আজ ও আগামীকাল আমাদের কর্মকাণ্ড
দেশের দশটা জায়গা জুড়ে আজ ও আগামীকাল আমাদের কর্মকাণ্ড; একযোগে আমরা কাজ করবো দিনাজপুর, ঠাকুরগাও, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, বরিশাল, ভোলা, মাইজদি, লালমনিরহাঠ, নারায়ণগঞ্জ, আর আমার মদিনাতুন্নবি অঞ্চলে–এক সঙ্গে আমরা জিহাদ শুরু করবো।
আমাদের আজকের দিনটির নাম দিয়েছি। আমরা ‘ওমর দিবস’, আগামী কালের নাম ‘আলি দিবস’। দুটি পবিত্র দিবস। ওমর দিবসে আমরা ভৈরবের নাম বদলে রাখবো ‘ওমরপুর’, আলি দিবসে শ্যামসিদ্ধির নাম বদলে রাখবো ‘আলিগঞ্জ’, বদলে দেবো সব কিছু।
দিবস দুটির আর জায়গা দুটির নাম আমার মাথা থেকে বেরোয় নি।
বেরিয়েছে আমার দু-নম্বর মোঃ হাফিজুদিনের মগজ থেকে; আমি ক্রমশ ওর সম্পর্কে একটু একটু সাবধান হচ্ছি, খুনে আর নামকরণে ওর অলৌকিক প্রতিভা রয়েছে, যা আমাকে মুগ্ধ ও ভীত করে। ওর সম্ভবত কোনো জিনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, যেটি খুবই শক্তিশালী, যেটি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে; ওর দিকে তাকালে আমার মনে হয়ে একটি অসম্ভব সম্ভব হয়ে আছে। একদিন ও আমাদের ওসামা বিন লাদেন হয়ে উঠতে পারে, তখন ও আমাকে কানা মোল্লা উমর করে রাখবে না, আমাকে কাফের বলে আমার মাথায় কয়েকটি বুলেট ঢুকোবে।
আমাকে সাবধান হ’তে হবে।
আমি অবশ্য সাবধান, সাম্যবাদ ও সর্বহার করে করে আমাকে সাবধান হতে হয়েছে; এখন জামাঈ জিহাদে ইছলাম করতে এসে আমাকে আরো সাবধান হতে হচ্ছে। হোলি টেরর আনহোলি টেরারের থেকে ভয়ঙ্কর।
জিহাদি হাফিজুদিনটা একটু বেতমিজ, মুখে চমৎকার চাপদাড়ি, স্বাস্থ্যটাও ভালো; একাই দু-তিনটি দোকান ভাঙতে পারে, কয়েকটিতে আগুন লাগাতে পারে, গুলি চালাতে পারে, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’ বলে ছুরি ঢুকোতে পারে; ফিরে এসে একটির পর একটি এক্সএক্সএক্স দেখতে পারে, সবই ইন্ডিয়ান, বড়ো দুধ আর বড়ো মাজা ওর পছন্দ, চাকরানিটাকে ডেকে এনে ঘন্টাখানেক ধীরে অরাল-অ্যানাল-ভ্যাজাইনাল করতে পারে, তারপর উঠে গিয়েই মধুর স্বরে ওয়াজ করতে পারে, ফতোয়া দিতে পারে।
ও একটি সাংঘাতিক প্রতিভা, আমি তার প্রতিভায় মুগ্ধ ও সন্ত্রস্ত।
‘ওমর দিবস’-এ আমরা কী করবো, সেটা আমি আলোচনা করি।
আলোচনা করতে বাধ্য হই, মোঃ হাফিজুদিনের সঙ্গে–আগের সন্ধ্যায় মাগরেবের নামাজটা সোরে, একটা এক্সএক্সএক্স দেখতে দেখতে, একটু ব্ল্যাক লেবেল একটু সিভাস রিগ্যাল খেতে খেতে। এই কাজটাও মোঃ হাফিজুদ্দিন পারে বেশ, আমাকে সহজেই ছাড়িয়ে যায়, ঢাকাঢািক ক’রে পানি ছাড়াই গিলে ফেলে, তখন ওকে অলৌকিক মনে হয়; ওর দাড়ি আর সুরমামাখ্যা চোখ দেখে এটা কেউ বুঝবে না, আমিই অনেক সময় বুঝতে পারি না।
দাড়ি অবশ্য আমিও রেখেছি, তবে আমার দাড়িটা ওর দাড়ির মতো কিছুতেই লম্বা হচ্ছে না, তাই মাঝেমাঝে আমি দাড়িগুলো টানি; এটা আমাকে একটা হীনম্মন্যতা বোধ দেয়, কিন্তু আমি এটা ওকে বুঝতে দিই না।
হাফিজুদ্দিন বলে, ‘কাউলকা দুই চাইরড লাশ ফেলতে অইব, মালাউনগো পাঁচ সাতটা দোকানো আগুন লাগাইতে হইব, ওগো দালালগো দোকান ঘরবাড়ি পুড়তে হইব, আর বিরিজটার পুব দিকটা চুরমার কইর্যা ফ্যালতে হইব।‘
আমি একটু চমকে উঠি ব্রিজটার কথা শুনে।
ব্রিজটা সব সময়ই আমাকে বিস্মিত করেছে, অনেকদিন মনে হয়েছে ওটির ওপর আমি শুয়ে থাকি, শুয়ে নদী দেখি; নিজেকেই আমার ব্রিজ মনে হয়েছে। এতো বড়ো একটি ব্রিজ কাফেররা কীভাবে বানিয়েছে, সেটা ভেবেও আমি অবাক হয়েছি। একটি দোয়া পড়ে কি আমরা এমন একটি ব্রিজ বানাতে পারি না? হজরত মুসাকে আমার মনে পড়ে, তবে তাঁর রাস্তাটি ছিলো ক্ষণস্থায়ী, আর ওইটা ছিলো ইহুদিদের জন্যে, তাই রাস্তাটিকে আমি একটি অপচয় মনে করি।
আমি বলি, ‘খুন তিন চারটা করলেও ক্ষতি নেই, সারা বাজারে আগুন লাগালেও ক্ষতি নেই, তাতেই আমাদের জিহাদ সফল হবে, আমরা ইছলামের দিকে পাক স্তানের দিকে বেশি এগিয়ে যাবো, আমাদের দলের শক্তি বাড়বে, তবে ব্রিজটা চুরমার করা ঠিক হবে না, মানুষের অসুবিধা হবে।’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘মাইনষের কথা ভাবনের সময় এইটা না, এইটা আসল কামের সময়, পাকিস্থান ভাঙ্গনের জইন্যে যেমন এই বিরিজ ভাঙছিল, আবর পাকিস্থান বানানের জইন্য এই বিরিজ ভাঙতে হইব।’
ব্রিজটার জন্যে আমার মায়া লাগে; আমি বলি, ‘ব্রিজ ভাঙার সময় পরেও পাবো, আগামীকালই দরকার নেই।’
মোঃ হাফিজুদিন হুইস্কির গেলাশে একটি বড়ো চুমুক দিয়ে, এক্সএক্সএক্স ছবিটার একটি দৃশ্য রিওয়াইন্ড করে, বলে, ‘হুজুর, জিহাদি জোশে আপনার দিল আইজও ভাইর্যা ওঠে নাই। তয় আপনের কতার ওপর কতা নাই, কয়ড ডিনামাইট মাডির নিচে জমা কইর্যা রাকাছি, পরে কামে লাগাম, ইনশাল্লা।’
আমি বলি, ‘মোঃ হাফিজুদিন ব্রিজটা তুমি ভাঙতে চাও, তা খুবই উত্তম। তারপর কি একটি দোয়া পড়ে ওটি বানাতে পারবে?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন খুব বিব্রত হয়, বলে, ‘হুজুর, এমুন দোয়া অহনও পাই নাই।’
আমি বলি, ‘এমন দোয়া কি নেই?’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘হুজুর, আল্লার কিতাবে নিচই আছে, তয় অইডা খুঁইজ্যা দোকতে অইব।’
আমি বলি, ‘এখনো খোঁজো নি কেনো?’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘অহন থিকা খুজুম, হুজুর।’
আমি বলি, ‘এতো দেরি করলে কেনো?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘দোয়াডা খোজনের কতা মনে আছিল না, হুজুর।’
আমি বলি, ‘কোন কোন দোকানে আগুন লাগাতে চাও?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘গোডা দশেকের কমে হইব না; কয়ড়া মালাউনগো দোকানে আর কয়ড়া মালাউনগো দালালগো দোকানে; মালাউনগো আর তাগো দালালগো বাইচা থাকতে দিমুনা।’
আমি বলি, ‘বেশ, আলহামদুলিল্লা।’
আমার মোবাইল বেজে ওঠে, ঢাকা থেকে আমার বড়ো খলিফা।
খলিফা বলেন, ‘কাইল হইব ইছলামের জিহাদের, আমাগো পাকিস্থানের জইন্যে একটা বড় দিন, সেইভাবে কাজ করবা, ডরাইও না, আল্লার রহমত তোমাগো উপরে আছে।’
আমি বলি, ‘হুজুর, ডরানের কোন কারণই নেই, আল্লার রহমতে দেখবেন কালকে আমরা ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বকতিয়ার খিলজিকেও ছাড়িয়ে গেছি, পরের দিন পত্রিকা ভ’রে আমরাই থাকবো, ইনশাল্লা।’
খলিফা বলেন, ‘মাশাল্লা, থাকার সঙ্গে আমরা কতা বইল্যা রাখছি, আর পাওয়ারফুল তিন চাইরডা মিনিস্টারগো সঙ্গেও কতা বলছি, তারা এক সোম আর আমাগো প্যাট্রন এমবেছেডারগো লগেও কতা কইছি, ডোনারগো সঙ্গেও কতা বলছি। তারাও তোমাগো দিকে তাকাই আছে।’
আমি বলি, ‘আমরা সব ট্যাকটিক্স ঠিক ক’রে ফেলেছি, আল্লার রহমতে কোনো চিন্তা নাই, ইনশাল্লা কালকে দেখবেন। হুজুর, আপনি মেইন পাটিরে বোঝাবেন।’
খলিফা বলেন, ‘মেইন পার্টিরে বুজাইতে হইব না, তারাই এইখন আমাগো কাছে বুজতেছে। যেইর লিগা ফোন করলাম সেই কথাটা শোনো, ঘণ্টা দুইয়ের মইদ্যেই তোমার কাছে বিশ তিরিশজন ট্রেনিং পাওয়া জিহাদি যাইব, তাগো তালেবানের ট্রেইনিং আছে, আপগানিস্থানে এক বছর আছিল, তাগো পাঠাই দিছি, লগে দশ লাক ট্যাকাও দিছি তোমারে দেওনের জইন্যে।’
আমি বলি, ‘আলহামদুলিল্লা, সোভানাল্লা।‘
খলিফা বলেন, ‘মনে রাইখ্যো আমাগো মিডিল ইস্টের ভাইগো আমরিকার ইহুদিরা শ্যাষ কইর্যা দিতেছে, সেইজন্য এইখানে নতুন মিডিল ইস্ট বানাইতে হইব, আমাগো ডোনাররা আমাগো দিকে চাইয়া আছে।’
আমি বলি, ‘ইনশাল্লা, কাল আর পরশু হবে আমাদের দিন, আমেরিকারে আমরা বুঝিয়ে দেবো জিহাদ কাকে বলে। অগো অ্যামবেসিটাকে একদিন জ্বালিয়ে দিতে হবে।’
খলিফা বলেন, ‘সেইটা পরে হইব, ইনশাল্লা, অখন আমরিকারে খোপান আক্কেলের কাম হইব না, তা তো তুমি বুঝ।’
আমি বলি, ‘হুজুর, আমাদের দোয়া করবেন।‘
খলিফা বলেন, ‘তোমার জইন্য দোয়া রইল, আইজ রাইতে ছুরা ইয়াছিন পাচবার পইর্যো; আল্লা হাফেজ।’
মোঃ হাফিজুদিনের সঙ্গে আরো আলোচনা করি, কিন্তু আমরা জিহাদের ও পাটির নিয়ম মেনে চলি, নেতার ওপর আর কোনো কথা নেই, তাই আমি যা বলবো, তাই হবে। কৌশল আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি, তাতে জিহাদি মোঃ হাফিজুদিনের কৌশলগুলোও আছে, আর আমার নিজের কৌশলগুলো।
কালকের দিনটিকে জিহাদের শ্রেষ্ঠ দিন ক’রে রাখতে হবে, যাতে বছর বছর তা আমরা পালন করতে পারি, আমাদের একটি চিরস্মরণীয় শহিদাও দরকার।
আমাদের কাটা এম-১৬ গুলো, রাইফেলগুলো, পিস্তলগুলো, গ্রেনেডগুলো, দাও, শরকিগুলো ঠিক আছে, কয়েক শো বোমাও প্রস্তুত আছে; কে কী করবে: তাও ঠিক করা আছে। তীক্ষ ক্ষুদ্রগুলোও আছে; ওগুলো গোখরোর জিভের মতো, ভেতরের দাঁতের মতো, কিন্তু কাজ করে মনোরমভাবে হাত আর পায়ের রাগ কাটে নিঃশব্দে, আমাদের রয়েছে একদল দক্ষ ক্ষৌরকার। সব কাজে এটম হাইড্রোজেন বোমা দরকার হয় না, আমাদের নানা কাজে ক্ষুর এটম হাইড্রোজেন বোমার থেকেও শক্তিশালী আর নিপুণ; ওগুলো আমাদের পকেটে রাখা এটম হাইড্রোজেন বোমা দরকার হয় না, আমাদের নানা কাজে ক্ষুর এটম হাইড্রোজেন বোমার থেকেও শক্তিশালী আর নিপুণ; ওগুলো আমাদের পকেটে রাখা এটম হাইড্রোজেন বোমা। আমাদের জিহাদিরা সবাই খালেদ ইবনে ওয়ালিদ, মুহম্মদ বিন কাশিম, ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বখতিয়ার, তারিক, ওসামা লাদেন, তাদের ওপর আমার ভরসা আছে; যাকে যা কাজ দিয়েছি, তা ঠিক মতো করবে। এইটাই পছন্দ আমার জামাঈদ জিহাদে ইছলামের।
আমরা সব এলাকার নেতারাই থাকি মাদ্ৰাছায়।
এখানে নদীর পারে লম্বা একটি মাদ্ৰাছা ক’রে দিয়েছে আমাদের দলেরই এক মহান সেবক আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি, ইছলাম আর পাকিস্থান যার প্ৰিয় ধন, যে গার্মেন্টস, কন্ট্রাকটরি, এনজিও, সোনা ও অন্যান্য সোনার থেকে দামি জিনিশ চোরাচালানি করে কোটি কোটি টাকা করেছে; প্রত্যেক বছরই হজে যায়, আমি গেছি। একবার। মাদ্ৰাছটির নাম মাদ্ৰাছা-ই-মদিনাতুন্নবি; সে অবশ্য তার জান্নাতবাসিনী মায়ের নামেই এটির নাম রাখতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমার পরামর্শে সে এ-নামটি রাখে, রেখে ধন্য হয়।
সে অবশ্য নিজের টাকায় মাদ্ৰাছা করে নি, লিবিয়া, ইরাক, আর সৌদি এনজিও থেকে টাকা পেয়েছে, এটা আমি জানি, আল কায়েদার টাকা পেয়েছে কি না জানি না; যতো টাকা পেয়েছে ততোটা খরচও করে নি, আমাকে বেশ কিছু দিয়েছে, এখানকার অন্যরা জানে না; তাই সে আমাকে মান্য করে। মাদ্ৰাছার সঙ্গেই আছে মসজিদ, সেটিও কোরবান আলি ব্যাপারিই করেছে। এতো পরহেজাগার, ঈমানদার, ও পাক স্তান প্ৰিয় আদমি কমই আছে।
ব্ল্যাক লেবেল, ব্যালেনটাইন, সিভাস রিগ্যালের সাপ্লাইটাও সাধারণত সেই দেয়, এক্সএক্সএক্সও সেই নিয়ে আসে, আমার সঙ্গে পান করতে করতে এক্সএক্সএক্স দেখতে তার ভালো লাগে; তার পছন্দ আবার ব্যাংককের মেয়েগুলো, তার মতে মেয়েগুলোকে চেপে ভর্তা বানালেও তারা বাধা দেয় না, তারা রসগোল্লার মতো নরম, জিভের নিচে রেখে চিপলে রস বেরোয়।
সে একটু মুশকিলে পড়েছিলো, সেটা থেকে তাকে আমি বঁচিয়েছি।
আল্লায়ই আপদ দেন, আর মহান আল্লাতালাই তার বান্দাদের আপদমছিবত থেকে বাঁচান; তার জন্যে সে আমাকে মাঝেমাঝে ‘হুজুর’ বলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। একেকবার একেকটি পাজেরো নিয়ে আসে, আমার মাত্র একটি পাজেরো, তাও পুরোনো মডেলের। একটি নতুন মডেল চাইলেই পাবো, তবে চাইতে ইচ্ছে করে না।
বুড়ো বিবিটিকে তালাক দিয়ে সে একটি মডার্ন যুবতী বিবি নিতে চেয়েছে, বুড়ো বিবিটার মস্তান ছেলেটি, মুহাইমেন বিন কোরবান, তা মেনে নিতে রাজি হয় নি, তাই কোরবান আলি ব্যাপারি একটু মছিবতে পড়েছিলো।
আমি মস্তানটিকে রাজি করিয়েছি, কোটি পাঁচেক লেগেছে তাতে; আমারও কিছু থেকেছে। আমার চাইতে হয় নি, আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি নিজেই আমার পায়ের কাছে রেখে গেছে, যা রেখেছে তিন লক্ষ বছর সাম্যবাদ করলেও আমি তা চোখেও দেখতে পেতাম না। জিহাদ আমাকে দিচ্ছে আর দিচ্ছে, আল্লার রহমতে আরো দেবে। মডার্ন বিবিটা বিএ পাশ, আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারির ফার্মে গিয়েছিলো একটি চাকুরির জন্যে; মিস লাইলাতুল কদর আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারির মুখোমুখি চেয়ারে বসতেই কোরবান আলি ব্যাপারি উত্তেজনা বোধ করে, তার ঠোঁট, আর ব্রেস্টের উচ্চতা আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারিকে ছহবতের জন্যে উত্তেজিত করে। এটা শয়তানের কাজ; পুরুষ আর মেয়েলোক কাছাকাছি বসলে শয়তান কাজ করবেই, এসে মাঝখানে বসবেই, কোরবান আলির ফার্মেও শয়তান গন্ধম ফল নিয়ে হাজির হয়। আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারির ফার্মে কোন মেয়েলোক কাজ করে না, এটা নিয়মবিরুদ্ধ, কিন্তু মিস লাইলাতুল কদরকে সে একটি চাকুরি দিতে চায়।
কোরবান আলি ব্যাপারি জিজ্ঞেস করে, ’আপনের নামটা আমার কাছে পাক মনে অইতেছে, আপনি কি বোরখা হিজাব পইর্যা আসতে পারবেন, মিস লাইলাতুন কদর?’
লাইলাতুন কদর বলে, ‘তা পারবো, ইনশাল্লা।‘
কোরবান আলি বলে, ‘তাইলে তুমি আইজই কামে জয়েন কইর্যা হালাও, রাহমানির রাহিম চান তুমি এইখানে কাম কর।’
লাইলাতুন কদর বিস্মিত হয়, ‘আজই?’
কোরবান আলি, ‘দেরি করনের কাম কি?’
লাইলাতুল কদর ওই দিনই কাজে যোগ দেয় ১৫,০০০ টাকা বেতনে।
ছুটির সময় কোরবান আলি লাইলাতুন কদরকে বলে, ‘থাউক, মিস লাইলাতুল কদর, তোমার বোরখা হিজাব পরন লাগব না, তোমার এই রকমেই সোন্দর দেহায়।‘
লাইলাতুন কদর বলে, ‘আপনে সত্য বলতেছেন? আমারে সোন্দর দেহায়?’
কোরবান আলি বলে, ‘মিছা কামু ক্যা? তোমার দেহডা নুরজাহানের মতন, হ্যামা মালিনির মতন, তোমারে এইভাবে দেখতেই আমার সুক লাগিব, আল্লার রহমতে আমি সোন্দর জিনিস দ্যাকতে পছন্দ করি।‘
লাইলাতুন কদর বলে, ‘তাহলে দেইখ্যেন।‘
কোরবান আলি কয়েক দিন সুন্দর জিনিশ দেখে, দেখে বেচইন হয়ে ওঠে।
কয়েক দিন পরই মহামান্য শক্তিধর শয়তান সন্ধ্যার একটু পর এসে ঢোকে আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারির অফিস রুমে, সে মিস লাইলাতুল কদরকে একটুখানি জোর ক’রে অফিসের সোফার ওপর ফেলে বিছমিল্লা বলে ছহবত করে। বেশি জোর করতে হয় নি, লাইলাতুল কদর রাজিই ছিলো অনেকটা; বহুদিন পর ছহবতে দিল ভরে কোরবান আলি ব্যাপারির।
ছহবতের পরই মিস লাইলাতুন কদর বলে, ‘আমারে কাইলই বিয়া করতে হবে, দেরি করন যাইব না।‘
কোরবান আলি বলে, ‘বিয়া ত করুমই তয় আমার বুড়া বিবিটার মত লইতে হইবে, নাইলে করুম কেমনে?’
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘আইজ আমি প্ৰেগনেন্ট হইতে পারি, কাইলই বিয়া করতে হবে, বুড়ির মতের দরকার নাই।’
কোরবান আলি বলে, ‘বুড়ি বিবির মত লইয়া লই।‘
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘তারে তালাক দেও।’
কোরবান আলি বলে, ‘তালাক দিতে হইব?’
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘হ।’
কোরবান আলি বলে, ‘আইচ্ছা, তারে তালাক দিমু; তয় আমার একটা গুণ্ডা পোলা আছে, সেইডা যে কি করব।’
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘সেইটারে তুমি সামলাও।’
কোরবান আলি বলে, ‘হ, দেহি।‘
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘নাইলে তোমার বিপদ হইব, আমারও বিপদ হইব, তোমার কোটি কোটি ট্যাকা ধইর্যা টান দিমু।‘
কোরবান আলি বলে, ‘আইজ রাইতে বুদ্ধি বাইর করতে হইব।‘
কোরবান আলি আরেকবার ছহবত করতে করতে বলতে থাকে, ‘অ, আমার লাইলাতুন কদর, এমুন সুক আর আমি পাই নাই, তুমি আবার বিবি, বুড়িডারে তালাক দিমু, তোমার দ্যাহ ভইর্যা মদু।‘
মিস লাইলাতুল কদর বলে, মদু পাইবা, কাইলই বিয়া করতে অইব মদু খাইতে চাইলে, নাইলে মদু বিষ হইয়া যাইব।’
কোরবান আলি বলে, ‘তোমার মদু ছাড়া আমি বাচুম না, তুমি চিন্তা কইর্য না, কাইল নাইলে পরশুই তোমারে শান্দি করুম।’
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘তাইলে আরেকটু মদু খাও, দরজাটা আটকাইয়া লও, ভাল কইর্যা খাও, জানি আমিও মদু পাই।’
কোরবান আলি বলে, ‘ক্যান, লায়লাতুল কদর, তুমি মদু পাও নাই?’
মিস লাইলাতুল কদর বলে, ‘বুড়ির লগে হুইতে হুইতে তুমি মদু খাইতে আর খাওয়াইতে ভুইল্যা গ্যাছ, তোমারে শিখাই দিমুনে। তোমার শাবলডা চিলা অইয়া গ্যাছে, ওইডারে শক্ত করতে অইব, নইলে খুড়বা ক্যামনে?’
কোরবান আলি বলে, ‘হ, ঠিকই কইছা, বিবি লায়লাতুল কদর, ওই বুড়িডা ভাল কইর্যা চিৎ অইতে পারে না, কোনমতে কাম সারতে অয়।’
লাইলাতুল কদর বলে, ‘আর আমার কাম?’
কোরবান আলি ব্যাপারি বলে, ‘তুমি বিবি হগুরগো ছারাই গেছো। তোমার জান্নাতুল ফেরদাউসে আমি দিনরাইত ঢুইকা থাকুম।’
আলহজ কোরবান আলি ব্যাপারি আমার সাহায্যের জন্যে ছুটে আসে। আমি সাহায্য করি; সাচ্চা মুছলমান হয়ে আরেকজন সাচ্চা পরহেজাগার পাক স্তান, সার জমিন সাদ বাদ, দিওয়ান মজনু মুছলমানকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য। এতে তার কয়েক কোটি ব্যয় হয়, কিন্তু ওটা তার কাছে সামান্য টাকা; লাইলাতুল কদরের সঙ্গে ছহবত করার জন্যে এটা কিছু নয়। তারা ছহি ছালামতে আছে, লাইলাতুল কদরকে এ-পর্যন্ত সে তিনবার গর্ভবতী করেছে; তার জান্নাতুল ফেরদাউসকে সে সব সময় ভরে রাখে; সে প্রোডাকশনে বিশ্বাস করে, প্রোডাকশন ছাড়া ফরিন করেন্সি আসে না।
আলহজ বেগম লাইলাতুল কদর এখন আর অফিসে যায় না, বোরখা হিজাব পরে পাজেরোতে চেপে পেট ফুলিয়ে সে ইস্টার্ন প্লাজা থেকে ওয়েস্টার্ন প্লাজা থেকে সাউদার্ন প্লাজায় ছোটাছুটি করে, সিঙ্গাপুর যায়, লণ্ডন যায়, বছরে বছরে হজ করে, হজ থেকে ফেরার সময় বস্তা ভরে সোনা নিয়ে আসে। শুধু দ্বিনের কাজ করলে তো চলে না, মমিন বান্দাকে দুনিয়ার কাজও করতে হয়।
মাদ্ৰাছা-ই-মদিনাতুন্নবি শক্ত দেয়াল দিয়ে ঘেরা; তালেবানরা কোরান হাদিছ পড়ে–ওদের গলায় মধুর সুর, লতামঙ্গেশকারের মতোই–আমার ঘর থেকে বেশ দূরে, অন্য দিকে থাকে আমার দু-নম্বর নেতা মোঃ হাফিজুদ্দিন, খুবই শানশওকতের সঙ্গে। আমাদের দুজনেরই বডিগার্ড আছে, পাঁচটি তালেবান আমার বডিগার্ড, তিনটি তালেবান হাফিজুদিনের বডিগার্ড; তারা আমাদের ঘর পাহারা দেয়, বাইরে গেলে আমাদের পাহারা দেয়; আর আমাদের একান্ত গোপন পাক জিহাদি কাজের সময় পাহারা দেয়।
তারা আল কোরান ছুঁয়ে শপথ করেছে–তাদের খুন না ক’রে আমাদের কেউ খুন করতে পারবে না; আর আমরা যখন একটু পাক আনন্দ ফুর্তি করবো, তখন তারা একটি কাককেও ঢুকতে দেবে না, কাউকে কিছু কখনো বলবে না।
ওদের ঈমান আছে, ঈমানের জন্যে ওরাও যা পায়, তা কম নয়।
আমার বাপমা আমার একটি বড়ো ক্ষতি করেছে, তারা হাবিয়া দোজগে যাবে এর জন্যে, তারা আমাকে মাদ্ৰাছায় না পাঠিয়ে হাইস্কুলে কলেজে পাঠিয়েছিলো, তাই জীবনের শুরুতে আমি পাক জ্ঞান লাভ করি নি, নাছারা কাফেরদের বিদ্যা শিখেছি–নাউজুবিল্লা। তবে আল্লার রহমতে আর জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টির দয়ায় আমি তা কাটিয়ে উঠেছি। আসল বিদ্যা, প্রকৃত বিদ্যা শেখানো হয় মাদ্ৰাছায়। মাদ্ৰাছা-ই-মদিনাতুন্নবি একটি ফোরাকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্ৰাছা, এখানে ছহিহ কোরান তিলাওয়াত ও কোরান মজিদ হিফজ করানো হয়। এতে যার যতো বছর লাগে, ততো বছর থাকতে দেয়া হয়। তারা হয় খাঁটি মুছলমান।
এখানে আমরা শেখাই জিহাদ, জিহাদের জ্ঞান যার আছে, সেই শ্ৰেষ্ঠ মুছলমান। দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল আমরা শেখাই না; শেখাই ছোরা মারা, বোমা তৈরি, গ্রেনেড মারা, পিস্তল চালানো, ক্ষৌরকর্ম–রাগাকাটা ইত্যাদি জ্ঞান, যা ছাড়া জিহাদ সম্ভব নয়। তবে দাখিল, আলিম, ফাজিল, কামিল একত্রে শেখানোর দায়িত্ব আমিই নিয়েছি; এই তত্ত্বগুলো আমি তাদের বোঝাই আবু আলা মওদুদ আর আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির কিতাব থেকে। আমরা শেখাই হোলি টেরর, ডিভাইন টেরর, বেহেশতি সন্ত্রাস।
আসল জ্ঞান হচ্ছে জিহাদ, আসল শিক্ষা হচ্ছে।আবার পাকিস্থান।
সন্ধ্যা পেরিয়ে যেতে থাকে, একটির পর একটি এক্সএক্সএক্স দেখতে দেখতে ও জিহাদের আলোচনা করতে করতে, আবু আলা মওদুদি, রুহুল্লা খোমেনি, ওসামা লাদেন, মদিনার ইহুদিদের নিয়ে কথা বলতে বলতে, আমরা দুজনেই ছহবতের জন্যে উত্তেজিত হই। এই কয়েক মাস আগে মালাউনদের বাড়িঘরে মাঝরাতে ঢুকে ছহবত করেছি, দরকার হলে আবারও করবো; তবে এখন বাড়িঘরে ঢুকে হাল্কা ছহবতে আমার সুখ হয় না, আমার সারারাত লাগে।
মোঃ হাফিজুদিনের অবশ্য কোনো চিন্তা নেই, আজ তার গেলমানের রাত; তার কয়েকটি গেলমান আছে এখানেই, অন্য মাদ্ৰাছা থেকেও আসে, কিন্তু আমি যাকে আসতে বলেছি, সে এখনো এলো না।
মালাউনগুলো কথা দিয়ে কথা রাখে না; ওদের গায়ের গন্ধ আমি পছন্দ করি, এটা ওদের সৌভাগ্য; আজ কথা না রাখলে কালকে ওর দোকানটা পাক পবিত্ৰ আগুনে ছাই হয়ে যাবে।
গেলমান জিনিশটা জিহাদি মোঃ হাফিজুদিনের খুব পছন্দ।
বাড়িতে ওর একটি বিবি আছে, এর আগে একটি বিবিকে তালাক দিয়েছে, ওর পছন্দ গেলমান; হয়তো জিনিশটা খুবই ভালো, আমি কখনো পরখ ক’রে দেখি নি, দেখতে আমার ইচ্ছে করে না; আমি পছন্দ করি প্রথাগত জিনিশ, তবে মোঃ হাফিজুদ্দিনের মতে সকল জিনিসের সেরা, আসল জিনিস, হলো গেলমান, সোভানাল্লা। ও খুব কচি গেলমান পছন্দ করে, ন-দশ বছরের; একটু একটু ক’রে সে তাদের ট্রেনিং দেয়, নানা রকম ক্রিম সে কেনে ঢাকা গিয়ে।
গেলমানরাও রোজগার ভালোই করে।
হাফিজুদ্দিন বলে, ‘আইজ রাইতে একটা গেলমান ছহবত কইর্যা দেখেন, এইটাই আসল জিনিশ, এইজন্যে বেহেশতেও গেলমান আছে, সোভানাল্লা।’
আমি বলি, ‘না, এটা আমি পারবো না।’
হাফিজুদিন বলে, ‘হুজুর, আপনে আইজও খাটি মুছলমান হইতে পারেন নাই, একবার কইর্যা দেখেন, পরে আর মাইয়ামাইনষের দিকে চোকও দিতে ইচ্ছা হইব না।’
আমি বলি, ‘এই দুনিয়ায় মালাউন উর্বশী আমি পছন্দ করি, ওরা যখন কাপড় তুলে চনচন ক’রে প্রস্রাব করে সেই শব্দটাও আমার ভালো লাগে। মহান পাক রাহমানির রাহিম আমাকে এইভাবেই সৃষ্টি করেছেন।’
হাফিজুদ্দিন বলে, ‘আগে জানলে মহা আল্লাহতাআলা আদমের বদলে আপনারেই সৃষ্টি করতেন।‘
আমি হাফিজুদ্দিনকে একটু বিব্রত করতে চাই, যাতে সে আরো বেশি করে আমার অধীনে থাকে; তাই আমি বলি, ‘নাউজুবিল্লা।’
হাফিজুদিন বলে, ‘হুজুর, মাপ কইর্যা দেন; এইটা আপনের আমার মইদ্যে ক’তা, হুজুর, কারে কোন দিন বইল্যেন না।’
আমি বলি, ‘তুমি আমাকে সন্দেহ করো?’
হাফিজুদিন বলে, ‘না, হুজুর, আপনে সব সন্দেহের বাইরে।’
আমি বলি, ‘মোঃ হাফিজুদ্দিন, তুমি গোলমানের কথা বলেছে, এতে আমি নাখোশ হইনি।’
মোঃ হাফিজুদিন বলে, ‘বুক থিকা আমার একটা পাত্থর নাইম্যা গেল।’
আমি বলি, ‘তুমি কি সক্রেটিসের নাম শুনেছো?’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘না, হুজুর।‘
আমি বলি, ‘সে দুনিয়ার এক মহাজ্ঞানী ব’লে পরিচিত, তাঁরও দুটি কচি গেলমান ছিলো, তাদের মধ্যে তাকে নিয়ে মারামারি লাগতো।’
মোঃ হাফিজুদ্দিন বলে, ‘হুজুর, আমারগুনি মারামারি করে না।’