০৫. এলিতা তার প্রথম ছবির সন্ধানে বের হবে

এলিতা তার প্রথম ছবির সন্ধানে বের হবে। বাহন হিসেবে সে সাইকেল চেয়েছিল। সাইকেলের বদলে রিকশার ব্যবস্থা হয়েছে। রিকশা এলিতার পছন্দ হয়েছে। এলিতার পেছনে পেছনে আমার থাকার কথা, আমি আরেকটা রিকশা নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে একটা ভ্যানগাড়িও আছে। সেখানে আলম এবং কাদের বসে আছে। তাদের সঙ্গে নানান ধরনের রিফ্লেকটর, সান গান। ছবি তুলতে এত কিছু লাগে জানতাম না।

এলিতা বলল, আমরা দু’জনতো এক রিকশাতেই যেতে পারি।

আমি বললাম, তা সম্ভব না।

সম্ভব না কেন?

গায়ের সঙ্গে গা লেগে যেতে পারে।

তাতে অসুবিধা কি?

আমি বললাম, গাতের সঙ্গে গা লাগলে তোমার শরীরের ইলেকট্রন আমার শরীরে ঢুকবে। আমার কিছু ইলেকট্রন যাবে তোমার শরীরে। দু’জনের মধ্যে বন্ধন তৈরি হবে। এটা ঠিক হবে না।

এলিতা বিরক্ত গলায় বলল, এমন উদ্ভট কথা আমি আগে শুনি নি। আমি অনেকের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে বাসে ট্রেনে ঘুরেছি। কারো সঙ্গেই আমার কোনো বন্ধন তৈরি হয় নি।

আমি বললাম, কেন হয় নি বুঝতে পারছি না। বন্ধন হবার কথা। একজন সাধুর সঙ্গে তুমি যদি কিছুদিন থাক তোমার মধ্যে সাধু স্বভাব চলে আসবে। দুষ্ট লোকের সঙ্গে কিছুদিন থাক তোমার মধ্যে ঢুকবে দুষ্ট স্বভাব।

বক্তৃতা বন্ধ করা। বেশি কথা বলা মানুষ আমি পছন্দ করি না।

আমি বললাম, হুট করে মাঝখান থেকে বক্তৃতা বন্ধ করা যায় না। শেষটা শোন। আমাদের কালচার বলে পাশাপাশি সাত পা হাঁটলে বন্ধুত্ব হয়। তুমি ছবি তুলতে এসেছ, দেশের কালচার মাথায় রেখে ছবি তুলবে। এখন বল কিসের ছবি তুলবে?

ডাষ্টবিনের ছবি। ডাস্টবিনে মানুষ খাদ্য অনুসন্ধান করছে এরকম ছবি।

এই ছবি তুলতে পারবে না।

কেন পারব না? তোমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এই জন্যে পারব না?

আমি বললাম, এলিতা শোন। দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। এই ছবি তুলতে পারবে না। কারণ ডাস্টবিনে এখন কেউ খাদ্য খুঁজে না।

এলিতা বলল, তুমি স্বীকার করতে চাইছ না। কিন্তু আমি জানি তোমাদের দেশে ডাষ্টবিনে খাবার খোঁজা হয়। আমি ভিডিও ফুটেজ দেখেছি।

বানানো ফুটেজ দেখেছি। আমাদের দারিদ্র্য দেখতে তোমাদের ভাল লাগে বলেই নকল ছবি তোলা হয়। আমি তোমাকে ঢাকা শহরের প্রতিটি ডাষ্টবিনে নিয়ে যাব। যদি এরকম দৃশ্য পাও অবশ্যই ছবি তুলবে।

এলিতা বলল, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন?

আমি বললাম, আমি মোটেও রেগে যাচ্ছি না। তুমি চাইলে ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছে এমন কিছু নকল ছবি তোলার ব্যবস্থা করা যাবে। কয়েকজন টোকাইকে বললেই এরা খাবার খোঁজার চমৎকার অভিনয় করবে। টোকাইরা ভাল অভিনয় জানে। বাংলাদেশে টোকাই নাট্য দল পর্যন্ত আছে।

টোকাই কি?

যারা ফেলে দেয়া জিনিসপত্র খুঁজে বেড়ায় এরাই টোকাই।

এলিতা বলল টোকাই লাগবে না। আমি টোকাই ছাড়াই ছবি তুলব। মিথ্যা ছবি আমি তুলি না।

ঢাকা শহরের ডাস্টবিনে ডাষ্টবিনে বিকাল পর্যন্ত ঘুরলাম। কোথাও খাবারের সন্ধানে কাউকে ঘুরতে দেখা গেল না। এক জায়গায় একটা বালিকাকে পাওয়া গেল। সে নাকে জামা চাপা দিয়ে কাঠি দিয়ে ময়লা ঘাটাঘাটি করছে। সে জানালো ডাষ্টবিনে মাঝে মাঝে দামী জিনিস পাওয়া যায়। সে নিজে একবার একটা মোবাইল ফোন পেয়েছিল। একশ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করেছে।

খাবারের ছবি একটা শেষ পর্যন্ত তোলা হল। ফুটপাতে পা নামিয়ে খালি গায়ে এক বৃদ্ধ ললিপপ আইসক্রিম খাচ্ছে। বৃদ্ধের মাথার চুলদাড়ি ধবধবে সাদা। তার হাতের আইসক্রিমের রঙ টকটকে লাল। সাদা এবং লালের কন্ট্রাস্টে সুন্দর দেখাচ্ছে।

এলিতা বলল, খুব সুন্দর ন্যাচারাল আলো পেয়েছি। ছবিটা ভাল হবে। আমি বললাম, এই আলোর আমাদের দেশে একটা নাম আছে। একে বলে কন্যা সুন্দর আলো। এই আলোর বিশেষত্ব হচ্ছে কালো মেয়েদের এই আলোয় ফর্সা লাগে।

তোমার দেশে ফর্সা লাগাটা খুব জরুরি?

হ্যাঁ। আমরাও তোমাদের মত।

আমাদের মত মানে?

তোমাদের দেশে তামাটে গায়ের রঙ হওয়া খুবই জরুরি। অনেক ডলার খরচ করে রোদে পুড়ে তোমরা গায়ের রঙ বদলাও। আমরা শুধু বিশেষ এক সময়ের আলো গায়ে মেখে ফর্সা হয়ে যাই। এ জন্যে আমাদের টাকা পয়সা খরচ করতে হয় না।

এলিতা বলল, তুমি কি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি যে তোমরা শ্রেষ্ঠ?

কিছু প্রমাণ করার চেষ্টা করছি না।

এলিতা বলল, এই বৃদ্ধ খালি গায়ে বসে আছে। তাকে জিজ্ঞেস কর আমি যদি তাকে একটা সার্ট বা সুয়েটার কিনে দেই সে কি নেবে?

তুমি সার্ট বা সুয়েটার উপহার হিসেবে দেবে, না-কি ভিক্ষা হিসেবে দেবে?

উপহার হিসেবে দিলে তাকে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। আমরা কাউকে জিজ্ঞেস করে উপহার দেই না।

এলিতা বলল, তুমি বাজে তর্ক করতে পছন্দ করা। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমি আর বের হব না।

আমি কি চলে যাব?

হ্যাঁ।

আমি বললাম, আলম আর কাদের থাকুক। ওরাতো আর কথা বলে তোমাকে বিরক্ত করছে না। দু’জনই মুগ্ধ হয়ে তামার কর্মকাণ্ড দেখছে।

ওরা থাকুক।

আমার আজকের দিনের পেমেন্টটা আলমের হাতে দিয়ে দিও।

আমি রিকশা থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিলাম। ইচ্ছা করছে মাথা ঘুরিয়ে এলিতার মুখের ভাব দেখি। কাজটা করা গেল না। কারণ আমার মহান পিতা এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গেছেন–তার বাণী সমগ্রের একটির শিরোনাম বিদায়। তিনি লিখেছেন—

বিদায়

পুত্র হিমু। তুমি যখন কারো কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রা শুরু করবে তখন পেছনে ফিরে তাকবে না। পেছন ফিরে তাকানো অর্থ মায়া নামক ভ্ৰান্তিকে প্রশ্ৰয় দেয়া। তুমি তা করতে পার না। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ কখনো কারো কাছ থেকে বিদায় নেয় না। তখন মায়া নামক ভ্রান্তি তাকে ত্যাগ করে। ভয় নামক অনুভূতি গ্রাস করে। সে পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না। মহাপুরুষরাই শুধু মৃত্যুর সময় উপস্থিত সবার কাছ থেকে বিদায় নেন।

সন্ধ্যাবেল আলম এবং কাদের বিমর্ষ মুখে ফিরে এল। তারা আমার জন্যে খামে ভর্তি করে একশ ডলারের একটা নোট এনেছে। তার সঙ্গে এলিতার লেখা চিঠি। চিঠি ইংরেজিতে লেখা , Dear Himu দিয়ে শুরু করা হলেও Dear শব্দটি কেটে দেয়া হয়েছে। চিঠির বঙ্গানুবাদ—

হিমু,

তোমার প্রাপ্য ডলার পাঠানো হয়েছে। তোমাকে কিছু কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি। তুমি বুদ্ধিহীন একজন মানুষ। বুদ্ধিহীনারাই তর্কবাজ হয়। বুদ্ধির অভাব তর্ক দিয়ে ঢাকতে চায়।

তুমি নানান বিষয়ে আমাকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছ। বিষয়টা অত্যন্ত বিরক্তিকর। আমি তোমার দেশে শিক্ষা সফরে আসি নি। নিজের কাজ নিয়ে এসেছি।

তোমাকে কঠিন কঠিন কথা লিখলাম। তার জন্যে আমি যে খারাপ বোধ করছি–তা-না। তোমার সার্ভিসের আমার আর প্রয়োজন নেই।

তবে মি. আলম এবং কাদেরকে আমার প্রয়োজন। ওরা নিয়মিত আসবে। আলোচনা সাপেক্ষে তাদের পেমেন্ট ঠিক করা হবে।

এলিতা

 

আমার বেকার জীবনের শুরু, আলম এবং কাদেরের কর্মময় সময়ের শুরু। এরা দু’জন ভোরবেলা ভ্যান নিয়ে চলে যায়, সন্ধ্যাবেলা ফিরে। এদের কাছ থেকে নানান ধরনের ছবি তোলার গল্প শুনি। কয়েকটি উল্লেখ করা যায়। ফটোগ্রাফের নামগুলি আমার দেয়া। এলিতা নিশ্চয়ই ইংরেজিতে সুন্দর নাম দেবে।

কুকুর এবং ইলিশ

এই ফটোগ্রাফটা কাওরান বাজার মাছের আড়তে তোলা। একজন ইলিশ মাছের ঝাকা নিয়ে বসেছে। কুচকুচে কালো এক কুকুর এসে ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। কুকুরের পেছনে দুনিয়ার ছেলে।পুলে। কুকুর ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশের গাড়ি থেমে আছে। ফটোগ্রাফটা এই সময়ে তোলা। কুকুর ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। তাকে নিয়ে এত হৈচৈ কেন হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না।

পিতা পুত্র এবং সাগর কলা

এই ফটোগ্রাফটা সোহারওয়ার্দি উদ্যানের বেঞ্চে তোলা। পিতা এবং পুত্র বসে আছে। বাবার হাতে একটা সাগর কলা, ছেলের হাতে একটা সাগর কলা। বাবা তার হাতের কলা ছেলেকে খাওয়াচ্ছে। ছেলে তার হাতের কলা বাবাকে খাওয়াচ্ছে।

ইটালিয়ান হোটেলের রুটি

রাস্তার পাশে ইটাবিছানো খাবারের দোকান। অতি বৃদ্ধ একজন রুটি খাচ্ছে। তার হাতে কাচা মরিচ। সে কাচা মরিচের দিকে তাকিয়ে রুটি খাচ্ছে।

কসাই এর চা পান বিরতি

ফটোগ্রাফটা নিউমার্কেটের কসাই এর-দোকানে তোলা। গরুর বড় বড় রান ঝুলছে। রানের ফাঁকে কসাইকে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে গ্লাসভর্তি চা। একটা গরুর কাটা মাথা কসাইয়ের পাশে রাখা। মনে হচ্ছে গরুর মাথা অবাক হয়ে কসাইয়ের চা পান দৃশ্য দেখছে।

 

এলিতা আমাকে বিদায় করে দিয়েছে, কাজেই মাজেদা খালার মোবাইল ফেরত দিয়ে আসতে হবে। আমি মোবাইল ফেরত দিতে গেলাম। খালু সাহেবের মানিব্যাগ সঙ্গে নিলাম। কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছিলাম। এলিতার ডলার ভেঙ্গে টাকা করে নিলাম, তারপরেও পঞ্চাশ টাকা কম হল।

মাজেদা খালা আমাকে দেখেই তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, এলিতা মেয়েটা কত অভদ্র তুই জানিস?

নাতো।

ওকে কয়েকবার টেলিফোন করেছি। বাসায় লাঞ্চ করতে বলেছি সে আসে নি। টেলিফোন করি, মিসকল হয়ে থাকে এই মেয়ে কল রিটার্ন করে না। তার জন্যে সব কিছু করে দিলাম। আমি এখন কি-না আমাকেই চিনে না। নিজেকে সে কি ভাবে? রূপবতী মেয়ে হয়ে আমার মাথা কিনে নিয়েছে? আমার মাথা এত সস্তা না। এখন বল তোর সঙ্গে তার ব্যবহার কেমন। অভদ্র মেয়ের গাইড হবার দরকার নেই। তুই চাকরি ছেড়ে দে।

খালা থামতেই আমি বললাম, চাকরি ছাড়ার উপায় নেই খালা। এলিতা আমার চাকরি নট করে দিয়েছে। চার দিন হল পথে পথে বেকার ঘুরছি।

বলিস কি?

বিয়েটা মনে হয় হল না।

এই নিয়ে তুই ভাবিস না। রূপ দিয়ে কিছু হয় না। মেয়েদের রূপ আর পদ্মপাতার জল একই। মন খারাপ করিস না।

আচ্ছা করব না। খালু সাহেবের টেলিফোনের ব্যাপারটা কিছু হয়েছে?

আমার ধারণা ধরে ফেলেছি। লোক লাগিয়েছি সে পাত্তা লাগচ্ছে। আমার কাছে বাহাত্তুর ঘন্টা সময় চেয়েছিল। আগামীকাল বাহাত্তুর ঘণ্টা পার হবে।

এসিড কবে ঢালবে?

বুঝতে পারছি না। তাড়াহুড়া করবে না। তাড়াহুড়ার ব্যাপার না। এসিড ঠিকমত ঢালতে হবে। বেঁচে থাকলেও চোখ যেন যায়।

মাজেদা খালা হতভম্ব গলায় বললেন, এইসব কি ধরনের কথা।

আমি বললাম, তুমি মুখে এসিড ঢালবে সব ঠিক থাকবে তাও তো হবে না।

মাজেদা খালা বললেন, তুই একটা ক্রিমিনাল। তুই আর এই বাড়িতে আসবি না।

খালু সাহেবের পরকিয়া প্রেমের কি হবে? এতবড় একটা অন্যায় চোখ বুজে সহ্য করবে?

একটা কেন দশটা পরকিয়া করুক তার জন্যে আমি চোখ গেলে দিব? তুই আমাকে ভাবিস কি? তোর এসিডের বোতল নিয়ে এক্ষুনি বিদায় হ।

আর এ বাসায় আসব না?

অবশ্যই না।

খালু সাহেবের সঙ্গে শেষ দেখা করে যাই।

খালু সাহেব শোবার ঘরে আধশোয়া হয়ে ন্যাশানাল জিওগ্রাফি পড়ছেন। টিভি চলছে, টিভিতেও ন্যাশানাল জিওগ্রাফি। ডাবল একশান।

আমাকে ঢুকতে দেখে খালি সাহেব মহা বিরক্ত গলায় বললেন, হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লে? সামান্য ভদ্রতার ধারও ধার না। ব্যক্তিগত শোবার ঘরতো। গণ বৈঠকখানা না। ইচ্ছা হল, ঢুকে পড়লে।

আমি বললাম, ধোঁয়া বাবার কাছে গিয়েছিলাম। উনি মানিব্যাগ উদ্ধার করেছেন। মানিব্যাগ নিয়ে এসেছি। সব ঠিকঠাক আছে কি-না দেখে নিন।

হতভম্ব খালু সাহেব মানিব্যাগ হাতে নিলেন। উল্টে পাল্টে দেখলেন। চোখ ছানা বড় হওয়া বলে একটা কথা বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। খালু সাহেবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তবে বেশ বড় সাইজের ছানাবড়া। আমি বললাম, ধোঁয়া বাবা আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

কেন?

মানিব্যাগ থেকে উনি পঞ্চাশটা টাকা রেখে দিয়েছেন। খড় কিনবেন। খড়ে পানি দিয়ে ভেজানো হবে। সেই ভেজা খড় জ্বালানো হবে। এতে প্রচুর ধোঁয়া হয়। খালু সাহেব! যাই ভাল থাকবেন। আপনার সঙ্গে আর দেখা হবে না।।

দেখা হবে না কেন?

মাজেদা খালা আমাকে এ বাড়িতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।

আমি চলে এলাম। খালু সাহেব তাকিয়ে রইলেন তাঁর মানিব্যাগের দিকে।

 

মেসে ফিরে দেখি আমার ঘরের সামনে টুলের উপর পেনসিল ওসি বসা। তাঁর মুখ গম্ভীর হাতে পেনসিলের বদলে ফ্লাস্ক।

আমি বললাম, বাইরে বসে আছেন কেন? আমার ঘরের দরজা খোলা। ঘরে বসে অপেক্ষা করলেই হত। কোনো কাজে এসেছেন না-কি সামাজিক সৌজন্য সাক্ষাৎ? আসুন ঘরে গিয়ে বসি।

ওসি সাহেব ঘরে ঢুকলেন। টেবিলের উপর চায়ের ফ্লাস্ক রাখতে রাখতে বললেন, দুটা কাপের ব্যবস্থা করুন। ফ্লাস্কে চা নিয়ে এসেছি।

ট্যাবলেট সিঙ্গাড়া আনেন নি?

না। পরের বার আসব। আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব। সত্য জবাব দেবেন। কাদের কোথায়?

সে আছে এলিতার সঙ্গে। এলিতাকে ছবি তুতে সাহায্য করছে। এলিতা হল…

এলিতার বিষয়টা জানি। সে বাংলাদেশে কেন এসেছে তাও জানি। আমি কাদেরের বিষয়ে জানতে চাচ্ছি।

সে আমাকে জানিয়েছে সে ঠিক করেছে একটা খুন করবে। দিন তারিখ আমার ঠিক করে দেয়ার কথা। পঞ্জিকা দেখে ভাল দিন বের করব। পঞ্জিকা কেনা হয় নি।

পঞ্জিকার জন্যে খুন আটকে আছে?

আমি বললাম, শুধু পঞ্জিকা না। শাহরুখ খানের জন্যেও আটকা আছে।

সে কে?

বলিউডের কিং খানকে চেনেন না? আপনারতো চাকরি যাবার কথা। কাদের আর্মি স্টেডিয়ামে কিং খানের খেলা দেখার পর খুনটা করবে। তিন হাজার টাকার টিকিট কাটবে। তার হাতে এখন টাকা আছে। এলিতা প্ৰতিদিন তাকে বিশ ডলার করে দিচ্ছে।

আমি দুটা গ্লাসের ব্যবস্থা করলাম। গ্লাস ভর্তি চা নিয়ে দু’জন মুখোমুখি বসেছি। ওসি সাহেবের মুখ আরো অন্ধকার হয়েছে। আমি বললাম, আলতা ভাবি কেমন আছেন।

ওসি সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, তার বিষয়ে কথা বলার জন্যে আমি আপনার এখানে আসিনি। আমি এসেছি কাদেরকে এ্যারেষ্ট করে নিয়ে যাবার জন্যে। ওকে টোপ হিসেবে বাইরে ছেড়ে রাখা হয়েছে। আমাদের ইনফরমেশন যা জোগাড় করার করেছি। এখন তাকে আটক করা যায়।

আমি বললাম, এতদিন যখন অপেক্ষা করেছেন আরো কয়েকটা দিন করুন। কিং খানের খেলাটা হয়ে যাক।

উনি কি খেলা দেখাবেন?

আমি জানি না কি খেলা দেখাবেন। নিশ্চয়ই ভাল কোনো খেলা। বাংলাদেশের মানুষ আধাপাগল হয়ে গেছে। আমি ভাবছি মিস এলিতাকেও খেলাটা দেখাব। উনি রাজি হলে হয়।

চা খাওয়া শেষ হবার পরেও ওসি সাহেব অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন। কাদের এবং আলম ফিরে এল। ওসি সাহেব খানিকক্ষণ কাদেরের দিকে তাকিয়ে তাকে এ্যারেস্ট না করেই চলে গেলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *