অথর্ববেদ-সংহিতা — ষষ্ঠ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : অমৃতপ্ৰদাতা
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : সবিতা। ছন্দ : জগতী, উষ্ণিক]
দোষো গায় বৃহদ গায় দ্যুমদ্ধেহি। আণর্বণ স্তুতি দেবং সবিতারম্ ॥১॥ তমু খুঁহি যো অন্তঃ সিন্ধৌ সূনুঃ। সত্যস্য যুবানমদ্রোঘবাচং সুশেবম্ ॥ ২॥ স ঘা নো দেবঃ সবিতা সাবিষমৃতানি ভূরি। উভে সুষ্ঠুতী সুগাতবে ॥ ৩
বঙ্গানুবাদ –হে অথবা-পুত্র দধ্য! দিবারাত্র স্তুতিযোগ্য বৃহৎ সাম গান করো। হে স্তুতি করণশীল! সেই গানের দ্বারা দান ইত্যাদি গুণযুক্ত সবিতা দেবের স্তুতি করো ॥১॥
যে সবিতা পরমব্রহ্মের প্রথম উৎপন্ন পুত্র, হে স্তোতা। তুমি তাকেই আপন স্তুতির দ্বারা প্রসন্ন করো। তিনি সমুদ্র হতে উদিত হচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে। সেই সতত যুবা, রাত্রির অন্ধকারকে সোপকারী ও শোভন বাক্যশালী সবিতাদেবকে স্তুতির দ্বারা প্রসন্ন করো ॥ ২॥
আমাদের হবিঃ-প্রদান ইত্যাদি কর্মসমূহকে সবিতাদেবই দেবতাগণের নিকট প্রাপ্ত করান এবং অমরত্বের সাধন তথা সুন্দর স্তুতির সাধন, দুই-ই বৃহৎ ও রথন্তর সামগানে আমাদের প্রেরণা দিতে থাকুক ॥ ৩৷৷
.
দ্বিতীয় সূক্ত : জেতা ইন্দ্রঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : সোমো বনস্পতি। ছন্দ : উষ্ণিক্]
ইন্দ্রায় সোমমৃত্বিজঃ সুনোতা চ ধাবত। স্তোতুর্যো বচঃ শৃণবদ্ধবং চ মে ॥ ১। আ যং বিশন্তীন্দবো বয়োন বৃক্ষমন্ধসঃ। বিপশিন বি মৃধো জহি রক্ষস্বিনীঃ ॥ ২॥ সুনোতা সোমপাঝে সোমমিল্লায় বজ্রিণে। যুবা জেতেশানঃ স পুরুষ্টুতঃ ॥ ৩
বঙ্গানুবাদ –হে অধ্বর্য প্রমুখ ঋত্বিবর্গ! তোমরা সেই ইন্দ্রের নিমিত্ত সোমের অভিষব করো, যিনি আমার স্তুতিরূপ আহ্বানকে আদরপূর্বক শ্রবণ করেন। ১॥
পক্ষী যেমন আপন নিবাসে স্বয়ং উপনীত হয়, তেমনই অভিযুত সোম ইন্দ্রের দেহে স্বয়ংই প্রবিষ্ট হচ্ছে। হে ইন্দ্রদেব! তুমি সোমের প্রভাবে হর্ষিত হয়ে শত্রুসেনাগণকে উৎপীড়িত করো ॥ ২॥
হে অধ্বর্যবৃন্দ! সোমপায়ী, বজ্রধারী, শত্ৰু-মর্দনে সমর্থ ইন্দ্রের নিমিত্ত সোমের অভিষব করো। সেই ইন্দ্ৰ সতত যুবা, শত্রুগণের প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আহ্বানকারী, বিজেতা এবং অখিল বিশ্বের প্রভু। যজমান আপন কামনা পূর্তির উদ্দেশে তাঁর স্তুতি করে থাকে ॥ ৩॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –তত্র দোষো গায় ইতি প্রথম সূক্তং। তত্র আদ্যেন সূক্তেন (তৃচেন) নবশালায়াং পুষ্টিকামো ঘৃতং মধুমিং জুহুয়াৎ।…তথা তেনৈব তৃচেন স্বস্ত্যয়নকামঃ আজ্যসমিংপুরাডাশাদিশম্বুল্যন্তানি ত্রয়োদশ দ্রব্যাণি জুহুয়া…তথা অনেন তৃচেন সর্বলোকাধিপত্যকামঃ অথবাণং যজত উপতিষ্ঠতে বা। তথা অনেনৈব সমাবর্তনান্তরং ভুক্তং সম্পত্য অভিমন্ত্র অশ্নীয়াৎ…ইত্যাদি৷৷(৬কা..১অ. ১-২সূ)।
টীকা –উপরে যে দুটি সূক্ত (১ম ও ২য়) ও তার বঙ্গানুবাদ দেওয়া হয়েছে তার বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–এই সূক্তদ্বয়ের দ্বারা পুষ্টিকামী ব্যক্তি মূতন গৃহে মধুমিশ্রিত ঘৃতে হোম করবেন। তথা এই সূক্তদ্বয়ের দ্বারা স্বস্ত্যয়নের নিমিত্ত আজ্য, সমিৎ, পুরোশ শম্বুল্য অবধি ত্রয়োদশ দ্রব্যের আহুতি প্রদান কর্তব্য। তথা এই সূক্তদ্বয়ের দ্বারা সর্বলোকে আধিপত্যকামী জন অথর্বাণের যাগ করবেন বা উপাসনা করবেন। তথা এই সূক্তদ্বয়ের দ্বারা সমাবর্তনের পর ভুক্তদ্রব্য অভিমন্ত্রিত করে ভোজন করানো কর্তব্য।.. ইত্যাদি। পণ্ডিতপ্রবর দুর্গাদাস বলেছেন–যদ্যপি অস্মিন্ কাণ্ডে প্রায়েন সর্বাণি সূক্তানি তৃচাত্মকান্যেব তথাপি অধ্যাপকসম্প্রদায়ানুরোধেন তৃদ্বয়ং একীকৃত্য সূক্তত্বেন ব্যবহ্রিয়তে। কিন্তু আমরা ঐভাবে দুটি বা তিনটি তৃচ এক করে একটি সূক্ত গঠন করিনি,-মূল সংহিতা অনুসারে এক একটি, স্বতন্ত্র সূক্ত হিসেবেই উল্লেখ করেছি; এর ফলে প্রতিটি সূক্তের যথাযথ সংজ্ঞা, ঋষি, দেবতা ইত্যাদিরও পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য, সূক্তস্য বিনিয়োগঃ অংশটি উদ্ধৃতকরণের ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণে বাধ্য হয়েছি; কারণ তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থে দুই বা ততোধিক সূক্তের একত্র বিনিয়োগ এইভাবেই দেওয়া হয়েছে৷৷ (৬কা ১অ. ১-২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : আত্মগোপনম
[ঋষি : অথর্বা (স্বস্ত্যয়নকাম)। দেবতা : ইন্দ্র, পূষা ইত্যাদি। ছন্দ : বৃহতী, জগতী]
পাতং ন ইন্দ্রাপূষণাদিতিঃ পান্তু মরুতঃ। অপাং নপাৎ সিন্ধবঃ সপ্ত পাতন পাতু নো বিষ্ণুরুত দৌঃ ॥১॥ পাতাং নো দ্যাবাপৃথিবী অভিষ্ঠয়ে পাতু গ্রাবা পাতু সোমো নো অংহসঃ। পাতু নো দেবী সুভগা সরস্বতী পাত্বগ্নিঃ শিবা যে অস্য পায়বঃ ॥ ২॥ পাতাং নো দেবাশ্বিনা শুভস্পতী ঊষাসানক্তোত ন উরুষ্যতাম। অপাং নপাদভিতী গয়স্য চিদ দেব ত্বষ্টবর্ধয় সর্বাতয়ে ৷ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! হে পূষন! আমাদের রক্ষা করো। দেবমাতা অদিতি আমাদের রক্ষা করুন। অপাংনপাত নামক জলের পৌত্ররূপে মান্যশালী অগ্নি ও ঊনপঞ্চাশৎ মরুৎ-গণ আমাদের রক্ষা করুন। সপ্ত সমুদ্র, আকাশ ও বিষ্ণুদেবও আমাদের রক্ষক হোন। ১
আমাদের ইচ্ছিত ফলপ্রাপ্তির নিমিত্ত দ্যাব-পৃথিবী, নিষ্পন্ন সোম, অভিষবের প্রস্তর, মন্ত্ররূপিনী সরস্বতী, আহ্বানীয় অগ্নি এবং সুখ-প্রদানশালিনী কিরণরাশি–এঁরা আমাদের রক্ষক হোন। ২।
উষাসনাক্তা নামক দিন-রাত্রির দেবতা, দান ইত্যাদি গুণসম্পন্ন অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মেঘে স্থিত জলকে পতন হতে রোধকারী অপাংনপাত নামক অগ্নি, এঁরা সকল হিংসা হতে আমাদের রক্ষা করুন। হে ত্বষ্টা! তুমি সকল প্রকারের ফল দানের নিমিত্ত আমাদের বৃদ্ধি করো। ৩
.
চতুর্থ সূক্ত : আত্মগোপনম
[ঋষি : অথর্বা (স্বস্ত্যয়নকাম)। দেবতা : ত্বষ্টা ইত্যাদি। ছন্দ : বৃহতী, গায়ত্রী ]
তৃষ্টা মে দৈব্যং বচঃ পর্জন্যো ব্ৰহ্মণস্পতিঃ। পুত্রেভ্রাতৃভিরদিতির্ন পাতু নো দুষ্টরং ত্ৰায়মাণং সহঃ ॥১॥ অংশশা ভগো বরুণো মিত্রো অৰ্যৰ্মাদিতিঃ পান্তু মরুতঃ। অপ তস্য দ্বেষো গমেদভিতে যাবয়চ্ছত্রুমন্তিত। ২৷৷ ধিয়ে সমানা প্রাবতং ন উরুষ্যা ণু উরুন্নপ্রযুচ্ছ। দৌষ্পিতায় দুছুনা যা ॥ ৩॥
বঙ্গানুবাদ— ত্বষ্টাদেব আমার স্তুতি শ্রবণ করুন, বৃষ্টিকারক পর্জন্যদেব ও মন্ত্রের অধিপতি ব্ৰহ্মণস্পতি আমার স্তুতি শ্রবণ করুন। আপন পুত্র ও ভ্রাতাদের সাথে অদিতি দেবী আমাদের রক্ষক অজেয় বলের রক্ষণশালিনী হোন ॥১॥
অদিতিদেবী এবং তাঁর ভগ, বরুণ, মিত্র, অর্যমা নামক পুত্র মরুৎ-বর্গ আমাদের রক্ষক হোন। আমরা যে শত্রুদের নিকট হতে নিজেদের রক্ষা-কামনা করছি, তাদের অনিষ্ট-কর্ম আমাদের নিকট যেন না আসে। আমাদের নিকট হতে অপগত হিংসক দ্বেষ সেই শত্রুদের আমাদের নিকট হতে দূর করুক ॥২
হে বিস্তৃত গমনশীল বায়ু! আমাদের রক্ষা করো। হে অশ্বিনীকুমারদ্বয়। আমাদের রক্ষক হও। হে পিতা রূপ দ্যুলোক! কৃত্যার ন্যায় অনিষ্টশালিনী পাপের দেবীকে আমাদের নিকট হতে অপসারিত করে দাও ৷৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— পাতং নঃ ইতি তৃচেন বিজয়স্বস্ত্যয়নকর্মণি আজ্যং হুত্বা খড়গাদি শস্ত্রং সম্পাত্য অভিমন্ত্র যোধকায় প্রযচ্ছে। তথৈব স্বস্ত্যয়নকামো রাত্রে শয়নকালে এতং তৃচং জপন প্রাদেশেন মুখং প্রমায় স্বপ্যাৎ৷৷ তথৈব সুপ্তোতিস্য সুপ্তোত্থিতঃ অনেন তৃচেন স্বস্ত্যয়নার্থং ত্রীণি পদানি ও তিস্রো দিষ্টিবা প্রমায় উত্তিষ্ঠেৎ..ইত্যাদি৷৷ (৬কা, ১অ. ৩-৪সূ)।
টীকা –উপযুক্ত তৃতীয় ও চতুর্থ সূক্তের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে নানা রকম নির্দেশ আছে। তার মধ্যে প্রধান এই যে, এই সূক্তদ্বয়ের দ্বারা বিজয়কর্মে আজ্যাহুতি প্রদান পূর্বক খঙ্গ ইত্যাদি শস্ত্র অভিমন্ত্রিত করে যোদ্ধাকে প্রদান করা কর্তব্য। তথা, স্বস্ত্যয়নকামী রাত্রে শয়নকালে এই সূক্ত জপ করে শয়ন করবেন এবং সুপ্তোত্থিত হয়ে (অপর) সূক্তটি জপ করতে করতে স্বস্ত্যয়নার্থে তিন পদ চলে উঠতে হবে।…ইত্যাদি ॥ (৬কা, ১অ. ৩-৪সূ.)।
.
পঞ্চম সূক্ত : বৰ্চঃপ্রাপ্তি
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : অগ্নি, ইন্দ্র। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
উদেনমুত্তরং নয়াগ্নে ঘৃতেনাহুত। সমেনং বচসা সৃজ প্ৰজয়া চ বহুং কৃধি ॥১৷৷ ইন্দ্রেমং প্রতরং কৃধি সুজাতানামস বশী। রায়ম্পোষেণ সং সৃজ জীবাতবে জরসে নয়।২। যস্য কৃশ্যে হবিগ্হে তমগ্নে বধুয়া ত্বম্। তস্মৈ সোমো অধি ব্ৰবদয়ং চ ব্ৰহ্মণস্পতিঃ ॥৩॥
বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি ঘৃতের দ্বারা আহূতকৃত হয়ে থাকো। তুমি এই যজমানকে উত্তম পদ লাভ করাও, এঁকে দেহ-কান্তির সাথে যুক্ত করো এবং সন্তান ইত্যাদির দ্বারা এর বৃদ্ধি সাধিত করো। ১।
হে ইন্দ্র! এই যজমানের অত্যন্ত বর্ধন করো। এই যুজমান তোমার কৃপায় সকলকে বশীভূত রাখার সামর্থ্যশালী হোন এবং স্বয়ং স্বতন্ত্র হয়ে উঠুন। এঁকে ধনের দ্বারা সম্পৃষ্ট করো এবং বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত এর আয়ুকে লম্বিত করো (অর্থাৎ ইনি যেন পুর্ণ আয়ুষ্কাল ভোগ করতে পারেন)। ২।
হে অগ্নি! যে যজমানের গৃহে আমরা হব্য ইত্যাদি সম্পন্ন করছি, সেই যজমানকে সমৃদ্ধ করো। সোমদেব এঁকে আপন লোক বলে ঘোষণা করুন এবং ব্ৰহ্মণস্পতি এই জন আমার বলে অনুগৃহীত করুন ৷ ৩৷৷
.
ষষ্ঠ সূক্ত : শত্রুনাশনম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : ব্ৰহ্মণস্পতি, সোম। ছন্দ : অনুষ্টুপ ]
যোহস্মন্ ব্ৰহ্মণস্পতেহদেবো অভিমন্যতে। সর্বং তং রন্ধয়াসি মে যজমানার সুন্বতে ॥১॥ যো নঃ সোম সুশংশিনো দুঃশংস আদিদেশতি। বজ্রেণাস্য মুখে জহি স সংপিষ্টো অপায়তি ॥ ২॥ যো নঃ সোমাভিদাসতি সনাভিশ্চ নিষ্ট্য। অপ তস্য বলং তির মহীব দ্যৌধত্মনা ॥৩॥
বঙ্গানুবাদ –হে ব্ৰহ্মণস্পতি! দেবতাগণের প্রতি ভক্তিহীন শত্রু যদি আমাদের বধযোগ্য বলে মনে করে, তবে তাদের আমাদের সোমঅভিষবকারী যজমানের বশীভূত করে দাও। ১।
হে সোম! যে মন্দ বিচারবুদ্ধিশালী শত্রু আমাদের শোভন বিচারবুদ্ধিকে তিরস্কার করে, তুমি তাদের মুখের উপর বজ্র-প্রহার করো, যাতে তারা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে দূরীভূত হয়ে যায়। ২।
হে সোম! যে (সনাভি অর্থাৎ সগোত্রীয় বা সপিণ্ড) শত্রু আমাদের নাশ করতে আকাঙ্ক্ষা করে অথবা যে শত্রু আমাদের সন্তাপিত করে, তুমি তাদের বলকে দ্যুলোকের অশনিরূপ আয়ুধের দ্বারা সংহার-করণের ন্যায় বিনাশ করে দাও ৷ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— উদেনং উত্তরং নয় যোহস্মান ব্ৰহ্মণস্পতে ইতি তৃচাভ্যাং গ্রামকামঃ ইন্দ্রং যজতে উপতিষ্ঠতে বা৷৷ তথা আভ্যাং তৃচাভ্যাং উদুম্বরপলাশকর্কতক্ষণাধানং সোপস্তরণ তৃণাধানং অভিমন্ত্রিতান্নাসবদানাং বা কুর্যাৎ৷ সূত্রিতং হি।…তথা দর্শপূর্ণমাসয়োঃ আগ্নেয়চরুং… ইত্যাদ্যাভিস্তিসৃভিঋগ ভিজুহুয়াৎ…তথা অগ্নিচয়নে……তথা অদ্ভুতমহাশান্তৌ ইন্দ্রয়জনে….ইত্যাদি। (৬কা, ১অ. ৫অ-৬সূ)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তদ্বয়ের দ্বারা গ্রামকামী জন ইন্দ্রের যাগ করবেন। তথা এই সূক্তের দ্বারা উদুম্বর, পলাশ, কর্কন্ধু ইত্যাদির স্থাপন ও উপস্তরণ তৃণাধান বা অভিমন্ত্রিত অন্ন আসব প্রদান করণীয়। তথা দর্শপূর্ণ মাস যাগে এই সূক্তের দ্বারা আগ্নেয় চরুর হোম করণীয়। অগ্নিচয়নেও এই সূক্তদ্বয়ের বিনিয়োগ আছে। তথা অদ্ভুত মহাশান্তিতে ইন্দ্ৰযজ্ঞে এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে।…ইত্যাদি। (৬কা, ১অ. ৫-৬সূ.)।
.
সপ্তম সূক্ত : অসুরক্ষয়ণম্
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : সোম, বিশ্বদেবা। ছন্দ : গায়ত্রী ]
যেন সোমাদিতিঃ পথা মিত্রা বা যন্ত্যদ্রুহঃ। তেনা নোহবসা গাহি ॥১॥ যেন সোম সাহত্যাসুরা রন্ধয়াসি নঃ। তেনা নো অধি বোচত ॥২॥ যেন দেবা অসুরানামোজাংস্যবৃণীধ্বম্। তেনা নঃ শৰ্ম যচ্ছত ॥৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে সোম! যে দেবযান-মার্গে অদ্বেষী দেবমাতা-অদিতি ও তাঁর কৃপাপরায়ণশীল মিত্র ইত্যাদি দ্বাদশ পুত্ররূপী আদিত্যবর্গ বিচরণ করেন, সেই মার্গ ধরে কল্যাণের সাথে আগমন করো ॥ ১।
হে সোম! তুমি যে বলের দ্বারা রাক্ষসগণকে বশীভূত করে থাকে, সেই বলের কথা। আমাদের বলে দাও। ২।
হে দেবগণ! যে বলের দ্বারা তোমরা অসুরবর্গের বলকে তাদের মধ্যেই অলস করে দিয়ে নিজেদের মধ্যে মিলিয়ে নিয়েছে, সেই বলের দ্বারা আমাদের সুখী করে দাও ৷৷ ৩৷৷
.
অষ্টম সূক্ত : কামাত্মা
[ঋষি : জমদগ্নি। দেবতা : কামাত্মা। ছন্দ : পংক্তি]
যথা বৃক্ষংলিবুজা সমন্তং পরিষস্বজে। এবা পরি স্বজস্ব মাং যথা মাং কামিন্যসো যথা মন্নাপগা অসঃ ॥১॥ যথা সুপর্ণঃ প্রপতন পক্ষেী নিহন্তি ভূম্যাম। এবা নি হন্মি তে মনো যথা মাং কামিন্যসো যথা মন্নাপগা অসঃ ॥২॥ যথেমে দ্যাবাপৃথিবী সদ্যঃ পর্ষেতি সূর্যঃ। এবা পর্ষেমি তে মনো যথা মাং কামিন্যশসা যথা মন্নাপগা অসঃ ॥৩॥
বঙ্গানুবাদ –যেমন তাম্বুল ইত্যাদি বল্লী (লতা) আপন আশ্রয়দাতা বৃক্ষকে সর্ব দিক হতে বেষ্টন করে থাকে, তেমনই, হে জায়া! তুমি আমাতে সংলগ্ন থাকো (বা আলিঙ্গন করো)। যাতে তুমি আমাকেই কামনা করে আমারই নিকটে অবস্থান করো, সেই উদ্দেশেই আমি এই মন্ত্রের প্রয়োগ করছি ॥ ১।
আপন স্থান হতে উড্ডীয়মান হয়ে গরুড় যেমন পৃথিবীর উপর আপন পক্ষ দুটির তাড়না করে, তেমনই হে পত্নী! আমি তোমার মনকে বশান্বিত করছি, যাতে তুমি আমাকেই কামনা করে আমারই নিকটে অবস্থান করো, (বা অন্য কোথাও গমন না করো), সেই উদ্দেশেই আমি এই মন্ত্রের প্রয়োগ করছি। ২৷
এই আকাশ, পৃথিবী ও স্বর্গকে সূর্য যেমন সকল দিক হতে ব্যাপ্ত করে থাকে, তেমনই আমি, হে স্ত্রী! তোমার মনকে ব্যাপ্ত করছি; যাতে তুমি আমাকে কামনা করে আমারই নিকটে অবস্থান করো এবং অন্যত্র না গমন করো। ৩
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যেন সোম ইতি তৃচেন যাগবিঘুশমনার্থং সরূপবৎসায়াঃ গোঃ ক্ষীরে পক্কং পায়সং সম্পত্য অভিমন্যু অশ্নীয়াৎ। তথা অযাজ্যযাজনদোষশমনার্থং চ যাগসমাপ্তানন্তরং চরুণা সোমং যজেত। সূত্রিতং হি।…যথা বৃক্ষং লিবুজা ইতি তৃচেন স্ত্রীবশীকরণকর্মণি বৃক্ষত্বকশরখণ্ড তগরাঞ্জনকুষ্ঠাদিদ্রব্যাণি পেষয়িত্ব আজ্যেন আলোড স্ত্রিয়া অঙ্গং অনুলিম্পেৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (৬কা, ১অ, ৭-৮সূ)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্ত দুটির মধ্যে প্রথমটির দ্বারা যাগবিঘ্ন নাশের নিমিত্ত গো-ক্ষীরে পক্ক পায়স সম্পাতিত করে অভিমন্ত্রিত পূর্বক ভক্ষণ করণীয়। তথা অযাজ্য যাজনদোষের উপশমার্থে যাগ সমাপনের পর চরুর দ্বারা সোমের যজন কর্তব্য।…দ্বিতীয় সূক্তটির দ্বারা স্ত্রীবশীকরণ কর্মে বৃক্ষত্বক, শরখণ্ড, গর, অঞ্জন, কুষ্ঠ ইত্যাদি দ্রব্যসমূহ পেষণ পূর্বক আজ্যের দ্বারা আলোড়িত করে স্ত্রীর অঙ্গে অনুলেপন করণীয়।… ইত্যাদি। (৬কা, ১অ. ৭-৮সূ.)।
.
নবম সূক্ত : কামাত্মা
[ঋষি : জমদগ্নি। দেবতা : কামাত্মা। ছন্দ : অনুষ্টুপ ]
বাঞ্ছ মে তন্বং পাদৌ বাঞ্ছাক্ষৌ বাঞ্ছ সকথ্যে। অক্ষৌ বৃষণ্যন্ত্যাঃ কেশা মাং তে কামেন শুষ্যন্তু ॥১॥ মম ত্বা দোষণিশিষং কৃণোমি হৃদয়শ্ৰিষম্। যথা মম ঋতাবসসা মম চিত্তমুপায়সি ॥২॥ যাসাং নাভিরারেহণং হৃদি সংবননং কৃতম। গাবো ঘৃতস্য মাতবরাহমূং সং বানয়ন্তু মে॥৩৷৷
বঙ্গানুবাদ— হে পত্নী! তুমি আমার শরীর, পাদ, নেত্র ও জঙ্ঘা কামনা করো। তুমি সেচনসমর্থ পুরুষকে কামনাকারিণী। তোমার কেশ ও নেত্র অত্যন্ত সুন্দর; সেগুলি আমার মনকে কাম-বিকারে আগ্রস্ত করছে। ১। হে পত্নী! তুমি আমার ইচ্ছানুকূলা হয়ে মনকে প্রসন্নকারিণী হও, যাতে আমি তোমাকে বাহুপাশে গ্রহণ করে হৃদয়ে রমণ করছি বুঝবো॥ ২॥ যে স্ত্রীগণের নাভিদেশ (অঙ্গ) প্রশংসনীয় হয়ে থাকে, যাদের হৃদয়ে বশীকরণের শক্তি আছে, সেই স্ত্রীগণকে ঘৃত-দুগ্ধ দানশালিনী গাভীগণ আমার অধিকৃতা করে দিক ॥ ৩॥
.
দশম সূক্ত : সম্প্রোক্ষণম
[ঋষি : শন্তাতি। দেবতা : পৃথিবী, অগ্নি, বায়ু, সূর্য ইত্যাদি। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, বৃহতী ]
পৃথিব্যৈ শ্রোত্রায় বনস্পতিডভ্যাহগুয়েইধিপতয়ে স্বাহা ॥১॥ প্রাণায়ান্তরিক্ষায় বয়োভ্যো বায়বেধিপতয়ে স্বাহা ॥২॥ দিবে চক্ষুষে নক্ষত্রেভ্যঃ সূর্যায়াধিপতয়ে স্বাহা ॥৩॥
বঙ্গানুবাদ— পৃথিবীর নিমিত্ত, শব্দ শ্রবণের শক্তিসম্পন্ন শ্রোত্রের নিমিত্ত, ভূ-স্থিত বৃক্ষসমূহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাগণের নিমিত্ত এবং ভূস্বামী অগ্নির নিমিত্ত এই হব্য স্বাহুত হোক ৷ ১। বায়ুরূপ প্রাণের নিমিত্ত, তার সাথে সাথে সম্বন্ধিত অন্তরিক্ষের নিমিত্ত, পক্ষিগণের নিমিত্ত এবং বায়ুদেবতার নিমিত্ত এই হব্য আহুত হোক। ২। আকাশের নিমিত্ত, চক্ষুর নিমিত্ত, নক্ষত্রের নিমিত্ত এবং দুলোকের অধিপতি দিবাকরের উদ্দেশে এই ইব্য স্বাহাকৃত হোক ॥ ৩॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— বাঞ্ছ মে ইতি তৃচস্য যথা বৃক্ষং লিবুজা ইতি তৃচবৎ বিনিয়োগো দ্রষ্টব্যঃ … পৃথিব্যৈ শ্ৰোত্ৰায় ইতি তৃচেন সর্বসম্পৎ কর্মসু আজ্যং জুহুয়াৎ…ইত্যাদি। (৬কা, ১অ. ৯-১০)৷
টীকা –নবম সূক্তটির বিনিয়োগ অষ্টম সূক্তের অনুরূপ (অর্থাৎ স্ত্রীবশীকরণ কর্মে প্রযোজ্য)। দশম সূক্তটির দ্বারা সকল সম্পকর্মে আজ্যাহুতি প্রদান কর্তব্য। (৬কা, ১অ. ৯-১০সূ.)।