০৫. বাসার একি অবস্থা

বিস্ময়ে চোখ কপালে তোলার ব্যবস্থা থাকলে সুলতানা চোখ কপালে তুলতেন না, ব্রহ্মতালুতে তুলে ফেলতেন। বাসার একি অবস্থা! প্রতিটি বালিশের তুলা ছেঁড়া। ঘরের মেঝেতে তুলার সমুদ্র। শুধু যে বালিশের তুলা বের করা হয়েছে তা না, লেপ নামিয়ে লেপের তুলাও বের করা হয়েছে।

তুহিন তুষার ঘটনা দেখে মজা পাচ্ছে। কানাকানি করছে। হাসি চাপার চেষ্টা করছে। ইদানীং তারা অতি অল্পতেই মজা পায়।

অনিকা ভীষণ অবাক। তার কোলে পুফি, পুফিও মনে হচ্ছে অবাক এবং ভীত। অনিকা মার দিকে তাকিয়ে বলল, বাসায় কী হয়েছে মা?

সুলতানা তিক্ত গলায় বললেন, তোমার বাবা লীলাখেলা করেছেন এগুলো লীলাখেলার আলামত।

অনিকা বলল, লীলাখেলা কী মা?

সুলতানা কঠিন গলায় বললেন, অকারণ কথা বলবে না। এখন আমার মাথা গরম। বিড়াল নিয়ে সামনে থেকে যাও। তুহিন তুষার তোমরাও সামনে থেকে যাও। খিক খিক করছ কেন? খিক খিক করার মতো কিছু হয়েছে?

তুহিন তুষার তাদের ঘরে গেল। অনিকা গেল পেছনে পেছনে। লীলাখেলা ব্যাপারটা কী জানতে হবে।

অনিকার প্রশ্নের জবাবে তুহিন বলল, খালুজান খালি বাড়ি পাইয়া এক মেয়েছেলে নিয়া আসছে। তার সাথে লটরপটর করছে। শুদ্ধ ভাষায় লটরপটররে কয় লীলাখেলা।

অনিকা বলল, ঐ মেয়ে আমাদের বালিশ ছিঁড়েছে কেন?

তুষার বলল, শ‍ইল গরম হইছে এই জন্য বালিশ ছিঁড়ছে। শইল গরম হইলে মাথা ঠিক থাকে না। এখন বুঝছ?

অনিকা কিছু না বুঝেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।

সুলতানা জোয়ার্দারের অফিসে টেলিফোন করেছেন। এই মুহূর্তেই সবকিছুর ফয়সালা হওয়া উচিত।

সুলতানা প্রায় চেঁচিয়ে বললেন, হ্যালো! হ্যালো।

জোয়ার্দার বললেন, তোমরা চলে এসেছ? সবাই ভালো? কারোর অসুখবিসুখ হয় নি তো?

সুলতানা বললেন, এই মুহূর্তে তুমি বাসায় আস।

অফিস ছুটি হবে পাঁচটায়। এই মুহূর্তে কীভাবে আসব?

আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। তুমি আধঘণ্টার মধ্যে আসবে। এতে চাকরি যদি চলে যায় চলে যাবে।

সুলতানা খট করে টেলিফোন রেখে দারোয়ানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে রওনা হলেন। ফ্ল্যাটবাড়ির কোথায় কী হচ্ছে এই খবর দারোয়ানদের কাছে থাকবেই। তারা হচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়ির গেজেট।

গতকাল রাতে ডিউটি কার ছিল?

ম্যাডাম আমার।

তোমাদের স্যার কাল রাতে কখন বাসায় ফিরেছেন?

অনেক রাত করে ফিরেছেন। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফিরলেন। কাদায় পানিতে মাখামাখি।

তোমার স্যারের সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল তার বয়স কত?

স্যারের সঙ্গে কোনো মেয়ে ছিল না।

তোমার নাম রশিদ না?

জি।

রশিদ আমার সঙ্গে টান্টবাজি করবে না। বুঝতে পারছি তোমাকে টাকা খাইয়েছে। কত টাকা খাইয়েছে বল। সে যদি পাঁচশ টাকা দিয়ে থাকে আমি দেব হাজার। সত্যি কথা বলতে হবে।

রশিদ চুপ করে আছে। সুলতানা বললেন, এই নাও হাজার টাকার নোট। এখন বল মেয়ে ছিল?

হুঁ।

কম বয়েসী মেয়ে?

হঁ।

সারা রাত ছিল?

হঁ।

মেয়েটা দেখতে কেমন?

ভালো। দেখতে সৌন্দর্য আছে। তয় গায়ের রঙ শ্যামলা।

শ্যামলা রঙ আমি তোমার স্যারকে গিলায়ে খাওয়াব।

সুলতানা তাঁর ফ্ল্যাটের দিকে রওনা হলেন

অনিকা, তুহিন তুষারের ঘরে। ঘর ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। অনিকা চোখমুখ লাল করে বসে আছে। তুহিন তুষার তাকে লীলালেখার মূল বিষয়টা বুঝাচ্ছে। বুঝাতে গিয়ে দু’বোনই আনন্দ পাচ্ছে। অনিকা তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু খারাপ শব্দও শিখল। ভয়ে এবং আতঙ্কে অনিকার হাত-পা কাঁপছে।

সুলতানা আবার টেলিফোন করলেন। জোয়ার্দারকে কঠিন গলায় বললেন, মেয়ের নাম কী বল?

জোয়ার্দার অবাক হয়ে বললেন, কোন মেয়ের নাম?

ন্যাকা সাজছ? কোন মেয়ের নাম তুমি জানো না! সব বের করে ফেলেছি। দারোয়ান মেয়েকে দেখছে।

ও আচ্ছা।

সুলতানা বললেন, ও আচ্ছা আবার কী? ও আচ্ছা তোমাকে গিলায়ে দিব। আজ শুধু বাসায় আস। এখন বল মেয়ের নাম বল।

জোয়ার্দার কিছু না ভেবেই বললেন, শায়লা।

রাস্তার মেয়ে নাকি অন্য কিছু।

ডাক্তার।

ও আচ্ছা ডাক্তার। ডাক্তার মেয়ে সারা রাত তোমার চিকিৎসা করেছে। চিকিৎসায় আরাম হয়েছে। শরীরের গরম কমেছে।

সুলতানা এইসব কী বলছ?

এখনো কিছুই বলছি না। কিছুই করছি না। আজ বাসায় ফিরে দেখ কী বলি আর কী করি।

.

সুলতানা তাঁর ভাই রঞ্জুকে খরব দিয়ে আনালেন। রঞ্জুর গায়ে এরশাদ সাহেবের সাফারি। বাঁ হাতে কালো সিল্কের রুমাল। প্রচুর টাকাপয়সা হবার পর রঞ্জু ঘন ঘন নিজের লেবাস বদলাচ্ছে। কোনোটাতেই তাকে মানাচ্ছে না। লম্বাটে ঠোটের কারণে চেহারায় কিছুটা বাঁদর ভাব থেকেই যাচ্ছে।

রঞ্জু বলল, ঘটনা তো মনে হয় ভয়ংকর। বালিশ লেপ কাটাকুটির বিষয়টা বুঝা যাচ্ছে না। দুলাভাইয়ের মাথা ঠিক আছে তো?

সুলতানা বললেন, মাথা ঠিক না থাকলে এখন ঠিক হবে। মাথা ঠিক করার অষুধ দেয়া হবে। সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরুক। দেখ আমি কী করি।

শুরুতেই হইচইয়ে যাবে না বুবু। ঠাণ্ডা মাথায় ক্রস এগজামিন করবে।

সুলতানা বললেন, যে অবস্থা এই লোক করেছে তারপর কি আর মাথা ঠাণ্ডা থাকবে?

রঞ্জু বলল, কথাবার্তা কী হবে তা কাজের মেয়ে দুটির শোনা ঠিক হবে না। আমি এই দুজনকে নিয়ে যাচ্ছি।

তোর যা ভালো মনে হয় কর।

অনিকা থাকুক তোমার সঙ্গে। তোমার মনের যে অবস্থা একা না থাকাই ভালো। ডিসকাশন যখন শুরু হবে তখন অনিকাকে পাশের ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিলেই হবে। তোমাদের পুরো কথাবার্তার একটা অডিও রেকর্ড থাকা দরকার। আমার এই মোবাইলে চার ঘণ্টা অডিও রেকর্ড হয়। তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি তুমি সময় বুঝে বোতাম টেপে দিও।

.

জোয়ার্দার অফিস ক্যান্টিনে বসে আছেন। তার সামনে হাফ প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি। তিনি অর্ডার দিয়েছেন পাবদা মাছ, সবজি, ডাল। ক্যান্টিনের বয় তাঁর সামনে কাচ্চি বিরিয়ানি রেখেই চলে গেছে। সে চরকির মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

খালেক এগিয়ে এল। তাঁর সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, স্যার আছেন কেমন?

ভালো।

একটা কথা বলেন তো স্যার। গত রাতে ড্রাইভার কি আপনাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল? নাকি বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে?

জোয়ার্দার জবাব দিলেন না। তিনি ক্যান্টিনের বয়কে খুঁজছেন। প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে। খাবারটা বদলানো দরকার।

খালেক বলল, আমার বাসায় এই নিয়ে বিরাট ক্যাচাল। আমার স্ত্রী একশ ভাগ নিশ্চিত ড্রাইভার আপনাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। ড্রাইভারের কোনো কথাই শামা শুনছে না। ড্রাইভারের চাকরি নট হয়ে গেছে।

তাই নাকি?

ভালো একজন ড্রাইভার পাওয়া আর গুপ্তধন পাওয়া একই ব্যাপার। এ জিনিস শামা বুঝবে না।

আপনার ড্রাইভার খুব ভালো?

অবশ্যই ভালো। গাড়িটাকে সে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে। এক বছর হয়েছে গাড়ি কিনেছি, এখনো গাড়িতে দাগ পড়ে নাই। এখন আপনি কি স্যার দয়া করে আমার স্ত্রীকে বলবেন ড্রাইভার আপনাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল। তা হলে গরিব বেচারার চাকরিটা থাকে, আমাকেও একজন ভালো ড্রাইভার হারাতে হয় না।

আচ্ছা আমি বলব।

আমি মোবাইলে শামাকে ধরে দিচ্ছি, আপনি একটু কথা বলুন। আমি জানি ড্রাইভার আপনাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। শামা যখন বলছে তখন ঘটনা এটাই। শামা একটা কথা বলেছে আর কথাটা ঠিক হয় নাই তা হবে না। পীর নিয়ে সংসার করি। যন্ত্রণার সীমা নাই। একজন পুরুষ মানুষের স্ত্রী প্রয়োজন, মহিলা পীর না। মহিলা পীর দিয়ে আমি কী করব? সকাল বিকাল কদমবুসি করব?

খালেক মোবাইল ফোনে তাঁর স্ত্রীকে ধরে ফোন জোয়ার্দারের দিকে এগিয়ে দিল। জোয়ার্দার ইতস্তত করে বললেন, শামা! একটা কথা।

শামা বলল, কী কথা বলতে যাচ্ছেন আমি জানি আপনাকে কিছু বলতে হবে না। ড্রাইভারের চাকরি থাকবে। স্যার আপনি ভালো আছেন?

হুঁ।

আমার ধারণা আপনি ভালো নেই। একদিন আমার বাসায় আসবেন। আপনার সঙ্গে আলাদা কথা বলব।

আচ্ছা।

আজ কি আসতে পারবেন?

না।

জোয়ার্দার টেলিফোন রেখে দিলেন। খালেক বলল, স্যার আপনি তো মূল কথাটাই বলেন নাই।

জোয়ার্দার বললেন, বলেছি। ড্রাইভারের চাকরি থাকবে।

খালেক আনন্দিত গলায় বলল, বলেন কী? বড় বাঁচা বাঁচলাম।

জোয়ার্দার বাসায় ফিরেছেন। বাসা আগের মতোই লণ্ডভণ্ড অবস্থায় আছে।

মেঝেতে তুলা উড়ছে। সুলতানার প্রেশার অতিরিক্ত বেড়েছে বলে ডাক্তার এসে ঘুমের অষুধ দিয়ে তাকে শুইয়ে রেখেছেন। অনিকা আতঙ্কে অস্থির হয়ে বিড়াল কোলে মায়ের পাশে বসা।

রঞ্জু দুই কাজের মেয়েকে নিজের বাড়িতে রেখে আবার ফিরে এসেছে। এর মধ্যে তার পোশাকের পরিবর্তন হয়েছে। সে পরেছে প্রিন্স কোট। গলায় বো টাই। তাকে হোটেলের বেয়ারার মতো লাগছে।

রঞ্জু বসার ঘরে। তার মুখ থমথম করছে। জোয়ার্দার বললেন, কেমন আছ রঞ্জু?

রঞ্জু বলল, আমি ভালো আছি। যদিও ভালো থাকার মতো অবস্থা আমাদের কারোরই নেই। আপনি এখানে বসুন।

বিচার সভা নাকি?

বিচার সভা হবে কী জন্য? আপনার বিচার করার আমি কে? ঘটনা কী বলুন তো? ঘর ভর্তি তুলা কেন?

বালিশ ছিঁড়ে তুলা বের হয়েছে।

বালিশ ছিঁড়েছে কে?

পুফি ছিঁড়েছে। অবিশ্যি আমি তার নাম দিয়েছি কুফি। কুফি। একটা বিড়াল।

দুলাভাই! আপনি তো মানসিক রোগীর মতো কথা বলছেন। আপনার কথাবার্তা যে অসংলগ্ন এটা বুঝতে পারছেন?

হুঁ।

আপনি কিছু গোপন করতে চাইলে করবেন। আমাদের সবারই গোপন করার মতো কিছু না কিছু থাকে। বুবু বলেছিল শায়লা নামের এক ডাক্তার মেয়েকে বাসায় নিয়ে রাত কাটিয়েছেন। শ্যামলা রঙ। কথাটা কি সত্যি?

জোয়ার্দার কিছু বলার আগেই সুলতানা ঝড়ের মতো উপস্থিত হলেন। অনিকা এল তাঁর পিছু পিছু। অনিকা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। বাবার জন্য তার খুব খারাপ লাগছে। সে জানে, বাবাকে মা বের করে দেবে। তার মা অনেকবার এই কথা অনিকাকে বলেছে। বাবা যাবে কোথায়?

রঞ্জু বলল, বুবু যা বলার ঠাণ্ডা গলায় বল। তোমার শরীর খুবই খারাপ। প্রেশার অনেক হাই—এটা মনে রাখতে হবে।

সুলতানা বলল, আমি ওই বদমাইশ লোকের সঙ্গে কথাই বলব না। তুই বদমাইশটাকে চলে যেতে বল। এ বাড়িতে সে থাকতে পারবে না।

জোয়ার্দার বললেন, আমি যাব কোথায়?

সুলতানা বললেন, রঞ্জু তুই ওই বদমাইশটাকে বল সে কোথায় যাবে এটা তার ব্যাপার। তাকে এই মুহূর্তে ঘর থেকে বের হতে বল।

রঞ্জু বলল, আজকের রাতটা থাকুক। ঘটনা কী আমরা জানি তারপর একটা ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

ঘটনা কী সবই জানা আছে। নতুন করে জানার কিছু নাই। তুই বদটাকে যেতে বল। আর যদি সে যেতে না চায় তা হলে কাজি ডেকে ডিভোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন, এই মুহূর্তে।

জোয়ার্দার উঠে দাঁড়ালেন। তাকালেন মেয়ের দিকে। অনিকা চোখ মুছছে। সে এখন আর বাবার দিকে তাকাচ্ছে না।

সুলতানা বললেন, বদমাইশের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটা নে। চেক করে দেখ সেখানে শায়লা নামের ডাক্তার মাগির কিছু আছে নাকি। ফোন চালাচালি নিশ্চয়ই করে।

জোয়ারর্দার পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রঞ্জুকে দিয়ে ঘর থেকে বের হলেন।

.

রাত অনেক হয়েছে। জোয়ার্দার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটা বেঞ্চে বসে আছেন। এ দিকটায় আলো নেই। অন্ধকার হয়ে আছে। কাছেই কোথাও রাতের ফুল ফুটেছে। তিনি ফুলের মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছেন। প্রচণ্ড ক্ষুধায় তিনি অস্থির হয়ে আছেন। দুপুরে তাঁর খাওয়া হয় নি। পাবদা মাছের জন্য অপেক্ষা করতে করতে টিফিনের টাইম শেষ হয়ে গেল। তাঁকে উঠে পড়তে হল।

মিঁয়াও।

জোয়ার্দার চমকে তাকালেন। ঝোপের আড়ালে বিড়ালটা বসে আছে। জোয়ার্দার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। একজন কেউ তো পাশে আছে। জোয়ার্দার বললেন, এই তোর খবর কী?

বিড়ালটা লাফ দিয়ে বেঞ্চে উঠে এল। জোয়ার্দার বললেন, তোর জন্য ভালো বিপদে পড়লাম। বালিশ ছিঁড়ে তুলা বের না করলে এই বিপদে পড়তাম না।

মিঁয়াও।

এখন বল, কোথায় যাওয়া যায়। আমার ছোট বোন থাকে যাত্রাবাড়ীতে। তার নাম ফাতেমা। একবার মাত্র গিয়েছি। বাড়ি খুঁজে বের করতে পারব না। ঠিকানাও জানি না।

আকাশে বিদ্যুৎ চমকাল। মেঘ তেমন নেই। বিদ্যুৎ যখন চমকাচ্ছে রাতে কোনো এক সময় ঝড়বৃষ্টি হবেই। জোয়ার্দার ঝড়বৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করছেন না। তিনি যেখানে বসে আছেন সেখানে ছাতার মতো আছে। তাঁর প্রধান সমস্যা হল ক্ষুধা। পাবদা মাছ দিয়ে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত খেতে পারলে হতো। জোয়ার্দার বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই কি খাওয়াদাওয়া করেছিস?

বিড়াল বলল, মিঁয়াও।

জোয়ার্দার শুয়ে পড়লেন। বিড়ালটা তার গাঘেঁষে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘের ওপর মেঘ জমছে। বৃষ্টি নামল বলে।

অনিকা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। বাসায় যে ঝামেলা যাচ্ছে এই ঝামেলায় বেচারা কি রাতে কিছু খেয়েছে? মেয়েটার তার বাবার সম্বন্ধে খুব খারাপ ধারণা হয়ে গেল। এটা নিয়ে তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন না। মানুষ যা তাই।

জোয়ার্দার নিশ্চিত বাসার অবস্থা ঠিকঠাক হয়ে যাবে, তখন অনিকাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবেন। অনিকা জীবজন্তু দেখতে খুব পছন্দ করে।

.

রঞ্জু তার দুলাভাইয়ের সেই মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করে একটি নাম্বার পেয়েছে যেখান থেকে রাত একটায় কল এসেছে। কথা হয়েছে এগার মিনিট বাইশ সেকেন্ড।

রঞ্জু এই নাম্বারে টেলিফোন করল। বিনীত গলায় জানতে চাইল, হ্যালো আপনি কে জানতে পারি?

শায়লা বললেন, টেলিফোন আপনি করেছেন। আপনার জানার কথা কাকে কল করছেন।

এটা আমার দুলাভাইয়ের মোবাইল সেট। আপনি রাত একটায় তাঁকে টেলিফোন করেছেন।

শায়লা বললেন, উনি আমার পেশেন্ট। আমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছেন বলেই আমি কল করেছি। এত রাত হয়েছে বুঝতে পারি নি।

উনি আপনার পেশেন্ট?

জি। আমি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট।

আমার দুলাভাইয়ের সমস্যাটা কী?

পেশেন্টের সমস্যা তো আপনাকে আমি বলব না।

আপনার নামটা কি জানতে পারি?

হ্যাঁ জানতে পারেন। আমার নাম শায়লা।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রঞ্জু টেলিফোনের লাইন কেটে সুলতানাকে বলল, ঘটনা তো আসলেই খারাপ। শায়লা নামের মেয়েই টেলিফোন করেছিল।

বলিস কী?

রঞ্জু বলল, বুবু অস্থির হয়ো না। যা করার করা হবে। আমার উপর বিশ্বাস রাখ। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *