সকাল সাড়ে আটটার সময় মনে হল, সুব্রতর একটা কিছু গন্ডগোল রয়েছে। পরীক্ষার কয়েকদিন ধরেই সে ভোর বেলা জেগে উঠে পড়তে বসছিল। ঠিক ছ-টার সময় তার চা দরকার। আজ সকালে মা তিন বার চা নিয়ে ফিরে এসেছেন। সুব্রত জাগেনি। হয়তো সারারাত জেগে পড়েছে, এইকথা ভেবে বেশি ডাকাডাকি করেননি তিনি, কিন্তু সাড়ে নটার সময় যে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে যাবে সে সাড়ে আটটাতেও জাগবে না, এ কী করে হয়।
স্বামীকে কিছু বলতে সাহস পান না। এক ছেলের ব্যাপারেই তাঁর শিক্ষা হয়ে গেছে। বাপ ছেলের কী সাংঘাতিক ঝগড়া, যেন দুই ক্রুদ্ধ দৈত্য। সেই ছেলে সেই যে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, আর ফিরল না। এ ব্যাপারটাও তিনি মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন, স্বামীকে কখনো গঞ্জনা দেননি। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই সমস্ত পুরুষের পুরষকারের কাছে স্নেহ-মমতার দাম খুব বেশি নয়। কিন্তু সুব্রতকে তিনি আড়াল করে রাখতে চান।
মেয়ে বাসন্তী কয়েকদিন হল বাপের বাড়িতে এসে আছে। বাসন্তীর ছেলে মণিময় বেশ চটপটে। মা বাসন্তীকে বললেন, দেখ তো খোকনের কী হয়েছে?
জানলাটাও ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। মণি খড়খড়ির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ছিটকিনিটা খুলে ফেলল অতিকষ্টে। জানলা দিয়ে দেখা গেল, বিছানার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে সুব্রত। সেই শুয়ে থাকার ভঙ্গি দেখলেই ভয় হয়।
দরজা ভাঙতে গেলে খুব শব্দ হবে। নিশানাথকে এক্ষুনি কেউ কিছু জানাতে চায় না। মা আর বাসন্তী ব্যাকুলভাবে ডাকতে লাগলেন সুব্রতর নাম ধরে। মণি এক মগ জল এনে জানলা থেকে ছুড়ে দিল ভেতরে। সুব্রতর ঘুম তো এত গাঢ় নয়!
মণিই একটা বুদ্ধি বার করল। পাশের বস্তিতে কয়েক ঘর ছুতোর মিস্ত্রি থাকে। তাদের একজনকে ডেকে যদি দরজাটা বাইরে থেকে খুলে ফেলা যায়।
নিশানাথ তখন বাথরুমে। সেইফাঁকে মণি ছুতোর মিস্ত্রি ডেকে আনল। মা কাঁদতে বসে গেছেন, কিন্তু শব্দ করতে পারছেন না। মণিই তাকে সান্ত্বনা দিল, দিদু, তুমি ঘাবড়াচ্ছ কেন? ছোটোমামু নিশ্চয়ই অজ্ঞান হয়ে গেছে। ক-দিন ধরেই পেটে ব্যথা হচ্ছিল, তুমি জানো না? বাসন্তী তখনও জানলার শিক ধরে পাগলের মতন চেঁচিয়ে যাচ্ছে, এই খোকন, খোকন ওঠ, এই খোকন, খোকন–
ঘ্যাস ঘ্যাস করে করাত চালিয়ে ছুতোর মিস্তিরি যখন দরজায় খানিকটা গর্ত করে ফেলেছে, সেই সময় নিশানাথ পেছনে এসে দাঁড়ালেন। শুধু একটা তোয়ালে পরা, ভিজে গা, মাথার চুল থেকে জল পড়ছে টপটপ করে।
বিস্মিতভাবে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
কেউ কোনো উত্তর দিল না।
জানলা দিয়ে একবার উঁকি মেরেই তিনি ব্যাপারটা আন্দাজ করলেন। কঠোরভাবে বললেন, তোমরা কী পাগল? আমাকে ডাকতে পারনি?
দড়াম দড়াম করে দরজায় লাথি মারতে লাগলেন নিশানাথ। চার-পাঁচটি তাঁর সেই রাম লাথিতেই দরজার খিল খুলে পড়ল। সকলে হুড়মুড় করে ঢুকে এল ভেতরে। মা দৌড়ে সুব্রতর মাথাটা কোলে তুলে নিলেন, বাসন্তী চোখের পাতা টেনে খুলল, কী ঠাণ্ডা সুব্রতর গা।
নিশানাথ সকলকে ঠেলে সরিয়ে সুব্রতর শরীরটা বিছানা থেকে তুলে কাঁধের ওপর নিলেন। মা এবার শব্দ করে ডুকরে কেঁদে নিশানাথের জানু চেপে ধরে বললেন, ওগো, তুমি ওকে কিছু বোলো না, ওকে কিছু কোরো না।
মণি ততক্ষণে ছুটে গেছে পাড়ার ডাক্তারের কাছে। তিনি বললেন, আগে অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করো। আচ্ছা দাঁড়াও, আমিই দেখছি।
বাসন্তী ইতিমধ্যে খাটের তলা থেকে বার করেছে ঘুমের ওষুধের শিশি। টেবিলের ওপর একটা প্যাডে সুব্রত কিছু লিখেছিল আবার খুব যত্ন করে কেটে দিয়েছে। আত্মহত্যা করার আগে শেষ চিঠির ভাষাটা সে খুঁজে পায়নি।
অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছোবার আগে নিশানাথ ছেলের শরীরটা কাঁধে নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন। মুখটা রাগে থমথমে। তখনও তোয়ালে পরা, খালি গা। কেউ তাঁর সঙ্গে একটাও কথা বলতে সাহস করছে না। শুধু মণি তার দিদিমার কানে কানে বার বার শোনাচ্ছে, এখন প্রাণ আছে, ডাক্তারবাবু বলেছেন।
সেই অবস্থাতেই নিশানাথ হাসপাতালে চলে এলেন। এমারজেন্সি বিভাগের ডাক্তারের হাত চেপে ধরে ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি শুধু বলুন। বাঁচবে কি না!
খালি-গা একটি লোকের ভিজেহাতের স্পর্শ ডাক্তার পছন্দ করলেন না। হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। বজ্রমুষ্টি।
তখন তিনি হেসে বললেন, হাতটা ছাড়ন, না-হলে দেখব কী করে?
হাসপাতালে ছত্রিশ ঘণ্টা যুদ্ধ চলল সুব্রতর প্রাণটা টিকিয়ে রাখার জন্য। পাম্প করে তার পেট থেকে কিছু বার করে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরেই সে এমন দুর্বল হয়ে পড়ে যে যেকোনো সময় কোলাপস করতে পারে।
সুব্রত যখন হাসপাতালে অচৈতন্য, সেই সময়ই, বিকেল বেলা নিশানাথ জানতে পেরে গেলেন যে, তাঁর ছেলে আগের দিন পরীক্ষার সময় টুকতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। এইসব খবর ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার লোকের অভাব হয় না।
ব্যাপারটা ঘটেছিল এইরকম। অনিন্দ্য আর তার দলবলের চাপে পরীক্ষা ঠিকমতনই শুরু হয়েছিল। অরবিন্দ সুখময়রাও বাধ্য হয়েছিল পরীক্ষার বসতে। তারা এমন সাড়ম্বরে টোকাটুকি শুরু করে দিল যে মনে হল, ওরা সব কটা পরীক্ষাই দেবে।
সুব্রত একটু ভীতু, সে বেশি টুকতে সাহস করে না। আবার, অরবিন্দরা বই এগিয়ে দিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ারও সাহস নেই।
বাইরের ভাড়া করা গার্ড দু-জন সর্বক্ষণ চোখ বুজে বসে থাকে।
অনিন্দ্যর সিট পড়েছে অন্য ঘরে, সুব্রত যদি সেই ঘরে থাকত, তা হলে সে, সেই দলেই ভিড়ে যেত। অনিন্দ্য টোকে না, তার দরকার হয় না। সুব্রত অরবিন্দদের ঘরে থাকায় সে ওদের সঙ্গে মিশে টোকাটুকি চালিয়ে যেতে লাগল। তাকে পাশ করতেই হবে।
দু-দিন ঠিকঠাক কেটে গিয়েছিল। তৃতীয় দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হঠাৎ একদল পরিদর্শক এসে যায়। গার্ড দু-জন তখন হঠাৎ তৎপর হয়ে ওঠে, কয়েকজনের কাছ থেকে খাতা কেড়ে নেয়। সুব্রতর কাছ থেকে খাতা কাড়তে এলে সে বিমূঢ় হয়ে যায়, চোখে জল আসে তার। কিন্তু অরবিন্দ সুখময়দের চোখে জল আসে না। অরবিন্দ গার্ডকে বলে, চোপ শালা! তারপর নিজের খাতাটা আবার ছিনিয়ে নেয়। সুখময় হাইবেঞ্চের ওপর লাফিয়ে উঠে বলে, শুয়োরের বাচ্চা, আমার খাতায় হাত দেবে তো, সব ঘুনচট করে দেব। বাপের নাম বৃন্দাবন করে দেব শালা!
হলের মধ্যে একটা লণ্ডভণ্ড কান্ড শুরু হয়ে যায়। যাদের খাতা কাড়া হয়েছিল তারা আবার খাতা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ঝটাপটি শুরু করে। সুব্রতও ভেবেছিল, এই সুযোগে সেও যদি খাতাটা ফেরত নিতে পারে, তাহলে বেঁচে যাবে। সে যখন তার খাতা নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়েই সুখময় একজন গার্ডকে ঘুসি মেরেছে এবং পরক্ষণেই সেখানে পুলিশ ঢুকেছে। সুখময় অনায়াসেই পালিয়ে যেতে পারে এবং সুব্রতর সঙ্গে আর কয়েকটি অপেক্ষাকৃত কাঁচা ছেলে ধরা পড়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই।
পুলিশ অবশ্য ওদের থানায় নিয়ে যায় না। এসব ক্ষেত্রে যা নিয়ম, গাড়ি করে খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। ততক্ষণে সুব্রতর আবার পরীক্ষা হলে ঢোকবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিকেল বেলা তাকে অনিন্দ্য বলল, যদি আর-এ না করে তাহলে একটা পেপার গেলেও তুই পরে ব্যাক পেয়ে যাবি, কাল থেকে আবার পরীক্ষা দিয়ে যা। সুখময়রা বলল, দেখব কাল পরীক্ষা দেয় কোন শালা। একদম ধুলো উড়িয়ে দেব না! কাল থেকে পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
অনিন্দ্য বলল, কেন বন্ধ থাকবে? আর কোনো সেন্টারে গোলমাল হয়নি!
সুখময় বলল, আমি বলছি বন্ধ থাকবে। আলবত থাকবে। সব সেন্টার বন্ধ করে দেব।
অনিন্দ্য তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল, যা, যা! তোর মুরোদ জানা আছে আমার।
সুখময় তেড়ে ঘুসি মারতে গেল অনিন্দ্যকে। অনিন্দ্য স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থেকে খপ করে ধরে ফেলল সুখময়ের হাত। তারপর বলল, দেব মুচড়ে?
বেশ ভিড় জমে গেছে। দেখা গেল, অনেকেই অনিন্দ্যর দলে। পরীক্ষা এমনিতেই সাত মাস পিছিয়ে আছে। বেশিরভাগ ছাত্ৰই এখন নিঝঞ্ঝাটে টোকাটুকি করে পরীক্ষাটা দিয়ে দিতে চায়। পরিদর্শকরা যখন এসেছিল, তখন সুখময়রা একটু চুপচাপ থেকে গেলেই তো পারত।
সুখময়ের নিজস্ব দলবল তখন সেখানে নেই। সে শাসিয়ে গেল, আচ্ছা কাল দেখে নেব। তোদের মতন ভালো ছেলের আমি ইয়ে যদি না মারি, তাহলে আমার নাম সুখময় বিশ্বাস নয়?
সুখময় সুব্রতর হাত ধরে টানল। সুব্রতর জামা ছিঁড়ে গেছে। ছাত্র ইউনিয়নগুলোর কাছে। সুব্রতকে নিয়ে গিয়ে দেখাতে হবে যে, তার ওপর পুলিশি অত্যাচার হয়েছে। যদি একটা স্ট্রাইক ডাকা যায়।
সুব্রতকে নিজের স্বার্থেই সুখময়দের দলে যেতে হল। এখন পরীক্ষা দিলেও সুব্রত পাশ করতে পারবে না। অনিন্দ্য তো দিব্যি বেরিয়ে যাবে।
সুখময়রা ঘুরতে লাগল দলবল সংগ্রহ করতে। চায়ের দোকানে, কফি হাউসে, বিভিন্ন পার্টি-অফিসে ছাত্রনেতাদের কাছে সুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে সুব্রত থমথমে মুখ। করে দাঁড়িয়ে থাকে আর সুখময়-অরবিন্দরা তার ওপর পুলিশি অত্যাচারের রোমহর্ষক কাহিনি শোনায়। ছাত্রনেতারা গরম হয়ে ওঠে, কিন্তু স্ট্রাইকের প্রশ্নে তক্ষুনি রাজি হয় না।
রাত নটা পর্যন্ত এ-রকম চলল। সুব্রত তখন রীতিমতন একটা দর্শনীয় বস্তু। তাকে ঘিরে রীতিমতন গুলতানি চলছে ধূতিকান্তদের বাড়িতে। ঠিক হয়েছে, কাল সকালে পরীক্ষার হলের সামনে সুব্রতকে দাঁড় করানো হবে টুলের ওপর। এই ছেড়া জামাটাই কাল পরে আসবে। অন্য ছেলেরা তাকে দেখিয়ে বক্তৃতা দেবে জ্বালাময়ী ভাষায়।
ন-টা বেজে দশ মিনিটে সুব্রত মন পালটাল। ধৃতিকান্তর মামা ডাক্তার। তাঁর প্যাড থেকে চারটে কাগজ চুরি করে সুব্রত চারখানা প্রেসক্রিপশন জাল করল। তারপর বউবাজার-পার্ক স্ট্রিটের ডাক্তারখানাগুলো ঘুরে ঘুরে জোগাড় করল চল্লিশটা ঘুমের বড়ি। রাত ঠিক একটার সময় শিখার কথা চিন্তা করতে করতে সে খেয়ে ফেলল সব কটা।
শেষ চিঠিটা সে শিখাকেই লিখতে চেয়েছিল, বাবাকে কিংবা মাকে নয়। কিন্তু এপর্যন্ত যেমন সে শিখাকে মুখেও কিছু বলতে পারেনি, সেইরকম চিঠিতেও কিছু লেখার কথা খুঁজে পেল না। মৃত্যুর প্রান্তে এসেও। শুধু তো ভালোবাসার কথা নয়। তার চেয়েও বেশিকিছু।
তিন দিন পর সুব্রত হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরল। শরীর এখনও বেশ দুর্বল, তা ছাড়া আর পরীক্ষা দেওয়ার অবশ্য কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সুখময়রা সুবিধে করতে পারেনি, প্রত্যেক হলে পুলিশ পাহারা ছিল, পরীক্ষা ঠিকঠাকই চলেছে। সুব্রতর একটা বছর গেল।
বাড়ির আবহাওয়া থমথমে। সেদিনের পর নিশানাথ ছেলের সঙ্গে আর একটাও কথা বলেননি। সকালবেলা খেয়ে-দেয়ে অফিসে বেরিয়ে যান, ফেরেন অনেক রাত্রে। মুখখানা বিমর্ষ। রাত্রে ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে ওঃ ওঃ শব্দ করে ওঠেন। সেটা ঠিক কষ্টের শব্দ নয়, ক্রোধের। যেন অতিকষ্টে রাগ সামলাচ্ছেন।
সুব্রত ঘুমের ওষুধগুলো খেয়েছিল ঝোঁকের মাথায়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেঁচে ফিরে আসার পর এখন সে সত্যিই ভাবতে শুরু করেছে, বেঁচে থেকে লাভ কী? সে তার বাড়ির কোনো কাজে লাগে না, পৃথিবীর কোনো কাজে লাগে না। সে একটা অপদার্থ। দুর্বল শরীরে সে ছাদের আলসে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাটা ঝিমঝিম করে। রোদের তাপও যেন শরীরটা সহ্য করতে পারে না, আবার একটু জোরে হাওয়া উঠলেই রোমকূপগুলো শিরশির করে।
একদিন রাত্রে বাড়ি ফিরে নিশানাথ বললেন, খোকন কোথায়? খোকনকে ডাকো।
সেই ঘটনার পর দশ দিন কেটে গেছে। মা আর বাসন্তী ভয় পেয়ে গেলেন। আজ বুঝি বাপ-ছেলেতে বোঝাপড়া হবে। কর্তার শরীরে যা রাগ, অত বড়ো শরীর ভরতি অনেকখানি রাগ, কী থেকে কী হয়ে যায়, তার ঠিক নেই।
সুব্রত এসে দরজার কাছে মাথা নীচু করে দাঁড়াল। সে মনে মনে তৈরি হয়েই এসেছে, বাবা যে শাস্তিই দিন, সে সহ্য করবে। মৃত্যুর চেয়ে তো আর বড়ো শাস্তি হয় না।
দরজার কাছে সুব্রতকে প্রায় ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে মা আর বাসন্তী। মণি একটু দূরে।
নিশানাথ বললেন, খোকন, কাল সকালে তুই আমার সঙ্গে যাবি।
সবাই উৎকর্ণ হয়ে রইল আরও কিছু শোনার জন্য। নিশানাথ জামাটা খুলে আলনায় টাঙিয়ে রেখে বললেন, ঠিক সাতটার সময় বেরোব। তৈরি হয়ে থাকবি।
সবাই চুপ। নিশানাথ আর কিছু বললেন না। এই নিস্তব্ধতা দারুণ অস্বস্তিকর। নিশানাথের কণ্ঠস্বরে কোনো রাগের চিহ্নমাত্র নেই। এই সামান্য কথা বলার জন্য তিনি খোকনকে ডেকেছিলেন?
ঘড়িতে টিকটিক করে শব্দ হচ্ছে।
সকাল বেলা খোকনকে তিনি কোথায় নিয়ে যাবেন সে-কথা জিজ্ঞেস করার সাহস কারুর হল না।
খাবার টেবিলে বসেও আর একটি কথাও উচ্চারণ করলেন না নিশানাথ। চোখের সামনে একটা বই খোলা রইল।