॥ পাঁচ ॥
গাড়ির শব্দ পেয়েই ওপর থেকে ফুলি হাঁফাতে হাঁফাতে নেমে আসে। অল্পবয়সেই ফুলি বড় মোটা হয়ে গেছে। এক দঙ্গল ছেলেপুলের মা। তবু বোধ হয় সন্তানের তেষ্টা ওর মেটেনি। রবির জন্য একবুক ভালবাসা বয়ে বেড়ায়।
ফুলির আদর সোহাগ সবই সেকেলে ধাঁচের। রবি গাড়ি থেকে নামতে নানামতেই ফুলি হাত বাড়িয়ে রাস্তাতেই ওকে বুকে টেনে নেয়। মৃদু সুখের ঘুনধুনে শব্দ করতে করতে বলে, ধন আমার, মানিক আমার, গোপাল আমার…বলে মুখে বুকে মুখ ড়ুবিয়ে দেয়। রবি প্রথমটায় লজ্জা পায়। হাত-পা দিয়ে আদরটা ঠেকায়। কিন্তু তারও দুর্বলতা আছে। সারা সপ্তাহ ধরে সে এই অদ্ভুত গ্রাম্য আদরটুকুর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই দেখা যায়, রবি দুহাতে আঁকড়ে ধরেছে তার মণিমাকে, কাঁধে মাথা রেখেছে। বলছে–রোজ রাতে আমি তোমাকে স্বপ্ন দেখে মণিমা।
ফুলির বুকে বোধহয় এই কথায় একটা ঢেউ উঠে নতুন করে। সেই ঘুনধুনে আদরের শব্দটা করতে করতে পিষে ফেলে রবিকে। আর রবি এবার নির্লজ্জের মতো আদর খায়।
ফুলির ছেলেপুলেরা সাড়া পেয়ে হইহই করে এসে ঘিরে ধরে রবিকে। রবি ওদের কাছে একটা বিরাট বিস্ময়। সে সাহেবদের মতো চমৎকার ইংরেজি বলে, অদ্ভুত সব দামি পোশাক পরে, নিখুঁত সহবত মেনে চলে। ফুলির ছেলেমেয়েরা এ সব দেখে ভারী মজা পায়।
ফুলি তার ছেলেমেয়েদের মধ্যে রবিকে ছেড়ে দিয়ে মুগ্ধচোখে একটু চেয়ে রইল, আপন মনেই বলল, রোগা হয়ে গেছে।
চাঁপা হটবক্স ফ্লাক্স আর দই মিষ্টির ভাঁড় নামিয়ে রাখতে রাখতে বলে, কিছু খেতে চায় না।
ফুলি মাথা নেড়ে বলে, খাবে কী? ওর ভিতরটা যে খাক হয়ে যায়। সে আমি বুঝি।
ফুলিদের আলাদা বসবার ঘর নেই। ঢুকতেই একটা লম্বাটে দরদালানের মতো আছে, সেখানে কয়েকখানা চেয়ার পাতা। ফুলির বর শিশির বি-এন-আর-এ চাকরি করে। বয়স বেশি নয়, কিন্তু ভারী প্রাচীনপন্থী। বছর বছর ছেলেপুলে হয় বলে দেবাশিস ওকে একবার বলেছিল ভায়া, বউটাকে তো মেরে ফেলবে, ছেলেপুলেগুলোও মানুষ হবে না।
শিশির একটু ঘাড় তেড়া করে বলল, তা কী করব বলুন?
তখন দেবাশিস বলে, কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহার করো না কেন?
শুনে বড় রেগে গিয়েছিল শিশির, বলল, কেন, আমি কি নষ্ট মেয়েমানুষের কাছে যাচ্ছি নাকি যে ও সব ব্যবহার করব?
এই হচ্ছে শিশির। আধুনিক জগতের কোনও খোঁজই সে রাখে না, তার ধারণা চাঁদে মানুষ যাওয়ার ঘটনাটা স্রেফ কারসাজি আর পাবলিসিটি। আজও সে বিশ্বাস করে না যে চাঁদে মানুষ গেছে। কথা উঠলেই বিজ্ঞের মতো একটা স্থ’ দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেবাশিসকে সে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। দেবাশিসের অর্থকরী সাফল্যকে সে হয়তো ঈর্ষা করে, কিংবা তার আধুনিক ফ্যাশনদুরস্ত হাবভাব, চালাক চতুর কথাবার্তা অপছন্দ করে।
দেবাশিস দরদালানের চেয়ারে বসল একটু। ভিতরের ঘরে রবিকে ঘিরে ধরে পিসতুতো ভাইবোন হল্লা করছে। মুর্গ-মুসল্লমের প্যাকেট হটবক্স থেকে বের করা হয়েছে বোধ হয়। তাই দেখে চেচাচ্ছে ফুলির আনন্দিত ছেলেমেয়েরা। বাথরুমের দিক থেকে গামছা-পরা শিশির বের হয়ে এল। দেবাশিসকে দেখে একটু হাসল। বলল, কী খবর? হাসিটা তেমন খুলল না।
এই তো, চলে যাচ্ছে।
রবিকে এনেছেন?
হ্যাঁ, আওয়াজ পাচ্ছ না?
শিশির এবার সত্যিকারের হাসি হাসল। দেবাশিসকে যতই অপছন্দ করুক শিশির, রবির প্রতি তারও ভয়ঙ্কর টান আছে! রবি এলে সে রসগোল্লা কিনে আনে, টফি আনে, খেলনা। ডাকে রবিরাজ বলে।
ফুলি এক কাপ চা হাতে এল। শিশিরকে দেখে ঘোমটা দিল মাথায়। ওর চালচলনে এখনই কেমন গিন্নি বান্নির ঠাট-ঠমক পাকা হয়ে গেছে। একগাল পান মুখে।
চা-টা একটা ছোট্ট টুলে দেবাশিসের সামনে রেখে হাঁসফাঁস করতে করতে বলে, সুজি করেছি, খাবে?
না।
পানের পিক ফেলতে বাথরুমে মুখ বাড়িয়ে আবার ফিরে এল ফুলি। চাঁপার দিকে চেয়ে বলল, তুই দিনমান থাকবি তো চাঁপা, না কি দাদার সঙ্গে চলে যাবি? আমি একহাতে আজকের দিনটা সামলাতে পারি না। খুদে ডাকাতরা সারা বাড়ি তছনছ করে, তার ওপর আজ আবার ওদের বাপ শনিঠাকুরটি বাড়িতে আছেন। আমি বলি বরং তুই থেকে যা।
চাঁপা ঘাড় নাড়ল। বলে, সোনাবাবুর কাছছাড়া হতে ভাল লাগে না।
মুখটা খুশিতে ভরে ওঠে ফুলির, বলে, আহা, রোগা হয়ে গেছে।
দেবাশিস ভদ্রতাবশত চায়ে চুমুক দেয়। আসলে ফুলির বাসার চা সে খেতে পারে না। চায়ের সুঘ্রাণ নেই, আছে কেবল লিকার আর গুচ্ছের দুধ-চিনি। দুধ বেশি পড়ে গেছে, ফলে চা সাদা দেখাচ্ছে। ছেলেবেলায় বেশি দুধের চাকে তারা বলত সাহেব চা। সাহেবদের রং ফরসা বলেই বোধ হয় উপমাটা দিয়ে থাকবে।
ফুলি, এ যে সাহেব চা! দেবাশিস বলে।
ফুলি প্রথমটায় বুঝতে পারে না। তারপর বুঝে লজ্জা পেয়ে বলে, তোমার তো আবার সব সাহেবি ব্যাপার। পাতলা লিকার অল্প দুধ-চিনি ও সব কি আর মনে থাকে! আমাদের বাঙালি বাড়িতে যেমনটি হয় তেমনটি করে দিয়েছি। আবার করে দিই।
থাকগে। খারাপ লাগছে না। দেবাশিস বলে।
ফুলি সামনে মোড়া পেতে বসল। গায়ে মোটা মোটা গয়না, আঁচলে চাবি, সব মিলিয়ে ওর নড়াচড়ায় এক ঝনৎকার শব্দ হয়। জোরে শ্বাস ফেলে, খাসের সঙ্গে একটা শারীরিক কষ্টে ওঃ বা আঃ শব্দ করে। সম্ভবত কোনও মেয়েলি রোগ আছে। শরীরের নানা আধি-ব্যাধির কথা বলে, কিন্তু বসে শুয়ে থাকে না কখনও। সারাদিন কাজকর্ম করছে স্টিমরোলারের মতো।
বসে ফুলি বলল, দাদা, এবার রবির ব্যাপারে একটা কিছু ঠিক করো।
কী ঠিক করব?
ওকে আর তোমার ফাঁকা ভুতুড়ে ফ্ল্যাটে রেখে লাভ কী? সারাদিন ওর মনের মধ্যে নানা ভয়-ভীতি খোঁড়ে। দেখছ না, কেমন রোগা হয়ে যাচ্ছে। খাওয়ায় অরুচি, সারাদিন নাকি মুখ গোমড়া করে থাকে। সঙ্গী-সাথিও নেই।
সব সয়ে যাবে।
সইছে কোথায়! প্রায় সময়েই আমার কাছে এসে মায়ের কথা বলে। দুপুরে ঘুম পাড়িয়ে রাখি, ঘুমের মধ্যে দেখি খুব চমকে চমকে ওঠে। এ সব ভাল লক্ষণ নয়। মুখে কিছু বলে না, লজ্জায়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে কাঁদে।
দেবাশিস একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে বলল, আমি তো ও যা চায় দিই।
আহা! বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে মা আর সঙ্গী। তা ও পায় কোথায়! আমি বলি, আমার কাছ থাক। মণিমা-মণিমা করে কেমন অস্থির হয় দেখনি?
দেবাশিস একটু হেসে বলে, তোরই তো অনেক ক’জন, তার ওপর আবার রবি এসে জুটলে—
ফুলি ধমকে ওঠে–ও সব অলক্ষুণে কথা বোলো না! ছেলেমেয়ে আবার বেশি হয় না কি?
দেবাশিস হাসে, বলে, তোর তা হলে এখনও ছেলেমেয়ের সাধ মেটেনি?
ফুলি কড়া গলায় বলে, না। মিটবেও না। আমি বাপু, ছেলেপুলে কখনও বাড়তি দেখি না। যত হবে তত চাইব। মা হয়েছি কীসের জন্য?
যদিও এটা কোনও যুক্তি নয়, তবু এর প্রতিবাদও হয় না। কারণ এ যুক্তির চেয়ে অনেক জোরালো জিনিস। এ হচ্ছে বিশ্বাস। শিশিরের সঙ্গে থেকেই বোধ হয় এইসব গ্রাম্যতা ওর মনে পাকাপোক্ত হয়ে গিয়ে থাকবে। বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুক্তির লড়াই বোকামি। তাই দেবাশিস একটু চুপ করে থাকে। একটা সিগারেট ধরায়।
বলে, দেখি।
দেখবে আবার কী! রবিকে আমার কাছে দিয়ে দাও। তোমার পায়ে পড়ি।
ওখান থেকে ওর ইস্কুলটা কাছে হয়, তা ছাড়া একভাবে থেকে থেকে সেট হয়ে গেছে, এখন তোর এখানে এসে থাকলে দেখবি ওর মন বসছে না।
কী কথা! এ বাড়িতে এলে ও কখনও যেতে চায় দেখেছ?
সে এক-দু দিনের জন্য, পাকাঁপাকিভাবে থাকতে হলেই গোলমাল করবে।
সে আমি বুঝব! তুমি বাপু ছেলেকে একেবারে সাহেব করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ। আজকাল আমার সঙ্গেও ইংরিজি বলে ফেলে, কথায় কথায় ‘সরি’ আর ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে।
শিশির গামছা ছেড়ে লুঙ্গি পরেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল, আসলে গরিবের বাড়িতে রাখতে দাদার ভয়। এখানে খারাপ সহবত শিখবে। খানা-পিনাও তেমন সায়েন্টিফিক হবে না।
দেবাশিস মনের মধ্যে এ সব কথাই ভাবে। এখানে দঙ্গলের মধ্যে পড়ে রবি তার আচার আচরণ ভুলে যাবে, স্মার্টনেস হারাবে। চিৎকার করতে শিখবে, খারাপ কথা বলতে শিখবে। এবং হয়তো বা দেবাশিসকে একটু একটু করে বিস্মৃত হবে।
দেবাশিস মৃদু গলায় বলে, না, সে সব নয়। আসলে ও আছে বলেই ফ্ল্যাটটায় ফিরতে ইচ্ছে করে।
ফুলি বলে, তুমি আর কতক্ষণের জন্যই বা ফেরো! রাতটুকু কেটে গেলেই তো আবার টো-টো কোম্পানি। ও যে একা সেই একা।
দেবাশিস একটা শ্বাস ফেলে বলে, ভেবে দেখি।
দাদা, আমি রবিকে বুক দিয়ে আগলে রাখব। একটুও চিন্তা কোরো না।
সে আমি জানি। তবু একটু ভেবে দেখতে দে। ভাবতে ভাবতেই ওকে শেষ করে ফেলো না। এখানে থাকলে ও সব ভুলে থাকতে পারবে। ফাঁকা ঘরে থাকে বলেই ওর সব মনে পড়ে। আমার কাছে কত কথা এসে বলে!
দেবাশিস ফুলির দিকে একটু অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে দেখছিল। ছেলেপুলের কী অপরিসীম সাধ ওর। গর্ভযন্ত্রণার কথা ভাবে না, ঝামেলার কথা ভাবে না! দুবার ওর পেটের ছেলে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে আজও দুঃখ করে। এই অভাব, দারিদ্র্য, দুঃসময়–এগুলো ওর কাছে ব্যর্থ হয়ে গেছে। দুটি বা তিনটি সন্তানের সরকারি বিজ্ঞপ্তি ও কখনও বোধ হয় চোখ তুলে দেখে না। শুনলে বলে, ও সব শোনাও পাপ।
দেবাশিস একটু হেসে বলে, পারিসও তুই!
ভিখিরির মতো ফুলি বলে, রবিকে দেবে দাদা?
দেবাশিস মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে, আজ উঠি রে।
সে উঠে দাঁড়ায়। চাঁপা দৌড়ে গিয়ে রবিকে বলে, সোনাবাবু, এসো। বাবা চলে যাচ্ছে। দেখা করে যাও।
কিন্তু রবি সহজে আসে না। দেবাশিস সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। চাঁপা রবিকে হাত ধরে নিয়ে আসে। দেবাশিস দেখতে পায়, ইতিমধ্যেই রবিব চুল ঝাঁকড়া হয়ে গেছে। গায়ের টি-শার্ট বুক পর্যন্ত গুটিয়ে তোলা। মুখে চোখে একটা আনন্দের বিভ্রান্তি। দেবাশিসের দিকে চেয়েই রবি দূর থেকেই চেঁচিয়ে বলল, বাবা তুমি যাও।
দেবাশিস ক্লিষ্ট একটু হাসে। বলে, আচ্ছা।
ফুলি সিঁড়ি পর্যন্ত আসে। কয়েক ধাপ নামে দেবাশিসের সঙ্গে। গলা নিচু করে বলে, শোনো দাদা।
দেবাশিস অন্যমনস্কভাবে বলে, উঁ।
রবি তোমার কাছে থাকলে ক্ষতি হবে। ও বড় দুঃখী ছেলে। তুমি কেন বুঝতে পারছ না?
দেবাশিস হাসল। মড়ার মুখের মতো হাসি। তারপর ফুলিকে পিছনে ফেলে নেমে এল রাস্তায়।
গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে একটা কণ্ঠস্বর শুনে হঠাৎ ওপরে তাকাল। চমকে উঠল ভীষণ। দোতলার রেলিঙের ওপর দিয়ে আধখানা শরীর বাড়িয়ে বাঁকে আছে রবি। আশেপাশে পিসতুতো ভাইবোনেরা। খুব উত্তেজিতভাবে কী যেন দেখছে দূরে। হাত তুলে আঙুল দিয়ে পরস্পরকে দেখাচ্ছে। হয়তো কাটা ঘুড়ি। কিংবা হেলিকপ্টার।
দেবাশিসের বুকের ভিতরটায় প্রবল একটা ঝাঁকুনি লাগে! গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষলে যেমন হয়।
রবি! বলে একটা চিৎকার দেয় সে।
মস্ত ভুল হয়ে গেল চিৎকারটা দিয়ে। এমন অবস্থায় কাউকে ডাকতে নেই। রবির মা সাততলা ফ্ল্যাট থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়।
শরীরের আধখানা বাইরে ঝুলন্ত অবস্থায় রবি ডাকটা শুনতে পেয়ে চমকে উঠল। দুলে উঠল শিশু-শরীর। শূন্য হাত বাড়িয়ে একটা অবলম্বনের জন্য অসহায়ভাবে হাত মুঠো করল৷ টালমাটাল ভয়ংকর কয়েকটি মুহূর্তের সন্ধিসময়। দেবাশিসের প্রায় সংজ্ঞাহীন শরীরটা টাল খেয়ে গাড়ির গায়ে ধাক্কা খায়। চোখ বুজে ফেলে সে। দাঁতে দাঁত চাপে।
রবি সামলে গেল। ওর ভাইবোনেরা ওকে ধরেছে। টেনে নামিয়ে নিচ্ছে রেলিং থেকে! ফুলি এসে দাঁড়িয়েছে পিছনে।
দেবাশিস অবিশ্বাসভরে চেয়ে থাকে। রবি রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে বাবার দিকে চেয়ে হাসে। তারপর হঠাৎ প্যান্টের পকেট থেকে রিভলভার বের করে আনে। বাপের দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়তে থাকে-ঠিসং…ঠিং…
দেবাশিস একবার ভাবল ফিরে যাবেফুলির বাসায়। তারপর ভাবল–থাক। ওরও তো ছেলেমেয়ে আছে। কেউ তো পড়ে মরেনি কখনও!
রবির দিকে চেয়ে দেবাশিস একটু হাসে। তার বুকে কোথায় যেন রবির খেলনা রিভলভারের মিথ্যে গুলি এসে লাগে। সে গাড়ির খোলা দরজা দিয়ে কোনওক্রমে হুইলের পিছনে বসে পড়ে। তারপর গভীরভাবে কয়েকটা শ্বাস নেয়।
গাড়ি ছাড়ে। কিন্তু উইন্ডস্ক্রিন জুড়ে কেবলই দোতলার রেলিং থেকে ঝুঁকে-থাকা রবির চেহারাটাকে দেখতে পায়। চমকে চমকে ওঠে। দাঁতে দাঁত চাপে। হুইলে তার মুঠো করা হাত প্রবল চাপে সাদা হয়ে যায়। পদে পদে ভুলভাবে গাড়ি চালাতে থাকে সে।…
রবির মা চন্দনা লাফিয়ে পড়েছিল সাততলা থেকে, কথাটা ভুলতে পারে না।
রবিও কি কিছু ভোলেনি? সব মনে রেখেছে।
তৃণার সঙ্গে দেখা হবে। ফাঁড়ির কাছের বাসস্টপে। দেবাশিস খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে থাকে।