গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্যবিহীন কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াল সে। একবার মনে হলো তার ক্ষিদে পেয়েছে, কিছু খাওয়া দরকার। কিন্তু উৎসাহ পেল না। কোন হোটেলে বসবে, অর্ডার দেবে, অপেক্ষা করবে, খাবার আসবে–বড় দীর্ঘ মনে হলো ব্যাপারটা। ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে একটা লোক রঙ্গীন তুলোয় তৈরি সিংহ বিক্রি করছে।
কত দাম?
আপনার জন্যে দশ টাকা।
একবার ভাবল, কেনে। আবার ভাবল, কিনে কী হবে? ট্রাফিকের নীল বাতি জ্বলে উঠল। বাবর বেরিয়ে গেল।
কোথায় যাবে সে? বাবলিকে কাল একবার আসতে বলা দরকার। কিন্তু এখুনি ওদের বাসায় যাওয়াটা খুব সমর্থনযোগ্য বলে মনে হলো না।
ঢাকা ক্লাবের সামনে ভেতরে অসংখ্য গাড়ি। মিষ্টি একটা বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতি শ্লথ করল বাবর। বড্ড একা লাগছে। কোথাও কাউকে পেলে হতো। অনেকদিন এমন একা মনে হয়নি।
কেন একা লাগছে?
বয়স হয়ে যাচ্ছে তার?
না, তাও তো নয়।
নিজের সঙ্গেই কথা বলে বাবর। মনে মনে। আবার আপন মনেই হাসে। এইতো এখনো একেবারে কালকের কথা মনে হয়, সে ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে বই বগলে ইস্কুলে যাচ্ছে। মহিতোষ বলে এক দুর্দান্ত ছেলে ছিল, দুক্লাশ ওপরে পড়ত। তার পেছনে কী লাগাটাই না লেগেছিল মহিতোষ। খারাপ খারাপ কথা বলত। ইস্কুলের পেছনে ভাঙ্গা পায়খানায় নিয়ে প্যান্ট খুলতে চাইতো তার।
ছেলেবেলায় দেখতে বোধ হয় আমি গোলগাল সুন্দর ছিলাম, ভাবল বাবর। নিজের অজান্তেই এক হাতে নিজের চিবুক নিয়ে খেলা করতে লাগল সে। তোপখানার মোড়ে আবার লাল বাতি। আর একটু হলেই সামনের গাড়িতে ধাক্কা লাগত। গাড়ির ট্যাক্স দেবার সময় হয়ে এসেছে। কাল মনে করতে হবে। আবার সেই ভাঙ্গা পায়খানার ছবি ভেসে উঠল তার চোখে। মনে পড়ল ছেলেবেলায় সেই ভাঙ্গা পায়খানায় গেলেই কেমন গা শিরশির ছমছম করে উঠত। দেয়ালের লেখাগুলোও স্পষ্ট দেখতে পায় সে।
বাবুল + মন্টু।
মন্টু যেন কে ছিল? কিছুতেই মনে করতে পারল না বাবর।
৮০ তবে। B-দায়।
মৃদু হাসি ফুটে উঠল বাবরের ঠোঁটে।
আবার আর এক দেয়ালে কয়লা দিয়ে একটা বিরাট সঙ্গম উদ্যত শিশ্নের রেখাচিত্র। চিত্রকর যত্ন করে অন্ডকোষ আর কেশ পর্যন্ত এঁকেছে। একটি অণ্ডকোষে লেখা মালতি, আরেকটিতে বাবাগো। তার নিচে দ্বিতীয় কেউ মন্তব্য করে রেখেছে শালা।
বাবর কিছুতেই মনে করতে পারল না সেই ভদ্রলোকের নাম যিনি লণ্ডনের বিভিন্ন শৌচাগার আর দেয়ালের ছবি তুলে দেয়ালের লিখন নামে একটা অ্যালবাম বের করেছিলেন। তাতে কত রকম মন্তব্য! রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, দাম্পত্য যৌন-বিকার সম্পর্কিত— কী না বাদ গেছে। ও রকম একাকী জায়গায় মানুষ তার ভেতরের সত্তাটিকে বের করে আনে। গা শিরশির করে। হাত নিসপিস করে। লেখা হয়ে গেলে এমন একটা তৃপ্তি হয় যেন পরম আকাঙ্খিত কোনো গন্তব্যে পৌঁছুন গেছে।
বাবর নিজেও তো এ রকম করেছে। দেয়ালে লিখেছে। একবার সেক্রেটারিয়েটের বাথরুমে গিয়ে দেখে বাঞ্চোৎ লেখা। সিগারেট টানছিল বাবর। প্ৰথমে সিগারেটের ছাই দিয়ে চেষ্টা করল, কিন্তু লেখা গেল না। তখন চাবি দিয়ে সে বাঞ্চোৎ-র পাশে একটা বিরাট প্ৰশ্নবোধক চিহ্ন আঁকল। নিচে লিখল, কে? তুমি, না তোমার বাবা? আরেকবার এয়ারপোর্টের বাথরুমে দেখে কে লিখে রেখেছে। লাল পৈন্সিল দিয়ে বড় বড় হরফে–খেলারাম খেলে যা।
বাক্যটা আজ পর্যন্ত ভুলতে পারেনি বাবর। যে লিখেছে জগৎ সে চেনে। যে লিখেছে সে নিজে প্রতারিত। পৃথিবী সম্পর্কে তার একটি মাত্র মন্তব্য বাথরুমের দেয়ালে সে উৎকীর্ণ করে রেখেছে–খেলারাম খেলে যা।
কতদিন বাবর কানে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে কথাটা।
হা হা করে হেসে উঠল। কারা যেন। বাবর তাকিয়ে দেখে সে ডিআইটি বিল্ডিংয়ে এসে গেছে। আসতে চায়নি, অবচেতন মন তাকে চালিয়ে নিয়ে এসেছে। সামনের বাগানে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে কয়েকজন জটলা করছে। ঐ হাসির উৎস ওখানেই।
গাড়ির দরোজা ভাল করে বন্ধ করে বাবর নামল। এসে যখন পড়েছে তখন টেলিভিশন স্টুডিওটা একবার ঘুরে যাওয়া যাক।
সিঁড়ির ওপর মনে হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভিড়। আজ বোধহয় ওদের প্রোগ্রাম ছিল। উত্তেজিতভাবে ওরা হাত নাড়ছে, কথা বলছে, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। একজন বাবরকে সালাম দিল।
কী ছিল আপনাদের?
বিতর্ক।
ভিটিআর হলো?
হ্যাঁ, এইমাত্র শেষ করলাম।
কেমন হয়েছে?
ছেলের দল সলজ্জ হেসে নীরব রইল।
আচ্ছা, আবার দেখা হবে।
বাবর যেতে যেতে শুনল পেছন থেকে ওদেরই কে মন্তব্য করল, ডাট দেখিয়ে গেল, বুঝলি?
রিসেপশনে দাঁড়িয়ে বাবর জিগ্যেস করল, আমার কোনো চিঠি আছে?
আছে, এই এক গাদা।
প্ৰায় শখানেক চিঠি ভদ্রলোক বের করলেন। বাবর বলল, এগুলো তো সব ধাঁধার জবাব। আমার নিজের নামে কিছু নেই?
বলতে বলতে সে চিঠিগুলোর ঠিকানা দ্রুত দেখতে লাগল। না, তার ব্যক্তিগত নামে কোনো চিঠি নেই। একই হাতের লেখায় তিনটে খাম। বোধ হয় উৎসাহটা বেশি, যে করেই হোক সঠিক উত্তর একটা করতেই হবে। হ্যাঁ, এই যে তার নামে একটা চিঠি।
চিঠিটা সে আলাদা করে নিয়ে বাকি চিঠিগুলো ফেরত দিল। নীল খাম। মেয়েলী হাতের লেখা। ভেতরে পুরু কাগজে লেখা চিঠি। ওপর থেকেই খাস খস করছে। চিঠিটা বের করল বাবর।
শ্রদ্ধাস্পদেষু, আপনার মারপ্যাঁচ নামক ধাঁধার অনুষ্ঠানটি আমাদের খুবই ভাল লাগে। আমি এতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। গত সপ্তাহে আমার উত্তর সঠিক হয়েছিল। কিন্তু আপনি আমার নাম ভুল উচ্চারণ করেছেন। আমার নাম মোফসেনা নয় মোহসেনা। আশা করি এবারের অনুষ্ঠানে নামটি শুদ্ধ করে দেবেন। তসলিম। মোহসেনা খাতুন। এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা।
হেসে চিঠিটা পকেটে রেখে দিল বাবর। নামের জন্য মানুষের কী দুর্বর মোহ। না হয় একটু ভুলই হয়েছে, তার জন্যে কী জগৎসংসার থেমে গেছে? কাজ করছে না? কিন্তু এমন ভুল হলো কী করে তার? প্রোগ্রামের আগে তো সে তেমন মদ্যপান করে না যে সব হ ফ হয়ে যাবে!
স্টুডিও করিডরের দরোজা ঠেলতেই এক পাল বাচ্চা মেয়েদের মধ্যে গিয়ে পড়ল বাবর। তাদের পরনে সিল্কের রঙ্গিন ঘাগরা। মাথায় রূপালি সোনালি ফিতে। মুখে মেকআপের গোলাপি প্ৰলেপ।
তোমরা নাচবে নাকি? বাবর জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ। পরীর দেশে নাচ আছে আমাদের। ফুটফুটে একটা মেয়ে সুন্দর জবাব দিল তার। ভারি ভাল লাগল বাবরের।
তোমার নাম কী?
হেসে গড়িয়ে পড়ল মেয়েটা।
বারে নাম জিজ্ঞেস করলে হাসতে আছে নাকি?
আরো হাসতে লাগল এবার।
তাহলে তোমার নামই নেই। তাই না?
তখন আরেকজন ওর হয়ে উত্তর দিল, ওর নাম রুনু। আপনি ধাঁধার আসর করেন না?
নাতো! বাবর মুখ গোল করে বলল, কে বলল আমি ধাঁধার আসর করি? আমি তো নাচ দেখাই টেলিভিশনে দ্যাখোনি?
যাহ।
সত্যি।
এরপর যেদিন আমার প্রোগ্রাম আছে, দেখ আমি নাচ করি কি-না। বলে সে স্টুডিও-র ভেতর ঢুকল। সেখানে আর্ট ডিপার্টমেন্টের লোকেরা দৃশ্যপট তৈরি করছে। বুলিয়ে দিচ্ছে মেঘ। মেঘ থেকে বৃষ্টির আভাস হিসেবে রূপালি জরি ঝলমল করছে। আর দশ মিনিট পরেই পরীর দেশে শুরু হবে। প্রযোজক ছুটোছুটি করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার শূন্যের উদ্দেশে বাচ্চাদের মেকআপ হয়েছে? প্রশ্নটা থেকে থেকে ছুঁড়ে দিচ্ছেন। কারো অন্য কোনোদিকে দৃষ্টি দেবার অবকাশ নেই।
বাবার চুপচাপ এককোণে দাঁড়িয়ে রইল। এক নতুন ঘোষিকা এরই মধ্যে ঘোষণাপত্র হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে মুখস্থ করছে আর হাঁটছে। বাবরের দিকে একবার তার চোখ পড়তেই সে হাসল। উত্তরে প্রশস্ততার হাসি আঁকল বাবর। ঘোষিকা হঠাৎ হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে ছুটে গেল তার বুথের দিকে।
বাবর বেরিয়ে এলো।
আজ বড্ড একা লাগছে তার। অনেকদিন এ রকম মনে হয়নি। মনে হচ্ছে, তার ভীষণ একটা কিছু হতে যাচ্ছে; সেটা ভাল না মন্দ তা বোঝা যাচ্ছে না।
করিডরের দরোজার কাছে প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাহেবের সাথে দেখা। এই যে বাবার সাহেব।
কেমন, ভাল?
এসেছেন, ভালই হলো। আপনার সঙ্গে কথা আছে।
অপেক্ষা করি?
হ্যাঁ, আমার ঘরে গিয়ে বসুন। আমি দুমিনিটে আসছি।
বাবর তার ঘরে গিয়ে বসল। কমলা রংয়ের সরাসরি লাইন টেলিফোনটা জ্বলজ্বল করছে একরাশ কাগজপত্রের ভিড়ে। করবে নাকি একটা টেলিফোন বাবলিকে? বাবর সিগারেট ধরাল। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। বাবলির পিঠের তিলটা হঠাৎ চোখে ভেসে উঠল তার। আর সেই সঙ্গে অস্পষ্ট গুরু একটা সুগন্ধ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। অভিভূতের মত টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল বাবর।
হ্যালো। কে?
অপর পক্ষের গলাটা এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল বাবলির। কিন্তু পরীক্ষণেই টের পেয়েছিল, না বাবলির ভাবী।
আমি বাবর বলছি। সেলিম কই?
এইতো এখানেই, দিচ্ছি।
সেলিম টেলিফোন ধরল।
কিরে? কোত্থেকে?
টেলিভিশন থেকে।
খুব গ্যাঁজাচ্ছিাস, না?
দূর। একটা কাজে এসেছিলাম। ভাবলম দেখি তুই বাসায় আছিস নাকি?
আসবি?
দেখি।
আয় না, অনেকদিন তোকে দেখি না।
কেন, টেলিভিশনে তো দেখিস।
বাবর একটু পরিহাস করবার চেষ্টা করল। তার উত্তরে সেলিম বলল, নে নে আর বাহাদুরি করতে হবে না। আসবি কি-না বল?
আচ্ছা, আসছি।
কতক্ষণে?
এই একটু পরেই। বলেই বাবর লোভ সামলাতে পারল না, বাবলির উল্লেখ করতে গিয়ে একটু দূর থেকে আরম্ভ করল, ভাল আছিস তো?
আছি।
তোর বৌ?
সেও ভাল।
বাবলির পড়াশুনা কেমন হচ্ছে?
কী জানি। পড়াশুনা করছে নিশ্চয়ই।
এই কি ভাইয়ের মত কথা? একটু খোঁজ খবর নিতে হয়।
সত্যি রে, একেবারে সময় পাই না। মনেও থাকে না ছাই।
বাবর হাসল। প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাহেব ঘরে এসে ঢুকলেন।
সেলিম হাসল।
আচ্ছা, আমি আসছি।
আয়।
টেলিফোন রেখে বাবর একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বলল, বড় ব্যস্ত মনে হচ্ছে?
ব্যস্ত তো বটেই। একটা ইমপরট্যান্ট ইন্টারভিউ রেকর্ড হবে কাল। আমাদের নতুন সিরিজটার জন্যে।
ও। আমাকে কী বলবেন বলছিলেন।
বলছি, বলছি। চা?
খেতে পারি।
বেল টিপে চায়ের জন্যে ফরমাশ করলেন তিনি। তারপর কয়েকটা কাগজ এদিক থেকে ওদিকে সরিয়ে, অনাবশ্যকভাবে টেলিফোনের বইটা খুলে একবার দেখে, হঠাৎ বাবরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার প্রোগ্রামটা বাবর সাহেব—
বাবর উদ্বিগ্ন চোখে তার দিকে তাকাল।
আপনার প্রোগ্রামটা কিছুদিনের জন্যে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
কেন, খারাপ ছিল না তো সিরিজটা!
না, তা নয়, সিরিজটা খুবই ভাল, আপনি করেছেনও চমৎকার।
বাবর ঠিক বুঝতে পারল না লোকটা সত্যি সত্যি ভাল বলছে, না প্রোগ্রাম উঠিয়ে দেবে বলে তেতোর উপর মিঠে প্ৰলেপ লাগাচ্ছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল তার।
তিনি বললেন, আপনার পরিচালনা খুবই ভাল, কিন্তু আমরাই ঠিক করলাম কিছুদিনের জন্যে বন্ধ থাক।
কেন?
জানেন তো, টিভি প্রোগ্রাম যখন খুব ভাল হতে থাকে, তখনই বন্ধ করতে হয়। তাতে পরে আবার যখন সিরিজটা শুরু হয় তখন দর্শক উৎসাহ নিয়ে দেখে। এতে আপনারই লাভ।
তাতো বটেই।
বাবর চেষ্টা করেও প্ৰফুল্ল থাকতে পারল না। কেমন যেন বঞ্চিত মনে হতে লাগল। তার নিজেকে।
প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাহেব চায়ের পেয়ালা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, অনেক দিন তো করলেন, মাস তিনেক বিশ্রাম নিন। আবার শুরু করবেন। আরে, আপনারাই তো আছেন। আপনাদের ছাড়া আমরা কাদের নিয়ে স্টেশন চালাব? নিন, চা খান।
আজ যেন তাঁর কোনো কথাই বিশ্বাস করতে পারছে না বাবর। তার টিভি সিরিজ যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। তার ধারণা ছিল আরো অন্তত তিন মাস চলবে, আগামী মার্চ পর্যন্ত।
তাহলে এই সামনের দুটো প্রোগ্রামই শেষ প্রোগ্রাম?
হ্যাঁ। শেষ প্রোগ্রামটা একটু জমিয়ে করবেন। ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম তো! নতুন কিছু করতে পারবেন না? নতুন ধরনের কোনো প্রেজেন্টেশন?
ভেবে দেখব। আচ্ছা উঠি, আমার আবার এক জায়গায় যেতে হবে।
বাবর উঠে দাঁড়াল। প্রোগ্রাম ম্যানেজার হাত বাড়িয়ে বললেন, আপনার অবশ্য একটু আর্থিক লোকসান হলো।
না, না ঠিক আছে। আমি তো টাকার জন্যে প্রোগ্রাম করি না।
সে জানি। আপনার অন্য মেলা সোর্স আছে ইনকামের। সেই জন্যেই সরাসরি বলতে পারলাম।
চলি।
আচ্ছা, দেখা হবে।
বিমূঢ়ের মত বাইরে এসে থমকে দাঁড়াল বাবর। দাঁড়িয়ে থাকল। কিছুক্ষণ। ও কথা সে সত্যি বলেছে, প্রোগ্রাম টাকার জন্যে করে না। প্রোগ্রাম তার কাছে নেশার মত অনেকটা। এই যে যখন সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছে এক সঙ্গে এত হাজার হাজার লোক তাকে দেখছে, এর একটা প্ৰচণ্ড আকর্ষণ আছে। টাকা দিয়ে তার পরিমাপ করা যায় না।
টাকা তো সে ইনডেন্টিং থেকে কম রোজগার করে না। কিন্তু সেখানে এই যাদু, এই সম্মোহন নেই।
তাছাড়া, তাছাড়া এই প্রোগ্রামের জন্যেই তো সে প্রথম জানতে পেরেছিল লতিফাকে।
ঝড়ের মত বেরিয়ে গেল বাবর। বেরিয়ে গাড়িতে বসল। প্ৰচণ্ড শব্দ তুলে স্টার্ট করল ইঞ্জিন। আপন মনেই বলল, খেলারাম খেলে যা। তারপর রওয়ানা হলো বাবলিদের বাড়ির দিকে।