1 of 3

০৬।০৪ ষষ্ঠ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক

চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : যাতুধানক্ষয়ণম
[ঋষি : চাতন অথর্বা দেবতা : অগ্নি, রুদ্র, মিত্রাবরুণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি ]

অন্তর্জাবে জুহুতা স্বেহতদ যাতুধানক্ষয়ণং ঘৃতেন। আরা রক্ষাংসি প্রতি দহ ত্বমগ্নে ন নো গৃহাণামুপ তীতপাসি ॥ ১।. রুদ্ৰো বো গ্রীবা অশরৈৎ পিশাচাঃ পৃষ্টীবোহপি শৃণাতু যাতুধানাঃ। বীরুদ বো বিশ্বততীর্ষা যমেন সমজীগমৎ ॥ ২॥ অভয়ং মিত্রাবরুণাবিহা নোহর্টিষাত্রিণো নুদতং প্রতীচঃ। মা জ্ঞাতারং মা প্রতিষ্ঠাং বিদন্ত মিথো বিঘ্ননা উপ যন্তু মৃত্যুম্ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে ঋত্বিকবৃন্দ! যাতুধানদের (রোগের কীটানুরূপ রাক্ষসগণের) বিনাশ করণশালী হব্যকে ঘৃতের সাথে এই অগ্নিতে উত্তম প্রকারে আহুতি দান করো। হে অগ্নি! এই উপদ্রবীদের ভস্ম করে আমাদের গৃহসমূহকে সন্তাপ হতে রক্ষা করো ॥১॥

 হে যাতুনরূপী পিশাচগণ (মাংসখাদকগণ)! তোমাদের পঞ্জরস্থ অস্থিসমূহকে রুদ্রদেব ছেদন করে ফেলুন। হে মাংসভক্ষী পিশাচগণ! রুদ্র দেবতা তোমাদের কণ্ঠসমূহকে ছেদন করে দিন। বীর্যময়ী ঔষধিসমূহও তোমাদের যম-প্রাপ্তি ঘটাক ২

হে মিত্রাবরুণ! আমরা যেন নির্ভয় হয়ে এই দেশে থাকতে পারি। তোমরা এই মাংসভক্ষী রাক্ষসগুলিকে আমাদের নিকট হতে বিতাড়িত করে দাও। ওদের যেন কোন ভূমি এবং আশ্রয়দাতা না মেলে। ওরা পরস্পর বিহ্যমান হয়ে (অর্থাৎ হানাহানি করে) নষ্ট-ভ্রষ্ট হয়ে যাক। ৩।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : ইন্দ্রস্তবঃ

[ঋষি : জাটিকায়ন দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী, অনুষ্টুপ]

যস্যেদমা রজো যুজস্তুজে জনা বনং স্বঃ। ইন্দ্রস্য রত্যং বৃহৎ ॥১॥  নাধৃষ আ দধুষতে ধৃষাণো ধূষিতঃ শবঃ। পুরা যথা ব্যথিঃ শ্ৰৰ ইন্দ্রস্য নাবৃষে শবঃ ॥ ২॥ স নো দদাতু তাং রয়িমুরুং পিশঙ্গসংদৃশম্। ইন্দ্রঃ পতিস্তুবিষ্টমো জনেম্বা ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ— হে মনুষ্যগণ! যে ইন্দ্রের রঞ্জক-জ্যোতি শত্রু-হিংসার প্রেরণা জোগায়, তার সেই সেবনীয় তেজকে তোমরা গ্রহণ করো। ১৷৷

সেই ইন্দ্ৰ অপরের দ্বারা তিরস্কৃত না হয়ে আপন তেজে শত্রুকে দমিত করে দেন। বৃত্রবধের সময়ে তার বলকে কেউ অবদমিত করতে পারেনি; সেই রকম আজও কারো দ্বারা অভিভূত হয়নি। ২৷৷

সেই ইন্দ্র আমাদের পীতবর্ণের প্রভূত সুবর্ণ প্রদান করুন। সেই দেবতা, মনুষ্য ইত্যাদির অধিস্বামী, সকল রকমে শ্রেষ্ঠ ৷ ৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …তত্র আদ্যেন তৃচেন পিশাচরক্ষোজনিতভয়নিবৃত্তয়ে সূত্রোক্ত- প্রকারেণ অগ্নিং ত্রিঃ প্রদক্ষিণং কৃত্বা পুরোশং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি।… যস্যেদমা রজঃ ইতি তৃচেন কৃষিকর্মণি ক্ষেত্ৰং গত্বা যুগলাঙ্গলং বতি।…ইত্যাদি৷৷ (৬কা. ৪অ. ১-২সূ)।

টীকা— উপযুক্ত প্রথম সূক্তটির দ্বারা পিশাচ-রাক্ষস-জনিত ভয় নিবৃত্তির নিমিত্ত সূত্রোক্ত প্রকারে অগ্নিকে তিন বার প্রদক্ষিণ করে পুরোডাশ আহুতি দেওয়া কর্তব্য।…দ্বিতীয় সূক্তের দ্বারা কৃষিকর্মের উদ্দেশে ক্ষেত্রে গমন করে যুগল লাঙ্গল বন্ধন করণীয়।…ইত্যাদি। (৬কা. ৪অ. ১-২)।

.

 তৃতীয় সূক্ত : শত্রুনাশনম্

[ঋষি : চাতন দেবতা : অগ্নি ছন্দ : গায়ত্রী ]

 প্রাগ্নয়ে বাচমীরয় বৃষভায় ক্ষিতীনাম। স নঃ পর্ষদতি দ্বিষঃ ॥ ১৷৷ যো রক্ষাংসি নিজুর্বত্যগ্নিস্তিষ্মেন শোচিষা। স নঃ পদতি দ্বিষঃ ॥ ২॥ যঃ পরস্যাঃ পরাবতস্তিয়ো ধন্বতিয়োচতে। স নঃ পর্ষদতি দ্বিষঃ ॥ ৩৷৷ যো বিশ্বাভি বিপশ্যতি ডুবনা সং চ পশ্যতি। স নঃ পর্ষদতি দ্বিষঃ ॥ ৪৷৷ যো অস্য পারে রজসঃ শুক্রো অগ্নিরজায়ত। স নঃ পর্ষদতি দ্বিষঃ ॥ ৫॥

 বঙ্গানুবাদ –হে স্তোতা! ইচ্ছিত-বৰ্ষক (অর্থাৎ কামবর্ষণশীল), যাতুনবর্গের সংহারক, অগ্নিকে স্তুতি-করণশালী বাণীসমূহ উচ্চারণ করো। সেই অগ্নিদেবতা আমাদের রাক্ষস পিশাচ ইত্যাদি হতে মুক্ত করুন ৷৷ ১৷৷

যে অগ্নি আপন তীক্ষ্ণ তেজের দ্বারা যাতুধানগণকে বিনাশ করেন, তিনি আমাদের শত্রুগণ হতে মুক্ত করুন। ২।

যে অগ্নিদেব জল-বিহীন মরুভূমিতে রেতঃ-রূপে অধিক তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠেন (অথবা যে অগ্নি অত্যন্ত দূরদেশ হতে জলবর্জিত দেশকে অন্তর্হিত করে অতিশয়রূপে দীপ্যমান হন), তিনি রাক্ষস, পিশাচ ও শত্রুগণ হতে আমাদের মুক্ত করুন ৷ ৩৷

যে অগ্নিদেব জঠরাগ্নি ইত্যাদি অনেক রূপে দর্শন দান করেন এবং সূর্যরূপে সকল ভুবনকে প্রকাশ করেন, সেই অগ্নিদেব রাক্ষস, পিশাচ ও শত্রুগণ হতে আমাদের মুক্ত করুন। ৪।

 এই পৃথিবীর উপরস্থ অন্তরিক্ষলোকে যে সূর্যাত্মক অগ্নি প্রকট হয়ে থাকেন, সেই অগ্নিদেব আমাদের রাক্ষস, পিশাচ, শত্রু ইত্যাদি হতে মুক্ত করুন। ৫৷৷

.

চতুর্থ সূক্ত : বৈশ্বানরঃ

[ঋষি : কৌশিক দেবতা : বৈশ্বানর ছন্দ : গায়ত্রী]

 বৈশ্বানররা ন উতয় আ প্র যাতু পরাবতঃ। অগ্নিঃ সুষ্ঠুতীরুপ। ১৷ বৈশ্বানররা ন আগমদিমং যজ্ঞং সজুরুপ। অগ্নিরুথেম্বংহসু ॥ ২॥ বৈশ্বানররাহঙ্গিরসাং স্তোমমুকথং চ চাকুপৎ। ঐষু দুম্নং স্বৰ্ষৰ্মৎ ॥ ৩

বঙ্গানুবাদ— সকল মনুষ্যের হিতকরী (বৈশ্বানর) অগ্নিদেব দূর দেশ হতে আমাদের রক্ষার্থে। আগমন পূর্বক আমাদের সুন্দর স্তুতিগুলি শ্রবণ করুন ॥ ১৷

সেই বৈশ্বানর অগ্নিদেব আমাদের সমীপে আগমন করে আমাদের স্তুতি রূপ উথ-মন্ত্রসমূহের দ্বারা প্রসন্ন হয়ে যজ্ঞে স্থিত হোন। ২৷৷

বৈশ্বানর অগ্নিদেব অঙ্গিরা মহর্ষিগণের স্তোম ও শস্ত্র নামক স্তুতিকে সমর্থ করে, তাদের উজ্বল যশ ও অন্ন প্রাপ্ত হওয়ার বিধি রচনা করে, শোভন স্বর্গকে প্রাপ্তি করিয়ে দিয়েছেন ॥ ৩

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— প্রাগ্নয়ে বাচং ইতি পঞ্চচেন রক্ষোগ্রহজনিতপীড়ানিবৃত্তয়ে সমিদাজ্যশম্বুল্যানি ত্রয়োদশ দ্রব্যাণি জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি। বৈশ্যানরো ন ঊতয় (৬৩৫) ঋতাবানং ই বৈশ্বানরং (৬।৩৬) ইতি তৃচাভ্যাং সর্বভৈষজ্যকর্মণি উদকহরিদ্রাসর্পিরাদিকপায়নদ্রব্যাণি অভিমন্ত্র ও পারয়েৎ।…ইত্যাদি। (৬কা. ৪অ. ৩-৪)৷

টীকা –উপযুক্ত পঞ্চ-ঋক্ সমম্বিত (পঞ্চর্চেন) তৃতীয় সূক্তটির দ্বারা রাক্ষস গ্রহ জনিত পীড়া নিবৃত্তির উদ্দেশে সমিৎ, আজ্য, শম্বুলী ইত্যাদি ত্রয়োদশ সংখ্যক দ্রব্য আহুতি প্রদান করণীয়। চতুর্থ সূক্তটি ও তার পরবর্তী (৫ম) সূক্তটির দ্বারা সকল ভৈষজ্যকর্মে জল, হরিদ্রা ঘৃত ইত্যাদি দ্রব্যসমূহ অভিমন্ত্রিত করে ব্যাধিত জনকে খাওয়ানো কর্তব্য।..ইত্যাদি ॥ (৬কা. ৪অ, ৩-৪)।

.

পঞ্চম সূক্ত : বৈশ্বানরঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : অগ্নি ছন্দ : গায়ত্রী ]

ঋতাবানং বৈশ্বানরমৃতস্য জ্যোতিষম্পতি। অজস্রং ঘর্মমীমহে॥১॥ স বিশ্ব প্রতি চাপ ঋতৃংরুৎ সৃজতে বশী। যজ্ঞস্য বয়ঃ উত্তিরন্ ॥ ২॥ অগ্নিঃ পরে ধামসু কামো ভূতস্য ভব্যস্য। সম্রাডেকো বি রাজতি ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমরা সেই বৈশ্বানর অগ্নির উপাসনা করছি, যিনি যজ্ঞানুষ্ঠাবান এবং যজ্ঞানুষ্ঠাত্মক জ্যোতির অধিপতি এবং সদৈব প্রকাশমান থাকেন। তার নিকট হতে আমরা উত্তম (ঈপ্সিত) ফল প্রার্থনা করছি ॥১।

সকল প্রজাকে ফলদানশীল এই বৈশ্বানর অগ্নি দেবতাগণকে যজ্ঞাত্মক অন্ন প্রাপ্ত করাতে এবং সূর্য রূপে বসন্ত ইত্যাদি ঋতুসমূহকে রচনা করছেন ॥ ২॥

একমাত্র অগ্নিই উত্তম স্থানসমূহের অধিস্বামী; তিনি উৎপাদিত ও উৎপাদ্যমান প্রাণীসমূহকে তাদের ঈপ্সিত ফল প্রদান করণের নিমিত্ত অধিক তেজস্বীরূপে প্রতিভাত হয়ে থাকেন ৷৩৷৷

.

ষষ্ঠ সূক্ত : শাপমোচনম

[ঋষি : অথর্বা স্বস্ত্যয়নকামঃ দেবতা : চন্দ্রমা ছন্দ; অনুষ্টুপ]

উপ প্রাগাৎ সহস্রাক্ষো যুক্তৃা শপথো রথ। শপ্তারমন্বিচ্ছন মম বৃক ইবাবিমতো গৃহম ॥১॥ পরিণো বৃষ্মি শপথ হ্রদমগিরিবা দহ। শপ্তারমত্র নো জহি দিবো বৃক্ষমিবাশনিঃ ॥ ২॥ যো নঃ শপাদশপতঃ শপতো যশ্চ নঃ শপাৎ। শুনে পেস্ট্রমিবাবক্ষামং তং প্রত্যস্যামি মৃত্যবে ॥ ৩

বঙ্গানুবাদ –শাপক্রিয়ার কর্তা হয়ে সহস্রাক্ষ ইন্দ্র রথে আরোহিত হয়ে (বা অশ্ব সংযুক্ত করে) আমাদের নিকট আগমন করুন এবং আমাদের শাপ প্রদানশীল শত্রুর প্রতি সেই ভাবেই জিঘাংসু হয়ে উঠুন, যেভাবে মেষপালকের গৃহে অগমন করে বৃক (নেকড়ে বাঘ বা শৃগাল) তত্রত্য মেষগুলিকে হনন করে ॥১॥

হে শপথ (শাপক্রিয়ার কর্তা)! তুমি বাধক হয়ো না, আমাদের পরিত্যাগ করো। যেমন পতনশীল বিদ্যুৎ বা বজ্র বৃক্ষকে ভস্ম করে, তেমনভাবেই তুমি আমাদের শাপ-প্রদানকারী শত্রুসমূহকে ভস্ম করে দাও। ২।

আমরা শাপ প্রদান করি না, পরন্তু যে শত্রু আমাদের শাপ প্রদান করে বা কঠোর ভাষণ প্রয়োগ করে, এমন উভয়বিধ শত্রুকে কুকুরের সম্মুখে পিষ্টময় খাদ্যের (পিঠা বা রুটির) মতো মৃত্যুর মুখে নিক্ষেপ করো ॥৩॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ঋতাবানং বৈশ্বানরং ইতি তৃচস্য সর্বরোগভৈষজ্যকর্মণি পূর্বতৃচেন সহ উক্ত বিনিয়োগঃ…উপ প্রাগাৎ সহস্রাক্ষঃ ইতি তৃচেন অভিচারজনিত দোষনিবৃত্তয়ে অভিমন্ত্রিতায়াঃ শ্বেতমৃত্তিকায়াঃ শুনে প্রদানং সম্পাতিত্যাভিমন্ত্রিত-পালাশমণিপ্রদানং ইঙ্গিডহোমং সমিদাধানং বা কুর্যাৎ।…ইত্যাদি। (৬কা. ৪অ. ৫-৬)।

টীকা –উপযুক্ত পঞ্চম সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী (চতুর্থ) সূক্তের মতো সর্বভৈষজ্যকর্মে উক্ত হয়েছে। ষষ্ঠ সূক্তের দ্বারা অভিচারজনিত দোষ নিবৃত্তির নিমিত্ত শ্বেত মৃত্তিকা অভিমন্ত্রিত করে কুকুরকে প্রদেয়। সেইরকমে সম্পাতিত অভিমন্ত্রিত পালাশমণি প্রদান, ইঙ্গিড়হোম অথবা সমিদাধান করণীয়।… ইত্যাদি। মন্ত্রের মধ্যে সহস্রাক্ষো যুক্তবা শব্দদ্বয় দর্শন করে আচার্য সায়ণ ইন্দ্র-কে লক্ষ্য করেছেন। সেইমতো ব্যাখ্যাও করেছেন। কিন্তু এখানে সহস্রাক্ষ অর্থে যদি সহস্রাংশু ধরা যায়, তাহলে ইন্দ্রের পরিবর্তে সূর্যে লক্ষ্য আসে। আবার, অসংখ্য অংশুমান হিসেবে চন্দ্র-কেও লক্ষ্য করা যায়। সেই দিক থেকে, আমাদের মনে হয়, এই ষষ্ঠ সূক্তের শাপক্রিয়ার কর্তা-রূপ দেবতা চন্দ্রমা। এই সূক্তের উদ্দিষ্ট দেবতাও চন্দ্রমা। অবশ্য, এটি আমাদেরই ধৃষ্টতাজনিত ধারণা হতে পারে। (৬কা. ৪অ. ৫-৬সূ)।

.

সপ্তম সূক্ত : বৰ্চস্যম

 [ঋষি : অথর্বা (বৰ্চস্কামঃ) দেবতা : ত্বিষি, বৃহস্পতি ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

সিংহে ব্যাঘ্র উত যা পৃদাকৌ ত্বিরিগ্নেী ব্রাহ্মণে সূর্যে যা। ইন্দ্রং যা দেবী সুভগা জজান সা ন ঐতু বৰ্চসা সংবিদানা ॥ ১৷৷ যা হস্তিনি দ্বীপিনি যা হিরণ্যে ত্বিষিরল্স গোষু যা পুরুষেষু। ইন্দ্রং যা দেবী সুভগা জজান সা ন ঐতু বৰ্চস্য সংবিদানা ॥ ২॥ রথে অক্ষেভৃষভস্য বাজে বাতে পর্জন্যে বরুণস্য শুষ্মে। ইন্দ্রং যা দেবী সুভগা জজান সা ন ঐতু বচসা সংবিদানা ॥ ৩॥ রাজন্যে দুন্দুভাবায়তায়ামশ্বস্য বাজে পুরুষস্য মায়ৌ। ইন্দ্ৰং-যা দেবী সুভগা জজানসা ন ঐতু বচসা সংবিদানা ॥ ৪৷৷

বঙ্গানুবাদ –সিংহ, ব্যাঘ্রে ও সর্পের মধ্যে যে আক্রমণাত্মক তেজ (ত্বিষি অর্থাৎ দীপ্তি বা কান্তি) আছে, অগ্নির মধ্যে যে দাহরূপ তেজ আছে, ব্রাহ্মণের মধ্যে যে শাপরূপ তেজ আছে, সূর্যের মধ্যে যে তাপরূপ তেজ আছে, সেই সকল তেজের দ্বারাই ইন্দ্র প্রকট হয়েছেন। সেই তেজোরূপা সৌভাগ্যময়ী দেবী আমাদের অভীপ্সিত তেজের সাথে মিলিত হয়ে প্রাপ্ত হোন ॥১॥

 হস্তীতে বলোকরূপে; ব্যাঘ্ৰেতে হিংসনরূপে; স্বর্ণেতে বর্ণোকর্ষরূপে এবং জল, গাভী ও পুরুষে তাদের সাধারণরূপ যে তেজ (ত্বিষি অর্থাৎ দীপ্তি বা কান্তি) আছে, সেগুলির দ্বারাই সৌভাগ্যযুক্তা (ত্বিষ্যাত্মিকা) দেবী ইন্দ্রকে উৎপন্ন করেছেন। সেই তেজোরূপা দেবী আমাদের অভীপ্সিত তেজের সাথে মিলিত হয়ে প্রাপ্ত হোন ॥ ২॥

বর্ষা কারক মেঘে, গমন-সাধন-রূপ রথে, সেচনসামর্থযুক্ত বৃষে, দ্রুত বেগশালী বায়ু ও মেঘের অধিপতি বরুণের মধ্যে যে তেজ বা দীপ্তি আছে, সেগুলির দ্বারাই সৌভাগ্যযুক্তা দীপ্তিময়ী দেবী ইন্দ্রকে উৎপন্ন করেছেন। সেই তেজোরূপা দেবী আমাদের অভীপ্সিত তেজের সাথে মিলিত হয়ে প্রাপ্ত হোন ॥৩৷৷

 রাজপুত্রের অভিষেকে বাদিত দুন্দুভিতে, অশ্বের শীঘ্র গমনে ও পুরুষের উচ্চ রবের মধ্যে যে তেজ আছে, এবং এই যে তেজগুলির দ্বারাই যে সৌভাগ্যযুক্তা দেবী ইন্দ্রকে উৎপন্ন করেছেন, সেই তেজোরূপা দেবী আমাদের অভীপ্সিত তেজের সাথে মিলিত হয়ে প্রাপ্ত হোন ৪

.

অষ্টম সূক্ত : বৰ্চস্যম

[ঋষি : অথর্বা (বচস্কামঃ) দেবতা : বৃহস্পতি, ইন্দ্র, অগ্নি ইত্যাদি ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

যশো হবিবর্ধতমিজুতং সহস্রবীর্যং সুভূতং সহস্কৃতম। প্রসম্রাণমনু দীর্ঘায় চক্ষুসে হবিষ্মন্তং মা বর্ধয় জ্যেষ্ঠতাতয়ে ॥ ১৷ অচ্ছা ন ইন্দ্রং যশসং যশোভির্যশস্বিনং নমসানা বিধেম। স নো রাস্ব রাষ্ট্রমিজুতং তস্য তে রাতৌ যশসঃ স্যাম ॥২৷৷ যশা ইন্দ্রো যশা অগ্নির্যশাঃ সোমো অজায়ত। যশা বিশ্বস্য ভূতস্যাহস্মি যশস্তমঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমাদের দ্বারা ইন্দ্রকে প্রদানশালিনী অত্যন্ত শক্তিময়ী, বলদায়িনী, পরাভবকারিণী, যশোদাত্রী হবিঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক। হে ইন্দ্রদেব! সেই হবিঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার পরে আমা হেন হবিযুক্ত যজমানকে চিরকাল বৃদ্ধিসম্পন্ন করে রাখো ॥১॥

যশোদাতা ইন্দ্র আমাদের সম্মুখে বর্তমান; আমরা তাঁকে নমস্কার ইত্যাদির দ্বারা পরিচর্যা করবো। হে ইন্দ্র! সেই হেন তোমার প্রদত্ত রাজ্য প্রাপ্ত হয়ে আমরা যশস্বী হয়ে থাকি। ২।

 ইন্দ্র, অগ্নি ও সোম যশ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা করে উৎপন্ন (সৃষ্ট) হয়েছেন। এঁদের যশস্বী হওয়ার ন্যায় আমি হেন যশের কামনাশালীও দেবতা ও মনুষ্য ইত্যাদি জীবসমূহের মধ্যে সর্বাধিক যশস্বী হবো ৷৩৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সিংহে ব্যাঘ্রে যশো হবিঃ ইতি তুচাভ্যাং বৰ্চস্কামঃ স্নাতক সিংহব্যাঘ্ৰাদীনাং সূত্ৰোক্তানাং সপ্তানাং অন্যতমস্য নাভিলোমমণিং লাক্ষাহিরণ্যাভ্যাং বেষ্টায়ত্ব সম্পত্য।  অভিমন্ত্র বধীয়াৎ। তথা আভ্যামেব তৃচাভ্যাং পালাশাদিদশশান্তবৃক্ষশকলনির্মিতমণিং লাক্ষাহিরণ্যবেষ্টিতং, সম্পাত্য অভিমন্ত্র বচস্কামো বর্ধীয়াৎ সূত্রিতং হি। … তথা উৎসর্জনাখ্যে কর্মণি আভ্যাং তৃচাভ্যাং আজ্যং হুত্বা রসেষু সম্পাতা আনয়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৬কা. ৪অ. ৭-৮)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তদ্বয়ের দ্বারা তেজস্কামী জন সূত্রোক্ত স্নাতক, সিংহ, ব্যাঘ্র ইত্যাদির মধ্যে যে কোনও একটির নাভিলোম-মণি লাক্ষা ও হিরণ্যের সাথে বেষ্টন পূর্বক অভিমন্ত্রিত করে ধারণীয়। তথা এই দুই সূক্তের দ্বারাই পালাশ ইত্যাদি দশ-শান্ত বৃক্ষখণ্ডে নির্মিত মণি ঐভাবে বচস্কামী জনকে ধারণ করানো কর্তব্য। তথা উৎসর্জন নামে আখ্যাত কর্মে ঐ সূক্তদ্বয়ের দ্বারা আজ্য আহুত করণীয়।…ইত্যাদি৷৷ (৬কা. ৪অ. ৭-৮)।

.

 নবম সূক্ত : অভয়ম

 [ঋষি : অথর্বা (অভয়কামঃ), অথর্বা (স্বস্ত্যয়নকামঃ) দেবতা : দ্যাবাপৃথিবী, চন্দ্রমা, সবিতা, সপ্তঋষিসমুদায়, ইন্দ্র ছন্দ : জগতী, অনুষ্টুপ ]

অভয়ং দ্যাবাপৃথিবী ইহাস্তু নোহভয়ং সোমঃ সবিতা নঃ কৃপোতু।, অভয়ং নোহবন্তরিক্ষং সপ্তঋষীণাং চ হবিষাভয়ং নো অস্তু। ১। অস্মৈ গ্ৰামায় প্রদিশশ্চত ঊর্জং সুভূতং স্বস্তি সবিতা নঃ কৃণোতু। অশত্ৰিন্দ্রো অভয়ং নঃ কৃপোত্বনা রাজ্ঞামভি যাতু মনুঃ ॥ ২॥ অনমিত্রং নো অধরাদনমিত্রং ন উত্তরাৎ। ইন্দ্রানমিত্রং নঃ পশ্চাদনমিত্রং পুরস্কৃধি ॥ ৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে দাবা ও পৃথিবী! তোমাদের কৃপায় আমরা নির্ভয় হয়ে আছি। চন্দ্রমা, সূর্য এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থিত অন্তরিক্ষ আমাদের অভয় প্রদান করুক। সপ্ত-ঋষিগণের (অর্থাৎ-বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ, গৌতম, অত্রি, বসিষ্ঠ ও কশ্যপের) প্রাপ্তব্য হবিও আমাদের অভয় প্রদান করুক ॥১॥

 হে সবিতা! আমাদের অধ্যুষিত গ্রামের চতুর্দিকে প্রভূত অন্ন উৎপন্ন হোক। আমাদের এই স্থানে সদা মঙ্গল বিরাজিত থাকুক। ইন্দ্রদেব আমাদের শত্রুভয় হতে মুক্ত রাখুন। তার (অর্থাৎ ইন্দ্রের) কৃপায় আমাদের নিকট হতে রাজরোষ বহু দূরে গমন করুক ॥ ২॥

হে ইন্দ্র! দক্ষিণদিক শত্রুরহিত করো, আমাদের উত্তর দিক শক্তহীন করো, আমাদের পশ্চিম দিক শত্রুশূন্য করো, এবং আমাদের পূর্ব দিক শত্ৰুবর্জিত করে দাও ॥ ৩৷৷

.

দশম সূক্ত : দীর্ঘায়ুপ্রাপ্তি:

[ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : চন্দ্রমা, সরস্বতী, মন ইত্যাদি দৈব্য ঋষিগণ ছন্দ : অনুষ্টপ, ত্রিষ্টুপ]

মনসে চেতসে ধিয় আক্তয় উত চিত্তয়ে। মত্যৈ শ্রুতায় চক্ষসে বিধেম হবিষা বয়ম্ ॥ ১। অপানায় ব্যানায় প্রাণায় ভূরিধায়সে। সরস্বত্যা উরুব্যচে বিধেম হবিষা বয়ম্ ॥ ২॥ মা নো হাসিমুঋষয়গা দৈব্যা যে তনূপা যে নস্তন্বন্তজাঃ। অমর্তা মর্তী অভি নঃ সচধ্বমায়ুৰ্ধত্ত প্রতরং জীবসে নঃ ॥ ৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –সুখ ইত্যাদিকে প্রত্যক্ষ-করণশালী মনের নিমিত্ত, জ্ঞানসাধন চেতনার নিমিত্ত, ধ্যান-সাধন বুদ্ধির নিমিত্ত, স্তুতি-সাধন মতির নিমিত্ত, জ্ঞানরূপ শ্রুতির নিমিত্ত এবং চাক্ষুষ জ্ঞানরূপ দর্শন শক্তির নিমিত্ত আমরা হব্য ইত্যাদির দ্বারা ইন্দ্রের পূজন (বা পরিচর্যা) করছি ॥১॥

মুখ ও নাসিকার দ্বারা বহির্বিনির্গত বায়ুর পুনরায় অন্তঃপ্রবেশরূপ অপাননব্যাপারকে, ঊর্ধ্ব ও অধোবৃত্তি পরিত্যাগের দ্বারা বায়ুর অবস্থানরূপ ব্যানব্যাপারকে ও শরীরস্থ প্রাণবায়ুকে মুখনাসিকার দ্বারা বহির্বিনির্গমনরূপ প্রাণনব্যাপারকে তথা প্রাণাপান ইত্যাদি বহুর ধারক মুখ্য প্রাণকে এবং সরস্বতী দেবীকে আমরা হব্য ইত্যাদির দ্বারা সেবা করছি৷৷ ২৷৷

 প্রাণাধিদেব সপ্ত ঋষি আমাদের শরীরের রক্ষক হোন, তারা ইন্দ্রিয়রূপে উৎপন্ন হয়েছেন। তারা যেন আমাদের ত্যাগ না করেন। হে অবিনাশী দেবগণ। তোমরা আমাদের মধ্যে দীর্ঘ আয়ুর স্থাপনা করো ৷৩৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অভয়ং দ্যাবাপৃথিবী ইতি তৃচেন গ্রামাদ্যভয়কামঃ তস্যৈব প্রতিদিশং সপ্তর্ষী যজতে উপতিষ্ঠতে বা। সূত্রিতং হি…তথা সেনাভয়-নিবৃত্ত্যর্থং তস্যা প্রতিদিশং সপ্তর্ষীণাং যাগং উপস্থানং বা কুর্যাৎ…মনসে চেতসে ধিয়ে  ইতি তৃচেন গোদানাখ্যে সংস্কারকর্মণি মহাব্রীহিময়ং স্থালীপাকং শান্তুদকেন অভক্ষ্য অভিমন্ত্র আয়ুষ্কামং মাণবকং প্রাশয়েৎ। সূত্রিতং হি..ইত্যাদি ॥ (৬কা, ৪অ. ৯-১০)৷৷ টীকা –উপযুক্ত নবম সূক্তের দ্বারা গ্রাম ইত্যাদির অভয় কামনা পূর্বক তার চতুর্দিকে সপ্তর্ষির উদ্দেশে যাগ বা উপাসনা করণীয়। তথা সেনাভয় নিবৃত্তির নিমিত্তও প্রতি দিকে ঐরকম যাগ বা উপস্থান করণীয়। দশম সুক্তটির দ্বারা গোদান নামে আখ্যাত সংস্কার কর্মে মহাব্রীহিময় স্থালীপাক শান্তু্যদকের দ্বারা অভক্ষণ ও অভিমন্ত্রিত করে আয়ুষ্কামী মানবককে খাওয়ানো কর্তব্য। (৬কা. ৪অ. ৯-১০)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *