০৫. বোগাস শব্দটা শশী প্রয়োগ করে

এই ‘বোগাস’ শব্দটা শশী প্রয়োগ করেই বেশি গোল বাঁধিয়েছে। শব্দটার অর্থ মশায়-গিন্নি জানেন না, তবে ধ্বনিগত ব্যঞ্জনা বা সমস্ত কথাবার্তার পর ওই শব্দটার অর্থ মশায়-গিন্নির কাছে অত্যন্ত অপমানজনক মনে হয়েছে।

শশীরও অবশ্য দোষ নাই। সেও এসেছিল গায়ের জ্বালায়। নবগ্রামে প্রদ্যোত ডাক্তার ব্যাপারটা নিয়ে বেশ একটা শোরগোল তুলেছে। পৃথিবীতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মানুষের স্বভাবধর্ম। তাই একজন প্রতিবাদ করার সঙ্গে আরও পাঁচজন আপনি এসে তার সঙ্গে যোগ দিয়ে তাকে সবল এবং প্রবল করে তোলে।

প্রদ্যোত ডাক্তার নবগ্রামের পাসকরা ডাক্তারদের সকলকেই নাকি কথাটা জানিয়েছেন। এবং ডাক্তারদের আসর থেকে বাজার-হাঁটে ছড়িয়ে পড়েছে। কথায় আছে মরার বাড়া গাল নেই। মৃত্যুর চেয়ে কঠিন এবং ভীষণ আর কিছু হয় না। আজও এর ঠিকানা মেলে নি, দিগনির্ণয় হয় নি। মানুষ মরে নিত্যই অহরহ মরছে—তবু আজও কেউ তাকে দেখে নি, তার স্বর কেউ শোনে নি, বৰ্ণে-গন্ধে-স্পর্শে-স্বাদে আজও তার এক বিন্দু আভাসও কেউ কখনও পায় নি। এর ব্যাখ্যা করা যায় না, আজও কেউ করে নি। সাধারণ মানুষে মরবি বললে কেউ ভয় পায় না। কিন্তু চিকিৎসক বললে আতঙ্কিত হয়; বিশেষ করে রোগীকে বললে তার আতঙ্কে আর ফাঁসির আসামির আতঙ্কে কোনো প্ৰভেদ থাকে না। প্রদ্যোত ডাক্তার সেই কথাই বলেছে, বলেছে—এত বড় হৃদয়হীন ব্যাপার আর হয় না। এর সঙ্গে ডাকাত বা গুণ্ডার বা খুনের ছুরি তুলে তেড়ে আসায় প্রভেদ কী? প্রদ্যোত নাকি চায় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দরখাস্ত করা হোক। সকল ডাক্তারের সই-করা দরখাস্ত।

নবগ্রামে এখন তিনজন পাসকরা ডাক্তার। প্রদ্যোত নিজে আছে হাসপাতালে, আর দুজনের একজন হরেন ডাক্তার নবগ্রামেরই ছেলে, বয়সে প্রদ্যোত থেকে কয়েক বছর বড়। মেডিকেল স্কুল থেকে পাস করে এসে গ্রামেই প্র্যাকটিস করছে। নিজের ছোটখাটো একটি ডিসপেনসারি আছে। আর আছেন প্রৌঢ় ডাক্তার চারুবাবু।

ডাক্তারের মধ্যে চারুবাবু সর্বাপেক্ষা প্রবীণ; পঞ্চাশের উর্ধ্বে বয়স। চারুবাবুই এখানকার প্রথম এম. বি.। প্রায় পঁচিশ বছর আগে সদ্য ডাক্তারি পাস করেই এখানকার হাসপাতালে চাকরি নিয়ে এসেছেন। দশ বছর আগে চাকরি ছেড়ে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস ধরেছিলেন। আজ বছর চারেক থেকে সে প্র্যাকটিস তিনি একরকম ছেড়ে দিয়েছেন। এখন এখানে ইউনিয়ন বোর্ড, স্কুল বোর্ড প্রভৃতি নিয়ে মেতেছেন বেশি। লোকে অবশ্য বলে চারু ডাক্তারের প্র্যাকটিস পড়ে এসেছিল স্বাভাবিক নিয়মে, ডাক্তার তাই ওই দিকে ঝুঁকেছেন। ডাক্তারের ছেলেরাও বড় হয়েছে। বড়টি বেশ উঁচুদরের সরকারি চাকুরে। ছোটটি ডাক্তারি পড়ছে। চারু ডাক্তার লোকটি কিন্তু সাচ্চা। দিলখোলা মানুষ, সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত হিসেবী লোক। মেজার গেলাসে মেপে দুটি আউন্স ব্র্যান্ডি সন্ধেবেলা নিয়মিত তিনি পান করে থাকেন।

এ অঞ্চলে অনেক ডাক্তারেরই কিছু-না-কিছু ব্যাড-ডেট অর্থাৎ অনাদায়ী বাকি থেকে গেছে, কিন্তু চারু ডাক্তারের খাতায় হিসেবে যেমন একচুল গলদ থাকে না তেমনি পাওনাও এক পয়সা অনাদায় থাকে না। তার কম্পাউন্ডার প্রতি মাসেই দু-চার নম্বর বাকির জন্য তামাদির। মুখে ইউনিয়ন কোর্টে গিয়ে নালিশ দায়ের করে আসে। এ বিষয়ে কেউ কেউ অনুযোগ করে কঠোর বলতেও দ্বিধা করে না, কিন্তু চারুবাবু বলেন—লুক অ্যাট জীবন মশায়। ওই বৃদ্ধকে দেখে কথা বল বাবা। পঞ্চাশ হাজার টাকা বাকি খাতায় লেখা রইলউইয়ে খেলে। দেখেই শিক্ষা হয়েছে। ঠেকে শিখতে বোলো না বাবা। এখনও চারু ডাক্তার যে অল্পস্বল্প প্র্যাকটিস করেন। তা তার নিজের ব্যক্তিগত খরচা তুলবার জন্য। তাঁর প্র্যাকটিস কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ডিসপেনসারিটিও ছোট হয়ে এসেছে। চারটে আলমারির মধ্যে এখন ওষুধ আছে মাত্র একটাতে, আর একটার পাঁচটা থাকের মধ্যে তিনটে খালি।

আরও একজন পাসকরা ডাক্তার আছেন–চক্রধারীবাবু। চারুবাবুর চেয়েও বয়সে বড়। এল. এম. এফ.। চারুবাবুর আগে তিনিই ছিলেন এখানকার চ্যারিটেবল ডিসপেনসারির ডাক্তার। তাঁর চাকরিতেই চারুবাবু বহাল হয়েছিলেন। চক্রধারী এখন প্রায় সন্ন্যাসী। বাড়িতেই আছেন তবে গেরুয়াটেরুয়া পরে দিনরাত পুজোআচ্চা করেন। প্র্যাকটিস তো করেনই না, এখন কেউ হাত দেখাতে এলে বলেন বাজে বাজে। হাত দেখে কী হবে? কেউ কিছু জানে নাকি? কিছু জানে না বাবা। সব আন্দাজে ঢিল। লাগল তো লাগল, না লাগল তাতেই বা কী, ফি তো পকেটেই এল। বাবা, রোগ হলে সারে আপনি। রোগীর দেহেই আছে সারাবার শক্তি। ডাক্তার তেতো কষা ঝাজালো ওষুধ দেয় আন্দাজে। রোগী মনে করে ওষুধে সারল। তবে হ্যাঁ, দু-চারজন পারে।

চক্রধারী তামাক খেতে খেতে শুরু করেন তাঁর প্রথম যৌবনে দেখা বড় ডাক্তারদের কথা। স্যার নীলরতন, বিধান রায়, নলিনী সেনগুপ্ত প্রভৃতি ডাক্তারদের কথা। সে সব বিচিত্র বিস্ময়কর গল্প। বলেন, সে দেখেছি বটে। এখানে রঙলাল ডাক্তারকে দেখছি। একটা গোটা ডাক্তার ছিল। আর এখানে আছে একটা মানুষ, ওই জীবন মশায়। হ্যাঁ, ও পারে। ধরতে পারে। মশায়ের নিজের ছেলে বনবিহারী, সেও ডাক্তার ছিল। আমাদের বন্ধু লোক। একসঙ্গে মদ খেয়েছি। ফুর্তি করেছি। সেই ছেলের–বুঝেছ—রোগ হল। মৃত্যু-রোগ…আমরা বুঝতে পারি নাই। কিন্তু মশায়—

রোগীর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যায়। সে উঠে চলে যায়। চক্রধারী হেসে বলে—গোবিন্দ গোবিন্দ। তার পরই বলেবিনা পয়সায় অনেক হাত দেখেছি। আর না।

প্রদ্যোত ডাক্তার চক্রধারীকে চিকিৎসক বলেই ধরে না। তাই তার গণনায় নগ্রামে পাসকরা। ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র তিন জন। প্রদ্যোতের কথায় প্রতিবাদ কেউ করেন নি, হরেন ডাক্তার বা চারুবাবু কেউ না। এক রকম মৌন থেকে তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলতে হবে। মানুষের মুখের উপর তুমি আর বাঁচবে না এ কথা বলার চেয়ে নিষ্ঠুর আর কী হতে পারে? এবং এতে যে রোগীর মনোবল ভেঙে যায়, রোগের সঙ্গে যুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়ে, এও সত্য। বাবার ইচ্ছা, বাঁচব বিশ্বাসটাই যে বাছবার পক্ষে পরম ঔষধকে অস্বীকার করবে এ কথা? হরেন ডাক্তার চুপ করে প্রদ্যোতের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েও হাত জোড় করেছে। অর্থাৎ মার্জনা করুন। আমাকে। প্রদ্যোত ডাক্তার তীব্র তিরস্কার করেছে—ডাক্তারিকে কি আপনি শুধু আপনার জীবিকার পেশা মনে করেন হরেনবাবু? আপনার কোনো সেক্রেড ডিউটি নাই? এই ধরনের নিদান হকা আর গেরুয়ারী করকোষ্ঠী গণকদের মধ্যে তফাত কী? আর জড়ি-বুটি-তুক-তাক-জলপড়া এইসব চিকিৎসার সঙ্গে বেদেদের চিকিৎসার অনাচারের মধ্যে ডিফারেন্স কী?

হরেন জোড়হাত করেই দাঁড়িয়ে ছিল সর্বক্ষণ। প্রদ্যোতের কথার শেষে হেসে বলেছে–আমি গ্রামের লোক। এক সময় আমার বাল্যকালে উনিই আমাকে বাঁচিয়েছিলেন।

একটু থেমে আবার বলেছে—এক সময় উনি খুব ভাল চিকিৎসা করতেন প্রদ্যোতবাবু। আমি অবশ্য ছোট ডাক্তার, আমার বিদ্যাবুদ্ধি সামান্য। তবে ওঁর নাড়ি দেখে রোগ ডায়গনিসিসচিকিৎসা অদ্ভুত ছিল। এখন বৃদ্ধ হয়েছেন, হয়ত মুনিনাঞ্চ মতিভ্ৰমঃ। তার ওপর বয়স হয়েছে। এ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া কিশোরদা নেই, তিনি আসুন, তার অ্যাবসেন্সে এটা করা ঠিক হবে না।

কিশোরবাবু! কিশোরবাবু! প্রদ্যোত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। কিশোরবাবু কে? কোনো কথা না বলে তিনি উঠে এলেন।

চারুবাবু বলেছেন—আপনি ইয়ং ম্যান, রক্তের তেজ আছে। তা ছাড়া আজ আছেন কাল। নাই। চলে যাবেন অন্যত্র। কে যেন বলছিল—এ চাকরিও আপনার ট্রপিকাল ডিজিজের এক্সপিরিয়েন্সের জন্যে। এর পর আপনি ফরেনে যাবেন। স্পেশালাইজ করবেন। আপনার কি ওই বৃদ্ধের ওপর রাগ করা উচিত? যেতে দিন। দরখাস্ত করলে ওর সঙ্গে হয়ত অনেকের অন্ন উঠবে। শতমারি ভবেদ্বৈদ্য সহস্ৰমারি চিকিৎসক। মানুষ মেরে মেরে হাতুড়েরা নিজেরাও করে খায়, লোকেরও কিছু উপকার করে। আপনার মত লোকের এ রাগ সাজে না। আমি বরং বৃদ্ধকে বারণ করে দেব। বুঝেছেন। নিদানটিদান হঁকবেন না। জানেন আমাদের সময় একটা গান। ছিল—আমরা খুব গাইতাম—যা কর বাবা আস্তে ধীরে, ঘা কর কেন খুঁচিয়ে। বলেই হো-হো করে হেসে উঠলেন চারুবাবু।

প্রদ্যোতের বেশ লাগল চারুবাবুকে আজ। এখানে এসেই চারুবাবুর সঙ্গে আলাপ সে করেছে কিন্তু সে আলাপ একেবারে যাকে বলে ভদ্রতার মুখোশ এটে বাঁও-কষাকষি ব্যাপার। আজ চারুবাবু মুখোশ খুলে কথা বলেছেন। রসিক লোক। বেশ বসিয়ে আবৃত্তি করলেন—যা কর বাবা আস্তে ধীরে। প্রদ্যোতের মন অনেকখানি নরম হয়ে গেল। একটু লজ্জাও পেলে। চারুবাবু ওই যে বললেন–বৃদ্ধের ওপর রাগ করা তার উচিত নয়।

প্রদ্যোত বললে—বেশ, আপনার কথাই মানলাম। কিন্তু বৃদ্ধকে একটু সাবধান করে দেবেন। এ সব ভাল নয়। একে তো অত্যন্ত নিষ্ঠুর, তার ওপর আনসায়েন্টিফিক। হাত দেখে নাড়ি, পিত্ত, কফ, নিদান—এসব কী?

চারুবাবু বললেন– এক সময় কিন্তু মশায় লোকটার নিদান আশ্চর্যরকম ফলেছে। তা ফলত এবং এখনও। কণ্ঠস্বর মৃদু করে বললেন– আপনি কিন্তু দেখবেন—মতির মাকে বর্ধমান কি কলকাতা পাঠাব ভেবেছেন—তাই পাঠিয়ে দেবেন। নইলে বুড়োর কথা যদি ফলে যায়।

—যাবে না। দৃঢ়স্বরে কথার মধ্যেই প্রতিবাদ এবং দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়ে প্রদ্যোত সাইকেল চেপে চলে এসেছে। হি মাস্ট গ্রুভ হিমসেলফ প্রমাণ সে করবেই। উইচক্র্যাফটের মত এই হাতুড়ে বিদ্যের ভেলকি ভেঙে সে দেবেই। জীবনে তার মিশন আছে। শুধু অর্থোপার্জনের জন্য

সে ডাক্তার হয় নি।

কথাটা গোপন থাকে নি। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে পল্লবিত হয়ে সারা নবগ্রামেই ছড়িয়ে পড়ল। –প্রদ্যোত ডাক্তার নাকি জীবন মশায়কে জেলে দেবে! মতির মায়ের নিদান হেঁকেছে জীবন মশায়, ডাক্তার মতির মাকে বাঁচাবে। এবং তারপর দরকার হলে মামলা করবে। ম্যাজিস্ট্রেট, কমিশনার, মিনিস্টারের কাছে দরখাস্ত করবে। দরখাস্ত করবেহাতুড়ের চিকিৎসা করা আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হোক। কথাটা নিয়ে সবচেয়ে গরম এবং তীব্র আলোচনা হল বি কে মেডিক্যাল স্টোর্সে।

বিনয়ের ওষুধের দোকান–বি কে মেডিক্যাল স্টোর্স এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকান। ডাক্তারেরা যারা প্র্যাকটিসের সঙ্গে ওষুধেরও ব্যবসা করে তারা সকলেই বিনয়ের দোকান থেকে পাইকারি হারে ওষুধ কেনে। এ অঞ্চলে বিনয়ের দোকানের নামডাক খুব। ওষুধ নেন না শুধু চারুবাবু। চারুবাবুর দোকানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বিনয় দোকান খুলেছিল। চারুবাবু যেবার হাসপাতালের চাকরি ছাড়েন-হাসপাতালে আসে নতুন এম. বি. অহীনবাবু, সেইবার বিনয় দোকান খোলে। অহীনবাবুই খুলিয়েছিলেন। তার যত প্রেসক্রিপশন আসত বিনয়ের দোকানে, বিনয়ের দোকানে তিনি সন্ধের সময় নিয়মিত ঘণ্টা দুয়েক করে বসতেন। বিনা ফিয়ে রোগী দেখতেন। অহীনবাবুর পর তিন জন ডাক্তার এসেছেন হাসপাতালে–তাঁরাও অহীনবাবুর মতই বিনয়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। প্রদ্যোত কিন্তু তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নি। তার সঙ্গে কী কী নিয়ে বিনয়ের একটু-আধটু দরকষাকষি চলছে।

বি কে ফার্মাসির বিনয় চিকিৎসা জানে না, কিন্তু চিকিৎসকদের ডাক্তার-কবিরাজদের ইতিহাসে ইতিকথায় সে প্রায় শুকদেব বললেও অত্যুক্তি হয় না। দিন-রাত্রিই বিনয় এখানকার ডাক্তারদের নিয়ে আলোচনা করে। শশী পথ দিয়ে যাচ্ছিল হরিজন পল্লীতে রোগীর সন্ধানে। বিনয় তাকে ডেকে বললে—ডাক্তার, তামাক খেয়ে যাও। তারপর রসিকতা করে বলেছে—মলে, শশী ডাক্তার, তোমরা এবার মলে। প্রদ্যোত ডাক্তার বলেছে—সব হাতুড়ের রুটি মারব। জেলে দেব ব্যাটাদের। তারপর বিস্তৃত উত্তপ্ত আলোচনা।

শশী সেই কথা এসে বলেছে ডাক্তার-গিন্নিকে।

–কী দরকার? বিনা পয়সায় মতির মায়ের হাত দেখে নিদান হকার কী দরকার? এ কাল হল বিজ্ঞানের কাল। পাসকরা ডাক্তারদের কাল। সর্দি পিত্তি কফ নিদান—সেকালে চলত। একালে ওসব কেন? যত সব! হুঁ!

 

এই কথাটা ডাক্তারের অন্তরে বড় লাগে। জীবনের সকল দুঃখ-ব্যর্থতার উদ্ভব ওইখান থেকেই। মানুষের দেহে যেমন একটি স্থানে অকস্মাৎ একটি আঘাত লাগে বিষমুখ তীক্ষ্ণধার কোনো বস্তুতে, তারপর সেই ক্ষতবিন্দুকে কেন্দ্র করে বিষ ছড়ায় সর্বদেহে, এও ঠিক তেমনি। তার অদৃষ্ট। অদৃষ্ট ছাড়া কী আর বলা যায়! সঙ্গতি থাকতেও তাঁর ডাক্তারি পড়া হয় নাই। তিনি কলেজে পড়ে পাস করে ডাক্তার হলে, আতর-বউ—তুমিও আসতে না এ বাড়িতে।

বিচিত্ৰ ঘটনা সে। স্মরণ হতেই ডাক্তার দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন।

এক সর্বনাশী ছলনাময়ী তাঁর জীবনটাকে ব্যর্থ করে দিয়ে গিয়েছে। কাঁদী স্কুলে পাঠ্যজীবনে এই সর্বনাশীকে নিয়ে ওখানকার এক অভিজাত বংশের ছেলের সঙ্গে বিবাদ হল। ছেলেটিও তাঁর স্বজাতি, কায়স্থ। পড়ন্ত জমিদারবাড়ির ছেলে।

হায় রে অবুঝ কৈশোর! শক্তি যোগ্যতা বিচার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে না। কিশোর ছেলে তালপত্র খাড়া হাতে রাক্ষসের সঙ্গে যুদ্ধ করে। রাখাল ছেলে রাজার ছেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সঙ্কোচ অনুভব করে না, ভয় পায় না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *