৫
প্যাডে ডাক্তার সাহেবের নাম লেখা। এ মল্লিক এমবিবিএস (আপার) মেডিকেল অফিসার, নেত্রকোণা সদর। কোনো তারিখ নেই। চিঠি লেখা হয়েছে ইংরেজি ও বাংলা মিশিয়ে। মিহিরবাবুর নাম ইংরেজিতে। বাকি অংশ বাংলায়।
মিহিরবাবু,
জরুরিভিত্তিতে একটা অপারেশন করতে হচ্ছে। কামরুদ্দিন সাহেবের অ্যাপনডিক্স। প্রায় র্যাপচারের পর্যায়ে। আপনার সাহায্য প্রয়োজন। হাসপাতালে চলে আসুন। হাসপাতালে অপারেশনের সরঞ্জাম অপ্রতুল। তবু করতে হবে। এই উকিল সাহেবের কাছে আমি নানান বিষয়ে ঋণী।
বিনীত
এ মল্লিক
এই চিঠি মিসির আলি খুব কম করেও পঞ্চাশ বার পড়েছেন। তাতে নতুন কোনো তথ্য বের হয়ে আসে নি। যিনি এই চিঠি লিখেছেন, তাঁর চরিত্র সম্পর্কেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে মনে হচ্ছে, ভদ্রলোকের বেশি কথা বলার অভ্যাস আছে। জরুরি অবস্থায় তিনি চিঠি লিখছেন, তবু সেখানেও কিছু ফালতু কথা আছে, যেমন–’এই উকিল সাহেবের কাছে আমি নানান বিষয়ে ঋণী।’ সঙ্কটের সময়ে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যই দিই, অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিই না। ইনি দিচ্ছেন। যে-জন্যে ক্ষীণ সন্দেহ হয়, চিঠিটা হয়তো ডাক্তার সাহেবের লেখা নয়।
মুনির একটা প্যাড জোগাড় করে নিজেই লিখেছে কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়েছে। এখন কথা হল, এটা সে কেন করবে? তার মোটিভ কি?
ঘটনাটা যদি বিদেশে ঘটত, তাহলে একটা মোটিভ খুঁজে পাওয়া যেত। পাবলিসিটি। পত্রিকায় ছাপা হত। টিভি প্রোগ্রাম হত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে, তদন্তকারী টীম বসত। এক দল বলত পুরোটাই ভাঁওতা, অন্য দল বলত, না, ভাঁওতা নয়–ব্যাপারটার মধ্যে কিছু-একটা আছে।
আমেরিকায় কানসাস সিটির এক মহিলাকে নিয়ে এ-রকম হল। ভদ্রমহিলা সেইন্ট পল স্কুলের গেম টীচার। একবার এক সপ্তাহ স্কুলে এলেন না। এক সপ্তাহ পার করে যখন এলেন তখন তাঁর চোখ-মুখ শুকিয়ে আমসি। দৃষ্টি উদ্ভ্রান্ত। ডাকলে সাড়া দেন না। দু’ বার-তিন বার ডাকতে হয়। ভদ্রমহিলা এক অদ্ভুত গল্প বললেন। তার মৃতা মা নাকি এক দুপুরবেলা হঠাৎ তাঁর বাসায় উপস্থিত। স্বাভাবিক মানুষের মতো গল্প শুরু করলেন। লাঞ্চে কি আছে জিজ্ঞেস করে শাওয়ার নিতে গেলেন। তিনি দু’ দিন থাকলেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো খাওয়াদাওয়া করলেন। ঘুমুলেন। প্রচুর গল্প করলেন। তবে বাড়ি থেকে বেরুলেন না এবং নিজের মেয়েকেও বেরুতে দিলেন না। বেশির ভাগ গল্পই পরকালসংক্রান্ত। কিছু-কিছু উপদেশও দিলেন। বিশেষ কোনো উপদেশ নয়। ধর্মগ্রন্থে যে-ধরনের উপদেশ থাকে, সে ধরনের উপদেশ। তারপর এক দিন ভরদুপুরে যেভাবে এসেছিলেন ঠিক সেভাবেই চলে গেলেন।
স্কুল শিক্ষিকার এই ঘটনা নিয়ে সারা আমেরিকায় হৈচৈ পড়ে গেল। ভদ্রমহিলা লাই ডিটেকটর টেস্ট দিলেন। দেখা গেল তিনি সত্যি কথাই বলছেন। এক দল বলা শুরু করল—লাই ডিটেকটর টেস্ট মানসিক ব্যাধিগ্রস্তদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ভদ্রমহিলা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। ভদ্রমহিলা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত নাকি ব্যাধিগ্রস্ত নন তা বের করার জন্যে আবার বিশেষজ্ঞদের টীম বসল। হুলস্থুল ব্যাপার।