০৫. পাঠান অত্যন্ত অলস এবং আড্ডাবাজ

পাঠান অত্যন্ত অলস এবং আড্ডাবাজ, কিন্তু আরামপ্রয়াসী নয় এবং যেটুকু সামান্য তার বিলাস, তার খরচাও ভয়ঙ্কর বেশী কিছু নয়। দেশভ্রমণকারী গুণীদের মুখে শোনা যে, যাদের গায়ের জোর যেমন বেশী, তাদের স্বভাবও হয় তেমনি শান্ত। পাঠানদের বেলায়ও দেখলুম কথাটা খাঁটি। কাগজে আমরা হামেশাই পাঠানদের লুটতরাজের কথা পড়ি তার কারণও আছে। অনুর্বর দেশ, ব্যবসাবাণিজ্য করতে জানে না, পল্টনে তো আর তামাম দেশটা ঢুকতে পারে না, কাজেই লুটতরাজ ছাড়া অন্য উপায় কোথায়? কিন্তু পেটের দায়ে যে অপকর্ম সে করে, মেজাজ দেখাবার জন্য তা করে না। তার আসল কারণ অবশ্য পাঠানের মেজাজ সহজে গরম হয় না— পাঞ্জাবীদের কথা স্বতন্ত্র। এবং হলেও সে চট করে বন্দুকের সন্ধান করে না। তবে সব জিনিসেরই দুটো একটা ব্যত্যয় আছে— পাঠান তো আর খুদ খুদাতালার আপন হাতে বানানো ফিরিস্তা নয়। বেইমান বললে পাঠানের রক্ত খাইবার পাসের টেম্পারেচার ছাড়িয়ে যায়, আর ভাইকে বাঁচাবার জন্য সে অত্যন্ত শান্তমনে যোগাসনে বসে আঙুল গোণে, নিদেনপক্ষে তাকে কটা খুন করতে হবে। কিন্তু হিসেবনিকেশে সাক্ষাৎ বিদ্যেসাগর বলে প্রায়ই ভুল হয় আর দুটো-চারটে লোক বেঘোরে প্রাণ দেয়। তাই নিয়ে তন্বীতম্ব করলে পাঠান সকাতর নিবেদন করে, কিন্তু আমার যে চার-চারটে বুলেটের বাজে খরচা হল তার কি? তাদের গুষ্ঠি-কুটুম কান্নাকাটি করছে, কিন্তু একজনও একবারের তরে আমার বাজে খরচার খেসারতির কথা ভাবছে না। ইনসান বড়ই খুদপরস্ত— সংসার বড়ই স্বার্থপর।

পরশু রাতের দাওয়াতে এ রকম নানা গল্প শুনলুম। এসব গল্প বলার অধিকার নিমন্ত্রিত ও রবাহুতদের ছিল। একটা জিনিসে বুঝতে পারলুম যে, এদের সকলেই খাঁটি পাঠান।

সে হল তাদের খাবার কায়দা। কার্পেটের উপর চওড়ায় দুহাত, লম্বায় বিশ-ত্রিশহাত প্রয়োজন মত একখানা কাপড় বিছিয়ে দেয়। সেই দস্তরখানের দুদিকে সারি বেঁধে এক সারি অন্য সারির মুখোমুখি হয়ে বসে। তারপর সব খাবার মাঝারি সাইজের প্লেটে করে সেই দস্তরখানে সাজিয়ে দেয়; তিন থালা আলু-গোন্ত, তিন থালা শিক-কাবাব, তিন থালা মুগী-রোস্ট, তিন থালা সিনাকলিজা, তিন থালা পোলাও, এই রকম ধারা সব জিনিস একখানা দস্তরখানের মাঝখানে, দুখানা দুই প্রান্তে। বাঙালী আপন আপন থালা নিয়ে বসে; রান্নাঘরের সব জিনিসই কিছু না কিছু পায়। পাঠানদের বেলা তা নয়। যার সামনে যা পড়ল, তাই নিয়ে সে সন্তুষ্ট। প্রাণ গেলেও কেউ কখনো বলবে না, আমাকে একটু মুর্গী এগিয়ে দাও, কিম্বা আমার শিক-কাবাব খাবার বাসনা হয়েছে। মাঝে মাঝে অবশ্যি হঠাৎ কেউ দরদ দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলে, আরে হোথায় দেখো গোলাম মুহম্মদ ঢাড়শ চিবোচ্ছে, ওকে একটু পোলাও এগিয়ে দাও না–সবাই তখন হাঁ-হাঁ করে সব কটা পোলাওয়ের থালা ওর দিকে এগিয়ে দেয়। তারপর মজলিস গালগল্পে ফের মশগুল। ওদিকে গোলাম মুহম্মদ শুকনো পোলাওয়ের মরুভূমিতে তৃষ্ণায় মারা গেল, না মাংসের থৈ-থৈ ঝোলে ডুবে গিয়ে প্রাণ দিল, তার খবর ঘণ্টাখানেক ধরে আর কেউ রাখে না। এবং লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, পাঠান আড্ডা জমাবার খাতিরে অনেক রকম আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। গল্পের নেশায় বে-খেয়ালে অন্ততঃ আধ ডজন অতিথি সুদ্ধ শুকনো রুটি চিবিয়েই যাচ্ছে, চিবিয়েই যাচ্ছে। অবচেতন ভাবটা এই, পোলাওমাংস বাছতে হয়, দেখতে হয়, বহুৎ বয়নাক্কা, তাহলে লোকের মুখের দিকে তাকাব কি করে, আর না তাকালে গল্প জমবেই বা কি করে।

অথচ এরা সবাই ভদ্রসন্তান, দু পয়সা কামায়ও বটে। বাড়িতে নিশ্চয়ই পছন্দমাফিক পোলও-কালিয়া খায়। কিন্তু পাঠান জীবনের প্রধান আইন, একলা বসে নবাবী খানা খাওয়ার চেয়ে ইয়ারবক্সীর সঙ্গে শুকনো রুটি চিবনো ভালো। ওমর খৈয়ামও বলেছেন,

তব সাথী হয়ে দগ্ধ মরুতে
পথ ভুলে তবু মরি।
তোমারে ছাড়িয়ে মসজিদে গিয়া
কী হবে মন্ত্র স্মরি?

কিন্তু ওমর বুর্জুয়া কবির বিদগ্ধ পদ্ধতিতে আপন বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। পাঠান ভাঙা ভাঙা উদুতে ঐ একই আপ্তবাক্য প্রলেতারিয়া কায়দায় জানায়–

দোস্ত!
তুমহারী রোটি, হমারা গোস্ত!

অর্থাৎ নেমন্তন্ন করেছ সেই আমার পরম সৌভাগ্য। শুধু শুকনো রুটি? কুছ পরোয়া নাহী। আমি আমার মাংস কেটে দেব।

কাব্যজগতে যে হাওয়া বইছে, তাতে মনে হয়, ওমরের শরাবের চেয়ে মজুরের ধেনোর কদর বেশী।

তবে একটা কথা বলে দেওয়া ভালো। পাঠানের ভিতর বুর্জুয়া প্রলেতারিয়ায় যে তফাৎ, সেটুকু সম্পূর্ণ অর্থ নৈতিক। অনুভূতির জগতে তারা একই মাটির আসনে বসে, আর চিন্তাধারায় যে পার্থক্য সে শুধু কেউ খবর রাখে বেশী, কেউ কম। কেউ সেক্সপীয়র পড়েছে, কেউ পড়েনি। ভালোমন্দ বিচার করার সময় দুই দলে যে বিশেষ প্রভেদ আছে, মনে হয়নি। আচার-ব্যবহারে এখনো তারা গুষ্ঠির ঐতিহ্যগত সনাতন জান-দেওয়া-নেওয়ার পন্থা অনুসরণ করে।

এসব তত্ত্ব আমাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন ইসলামিয়া কলেজের এক অধ্যাপক। অনেকক্ষণ ধরে নানা রঙ, নানা দাগ কেটে সমাজতাত্ত্বিক পটভূমি নির্মাণ করে বললেন–

এই ধরুন আমার সহকর্মী অধ্যাপক খুদাবখশের কথা। ইতিহাসে অগাধ পণ্ডিত। ইহসংসারে সব কিছু তিনি অর্থনীতি দিয়ে জলের মত তরল করে এই তৃষ্ণার দেশে অহরহ ছেলেদের গলায় ঢালছেন। ধর্ম পর্যন্ত বাদ দেন না। যীশু খ্রীস্ট তার ধর্ম আরম্ভ করেছিলেন ধনের নবীন ভাগবণ্টনপদ্ধতি নির্মাণ করে; তাতে লাভ হওয়ার কথা গরীবেরই বেশী তাই সবচেয়ে দুঃখী জেলেরা এসে জুটেছিল তাঁর চতুর্দিকে। মহাপুরুষ মুহম্মদও নাকি সুদ তুলে দিয়ে অর্থবণ্টনের জমিকে আরবের মরুভূমির মত সমতল করে দিয়েছিলেন। এসব তো ইহলোকের কথা–পরলোক পর্যন্ত খুদাবখশ অর্থনৈতিক বাঁদা চালিয়ে চিকণ মসৃণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু থাক এসব কচকচানি মোদ্দা কথা হচ্ছে ভদ্রলোক ইতিহাসের দূরবীনে আপন চোখটি এমনি চেপে ধরে আছেন যে অন্য কিছু তার নজরে পড়ে কিনা সে বিষয়ে আমাদের সকলের মনে গভীর সন্দেহ ছিল।

মাসখানেক পূর্বে তার বড় ছেলে মারা গেল। ম্যাটিক ক্লাশে পড়ত, মেধাবী ছেলে, বাপেরই মত পড়াশুনায় মশগুল থাকত। বড় ছেলে মারা গিয়েছে, চোট লাগার কথা, কিন্তু খুদাবখশ নির্বিকার। সময়মত কলেজে হাজিরা দিলেন। চায়ের সময় আমরা সন্তর্পণে শোক নিবেদন করতে গিয়ে আরেক প্রস্থ লেকচর শুনলুম, জরথুস্ত্র কোন্ অর্থনৈতিক কারণে রাজা গুশআপকে তার নূতন ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। তিন দিন বাদে দুসরা ছেলে টাইফয়েডে মারা গেল–খুদাবখশ বৌদ্ধ ধর্মের কি এক পিটক, না খোদায় মালুম কি, তাই নিয়ে বাহ্যজ্ঞানশূন্য। এক মাস যেতে না যেতে স্ত্রী মারা গেলেন পিত্রালয়ে-খুদাবখশ তখন সিন্ধুর পারে পারে সিকন্দর শাহের বিজয়পন্থার অর্থনৈতিক কারণ অনুসন্ধানে নাককান বন্ধ করে তুরীয়ভাব অবলম্বন করেছেন।

আমরা ততদিনে খুদাবখশের আশা ছেড়ে দিয়েছি। লোকটা ইতিহাস করে করে অমানুষ হয়ে গিয়েছে এই তখন আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আর পাঠানসমাজ যখন মনুষ্যজাতির সর্বোচ্চ গৌরবস্থল তখন আর কি সন্দেহ যে খুদাবখশের পাঠানত্ব সম্পূর্ণ কপূর হয়ে গিয়ে তার ঐতিহাসিক টেলিস্কোপের পাল্লারও বহু উধ্বে দূরদূরান্তরে পঞ্চেন্দ্ৰিয়াতীত কোন্ সূক্ষ্মলোকে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

এমন সময় মারা গেল তাঁর ছোট ভাই— পল্টনে কাজ করত। খুদাবখশের আর কলেজে পাত্তা নেই। আমরা সবাই ছুটে গেলুম খবর নিতে। গিয়ে দেখি এক প্রাগৈতিহাসিক ছেড়া গালচের উপর খুদাবখশ গড়াগড়ি দিচ্ছেন। পুথিপত্র, ম্যাপ, কম্পাস চতুর্দিকে ছড়ানো। গড়াগড়িতে চশমার একটা পরকলা ভেঙে গিয়েছে। খুদাবখশের বুড়া মামা বললেন, দুদিন ধরে জল স্পর্শ করেননি।

হাউ হাউ করে কাঁদেন আর বলেন, আমার ভাই মরে গিয়েছে। শোকে যে মানুষ এমন বিকল হতে পারে পুর্বে আর কখনো দেখিনি। আমরা সবাই নানারকমের সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলুম, কিন্তু খুদাবখশের মুখে ঐ এক কথা, আমার ভাই মরে গিয়েছে।

শেষটায় থাকতে না পেরে আমি বললুম, আপনি পণ্ডিত মানুষ, শোকে এত বিচলিত হচ্ছেন কেন? আর আপনার সহ্য করবার ক্ষমতা যে কত অগাধ সে তো আমরা সবাই দেখেছি— দুটি ছেলে, স্ত্রী মারা গেলেন, আপনাকে তো এতটুকু কাতর হতে দেখিনি।

খুদাবখশ আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি বদ্ধ উন্মাদ। কিন্তু মুখে কথা ফুটল। বললেন, আপনি পর্যন্ত এই কথা বললেন? ছেলে মরেছিল তো কি? আবার ছেলে হবে। বিবি মরেছেন তো কি? নূতন শাদী করব। কিন্তু ভাই পাব কোথায়? তারপর আবার হাউ হাউ করে কাঁদেন আর বলেন, আমার ভাই মরে গিয়েছে।

অধ্যাপক বলা শেষ করলে আমি বললুম, লক্ষ্মণের মৃত্যুশোকে রামচন্দ্রও ঐ বিলাপ করেছিলেন।

আহমদ আলী বললেন, লছমন্? রামচন্দরজী? হিন্দুদের কি একটা গল্প আছে? সেইটে আমাদের শুনিয়ে দিন। আপনি কখনো গল্প বলেন না, শুধু শোনেনই।

ইয়া আল্লা! আদি কবি বাল্মীকি যে গল্প বলেছেন আমাকে সে গল্প নূতন করে আমার টোটাফুটা উর্দু দিয়ে বলতে হবে! নিবেদন করলুম, অধ্যাপক খুদাবখশকে অনুরোধ করবেন। রামায়ণের নাকি অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাও আছে।

অধ্যাপক শুধালেন, কিন্তু রামচন্দরজী জবরদস্ত লড়নেওয়ালা ছিলেন, নয় কি?

আমি বললুম, আলবৎ।

অধ্যাপক বললেন, ঐ তো হল আসল তত্ত্বকথা। বীরপুরুষ আর বীরের জামাত্রই ভাইকে অত্যন্ত গভীর ভাবে ভালবাসে। পাঠানদের মত বীরের জাত কোথায় পাবেন বলুন?

আমি বললুম, কিন্তু অধ্যাপক খুদাবখশ তো বীরপুরুষ ছিলেন না।

অধ্যাপক পরম পরিতৃপ্তি সহকারে বললেন, সেই তো গুহতর তত্ত্ব। অধ্যাপকি করো আর যাই করো, পাঠান যাবে কোখেকে? অর্থনৈতিক কারণ-ফারণ সব কিছুই অত্যন্ত পাতলা ফিলিম একটু খোঁচা লাগলেই আসল পেলে বেরিয়ে পড়ে।

মেজর মুহম্মদ খান বললেন, ভাইকে ভালোবাসার জন্য পাঠান হওয়ার কি প্রয়োজন? ইউসুফও (জোসেফ) তো বেনয়ামিনকে (বেনজামিন) ভয়ঙ্কর ভালবাসতেন।

অধ্যাপক বললেন, ইহুদিদের কথা বাদ দিন। আদমের এক ছেলে আরেক ছেলেকে খুন করেনি?

আমি বললুম, কিন্তু পাঠানরা ইহুদিদের হারিয়ে-যাওয়া বারো উপজাতির একটা নয়? কোথায় যেন ঐ রকম একটা থিয়োরি শুনেছি যে সেই উপজাতি যখন দেখল তাদের কপালে শুকনো, মরা আফগানিস্থান পড়েছে তখন হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল–অর্থাৎ ফারসীতে যাকে বলে ফগান করেছিল— তাই তো তাদের নাম আফগান। আর আপনারা তো আসলে আফগান, এদেশে বসবাস করে হিন্দুস্থানী হয়েছেন।

অধ্যাপক পণ্ডিতের হাসি হেসে বললেন, ত্রিশ বৎসর আগে এ কথা বললে আপনাকে আমরা সাবাসী দিতুম, এখন ওসব বদলে গিয়েছে। তখন আমরা জানতুম না যে, দুনিয়ার বড় বড় জাতেরা নিজেদের আর্য বলে গৌরব অনুভব করছে। তখনো রেওয়াজ ছিল খানদানী হতে হলে বাইবেলের ইহুদি চিড়িয়াখানায় কোনো না কোনো খাঁচায় সিংহ বাঁদর কিছু না কিছু একটা হতেই হবে। এখন সে সব দিন গিয়েছে। এখন আমরা সব্বাই আর্য। বেদফেদ কি সব আছে?— সেগুলো সব আমরাই আউড়েছি। সিকন্দর শাহকে লড়াইয়ে আমরাই হারিয়েছি আর গান্ধার ভাস্কর্য আমাদেরই কাঁচা বয়সের হাত মহল্লার নমুনা। গান্ধার আর কান্দাহার একই শব্দ। আরবী ভাষায় গ অক্ষর নেই বলে আরব ভৌগোলিকেরা ক ব্যবহার করেছেন।

পাণ্ডিত্যের অগাধ সাগরে তখন আমার প্রাণ যায় যায়। কিন্তু বিপদ-আপদে মুস্কিল-আসান হামেশাই পুলিশ। আহমদ আলী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, প্রফেসরের ওসব কথা গায়ে মাখবেন না। ইসলামিয়া কলেজের চায়ের ঘরে যে আড্ডা জমে তারি খানিকটে পেতলে নিয়ে তিনি সুন্দর ভাষায় রঙীন গেলাসে আপনাকে ঢেলে দিচ্ছেন। কিন্তু আসল পাঠান এসব জিনিস নিয়ে কখনো মাথা ঘামিয়ে পাগড়ির প্যাঁচ ঢিলে করে না। আফ্রিদী ভাবে, আফ্রিদী হল দুনিয়ার সেরা জাত; মোমন্দ বলে বাজে কথা, খুদাতালার খাস পেয়ারা কোনো জাত যদি দুনিয়ায় থাকে তবে সে হচ্ছে মোমন জাত। এমন কি, তারা নিজেদের আফগান বলেও স্বীকার করে না।

আমি জিজ্ঞাসা করলুম, তাই বুঝি আপনারা স্বাধীন আফগানিস্থানের অংশ হতে চান না? ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে, স্বাধীন পাঠান হয়ে থাকবেন বলে?

সব পাঠান এক সঙ্গে চেঁচিয়ে বললেন, আলবৎ না; আমরা স্বাধীন ফ্রন্টিয়ার হয়ে থাকব সে মুল্লুকের নাম হবে পাঠানমুলুক।

অধ্যাপক বললেন, পাঠানের সোপবক্স লেকচার শোনেননি বুঝি কখনো। সে বলে, ভাই পাঠানস, এস আমরা সব উড়িয়ে দি; ডিমোক্রসি, অটোক্রেসি, বুরোক্রেসি, কমুনিজম, ডিটেটরশিপ— সব সব। আরেক পাঠান তখন চেঁচিয়ে বলল, তুই বুঝি অ্যানার্কিস্ট পাঠান বলল, না, আমরা অ্যানার্কিও উড়িয়ে দেব।

অধ্যাপক বললেন, বুঝতে পেরেছেন?

আমি বললুম, বিলক্ষণ, রবীন্দ্রনাথও বলেছেন, একেবারে বুদ হয়ে যাবে, ঝিম হয়ে যাবে, তো হয়ে যাবে, তারপর না হয়ে যাবে। এই তো?

অধ্যাপক বললেন, ঠিক ধরেছেন।

আমি বললুম, ভারতবর্ষের অংশ যখন হবেন না, তখন দয়া করে রাশানদের আপনারাই ঠেকিয়ে রাখবেন।

সবাই সমস্বরে বললেন, আলবৎ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *