০৫. দ্য অর্ডার অব দ্য ফনিক্স

০৫. দ্য অর্ডার অব দ্য ফনিক্স

তোমার…?

হা আমার প্রিয় বৃদ্ধা মা, সিরিয়স বললেন, ছবিটা মাসখানেক ধরে সরাবার চেষ্টা করছি; কিন্তু উনি ক্যানভাসের পেছনে একটি জাদুমন্ত্র দিয়ে স্থায়ী রক্ষাকবচ স্থাপনা বানিয়ে রেখেছেন। তাই সরাতে পারছি না।

চল, তাড়াতাড়ি চল ওরা জেগে ওঠার আগে আমাদের নিচে যেতে হবে।

হ্যারি হতভম্ব হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো–আপনার মায়ের ছবি এখানে কী করছেন?

ওরা হলের একটা দরজা দিয়ে পাথরের তৈরি ছোট সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন। অন্যরা পিছু পিছু আসতে লাগল। সিরিয়স যেতে যেতে বললেন তোমাকে কেউ বলেনি এটা যে, আমার মা-বাবার বাড়ি ছিল? আমি তাদের এখন অর্থাৎ ব্ল্যাকেদের একমাত্র বংশধর। বাড়িটার এখন মালিক আমি। প্রফেসর ডাম্বলডোরকে এখানে আমি স্কুলের সদর দপ্তর খুলতে অনুরোধ করতেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। জীবনে এই একটি দরকারি কাজ করলাম।

হ্যারি সিরিয়সের কাছ থেকে আশা করেছিল সুন্দর মন খোলানো একটি অভ্যর্থনার। কিন্তু শুনলো সিরিয়সের শুষ্ক ও নিরস কথাবার্তা। ও ধর্ম পিতা সিরিয়সের সঙ্গে সিঁড়ির শেষ ধাপে নেমে একটা দরজা দিয়ে বেসমেন্টে কিচেনে গেল।

ঘরটা ওপরের হল ঘরের চেয়ে অনুজ্জ্বল। অনেকটা গুহার মত ঘর। এবড়ো থেবড়ো পাথরের দেয়াল। ঘরের একপ্রান্তে উনুন জ্বলছে তারই আগুনের শিখাতে ঘরটা সামান্য আলোচিত করে রেখেছে। দেওয়ালে ধোয়া বেরুবার পাইপে পেরেক মেরে মেরে ঝোলানো হয়েছে ভারি ভারি কড়াই, গামলা, প্যান। নানা তৈজসপত্র। ঘরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে রয়েছে গাদা গাদা ছোট ছোট বসবার চেয়ার। মাঝখানে একটা কাঠের টেবিল, এই ঘরটাতেই অর্ডার অফ দ্যা ফনিক্সের মিটিং হয়।

ঘরের মধ্যে অনেক চেয়ার ছাড়াও রয়েছে বড় বড় গামলা, পাকানো পাকানো পার্চমেন্ট, পান পাত্র, শূন্য মদের বোতল, একগাদা ছেঁড়া ছেঁড়া কাগজ ইত্যাদি। মি. উইসলি তার বড় ছেলে বিলের সঙ্গে ফিস ফিস করে কথা বলছেন প্রায় টেবিলের শেষ প্রান্তে বসে।

মিসেস উইসলি গলা পরিষ্কার করল। তার স্বামীর মাথায় পাতলা পাতলা লাল চুল, মোষের সিং-এর চশমা পরা, এধার ওধার তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

–ও হ্যারি! মি. উইসলি গ্রিট করার জন্য হ্যারির দিকে এগিয়ে হাত চেপে ধরে বললেন–খুব খুশি হলাম তোমাকে দেখে!

মি. উইসলির পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল বিল। মাথায় মেয়েদের মত লম্বা চুল পনিটেল করে বাঁধা। টেবিলের ওপর রাখা লম্বা লম্বা পার্চমেন্ট গুটিয়ে রাখতে রাখতে বললেন–ম্যাড আই তোমাকে ভায়া গ্রিনল্যান্ড হয়ে আনেননি তো, জার্নিতে অসুবিধে হয়নি তো হ্যারি?

টংকস বললো–চেষ্টা করেছিলেন। বিলকে সাহায্য করার জন্য কাগজগুলো ঠিক করতে গিয়ে টেবিলের ওপর একটা জ্বলন্ত মোমবাতি উল্টে ফেলল। মোমবাতিটা বাকি পার্চমেন্টের ওপর পড়ল।

–আঃ দুঃখিত, টংকস বললো।

মিসেস উইসলি মোমবাতিটা তুলতে তুলতে সামান্য রেগে গিয়ে বললেন, এদিকে এস। আলোপড়ে পার্চমেন্ট কাগজটা মনে হল বাড়ির নকশা।

উইসলি লক্ষ করলেন হ্যারি ওটা দেখেছে। তৎক্ষণাৎ নকশাটা ওখান থেকে সরিয়ে বিলের কাগজভর্তি হাতে তুলে দিলেন।

–এইসব কাগজপত্র মিটিং শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে রাখা উচিত ছিল। মিসেস উইসলি সংক্ষেপে বললেন। তারপর বহু পুরাকালের একটা ড্রেশার থেকে ডিনারের প্লেটস ইত্যাদি বার করতে লাগলেন।

বিল ওর জাদুদণ্ডটা বার করে বললো–ইভানেসকো। বলার সাথে বান্ডিল করা কাগজপত্র উবে গেল।

–বস হ্যারি; সিরিয়স বললেন, তোমার মুন্ডানগাসের সঙ্গে এর আগে দেখা হয়েছে আশা করি?

যেগুলোকে হ্যারি স্তুপাকার করা অব্যবহার্য কাগজপত্র ভেবেছিল সিরিয়সের কথা শুনে জেগে উঠল একটা নাক ডেকে যাওয়া ঘুমন্ত মানুষ।

–আ–আমাকে কেউ ডাকল মনে হল? মুন্ডানগাস ঘুম জড়িত গলায় বললো আমি সিরিয়সের সঙ্গে একমত। যেন ভোটের সময় ভোট দিচ্ছে তেমনইভাবে একটা হাত তুলল। ওর ঘোলাটে লাল লাল চোখ দুটোর দৃষ্টি কোনদিকে বোঝা গেল না।

জিনি হেসে উঠল।

সিরিয়স বললেন–মিটিং অনেক আগেই খতম হয়ে গেছে ডাঙ্গ! সকলে ওর চারপাশে চেয়ার টেনে বসল, –হ্যারি এসেছে।

–তাই নাকি, মুন্ডানগাস বললো–ঈশ্বর পরম দয়ালু তা কেমন আছ অ্যা অ্যা হ্যারি?

–ভালই, হ্যারি বললো।

মুন্ডানগাস হ্যারির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কম্পিত হাতে পকেট হাতড়ে একটা কাল সিগারেট পাইপ বার করল। তারপর সেটা ঠোঁটে চেপে ওর ওয়ান্ড দিয়ে জ্বালিয়ে খুব জোরে টান দিল। সবুজ রঙ-এর ধোয়া বেরিয়ে ওকে এক সেকেন্ডের মধ্যে ঢেকে দিল।

মিসেস উইসলি রাগত স্বরে বললেন–এই শেষবারের মত মুন্ডানগাস তোমাকে বলেদিলাম রান্না ঘরের মধ্যে তুমি ধুমপান করবে না। বিশেষ করে সকলে যখন খেতে বসবে।

–ওহহ… ঠিক বলেছ মল্লী, আমি দুঃখিত।

মুন্ডানগাস পকেটে সিগারেটের পাইপটা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ধোয়া অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু ঘরের মধ্যে তামাকের গন্ধ।

মিসেস উইসলি ঘরের সকলকে বললেন–তোমরা যদি মাঝরাতের আগে ডিনার খেতে চাও তাহলে কিন্তু আমাকে সাহায্য করতে হবে।

হ্যারি চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিল বাধা দিলেন মিসেস উইসলি–না না হ্যারি তোমাকে উঠতে হবে না। অনেকটা পথ তুমি এসেছ, ক্লান্ত আছ।

টংকস আগ্রহের সঙ্গে এগিয়ে এসে বললো–আমায় কি করতে হবে মল্লী?

–না থাক টংকস, তোমারও বিশ্রাম দরকার, সারাদিন তুমিও অনেক কাজ করছ।

–না না আমার বিশ্রামের দরকার নেই, তুমিও অনেক খাটা-খাটুনি করছ। তোমাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হব।

টংকস জিনির সঙ্গে ড্রেশার থেকে বাসনপত্র বার করে টেবিলে সাজাতে লাগল।

কাঁটা চামচের খটাখট শব্দ, মাংস কাটার, সবজি কাটার শব্দে ঘর ভরে উঠল। মিসেস উইসলির তত্ত্বাবধানে সকলেই খুশির মেজাজে কাজ করতে লাগল। উইসলি উনুনে বড় কড়াইটা চাপালেন, অন্য সবাই বড় বড় বাসনপত্রে খাবার সাজাতে থাকে। হ্যারি টেবিলের সামনে সিরিয়স, মুন্ডানগাসের সঙ্গে বসে রইল। মুন্ডানগাস হ্যারির দিকে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

ও বললো–ফিজ্ঞির সঙ্গে দেখা হয়েছে? –না, হ্যারি বললো আমার কারও সঙ্গে দেখা হয়নি।

–শোন, তোমাকে ফেলে চলে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি; কিন্তু একটা ব্যবসার ব্যাপারে…, মুন্ডানগাস ঝুঁকে পড়ে বললো।

হ্যারির হাঁটুতে কিছু ঠেকল। চমকে উঠে তাকিয়ে দেখল কশ্যাংকস, হারমিওনের প্রিয় বেড়াল সিরিয়সের দিকে লাফিয়ে ওর কোলে বসল। সিরিয়স ওর কানের পাশে হাত বুলাতে লাগলেন। তখনও তিনি হ্যারির দিকে উদ্বেগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।

–গরমের ছুটি ভালভাবেই কেটেছে?

–খুব একটা ভালভাবে নয়, হ্যারি বললো।

এই প্রথম গোমড়া মুখো সিরিয়সের মুখে হাসি ফুটে উঠল।

–আমার বিরুদ্ধে তোমার নালিশ সম্বন্ধে…!

হ্যারি অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বললো–নালিশ?

–ব্যক্তিগতভাবে আমি ডিমেন্টরদের আক্রমণকে স্বাগত জানাচ্ছি। তোমার জীবনের একঘেয়েমী ভাবটা সুন্দরভাবে ঘুচেছে। তুমি মনে কর, তোমার ওপর ওদের আক্রমণ ঠিক ছিল না। যাই হোক তুমি সেই আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়েছ। হাত-পা ছুঁড়ে লড়াই করতে পেরেছ, আমি তো একমাস ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে রয়েছি।

–কেন? হ্যারি ভুরু কোঁচকালো।

–কারণ ম্যাজিক মন্ত্রণালয় এখনও আমার পেছনে লেগে আছে এখন আমাকে অ্যানিমেগাস হয়ে থাকতে হচ্ছে, ভোল্ডেমর্ট সব জানেন। খুব সম্ভব ওয়ার্মটেল ওর কানে সব তুলেছে, তাই আমার ছদ্মবেশ কোনও কাজে লাগল না। অর্ডার অফ দ্য ফনিক্সে আমার বিশেষ কিছু করার নেই–এইরকম কিছু ডাম্বলডোর মনে করে। ডাম্বলডোরের নামটা সিরিয়স এমন এক মুখ করে হ্যারিকে বললো তাতে হ্যারির মনে হল সিরিয়স ও হেডমাস্টারের ওপর খুব একটা খুশি নয়। হঠাৎ হ্যারির ধর্ম পিতার ওপর একটা ভালবাসা, করুণার ভাব অন্তরে ফুটে উঠল।

–আপনি অবশ্যই জানেন কি সব ঘটছে, হ্যারি একটু উৎফুল্ল হয়ে বললো।

–ও হ্যাঁ জানি। সিরিয়সের কণ্ঠে ব্যাঙ্গের সুর। স্নেইপের রিপোর্ট পড়ে, তার সব কটাক্ষ বিচার করে মনে হয় ও তার জীবন বিপন্ন করে সেখানে গিয়েছিল। আমি তখন এখানে ঘুমোমচ্ছিলাম, খুব সুখে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পরিষ্কারের কাজ কেমন চলছে।

–পরিষ্কার! কী পরিষ্কার? হ্যারি প্রশ্ন করল।

–এই বাড়ি ঘর মানুষের থাকার মত করার আর কি, সিরিয়াস হাত ঘুরিয়ে রান্না ঘরটা দেখাতে দেখাতে বললেন। বুঝলে গত দশ বছরে এখানে কেউ বাস করেনি, না আমার মা মারা যাবার পর। তিনিও কিছু পরিষ্কার টরিস্কার করতেন না অনেক বছর।

–সিরিয়স, মুন্ডানগাস বললো–ও ওদের কথাবার্তা খুব একটা কান দিয়ে শোনেনি। কিন্তু একটা শূন্য কড়াই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। বন্ধু এটা সলিড রূপোর?

–তাই মনে হয়। সিরিয়াস দূর থেকে কড়াইটা দেখতে দেখতে বললো।

–পনের শতাব্দীর স্বর্ণখচিত রুপোর, ভেতরে ব্ল্যাক ফ্যামিলি ক্রেস্ট এমবসড করা। মুন্ডানগাস জামার আস্তিন দিয়ে ওটা মুছতে মুছতে বললো।

–ফ্রেড, জর্জ–না, ওগুলো হাতে করে নিয়ে যাও! মিসেস উইসলি চেঁচিয়ে বললেন।

এক সেকেন্ড দেরি না করে হ্যারি, সিরিয়াস ও মুন্ডানগাস টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন, বলতে একরকম লাফিয়ে।

ফ্রেড আর জর্জ জাদুবশে নিয়ে এল বিরাট এক কড়াই ভর্তি স্ট্র, বড় লোহার বোতলে ভর্তি বাটার বিয়র আর একটা ভারি কাঠের ব্রেডবোর্ড, কাঁটা, চামচ, ছুরি। হাওয়াতে ভাসতে ভাসতে টেবিলে আছড়ে ওগুলো পড়ল। স্টু ভর্তি পাত্রটা টেবিলে পড়ে হড়কাতে হড়কাতে একধারে গিয়ে থেমে গেল। টেবিলের ওপর যাবার সময় টেবিলটপে কালো দাগ হয়ে গেল। বোতল ভর্তি বাটার রিয়র শব্দ করে টেবিলের ওপর পড়ল, রিয়র এধার ওধার ছলকে পড়ল। ছুরিটা বোর্ড থেকে স্লিপ করে মেঝেতে পড়ে গেথে গেল।

সিরিয়সের ভাগ্য ভাল ছুরিটা ওর হাতে বিধল না।

মিসেস উইসলি আঁতকে উঠে বললেন

ঈশ্বরের দোহাই! ছোট কাজ করার জন্য ম্যাজিক করো না। এখন দেখলে তো কাজ আরো বেড়ে গেল। ছোট ছোট কাজের জন্য তোমাদের জাদুদণ্ড প্রয়োগের দরকার নাই।

হ্যারি আর সিরিয়স যেন হাসি থামাতে পারে না। মুন্ডানগাস চেয়ার থেকে পড়ে গিয়ে ঈশ্বরকে প্রাণে বাঁচার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। ক্রুকসাংক রেগে গিয়ে গর গর করতে লাগল, ওর হলুদ রঙ-এর বড় বড় চোক দুটো অন্ধকারে জ্বলতে লাগল।

স্টুয়ের পাত্রটা টেবিলে ঠিক করে রাখতে রাখতে মি. উইসলি বললেন ছেলেরা শোন, তোমাদের মা হিসেবে আমার বলার অধিকার আছে, তোমাদের বয়স হয়েছে, এখন থেকে একটু বুঝে শুনে চলতে শেখো।

–তোমাদের দাদারা কেউ এত ঝামেলা করেনি, মিসেস উইসলি বললেন।

বিল বললো–এবারে খাওয়া শুরু করা যাক।

লুপিন টেবিলে সাজান নানা রকম খাবার, বোতল বোতল বাটারবিয়র দেখে সোৎসাহে বললেন–আঃ বড় সুন্দর মল্লী; সামনের প্লেটে স্টু ঢেলে মিসেস উইসপির দিকে এগিয়ে দিলেন।

কয়েক মিনিট সকলেই চুপচাপ, তারপরই শুরু হল খাওয়া-দাওয়ার ধুম। কাঁটা চামচ, চামচ, চেয়ার টানার শব্দ সব মিলিয়ে ঘরে শব্দের ঝংকার তুলল।

মিসেস উইসলি সিরিয়সের দিকে তাকালেন।

–সিরিয়স আমি তোমাকে বলছি, ড্রইং রুমের লেখার ডেস্কের তলায় কিছু যেন আটকে রয়েছে। তারই খুটখাট শব্দ শোনা যাচ্ছে। হয়ত বোগার্ট কিছু করতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয় অ্যালাস্টারকে জিজ্ঞেস করা দরকার।

সিরিয়স নিরাসক্ত কণ্ঠে বললো–তোমার যা ইচ্ছে।

–ওখানকার পর্দাগুলো… আমি ভাবছি কাল ওগুলো দেখলে কেমন হয়, মিসেস উইসলি বললেন,

–ভালইতো দেখো।

হ্যারির সিরিয়সের কথায় ব্যাঙ্গ রয়েছে মনে হল।

হ্যারির উল্টোদিকে বসে টংকস হারমিওন আর জিনিকে ওর নাক নিয়ে মজার কাণ্ড করছিল। ওর নাকটা কখনও মুখে ঢুকে যাচ্ছে, আবার ভীষণ ফুলে উঠছে অনেকটা স্লেইপের মত; কখনও বা বাটন মাশরুম, নাকের গর্তে গাদা গাদা লোম। খেতে বসে টংক রোজই এইরকম মজার মজার কাণ্ড করে ছোটদের হাসায়। বেশির ভাগই হারমিওন আর জিনির আব্দারে।

ওদিকে মি. উইসলি বিল আর লুপিন দুষ্টু ভুতেদের (গবলিনদের) নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত।

বিল বললো–এখনও ওরা কিছু বলছে টলছে না। আমি ঠিক বুঝতে পারছি ওরা ইউ-নো-হুর ফিরে আসাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে কি না। ওদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। মনে আছে নটিংহামের কাছাকাছি গবলিনদের ও হত্যা করেছিল?

লুপিন বললো–সব কিছু নির্ভর করে ওদের কি দিতে চাওয়া হয়েছিল তার ওপর। আমি সোনা টোনার কথা বলছি না। তাদের যদি স্বাধীনতার আশ্বাস দেওয়া হয়ে থাকে–যা আমরা শত শত বছর ধরে দিচ্ছি না তাহলে ওরা সহজেই প্রলুব্ধ হবে। তোমার সঙ্গে র‍্যাগনকের কথাবার্তা বলার সৌভাগ্য হয়েছে বিল?

–আপাতত এখন জাদুকরদের বিরুদ্ধে মনে হয়, বিল বললো–ও ব্যাগম্যানের ব্যাবসা ট্যাবসা করার ব্যাপারে রাগ কমায়নি। ও মনে করছে মন্ত্রণালয় ওর গবলিনদের টাকা দেয়ার ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়েছে। গবলিনরা ওর কাছ থেকে তাদের প্রাপ্য এক টুকরো সোনাও পায়নি। সেটা তুমি জান অবশ্যই।

এক ঝলক হাসি বিলের কথাগুলো শেষ করতে দেয় না। ফ্রেন্ড জর্জ, রন আর মুন্ডানগাস চেয়ারে বসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। তারপর তারপর মুন্ডানগাসের গলা হাসতে হাসতে বন্ধ হয়ে গেল। তারপর, তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস কর, ও আমাকে বলেছে, অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাঙ্গগুলো কোথা থেকে পেয়েছে? এই সব আর কি।

মিসেস উইসলি কঠিন স্বরে বললেন–মুভাগাস আমরা এখানে তোমার ব্যবসার কথা শুনতে আসিনি। তোমাকে ধন্যবাদ। রনের হাসি যেন থামে না। টেবিলে জোরে জোরে ঘুষি মারতে থাকে মুন্ডানগাসের গল্প শুনে।

মুন্ডানগাস চোখ মুছতে মুছতে হ্যারির দিকে চোখ পিটপিট করে বললো–ক্ষমা চাইছি মল্লি তুমি ভেতরের ব্যাপারটা জানো না।

মিসেস উইসলি শান্ত স্বরে বললেন–আমি বলতে পারি না কোথা থেকে কোনটে ঠিক, বা বেঠিক তুমি শিখলে মুন্ডানগাস। মনে হয় তুমি জীবনের অনেক কিছুই কঠিন শিক্ষা থেকে রপ্ত করতে পারোনি।

ফ্রেড আর জর্জ বাটারবিয়রের বড় বড় বোতলে মুখ আড়াল করল। জর্জ হাসতে হাসতে হেচকি তুলছিল। যে কোনও কারণেই হোক মিসেস উইসলি সিরিয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে হাসলেন। তারপর বিরাট রুহ বার্ব (চাইনিজ লতাপাতা দিয়ে বানানট) পুডিং টুকরো টুকরো করার জন্য দাঁড়ালেন। হ্যারি ওর গডফাদার সিরিয়সের দিকে তাকাল।

সিরিয়স খুব চাপা গলায় বললেন–মল্পি মুভাগাসকে একটুও পছন্দ করে না। হ্যারি শান্তস্বরে বললো–কি ভাবে সে অর্ডারে এসেছে।

সিরিয়স বললেন–ও খুব প্রয়োজনীয়। সব বদমাসদের ও চেনে–জানে, নিজের সম্বন্ধে খুব সজাগ। কিন্তু মানতেই হবে ও ডাম্বলডোরের খুব অনুরক্ত। একবার একটা বড় রকমের বিপদ থেকে ডাম্বলডোরকে বাঁচিয়েছিলেন। আমাদের ডাঙ্গের মত মানুষের দরকার। খুব বাধ্য–আমরা হয়তো অতোটা নই কিন্তু মল্পি মনে করে ওকে ডিনারে নেমন্তন্ন করাটা একটু যেন বাড়াবাড়ি। ও এখনও কাজ ঠিকমতো না করার জন্য ওর ওপর রেগে আছে। তোমাকে গার্ড ওর দেবার কথা ছিল; কিন্তু তা করেনি। তাই তার ওপর মন্ত্রী রেগে আছে।

একগাদা পুডিং খেয়ে হ্যারির পেট ফুলে উঠেছে। ডাডলির ছোট হয়ে যাওয়া পরিত্যাক্ত জিনস পরার জন্য আরও অস্বস্তি। ও খাওয়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কথাবার্তার জমাট ভাব বন্ধ হয়ে যায়। মি. উইসলি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। মুখ দেখে মনে হয় প্রচুর খাবার পর একটু আরাম করে বসতে চান। টংকস সমানে হাই তুলে চলেছে। ওর নাক এখন স্বাভাবিক। জিনি মেঝেতে পায়ের ওপর পা তুলে কুকশ্যাংকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছে। মাঝে মাঝে বাটারবিয়র বোতলের ছিপি ছুঁড়ে দিয়ে কুকশ্যাংকের সঙ্গে খেলছে।

মিসেস উইসলি বললেন–অনেক রাত হল, শুতে যাবার সময় হয়েছে। কথাটা বলে বড় দেখে একটা হাই তুলল।

সিরিয়স বললেন–মল্লি এখনও সময় হয়নি। শূন্য খাবার প্লেটটা সামনে থেকে সরিয়ে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–শোন আমি তোমার ব্যাপারে একটু আশ্চর্য হয়েছি। আশা করেছিলাম, তুমি এখানে এসেই ভোল্ডেমর্ট সম্বন্ধে কিছু জানতে চাইবে।

হ্যারির সঙ্গে ডিমেন্টরদের যোগাযোগের খবরে ঘরের আবহাওয়া বদলে গেছে। কয়েক মুহূর্ত আগে সকলেই প্রায় ঘুমে ঢুলছিল, এখন তারা সজাগ হয়ে উঠল, আবার চঞ্চল হয়ে উঠল। ভোল্টেমর্টের নাম শোনার পর থেকেই আরও উদবেগ-চঞ্চলতা। লুপিন এক টেক ওয়াইন খাবার চুমুক দিতে গিয়ে থেমে গেল। বোতলটা ঠেলে সরিয়ে দিল। মুখ দেখে মনে হয় খুবই বিচলিত।

–হ্যাঁ, ওদের সঙ্গে আমার লড়াই হয়েছিল। রন, হারমিওনকে খবরটা বলেও ছিলাম, কিন্তু ওরা বললো অর্ডারে যাবার কথাবার্তা কি হচ্ছে তা আমাদের শোনার অধিকার নেই–তাই। হ্যারি বললো।

–ঠিকই বলেছে; মিসেস উইসলি বললেন–তোমার বয়স খুব অল্প, এখনও ছেলে মানুষ।

মিসেস উইসলি সোজা হয়ে চেয়ারে বসেছিলেন। হাত মুঠো করা, চোখে মুখে ঘুমের কোন রেশ নেই।

সিরিয়স প্রশ্ন তুললেন, কবে থেকে মানে কত বয়স হলে অর্ডার অফ দ্য ফনিক্সে প্রশ্ন তোলার অধিকার পেতে পারে? হ্যারি প্রায় একমাসেরও বেশি মাগলদের বাড়িতে আটকে ছিল। যা কিছু ঘটেছে ওর জানার অধিকার আছে।

জর্জ কথার মাঝে জোরে জোরে বললো লেগে থাক!

ফ্রেড রেগে মেগে বললো–অর্ডারে প্রবেশের অধিকার না থাকলে হ্যারি কি করে ওর প্রশ্নের জবাব পাবে?

জর্জ বললো–প্রায় একমাস ধরে তোমাদের কাছ থেকে খবরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু তোমরা বিন্দু বিসর্গ আমাদের কিছু বলেনি। ফ্রেড বললো–তুমি নাবালক তাই অর্ডার অফ দ্যা ফনিক্সের তোমাকে জানানো হয়নি। তুমিতো অর্ডারের সভ্য নয়–ফ্রেডের গলার স্বর তীব্র অনেকটা ওর মায়ের মত ছমছমে। হ্যারি এখনও নাবালক!

সিরিয়স ধীর শান্ত স্বরে বললেন–অর্ডার অফ দ্যা ফনিক্স কি করছে না করছে, তোমাদের জানানো হয়নি সেটা আমার অপরাধ নয়। ওটা তোমাদের মা-বাবার সিদ্ধান্ত, তাছাড়া হ্যারি।

হ্যারির কিসে ভাল হবে না হবে তা তোমাদের বিবেচনা করার দায়িতু নয়। মিসেস উইসলি তীক্ষ্মভাবে বললেন। ওনার স্বাভাবিক মুখের ভাব অতি কঠিন দেখালো। তোমরা আশাকরি ভুলে গেছ ডাম্বলডোর কি বলেছিলেন–অন্তত: আমার তো মনে হয়।

–কী বিষয়ে? সিরিয়স খুব নম্রভাবে জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তার মধ্যে তার যুদ্ধংদেহি ভাব ফুটে উঠল।

–বিষয়টা আর কিছু নয়। হ্যারির যা প্রয়োজন নেই তা না জানান, মিসেস উইসলি না জানান কথাটার ওপর বেশ জোর দিয়ে বললো।

টেনিস খেলা দর্শকরা যেমন টেনিস বলের গতিবিধি দেখে, তেমনিভাবে রন, হারমিওন, ফ্রেড আর জর্জ, মিসেস উইসলি আর সিরিয়সের মুখের দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে লাগল।

জিনি গাদাখানেক বোতলের ছিপি নিয়ে মুখটা সামান্য হাঁ করে ওদের কথোপকথন শুনতে লাগল। লুপিন স্থির দৃষ্টিতে সিরিয়সের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

সিরিয়স বললেন–আমি নিশ্চয়ই মনে করি না যেটুকু ওর জানা দরকার তার বেশি ও জানুক বা বলা হোক। কিন্তু ও একজন যে ভোল্ডেমর্টকে ফিরে আসতে দেখছে (ভোল্টেমর্টের নাম শুনে সকলেই একটু কেঁপে কেঁপে উঠল) তাই অন্যদের চাইতে ওর দাবি একটু বেশি হতেই পারে।

উইসলি বললেন–দুঃখিত, হ্যারি অর্ডার অফ দ্যা ফনিক্সের সভ্য নয়। তাছাড়া ও নাবালক বয়স মাত্র পনের।

সিরিয়স বললো–ও অর্ডারের বেশিরভাগ সভ্যদের মতই কাজ করছে। মনে হয় আরও বেশি করেছে।

মিসেস উইসলি উচ্চস্বরে বললেন–তা আমরা কেউ অস্বীকার করি না। বলতে বলতে চেয়ারের হাতলে রাখা হাত দুটো তার কাঁপতে লাগল।

–কিন্তু ও শিশু নয়; সিরিয়স অধৈর্য হয়ে বললেন।

–তাহলেও প্রাপ্ত বয়স্ক নয়। মিসেস উইসলির বলার সময় মুখ লাল হয়ে গেল। ও জেমসও নয় সিরিয়স!

–হ্যারি সম্বন্ধে আমার জানা সুস্পষ্ট মল্লি। সিরিয়স দৃঢ়তার সঙ্গে বললো।

–আমার তো মনে হয় না তুমি তাই; মিসেস উইসলি বললেন–মাঝে মাঝে তুমি হ্যারি সম্বন্ধে এমনভাবে কথা বল তাতে মনে হয় বহুদিন পর তুমি তোমার হারিয়ে যাওয়া প্রিয় বন্ধুকে ফিরে পেয়েছ?

–তাতে অন্যায় কী? হ্যারি বললো।

–অন্যায় কি? হ্যারি, তুমিও তোমার বাবা এক নও, তার মত দেখতে হলেও! মিসেস উইসলি সিরিয়াকে বিদ্ধ করার মতো করে তীর্যকভাবে কথাটা বললেন। তুমি এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোওনি বড়রা তোমার সব দায়িত্ব নিয়েছে। এই সোজা কথাটা তুমি ভুলবে না!

–তার মানে তুমি বলতে চাইছ মল্লী, আমি একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন ধর্ম পিতা? সিরিয়স উচ্চস্বরে বললেন।

–বলতে চাই, তুমি অবিবেচকের মত না ভেবে চিন্তে কাজ কর বা কথা বল এটা সকলেই জানে। এই জন্যই ডাম্বলডোর তোমাকে বার বার বাড়ির মধ্যে আত্মগোপন করে থাকার কথা মনে করিয়ে দেন। তুমি…।

–সেই নির্দেশ তোমার মুখে নয়, ডাম্বলডোরের কাছ থেকে সরাসরি শুনলে ভাল হয়; অনুগ্রহ করে তুমি…। সিরিয়স জোর দিয়ে বললেন।

–আর্থার! মিসেস উইসলি হাউমাউ করে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন আর্থার তুমি কি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে না?

মি. উইসলি সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলেন না। চোখ থেকে চশমাটা খুলে আলখেল্লা দিয়ে কাঁচ পরিষ্কার করে ধীরে ধীরে সেটা নাকে লাগিয়ে স্ত্রীর কথার জবাব দিলেন।

–ডাম্বলডোর জানেন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে মন্ত্রী। উনি মোটামুটি মেনে নিয়েছেন যে হ্যারিকে অর্ডারে নিতে হবে, এখন তো তাই ওকে সদর দপ্তরে আনা হয়েছে।

–হা, কিন্তু সেই জন্যে তাকে যা খুশি তাই প্রশ্ন করার অধিকার মেনে নেওয়া এক কথা নয়।

লুপিন নম্রভাবে বললেন–ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি… (সিরিয়সের মুখের দিকে না তাকিয়ে মিসেস উইসলির দিকে তাকিয়ে) হ্যারি কিছু জানুক, তবে সব নয় মল্লী; সঠিক ব্যাপারটা আমাদের কাছ থেকে, বিকৃতভাবে অন্যদের কাছ থেকে নয়।

–মিসেস উইসলি লুপিনের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন বলে মনে করলেন।

হ্যারি বুঝতে পারল লুপিন জানতে পেরেছেন এক্সটেনডেল ইয়ারস (আড়ি পেতে শোনার যন্ত্র) হচ্ছে মিসেস উইসলির উম্মার কারণ।

–ভাল কথা, মিসেস উইসলি খুব বড় দেখে একটা নিঃশ্বাস ফেলে সকলের দিকে তাকিয়ে সমর্থনের আশা করলেন। কেউ তাকে সমর্থন করছে না বুঝলেন। বললেন–বুঝতে পারছি আমার সঙ্গে সকলে একমত নন। তবে আমি স্পষ্টভাবে বলছি, ডাম্বলডোরের মনে নিশ্চয়ই কোনও সঙ্গত কারণ আছে যার জন্য তিনি চান

হ্যারি বেশি কিছু জানুক এবং হ্যারির বিশেষ বন্ধু নিজেকে মনে করে যা বলার তাই বলেন।

সিরিয়স অতি শান্তভাবে বললেন–ও তোমার পুত্র নয়।

মিসেস উইসলি ক্ষিপ্তভাবে বললেন–ছেলের মতনই, আমি ছাড়া আর কে আছে ওর?

–আমি আছি।

–তাই! মিসেস উইসলি বললেন–বলার সময় ওর ঠোঁট বেঁকে গেল; আসল কথা কি জান, তোমার পক্ষে ওর দেখাশুনা করা খুবই কঠিন ব্যাপার ছিল, কারণ তুমি আজকাবান জেলে আটক ছিলে, তাই না? সিরিয়স চেয়ার ছেড়ে উঠতে দেখে লুপিন বললেন, মন্ত্রী, এখানে যারা রয়েছে তার মধ্যে তুমি নিজেকে একমাত্র মনে করতে পার না যে, তুমিই একমাত্র হ্যারির ভাল মন্দ দেখ। সিরিয়স তুমি বসো।

মিসেস উইসলির তলার ঠোঁটটা থর থর কাঁপতে লাগল। সিরিয়স ধীরে ধীরে ওর চেয়ারে বসলেন। ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

লুপিন বললেন–হ্যারিকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে দেয়া দরকার। ও খুব একটা ছেলে মানুষ নয় যে, নিজের ভাল-মন্দ বুঝতে পারবে না।

–আমি জানতে চাই কেন এসব হচ্ছে; হ্যারি তৎক্ষণাৎ বললো।

কথাটা বলার সময় হ্যারি একবারও মিসেস উইসলির দিকে তাকাল না। ওকে আমার ছেলের মত বলাতে হ্যারির মনে দাগ কেটেছে। তাহলেও, বেশি মাত্রায় ওর সম্বন্ধে ভাবা-যত্নবান হওয়া ওর মোটেই পছন্দসই নয়।

–খুব ভাল, মিসেস উইসলি ভাঙা ভাঙা গলায় বললেন–জিনি–রন, হারমিওন–ফ্রেড জর্জ তোমরা সবাই এখন কিচেনের বাইরে যাও।

সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

ফ্রেড আর জর্জ এক সঙ্গে বললেন–আমরা তো কেউ ছোট নই।

রন বললো–হ্যারি থাকবে, কিন্তু তাহলে আমি কী দোষ করলাম

জিনি বললো–ও মা, আমিও শুনতে চাই!

–না; মিসেস উইসলি গর্জে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন; আমি চাই না তোমরা থাক।

মি. উইসলি বললেন–মল্লী, তুমি ফ্রেড আর জর্জকে বাধা দিতে পার না, ওরা এমন নাবালক নয়।

–ওরা কিন্তু এখনও স্কুলে পড়ছে।

–কিন্তু ওরা আইনত এডাল্ট, মি. উইসলি বললেন। গলার স্বর ক্লান্ত।

মিসেস উইসলির মুখ ঈষৎ লাল হয়ে গেল।

–জানি, বেশ তাই হোক। ফ্রেড আর জর্জ থাকতে পারে, কিন্তু রন?

–হ্যারি, আমাকে, হারমিওনকেও সব বলবে; রন উদ্ধত হয়ে বললো—বলবে না? বলবে না তুমি?

মাত্র কয়েক মুহূর্ত! হ্যারি ঠিক করল যা ঘটেছে প্রাইভেট ড্রাইভে সে সম্বন্ধে একটা কথা বলবে না রন হারমিওনকে বলবে না। কিছু না জানিয়ে ওদের : অন্ধকারে রাখলে, দেখবে কেমন করে ওরা সহ্য করে। কিন্তু ওর রাগ-অভিমান তো ক্ষণস্থায়ী সিদ্ধান্ত। পরক্ষণেই হ্যারি বললো–হা হা নিশ্চয়ই। তোমাদের না বলে থাকতে পারি!

রন আর হারমিওন খুশিতে ফেটে পড়ে।

–সুন্দর! মিসেস উইসলি বলে ওঠেলেন সুন্দর। জিনি তুমি তাহলে শুতে যাও!

জিনি কিন্তু বাধ্য মেয়ের মত গেল না। ওরা শুনতে পেল জিনির কান্না হাত পা ছোঁড়ার শব্দ। মিসেস উইসলি ওকে টেনে হিঁচড়ে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। আরও শুনতে পেল মিসেস ব্ল্যাকের কর্ণ বিদারক চিৎকার। লুপিন একরকম দৌড়ে প্রোট্রেটকে শান্ত করলেন। তারপর কিচেনে ফিরে এসে দরজাটা বন্ধ করে নিজের আসনে বসলেন।

সিরিয়স বললেন–ওকে! হ্যারি, বল তুমি কি বলতে চাও?

গত একমাস ধরে যে প্রশ্নটা ক্রমাগত ওকে উত্যক্ত করছে সেটা ও বলতে চায়।

–ভোল্ডেমর্ট কোথায়? ও ক্ষেপ করল না ঘরের সকলের অস্বস্তি ও কাঁপুনি। ও কী করছে? আমি ক্রমাগত মাগলদের খবর দেখি; কিন্তু ওর সম্বন্ধে কোনও খবর নেই; মরে যায়নি বা অন্য কিছু।

 সিরিয়স বললেন–মরে যায়নি, আমরা অন্তত এইটুকু জানি, যাহোক আমরা অনেক কিছুই জানি।

–তাহলে ও মানুষ হত্যা করছে না কেন? হ্যারি প্রশ্ন করল–আমি জানি গত এক বছর কোনো হত্যার খবর মাগরদের পত্রিকায় ছাপা হয়নি।

–কারণ খুব সোজা। ও চায় না লোকের নজরে পড়তে; সেটা হবে ওর পক্ষে মারাত্মক। অবশ্য ওর আসাটা কখনোই শেষ পর্যন্ত শান্তভাবে হয় না, সিরিয়স বললেন। লুপিন হাসতে হাসতে বললেন–অথবা বলতে পার তুমি (হ্যারি) করেছ।

–কেমন করে? হ্যারি হকচকিয়ে প্রশ্ন করলো।

সিরিয়স মৃদু হেসে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললেন–তোমার কিন্তু বেঁচে থাকার কথা নয়। ওর ডেথ ইটাসরা ছাড়া আর কারও জানার কথা নয় যে ও ফিরে এসেছে। কিন্তু তুমি সাক্ষী হিসেবে আজও বেঁচে রয়েছ।

লুপিন আরও বললেন, ডাম্বলডোর জানুক যে সে এসেছে এটা সে কখনোই চাইবে না। আর তোমার মাধ্যমে উনি জেনে গেলেন। তাতে তার অসুবিধে? হ্যারি প্রশ্ন করল।

–ছেলে মানুষী করছ? বিল বললো, ডাম্বলডোর হচ্ছেন একমাত্র লোক যাকে ইউ-নো-হু ভয় পায়।

সিরিয়স বললেন–তোমাদের সকলকে ধন্যবাদ। ভোল্ডেমর্টের আবির্ভাবের একঘণ্টা পরে ডাম্বলডোর অর্ডার অফ দ্যা ফনিক্সের সভ্যদের মিটিং ডাকতে সমর্থ হয়েছিলেন।

–তাহলে অর্ডার কী করছে? হ্যারি সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।

সিরিয়স বললো–খুবই খাটছি যাতে আমাদের একরকম নিশ্চিত করতে হবে ভোল্ডেমর্ট তার পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে না পারে।

 হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করল–কেমন করে জানবেন ওর পরিকল্পনা? লুপিন বললেন ডাম্বলডোরের চতুর ধারণা আছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো সঠিক হয়, লুপিন বললেন।

সিরিয়স বললেন–প্রথমত ভোল্ডেমর্ট তার নিজস্ব সৈন্য দল আবার গঠন করতে চায়। আগে ওর অধীনে বিরাট সংখ্যক সৈন্য ছিল। জাদুকর-জাদুকরীরা বাধ্য হয়ে ওর দলে যোগ দিয়েছিল, ওর বিশ্বস্ত রক্ত চোষারা (ডেথ ইটার) নানা ধরনের পিশাচ। তুমি বোধহয় জান ও নানা দৈত্যদের সৈন্যদলে ভর্তি করতে চাইছে। ওয়েল, ওরা তবে তার সৈন্যদলের একটা গ্রুপ হবে। ও কখনই জাদু মন্ত্রণালয় কয়েক ডজন ডেথ ইটারদের সাহায্যে দখল করতে চাইবে না।

–তাহলে, আপনিও যাতে ও অনেক অনুগামী না পায় তার চেষ্টা করছেন? লুপিন বললেন–আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।

–কেমন করে?

–প্রথমেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, যত বেশি হয় তত লোকদের বোঝাতে হবে যে ইউ-নো-হু সত্য সত্যিই ফিরে এসেছে। তাদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে, সাবধান হতে হবে, বিল বললো। কাজটা খুবই ট্রিকি (চতুরতার) তবুও।

–কেন?

টংকস বললো–কেন আবার, মন্ত্রণালয়ের মনোভাব। তুমিতো কর্নেলিয়স ফাজকে দেখেছ ইউ-নো-হু ফিরে আসার পর, হ্যারি ও তার অবস্থান একচুলও পরিবর্তন করেনি। ও একদম বিশ্বাস করতে চায় না ব্যাপারটা সত্য।

–কিন্তু কেন? হ্যারি বেপরোয়া হয়ে প্রশ্ন করল। ও এত বোকা কেন? যদি ডাম্বলডোর মি. উইসলি বাঁকা হাসি দিয়ে বললো, আহ, সুন্দর, তুমি দেখছি সমস্যাটা ঠিক মত ধরতে পেরেছ। ডাম্বলডোর।

টংকস দুঃখ ভরাক্রান্ত মনে বললো–ফাজ ওকে ভয় পায় তুমি জানো না। হ্যারি অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বললো–ডাম্বলডোরকে ভয় পান?

মি. উইসলি বললেন–ভয় পাওয়া ওর পক্ষে স্বাভাবিক। ফাজ মনে করে ডাম্বলডোর ফন্দি করছে ওকে তাড়াবার। ওর মাথায় ঢুকেছে ডাম্বলডোর ম্যাজিক মন্ত্রী হতে চায়।

–কিন্তু ডাম্বলডোরতো তা চান না।

–অবশ্যই তা চান না। উইসলি বললেন–ওর কোন দিনই মন্ত্রী হবার লোভ আকাক্ষা নেই–যদিও বহু লোকে চায় তিনি মন্ত্রী হন। অবশ্য মিল্পিসেন্ট ব্যাগনল্ডের অবসর গ্রহণের পর ফাজ এ মন্ত্রীত্ব পায়। ও জানে ডাম্বলডোরের জনপ্রিয়তা যেমন ছিল তেমনি ছিলেন এ কাজের উপযুক্ত। মজার কথা ডাম্বলডোর কখনই মন্ত্রীত্বের জন্য চেষ্টা করেননি।

–ফাজ ভাল করেই জানে ডাম্বলডোর ওর চাইতে অনেক বেশি বিচক্ষণ ও অনেক শক্তিশালী জাদুকর। অতীতে মন্ত্রণালয়ের কাজে ফাজ বরাবরই ডাম্বলডোরের সাহায্য ও উপদেশ নিয়েছে, লুপিন বললেন–কিন্তু এখন মনে হয় নিজের ওপর আস্থার মাত্রাটা বৃদ্ধি পেয়েছে, আর বোকার মতো ভেবেছে ও খুব চতুর, ডাম্বলডোর মন্ত্রীত্বের লোভে অযথা নানাভাবে বিরোধ আর সংকট সৃষ্টি করে চলেছে।

–আশ্চর্য এমন কথা ও ভাবতে পারলেন কেমন করে? হ্যারি অসম্ভব রেগে গিয়ে বললো–কেমন করে ভাবতে পারলেন ডাম্বলডোর স্বার্থের জন্য এইসব করছেন।

সিরিয়স তিক্ততার সঙ্গে বললো–কারণ ভোল্টেমর্টের ফিরে আসাটা মেনে নেয়া মানে গত চৌদ্দ বছরে মন্ত্রণালয়ের কাজ ঠিক মতো করেননি তা প্রকাশ্য হয়ে। পড়ে। ফাজ এই বিষয়টির মুখোমুখি হতে চায় না। ভোল্টেমর্টের বিষয়টি এড়ানোই তার জন্য ভাল।

লুপিন বললেন–এখন সমস্যা ভেবে দেখ, যখন মন্ত্রণালয় বলছে ভোল্ডেমর্ট ফিরে আসেনি, সেখানে জনসাধারণকে আমরা কী করে বোঝাই যে সে ফিরে এসেছে। আরও একটা কথা মন্ত্রণালয়ের ডেইলি প্রফেটের ওপর প্রচুর নির্ভরতা, তাই বলতে পার ওদের চিন্তায় ডাম্বলডোরের গুজব ছড়ান প্রকাশ না করার চাপ প্রফেটের ওপর। তাই বেশির ভাগ জাদুকর সম্প্রদায় কি ঘটছে না ঘটছে সে সম্বন্ধে খবর পায় না, জানতেই পারে না। তাই তারা ডেথ ইটারসদের সহজ টার্গেট হতে পারে যদি ইমপেরিয়াস কার্স ব্যবহার করে।

হ্যারি বললো–এই বিষয়ে আপনারা জনসাধারণকে জানান না কেন? কথাটা বলে সিরিয়স, লুপিন, বিল, উইসলি আর মুন্ডানগাসের দিকে তাকাল। সকলে কেন জানাচ্ছেন না ও ফিরে এসেছে?

ওরা সকলেই মেজাজি হাসিতে ঘরটা ছাইয়ে দিল।

সিরিয়াস অস্থির হয়ে বললেন–ঠিক আছে, যেমন সকলেই মনে করে আমি একজন গণহত্যাকারী আর মন্ত্রণালয় আমার কাটা মুণ্ডুর জন্য দশ হাজার গেল্লিয়ন দেবে, তাহলে আমি কেমন করে রাস্তায় রাস্তায় হ্যান্ডবিল ছড়াতে পারি? পারি কী?

–আমিতো বেশিরভাগ লোকের কাছে জনপ্রিয় ডিনারগেস্ট নই; লুপিন বললেন–নেকড়ে হয়ে থাকার এক বিড়ম্বনা বলতে পারো।

সিরিয়স বললেন–টংকস আর আর্থার মন্ত্রণালয়ে চাকরিটি খোয়বে যদি তারা তাদের মুখ বন্ধ খোলা শুরু করে। আরও তোমরা বাজি ধরতে পার মন্ত্রণালয়ে ভোল্ডেমর্টের অনেকেই ওর দলে, পরে ও বাকিদের হাতের মুঠোতে আনার চেষ্টা চালাবে। তাই মন্ত্রণালয়ে আমাদের লোক থাকা প্রয়োজনীয়।

মি. উইসলি বললেন–কিছু লোককে আমরা ব্যাপারটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। টংকস গত বছরে অর্ডার অফ দ্য ফনিক্সের সভ্য হওয়ার বয়স ছিলো না। এখন সভ্য হবার পর আমাদের মধ্যে থাকা খুবই সুবিধেজনক ব্যাপার কিংগশ্লে স্যাকেলবোল্টসকে বলা যায় একটি বিশেষ অ্যাসেট। ও সিরিয়াসকে খুঁজে বেড়ানোর দায়িত্বে আছে, সিরিয়স তিব্বতে আছে সেই খবর ক্রমাগত মন্ত্রণালয়কে দিয়ে চলেছে।

কিন্তু আপনারা যদি সবাই ভোর্টে ফিরে এসেছে খবরটা বেমালুম চেপে যান তাহলে, হ্যারি বলতে শুরু করল।

–কে তোমায় বললো যে, খবরটা আমরা চেপে যাচ্ছি? সিরিয়স বললেন তাহলে কেন ডাম্বলডোর বিপদে পড়েছেন।

হ্যারি বললো–কি বলতে চাইছেন?

লুপিন বললেন–ওরা সকলে মিলে ডাম্বলডোরের বদনাম করতে চাইছে। গত সপ্তাহের ডেইলি প্রফেট নিশ্চয়ই দেখে থাকবে? ওরা খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন অফ উইজার্ভের চেয়ারম্যানসিপ থেকে ওকে ভোটে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ ..? কারণ ওর বয়স হয়েছে আর কাজের ভার সামলাতে পারছে না। কিন্তু কথাটা ভিত্তিহীন। আসল ব্যাপার ভোল্ডেমর্ট ফিরে এসেছে খবরটা দেয়ার পর জাদু মন্ত্রণালয় থেকে ওকে ভোট দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া ওয়ারলক অন দ্য ওয়াইজেন–গ্যামট যাকে জাদুকরদের হাইকোর্ট বলা হয়, সেখানকার প্রধান থেকে নিম্নপদে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন ওর অর্ডার অফ মেরলিন, প্রথম শ্ৰেণী খেতাব নিয়ে নেয়ার কথাবার্তা চলেছে।

বিল বললো–ডাম্বলডোর বলেন, যতদিন না তার কাছ থেকে চকোলেট ফ্রগ কার্ডর্স নিচ্ছে না ওর কিছু যায় আসে না ওইসব কথাবার্তায়।

উইসলি বললো–হাসির ব্যাপার নয়, ও যদি মন্ত্রণালয়কে এমনিভাবে তোয়াক্কা না করে চলে তাহলে শেষ পর্যন্ত ওকে আজকাবান যেতে হতে পারে। শেষ পর্যন্ত আমরা চাইবো ডাম্বলডোরকে জেলে বন্ধ করে রাখা। ইউ-নো-ই আগাগোড়া সব ঘটনার দিকে কড়া নজর রেখে চলেছে–ডাম্বলডোরকে ইটানে ইউ নো হুর সামনে খোলা পথ থাকবে।

হ্যারি বললো–কিন্তু ভোল্ডেমর্ট যদি অনেক ডেথ ইটারসদের নিয়োগের চেষ্টা করে তাহলে কী প্রমাণিত হবে না ও ফিরে এসেছে?

সিরিয়স বললেন–হ্যারি ভোল্ডেমর্ট বোকা নয়, অসম্ভব ধূর্ত, তাই লোকদের বাড়ির দরজা ধাক্কায় না। ও সুযোগ বুঝে জিঙ্কস করে, ট্রিকস করে–ব্লাকমেইল করে। যা করে সব কিছু গোপনে গোপনে করে। যাই হোক, সাগরেদ জোগার করার ওর জুড়ি নেই। ওর আরও অনেক পরিকল্পনা আছে, সবকিছুই খুব সাবধানতার সঙ্গে করে। এখন আপাতত সেইসব পরিকল্পনা চালু করার জন্য গভীর মনোযোগ দিয়ে বসে আছে।

–ওর কতগুলো সাগরেদ ছাড়া আর কী আছে? হ্যারি বললো।

সিরিয়স বললো–গোপনতার সঙ্গে সংগ্রহ করা।

হ্যারি বোকার মত তাকিয়ে থাকে। সিরিয়স বললেন–গোপন অস্ত্রের মত। গতবারে ওর কাছে সেই ছিলো না।

হ্যারি বললো–কী রকম অস্ত্র? আভাড়া কেভাভ্রার চেয়েও মারাত্মক?

 –ওটাই যথেষ্ট।

মিসেস উইসলি কখন জিনিকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে মি. উইসলি জানে না, হ্যারিও না।

মিসেস উইসলি দরজার আড়াল থেকে অত্যন্ত তিক্ত কণ্ঠে বললো–আমি চাই এখন তোমরা শুয়ে পড়। ফ্রেড, জর্জ, রন, হারমিওন আমার কথা শুনতে পেয়েছ?

ফ্রেড বললো–আমাদের ওপর ছড়ি ঘোরাবে না।

–শোন, মিসেস উইসলি দরজার আড়াল থেকে বললেন–সিরিয়স তুমি হ্যারিকে প্রচুর খবর দিয়েছ। তুমি এখন ওকে সরাসরি অর্ডারে আনতে চাইছ।

–কেন না? হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে বললো–আমি যোগ দেব, আমি যোগ দিতে চাই আমি লড়াই করতে চাই।

–না।

কথাটা বললেন লুপিন, মিসেস উইসলি নয়।

–অর্ডার অব দ্য ফনিক্স বয়স্ক জাদুকর দিয়ে গঠিত যেসব জাদুকর স্কুল থেকে পাস করে বেরিয়েছে তাদের নিয়ে। ফ্রেড আর জর্জ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। তাদের বাধা দিয়ে আরও লুপিন বললেন–অনেক মারাত্মক বিপদ আছে, আমার তাই মনে হয় মন্ত্রী ঠিক বলছে; সিরিয়স। আমরা অনেকটা সময় অনেক কথা বলেছি।

সিরিয়স কাঁধ ঝাঁকালেন। কিন্তু তর্ক করলেন না। মিসেস উইসলি ওর ছেলেদের আর হারমিওনকে আবার তাড়া দিলেন। এক এক করে ওরা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল। হ্যারি পরাজয় মেনে নিয়ে ওদের পিছু পিছু চলে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *