শার্ট খুলছিল সে। বিছানার এক পাশে বাবা। অন্য পাশে শুচু। মা মাঝখানে শোধে। মশারি টাঙানো। বহু পুরনো, বিবর্ণ মশারির সহস্র ছিদ্র কেটে অনেকগুলো বড় বড় ফুটো। তালি মারা হয়েছে কোনও কোনও জায়গায়। কোথাও কাপড় গোঁজা বা সেফটিপিন। কত দিন মশারি কেনা হয়নি? বিছানার চাদর, ঢাকনি—এই সব? শুভদীপ মনে করতে পারে না কিছুতেই। বরং সে একটি মশারির দাম কত হতে পারে ভাবে দুশোতিনশো। তিনশো?
শার্ট খোলার সঙ্গে সঙ্গে যে শীতের ভাব লাগছিল তার গায়ে, নিমেষে সেটি উধাও হয়ে যায়। বরং গরম স্রোত নামতে থাকে কান মুখ বুক পিঠ বেয়ে। তিনশো টাকা! তিনশো টাকায় মশারি। অনায়াসেই হত। হতে পারত। সংসারে টানাটানিটা থাকত। কিন্তু একটা জিনিসও বাড়ত।
মা দরজা বন্ধ করে ফিরে এসেছে ঘরে। সরাসরি ওষুধের কথা বলছে। শুচুর কথা বলছে। আজ দুপুর থেকে শুচুর গায়ে জ্বর। তারপর, গৃহ্য কথা জানাবার মতো গলা নামিয়ে, শুভদীপের বুকের কাছাকাছি এসে মা জানাচ্ছে, দেবনন্দন এসেছিল। দেবনন্দন তার বন্ধু। খুব ছোটবেলা থেকে অন্তরঙ্গ বন্ধু। সে প্রায় রোজই আসে। সুতরাং তার আসার মধ্যে বিশেষত্ব কী; শুভদীপ বুঝতে পারছে না।
মার ভাঙাচোরা মুখে উজ্জ্বলতা। বিরক্তি উধাও ঠোঁটে চাপা হাসি। মিটমিটে আলোয় সে ঔজ্জ্বল্য রাঙা দেখাচ্ছে। তবে চাপা হাসিটা বোঝা যাচ্ছে ঠিকঠাক। মা জানাচ্ছে তখন, দেবনন্দন শুচুকে বিয়ে করতে চায়। সব কিছু জেনেশুনে বিয়ে করতে চায়।
শুভদীপ হাঁ করে থাকে কিছুক্ষণ। কথা বলতে পারে না। প্রথমেই তার মনে হয়, দেবনন্দন তাকে তো কখনও বলেনি। কেন? তারপরই দ্রুত কিছু ভাবনা তার মাথায় আসে। শীর্ণ, নীলচে, জৌলুসহীন, প্রাণ-শক্তিহীন, ক্ষণভঙ্গুর মেয়েটাকে বিয়ে করে কী করবে দেবনন্দন। কী পাবে! শুচু তার প্রিয়। অতি প্রিয়। তবু এই সব ভাবনা সে ভেবে বসে। এবং এ খবর দেবার সময় মায়ের মুখে যে প্রদীপ্ত আশা, তাকে ঘৃণা করে সে। মাকে স্বার্থপর মনে হয়। রোগা-ভোগা শুচুকে কেন তারা অন্যের হাতে তুলে দেবে। শুধু তো বিয়ের পিড়িতেও মারা যেতে পারে। কিংবা বিয়ের কাগজে সই করতে করতে। ও যে বেঁচে আছে এত দিন, সে-ই তো আশ্চর্য।
হঠাৎ সে উপলব্ধি করে, কত দীর্ঘদিন পর শুচুর মৃত্যুর কথা মনে পড়ল। তার। সে ভুলে গিয়েছিল। তার মনে হয়, মাও ভুলে গিয়েছে। অন্যরাও। এমনকী দেবনন্দনও। কে জানে শুচু নিজেও ভুলে গিয়েছে কি না। সে গায়ে গামছা জড়িয়েও কলপারে যেতে ভুলে যায়। মা বিবৃতি দিতে থাকে। মেয়েলি ঢঙে, মেয়েলি দৃষ্টিভঙ্গিতে, ইনিয়ে-বিনিয়ে কথাবোৱায়। বিয়েই মেয়েদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা। একটা ভাল ঘর। বর। মেয়েটা তবু একটু সুখ পেত বিয়ে হলে। যেচে আসা. সম্বন্ধ। পায়ে ঠেলা কি ঠিক? সুখের মুখ দেখা থেকে মেয়েটাকে কি তা হলে বঞ্চিত করা হবে না?
সুখ!সুখ! কীসের সুখ! কেমন সুখ! বিয়ে হলে কি সুখ হয়? যৌনতা? বিয়ে হল যৌনতার আইনসঙ্গত স্বীকৃতি। দেবনন্দন কি শুচুকে… সে দরজার দিকে পা বাড়ায়। অসুস্থনীল বোনের জৈবিক ভাবনাজড়িত চিন্তনকে জোর করে দুরে ঠেলে রাখে। শুধু চৌকাঠ পেরিয়ে যেতে যেতে মাকে জানিয়ে দেয়, শুচুকে পাত্রস্থ করার বিষয়ে তার মত নেই। মা আর কথা বাড়ায় না। সে অন্ধকার উঠোনে পা রাখে।
অন্ধকার গাঢ় নয়। কারণ ছোটঘরের আলো এসে উঠোনে পড়ছে। কলপারেও তাদের অন্য শরিকের ঘরের আলো। সে আর আলাদা করে কলপারের আলো জ্বালল না। তাদের বাড়িতে আজও স্নানঘর নেই। উঠোনের এককোণে কলতলা। সেখানেই সবাই স্নান সারে। মেয়েরা পোশাক পরেই গায়ে জল ঢেলে ঘরে চলে যায়। ছেলেরা গামছা পরে খালি গায়ে সাবান-টাবান মাখে। বিশ্বদীপের স্বপ্ন, চাকরি পেলেই সে প্রথমে একটা মানঘর করবে। টিনের চাল দেওয়া একটা সাধারণ মানঘর করতে হাজার দশেক টাকা লাগবে-সে খোঁজ নিয়ে জেনেছে।
চাকরির জন্য খুব চেষ্টা করছে বিশ্বদীপ। সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, আর বেসরকারি চাকরির জন্য আবেদন করছে। দৈনিক সংবাদপত্রে কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখে সে প্রতিদিন এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কাগজঁগুলো আদ্যোপান্ত পড়ে। কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণ নেবার সঙ্গতি নেই। সুতরাং বেসরকারি সংস্থায় সে পেতে পারে একমাত্র বিপণনের কাজ। ইতিমধ্যে কয়েকটি জায়গায় মুখোমুখি পরীক্ষা পর্ব সেরে এসেছে সে। একটি বড় সংস্থা তাকে দ্বিতীয়বার ডেকেছিল। আজই সেই দ্বিতীয়বার যাবার দিন। শুভদীপ এখনও জানে না বিশ্বদীপ গিয়েছিল কি না সেখানে। গিয়ে থাকলেও কী হল জানে না। প্রায় সমস্ত কথাই তারা আলোচনা করে রাত্রে। বিশ্বদীপের বয়স এখন তেইশ। পাঁচ বছরের ছোট সে শুভদীপের চেয়ে। শুচুর চেয়ে দু’ বছরের। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মধ্যে দাদা-দিদি বলার চল নেই। পরস্পরকে নাম ধরেই ডাকে তারা। হতে পারে, শুচু আর সে প্রায় পিঠোপিঠি বলে শুচুকে দাদা বলতে হয়নি। আবার বিশ্বদীপ ও শুচু পিঠোপিঠি বলে এবং দাদা ডাক শোনার প্রচলন ছিল না বলে বিশ্বদীপ ডাকেনি তাদের। মা প্রথম প্রথম বকাবকি করত। বাবার কাছে অনুযোগ করত। কিন্তু বাবা হেসে উড়িয়ে দিত সব। পশ্চিমের দৃষ্টান্ত দিত। শুনতে শুনতে মাও মেনে নিয়েছে। বাবা যতদিন সুস্থ ছিল, মাকে অভিযোগ করতে শোনেনি ভর্দীপ, এই একটি বিষয় ছাড়া।
কলতলায় একটু বেশি শীত টের পায় সে। হঠাৎ আবার মালবিকাকে মনে পড়ে তার। মালবিকার বুক, পেট, নাভি মনে পড়ে। একশো টাকার তিনটি নোটও মনে পড়ে যায় তৎক্ষণাৎ। সে তখন গামছা জড়িয়ে ঘরে ফিরে যায়। শার্ট আনে। গেঞ্জি ও প্যান্ট পরেই আছে তখনও। সে স্থির করে বোয়া কাচা করে ফেলবে সব। শার্ট-প্যান্ট-গেঞ্জি-জাঙিয়া। মায়ের কাছে সাবানের বাক্স চায় সে। ব্যয়সঙ্কোচের জন্য ঘষা সাবান ব্যবহার করে তারা। গুড়ো সাবান নয়, মাঝেমাঝে এক-আধটা পাউচ কিনে আনে তিন টাকা দিয়ে।
সাবান হাতে করে উঠোনে আসে মা। এই রাতে, শীতের আভাসে, জামাকাপড় কাচার সারবত্তা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। সে তখন এক বসন্তরোগীর কথা বলে। তার পাশে বসেছিল বাসে। এমন বলে। সবকিছুই বড় আগে আগে এসে যাচ্ছে এখন। গ্রীষ্মের মধ্যেই এসে যাচ্ছে বর্ষা। আর শীত না পড়তেই এসে যাচ্ছে বসন্ত। এইসব বলতে বলতে মা ঘরে ফিরে যায়। খাবার গরম করার আয়োজন করে।
বাইরে পরে যাবার মতো একটি প্যান্ট, দু’খানা শার্ট। শার্টদুটো সে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পরে। চন্দ্রাবলী একটি জিনস দিয়েছিল তাকে। তোলা আছে। আরও শীত নামলে পরবে। অথবা পরবেই না। আর কোনও দিন চন্দ্রাবলী তাকে শার্ট-প্যান্ট দেবে না। জিনস দেবে না। জুতো, ব্যাগ দেবে না। কিনে দেবে না চশমার ফ্রেম।
চন্দ্রাবলী তাকে একটি শার্টই দেয়নি। একটি প্যান্টই দেয়নি। দিয়েছে আরও। সে নিজের থেকে বিশ্বদীপকে দিয়েছে। একটিমাত্র ছেড়া শার্ট আর ছেড়া প্যান্ট পরে ঘুরত ছেলেটা।
গুনগুন স্বরে সুর গলিয়ে উঠোনে আসে বিশ্বদীপ। শুভদীপ লক্ষ করে—মহীনের ঘোড়াগুলির সুর। শুচুর মাধ্যমে তারা সবাই মহীনের ঘোড়াগুলি দ্বারা সংক্রামিত।
মাত্র দুটি পঙক্তির সুর গড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বদীপা চড়া পর্দার সুর। ভেবে দেখেছ কি তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে তারও দূরে তুমি আর আমি… ভেবে দেখেছ কি…। যাই ক্রমে সরে সরেবলতে পারছে না সে। গাইতে পারছে না। স্বর পৌঁছচ্ছে না তার। শুভদীপ জামা-প্যান্টে সাবান মাখছে। কলপারের কাছাকাছি পরিত্যক্ত তুলসীমঞ্চের আড়ায় বসছে বিশ্বদীপ। জানাচ্ছে, চাকরিটা হয়ে যাবে হয়ত। কিন্তু তার আগে কিছু বেয়াড়া শর্ত আছে। গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় ছোটখাটো যন্ত্র বিপণনের কাজ। প্রথম ছ’মাস শুধু গাড়িভাড়ার বিনিময়ে বিপণন। তিনদিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে নেবে সংস্থাটি। এবং কাজ শুরু করার পর প্রতি মাসে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করে দেবে। লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করতে পারলে চাকরি নিশ্চিত। তখন চমকদার বেতন পাবে তারা। যদি চাকরি না পায় শেষ পর্যন্ত, তা হলেও লাভ কিছু আছে। লাভ অভিজ্ঞতা। বিপণনের জগতে অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার। এই সংস্থার অভিজ্ঞতা তাকে একটি সুগম ভবিষ্যতের সন্ধান দিতে পারে।
শুভদীপ জানে। এরকমই হয়। সে যে একটি ছোট সংস্থায় কাজ করে, সেখানেও তিন মাস বিনা বেতনে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। শতকরা এক ভাগ সে পেত সমস্ত সংগৃহীত বিজ্ঞাপনের মোট মূল্যের ওপর। আলাদা করে গাড়িভাড়াও পায়নি। তবে তার কোনও লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট ছিল না। সে নিজেই নিজের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল। প্রথম মাসে তার আয় হয় তিনশো টাকা।
বিশ্বদীপ জানায়, সে যোগ দেবে বলেই ভাবছে। শুভদীপের মত সে জানতে চায়। শুভদীপ তাকে যোগ দিতে বলে। তিন দিন পর তাকে যেতে হবে আবার সে জানায়। শুভদীপ চুপ করে থাকে। হিম জলে আঙুল টন টন করে। সাবানের ফেনা ছিটকে চোখে-মুখে লাগে তার। তিনটে একশো টাকার নোটের কথা তার মনে পড়ে আবার। কত কিছু হতে পারত এ টাকায়। মার একটা শাড়ি হতে পারত। কিংবা, বিশ্বদীপ কাজে যোগ দিলে হাতখরচ হিসেবে দেওয়া যেত তাকে কিছু।
তার গা ঘিনঘিনে ভাব হয়। আর একবার স্নান করার কথা সে ভাবে। বিশ্বদীপ শুভদীপের কেচে দেওয়া জামাকাপড় নিয়ে মেলে দিতে থাকে এবং কথা বলে যায়। নিচু গলায়, মা শুনতে পাবে না এমনভাবে বলে–চাকরি পেলেই সে মিঠুর সঙ্গে বিবাহ নিবন্ধীকৃত করঝেকারণ মিঠুর সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে। শুভদীপের মায়ের কথা মনে পড়ে। যেচে আসা সম্বন্ধ—মা বলছিল। মিঠুর জন্যও কি যেচে সম্বন্ধ আসছে?
শুভদীপ নিবন্ধীকরণের ঔচিত্য সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করে না। বালতি থেকে গায়ে জল ঢালতে ঢালতে সে বিশ্বদীপকে দেবনন্দনের ইচ্ছার কথা জানায়। বিশ্বদীপ হাসে। বলতে থাকে, দেবনন্দন আর শুচু প্রেমে আবদ্ধ। শুভদীপ আরও একবার বিস্মিত হয়। শুচু এবং প্রেম—এই দুই প্রান্তকে সে কিছুতে মেলাতে পারে না। তা ছাড়া, দেকনন্দন তার ছোটবেলার বন্ধু, তার অন্তরঙ্গ বন্ধু, তাকে বলেনি কিছুই। কেন? ক্রোধ জাগে না তার, অভিমান জাগে না। শুধু এক অধস্থবির মানসিকতায় ধীরে ধীরে বিস্ময়ঘোরে তলিয়ে যায়। বিশ্বদীপ কথা বলে ওঠে আবার। বলতে থাকে, সত্যিকারের প্রেমিকের মতোই দেবনন্দন শুচুকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চায়। দেবনন্দনের প্রশংসায় উচ্চকণ্ঠ হয় সে। কিন্তু সেই উচ্চকণ্ঠ শব্দগুলি শুভদীপের শ্রুতি বিদ্ধ করে না। শুধু সত্যিকারের প্রেমিক’ শব্দটি তাকে ঘিরে ঘুরপাক খায়। সে গামছায় চুল মোছে আর কথাগুলি তার মাথায় ঢুকবে বলে ঘুরপাক খেতে খেতে জায়গা খোঁজে। খোঁজে আর ঠোক্কর খায় হাতে বা গামছায়। বিশ্বদীপ আবার নিচুকষ্ঠে ফিরে যায় এবং মিঠুর প্রসঙ্গে অবতরণ করে। মিঠু এখন কারওকে কিছু জানাবে না, যত দিন পর্যং ম বিশ্বদীপ উপযুক্ত হয়।
উপযুক্ত। কীসের উপযুক্ত? বিয়ের। কীসের উপযুক্ত? মি স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারার। কীসের উপযুক্ত? সত্যিকারের প্রেমিক হতে পারার।
তা হলে, সত্যিকারের প্রেমিক হতে গেলে কোনও চাহিদা নেই ভালবাসায় টইটম্বুর হৃদয়খানির। বরং অনেক বেশি প্রয়োজন টইটম্বুর পকেট।
একটি মেয়েকে স্ত্রীর মর্যাদা দেবার জন্য শুধু ভালমানুষ হলেই চলবে না। থাকতে হবে উপার্জনের নিশ্চয়তা। থাকতে হবে কর্মক্ষেত্রের কৌলিন্য।
বিশ্বদীপ কথা বলে চলে। মিঠু এখন কারওকে কিছু বলবে না। কিন্তু প্রয়োজন হলে বলবে। তার বাড়ি থেকে যদি জোর-জবরদস্তি করে তবে চলেও আসতে পারে এখানে।
সত্যিকারের প্রেমিক, স্ত্রীর মর্যাদা-কথাগুলো ভদীপের ব্রহ্মতালুতে ঠোক্কর মারে। তার খুলি ভেদ করে অন্দরে যেতে চায়। যদি মিঠু নিরুপায় হয় আর চলে আসে এখানে তবে মিঠু আর বিশ্বদীপ শোবে কোথায়?
তাঁর ভাবনায় একটি প্রেম এবং প্রেমের পর কুলীন এক উপার্জন অন্তে সত্যিকারের প্রেমিক হয়ে বিয়ে করে ফেলা ও স্ত্রীর মর্যাদার পরই শয্যার প্রশ্ন আসে। দাম্পত্যর অধিকারে অন্তত রাত্রির নিভৃতিটুকু পাওয়া চাই।
শুভদীপ এই হিসেব বরাবর করেছে। যতবার বিয়ের প্রসঙ্গ এসেছে ততবার। সত্যিকারের প্রেমিক হওয়ার আগে সে বরং শয্যা নিয়েই ভাবিত হয়েছে বেশি।
গামছায় মাথা-গাবুক-পিঠ ঘষতে ঘষতে সে মনে মনে সাজিয়ে নেয়–মিঠু যদি চলেই আসে তো সে তার জায়গা মিঠুকে দিয়ে দেবে। নিজে বড় ঘরের মেঝেয় বিছানা পেতে নেবে। বড় স্যাঁতসেতে মেঝে। তার ওপর দেওয়ালের জায়গা বাড়াবার জন্য ঘরের দুটি জামালার একটি খোলা হয় না।
হয়ে যাবে। কোনও ভাবে হয়ে যাবে। তার আগে বিশ্বদীপের চাকরিও নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। তারা দু’ভাই খুব পরিশ্রম পারে। সুতরাং তারা গলাগলি বেরিয়ে পড়বে রাস্তায়। সে বিজ্ঞাপন ফিরি করবে। বিশ্বদীপনামী সংস্থার পণ্যবস্তু।
বিশ্বদীপ একটি শুকনো পাঞ্জাবি শুভদীপের দিকে এগিয়ে দেয়। মা রান্নাঘর থেকে তাড়া দিতে থাকে। মায়ের গলা পেয়ে সে আবার সেই অমোঘ প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত হয় এবং অত্যন্ত সতর্কতায় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। উচ্চকণ্ঠে সে দেবনন্দনের প্রসঙ্গ তোলে আবার। বিশ্বদীপ জানায় দেবনন্দনের প্রস্তাবে তার কোনও আপত্তি নেই। বরং দেবনন্দনের মহত্ত্বকে সে সহায়তা দেবে। শুভদীপ এই বিবাহ-সম্মতিকে এক ধরনের প্রবঞ্চনা বলে ব্যাখ্যা করে কারণ শুচু এক রোগগ্রস্ত মেয়ে। বিশ্বদীপ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর একটি সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দেয়। সিগারেটের আগুন ধামাকা হয়ে জ্বলে। সেই জ্বলুন দ্বারা নীরবতাকে পোড়াতে থাকে বিশ্বদীপ। আর শুভদীপ সেই আগুনে গা সেঁকে নেয়। নিজের শৈত্য সেঁকে তাপ নেয় আর সময়কে গভীর রাতের দিকে ঠেলে দিতে চায়। মার চোখ ঘুমে ঢুলে আসুক এমনই সে আকাঙ্ক্ষা করে। কিন্তু মা খাবার আগলে বসে আছে।সারাদিন যা কিছু ভেবেছে মা, আশঙ্কা করেছে, সংসারে যা-যা ফুরিয়েছে, যা-কিছু প্রয়োজন, সব না বললে মার ঘুম আসবে না আদৌ।
সে গামছা মেলে দিয়ে হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে থাকে। পাঞ্জাবি পরে নেয়। বোতাম লাগাতে গিয়ে দেখে বোতামের পাশ দিয়ে বিনুনির মতো নেমে গিয়েছে সরু সুতোর নকশা। তার অন্য এক বিনুনি মনে পড়ে। আজ বিজ্ঞাপন থেকে নেমে এসেছিল মেয়েটি তার। তাকে ছাড়িয়ে আরও একটি বিনুনি। চওড়া ও কোমর-ছাপানো। রাশি-রাশি সেই চুলের সম্ভার যে-কোনও শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন হতে পারত। সেই চুলকে তার মেঘরাশি বলতে ইচ্ছে করে হঠাৎ। কিংবা রেশমের অন্ধকার। ঝলকে উপলব্ধি হয় তার। সে যে মৃত্যুর দেবীকে কল্পনা করেছে আর তার মাথায় বসিয়ে দিয়েছে চুল–যে চুল বিস্তৃত হয় আর অন্ধকারকে ঘনায়মান করে, সে চুল অবিকল চন্দ্রাবলীর। সে বিবশ বোধ করে। অসহায় লাগে তার।
তখন বিশ্বদীপ কথা বলে আবার। ভারী ও গভীর কথা বলে, যেন কোন অতল থেকে উঠে আসছে বাণী। সে ব্যাখ্যা করতে চায়। মানুষের পাওয়া না-পাওয়ার হিসেবকে চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়াস নেয়। সে মনে করে, এই হিসেব খুব সহজ নয়, তুচ্ছও নয়। প্রত্যেক মানুষেরই চাওয়া ও তৃপ্তিবোধ একজনের অন্যের চেয়ে আলাদা। দেবনন্দন শুচুকে জীবনে গ্রহণ করবে, এ সিদ্ধান্ত তারই। কেউ তার ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়নি। কেউ অনুরোধও করেনি। অতএব, এর মধ্যে কোথাও কোনও বঞ্চনা লুকিয়ে থাকতে পারে না।
তখন মা উঠোনে পা রাখে। বলতে থাকে বাবারও এমনকী সম্মতি আছে, শুধু শুভদীপের আপত্তির কোনও অর্ধ সে খুঁজে পায় না।
মা এগিয়ে এসে মাঝ-উঠোনে দাঁড়াচ্ছে। দুই ছেলের মাঝ বরার এসে থামছে সে সম্পূর্ণ। মাঝরাতের হিম হাওয়া উঠোনে ঘুরপাক খেতে শুরু করে দেয় তখন। বিশ্বদীপ সিগারেট লুকোয়। আকাশে গাঢ় কুয়াশার ঘোমটা পড়েনি। ঝিকমিক তারাগুলি দৃশ্যমান। কোথাও কোনও শব্দ নেই। এই নৈঃশব্দ্যকে বড় কড়া, বড় অসহ লাগে শুভদীপের। হয়তো বিশ্বদীপ তা টের পেয়ে যায়। আর শুধুমাত্র নীরবতা খাতেই বহুবার বলা স্বপ্নের কথা বলতে থাকে আবার। চাকরি পেলেই উঠোনের কোণে একটি স্নানঘর বানাবেই সে। শুধু তাদের জন্য।
তখন মাকে অসহিষ্ণু লাগে। শুভদীপের দিকে মা সরাসরি তাকায়। জোর গলায় বলে, দেবনন্দন শুভদীপেরই বন্ধু। আর প্রস্তাবটাও তারই। সুতরাং দেবনন্দনের সঙ্গে শুচুর বিয়ে দিলে কোথাও কোনও অন্যায় নেই। বলে এবং ভুট্টাদানার মতো উঠোনে ছড়িয়ে দেয়।
শুভদীপ তার পরও তার অমতই প্রকাশ করে শুধু। সে প্রবঞ্চনার কথা বলে। পরিবারের অসম্মানের কথা বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মনের গভীরে জেনে যায়, কারও পক্ষে শুচুকে বিয়ে করতে পারার সম্ভাব্যতা সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এ তারই অক্ষমতা, নাকি এমনই পৃথিবীর মহাসত্য–সে সঠিক ধরতে পারে না। এবং মা তখনই তাকে এই গৃঢ় অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেয়। স্বর নিচু করে, চোখ শূন্যে মেলে, প্রায় আত্মগতভাবে তিন সন্তানের জননী ঘোষণা করে–শুভদীপের এই আপত্তি অবান্তর। অকারণ। ন্যায়-অন্যায়, মানবিকতা-অমানবিকতা, পাপ-পুণ্য ইত্যাদি ছাড়াও এই বিবাহের একটি বাস্তব দিক আছে। দেবনন্দন শুচুকে বিয়ে করে নিয়ে গেলে সংসারে একটি পেট তত কমবে। সেই সঙ্গে শুচুর জন্য নিয়মিত ওষুধ, ডাক্তার, হাসপাতাল করার ঝঞ্চাট ও প্রভূত ব্যয়ভারের হাত থেকেও কি মুক্তি পাবে না তারা! দেবনন্দনের পরিবারে এমন কেউ নেই যে শুচুর সঙ্গে বিয়েতে বাধা দেবে। অর্থের অভাবও তার হবে না কারণ দেবনন্দনের বাবা-মা তার জন্য গচ্ছিত রেখে গেছে প্রচুর অর্থ এবং একখানি গোটা বাড়ি। শুচুকে সে ভালভাবেই রাখতে পারবে। হয়তো সে আরও ভাল চিকিৎসা করাতে পারবে, যা তারা নিজেরা পারছে না।
মা আরও কিছু বলতে পারত। এমন কিছু যা শুনলে শুচু আত্মহত্যাও করতে পারত। কিংবা যা শোনা, ভাবা, বলা অন্যায়ঘোর অন্যায়। শুভদীপের গলার কাছে যন্ত্রণায় ব্যথা ব্যথা করে। কিন্তু কিছু বলে
সে। মা আর কী যুক্তি দেয়, শোনার জন্য সে অপেক্ষা করে। কিন্তু বিশ্বদীপ ধমকে থামিয়ে দেয় মাকে। বলে, শুধু শুচু কেন প্রত্যেকেই তারা এক-একটি পেট। চাল আনতে ডাল ফুরনো সংসারে সকলেই বাড়তি তারা তিন ভাইবোনই মরে যাক তা হলে রাস্তার অবসরভাতার টাকায় বাবার ওষুধ কেনা হলেও মা-বাবার দুটি পেটাতে চলে যাবে। পেট নিয়ে বেঁচে থাকুক তারা আর শতবর্ষ পার করে দিক।
কঠোরতম এই শব্দসমূহ শুনেও কিন্তু মা তেমনই স্বাভাবিক থাকে। এবং শান্তভাবে একটি আশ্চর্য কথা বলে। বলে যে পেট সকলের থাকলেও এ সংসারে মেয়েমানুষের পেট বড় শত্রু। কারণ তাদের কোনও মূল্য নেই। বিশেষ করে রুগণ ও অকর্মণ্য যদি হয়ে থাকে কোনও মেয়েমানুষ তার মূল্য কানাকড়ি। মেয়েমানুষের হল–যতক্ষণ গতর ততক্ষণ কতর। মানে কদর। সংসারে ব্যয় কমানোর জন্য মা মৃত্যুর কথা বলতে চায়নি। বললে তো পেটের সন্তানদের ভার লাঘব করার জন্য সে নিজেই আগে গলায় দড়ি দিত। কিন্তু সে তা করেনি। মৃত্যুর মধ্যে কোনও কল্যাণ থাকে না কখনও। কল্যাণ মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখার মধ্যে। সুতরাং, মৃত্যু নয়, মা বাস্তবে উপস্থিত একটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছে মাত্র।
শুভদীপ বিশ্বদীপের দিকে তাকায়। বিশ্বদীপ তাকে মেনে নিতে ইশারা করে। কিন্তু শুভদীপ তখন সকলের ব্যাখ্যা অমান্য করে শক্ত হয়ে যায়। তার কপালের শিরা দপদপ করে। সে অসহিষ্ণু ঘোষণা করে শুচুর অকালমৃত্যুর সম্ভাবনার কথা। যেকথা সকলেই জানে এবং ভুলে গেছে, তার কথা আবার মনে করিয়ে দেয় সে।
মা কোনও কথা না বলে কেঁদে ফেলে হঠাৎ। তার স্বভাববিরুদ্ধভাবে কেঁদে ফেলে। বিশ্বদীপ তুলসীমঞ্চ থেকে নেমে দাঁড়ায়। দৃঢ় ছুড়ে দেয় শুভদীপের দিকে। কোনও মানুষ মারা যাবে যে কোনও সময় জানা গেলে–সারাক্ষণ তার পরিপার্শ্বে মৃত্যুরই আয়োজন রাখা যুক্তিযুক্ত, নাকি জীবনের।
শুভদীপ জবাব দেয় না। সভা ভেঙে ঘরের দিকে যায়। মা আঁচলে চোখ মুছে তাকে অনুসরণ করে। খেতে দিতে হবে। সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ফিরেছে অভুক্ত ছেলেটা। বিশ্বদীপ তাদের অনুসরণ করে বলতে বলতে ঢোকে। কোনও মানুষেরই কি শেষ পর্যন্ত জীবনের নিশ্চয়তা আছে? কেউই কি বলতে পারে, সে জবঁচে থাকবে ভরা আয়ুষ্কাল? একটি সুস্থ শরীরের মধ্যে যে বাসা বেঁধে নেই কোনও মারণরোগ–কে দিতে পারে তার নিশ্চিতভরসা?
সে উদাহরণ দিতে থাকে। হঠাৎ ধরা-পড়া কর্কটরোগ, দুর্ঘটনায় মরে যাওয়া বাবা আর মেয়ে, দুকিলো পটল কিনতে গিয়ে সন্ন্যাসরোগে ঢলে পড়া পাড়ার হরজ্যেঠু…
শুভদীপ কথা বলে না। শুনতে শুনতে বিছানায় পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে নেয়। মা হাতে খাবার তুলে দেয়। তিনটে রুটি আর ডাল। ডালে পেঁয়াজ কুচি, লংকা। সে থালা নিয়ে কাগজে রাখে। মা গজর-গজর শুরু করে। বিশ্বসংসারে সমস্তই শকরি হয়ে গেল এমনই উম্মা। এবং যে সংসারে সমস্তই শকরি হয়, কে না জানে, সে সংসার উজায় না কখনও।
শুভদীপ মায়ের নিত্য-নৈমিত্তিক গজগজানি উপেক্ষা করে খায়। রুটি হেঁড়ে। মুখে দেয়। তার পেট ভরে না। সে আরও রুটি চায়। এবং চাইতে চাইতে সে খবরের কাগজের পুরনো হলদে খবর পড়ে। মা তখন রুটি নেই জানায় এবং ইনিয়ে বিনিয়ে নিত্যকার অভাবের কথা শুরু করে। আটা বাড়ন্ত, চাল বাড়ন্ত। এমনকী রোজগেরে ছেলের পাতেও সে তুলে দিতে পারল না পরিমাণ মতো রুটি। আর এই অভিযোগের মধ্যেও মা বিয়ে বিষয়ে তার আপত্তির কথা তোলে। এবং একই সুরে বলে যায়, দেবনন্দন বাড়ির জামাই হতে পারলে দরে-দরকারে, ঠেকায়-বেঠেকায় তার কাছ থেকে কিছু ধার করে নেবার সুবিধা অন্তত পাওয়া যায়।
সে মায়ের দিকে তাকায়। বিশ্বদীপ পাশে শুয়েছিল। চোখ বন্ধ করে আছে। হয়তো তার আর এ বিষয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না। সে মায়ের মুখ দেখে আর অবশিষ্ট ডালে চুমুক দেয়। তার মনে হয়, ভদ্রতাবোধের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মা। তার রাগ হয় না। ঘৃণাও জাগে না কোনও—যা এখন বড় বেশি হয়ে উঠেছে তার মধ্যে। সে মাকে উপলব্ধি করে। দীর্ঘদিন অভাবের সঙ্গে সংগ্রাম করে, দারিদ্র-পীড়নে, অনিশ্চয়তায় ও নিরাপত্তাহীনতায় মরিয়া হয়ে উঠেছে মা। এবং কিছু একটা অবলম্বনের জন্য দেবনন্দনকেই আঁকড়ে ধরেছে। সে জানে, মা যেমন ভাবছে তেমন সঙ্গতি দেবনন্দনের নেই। দানছত্র শুরু করলে বরং সে-ই বিপড়ি পড়বে।
সে তবু মার ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে না। কিন্তু বিয়ে স্তম্পর্কে নিজস্ব প্রতিরোধ জারি রাখে। আর ভাবতে থাকে মালবিকপর্ক দিয়ে দেওয়া তিনশো টাকার কথা। তিন-শো-ওও-ও-ও! একটুকরো হিমবায়ু শোঁ-শোঁ ঢুকে পড়ে বুকের মধ্যে। আর ঠিক তখনই মা প্রশ্ন করে। অভিযোগ ও অভাবের পর্ব বাদ দিয়ে অমোঘ প্রশ্ন করে ওষুধ কোথায় রাখা আছে। ওষুধ নাও কেনা হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা তার মনে আসে না। সে মাথা নাড়ে। আনেনি। মা তার মাথা নাড়াকে বিশ্বাস করতে পারে না। ওষুধ বিষয়ে সে সর্বদা নিয়মানুবর্তিতা অভিব্যক্ত করেছে। একবারের বেশি দু’বার তাকে কিছু বলতে হয়নি। সুতরাং মা বিস্ময়ে চেয়ে থাকে। মুখের হাঁ বন্ধ করতেও ভুলে যায়। সে মায়ের বিস্ময়ের পাশ কাটিয়ে উঠে পড়ে। পালা নামিয়ে রাখে গ্যাসের টেবিলের তলায়। বিস্ময় সামলে মা তখন অবধারিত ওষুধের টাকা ফেরত চায়। সে জানায় খরচ হয়ে গেছে। কাল সে-ই ওষুধ এনে দেবে এমন প্রতিশ্রুতিও দেয়। হয়তো অনেক রাত হয়ে গেছে বলেই মা তাকে ক্ষমা করে দেয় দ্রুত। এবং জানাতে ভোলে নাচাল, ডাল, আটা, চিনি বাড়ন্ত। দেবনন্দনের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা। নেওয়া হয়েছে। নইলে এবেলা কেবল রুটি আর নুন খেয়ে থাকতে হত।
শুরু হয়ে গেছে, সে ভাবে, দেবনন্দনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। তার মনে হয়, অতি ধীরে এবং নিঃশব্দে নৈতিক অধঃপাত ঘটে যাচ্ছে তাদের পরিবারে। আর এতদসত্ত্বেও ঘুম নেমে আসে তার চোখে। দ্রুতি ও গভীরতাসহ এক আশ্চর্য ঘুম।