরশ্চিরাজ নামক সর্পশ্রেষ্ঠের উদ্দেশে নমস্কার, অসিত নামক কৃষ্ণবর্ণ সর্পাধিপতির উদ্দেশে নমস্কার, ববর্ণের স্বজ নামক সর্প সমূহের উদ্দেশে নমস্কার এবং তাদের বশে রক্ষণশালী, দেবতাগণের উদ্দেশেও নমস্কার। ২।
হে স! তোর উপরের দন্ত-পংক্তির সাথে নীচের দন্ত-পংক্তিকে মিলিত করে দিচ্ছি, তোর উপরের ও নীচের হনুদ্বয়কেও পরস্পর সংশ্লিষ্ট করে দিচ্ছি; তোর জিহ্বার সাথে জিহ্বাকে মিলিত করে উপরের মুখভাগকে নীচের ভাগের মধ্যে মিলিয়ে দিচ্ছি এবং বহু সর্পের ফণাগুলিকে এক সাথে বদ্ধ করে দিচ্ছি ॥ ৩
.
ষষ্ঠ সূক্ত : জলচিকিৎসা
[ঋষি : শন্তাতি। দেবতা : রুদ্র (ভেষজম)। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]
ইদমিদ বা উ ভেষজমিদং রুদ্রস্য ভেষজ যেনেষুমেকতেজনাং শতশল্যামপৰ্ববৎ ॥ ১। জালাষেণাভি ফিঞ্চত জালাষেণোপ সিঞ্চত। জালাষমুগ্ৰং ভেষজং তেন নো মৃড় জীবসে ॥ ২॥ শং চ নো ময়শ্চ নো মা চ নঃ কিং চনামমৎ। ক্ষমা রপো বিশ্বং নো অস্তু ভেষজং সর্বং নো অস্তু ভেষজ ৷ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –এই ব্রণরোগের নিবর্তক ভেষজ আমি রচনা করবো। এটি সেই রুদ্রদেবের ঔষধি, যিনি অন্তকালে সকলকে রোদন করান বলে রুদ্র নামে অভিহিত। এই ভেষজটি মহাদেব ত্রিপুর-সংহারকালে এক বেণুকাণ্ডকে শতশল্যময় তীক্ষ্ণ শল্যে পরিণত করেছিলেন ॥ ১।
হে পরিচারকবৃন্দ! তোমরা গো-মূত্রের ফেন-জলের দ্বারা ব্রণকে ধৌত করে এই রোগকে দূরীকরণে শ্রেষ্ঠ। হে রুদ্র! এই ঔষধির দ্বারা আমাদের সুখ প্রদান করো ॥ ২॥
আমাদের সুখ মিলুক, আমাদের পশু-মনুষ্য যেন রোগ-গ্রস্ত না হয় এবং আমাদের পাপের যেন বিনাশ হয়। সমগ্র বিশ্ব ও তার শ্রেষ্ঠ কর্ম আমাদের পক্ষে ঔষধির সমান হোক ৩
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –মা নো দেবা ইতি তৃচেন সর্পবৃশ্চিকাদিভয়নিবৃত্তয়ে গৃহক্ষেত্রাদিযু সিকতা অভিমন্ত্র পরিতঃ পরিকিরেৎ। তথা অনেন তৃণমালাং সম্পাত্য গৃহনগরাদিদ্বারে বীয়াৎ। তথা অনেন তৃচেন গোময়ং অভিমন্ত্র গৃহে বিসর্জনং দ্বারি নিখননং অগ্নৌ: হোমং বা কুর্যাৎ। তথা অনেন অপামার্গমঞ্জরীং গুডুচীং বা অভিম পূর্ববৎ গৃহাদিষু বিসর্জনাদিকং কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি। তথা উপাকর্মণি অনেন তৃচেন আজং হুত্বা দধিসত্তুষু সংপাত আনয়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইদমিৎ বা উ ভেষজং ইতি তৃচেন মুখরহিতব্রণ-ভৈষজ্যার্থং গোমূত্ৰেণ ব্রণং মর্দয়েৎ। তথা অনেন দন্তমলং অভিমন্ত্র প্রলিম্পে। তথা অনেন ফেনং অভিমন্ত্র ব্রণং প্রলিম্পেৎ। সূত্রিতং হি। …ইত্যাদি। (৬কা, ৬অ. ৫-৬সূ)৷৷
টীকা –পঞ্চম সূক্তটির দ্বারা সর্প, বৃশ্চিক ইত্যাদির ভয় নিবৃত্তির নিমিত্ত গৃহ ক্ষেত্র ইত্যাদিতে কিছু বালুকা অভিমন্ত্রিত করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া কর্তব্য। এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা তৃণমালা সম্পাতিত করে গৃহ নগর ইত্যাদির দ্বারে বন্ধন, গোময় অভিমন্ত্রিত করে দ্বারে নিখনন্ বা অগ্নি-হোম করণ, অপামার্গমঞ্জরী বা গুডুচী অভিমন্ত্রিত করে পূর্ববৎ বিসর্জন ইত্যাদি হয়ে থাকে। উপকর্মে এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা দধিসত্তুর আজ্য আহুত করে সম্পাতন কর্তব্য। ….ষষ্ঠ সূক্তটির দ্বারা মুখরহিত ব্রণ ভৈষজ্যার্থে গোমূত্রের দ্বারা ব্রণ মর্দন, দন্তমল অভিমন্ত্রিত করে প্রলিপ্ত করণ, গোমূত্রের ফেন অভিমন্ত্রিত করে ব্রণে প্রলেপন ইত্যাদি করণীয়। (৬কা.৬অ.৫-৬)।
.
সপ্তম সূক্ত : যশঃপ্রাপ্তিঃ
[ঋষি : অথর্বা (যশস্কামঃ)। দেবতা : বৃহস্পতি, ইন্দ্র, দ্যাবাপৃথিবী, সবিতা, অগ্নি, সোম। ছন্দ : জগতী, পংক্তি, অনুষ্টুপ]
যশসং মেন্দ্রো মঘবান কৃপোতু যশসং দ্যাবাপৃথিবী উভে ইমে। যশসং মা দেবঃ সবিতা কৃপোতু প্রিয়ো দাতুদক্ষিণায়া ইহ স্যাম্ ॥১॥ যথেন্দ্রো দ্যাবাপৃথিবব্যার্ষশস্বান্ যথার ওষধীষু যশস্বতী। এবা বিশ্বেষু দেবেষু বয়ং সর্বেষু যশসঃ স্যাম ॥ ২॥ যশা ইন্দ্রো যশা অগ্নিশাঃ সোমা অজায়ত। যশা বিশ্বস্য ভূতস্যাহস্মি যশস্তমঃ ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ –দ্যাবাপৃথিবী, ইন্দ্র, সবিতা, আমাকে যশস্বী করুন। এই ভাবে যশস্বী হয়ে দক্ষিণা ধারণকারীগণের প্রিয় হবো।১৷
ইন্দ্র যে প্রকারে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে বৃষ্টি ইত্যাদি কর্মের দ্বারা শ্রেষ্ঠ (কীর্তিমান) হয়ে থাকেন, যে প্রকারে ঔষধিসমূহে জল শ্রেষ্ঠ (কীর্তিমান) রূপে পরিগণিত হয়ে থাকে, সেই প্রকারেই সকল দেবতা ও মনুষ্যের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ হবো। ২৷৷
ইন্দ্র, অগ্নি ও সোম যশের আকাঙ্ক্ষা করে উৎপন্ন (সৃষ্ট) হয়েছেন। এঁদের যশস্বী হওয়ার ন্যায় আমি হেন যশের কামনাশালীও দেবতা ও মনুষ্য ইত্যাদি জীবসমূহের মধ্যে সর্বাধিক যশস্বী হবো॥ ৩॥
.
অষ্টম সূক্ত : ঔষধিঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : অরুন্ধতী ঔষধি। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
অনডুভ্যং প্রথমং ধেনুভ্যস্তুমরুন্ধতি। অধেনবে বয়সে শর্ম যচ্ছ চতুষ্পদে। ১৷৷ শৰ্ম যচ্ছতত্বাষধিঃ সহ দেবীররুন্ধতী। করৎ পয়স্বন্তং গোষ্ঠমষক্ষ্মা উত পূরুষান্ ॥ ২॥ বিশ্বরূপাং সুভগামচ্ছাবদামি জীবলাম। সা নো রুদ্রস্যাস্তাং হেতি দূরং নয়তু গোভ্যঃ ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে (অরোধনশীলা সহদেবী নামে আখ্যাতা শান্তু্যদক ইত্যাদিতে প্রযুজ্যমানা) অরুন্ধতী (ঔষধি)! তুমি প্রথমে বলীবর্দকে, গাভীবর্গকে এবং পঞ্চবৎসরের অনধিক আয়ুঃসম্পন্ন গো, অশ্ব ইত্যাদিকে সুখী করো ॥১॥
হে সহদেবী, হে অরুন্ধতী! তুমি আমাদের গোষ্ঠকে দুগ্ধে পূর্ণ করো। আমারে পুত্র, পৌত্র, ভৃত্য ইত্যাদিকে রোগরহিত করে আমাদের সুখী করো ॥ ২।
হে সহদেবী! আমি তোমার নিকটে অভীপ্সিত ফল প্রার্থনা করছি. তুমি সৌভাগ্যযুক্ত জীবন-দানশালিনী অনেক-রূপিণী হয়ে থাকো। এই ঔষধি রুদ্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত শস্ত্রকে আমাদের পশুসমূহ হতে পৃথক করে দূরস্থানে অপনীত করে দিক ॥ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যশসং মেন্দ্র ইতি তৃচেন যশস্কামঃ ইন্দ্রং যজতে উপষ্ঠতে বা। তথা উৎসর্জনকর্মণি অনেন তৃচেন আজং হুত্বা রসেযু সম্পাতা আনয়েৎ…অনডুদ্ভজ্বং প্রথমং ইতি তৃচস্য বৃহগণে পাঠাৎ শান্তুদকাদৌ বিনিয়োগ। তথা অর্থেত্থাপনবিঘুশমনকর্মণি বায়োঃ পূতঃ (৬/৫১) ইতি তৃচোক্তানি ক্ষীরৌদনহবনাদীনি কর্মণি কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি…তথা স্বস্ত্যয়নকর্মণি অনেন তৃচেন আজ্যসমিৎপুরোশাদীনি শঙ্কুলান্তানি ত্রয়োদশ দ্রব্যাণি জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি। ..ইত্যাদি। (৬কা, ৬অ. ৭-৮)।
টীকা— সপ্তম তৃচের দ্বারা যশস্কামী জনের পক্ষে ইন্দ্রের যাগ করণীয়। এই তৃচের দ্বারা আজ্য আহুত করণ ইত্যাদিও কর্তব্য। অষ্টম তৃচের বৃহঙ্গণে পঠিত ও শান্তুদকে বিনিয়োগ হয়। এই তৃচের দ্বারা বিদ্যুশমন (৬/৫১ সূক্তের অনুরূপ) কর্মে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। স্বস্ত্যয়ন কর্মে এই তৃচের দ্বারা আজ্যসমিৎপুরোডাশ ইত্যাদি ত্রয়োদশ দ্রব্যের দ্বারা হোম করণীয়। ৭ম সূক্তের ৩য় মন্ত্রটি ও ৪র্থ অনুবাকের ৮ম সূক্তের শেষ মন্ত্রটি একই ॥(৬কা.৬অ.৭-৮)।
.
নবম সূক্ত : পতিলাভঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : অর্যমা। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
অয়মা যাত্যৰ্যমা পুরস্তাদ বিষিতস্তুপঃ। অস্যা ইচ্ছন্নবৈ পতিমুত জায়ামজানয়ে ॥১॥ অশ্রমদিয়মমন্যাসাং সমনং যতী। অঙ্গে মন্নস্যা অন্যাঃ সমনমায়তি ॥ ২॥ ধাতা দাধার পৃথিবীং ধাতা দ্যামুত সূর্য। ধাতাস্যা অবৈ পতিং দধাতু প্রতিকাম্যম্ ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ –যে সূর্যের রশ্মিসমূহ পূর্ব দিকে উদিত হচ্ছে, সেই সূর্য এই স্ত্রীরহিত পুরুষকে স্ত্রী ও কন্যার নিমিত্ত পতি রূপে প্রদান করণের অভিলাষে উদয় হচ্ছেন ॥১॥
এই কন্যা অপর পতিব্রতা রমণীগণের ন্যায় শান্তিকর্ম অনুষ্ঠিত করেছিলেন; তার ফলেও এই পতি-অভিলাষিণী কন্যা, নিজে পতিলাভ না করায় দুঃখিত। হে অর্যমা (সূর্য)! অন্য স্ত্রীগণও এর নিমিত্ত শান্তিকর্ম অনুষ্ঠিত করছেন ॥ ২॥
অখিল বিশ্বের ধারক বিধাতা পৃথিবীকে স্থাপিত করে দুলোক ও সবিতাদেবকে সূর্যমণ্ডলে স্থাপিত করেছিলেন। সেই জগৎ-সংসারের নিয়ন্তা এই কন্যার নিমিত্ত কাম্য পতি প্রদান করুন ॥ ৩॥
.
দশম সূক্ত : বিশ্বস্রষ্টা
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : রুদ্র। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]
মহ্যমাপো মধুমদেরয়াং মহাং সূরো অভরজ্জ্যোতিষে কম। মহং দেবা ঊত বিশ্বে তপোজা মহ্যং দেবঃ সবিতা ব্যচো ধাৎ ॥১॥ অহং বিবেচ পৃথিবীমুত দ্যামহমৃত্যুংরজনয়ং সপ্ত সাক৷ অহং সত্যমনৃতং য বদাম্যহং দৈবীং পরি বাচং বিশশ্চ। ২। অহং জজান পৃথিবীমুত দ্যামহমৃতুংজনয়ং সপ্ত সিন্ধু। অহং সত্যমনৃতং যদ বদামি যো অগ্নীযোমাবজুষে সখায়া ॥ ৩
বঙ্গানুবাদ –সকলের প্রেরক সূর্য আমার নিমিত্ত সুখকারিণী তেজঃ-রূপ কিরণসমূহকে প্রকট করেছেন। জল ও জলাভিমানী দেবতাগণ মধুর জলকে আমার নিমিত্ত আনয়ন করুন। ব্রহ্মার তপস্যা হতে প্রকটিত সকল দেবতা আমাকে ঈপ্সিত ফল প্রদান করুন। সবিতাদেব ঈঙ্গিত ফলপ্রাপক ব্যাক্তি স্থাপিত করুন, যাতে সেইগুলি প্রেরণা-দানশালী হয়। ১।
আমি পৃথিবী ও স্বৰ্গকে পৃথক করেছি। আমি ছয় ঋতুর সাথে অধিমাস রূপ সপ্তম ঋতুকে যুক্ত করেছি। সংসারের সত্যাসত্য বাক্যের তথা দৈববানীকেও আমিই উচ্চারণ করছি। ২।
পৃথিবী, স্বর্গ, ঋতু, গঙ্গা ইত্যাদি সপ্ত নদী ও সপ্ত সমুদ্রও আমিই উৎপন্ন করেছি। সত্য ও মিথ্যা ভেদে লোকে প্রসিদ্ধ বাক্য আমিই উচ্চারণ করি। এই প্রকারে ডোক্তা ও ভোগ রূপ অগ্নি ও সোমকে আমি ব্ৰহ্মাত্মভাবে সংসারের রচনা কর্মে সহায়ক রূপে প্রাপ্তি সম্পন্ন করেছি ॥ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অয়ম আ যাতি ইতি তৃচেন পতিলাভকর্মণি কাকসঞ্চারাৎ পূর্বং আজ্যং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি। ….মহ্যং আপঃ ইতি তৃচস্য বৃহগণে পাঠাৎ শান্ত্যদকাদৌ বিনিয়োগোনুসন্ধেয়। তথা অর্থোত্থাপনবিঘুশমনকর্মণি ক্ষীরৌদনহবনাদীনি কর্মাণি কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি। …ইত্যাদি। (৬কা, ৬অ. ৯-১০সূ)৷৷ টীকা— নবম সূক্তটির দ্বারা পতিলাভকর্মে রাত্রিশেষে (কাক জাগবার আগেই) আজ্য হোম করণীয়। দশম সুক্তটির বৃহৰ্গণে পঠিত শান্তুদককর্মে বিনিয়োগ হয়। তথা এই সূক্তের দ্বারা অর্থোত্থাপনবিঘুশমন কর্মে সূত্রোক্ত প্রকারে বিনিয়োগ হয়৷৷-দশম সূক্তের ২য় ও ৩য় ঋক্ সম্পর্কে ব্যাখ্যা-মন্ত্রদ্রষ্টা স্বাত্মনঃ সর্বগতব্রহ্মাত্মভাবং অনুসন্দধানং সর্বকর্তৃত্বং আবিষ্করোতি। অর্থাৎ এই দুই ঋকে মন্ত্রদ্রষ্টা অথবা ঋষি সর্বগত ব্ৰহ্মাত্মভাবে অনুসন্ধান পূর্বক আপন সর্বকর্তৃত্ব আবিস্কার করেছেন। এখানে যেন তিনি নিজেই ব্রহ্মরূপে সবকিছু সৃষ্টি করছেন ॥ (৬কা. ৬অ. ৯-১০সূ)।