৫. বাবা
দরজা খুলে বুবুন দেখল ডক্টর রাজীব হাসান হাসিহাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন, তার পাশে ফরসামতন একজন লম্বা মানুষ। রাজীব হাসান বললেন, “ভিতরে যাও মাসুদ।
ফরসা মতন লম্বা মানুষটি একটু অনিশ্চিতের মতো ভিতরে ঢুকল, বুবুন দেখল তার আম্মা অনেক কষ্টে নিজেকে থামিয়ে রেখেছেন, কিন্তু তার দুই চোখ : থেকে ঝরঝর করে পানি বের হতে শুরু করেছে। রাজীব হাসান অনেকবার বলে দিয়েছেন যেন কিছুতেই কোনোরকম হৈচৈ করা না হয়, এমন একটি ভান করতে হবে যেন পুরো ব্যাপারটি খুবই স্বাভাবিক। রাজীব হাসান যদি না বলতেন তা হলে আম্মা নিশ্চয়ই এখন ছুটে গিয়ে আব্বাকে ধরে ফেলতেন।
বুবুন অবাক হয়ে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে রইল, বাসায় আব্বার সব ছবিতে আব্বা কালো ফ্রেমের চশমা পরে আছেন, কিন্তু এখন আব্বার চোখে কোনো চশমা নেই। আব্বার গায়ে খুব সাধারণ পোশাক, শার্টটা নতুন কিন্তু ইস্ত্রি নেই এরকম একটা প্যান্ট। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, দেখে মনে হয় হাত দুটি নিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। আব্বার চেহারা দেখে মনে হয় কিছু-একটা দেখে একেবারে হকচকিয়ে গেছেন, দুই চোখে একই সাথে বিস্ময় এবং ভয়। বুবুন হতচকিত হয়ে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে রইল, এই তার আব্বা? তার নিজের আব্বা? আব্বা সম্পর্কে তার নিজের ভিতরে যেসব ধারণা ছিল তার কিছুই এই মানুষটার মাঝে নেই, এই মানুষটা একেবারে সাধারণ চেহারার সাধারণ একজন মানুষ, বড়দের মাঝে যেরকম একটা আত্মবিশ্বাস থাকে, তার কিছুই এর মাঝে নেই, একেবারে ছোট একজন বাচ্চার মতো। একজন বড় মানুষের শরীরে যেন একটা ছোট বাচ্চা আটকা পড়ে আছে–দেখে বুবুনের এমন মায়া হল যে সেটি আর বলার মতো নয়।
রাজীব হাসান বুবুন এবং আম্মাকে দেখিয়ে আব্বাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মাসুদ, তুমি এদের চিনতে পারছ?”
আব্বা ভালো করে বুবুন বা আম্মার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “নাহ্!”
“দেখো ভালো করে তাকিয়ে। এই যে ইনি হচ্ছেন তোমার স্ত্রী। আর এই যে তোমার ছেলে।”
আব্বা কেমন যেন লজ্জা পেয়ে গেলেন, বলেন, “ধুর!”
“সত্যি।”
আব্বা এবার হেসে ফেললেন যেন ডক্টর রাজীব হাসান খুব মজার কথা বলেছেন। আম্মা এই প্রথমবার আব্বার সাথে কথা বললেন। অনেক চেষ্টা করে নিজেকে শান্ত রেখে বললেন, “মাসুদ। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে দেখ চিনতে পার কি না।”
আব্বা আম্বার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “না।”
রাজীব হাসান বললেন, “ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ। ইনি তোমার স্ত্রী।”
আব্বা আবার কেমন জানি লজ্জা পেয়ে হেসে বললেন, “ডাক্তার সাহেব শুধু আমার সাথে ঠাট্টা করেন।
“না মাসুদ, আমি মোটেই ঠাট্টা করছি না। তোমার মনে নেই তাই তুমি চিনতে পারছ না।”
আব্বা কিছু বললেন না কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা গেল রাজীব হাসানের একটা কথাও বিশ্বাস করেননি।
রাজীব হাসান আবার বলেলন, “তুমি এখানে কয়েকদিন থাকবে মাসুদ?”
আব্বা কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলেন, তাড়াতাড়ি মাথা নেড়ে বললেন, “না।”
“কেন না?”
“আমি আপনার সাথে যাব।”
“ঠিক আছে আমি নাহয় কয়েকদিন পরে এসে তোমাকে নিয়ে যাব। তুমি কয়েকদিন এখানে থাকো। ঠিক আছে?”
আব্বা কেমন যেন ভয়ে ভয়ে চারিদিকে তাকালেন, আম্মার চোখে চোখ পড়তেই তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন, বুবুনের দিকে ভালো করে তাকালেন না, ঘুরে ডক্টর রাজীব হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, “না, আমি এখানে থাকব না।”
“কেন থাকবে না?”
আব্বা কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে বসে রইলেন। রাজীব হাসান জিজ্ঞেস করলেন, “ভয় করে?”
আব্বা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়লেন। রাজীব হাসান বললেন, “তোমার ভয় কী? এরা তোমার একেবারে সবচেয়ে আপন মানুষ। একজন হচ্ছে তোমার স্ত্রী, আরেকজন ছেলে। এরা তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে–আমি তোমাকে যত ভালোবাসি তার চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসে।”
“না, আমি থাকব না। আমি যাব” বলে আব্বা দাঁড়িয়ে গেলেন। বুবুন আম্মার দিকে তাকাতে পারছিল না। আম্মাকে দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি এক্ষুনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠবেন, কিন্তু আম্মা কাঁদলেন না, অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন।
আব্বা দরজার দিকে হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে পিছনে তাকালেন এবং প্রথমবার দেয়ালে ফ্রেম-করা তাঁর নিজের ছবিটা দেখতে পেলেন। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা সাদা একটা পাঞ্জাবি পরে আছেন–আব্বার কোলে বুবুন, তার বয়স তখন এক কিংবা দুই, বুবুনের হাতে একটা লা। দমকলের খেলনাগাড়ি। আব্বা কী মনে করে হেঁটে হেঁটে ছবিটার কাছে গেলেন, কেমন যেন হতচকিতের মতো ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। দেখে মনে হল কিছু-একটা মনে করার চেষ্টা করছেন, তাঁর চোখেমুখে কেমন যেন একটা যন্ত্রণার ভাব ফুটে উঠল। আব্বা হাত দিয়ে ছবির যেই অংশে বুবুন রয়েছে সেখানে হাত বুলালেন, বুবুন দেখল আব্বার চোখ হঠাৎ পানিতে ভরে উঠেছে। আব্বা ঘরে রাজীব হাসানের দিকে তাকালেই তারপর ফিসফিস করে বললেন, “বুবুন!”
ঘরের সবাই একসাথে চমকে উঠল, আব্বা বুবুনকে চিনতে পেরেছেন! আম্মা দুই পা এগিয়ে এসে বললেন, “হ্যাঁ বুবুন!”
আব্বা আবার আস্তে আস্তে বললেন, “আমার বুবুন।”
আম্মা বললেন, “হ্যাঁ, তোমার বুবুন। এই দ্যাখ তোমার বুবুন কত বড় হয়েছে।”
আব্বা এবারে প্রথমবার বুবুনের দিকে ভালো করে তাকালেন। কেমন জানি একধরনের বিস্ময় এবং কৌতূহল নিয়ে বুবুনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আবার তার মুখে একধরনের যন্ত্রণার চিহ্ন ফুটে উঠল। বুবুন একদৃষ্টে তার আব্বার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আর নিজের আব্বা তার এত কাছে দাঁড়িয়েও তাকে চিনতে পারছেন না! হঠাৎ করে তার বুকের ভিতরে কী যেন হয়ে গেল, সবকিছু ভুলে সে ভাঙা গলায় ডাকল, “আব্বা!”
আব্বার মুখে যন্ত্রণার চিহ্নটা হঠাৎ যেন আরও বেড়ে গেল। বুবুনের চোখে পানি এসে যায় হঠাৎ, অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখে বলল, “আব্বা! আমি বুবুন।”
খুব ধীরে ধীরে আব্বার মুখে শিশুর মতো একধরনের হাসি ফুটে উঠল, বুবুনের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “বুবুন! আমার বুবুন?”
“হ্যাঁ আব্বা।” বুবুন হঠাৎ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। আব্বা এগিয়ে এসে শার্টের আস্তিন দিয়ে বুবুনের চোখ মুছিয়ে দিয়ে রাজীব হাসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বুবুন অনেক বড় হয়ে গেছে।”
“হ্যাঁ। বড় হয়ে গেছে।”
“অনেক বড় হয়ে গেছে।”
“হ্যাঁ, অনেক বড় হয়ে গেছে।”
“আগে ছোট ছিল।” আব্বা হাত দিয়ে দেখালেন, “এতটুকু ছিল আগে। এই যে এতটুকু।”
রাজীব হাসান এগিয়ে এসে আব্বার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, “তুমি কয়েকদিন তোমার ছেলের সাথে থাকো। যদি তোমার ভালো না লাগে তা হলে আমি নিয়ে যাব।”
আব্বা কিছু বললেন না, কেমন যেন খুব চিন্তিত মুখে রাজীব হাসানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। রাজীব হাসান বললেন, “থাকবে?”
আব্বা বললেন, “সত্যি সত্যি আমাকে নিয়ে যাবেন তো?”
রাজীব হাসান হেসে ফেলে বললেন, “আমি কি কখনো তোমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছি?”
আব্বা মাথা নাড়লেন, “না, বলেন নাই।”
“তাহলে?”
রাজীব হাসান চলে যাবার পর আব্বা সোফায় সোজা হয়ে বসে রইলেন। আম্মা পাশের সোফায় বসলেন, আম্মার পাশে বসল বুবুন। আব্বা আড়চোখে একবার আম্মার দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আম্মা নরম গলায় বললেন, “মাসুদ। তোমার খিদে পেয়েছে?”
“নাহ্।”
“কী খেয়েছ?”
“ভাত। ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত।”
“তা হলে কি চা খাবে একটু?”
“আমি চা খাই না। চা খাওয়া ভালো না।”
“কেন? কী হয় চা খেলে?”
“চা খেলে রাতে ঘুম হয় না। আর গায়ের রং কালো হয়ে যায়।”
আম্মা হেসে ফেলে বললেন, “আমি তো অনেক চা খাই। আমার গায়ের রং কি কালো হয়েছে?”
আব্বা আড়চোখে একবার আম্মার দিকে তাকিয়ে বললেন, “নাহ! এখনও হয় নাই।”
“তুমি কি তা হলে দুধ খাবে?”
“দুধ খাওয়া ভালো। গায়ে জোর হয়।”
“খাবে তা হলে?”
“নাহ্। আমি খাব না। বুবুন খাবে।”
আম্মা বুবুনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বুবুন, তোমার আব্বা বলেছে তোমাকে দুধ খেতে হবে!”
বুবুন কাতর গলায় বলল, “না আম্মা! প্লিজ!”
আব্বা হাসি-হাসি মুখে বললেন, “বুবুন দুষ্টু। দুধ খেতে চায় না।”
আব্বাকে খুশি করার জন্য বুবুনকে এক গ্লাস দুধ আর আস্ত একটা কলা খেতে হল। আব্বার সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ার নিয়ম। তাই একটু পরেই আম্মা আর বুবুন মিলে তাকে তার শোয়ার ঘরে নিয়ে গেলেন। আব্বা তার বিছানাটা ভালো করে উলটে পালটে দেখলেন, জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলেন, তারপর বেশ অনেকবার লাইট-সুইচ অন-অফ করে দেখলেন। আব্বার জন্যে নতুন একটা স্লিপিং সুট কেনা হয়েছে, আব্বার সেটা খুব পছন্দ হল বলে মনে হল। আব্বাকে বাখরুম দেখিয়ে দেওয়া হল, সেখানে তার জন্যে নতুন টুথব্রাশ টুথপেস্ট রাখা আছে। আব্বা টুব্রাশে টুথপেস্ট লাগাতে গিয়ে ভুলে বেশি জোরে টিপে অনেকখানি টুথপেস্ট বের করে ফেললেন। আব্বা তখন বাড়তি টুথপেস্টটা আবার টুথপেস্টের টিউবে ঢোকানোর চেষ্টা করতে লাগলেন, কাজটি মোটেও সহজ নয়, কিছুক্ষণের মাঝেই তার হাত টুথপেস্টে মাখামাখি হেয় গেল। আব্বা খুব বিরক্ত হয়ে বললেন, “পাজি টুথপেস্ট।”
বুবুন বলল, “টুথপেস্ট একবার বের হয়ে গেলে ভিতরে ঢোকানো যায় না, আব্বা।”
আব্বা মনে হল খুব অবাক হয়ে গেলেন, “যায় না?”
“না।”
আব্বা তখন বাচ্চাদের মতো মুখ উঁচু করে দাঁত ব্রাশ করতে শুরু করলেন তাকে দেখে মনে হতে লাগল ঠিক করে দাঁত ব্রাশ করার মাঝেই পৃথিবীর সবকিছু নির্ভর করছে।
দাঁত ব্রাশ করে আব্বা বিছানায় পিঠ সোজা করে বসে রইলেন। বুবুন জিজ্ঞেস করল, “আব্বা, তোমার এই ঘরটা পছন্দ হয়েছে?”
আব্বা মাথা নাড়লেন, “নাহ্। বেশি পছন্দ হয় নাই।”
বুবুন খুকখুক করে হেসে ফেলল, আব্বা যে সত্যিই করে ছোট একটা বাচ্চার মতো হয়ে গেছেন এটাই তার প্রমাণ। একজন বড় মানুষ কখনোই এরকম কথা বলে না। বুবুন জিজ্ঞেস করল, “কেন বেশি পছন্দ হয় নাই?”
“জানালাটা উলটা দিকে।”
“উলটা দিকে?”
“হ্যাঁ। সবসময় মাথার কাছে জানালা থাকতে হয়। আব্বা বিছানাটা দেখিয়ে বললেন, “এইখানে জানালাটা পায়ের কাছে।”
বুবুন বালিশটা নিয়ে বিছানার অন্যপাশে দিয়ে বলল, “এখন এই দিকে মাথা দিয়ে ঘুমাবে। তা হলেই মাথার দিকে জানালা হবে।”
ব্যাপারটা বুঝতে আব্বার খানিকক্ষণ সময় লাগল। যখন বুঝতে পারলেন তখন হঠাৎ ছেলেমানুষের মতো খুশি হয়ে উঠলেন। মাথা নেড়ে নেড়ে বললেন, “ফার্স্টক্লাস বুদ্ধি। বুবুনের ফার্স্টক্লাস বুদ্ধি!”
.
অনেকদিন পর বুবুন আম্মার সাথে শুয়েছে। অনেক বড় হয়েছে তাই আম্মার সাথে শোয়া হয় না, সবসময় আলাদা ঘরে নিজের বিছানায় ঘুমায়। আজকে শুয়ে সে হাত দিয়ে আম্মার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “আম্মা, তোমার কি মন-খারাপ?”
“কেন? মন-খারাপ হবে কেন?”
“আব্বা যে তোমার সাথে কথা বলছেন না?”
আম্মার একটু হাসলেন,বললেন, “না রে পাগল! সেজন্যে আমার একটুও মন-খারাপ না। আস্তে আস্তে আমাকে যখন চিনবে তখন কথা বলবে। আমি এগারো বছর অপেক্ষা করলাম আর এই কয়দিনে কী হবে?”
“আম্মা!”
“কী?”
“তোমাকে দেখলেই আব্বা কেমন জানি লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে। দেখেছ?”
বুবুনের কথা শুনে আম্মাও মনে হল একটু লজ্জা পেয়ে গেলেন, বললেন, “সে রকমই মনে হচ্ছে।”
“কী আশ্চর্য! নিজের বউকে দেখে লজ্জা! হি হি হি!”
“পাকামো করবি না, ঘুমা।”
“আম্মা, আব্বা যদি কখনোই তোমাকে না চিনতে পারে, তা হলে কী হবে?”
“না চিনলে নাই। আমার সামনে তো থাকবে। তা হলেই হবে–আমি আরকিছু চাই না!”
গভীর রাতে বুবুনের মনে হল আম্মা বিছানা থেকে উঠছেন। বুবুন জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাও মা?”
আম্মা ফিসফিস করে বললেন, “তোর আব্বাকে দেখে আসি।”
“আমিও আসি?”
“আয়। শব্দ করিস না কিন্তু!”
বুবুন আম্মার সাথে সাথে আব্বার ঘরে গেল। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসেছে, সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে আব্বা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছেন। ছোট বাচ্চারা যেভাবে পা ভাঁজ করে গোল হয়ে শুয়ে থাকে, থুতনি লেগে যায় হাঁটুর মাঝে ঠিক সেভাবে। আম্মা পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলেন, বুবুন একেবার আম্মার গায়ের সাথে লেগে রইল। আম্মা কিছুক্ষণ একেবারে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর খুব সাবধানে মশারি তুলে আব্বার কপালে হাত রাখলেন। বুবুন ফিসফিস করে বলল, “কী করছ আম্মা?”
“একটু ছুঁয়ে দেখি।”
আব্বা হঠাৎ ঘুমের মাঝে বিড়বিড় করে কিছু-একটা বলে মাথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরে শুলেন–আম্মা তাড়াতাড়ি পিছনে সরে এলেন। বুবুনকে ফিসফিস করে বললেন”তুই যা ঘুমা।”
“তুমি কী করবে?”
“আমি এখানে বসে থাকি কিছুক্ষণ।”
“কোথায় বসবে?”
“এই তো এখানে।” বলে আম্মা দরজায় হেলান দিয়ে বসলেন। হাঁটুতে মুখ রেখে বললেন, “তোর আব্বাকে দেখি খানিকক্ষণ। কতদিন দেখি না!”
বুবুন বিছানায় চুপচাপ শুয়ে রইল, চারিদিকে কী সুমসাম নীরবতা–মনে হয় যেন একটা ফিনফিনে পাতলা কাঁচের গ্লাস, টুং করে শব্দ হলেই ঝনঝন করে ভেঙে পড়বে।