০৫. সাজ্জাদ ইন্টারভ্যু দিতে ঘরে ঢুকেছে

সাজ্জাদ ইন্টারভ্যু দিতে ঘরে ঢুকেছে। প্রায় হলঘরের মত বড় ঘর। নিশ্চয়ই ছোটখাট কনফারেন্স টিনফারেনাস হয়। ঘরের মাঝখানে কনফারেন্স টেবিলের মত গোল টেবিল। একটা পাশ বুড়ো এবং আধাবুড়োরা দখল করে আছেন। এঁরাই ইন্টারভ্যু নেবেন। সাজ্জাদ চট করে গুণে ফেলল–সাতজন। একটা করে প্রশ্ন করলেও সাতটা প্রশ্ন। সাতজনই চেষ্টা করবে। এমন প্রশ্ন করতে যেন প্রশ্ন শুনে শুধু যে সাজ্জাদই ভাবাচেকা খেয়ে যাবে তা না–ইন্টারভ্যু! বোর্ডের অন্য মেম্বারেরাও ভাবাচেকা খেয়ে যাবেন। প্রশ্নকতাঁর গভীর জ্ঞান, গভীর প্রজ্ঞায় অভিভূত হবেন। দু একজন থাকবে যাদের ধারণা তারা মহা রসিক।

সাজ্জাদ মাঝখানে বসা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল, স্লামালিকুম। তার কাছে মনে হল আজকের এই ইন্টারভ্যু। বোর্ডের তিনিই প্রধান। ভদ্রলোক সোজা হয়ে বসলেন, এবং বললেন, সিট ডাউন ইয়ং ম্যান। তুমি যে বললে স্লামালিকুম এটা কি ঠিক হল? শব্দটা আমি যতদূর জানি–আসসালামুআলাইকুম। যার অর্থ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। স্লামালিকুমের অর্থ কি?

সাজ্জাদ লক্ষ্য করল প্রশ্নটা করতে পেরে ভদ্রলোক আনন্দিত। প্রথম প্রশ্নতেই শক্ৰ ঘায়েলের আনন্দ। সাজ্জাদ মনে মনে বলল–অফ যা বেকুব।

ইয়াং ম্যান, বল বিকৃত শব্দ বলার মানে কি? এই শব্দ দিয়ে তুমি কি বুঝাতে চাইছ? আনসার মি।

সাজ্জাদ হাসিমুখে বলল, এই শব্দের মানেও আপনার উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক। আমরা মূল শব্দটাকে একটু ছোট করে নিয়েছি। এরকম আমরা সব সময় করি। রবার্টকে বলি বব। রবার্ট কেনেডির জায়গায় বলি বব কেনেডি। বাংলা শব্দের অনেক উদাহরণও আমি দিতে পারব। শব্দ ছোট করায় আমার বলতে সুবিধা হচ্ছে। এটাই আসল কথা। আমি জানি এই শব্দ দিয়ে আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি–আপনিও জানেন। কাজেই সমস্যা হচ্ছে না। আপনি যদি আরবের অধিবাসী হতেন তাহলে স্লামালিকুম শুনে হকচকিয়ে যেতেন, এর অর্থ ধরতে পারতেন না–কিন্তু আপনি তো আরবের লোক না।

ইন্টারভ্যু বোর্ডের চেয়ারম্যানের চোখ সরু হয়ে গেল। তাঁর এটি খুবই প্রিয় প্রশ্ন। সবাইকে তিনি এই প্রশ্ন দিয়ে কাত করেন এবং শেষে মধুর ভঙ্গিতে বলেন–এখন থেকে বিকৃত ভঙ্গিতে সালাম দেবে না। ঠিক আছে? এই প্রথম একজনকে পাওয়া গেল যে নিজেকে ডিফেন্ড করল এবং বলা যেতে পারে ভালভাবেই করল। ডিফেন্সেরর পদ্ধতি যদিও খুবই উগ্র। তিনি গলা খাকাড়ি দিয়ে বললেন–ইয়াং ম্যান, তুমি যুক্তি ভালই দিয়েছ। তবে নিজের ফাঁদে নিজে পা দিয়েছ। এক্ষুণি তোমাকে মহাবিপদে ফেলে দিতে পারি–যাই হোক, । spared you the trouble, আপনাদের কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে জিজ্ঞেস করুন।

বোর্ডের দ্বিতীয় ব্যক্তি গলা লম্বা করলেন। সাজ্জাদের মনে হল, একটা শুকনা হলুদ রঙের কচ্ছপ তার খোলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করল। অনেকখানি বের করল।

সাজ্জাদ হোসেন সাহেব।

জ্বি স্যার।

বাংলাদেশকে আপনি কি আন্ডার ডেভেলপড কান্ট্রি বলে মনে করেন?

করি স্যার।

আমাদের দেশের অনগ্রসরতার পেছনে কারণ কি বলে আপনার ধারণা?

কারণ তো একটা না, অনেক।

কারণ অনেক হলেও মূল কারণ কিন্তু একটি–সেটা কি?

মূল কারণ একেকজন একেকভাবে চিহ্নিত করবেন। আমার নিজের ধারণা অশিক্ষা।

সাজ্জাদ সাহেব, আপনি কি মনে করেন এই দেশের সব মানুষ যেদিন ইন্টমিডিয়েট পাশ করবে। সেদিন দেশ অনেকদূর অগ্রসর হয়ে যাবে?

বোর্ডের সবাই হো হো করে হেসে উঠল। প্রশ্নটার ভেতর হাসির কি আছে সাজ্জাদ ধরতে পারল না। সে মনে মনে বলল ব্যাটা কচ্ছপ তোর পানির ভেতর থাকার কথা–তুই এখানে কি করছিস? তুই তোর কচ্ছপকে নিয়ে নদীর পাড়ে চলে যা। কচ্ছপ ডিম পাড়বে। বালির ভেতর ডিম লুকিয়ে রাখবে। তুই সেই ডিম পাহারা দিবি।

সাজ্জাদ সাহেব, আমাদের ধারণা হয়ে গেছে— নানান সরকারী প্রপাগান্ডার জন্যেই ধারণা হয়েছে যে, অশিক্ষাই সব কিছুর মূলে। আসলে তা না। মূল ব্যাপার হল স্বপ্নের অভাব।

কিসের অভাব বললেন?

স্বপ্নের। আমাদের নেতারা এখন আর স্বপ্ন দেখতে পারছেন না। তারা রিয়েলিটি নিয়ে ব্যস্ত। আপনার কি মনে হয় না যে এই সময়ের নেতাদের কোন স্বপ্ন নেই?

আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। স্বপ্ন খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার। নেতাদের স্বপ্ন আছে কি নেই তা তাদেরই শুধু জানার কথা।

সাজ্জাদ সাহেব, আপনার নিজের কি কোন স্বপ্ন আছে?

জ্বি স্যার, আছে।

বলুন দেখি, কি স্বপ্ন।

আপনাদের শুনতে ভাল লাগবে না।

ভাল না লাগলেও শুনি। একজন মানুষকে সত্যিকারভাবে জানার উপায় হচ্ছে তার স্বপ্নটা জানা। শুনি, আপনার স্বপ্নটা কি শুনি।

সাজ্জাদ একটু ঝুঁকে গেল। কচ্ছপের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর হাসিমুখে বলল–আমার স্বপ্ন হচ্ছে আশ্রম করা। বর্ষা আশ্রম।

কি আশ্রম?

বর্ষায় সেই আশ্রমে বর্ষা উৎসব হবে। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বর্ষার নব্যধারা জলে ভিজতে ভিজতে নাচবে। নগ্ন নৃত্য।

নগ্ন নৃত্য?

জি, নগ্ন নৃত্য।

তাতে লাভ কি?

স্বপ্ন কি স্যার লাভ লোকসান দেখে চলে? রিয়েলিটি লাভ-লোকসান বিবেচনা করে। স্বপ্ন করে না।

বোর্ড মেম্বারদের মুখ গম্ভীর হয়ে গেলো। বোর্ডের চেয়ারম্যান সাহেব অকারণে কয়েকবার গলা খাকাড়ি দিলেন। সাজ্জাদ বসে আছে চুপচাপ। স্যার আজ তাহলে আসি এই বলে বিদায় নেয়াটা অভদ্রতা হবে কি-না বুঝতে পারছে না। বোর্ডের শেষ মাথার এক ভদ্রলোক নড়াচড়া করছেন। জ্ঞানগর্ভ কোন প্রশ্ন করার প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে। সাজ্জাদ তাকালো তার দিকে। ইনি সম্ভবত সায়েন্সের প্রশ্ন করবেন। বোর্ড মেম্বারদের একজন থাকেন সায়েন্টিস্ট। তিনি বিজ্ঞানের জটিল প্রশ্ন হাসিমুখে করেন। তাকে একবার একজন জিজ্ঞেস করেছিল–হাইজেনবার্গের আনসারাটিনিটি প্রিন্সিপ্যালটা কি? এমনভাবে জিজ্ঞেস করল যেন সে নিজেই হাইজেনবার্গ।

সাজ্জাদ সাহেব।

জ্বি স্যার।

আপনি যেতে পারেন।

জ্বি আচ্ছা।

সাজ্জাদ হাসিমুখে বের হয়ে এল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার ঘরে ঢুকে চেয়ারম্যান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার, আপনাদের বাথরুমটা কোন দিকে? আমার একটু বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন।

চেয়ারম্যান সাহেব হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে তিনি গভীর বেদনা বোধ করছেন। যে বেদনার উৎস সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই।

 

বিকেলে আতাহার সাজ্জাদ বাসায় ফিরেছে কি-না জানতে এসে হকচকিয়ে গেল। বিশাল আম গাছ সাজ্জাদদের বাড়িতে পড়ে আছে। জানালার কাচ ভেঙ্গে একাকার।

আতাহার বিস্মিত হয়ে নীতুকে বলল, ব্যাপার কিরে?

নীতু বলল, ঝড়ে গাছ পড়ে গেছে?

ঝড় কখন হল যে গাছ পড়ে যাবে?

বলেন কি আপনি, কাল প্ৰচণ্ড ঝড় হল না?

বৃষ্টি হয়েছে–সামান্য বাতাসও হয়ত হয়েছে–এটাকে ঝড় বললে তো ঝড়ের অপমান। তোর হাতে ব্যাণ্ডেজ কি জন্যে। ঝড় কি হাতের উপর দিয়েও গেছে?

হুঁ।

হুঁ মানে কি?

হুঁ মানে জানালা ভাঙা কাচে হাত কেটে গেছে।

বলিস কি? বিনা মেঘে বজুপাত, এখন দেখছি বিনা মেঘে রক্তপাত।

সব কিছু নিয়ে ঠাট্টা করবেন না।

সাজ্জাদ। সাজ্জাদের কোন খোঁজ পাওয়া গেছে?

ভাইয়া এসেছে। ইন্টারভ্যু দিতে গেছে।

ইন্টারভ্যু দিয়ে কি বাসায় ফিরবে, না উধাও হয়ে যাবে?

সে তো আর আমি জানি না। ভাইয়া জানে। আপনি কি অপেক্ষা করবেন ভাইয়ার জন্যে?

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারি।

আপনাকে একা একা অপেক্ষা করতে হবে। আমি একটু হাসপাতালে যাব।

বাবা হাসপাতালে। উনাকে নিয়ে আসতে যাব।

উনি আবার হাসপাতালে কখন গেলেন?

আপনার এত প্রশ্নের জবাব দিতে পারব না। আপনি বসে অপেক্ষা করুন। ভাইয়ার ঘরে গিয়ে বসুন। আপনাকে চা দিতে বলি।

হাসপাতালে যাচ্ছিস তো এমন সাজগোজ করেছিস কেন? মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিস।

নীতু আহত গলায় বলল, সাজগোজের কি দেখলেন? ইস্ত্রি করা একটা শাড়ি শুধু পরেছি। আমার চেহারা খারাপ বলে আমি একটা ভাল শাড়িও পরতে পারব না? আমাকে সব সময় ময়লা আর কম দামী শাড়ি পরে ঘুরঘুর করতে হবে?

একসঙ্গে অনেকগুলি কথা বলতে গিয়ে নীতুর গলা ধরে গেল। তার চোখ ও ভিজে আসছে। আতাহার হকচুকিয়ে গেল। কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। মেয়েট। যতই বড় হচ্ছে ততই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠছে। এর সঙ্গে আর ঠাট্টা-তামাশা করা ঠিক হবে না। সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার। এই জাতীয় মেয়েরা বড় ভাইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে প্রেম করার জন্যে পেখম মেলে থাকে। নীতুও হয়ত পেখম মেলে আছে। ভাবভঙ্গি সেরকমই। আগেই সাবধান হওয়া উচিত ছিল। মনে হয় দেরি হয়ে গেছে।

প্রথমে ছিল। টিউমার। বেনাইন টিউমার–এখন ক্যানসারাস হয়ে যাচ্ছে। অপারেশন করে কেটে বাদ দিতে হবে। কিংবা শক্ত ঝাঁকি দিতে হবে। প্রেম-প্ৰেম ভাব ঝেঁটিয়ে বিদেয় না করলে পরে সমস্যা হবে। আতাহার ধমকের গলায় বলল, কাঁদছিস কেন?

কাঁদলেও আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?

কৈফিয়ত দেয়াদেয়ির কিছু না–কথায় কথায় ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ–চেহারা তো এমিতেই খারাপ, তার উপর যদি স্বভাব-চরিত্র খারাপ কবিস, তা হলে তো বিয়েই হবে না। পেকে ঝানু হয়ে যাবি, বিয়ে হবে না।

এমন অশালীন ভাষায় কথা বলেন কেন?

যা সত্যি তাই বলি–শালীন-অশালীন কিছু না। কোন ছেলের দায় পড়েনি ফ্যাঁচফ্যাচালি মেয়ে বিয়ে করবে।

আমার বিয়ে নিয়ে তো আপনাকে ভাবতে বলিনি। না-কি বলেছি? না—কি আপনার ধারণা হয়েছে। আমি আপনার প্রেমে হাবুড়ুবু খাচ্ছি? আমি দেখতে সস্তা ধরনের হতে পারি–আমার প্রেম সস্তা হবে কেন?

ওরে বাপরে, তুই তো ভয়াবহ ডায়ালগ দিচ্ছিস।

ভাল ভাল ডায়ালগ শুধু আপনি দিতে পারবেন? আমার দায়িত্ব শুধু শুনে যাওয়া? আপনার দোষ কি জানেন আতাহার ভাই? আপনার দোষ হচ্ছে নিজেকে আপনি মহাজ্ঞানী ভাবেন। মহাবুদ্ধিমান ভাবেন। আপনি মহাজ্ঞানীও না, মহাবুদ্ধিমানও না।

আমি তাহলে কি?

আপনি অতি সাধারণ একজন মানুষ। অপদাৰ্থ ধরনের মানুষ। এম. এ. পাশ করে বসে আছেন। কাজকর্ম কিছুই জোগাড় করতে পারেননি। সিন্দাবাদের ভূতের মত এখনো বাবার ঘাড়ে চেপে আছেন। মনে মনে ধারণা করছেন যে আপনি বিরাট কিছু— মহাকবি। আসলে কিছুই না। আপনি নিজে আসলে কি তা নিজে জানলে পৃথিবীতে বাস করতে পারবেন না। যেহেতু আপনার ধারণা। আপনি বিরাট সৃষ্টিশীল একজন মানুষ, সেহেতু বেঁচে আছেন।

তুই তো বিরাট বক্তৃতা দিয়ে ফেললি।

বক্তৃতা শেষ হয়নি–সবটা শুনুন। আপনি মানুষ হিসেবেও তুচ্ছ। তুচ্ছ কেন বলছি জানেন? সব মানুষের নিজের স্বাধীন সত্তা বলে একটা জিনিস থাকে। আপনার সেটা একেবারেই নেই। আপনার অভ্যাস হল অন্যের হুকুমে চলা। আমি ব্যাপারটা খুব ভালভাবে লক্ষ্য করেছি। ভাইয়া এবং আপনি যখন একসঙ্গে থাকেন, তখন ভাইয়া যা বলে আপনি রোবটের মত পালন করেন। আপনার মধ্যে আছে হুকুম তামিল করা স্বভাব। আমি নিশ্চিত, আপনার নিজের বাড়িতেও আপনার একই অবস্থা। আপনি হলেন ইয়েস স্যার টাইপ মানুষ। আরো খারাপ ভাবে বলতে বললে বলব, আপনি নিম্নশ্রেণীর চামচা।

নিম্নশ্রেণীর বলছিস কেন? চামচার আবার জাতিভেদ আছে না-কি?

অবশ্যই আছে। প্রথম শ্রেণীর চামচা হচ্ছে যারা স্বাৰ্থ সিদ্ধির জন্যে চামচার ভাব ধরে থাকে। আর তৃতীয় শ্রেণীর চামচা হচ্ছে তারাই যাদের জন্মই হয়েছে চামচা হিসেবে। আপনি হচ্ছেন তৃতীয় শ্রেণীর চামচা।

বলিস কি!

সত্যি কথা বললাম। হয়ত মনে কষ্ট পেয়েছেন। কষ্ট পেলেও কিছু করার নেই। অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম আপনাকে কথাগুলি বলব–সুযোগ হচ্ছিল না। আজ হল। যাই আতাহার ভাই।

চলে যাচ্ছিস?

হ্যাঁ। আপনার কিছু বলার থাকলে দু-তিন মিনিট অপেক্ষা করতে পারি।

সাজ্জাদের ঘর কি খোলা আছে?

হ্যাঁ, খোলা আছে। যান, অপেক্ষা করুন। আপনাকে যেন সময়মত চা-টা দেয় বলে যাচ্ছি।

তোর কি আসতে দেরি হবে?

কোন দরকার নেই, জিজ্ঞেস করলাম।

আমার আসতে দেরি হবে না। যাব। আর বাবাকে নিয়ে চলে আসব। তারপরেও অনেকখানি সময় পাবেন–এই সময়ে ভেবে-টেবে বের করুন কি করলে আমি কষ্ট পাব। আমার চেহারা খারাপ এটা বলে বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। অসংখ্য মানুষের কাছে অসংখ্যবার শুনেছি। এখন আর শুনতে খারাপ লাগে না।

এ রকম মাস্টারনী টাইপ কথা কার কাছে শিখেছিস?

নিজে নিজেই শিখেছি। কেউ শেখায়নি। যাই আতাহার ভাই।

নীতু শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই গ্যারেজের দিকে গেলো। গ্যারেজে একটা দড়ির খাটিয়া পাতা আছে। তাদের ড্রাইভার সেই খাটিয়ায় সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে।

 

সাজ্জাদের ঘর ছবির মত গোছানো। তার প্রধান কারণ সাজ্জাদ তার এই ঘরে কমই থাকে। এ বাড়িতে তার অনেকগুলি শোবার জায়গা। প্রধান শোধার জায়গা হচ্ছে ড্রয়িংরুমের সোফা। একটা লম্বাটে সোফা আছে জানালার পাশে। এই সোফায় শুয়ে থাকলে তার কাছে না-কি মনে হয় ট্রেনের বেঞ্চে শুয়ে আছে। ট্রেনের দুলুনিও না—কি টের পাওয়া যায়। একটাই সমস্যা–মশা। সাজ্জাদ সেই সমস্যার সমাধান তার নিজস্ব পদ্ধতিতে করেছে। পদ্ধতিটা সহজ–অন্ডিকোলন স্তেপ্র করা একটা দড়ির মাথায় আগুন ধরিয়ে সেই দড়ি জানালার দিকে ঝুলিয়ে দেয়া। দড়ি পুড়ে অডিকেলন এবং ধোয়ার একটা মিশ্র গন্ধ বের হয়। সেই গন্ধ না-কি মশাদের খুব প্রিয়। সব মশা সেই গন্ধের লোভে ভিড় করে। কাছেই যে মানুষটা শুয়ে থাকে তার দিকে নজর থাকে না।

সাজ্জাদের দ্বিতীয় পছন্দের শোবার জায়গা হচ্ছে ছাদের চিলেকোঠার ঘর। সেই ঘরের একটাই দরজা, জানালা-টানালার কোন বালাই নেই। একটা চৌকি এবং চৌকির উপর শীতল পার্টি বিছানো। জোছনা রাত কিংবা বৃষ্টির রাতে সাজ্জাদ ঐ চৌকিতে শুয়ে থাকে। কাজেই নীতু প্রচুর সময় পায় সাজ্জাদের ঘর গুছিয়ে রাখার। যে যত্ন এবং আগ্রহ নিয়ে সে এই ঘর গোছায় সেই যত্ন এবং আগ্রহ বোধহয় সে নিজের ঘর সাজানোর সময়ও বোধ করে না।

এই ঘরে জুতা পরে যাওয়া নিষেধ। দরজার সামনে জুতা খুলে রেখে ঢুকতে হবে। সিগারেটের ছাই ঘরের মেঝেতে ফেলা যাবে না। ঘরের আসবাবপত্র টানাটানি করে তাদের নির্ধারিত জায়গা থেকে সরানো যাবে না। এই মর্মে হাতে লেখা একটা নোটিশ দরজায় সঁাটা আছে। আতাহার নোটিশের তিনটি নিষেধাজ্ঞাই অমান্য করেছে। জুতা পায়ে ঘরে ঢুকে জুতার ময়লা মেঝেতে মাখিয়েছে। ঘরে ঢুকেছে বেশিক্ষণ হয়নি–এর মধ্যেই দুটা সিগারেট খেয়ে তার ছাই মেঝেতে ছড়িয়েছে। সাজ্জাদের কাবার্ড খুলে লুঙ্গি বের করে পরেছে। ফুল স্ফীডে ফ্যান ছেড়ে এখন সে বিছানায় কান্ত হয়ে আছে। পা রাখার জন্যে ভাল জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। সোফা টেনে এনে বিছানার সঙ্গে লাগিয়ে পা রেখেছে। তাতেও তার ঠিক আরাম হচ্ছে না। মনে হচ্ছে–পায়ের লেভেল সমান না হয়ে উঁচুনিচু থাকলে আরাম হত। তার হাতে হ্যারলর্ড পিন্টারের An Anthology of 100 poems by 100 poets, বইটা বালিশের কাছে রাখা ছিল বলেই সে হাতে নিয়েছে।

বইটির অনেক কবিতাই সবুজ এবং লাল মার্কারে দাগ দেয়া। কিছু কবিতার নিচে পেন্সিলে লেখা–বোগাস। সাজ্জাদের হাতের লেখা। বোঝাই যাচ্ছে বইটা তার খুব খুঁটিয়ে খুঁটি য়ে পড়া।

আতাহার চোখের সামনে যে কবিতাটি ধরে আছে তা উইলিয়াম ব্লেকের লেখা–The mental traveller, কবিতার উপর সাজ্জাদের লেখা নোট–মন্দ নয়। বঙ্গ ভাষায় ট্র্যান্সফার করা যেতে পারে।

I travelled thro a Land of men.
A Land of Men and Women too.
And heard and saw such dreadful things
As cold Earth wanderers never knew …

কি রকম হতে পারে এর বঙ্গানুবাদ, আতাহার চোখ বন্ধ করে ফেলল–গদ্য হলে আক্ষরিক অনুবাদের প্রশ্ন উঠতো, যেহেতু কবিতা–মূলের কাছাকাছি থাকতে পারলেই যথেষ্ট। ভাবটা ধরা নিয়ে কথা।

মানবের মাঝে আমি পথ হাঁটিয়াছি
সেই পথে মানবীও ছিল।
শুনিয়াছি দেখিয়াছি যাহা…

হচ্ছে না। জীবনানন্দ টাইপ হয়ে যাচ্ছে। পথ হাঁটিতেছি? মানব-মানবী এইসব জীবনানন্দ ব্যবহার করে করে লেবু, কচলে শুধু তিতা না বিষ বানিয়ে ফেলেছেন–নতুন কিছু করতে হবে। জীবনানন্দের কেঁথা পুড়ি। বার্ন দ্যা ব্লাঙ্কেট অব জীবনানন্দ। কবিতা হবে অমাতাহারানদের মত।

প্রান্তরের পথে ছিল মানব ও মানবী।

উহুঁ, হচ্ছে না। মূল কবিতায় পর্যটকের ক্লান্তি টের পাওয়া যায়। কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয়–কবি ক্লান্ত–সেই ক্লান্তি অনুবাদে উঠে আসতে হবে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই জিনিস ঠিক করা যাবে না। পথে পথে হাঁটতে হবে। কবির ক্লান্তি নিজের মধ্যে অনুভব করতে হবে। আতাহারের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মেজাজ খারাপের প্রধান কারণ হল–মাথার ভেতর উইলিয়াম ব্লেকের এই কবিতার লাইনগুলি বো বৌ করে ঘুরছে।

একটা সুন্দর এবং ভাল অনুবাদ না হওয়া পর্যন্ত লাইনগুলি মাথা থেকে সরানো যাবে না। কবিতার বইটা হাতে নেয়া বড় রকমের বোকামি হয়েছে।

আতাহার ভাই! আপনার চা।

আতাহার বই নামিয়ে রাখল। বিরক্ত মুখে বলল, তোর না হাসপাতালে যাবার কথা, যাসনি?

গিয়েছি। বাবাকে নিয়ে ফিরেও এসেছি। বাবা আপনাকে ডাকছেন। চা খেয়ে নিচে যান।

মাই গড! আমার খুব জরুরি কাজ আছে—বুঝলি নীতু, সাতটার মধ্যে না গেলেই না।

বাবাকে সেটা বুঝিয়ে বলে সাতটার মধ্যে চলে যাবেন। অসুবিধা কি?

উনার কাছে গেলে তিন-চার ঘন্টার আগে ছাড়া পাব না। তুই আমাকে উদ্ধার করে দে। দরকার হলে তোর পা ধরতে রাজি আছি।

বেশ তো, পা ধরুন।

আতাহার ঝট করে নিচু হয়ে নীতুর পায়ের পাতায় হাত রাখল। নিতু হতভম্ব হয়ে গেল। হতভম্বর ভাব কাটতেই শীতল গলায় বলল, ছিঃ আতাহার ভাই! ছিঃ! এইসব কি?

আতাহার নিজেও এখন খানিকটা অপ্রস্তুত বোধ করছে। কাণ্ডটা অনুচিত হয়েছে। এবং এমন একটি অনুচিত অস্বাভাবিক কাণ্ড সে কেন করলো নিজেই বুঝতে পারছে না। অপ্রস্তুত ভাবটা কাটানোর জন্যে কি করা উচিত তাও বুঝতে পারছে না।

নীতু থর থর করে কাঁপছে। মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে। বাচ্চা একটা মেয়েকে ভয় পাওয়ানোর কোন মানে হয়?

নীতু বলল, চা খেয়ে নিচে যান। বাবা আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন। সাতটা বাজিলে উঠে চলে যাবেন। বাবা তো আপনাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখবেন না যে উঠতে পারবেন না। নীতু চায়ের কাপ চেয়ারে নামিয়ে রেখে চলে গেল। চা দিয়ে নীতু এভাবেব কখনো যায় না। দাঁড়িয়ে থাকে। চায়ের কাপে প্রথম চুমুকটি দেয়ার পর জিজ্ঞেস করে, চিনি-টিনি সব কি ঠিক আছে? আজ কিছুই জিজ্ঞেস করল না। বিষণ্ণ ও মন খারাপ ভাব করে ঘরে থেকে বের হয়ে গেল।

 

হোসেন সাহেব মেরুদণ্ড সোজা করে সোফায় বসে আছেন। তাঁর দুটি হাত সোফার দুই হাতলে রাখা। তার বসার ভঙ্গিতেই মনে হচ্ছে তিনি খুব আনন্দে আছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার আনন্দে তিনি এই মুহুর্তে অভিভূত। হাসপাতালের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা কাউকে এখনো বলতে পারছেন না, এটা আরাম করে বলার মত বিষয়। সমস্যা হয়েছে টেলিফোনটা নষ্ট। ঝড়ে টেলিফোনের লাইনে কিছু হয়েছে। প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে টেলিফান থাকবে না। এটা তো জানা কথাই।

আতাহার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, চাচা, এখন আপনার শরীর কেমন?

হোসেন সাহেব তৃপ্ত মানুষের মত হাসলেন। তারপর গলার স্বরে যথাসম্ভব দার্শনিক ভাব নিয়ে এসে বললেন, টিকে যে আছি। এটাই একটা মিরাকল। লোকে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসে। আমি দরজার ভেতর ঢুকে পড়েছিলাম–সেখান থেকে ফেরত এসেছি। বাবা বোস–সামনের সোফাটায় বোস–অভিজ্ঞতার কথা শোন। তুমি প্রথম ব্যক্তি যাকে বলছি…।

আতাহার বিমর্ষ মুখে বসল। সে একটা ব্যাপার ভেবে পাচ্ছে না, হোসেন সাহেবের মত নিতান্ত ভালমানুষ এমন ভয়ংকর বোর কি করে হন। ভদ্রলোক কথা সুন্দর করে বলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা প্রচুর, কখনো রাগ করেন না। আতাহারকে দেখেন নিজের ছেলের মতই, তারপরেও ভদ্রলোকের সামনে বসতে হবে মনে হলেই হাত-পা অবশ হয়ে আসে কেন? এর রহস্যটা কি?

আতাহার!

জ্বি চাচা।

তোমরা কবি-সাহিত্যিকরা হৃদপিণ্ডটাকে এত গুরুত্ব কেন দিয়েছ?

গুরুত্ব তো চাচা দেইনি।

দিয়েছ। তোমরা মনে কর–মানুষের আবেগের আবাসস্থল হচ্ছে–হৃদপিণ্ড, হার্ট। এর কারণ কি জানা? এর কারণ হচ্ছে শরীরের এই মাংসপিণ্ডটাই সারাক্ষণ কঁপে। আমৃত্যু ধূক ধূক করছেই। মানুষ এই কম্পন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

আতাহারের হাই উঠছে। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে হাই তুলবে, না সরাসরি অভদ্রের মত হাই তুলবে তা বুঝতে পারছে না।

আতাহার!

জ্বি চাচা।

হৃদপিণ্ডের এই ধুকধুকনি বন্ধের ব্যাপারটা যে কি তা টের পেলাম। অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা।

আপনার এই অভিজ্ঞতার কথা সময় নিয়ে শুনতে হবে। আরেকদিন এসে আরাম করে শূনব চাচা।

তোমার কি কোন কাজ আছে?

সাতটার সময় খুব জরুরি একটা কাজ আছে। তবে জরুরি হলেও আপনার কথা শোনার চেয়ে জরুরি নয়। আপনার কথা এখন শুনতে চাচ্ছি না–কারণ আপনার এখন দরকার রেস্ট। কমপ্লিট রেস্ট। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে বই পড়ুন–কিংবা টিভি দেখুন। শরীর সুস্থ হলেই একদিন এসে আপনার কথা শুনব।

শরীর এখন সুস্থই আছে।

আপনি বললে তো চাচা হবে না। হাটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ঘুরে এসেছেন। আপনার মনের জোর অসাধারণ বলে আপনি বলছেন শরীর সুস্থ আছে। আমি তো বুঝতে পারছি…

মনের জোরের কথা বলায় একটা ঘটনা মনে পড়ল–নাইনটিন সিক্সটি টুর কথা। আমি আর তোমার চাচী ঢাকা থেকে রংপুর যাচ্ছি–তখন রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। ফোর হুইলার একটা জোগাড় হয়েছে। ড্রাইভারের নাম–কিসমত। চব্বিশ পরগনায় বাড়ি। চল্লিশের মত বয়স, তবে স্ট্রং এণ্ড স্টউট। ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি ভোর ছটায়। কার্তিক মাস–কুয়াশা পড়েছে …

আতাহার হাই তুলল। গল্পের মাঝখানে ঝাঁট করে উঠে দাঁড়িয়ে বিদেয় হয়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। বসে বসে গল্প শোনাও সম্ভব না।

আমরা আরিচা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে গেলাম। আরিচা ঘাটে পৌঁছার পর কিসমত বলল, তার পেটে সামান্য ব্যথা করছে। একটা সোড়া খাবে। সোডা খেলে ব্যথা কমবে। তখন দেশে কোক, সেভেন আপ এইসব ছিল না। সোডা পাওয়া যেত–আট আনা করে দাম। আমি তাকে একটা টাকা দিলাম সোডা কিনতে।

অন্য সময় নীতু তাকে উদ্ধার করত। আজ করবে না। শুধু আজ কেন, ভবিষ্যতেও হয়ত করবে না। আতাহারকে অনন্তকাল ধরে গল্প শুনে যেতে হবে।

ফেরি চলে এসেছে। সবাই গাড়ি নিয়ে ফেরিতে উঠছে। কিসমতের দেখা নেই। আমি তোমার চাচীকে গাড়িতে বসিয়ে কিসমতের খোঁজে বের হলাম। কোথাও নেই। একটা জলজ্যান্ত লোক তো ভ্যানিশ হয়ে যেতে পারে না–তাই না?

তা তো ঠিকই।

আমি খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলাম। তখন একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার হল,  হোসেন সাহেব অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা বলতে যাবেন এই সময় নীতু সরবতের গ্লাস নিয়ে ঘরে ঢুকল। হোসেন সাহেবের সামনে সরবতের গ্লাস নামিয়ে রাখতে রাখতে বলল, বাবা, আতাহার ভাই তার এক আত্মীয়কে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাবেন–তুঁমি তাকে আটকে রেখেছ।

সরি সরি। ভুল হয়েছে। খুব ভুল হয়েছে। নীতু মা, ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল। ড্রাইভার তাকে এয়ারপোর্ট দিয়ে আসুক।

চাচা, কোন দরকার নেই।

অবশ্যই দরকার আছে। এই মূহুর্তে আমার গাড়ির প্রয়োজনও নেই। আমি তো আর কোথাও যাচ্ছি না। আমি বলতে গেলে গ্রাউন্ডেড। নীতু মা, ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল।

উনি নিতে চাচ্ছেন না। যখন, থাক। আমি গাড়ি নিয়ে ছোট খালার কাছে যাব।

গাড়ি ফিরে এলে তুই যাবি। ইমার্জেন্সি তো না। যা, ড্রাইভারকে বলে দে।

নীতু ড্রাইভারের খোঁজে। গ্যারেজের দিকে যাচ্ছে। আতাহার যাচ্ছে তার পেছনে পেছনে। গাড়ির আইডিয়োটা আতাহারের এখন ভাল লাগছে। মন্দ কি–খানিকক্ষণ ঘোরা যাক গাড়ি নিয়ে। এয়ারপোর্টে যাবে–ফিরে আসবে। গাড়ি থেকে নামবে না। হাইওয়েতে ফুল স্পীডে গাড়ি নিয়ে ঘেরা আনন্দদায়ক হবার কথা।

গাড়ি নিয়ে ময়না ভাইয়ের কাছেও যাওয়া যায়। প্রতিদিন একবার করে খোঁজ নিতে বলেছেন। গত দুদিন কোন খোঁজ নেয়া হয়নি। তবে পাসপোর্ট করা হয়েছে এবং পাসপোর্ট তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। দুই লাখ টাকার এখনো কোন ব্যবস্থা হয়নি। ব্যবস্থা হবার কোন রকম সম্ভাবনাও সে দেখছে না।

নীতু আতাহারের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল, আতাহার ভাই, আজ আপনাকে খুব কঠিন কঠিন কথা বলেছি। আমার খুব খারাপ লাগছে।

বলেছিস ভাল করেছিস। কথায় কথায় এ রকম খারাপ লাগলে চলবে?

আপনি যদি মনে কষ্ট পেয়ে চলে যান। তাহলে সারারাত আমার ঘুম হবে না।

আতাহার সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, তোর কথাবার্তা ভাবভঙ্গি মোটেই সুবিধার লাগছে না। ঠিক করে বল তো–তুই কি আমার প্রেমে পড়ে গেছিস?

নীতু আতাহারকে স্তম্ভিত করে দিয়ে বলল, হ্যাঁ।

আতাহার। ভীত গলায় বলল, ভয়াবহ এই ঘটনাটা ঘটল কবে?

নীতু তার জবাব দিল না। ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে সে প্রায় পালিয়ে গেল।

গাড়িতে উঠে আতাহারের ঘুম পেয়ে গেলো। ভাল ঘুমি। চোখের পাতা মেলে রাখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থা। এয়ারপোর্টের রাস্তাটা সুন্দর করেছে। দুপাশে বিদেশী কোন গাছ লাগিয়েছে। ফার্মের মুরগির মত ফর্মের গাছ দ্রুত বড় হচ্ছে। কি নাম এই গাছগুলির?…বিদেশী জিনিসপত্রের মত বিদেশী গাছপালাতেও দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। আম-কঁঠালের গাছ এখন আর কেউ রাস্তার দুধারে লাগায় না। আম-কাঁঠালের সংস্কৃতি হচ্ছে–গ্রাম্য সংস্কৃতি। এখন দেবদারু, পাইন এবং উইলী বৃক্ষের সংস্কৃতি চর্চা হবে। নতুন সংস্কৃতির কথা ভাবতে ভাবতে আতাহার ঘুমিয়ে পড়ল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *