০৫. তরু বসে আছে

সকাল দশটা।

তরু বসে আছে। ওসমান তরুর উপন্যাস পড়ছেন। মন দিয়ে পড়ছেন বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বসে আছেন হুইল চেয়ারে। তরু বসেছে তাঁর পাশেই বেতের চেয়ারে। সে ক্রমাগত পা দুলাচ্ছে। মাঝে মাঝে পা লেগে যাচ্ছে হুইল চেয়ারে। ওসমান তাকাচ্ছেন তরুর দিকে। তরু সরু গলায় বলছে— সরি। কিছুক্ষণ পর শুরু কাজটা আবার করছে। এতে মনে হতে পারে হুইল চেয়ারে পা লাগানোর কাজটা শুরু ইচ্ছা করেই করছে।

জানালা গলে রোদ এসে ঢুকেছে ঘরে। বাতাসে খোলা পর্দা কাঁপছে বলে রোদের পাশের ছায়া কাঁপছে। তরুর দৃষ্টি রোদের দিকে। তার কাছে মনে হচ্ছে ছায়া স্থির হয়ে আছে। রোদ কাপছে। ট্রেনে কোথাও যাবার সময় তার এরকম মনে হয়। পাশাপাশি দুটা ট্রেন। তাদেরটা থেমে আছে। পাশেরটা চলতে শুরু করেছে। তরুর মনে হয় তাদেরটাই চলছে। পাশেরটা স্থির।

ওসমান বললেন, তরু উপন্যাস যতটুকু লিখেছে পড়েছি। মিথ্যা অংশগুলি ভালো হয় নি।

তরু অবাক হয়ে বলল, কোন অংশগুলি মিথ্যা?

ওসমান বললেন, এই যেমন তুমি বললে এক মিনিট সময় দিলাম, চুমু খেতে চাইলে খেতে পারো।

কি করে বুঝলেন মিথ্যা? সত্যিও তো হতে পারে।

তুমি যখন মিথ্যা কথা লিখো তখন হাতের লেখা বদলে যায়। তুমি নিজেই দেখো।

তরু বলল, তাই তো দেখছি। ঠিক আছে মিথ্যা লিখেছি ভালো করেছি। লেখকরা যা লেখেন সবই সত্যি?

ওসমান বললেন, যারা সত্যিকার লেখক তাদের মাথায় একটা কনভার্টার থাকে। মিথ্যাগুলি তারা কনভার্টারে ঢুকান, সেখানে তারা সত্যি হয়ে বের হয়ে আসে। সত্যিকার লেখকদের কোনো কথাই মিথ্যা না। ভুয়া লেখকদের সত্যিটাও মিথ্যা।

তরু পা নাচানো বন্ধ করল। রোদের খেলাটাও সে এখন আর দেখছে। ওসমান বললেন, কথা শুনে মেজাজ খারাপ হচ্ছে?

হুঁ।

ওসমান বললেন, মেজাজ খারাপ যখন হচ্ছেই তখন আরেকটু মেজাজ খারাপ করে দেই?

তরু বলল, দিন।

তোমার লেখায় কোনো প্লট নেই। লেখা পড়ে মনে হয় মাঝি নেই এমন একটা নৌকায় বসে আছ, বাতাস নৌকাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকে যাচ্ছ। যখন বাতাস থাকছে না তখন তুমিও স্থির হয়ে বসে আছি। তোমার লেখার নৌকায় মাঝি লাগবে। পাল লাগবে। প্রয়োজনে গুণটানার ব্যবস্থাও করতে হবে।

আপনি একটা প্লট দিন। সেই প্লটে লিখব।

ওসমান বললেন, আমি নিজেই তোমার উপন্যাসের একটা প্লট হতে পারি। একজন পঙ্গু মানুষ। ছাদের চিলেকোঠায় থাকে। হুইল চেয়ারে ঘুরে। চরিত্র হিসেবে ইন্টারেস্টিং। তার জীবনে প্রেম নিয়ে আসে। অল্প বয়েসি একটা মেয়ে তার প্রেমে পড়ুক।

তরু বলল, অল্প বয়েসি একটা মেয়ে পঙ্গু লোকের প্রেমে পড়বে কোন দুঃখে?

ওসমান বললেন, অল্পবয়েসি মেয়ের প্রেম যুক্তিনির্ভর না। আবেগনির্ভর। লোকটির Disability তার চোখে পড়বে না। তাঁর চোখে পড়বে লোকটির mental ability, লোকটির মানসিক সৌন্দর্য।

তরু বলল, আপনার ধারণা আপনার মানসিক সৌন্দর্য তাজমহল টাইপ?

তুমি তোমার লেখায় তাই করবে। আমার মানসিক সৌন্দর্য তাজমহল পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এটাই তো লেখকের কাজ। লেখক কাদামাটি হাতে নিয়ে অপূর্ব মূর্তি তৈরি করেন।

তরু বলল, উপন্যাসের ক্ষেত্রে কি হবে? মেয়েটা পঙ্গুটাকে বিয়ে করবে? সুখে ঘর-সংসার করতে থাকবে? তাদের কিছু পঙ্গু ছেলেমেয়ে হবে? না-কি কোনো ছেলেমেয়েই হবে না?

ওসমান বললেন, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন? তুমি আমার কাছে প্লট চেয়েছ আমি প্লট দিলাম। পছন্দ হলে এই নিয়ে লিখবে। পছন্দ না হলে লিখবে না।

তরু বলল, আপনি যে প্লট দিয়েছেন সেই প্রটের ইংরেজি নাম শিট প্লট। বাংলায় গু প্লট।

ওসমান শব্দ করে হাসলেন। সঙ্গে সঙ্গে তরু বলল, আপনার হাসির শব্দ সুন্দর। বেশ সুন্দর। আমি একটা ক্যাসেট প্লেয়ারে আপনার হাসি ক্যাসেট করে রাখব।

ওসমান বললেন, ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে আসো। আজই ক্যাসেট করো।

তরু বলল, আজ না। চা খাবেন?

খেতে পারি।

তরু চা বানাতে গেল। হুইল চেয়ারে ওসমান তার পেছনে পেছনে গেলেন। তরু বলল, চায়ে চিনি দেব?

দাও।

তরু বলল, সনজুকে নায়ক বানিয়ে নতুন করে উপন্যাসটা লিখলে কেমন হয়?

ওসমান বললেন, তাও করতে পারো। সেও কিন্তু পঙ্গু, মানসিকভাবে পঙ্গু। এবং চরিত্র হিসেবে ইন্টারেস্টিং। আমার চেয়েও ইন্টারেস্টিং। আমি ছাদে বন্দি, সে নিজের কাছে বন্দি। তবে তুমি বারবার তার প্রসঙ্গে লিখছ সুতাকৃমি এটা অরুচিকর। সাহিত্যে রুচির একটা ব্যাপার আছে।

তরু বলল, আপনি কি এখানেই চা খাবেন? না-কি আমরা ছাদে যাব?

চলো ছাদে যাই। রোদে চিড়বিড় করতে করতে চা খাওয়ারও আনন্দ আছে। চা নিয়ে একটা চায়নিজ প্রবচন আছে। শুনবে?

শুনতে ইচ্ছা করছে না। তারপরেও বলুন—

যে খায় চা, তার সর্ব রোগ না।

তরু কিছু বলল না। সে নিঃশব্দে চা খেয়ে যাচ্ছে। সে যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে সনজুকে দেখা যাচ্ছে। সনজু রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে চাপাভাঙা এক যুবক। মাথায় চুল নেই, ফেট্টি বাঁধা। সে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে এবং একটু পরপর থু থু ফেলছে। একনাগাড়ে সেই যুবকই কথা বলছে। সনজু শুনে যাচ্ছে। এমন কোনো অস্বাভাবিক দৃশ্য না কিন্তু তরুর সামান্য অস্থির লাগছে। যুবকের বাঁ হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকানো। সে একবারও হাত বের করছে না। প্যান্টের পকেটে কি পিস্তল না ফেনসিডিলের বোতল? ছেলেটা মনে হচ্ছে বাঁ হাতি। ডান হাতি ছেলে হলে ডান হাতটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের জন্য পকেটে ঢুকিয়ে রাখত।

কি দেখছ তরু?

তরু দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বলল, কিছু দেখছি না। আচ্ছা আপনার কাছে মনিকা নামের যে মেয়েটা আসত সে আর আসে না কেন?

মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। তার স্বামীর পছন্দ না সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছবি আঁকা শেখায়।

আপনার ছবি আঁকা তাহলে বন্ধ।

হুঁ। একে একে আমার সবই বন্ধ হবে। তবে আমি হতাশ না। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে একটা দরজা বন্ধ হলে আরেকটা দরজা খুলে।

আপনার কোন দরজাটা খুলেছে?

এখনো বুঝতে পারছি না। বুঝতে পারলে তোমাকে বলব।

তরু বলল, একটা ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে কেমন হয়—শার্লক হোমস টাইপ। বাড়িতে খুন হবে। ডিটেকটিভ সূত্র ধরে ধরে খুনিকে বের করে ফেলবেন।

মহিলা ডিটেকটিভ?

ঠিক ধরেছেন, মহিলা ডিটেকটিভ।

খুনটা তোমাদের বাড়িতে হবে?

হ্যাঁ। এমন একজন খুন করবে যে সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে।

সে কে?

তরু বলল, মনে করুন আমিই খুন করলাম আবার আমিই সূত্র ধরে ধরে অপরাধী খুঁজে বের করলাম।

ওসমান বললেন, সূত্র ধরে ধরে তোমাকে অপরাধী খুঁজে বের করতে হবে কেন? তুমি তো জানোই কে অপরাধী। তোমার সূত্র খোজাটা হাস্যকর হবে না।

হু হবে।

ওসমান চায়ের কাপ নামিয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, এক কাজ করো, তোমার বাবাকে Criminal বানাও। তিনি তার দুই স্ত্রীকে খুন করেছেন। কেউ কোনোদিন তা ধরতে পারে নি। তার মেয়ে সূত্র খুঁজে খুঁজে…

তরু ওসমানের কথা শেষ হবার আগেই কঠিন গলায় বলল, আপনি একজন Sick person. একজন সিক পার্সনের মাথাতেই এ ধরনের গল্প আসে। শারীরিকভাবে যারা পঙ্গু তারা মানসিকভাবেও পঙ্গু থাকে।

ওসমান কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তরু তার আগেই ছাদ থেকে নেমে গেল। সিঁড়ির গোড়ায় তরুর বাবা আব্দুল খালেক দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে কানকোয় দড়ি দিয়ে বাঁধা তিন ফুট সাইজের একটা জীবন্ত বোয়াল। মাছটা বারবার লেজ এদিক-ওদিক করছে।

খালেক হাসি মুখে বললেন, এত বড় বোয়াল আগে দেখেছিস? Seen before?

তরু বলল, না।

এর সারা শরীর ভর্তি চর্বি। বিলের মাছ। Fish of the বিল।

বিলের মাছ কি করে বুঝলে?

কালো রঙ। বিলের মাছ কালো হয়। নদীর মাছ হয় সাদা। এই মাছ আজ তুই রাঁধবি। You are cooking.

তরু বলল, বাবা ভুলভাল ইংরেজি বলবে না। শুনতে খুবই খারাপ লাগে। বিলের মাছ আমি রাঁধব না। মাছটা নষ্ট হবে। আমি রাঁধতে পারি না।

কোনো চিন্তা করবি না। আমি ডিরেকশন দেব।

তুমি রাঁধতে জানো?

অবশ্যই জানি। দিনের পর দিন বেঁধেছি। তুই রান্নার জন্যে মেন্টাল প্রিপারেশন নিয়ে নে। আমি মাছ কাটিয়ে আনছি।

খালেক মহাব্যস্ত ভঙ্গিতে বের হয়ে গেলেন। তরু সঙ্গে সঙ্গে ছাদে উঠে গেল। ওসমান ঠিক আগের জায়গাতেই আছেন। চোখ বন্ধ করে গায়ে রোদ মাখাচ্ছেন। তরুর পায়ের শব্দে চোখ মেললেন। তরু বলল, আপনি তো সৰ্ববিদ্যা বিশারদ। মাছ রাঁধতে পারেন?

কি মাছ?

বোয়াল মাছ।

সাইজ কি?

বিশাল সাইজ।

ওসমান বললেন, বোয়াল মাছের প্রধান সমস্যা তার আঁশটে গন্ধ অন্য মাছের চেয়ে বোয়াল মাছের আঁশটে গন্ধ বেশি। এই গন্ধ দূর করার জন্যে প্রথমেই সামান্য লবণ এবং লেবু দিয়ে মাছটাকে কচলে আঁশটে গন্ধ বের করে ফেলবে। কয়েকবার গরম পানিতে ধুবে।

তারপর?

যেহেতু মাছের সাইজ অনেক বড়, মাংসের মশলা কিছু লাগবে।

তরু বলল, পুরো রেসিপি বলুন। আজ আমি বোয়াল মাছ রাধব।

পাতিলে তেল দিবে। তেল যখন গরম হবে তখন পেঁয়াজ বাটা দেবে। পেঁয়াজ বাটা ভাজা ভাজা হবার পর সামান্য হলুদ, শুকনা মরিচ দেবে। খুব সামান্য জিরা বাটা দিতে পারো। বড় মাছ বলেই জিরা বাটা। সামান্য আদা বাটা। চায়ের চামচে এক চামচ মেথি দিলে সুন্দর ফ্লেবার হবে। মশলা কষানো হলে পানি দেব। এরপর মাছ দেবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাছ সেদ্ধ হয়ে যাবে, তখন ধনে পাতা দিয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে।

লবণ লাগবে না?

অবশ্যই লাগবে তবে বোয়াল মাছ কিছুটা লবণাক্ত। লবণ কম দিতে হবে। এই রান্নাতে যদি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ফ্লেবার দিতে চাও তাহলে চায়ের চামচে আধা চামচ চিনি দিতে পারো। ঠাকুরবাড়ির মহিলারা ঝাল খাবারে চিনি মেশানো শুরু করেছিলেন। অনেকেই তাদের অনুসরণ করে। আমার মতে চিনি না মেশানোই ভালো। তবে আমি একটা বিশেষ ইনগ্রেডিয়েন্ট দিতে বলব। যদি দাও অসাধারণ জিনিস হবে।

কি ইনগ্রেডিয়েন্ট?

মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট। চায়নিজ খাবারে স্বাদ বর্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টেস্টিং সল্ট বলে।

তরু বলল, আপনি রান্না শিখলেন কোথায়?

ওসমান বললেন, বই পড়ে। যারা বেড়াতে যেতে পারে না তারা ভ্রমণের বই পড়ে। যারা রাঁধতে পারে না তারা রান্নার বই পড়ে।

তরু বলল, ভাত ঝরঝরা করার উপায় কি? আমি রান্না করলেই একটার গায়ে একটা ভাত লেগে যায়।

ওসমান বললেন, প্রতিটি চাল একটা একটা করে আলাদা সিদ্ধ করবে। তারপর একত্র করে পরিবেশন করবে।

ঠাট্টা করলেন?

হ্যাঁ।

আগের রেসিপিটা কি ঠাট্টা না রিয়েল?

আগেরটা রিয়েল। আমি সাধারণত ঠাট্টা করি না। পঙ্গুরা ঠাট্টা-তামাশার ব্যাপারে খুব সাবধান।

তরুর বাবা আগ্রহ করে বোয়াল মাছ খেলেন এবং বিস্মিত হয়ে বললেন, তুই এত ভালো রান্না কার কাছে শিখেছিস? আমি আমার লাইফে এত ভালো বোয়াল মাছের ঝোল খাই নাই।

তরু বলল, বাবা বেশি বেশি হচ্ছে না?

খালেক বললেন, বেশি বেশি হচ্ছে না। কম কম হচ্ছে। তোকে গোল্ড মেডেল দেয়া দরকার। রান্নায় স্বর্ণপদক।

মেডেলে কি বোয়াল মাছের ছবি আঁকা থাকবে?

ঠাট্টা না আমি সিরিয়াস। সত্যি আমি তোকে একটা গোল্ড মেডেল দেব। তুই কি মাংস রান্না করতে পারিস? খাসির মাংস রান্না করতে পারবি?

চেষ্টা করে দেখতে পারি। আচ্ছা বাবা, মায়ের রান্নার হাত কেমন ছিল?

খালেক বললেন, সে যা রাঁধত সবই অখাদ্য। সেই অখাদ্য রান্না নিয়ে কিছু বললে মুখ ভোঁতা করে রাখত।

তরু বলল, তোমার কি তখন ইচ্ছা করত মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি!

খালেক খাওয়া বন্ধ করে বললেন, এটা কেমন কথা?

তরু বলল, কথার কথা বললাম।

খালেক বললেন, এটা কি ধরনের কথার কথা? তোর সমস্যাটা কি?

কোনো সমস্যা নেই।

সমস্যা অবশ্যই আছে। সমস্যা ছাড়া কেউ এ ধরনের কথা বলে না।

সরি বাবা।

সবসময় সৃরিতে কাজ হয় না। এমন একটা ভয়ংকর কথা তোর মাথায় এলো কিভাবে?

তরু বলল, বাবা আমি একটা ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখছি। সেখানে এক ভদ্রলোক তার প্রথম স্ত্রীকে খুন করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তারপর দ্বিতীয় স্ত্রীকেও খুন করেন। সারাক্ষণ উপন্যাসের প্লট নিয়ে ভাবি তো এই জন্যেই মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।

খালেক কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, তোর ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখার দরকার কি? লেখালেখি হচ্ছে মাথার পোকা, খবরদার মাথায় পোকা ঢুকাবি না।

আচ্ছি।

একটা কথা বলে খাওয়ার আনন্দটাই নষ্ট করে ফেলেছিস।

সরি বাবা।

খালেক প্লেট রেখে উঠে পড়লেন। দ্বিতীয় মাছের পেটিটা তিনি মাত্র নিয়েছেন। এখনো মুখে দেন নি। এতে তরুর খুব যে মন খারাপ হলো তাও না। সে নিজে মাছ খেল না। তার গা দিয়ে বোয়াল মাছের বোটকা গন্ধ বের হচ্ছে। সে এক ঘন্টা সময় নিয়ে গরম পানি দিয়ে গোসল করল, তাতেও গা থেকে বোটকা গন্ধ দূর হলো না। দুপুরে সে কিছুই খেল না। দুপুরে তার ঘুমানোর অভ্যাস নেই। তবে ছুটির দিনে সে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে। তার মোবাইলে সুডোকু নামে অংকের একটা খেলা আছে। এই খেলাটা খেলে। সুডোকুতে সে ভালোই এক্সপার্ট হয়েছে। জাপানের টোকিওতে প্রতি বছর সুডোকু উৎসব হয়। তার ধারণা বাংলাদেশ থেকে কেউ তাকে সুডোকু উৎসবে পাঠালে সে প্রাইজ নিয়ে ফিরত।

তরু সুডোকু খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে পড়ল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন দেখল। স্বপ্নে ওসমান সাহেব খোলা দরজা দিয়ে তার ঘরে ঢুকেছেন। হেঁটে হেঁটে ঢুকেছেন। তরু বলল, আপনার অসুখ সেরে গেছে?

তিনি বললেন, হুঁ।

বোয়াল মাছ রান্না করে পাঠিয়েছিলাম। খেয়েছেন?

হুঁ।

খেতে কেমন হয়েছে বললেন না তো!

তোমাকে অতি জরুরি একটা কথা বলতে এসেছি। হাতে সময় নেই।

স্বপ্নের এই পর্যায়ে দেখা গেল তিনি চক-ডাস্টার হাতে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়ানো। গম্ভীর গলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন।

স্ট্যাটিসটিক্স বলছে দশ দশমিক দশ ভাগ স্ত্রী স্বামীর হাতে খুন হয়। তিন রকম খুন আছে। ক শ্রেণীর খুন, খ শ্রেণীর খুন এবং গ শ্রেণীর খুন।

ক শ্রেণীর খুন অনিচ্ছাকৃত। স্বামীর ধাক্কা খেয়ে স্ত্রী উল্টে পড়ে মাথায় ব্যাথা পেলেন। সেখান থেকে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যু।

খ শ্ৰেণী খুন Impulse-এর বশবর্তী হয়ে খুন। হঠাৎ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে স্বামী এই কাজটি করেন। রাগ কমে যাবার পর তার দুঃখের সীমা থাকে না। তখন সে নিজেও আত্মহত্যা করতে চায়।

গ শ্রেণীর খুন। এরা ঠাণ্ডামাথায় একের পর এক খুন করে। এদের বলা হয় Serial Killer, যেমন তোমার বাবা খালেক সাহেব।

তরু বলল, স্যার (স্বপ্নে মনে হচ্ছিল ওসমান সাহেব তার শিক্ষক। কিছুক্ষণের জন্যে লেকচার বন্ধ রাখবেন। আমার একটা কল এসেছে জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে। সুডোকু কম্পিটিশনে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ।

তরুর ঘুম ভাঙল মোবাইল ফোনের শব্দে। সে টেলিফোন ধরে বলল,?

আমি সনজু।

কি চাও?

আমার বুবুকে দুলাভাই ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। সে কলতলায় বসে আছে। তাকে একটু ঘরে নিয়ে যান।

তুমি বলো আমাদের ঘরে আসতে।

সনজু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, বুবুর গায়ে কোনো কাপড় নাই। বুবুকে উনি নেংটো করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন।

কি বলছ এসব?

সত্যি কথা বলছি। একটা চাদর নিয়ে কলতলায় যান।

তরু চাদর নিয়ে কলতলায় গিয়ে দেখে সনজুর বোন সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। থরথর করে কাঁপছে। সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে গভীর লজ্জাবোধের বাইরেও কিছু আছে যা চট করে ব্যাখ্যা করা যায় না। তরু চাদর দিয়ে মহিলাকে ঢেকে দিল।

তরু বলল, আপনি ঘরে আসুন।

মহিলা তাকালেন। তরুর কথা বুঝতে পারলেন বলে মনে হলো না। সনজুকে দেখা যাচ্ছে। সে কলতলার দক্ষিণে পেয়ারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। সে তাকিয়ে আছে গেটের দিকে। কলতলায় কি ঘটছে তা সে জানে না, এরকম একটা ভঙ্গি।

তরু আবার বলল, আসুন।

ভদ্রমহিলা নড়ে উঠলেন। কিন্তু আগের মতোই জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলেন। সনজু পেয়ারা গাছের নিচ থেকে বলল, বুবু যাও। উনার সঙ্গে যাও।

 

বেশিরভাগ দিন খালেক বাসায় খেতে আসেন না। দুপুর বেলাটা ব্যবসাবাণিজ্যের জন্যে কঠিন সময়। জটিল সমস্যার সমাধান হয় দুপুরে মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে তখন। ঝামেলা মিটিয়ে মানুষ তখন খেতে বসতে চায়। ক্ষুধার্ত মানুষ ঝামেলা নিতে পারে না। খালেক নিয়ম করে রেখেছেন বড় ধরনের ঝামেলা ছাড়া তিনি দুপুরে বাসায় থাকবেন না। আজ বাসায় এসেছেন। কারণ জ্বরে তার শরীর পুড়ে যাচ্ছে।

জ্বর উঠেছে কাঠের দোকানে। একশ সিএফটি সেগুন কাঠ কিনতে গিয়েছেন। দরদাম ঠিক করছেন। হঠাৎ তার মাথায় চক্কর দিয়ে উঠল। তিনি ধপ করে বসে পড়লেন। কাঠের দোকানের মালিক আনিস বলল, কি হয়েছে?

মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠল।

পানি খাবেন। একটু পানি খান।

খালেক পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে পানি নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন, পানি তিতা লাগছে।

আনিস বলল, বাসায় যান। বাসায় গিয়ে শুয়ে থাকেন। সঙ্গে কি গাড়ি আছে?

জি না।

গাড়ি দিচ্ছি। আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে। কাঠ আরেকদিন কিনবেন।

খালেক বললেন, কাঠ আজই কিনব। আমি কাজ ফেলে রাখি না।

আনিস বলল, ক্যাশিয়ারের কাছে টাকা জমা দিন। আপনার একশ সিএফটি কাঠ আমি আমার দায়িত্বে জায়গামতে পৌছায়ে দিব। আপনি অসুস্থ মানুষ, আপনি আমার উপর ভরসা করেন।

খালেক বললেন, ভরসা করলাম। আনিস নামের যুবকটাকে তার পছন্দ হয়েছে। চেহারায় কাঠিন্য আছে। কথাবার্তায় নেই। সব ব্যবসায়ীর মধ্যেই কাস্টমারের সামনে হাত কচলানো স্বভাব আপনাতেই চলে আসে। এর মধ্যে নেই।

আনিস বলল, আপনি কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন আমি ডাক্তার খবর দিয়েছি। আপনার প্রেসারটা দেখবে।

খালেক বলল, কোনো দরকার নাই।

আনিস বলল, দরকার আছে কি নাই সেটা ডাক্তার বুঝবে। আপনার কি ডায়াবেটিসের কোনো সমস্যা আছে?

কখনো মাপি নাই।

একটা বয়সের পরে শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা মাঝে মধ্যে করা উচিত। আমার বাবার ছিল হাই ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার। কোনোদিন পরীক্ষা করান নাই। একদিন আমি জোর করে পরীক্ষা করালাম। সব অসুখ-বিসুখ একসঙ্গে ধরা পড়ল। ছয় মাসের মধ্যে মৃত্যু। আমি ব্যবসা করা টাইপ ছেলে না। বাবার ব্যবসা হঠাৎ এসে মাথার মধ্যে পড়েছে।

আগে কি করতেন?

পাস করার পর কিছুই করতাম না। অভিনয়ের সখ ছিল। যারা প্যাকেজ নাটক করে এদের পিছে পিছে অনেক ঘুরেছি। খুবই ফালতু ধরনের কয়েকটা ক্যারেক্টারে অভিনয়ও করেছি। এখন সব বাদ।

বিয়ে করেছেন।

জি না।

খালেকের হঠাৎ মনে হলো তরুর পাশে এই ছেলেটাকে খুবই মানায়। দুজনের চেহারায় কোথায় যেন একটা মিলও আছে।

ডাক্তার চলে এসেছে। প্রেসার নরমাল পাওয়া গেল। সুগারও মাপা হলো। র্যানডমে ৬.২ এসব কিছু না। আনিসের গাড়িতে করে তিনি বাসায় ফিরলেন। বত্রিশ ভাগা ব্যবসায়ীর লক্কর গাড়ি না। কালো রঙের ঝকঝকে গাড়ি। গাড়ির ভেতর বেলি ফুলের গন্ধ। খালেক ভেবেছিলেন এয়ার ফ্রেশনার দেয়া। পরে লক্ষ করলেন পেছনের সিটে বেতের ছোট্ট ঝুড়ি ভর্তি বেলী ফুল।

খালেক বাসায় ফিরলেন জ্বর নিয়ে। তার চোখ লাল। শরীর কাপছে। দৃষ্টি সামান্য উদ্ভ্রান্ত। তরু বলল, বাবা কি হয়েছে?

খালেক বললেন, সব ঠিক আছে। ডাক্তার চেক করেছে।

তরু বলল, শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ডাক্তার কি চেক করেছে বুঝলাম না।

তুই ইউনিভার্সিটিতে যাস নাই?

না। বাসায় একটা ঝামেলা হয়েছে এই জন্যে যেতে পারিনি।

কি ঝামেলা?

কি ঝামেলা পরে শুনবে। এখন বিছানায় এসো। গা স্পঞ্জ করে দিব। তুমি তো ঠিকমতো হাঁটতেও পারছ না। আমার ঘাড়ে হাত রাখো।

খালেক বললেন, দরজা-জানালা বন্ধ করে দে। চোখে আলো লাগছে।

তরু বাবার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। সিলিং ফ্যান হালকা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জানালা বন্ধ। খোলা দরজা দিয়ে সামান্য আলো আসছে। খালেক তার মাথার কাছে বসা মেয়েকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন এবং এই প্রথম মনে হলো এমন রূপবতী মেয়ে তিনি তার জীবনে দ্বিতীয়টা দেখেন নি।

খালেক বললেন, তোর জন্যে আজ একটা ছেলে দেখলাম।

ভালো করেছ।

আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

তরু জলপট্টি বদলাতে বদলাতে বলল, বিয়ের কথা পাকা করে চলে এসেছ নাকি বাবা?

না তোর পছন্দটা তো জানি না। তোর কি রকম ছেলে পছন্দ?

শায়লা ভাবীর হাসবেন্ডের মতো ছেলে আমার পছন্দ।

শায়লা ভাবী কে?

আমাদের ভাড়াটে। সনজুর বুবু।

খালেক অবাক হয়ে বললেন, সনজুর দুলাভাইয়ের মতো ছেলে তোর পছন্দ?

হুঁ।

কেন? সে তো শুনেছি তার স্ত্রীর সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে।

এই জন্যেই তো তাকে আমার পছন্দ। আমার হাসবেন্ড আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে আর আমি তাকে শায়েস্তা করব। এতেই আমার আনন্দ।

তোর কথাবার্তার কোনো মা-বাপ নাই।

সনজুর দুলাভাই কি করেছে জানো। আজ তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এমন এক নোংরা কারণে তালাক দিয়েছে যে শুনলে তোমার ইচ্ছা করবে লোকটাকে খুন করতে।

কি কারণ?

কি কারণ তোমাকে বলতে পারব না। তোমাকে কেন কাউকেই বলতে পারব না। বাবা শোনো, ঐ মহিলার কোথাও যাবার জায়গা নেই। তার এক ফুপু আছেন সেখানেও তিনি যেতে চাচ্ছেন না। উনি আছেন আমাদের এখানে। গেস্টরুমটা উনাকে ছেড়ে দিয়েছি।

খালেক বিরক্ত গলায় বললেন, কি বলিস তুই, আমার এখানে কেন থাকবে?

যাবে কোথায়?

যাবে কোথায় সেটা তো আমার দেখার কথা না।

তরু বলল, বাবা! তোমার জ্বর আরো বাড়ছে। এই সময় কথাবার্তা বন্ধ রাখো। জ্বর থামুক। তারপর যদি মহিলাকে এ বাড়িতে রাখতে না চাও ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দেবে। আমি কিছুই বলব না। এখন ঘুমুতে চেষ্টা করো। চোখ বন্ধ করো।

খালেক সাহেব চোখ বন্ধ করলেন। প্রবল জ্বরের ঘোরে তিনি বিকট সব দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। একটি স্বপ্নে তিনি কাঠের একটা বাক্সে শুয়ে আছেন। তার গায়ে চায়ের পাতা ঢালা হচ্ছে। তিনি বলছেন, শুধু চায়ের পাতায় হবে না। বরফ দিতে হবে। তরু বলল, বরফ দিলে তোমার ঠাণ্ডা লাগবে বাবা। কপুর দিচ্ছি। চা পাতা এবং কর দিলেই হয় আর কিছু লাগে না। এখন চোখ বন্ধ রাখো আমি বাক্সের ডালা বন্ধ করব।

হাতুড়ি-পেরেক এনেছিস?

হুঁ।

সাবধানে পেরেক পুতবি। হাতে যেন না লাগে।

আচ্ছা।

তরু বাক্সের ডালা বন্ধ করল। বাক্সটা এখন অন্ধকার। খালেক একটু পর পর পেরেক পোঁতার শব্দ শুনতে শুনতে গভীর ঘোরে চলে গেলেন। তাঁর ঘোর ভাঙল হাসপাতালে।

অপরিচিত একজন তরুণী তাঁর গায়ের চাদর ঠিকঠাক করে দিচ্ছে। খালেক বললেন, কে?

তরুণী জবাব না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল এবং তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঢুকল তরু। তরু বলল, বাবা একটু কি ভালো লাগছে?

খালেক বললেন, ঐ মেয়ে কে?

তরু বলল, সনজুর বোন।

সনজুটী কে?

জামান সাহেবের স্ত্রীর ছোট ভাই। শালা শব্দটা বলতে খারাপ লাগে বলে স্ত্রীর ছোট ভাই বললাম।

খালেক বললেন, জামান সাহেবটা কে?

তরু বলল, আমাদের এক তলার ভাড়াটে। বাবা এত কথা বলতে হবে। রেস্ট নাও। তোমার শরীর যে কতটা খারাপ তুমি জানো না। অজ্ঞান ছিলে চার ঘণ্টা।

খালেক বললেন, ঐ মহিলা এখানে কি করছে?

তরু বলল, সারাক্ষণ তোমার পাশে কাউকে থাকার কথা। আমি একা তো পারি না। উনি মাঝে মাঝে আমাকে সাহায্য করেন।

তার নাম কি?

শায়লা। বাবা প্রশ্ন শেষ হয়েছে? এখন চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করো। ক্ষিদে লেগেছে? কিছু খাবে? কমলার রস দেব?

না।

এক কাপ দুধ খাবে বাবা? কিংবা চিকেন স্যুপ। চামচে করে স্যুপ দেই? খেতে না পারলে খাবে না।

খালেক বললেন, আচ্ছা দে।

শুরু বড় চামচে করে স্যুপ খালেক সাহেবের মুখে ধরন্থে। তিনি খাচ্ছেন। খেতে ভালো লাগছে। টক-ঝাল স্যুপ। কোনোটাই বেশি না। টকও না ঝালও না। স্যুপ থেকে ধনিয়া পাতার গন্ধ আসছে। গন্ধটাও ভালো লাগছে।

স্যুপ কে বানিয়েছে, তুই?

শায়লা নামের মেয়েটা বানিয়েছে?

হুঁ। খেতে কি ভালো লাগছে বাবা?

লাগছে। তোর মা-ও ভালো সুপ বানাত। এই একটা জিনিসই সে ভালো পারত। এক গাদা ধনে পাতা দিত।

তরু ফট করে বলে ফেলল, বাবা এই মহিলাকে তুমি বিয়ে করে ফেললে তোমার সেবা-যত্ন খুব ভালো হবে। উনি খুব সেবা করতে পারেন।

খালেক মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর নিজের মেয়ে এ ধরনের কথা তার বাবাকে বলতে পারে তা তিনি স্বপ্নেও চিন্তা করেন নি। তাঁর উচিত এই মুহূর্তে মেয়ের গালে কষে চড় লাগানো। চড় না দিতে পারলেও কঠিন কঠিন কিছু কথা বলা দরকার। কথা বলার সুযোগ হলো না। শায়লা ঘরে ঢুকছে, সঙ্গে ডাক্তার। ডাক্তার ব্লাড প্রেসার দেখার জোগাড় করছে। খালেক অস্বস্তি নিয়ে শায়লার দিকে তাকালেন। মেয়েটা রূপবতী তবে নাক মোটা। তরুর মার নকিও মোটা ছিল। তার দ্বিতীয় স্ত্রী তরুর খালার নাকও ছিল মোটা। এই মেয়েটার নাকও মোটা। তার কপালে কি শুধুই মোটা নাকের মেয়ে?

খালেক চমকে উঠলেন। এই সব কি ভাবছেন? অসুখে ভুগে কি তাঁর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে! সুস্থ মাথার কেউ তো কখনো এরকম ভাববে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *