০৫. সেগুনবাগিচায় নামিয়ে দিতে পারবে

রূপা বলল, তুমি কি আমাকে সেগুনবাগিচায় নামিয়ে দিতে পারবে? কিছু জিজ্ঞেস করার সময় রূপা কখনো চোখের দিকে তাকায় না। প্রশ্নটা করছে আমাকে, অথচ সে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। শুরুতে খুব বিরক্তি লাগত। এখন লাগে না। বরং মনে হয় এটাই স্বাভাবিক।

আমি রূপার প্রশ্নের জবাব দিইনি। গভীর মনোযোগে খবরের কাগজ পড়ছি, এমন একটা ভঙ্গি করার চেষ্টা করছি।

কথা বলছ না কেন, আমাকে সেগুনবাগিচায় নামিয়ে দিতে পারবে?

পারব।

তাহলে চট করে প্যান্ট পরে নাও। লুঙ্গি পরে নিশ্চয়ই যাবে না। শেভ করো। দুদিন ধরে শেভ করছ না।

আমি বাথরুমে ঢুকে গেলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে আঁৎকে উঠলাম। দুদিন শেভ না করায় ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। থুতনির কাছে চার পাঁচটা দাড়ি আবার শাদা। শাদা দাড়িগুলোর কল্যাণে চেহারায় প্রবীণ ভাব চলে এসেছে। শেভ করা মানে প্রবীণ ভাব বিসর্জন দেয়া, এটা কি ঠিক হবে? চেহারায় বুড়োটে ভাব আমার ভালই লাগে। বুড়ো লোকগুলো যখন চুলে কলপ দিয়ে, রঙচঙা শার্ট পরে তরুণ সাজতে চায় তখন অসহ্য লাগে। ইচ্ছা করে হাসতে হাসতে বলি, পঞ্চাশ ক্রশ করেছেন না? মৃত্যুর কিন্তু দেরি নেই, খুব বেশি হলে আর মাত্র দশ বছর। রঙচঙা জামা পরছেন, ভালো করছেন। শখ মিটিয়ে নেয়াই ভাল।

বাথরুম থেকে বের হয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে একতলায় এসে শুনলাম, রূপা রিকশা নিয়ে চলে গেছে। সে যে একা যাচ্ছে, আমাকে সঙ্গে নেবার দরকার নেই, তা-ও বলে যায়নি। আমি দিব্যি সেজেগুজে নেমে এসেছি।

এরকম অবস্থায় নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা লাগে। আমাকেও নিশ্চয়ই লাগছে। আমি বোকা ভাবটা চেহারা থেকে ঝেড়ে ফেলার জন্য সিগারেট ধরালাম। সিগারেট নিয়ে মুখের ভাবভঙ্গি অনেকখানি বদলে ফেলা যায়। মেয়েরা এই খবরটা

জানে না। জানলে পুরুষের তিনগুণ সিগারেট খেত।

সিগারেটে সবে তিনটা টান দিয়েছি, মুনিয়া এসে বলল, তোকে বাবা ডাকছেন।

এক্ষুণি যেতে বললেন। এক্ষুণি।

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সিগারেট ফেলে দিলাম। এগিয়ে যাচ্ছি বাবার ঘরের দিকে, মুনিয়া তীক্ষ্ণ গলায় বলল, তোর তো খুবই বিশ্রী স্বভাব, জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরো ফেলে চলে যাচ্ছিস! নিভিয়ে যাবি না? ঐদিন লাবণ্য পা পুড়ে ফেলেছে।

খালি পায় হাঁটাহাঁটি করে কেন? ওকে না করতে পারিস না খালি পায়ে যেন হাঁটাহাঁটি না করে।

এই বলে আমি বাবার ঘরে ঢুকে গেলাম।

বাবা অবেলায় বিছানায় শুয়ে আছেন। বুকে ব্যথা সম্ভবত শুরু হয়েছে। চোখমুখ দেখে কিছু অবশ্যি বোঝা যাচ্ছে না। শারীরিক যন্ত্রণা সহ্যের ক্ষমতা তাঁর অসাধারণ।

বাবা ডেকেছ?

হুঁ, বৌমা কোথায় গেল?

ঠিক প্রত্যাশিত প্রশ্ন নয়। রূপা কোথায় গেছে তা নিয়ে বাবাকে উদ্বিগ্ন হওয়া মানায় না। মুনিয়া যদি বলত, ভাবী কোথায়? সেটা মানিয়ে যেত কিংবা মা যদি বলতেন, অসময়ে বৌমা কোথায় গেল তাও মানাত—কিন্তু বাবা জিজ্ঞেস করবেন কেন?

আমি বললাম, সেগুনবাগিচার দিকে গেছে।

ঐখানে কি?

জানি না।

জিজ্ঞেস করিসনি?

না। আচ্ছা ঠিক আছে, যা।

বাবার ঘর থেকে বের হয়ে এসে মনে হল সামান্য ভুল করা হয়েছে। আমার বলা উচিত ছিল, কি জন্যে জানতে চাচ্ছ? রূপাকে নিয়ে তুমি কি চিন্তিত? রূপা এমন কিছু কি করেছে যার জন্যে চিন্তিত বোধ করছ?

সমস্যা হচ্ছে বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এমন যে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কোনো কথাই হয় না। সেই কথাবার্তাও সাধারণত খুব সংক্ষিপ্ত ধরনের। রূপা অবশ্যি হড়বড় করে তার সঙ্গে অনেক কথাবার্তা বলে। জেদী গলায় তর্ক করে। রূপার তর্ক করার ভঙ্গিটি খুব মজার, কিন্তু শুরুটা সে করে ভয়ঙ্করভাবে। তার ভঙ্গি দেখে মনে হয় প্রতিপক্ষকে সে ছিড়ে খুঁড়ে ফেলবে। প্রতিপক্ষ যখন পুরোপুরি ঘায়েল, তখন সে হঠাৎ গা এলিয়ে বলবে–অবশ্যি আপনার কথা ঠিক। প্রতিপক্ষ তখন হতচকিত। পুরোপুরি আনন্দিতও হতে পারছে না, কারণ সে জানে তর্কে জিততে পারেনি, আবার দুঃখিতও হতে পারছে না।

আমি চায়ের খোঁজে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছি, বারান্দায় মার সঙ্গে দেখা। মা বললেন, বৌমা কোথায় গেছে রে? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? তুমি তোমার বৌমাকে জিজ্ঞেস করলে না কেন?

সে তো বলল সেগুনবাগিচায় গেছে।

তাহলে সেখানেই গেছে। আচ্ছা মা, ব্যাপারটা কি শুনি তো?

মা খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বললেন, বউমা নাকি সিনেমা করছে। নায়িকার বোনের কি একটা চরিত্র।

বলল কে তোমাকে?

পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ছবি ছাপা হয়েছে। তুই জানিস না কিছু?

জানি। তোমরা যা ভাবছ তা না। বিয়ের আগে ওরা কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে শর্ট ফিল্ম বানানো শুরু করেছিল। কাজ বন্ধ ছিল, এখন আবার শুরু হবার কথা।

বিয়ের পর আবার সিনেমা কি? বিয়ের আগে যা করেছে, করেছে।

বিয়ে করে তো পাপ করেনি যে সব ছেড়ে দিতে হবে?

পাপ-পুণ্যের কোনো ব্যাপার না। তুই তোর বৌকে দিয়ে অভিনয় করাতে চাস, করাবি। এটা তোর ব্যাপার। পত্রিকায় যেসব লেখা ছাপা হয়–পড়তে ভালো লাগে না। আত্মীয়স্বজনরা পড়ে। তারা মজা পায়। হাসাহাসি করে।

কি লেখা হয়েছে?

মা গম্ভীর গলায় বলল, মুনিয়ার কাছে কাগজটা আছে, পড়ে দেখ।

আমি মুনিয়ার কাছ থেকে কাগজটা নিয়ে এলাম। নিজের ঘরে ঢুকে পাতা খুলে রীতিমত চমৎকৃত—পুরো পাতা ভর্তি রূপার ছবি। লেখার শিরোনাম হচ্ছে তিনি নগ্ন হতে রাজি।

বেশ দীর্ঘ প্রতিবেদন, পুরো তিন কলাম ছাপা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক জানাচ্ছেন শর্ট ফিল্ম সজনে ফুল-এর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ছবির তরুণ পরিচালক মুহাম্মদ জোবায়েদ এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন যে সামান্য কিছু প্যাচওয়ার্ক ছাড়া ছবির সব কাজ শেষ হয়েছে। জুন মাস নাগাদ ছবিটি সেন্সর বোর্ডের নিকট পাঠানো হবে। ছবিতে একটি খোলামেলা দৃশ্য আছে যে কারণে সেন্সর বোর্ড ছবিটির ব্যাপারে আপত্তি তুলতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সেন্সর বোর্ডে কিছু তথাকথিত নীতিবাগীশ লোক আছেন যারা পান থেকে চুন খসলেই গেল, গেল বলে হৈচৈ শুরু করেন। সহজ বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেবার মানসিকতা তাদের নেই। আমাদের ছবিতে কিছু খোলামেলা দৃশ্য আছে, যা গল্পের প্রয়োজনে এসেছে এবং খুব শিল্পসম্মতভাবেই এসেছে। কোনো মুক্তবুদ্ধির মানুষই এই দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তুলবেন না। মুহাম্মদ জোবায়েদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বর্তমান সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে মুক্তবুদ্ধির ব্যাপারটা একেবারেই নেই। তাদের সবার দৃষ্টি একচক্ষু হরিণের মতো।

সজনে ফুল ছবির খোলামেলা দৃশ্য নিয়ে অভিনেত্রী রূপা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হলে রূপা চৌধুরী বলেন, নগ্ন হওয়াটাকে তিনি কিছু মনে করেন না। তিনি বলেন, ঈশ্বর আমাদের এই পৃথিবীতে নগ্ন করেই পাঠিয়েছিলেন, এই সত্যটি মনে রাখলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই প্রতিবেদক ঠাট্টাচ্ছলে রূপা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি নগ্ন হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে পারবেন? রূপা চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন, আমি পারব তবে সেই দৃশ্য আপনারা সহ্য করতে পারবেন না।

পত্রিকায় রূপার যে ছবিটি ছাপা হয়েছে সেটি ভুদ্র ছবি। তবে প্রতিবেদন পড়বার পর ছবিটির দিকে তাকালেই পাঠকদের চোখে একটি নগ্ন মেয়ের ছবিই ভেসে উঠবে। আমি পত্রিকা হাতে দীর্ঘ সময় চুপচাপ বসে রইলাম। এ কি সমস্যা! বাবু এসে বলল, দাদা, ভাবী নাকি সিনেমা করছে?

আমি বললাম, হ্যাঁ।

ছবিটা দেখতে চাচ্ছি। পরীক্ষার পর রিলিজ হবে তো?

জানি না।

কাহিনীটা কি তুমি জান?

না।

 

রূপা এল সন্ধ্যার পর।

কুচকুচে কালো রঙের একটা টয়োটা গাড়ি রূপাকে নামিয়ে দিয়ে গেল। রূপা দোতলায় উঠে এল লাবণ্যকে কোলে নিয়ে। বাইরে থেকে এলেই রূপা কিছুটা সময় লাবণ্যর সঙ্গে কাটাবে।

রূপ লাবণ্যকে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। আমার দিকে ফিরেও তাকাল না। লাবণ্যর সঙ্গে কথাবার্তা এবং হুঁটোপুটি হতে থাকল। আমি যে পাশেই আছি, তার কাণ্ডকারখানা লক্ষ করছি, এ নিয়ে রূপার কোনো মাথাব্যথা নেই …

ও লাবণ্য সোনা, ভুনভুনা, খুনখুনা, ঝুনঝুনা!

কি?

আপনি কি করছেন?

আমি কিছু করছি না।

কে আপনাকে আদর করছে?

তুমি।

তুমিটা কে?

তুমি হচ্ছ রূপা।

রূপাকে তুমি কি ডাক?

মামী ডাকি।

তোমার মামী কি সুন্দর?

হ্যাঁ।

অল্প সুন্দর না খুব বেশি সুন্দর?

খুব বেশি সুন্দর।

কিসের মতো সুন্দর?

চাঁদের মতো।

চাঁদের কবিতাটা বলেন তো লাবণ্য সোনা।

বলব না।

বলতে হবে।

না, বলব না।

বলতেই হবে, বলতেই হবে, বলতেই হবে।

বলব না, বলব না।

তাহলে একটু হাসেন।

হাসব না।

তাহলে একটু কাঁদেন প্লীজ, প্লীজ। প্লীজ লাবণ্য।

কাঁদব না।

তাহলে একটু নিচে গিয়ে বলুন তো আমাকে এক কাপ চা দিতে।

লাবণ্য নিচে চলে গেল। আমার মনে হল আদরের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সে। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। রূপা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, খবর কি?

আমি বললাম, কোনো খবর নেই।

সারাদিন ঘরেই ছিলে, না কোথাও গিয়েছিলে?

ঘরেই ছিলাম। আচ্ছা রূপা শোন, তুমি আমাকে বললে সেগুনবাগিচায় নামিয়ে দিতে, তারপর আমাকে না নিয়েই চলে গেলে!

শেষ মুহূর্তে তোমাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা করল না।

রূপা বাথরুমে ঢুকে গেল। বাথরুম থেকেই বলল, সারাদিন ঘরে বসে আছি এটা তো ভাল কথা না। বাইরে থেকে ঘুরে-টুরে এসো।

কোথায় যাব?

কোনো বন্ধুর বাড়ি যাও। তাস-টাস খেলে এসো। সারাক্ষণ ঘরে থাকলে কি হয় জান? সবার সঙ্গে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে। তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, তুমি ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিচ্ছ।

অনেকদিন কারোর বাসায় যাওয়া হয় না। যেতে ইচ্ছা করে না। বন্ধুবান্ধব কারোর সঙ্গে দেখা হলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। রিকশায় হুঁড উঠিয়ে চলাফেরা করি। সেদিন মজিদ বাসায় এসেছিল। আমি বলে পাঠালাম, বাসায় নেই। অথচ মজিদের সঙ্গে কথা বলে আমি আরাম পাই। সে মজার কথা বলে খুব হাসাতে পারে। এরকম হচ্ছে কেন আমি জানি না। বিয়ের পর মানুষ খানিকটা বদলায়, এতটা কি বদলায়? মুনিয়ার ধারণা, কাফকার গল্পের নায়কের মতো আমার মেটামরফসিস হচ্ছে—আমি ধীরে ধীরে মানুষ থেকে ফার্নিচার হয়ে যাচ্ছি। আমি বললাম, কি ফার্নিচার হচ্ছি বলে তোর ধারণা? সে বলল, তুমি খুব ধীরে ধীরে একটা ইজিচেয়ার হয়ে যাচ্ছ।

সত্যি বোধহয় তাই হচ্ছি। ছিলাম মানুষ, হয়ে যাচ্ছি ইজিচেয়ার।

আমি রূপাকে ঘরে রেখে অনেকদিন পর বাড়ি থেকে বের হলাম। কোথায় যাব ঠিক করা নেই। রাস্তায় খানিকক্ষণ হাঁটব। মোড়ের সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেট কিনলাম। দোকানদার আমার চেনা। সে হাসিমুখে বলল, ভাইজানরে তো আইজকাইল দেখি না।

আমি কোনো উত্তর দিলাম না। এক ধরনের অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। ব্যাটা কি কথার কথা বলছে না সত্যি সত্যিই লক্ষ করছে যে, আমি আজকাল ঘর থেকে কম বেরুচ্ছি।

ভাইজানের শইল ভালো তো? আপনেরে কেমুন জানি কাহিল লাগতাছে।

আমি এই কথারও জবাব দিলাম না। তার এই কথাটা সম্ভবত সত্যি, আমাকে কাহিল যে দেখাচ্ছে তা নিজেই বুঝতে পারছি। কারণ রাতে ভাল ঘুম হচ্ছে না। প্রায় জেগে জেগেই রাত পার করছি। আমার পাশে শুয়ে রূপা এক ঘুমে রাত পার করে দিচ্ছে। অনিদ্রার রুগীরা সাধারণত দিনে ঘুমিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। আমার সেই অবস্থাও নেই। দিনে আমি কখনো ঘুমতে পারি না।

সিগারেটের দোকানের সামনে থেকেই আমি রিকশা নিয়ে নিলাম। সেই রিকশা নিয়ে চলে গেলাম সফিকের বাসায়। জানি তাকে পাওয়া যাবে না। সে কখনো রাত দশটার আগে বাসায় ফেরে না। সফিককে না পাওয়াই ভালো, পাওয়া গেলে ঘণ্টা দুই সময় নষ্ট হবে। দুঘন্টার আগে সে ছাড়বে না। সফিক বাসায় না থাকলেও জানবে আমি এসেছিলাম। এক ধরনের সামাজিকতা রক্ষা হবে। আমি নিজেও খানিকটা স্বস্তি পাবো যে অকারণে রিকশায় করে ঘুরছি না। কাজে যাচ্ছি।

সফিক বাসায় ছিল না। সফিকের ছোট বোন সুমি দরজা খুলে বিস্মিত গলায় বলল, ও মা কি সর্বনাশ, আপনি!

সুমি এবার ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছে। ডাক্তারিতে ভর্তি হবার জন্য দিনরাত পড়াশোনা করছে।

কেমন আছিস রে সুমি?

আমি তো ভালই আছি। আপনি এরকম কঙ্কাল হয়ে গেছেন কেন?

কঙ্কাল হয়ে গেছি?

হুঁ। আয়না নেই আপনার ঘরে?

তুই নিজেও তো কঙ্কাল হয়ে গেছিস। হেভি পড়াশোনা হচ্ছে?

তা হচ্ছে। তবে লাভ হবে না। গোল্লা খাব।

সফিককে ডেকে দে তো।

ভাইয়া বাসায় নেই। ঢাকাতেও নেই, টাঙ্গাইল গেছেন।

টাঙ্গাইল কেন?

সাহিত্য সভা, ভাইয়া হচ্ছে বিশেষ অতিথি।

বলিস কি!

আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে খুব ঝোলাকুলি করছিল, আমি যাইনি।

খুব ভাল করেছিস। কোনো বুদ্ধিমান লোক সাহিত্য সভায় যায় না। আচ্ছা, সুমি, আমি যাই। প্রধান অতিথি সাহেবকে বলিস আমি এসেছিলাম।

এক সেকেণ্ডে দাঁড়ান। দাদার একটা নতুন বই বের হয়েছে। বইটা নিয়ে যান।

বই বেরিয়েছে মানে! ও বই লিখল কবে?

বিয়ের পর তো আপনি নিবাসিত জীবন যাপন করছেন—ভাইয়া বই লিখে ছাপিয়ে ফেলেছে। বারোশ কপি ছাপিয়েছে। বন্ধুবান্ধবকে ধরে ধরে জোর করে বই কেনাচ্ছে। আপনার কাছে কি চল্লিশ টাকা আছে? চল্লিশ টাকা দিয়ে বই নিয়ে যান। বিনা পয়সাতেই আপনাকে দিতাম। ভাইয়া শুনলে রাগ করবে।

চল্লিশ টাকা আমার কাছে আছে—তুই বই নিয়ে আয়।

চা খাবেন?

না।

খান একটু, কি হবে খেলে? আপনি তো আসেনই না, বিয়ের পর প্রথম এলেন। বিয়ের পর প্রথম এলে মিষ্টি খাওয়াতে হয়। ঘরে কোনো মিষ্টি নেই। চিনি খাবেন? এক চামচ চিনি এনে দিতে পারি।

ফাজলামি ধরনের কথা। সুমি আমার সঙ্গে ফাজলামি ধরনের কথা কখনো বলে, আজ বলছে। চোখ-মুখ কঠিন করেই বলছে। তাকে ক্ষমা করে দিলাম কারণ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই মেয়েটি দুবছর আগে নপাতার একটি প্রেমপত্র লিখে রেজিস্ট্রি করে আমার নামে পাঠিয়েছিল। পুরো চিঠি পড়ার ধৈর্য ছিল না। দুতিন পাতা পড়েই আমার আক্কেল গুড়ুম। কি সর্বনাশ! সফিকের বাসায় তিন মাস যাওয়া বন্ধ রাখলাম। তিন মাস পর যখন গেলাম সুমির সঙ্গে খুব স্বাভাবিক আচরণ করলাম। সুমি চা দিতে এসে ক্ষীণ গলায় বলল, আপনি কি কোনো রেজিস্ট্রি চিঠি পেয়েছেন?

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, আমাকে রেজিস্ট্রি চিঠি কে লিখবে? সুমি বিস্মিত হয়ে বলল, কোনো চিঠি পাননি?

আমি বললাম, না তো!

সুমির প্রণয় উপাখ্যানের এইখানেই সমাপ্তি।

চায়ের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতেই সফিকের বাবা আইডিয়েল গার্লস স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক মোজাহার সাহেব এলেন। যতবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়, ততবারই আমার মনে হয় তাঁর বয়েস অনেকখানি বেড়েছে। আজ দেখি নিচের পটির একটা দাঁত পড়ে গেছে। তিনি ভারি চশমার আড়ালে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, কে, রঞ্জু?

জ্বী।

সফিকের খোঁজে এসেছ?

জ্বী।

বাসায় এসে তাকে পাবে না। বাসার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নাই। সে গ্রামে গঞ্জে সাহিত্য করে বেড়াচ্ছে। কেন্দুয়া উপজেলায় তার একটা চাকরি হয়েছিল। উপজেলা হেলথ অফিসার। সে চাকরি নিল না। তার নাকি ঢাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না। তাতে বাংলা সাহিত্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমি কিছু বললাম না। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, হারামজাদা এখন দাড়ি কামানো বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দিন পরে দেখলাম—চিনতে পারিনি। এই অবস্থা! আবার শুনেছি এর মধ্যে নাকি একটা বই লিখে ছাপিয়ে ফেলেছে। আরে ব্যাটা তুই হচ্ছিস ডাক্তার, তুই করবি ডাক্তারি। তোর বই লেখালেখি কি? বই লেখার টাকা কোত্থেকে পেয়েছে কে জানে। তোমার কাছ থেকে নিয়েছে নাকি?

জ্বী-না।

আমার ধারণা ওর মার কোনো গয়না-টয়না নিয়ে বেচে ফেলেছে। ওর মা অবশ্য অস্বীকার করছে। ছেলে ওর চোখের মণি। সারাজীবন খালি ছেলে ছেলে করেছে। এখন বুঝবে ছেলের মজা।

সুমি চা এনে সামনে রাখল। মোজাহার চাচা ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। মনে হচ্ছে ইদানীং তিনি চোখেও কম দেখেন। যাবার সময় দরজায় ধাক্কা খেলেন।

সুমি বই দিয়ে গেল। আমি তাকে চল্লিশটা টাকা দিলাম। সুমি বলল, পনেরোটা বই আমার বিক্রি করার কথা। একটা মাত্র বিক্রি করলাম। আপনি কি আরেকটা কিনবেন?

আরেকটা দিয়ে আমি কি করব?

ভাবীর জন্যে নিয়ে যান। আপনি একটা পড়বেন, ভাবী পড়বেন আরেকটা।

আরেকদিন যখন আসব আরেকটা কিনে নিয়ে যাব। আজ টাকা নেই।

বাকিতে নিয়ে যান। পরে টাকা দেবেন।

আচ্ছা যা, নিয়ে আয়।

সুমি আরেকটা বই এনে দিল। আমাকে বিদায় দিতে গেট পর্যন্ত এল। আমি যখন বললাম, যাই সুমি, তখন সে নিচু গলায় বলল, আপনাকে একটা কথা বলি, রাগ করবেন না তো?

না। কি কথা? আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে?

কে বলল?

সুমি চুপ করে রইল। আমিও খানিকক্ষণ চুপ থেকে রাস্তায় পা বাড়ালাম। এই নিয়ে সুমির সঙ্গে কথাবার্তা বলার মানে হয় না।

বাসায় সঙ্গে সঙ্গে রওনা হলাম না। অকারণে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে রাত এগারোটা বাজিয়ে ফেললাম। বাসায় ফিরে দেখি রূপা খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমুবার আয়োজন করে ফেলেছে। লাবণ্যকে নিয়ে এসেছে তার ঘরে। আমার জন্যে বিন্দুমাত্র উদ্বেগও লক্ষ করলাম না। এত দেরি কোথায় করলাম তা-ও জানতে চাইল না। আমি নিজ থেকে বললাম, সফিকের কাছে গিয়েছিলাম। ওর একটা বই বেরিয়েছে।

রূপা মশারি ফেলতে ফেলতে বলল, আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই ছাপাল আর আমাকে বলল না। আশ্চর্য তো!

তুমি টাকা দিয়েছ?

হুঁ। আচ্ছা লাবণ্যকে কি তার মার কাছে দিয়ে আসব, নাকি সে থাকবে। আমাদের সঙ্গে? খাট তো বড়ই আছে। থাকুক, কি বল?

থাকুক।

তুমি কি খেয়ে এসেছ?

না।

খাবে না?

না।

রূপা মশারির ভেতর ঢুকে পড়ল।

আমি সফিকের বই খুলে কয়েক পাতা পড়তে চেষ্টা করলাম। চৈত্র মাসের দুপুরের কথা দিয়ে বইটার শুরু। একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে ঝাঝ রোদে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ টায়ার ফেটে যাওয়ায় সে মহাবিরক্ত। এই ছেলেটিই বোধহয় নায়ক। তবে ছেলেটার নাম লোকমান। লোকমান নামের কেউ কি নায়ক হবে? মনে হয় না। ঔপন্যাসিকরা বাস্তববাদী লেখা যতই লিখুন না কেন, নায়কনায়িকার নামের ব্যাপারে তাঁরা খুব সাবধান। নায়কের নাম তাঁরা রাখবেন—শুভ্র, নায়িকার নাম নীলাঞ্জনা।

বাতি জ্বালানো থাকবে?

আমি বই থেকে চোখ না সরিয়ে বললাম, তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে?

না। আলো-অন্ধকার কোনোটাতেই আমার অসুবিধা হয় না। তুমি কি বই শেষ করে তারপর শোবে?

বুঝতে পারছি না। ঘুম পেলেই শোব।

রূপা হাই তুলতে তুলতে বলল, আজ কেন জানি আমার ঘুম আসছে না। এরকম আমার কখনো হয় না।

আমি বললাম, এমন কিছু কি ঘটেছে যার জন্যে তুমি ডিসটার্বড হয়েছ?

রূপা বলল, আমি কখনো ডিসটার্বড হই না।

কখনো না?

মাঝে মাঝে হয়তো হই। তাতে ঘুমের অসুবিধা হয় না। রূপবতী মেয়েদের ডিসটার্বেনসের প্রধান কারণ হল তার শরীর। সেই শরীরটাকে আমি তুচ্ছ করে দেখতে শিখেছি। এখন আমার অসুবিধা হয় না। তা ছাড়া …

তা ছাড়া কি?

থাক, অন্য একদিন বলব।

রূপা পাশ ফিরল। হয়তো ঘুমিয়ে পড়ল। লাবণ্য দুহাতে রূপার গলা জড়িয়ে ধরে আছে। মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে রেখেছে। আমি একই সঙ্গে সফিকের বই পড়ছি এবং রূপাকে দেখার চেষ্টা করছি। বই পড়ার এই হচ্ছে সমস্যা। বই এর দিকে তাকিয়ে পড়তে হয়। এমন কোনো ব্যবস্থা যদি থাকত যে যে-কোন দিকে তাকিয়ে বই পড়া যেত, তাহলে ভাল হত। গান শুনতে হলে গানের দিকে কান পেতে রাখতে। হয় না। অথচ বই পড়তে হলে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।

এ্যাই, শোন।

রূপা উঠে বসেছে। আমি বললাম, কি ব্যাপার?

খুব ঠাণ্ডা পানি খাওয়াতে পারবে। ফ্রীজ থেকে।

ঘুম আসছে না?

আসছে। ঘুমুচ্ছিলাম, তৃষ্ণায় ঘুম ভেঙে গেল।

আমি পানি আনতে গেলাম। সিঁড়ির গোড়ায় বাবার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বাবার অনিদ্রা রোগ আছে। বাবার অনিদ্রা রোগটার একটা উপকারী দিকও আছে। গভীর রাতে তিনি যখন দেখেন তাঁর মতো অন্য একজনও জেগে আছে, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করেন। এবং খুশি মনে খানিকক্ষণ গল্প করেন।

আমার উপর বাবা অসম্ভব বিরক্ত। কারণ আমি দুবছর আগে পাশ করেছি, চাকরি-বাকরির কোনো চেষ্টা করছি না। বিয়ে করে ফেলেছি কাউকে কিছু না জানিয়ে। অত্যন্ত রূপবতী একজন তরুণী আমার স্ত্রী, যার হাবভাব কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। যার উপর প্রচণ্ড রকম রাগ করার কিছু পাচ্ছে না, আবার যাকে ভালবাসবার মতোও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।

সিঁড়ির গোড়ায় আমাকে দেখে বাবার মুখের কঠিন ভাব একটু নরম হল। তিনি বললেন, এখনো ঘুমুতে যাসনি?

আমি বললাম, ঘুম আসছে না।

বাবার মুখের কঠিন ভাব আরো নরম হয়ে গেল। তিনি আন্তরিক গলায় বললেন, ঘুম না এলে অস্থির হবার কিছু নেই। প্রতিরাতে ছঘণ্টা ঘুমুতেই হবে, এমন। কোনো কথা নেই। নেপোলিয়ান মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমুতেন। লা মিজারেবল-এর লেখক। ভিক্টর হিউগো যখন লেখালেখি করতেন, তখন দৈনিক গড়ে দুঘণ্টা ঘুমুতেন।

আমি বললাম, ও, তাই নাকি?

সবাইকে যখন দেখি ঘুমের জন্যে মহাব্যস্ত, তখন আমি মনে মনে হাসি—বৌমা কি ঘুমুচ্ছে নাকি?

হুঁ

বাবা সঙ্গে সঙ্গে বললেন, বৌমার কিছু ব্যাপার নিয়ে আমি তোর সঙ্গে ডিসকাস করতে চাই। যদিও খুব ভাল করেই জানি ছেলের সঙ্গে এইসব ব্যাপার ডিককাস করা উচিত না। তবে ছেলের বয়স যখন একুশ ছাড়িয়ে যায় তখন খানিকটা হলেও বন্ধুর পর্যায়ে আসে। আমি তোর সঙ্গে ডিসকাস করতে চাচ্ছি নট এজ ফাদার বাট এজ এ ফ্রেণ্ড।

ডিসকাস করুন।

সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তো ডিসকাস করা যায় না। আয়, আমার ঘরে আয়।

রূপার জন্যে পানি নিয়ে যাওয়া হল না। আমি বাবার ঘরে ঢুকলাম। বাবার ঘরটা এই বাড়ির সবচে বড় ঘর। আগে এ ঘরে বাবা এবং মা ঘুমুতেন। এখন বাবা একাই ঘুমান। মা থাকেন একতলায় মুনিয়ার সঙ্গে। কারণ স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর মুনিয়া দুবার ঘুমের অষুধ খাবার চেষ্টা করেছে। রাতে তাকে চোখে-চোখে রাখতে হয়।

বোস রঞ্জু।

আমি বসলাম। আমার একটু গা ছমছম করতে লাগল। বাবার এই ঘরে শৈশবে অনেকবার আসতে হয়েছে। প্রতিবারই শাস্তি ভোগ করার জন্যে। সেই শাস্তিও বিচিত্র—খাটের নিচে মাথা দিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা।

রঞ্জু।

জী।

তুই তোর শ্বশুরবাড়ির হিস্ট্রি কিছু জানিস?

না।

খোঁজ নেয়ার ইচ্ছা হয়নি?

না।

তোর শ্বশুর যে এক বিদেশী মহিলা বিয়ে করেছিলেন, সেটা জানিস?

জানি।

ঐ বিদেশী মহিলার হিস্ট্রী জানিস?

না।

সে ছিল নর্তকী। নাইট ক্লাবে নচিত। খুব অথেনটিক সোর্স থেকে খবর পেয়েছি। আমার ছেলেবেলার বন্ধু রহমান ঐদিন কথায় কথায় বললো। বলতে চায়নি—আমিই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করেছি। রহমান এবং তোর শ্বশুর একসঙ্গে বাইরে ছিল। সে রূপার মা সম্পর্কে যা বলল … ভয়াবহ! সে সব বলতে চাচ্ছি না। নাইট ক্লাবের নর্তকী–এই একটা বাক্যই যথেষ্ট।

তাতে কিছু যায় আসে না বাবা।

কিছু যায় আসে না?

না।

বাইশ তেইশ বছর আগের ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামানোর কি আছে?

ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু না থাকলে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস পড়ানো হয় কেন? বর্তমানের ভিত থাকে অতীতে। এই যে তোর স্ত্রীর কথাই ধর–তার স্বভাব, তার মানসিকতা সে নিয়ে আসবে তার মা-বাবার কাছ থেকে।

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, এটাও ঠিক না বাবা। আমাকে দিয়ে দেখ–আমি কি তোমার মানসিকতা পেয়েছি? তুমি যে রকম আমি মোটেও সে রকম না। কাজ ছাড়া তুমি এক সেকেণ্ড থাকতে পার না, আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকতে পারি। তুমি মুহূর্তের মধ্যে রেগে আগুন হও। আমি কখনো রাগি না।

তুই হচ্ছিস একটা মেষ। মেরি হেড এ লিটল ল্যাম্বের এক ল্যাম্ব।

এই কথাও তুমি আমাকে অসংখ্যবার বলেছ। আমি কখনো কথা শুনে রেগে যাইনি। এখনো যাচ্ছি না। যাই বাবা, ঘুম পাচ্ছে।

বাবা হঠাৎ গলার স্বর বেশ কঠিন করে বললেন, আমি চাই না তুই তোর বৌ নিয়ে এই বাড়িতে বাস করিস। তুই অন্য কোথাও উঠে যা।

আমি বললাম, আচ্ছা।

কথার কথা আমি বলছি না। আমি সত্যি সত্যি তাই চাচ্ছি।

শিগগিরই সব সমস্যার সমধান করে ফেলব বাবা। এখন যাই।

আমি উঠে চলে এলাম। ফ্রীজ থেকে ঠাণ্ডা পানির বোতল নিয়ে এসেছি। কিন্তু রূপা ঘুমুচ্ছে … আহ, কি সুন্দর তাকে লাগছে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *