2 of 3

০৫৬. হাতে-পায়ে খিল ধরল রেমির

হাতে-পায়ে খিল ধরল রেমির। এত দুর্বল লাগছে শরীর যে, রাজা চলে যাওয়ার পর সে আবার শুয়ে পড়ল। অবেলায় খেয়েছে বলেই কি? বুকে বায়ুজনিত একটা চাপ, ব্যথা। একটু জল খেলে হত। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। কিছু করতে ইচ্ছে করছে না।

কথাটা ধ্রুবকে কি জানাবে? সে যে রাজার সঙ্গে বম্বে চলে যাচ্ছে একথাটা কি জানানো উচিত নয়?

না। তাই কি হয়! একটু আগেই তো সে ভেবেছিল ধ্রুবকে ছেড়ে খুব দূরে কোথাও তার চলে যাওয়া দরকার। তবে জানাবে কেন? তা ছাড়া ধ্রুবর তো আর-একজন বউ হবে। সে কি খুব সুন্দরী? খুব?

ঘুম পাচ্ছে, কিন্তু ঘুম আসছে না। ভারী অদ্ভুত অবস্থা। চোখের পাতা ভারী, হাই উঠছে বারবার। মাথায় ঝিমঝিমুনি, তবু স্নায়ুগুলি এত টান-টান স্পর্শকাতর যে সামান্য শব্দে, সামান্য অনুভূতিতে চমকে উঠছে। চটকা ভেঙে যাচ্ছে বারবার। সে কি কারও জন্য অপেক্ষা করছে মনে মনে? কার জন্য? একটু ভেবে দেখল রেমি। না তো! সে কারও অপেক্ষা করছে না। কেউ তো আসার নেই। তবে?

সন্ধের মুখে দরজায় ঠক ঠক। উঠতে ইচ্ছে করল না রেমির। শুধু জিজ্ঞেস করল, কে? কী চাও? বউদিমণি, আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?

না। তবে টায়ার্ড লাগছে। কেন?

বড়বাবু জিজ্ঞেস করতে পাঠালেন।

বলল গিয়ে একটু পরে যাব।

না গেলেও চলবে। বড়বাবু বেরিয়ে যাচ্ছেন। শুধু জানতে পাঠালেন।

আচ্ছা। বোলো আমি টায়ার্ড।

রেমি চুপ করে পড়ে রইল। তার শ্বশুর বড় বেশি বিচক্ষণ। আর বিচক্ষণ বলেই রাজা যখন এই ঘরে ছিল তখন বাইরে মোতায়েন রেখেছিলেন জগাকে। ঘটনাটা ঘোট, কিন্তু মনে থাকবে রেমির। এতটা না করলেও উনি পারতেন। হয়তো রেমির ভালর জন্যই করেন। তবু আজ ব্যাপারটা ভারী দৃষ্টিকটু লেগেছে রেমির। এই পাহারা অনাবশ্যক। এই বাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক এখন ছিড়বার মুখে।

আস্তে-আস্তে উঠল রেমি। উঠে আলমারি খুলল। ধ্রুবর কয়েকটা প্রিয় বোতল লুকোনো থাকে ওপরের তাকে। জামাকাপড়ের পিছনে। কাঠের চেয়ারে উঠে রেমি একটা বোতল নামাল। গায়ে লেখা হুইস্কি।

খুব নেশা হবে নাকি? হোক। শরীরের ঝিমুনিটা তো কাটবে। এই ঘর থেকে আজ সে আর বেরোবে না। শ্বশুরমশাই গন্ধ না পেলেই হল।

দরজায় ছিটকিনি দিয়ে এল রেমি। গেলাসে অল্প একটু ঢেলে অনেকখানি জল মেশাল। তারপর চুমুক দিল। এই প্রথম খাচ্ছে না। ধ্রুবর পাল্লায় পড়ে অতীতে তাকে কয়েকবার এক-আধ চুমুক খেতে হয়েছে। স্বাদ তার চেনা। তরলটুকু শেষ করতে খুব একটা বেশি সময় নিল না সে। পরের বার একটু বেশি ঢালল, জল মেশাল কম।

কতটা খেয়েছে তা ঘণ্টাখানেক বাদে হিসেব করতে পারে না আর রেমি। তবে সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে তার শরীর আর মাথা আর তার নিজের জিম্মায় নেই। কানে ঝিঝি পোকার ডাক। চারদিকটা কেমন যেন অবাস্তব, অবিশ্বাস্য। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।

চেয়ার থেকে উঠে বিছানায় বসল রেমি। পাশের টেবিলে অর্ধেক ভরা গেলাসটা রেখে একটু কাত হল। বোঁ করে ঘুরে উঠল মাথা। টলমল করছে শরীর। তার কি আনন্দ হচ্ছে? খুব আনন্দ! না তো!

কিছুক্ষণ ঝুম হয়ে পড়ে থাকে রেমি। ঘুম আসছে। ভারী রোডরোলারের মতো অতিকায় এক ঘুম তাকে বিছানায় পিষে ফেলছে। এবার সে ঘুমোবে। চ্যাপটা হয়ে, হালকা হয়ে নিচ্ছিদ্র এক ঘুমের নেই রাজ্যে হারিয়ে যাবে।

দরজায় সামান্য নাড়া। রেমি উঠল না। চাইল না।

দরজাটা খোলো।–ধ্রুবর গলা।

রেমি একটু তাকাল। দরজাটা কি তার খুলে দেওয়া উচিত? ঠিক যেন বুঝতে পারছে না। সে তো রোজ ধ্রুবর জন্য দরজা খুলে দেয় না। তবে? সে আবার চোখ বোজ। দরজায় দুম দুম করে দুটো শব্দ হল। রেমি একটু হাসল মাত্র। উঠল না।

শুনছ! ভিতরে কী করছ? দরজাটা খুলে দাও।

রেমি একটা গভীর শ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরল। মাথার মধ্যে কী অদ্ভুত এক রিমঝিম! সমস্ত শরীরে একটা ভাসন্ত ভাব। যেন ভার নেই তার।

ধ্রুবর গলার স্বর হঠাৎ আতঙ্কিত একটা আর্তনাদেব মতো শোনাল, রেমি! রেমি! সাড়া দাও। কী হয়েছে তোমার?

রেমি আধো ঘুমে খিল খিল করে হাসল। বেশ হয়েছে। খুব হয়েছে। এবার একটু রেমির জন্য কাদো তো পাষাণ! একটু কাদো। জীবনে অন্তত একবার। মরার আগে দেখে যাই।

ধ্রুব খুব দ্রুত পায়ে সরে গেল দরজার কাছ থেকে। তারপর উত্তেজিত স্বরে ডাকতে লাগল, জগাদা! জগাদা! শিগগির এসো। কুইক।

জগা দৌড়ে এল, টের পেল রেমি।

কী হয়েছে?

দরজা ভাঙতে হবে।

কেন?

মনে হচ্ছে রেমির খুব বিপদ! তাড়াতাড়ি করো।

বুম করে বোমার মতো একটা আওয়াজ হল। দরজার ছিটকিনি ভেঙে পাল্লা দুটো ছিটকে গেল দুদিকে।

বউদিমণি! কী হয়েছে?

এত শব্দে রেমি দুহাতে কান ঢেকে ফেলেছিল। আস্তে মুখ ঘুরিয়ে জগার দিকে তাকাল সে। মাথা টলমল করছে, তবুবাস্তববুদ্ধি একেবারে হারায়নি। চোখটা বন্ধ করে বলল, তুমি যাও, জগাদা। তোমার ছোড়দাকে পাঠিয়ে দাও। দরজাটা ভেজিয়ে যেয়ো।

জগা একটু স্থির চোখে রেমি এবং ঘরের পরিবেশ লক্ষ করল। তারপর বেরিয়ে গিয়ে ধ্রুবকে ডেকে বলল, ডাক্তার ডাকতে হবে না। তুমি ঘরে যাও।

কী হয়েছে?

গিয়ে দেখো। খুব খারাপ কিছু নয়।

ধ্রুব ঘরে আসে। দরজাটা ভেজিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে রেমির কাছে এসে সেও সমস্তই লক্ষ করে। রেমি ভেবেছিল, ধ্রুব খুব হাসবে, বিদ্রুপ করবে তাকে।

কিন্তু ধ্রুব সেরকম কিছুই করল না। গেলাসটা তুলে নিয়ে একটু দেখল। তারপর টেবিল থেকে বোতলটাও। রেমি মিটমিট করে চেয়ে দেখছিল।

ধ্রুব গেলাস আর বোতল রেখে রেমির দিকে চেয়ে বলল, উঠতে পারবে?

কেন?

বাথরুমে গিয়ে গলায় আঙুল দাও।

না।

দাও। নইলে কষ্ট পাবে। অনেকটা খেয়েছ।

আমি আরও খাব।

ধ্রুব আর কথা বলল না। খুব আচমকাই রেমিকে পাঁজাকোলা করে তুলে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে বেসিনের সামনে দাড় করিয়ে বলল, গলায় আঙুল দাও।

আমি পারব না।

আচ্ছা, দাঁড়াও।–বলে ধ্রুব আচমকাই মাথাটা ধরে একটু নাড়া দিল। অমনি টলমল করে উঠল রেমির শরীর। বমি উঠতে লাগল বুক বেয়ে।

গলায় আঙুল দিতে হল না। ভাতসুষ্ঠু গোটা তরলটা গলগল করে বেরিয়ে যেতে লাগল। সঙ্গে তীব্র অম্বলের টক স্বাদ। রেমি সেই বমির তোেড় সহ্য করতে না পেরে পড়েই যেত হয়তো। কিন্তু ধ্রুবর লোহার মতো শক্ত হাত ধরে রইল তাকে।

বমির পর কেমন দিশাহারা লাগছিল রেমির। শরীর শুন্য, মাথা শূন্য। ভারী অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। সে যেন এই জগতের মানুষই নয়।

ধ্রুব তাকে আবার কোলে তুলে ঘরে এনে খাটে শুইয়ে দিল। পাখা ঘুরতে লাগল বনবন করে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জল এনে তাকে অনেকখানি খাইয়ে দিল। তারপর অদূরে চেয়ারে বসে রইল চুপ করে।

প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে রেমির। কিন্তু কিছুতেই ঘুমোতে পারছে না। কী যে হচ্ছে তার শরীরের মধ্যে।

ধ্রুব অনেকক্ষণ অবস্থাটা লক্ষ করে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ঘুম আসছে না তোমার?

না। আমার গলা চিরে গেছে, মাথা ঘুরছে।

তবু ঘুমিয়ে পড়ার কথা। ঘুম আসছে না কেন?

তোমার জন্য। তুমি কেন ওভাবে তাকিয়ে আছ আমার দিকে?

আমি বাইরে গেলে ঘুম পাবে?

হ্যাঁ। তুমি যাও।

ধ্রুব নিঃশব্দে উঠে বাইরে গিয়ে দরজাটা টেনে দিল। রেমি এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। মাথাটা কি লোহার মতো ভারী? না কি বেলুনের মতো হালকা? কী যে হচ্ছে তার ভিতরে।

আচমকা উঠে বসল সে। তারপর ডাকল, শোনো! ওগো! এই! শোনোনা শিগগির!

ধ্রুব দরজা ঠেলে ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়াল। দরজাটা ভেজিয়ে দিল আবার।

ডাকছ কেন?

আমি বম্বে চলে যাচ্ছি, জানো?–খুব ব্যাকুলভাবে রেমি বলে।

জানলাম।–ধ্রুবর কণ্ঠস্বর ভাবলেশহীন।

কার সঙ্গে জানো?

না তো।

রাজার সঙ্গে।

তাই নাকি?

ভাল হবে না?

ভালই তো।

যেতে দেবে আমাকে?

আমি যেতে দেওয়ার কে? তুমিই তো যাবে।

আঃ, বলোই না যেতে দেবে কি না।

দেব।

সত্যি বলছ?

বলছি।

তোমার একটুও কষ্ট হবে না আমার জন্য?

এখন ঘুমোও।

ঘুম আসছে না যে।

চেষ্টা করো। আমি বাইরে যাচ্ছি।

তা হলে আমি আবার হুইস্কি খাব।

ধ্রুব সামান্য একটু হাসল। তারপর বলল, ভয় দেখাচ্ছ?

না তো! আমি খাব।

খাবে তো কী হয়েছে? অনেকেই খায়। মেয়েরা আজকাল খুব টানছে।

আমি কি তাদের মতো?

হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে হয়ে যাবে। তবে একদিনে অত নয়।

বম্বেতে গিয়ে আমরা কী করব জানো?

না।

তুমি যা চেয়েছিলে তাই।

খুব ভাল।

তোমার কিছু যাবে আসবে না?

না। বরং খুশি হব।

রেমি ধ্রুবর মনোভাব জানে। তবু কেমন যেন এই জবাবে সে অবাক হয়ে গেল। বলল, একটা কথা বলবে?

বলব না কেন?

আমার ওপর তোমার এত ঘেন্না কেন? এত ঘেন্না কি একজন মানুষকে আর-একজন করতে পারে?

তোমাকে কখনও ঘেন্না করিনি।

করোনি? তা হলে আমি অন্য একজনের সঙ্গে চলে যাব জেনেও খুশি হও কী করে?

বলেছি তো, আমি তোমাকে ঘেন্না করি না, কিন্তু তোমার দায়িত্ব চিরকাল বইতেও রাজি নই। বিয়ে করার জন্য পুরুষের এক ধরনের যোগ্যতা লাগে। আমার তা নেই।

তবু বিয়ে তো হয়েছে।

না, হয়নি। এটা বিয়ে নয়। চাপিয়ে দেওয়া।

তুমি আমাকে ঘেন্না করো।

না, করি না। কখনও করিনি।

আমাকে তুমি কখনও একটুও ভালবাসোনি।

তাও বাসিনি। ঠিক কথা। কিন্তু আজ নতুন করে এসব কথা কেন? এখন ঘুমোও।

ঘুম কি আসে! কত চিন্তা।

কীসের চিন্তা? জীবনটাকে খেলা হিসেবে নাও। আয়ু কতদিনেরই বা? সব ঠিক হয়ে যাবে। বম্বে ভাল শহর।

আজ রাজা এসেছিল।

জানি।

কী করে জানলে? তোমরা কি সবসময়ে বাড়ির বউ-ঝিদের পিছনে স্পাই লাগিয়ে রাখো?

আমি রাখি না। তবে তোমার গবুচন্দ্র রাখেন।

কে গবুচন্দ্র?

মন্ত্রী গবু, তোমার শ্বশুর।

উনি তো আর মন্ত্রী নন।

না। তবে শোনা যাচ্ছে উনি সেন্ট্রাল মিনিস্টার হবেন। ডেপুটি মন্ত্রী-টন্ত্রী বোধহয়। ফেরোজ লোকদের পথ এ সমাজে সবসময়ে ভোলা।

ফেরেব্‌বাজ কাকে বলে?

তোমার শ্বশুরের মতো লোকেরাই ফেরোজ। অন্য ডেফিনিশনের দরকার কী?

ওঁর ওপর তোমার রাগ বলেই কি আমাকে যন্ত্রণা দাও এত?

হতে পারে। এখন আমি এত কথা বলতে পারছি না, রেমি। তুমি ঘুমোও। আমি বরং বাতিটা নিবিয়ে দিয়ে যাই।

না, না!–আঁতকে উঠে রেমি বলে, বাতি নিবিয়ো না। তা হলে আমি ভয়েই মরে যাব।

বাতি চোখে লাগছে বলেই বোধহয় ঘুম আসছে না।

ঘুম আসবে। তুমি কাছে থাকো।

এই তো একটু আগে আমাকে চলে যেতে বললে।

তখন বুঝতে পারিনি।

কী বুঝতে পারোনি?

তোমাকে যে আমার ভীষণ দরকার।

কীসের দরকার?

আমি একজনকে একবার দেখতে চাই। দেখাবে?

ধ্রুব অবাক হয়ে বলে, কাকে দেখাব?

তাকে।

সে কে বলবে তো!

যাকে তুমি ভালবাসো। আমি চলে গেলে যাকে বিয়ে করবে। একবার চোখের দেখা দেখব। কিছু বলব না। ভয় নেই।

একথায় ধ্রুবর ফরসা রং টকটকে রাঙা হয়ে গেল। প্রথমটায় সে কিছু বলতে পারল না। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ঘুমোও।

বারবার ঘুমোতে বলছ কেন? বললাম যে ঘুম আসছে না। যদি ঘুম পাড়াতে চাও তবে একটু বিষ-টিষ কিছু এনে দাও। একেবারে ঘুমিয়ে পড়ি।

তা হলে জেগে শুয়ে থাকো। আমি যাই।

তুমি যেয়ো না। বেশিদিন তো আর নয়। আমি বম্বে চলে যাচ্ছি। একটু থাকো।

তুমি বড্ড বাজে বকচ্ছ।

খুব বাজে বকছি? কথাটা সত্যি নয়?

আমি কাউকে বিয়ে করব একথা সত্যি নয়।

তবে কী করবে?

আমি বিয়ে ব্যাপারটাকে বিশ্বাসই করি না।

তবে কীসে করো?

ওটা একটা ছেলেমানুষি প্রথা। মানেই হয় না।

তুমি তাকে বিয়ে করবে না?

না।

তবে একসঙ্গে থাকবে কী করে?

থাকলে দোষ কী?

দুনিয়াটা তো বিয়েহীন সমাজের দিকেই এগোচ্ছে।

কী যে বলো!

তোমার বুঝতে একটু সময় লাগবে, রেমি। বিয়ে একটা অচলায়তন। ওই প্রথা উঠে গেলেই ভাল।

আমি অত তর্ক করতে পাবি না। আমি তাকে একবার দেখব।

এসব তোমাকে কে বলল? রাজা নিশ্চয়ই।

রাজাই।

বলাটা ওর উচিত হয়নি।

কেন? আমি শকড হব বলে?

হ্যাঁ। তুমি আমার ওপর বড় বেশি নির্ভর করতে চাও।

কিন্তু আমি সামলে গেছি। দেখছ না, কেমন স্বাভাবিক।

স্বাভাবিক হলে অতখানি হুইস্কি গিলে বসে থাকতে না।

রেমি মাথা নেড়ে বলে, এসব ভেবে খাইনি। আমার ঘুম আসছিল না, শরীরটা কেমন করছিল, তাই খেয়েছি। আমাকে একবার দেখাতে তোমার ভয় কী?

আমি কাউকে ভয় পাই না।

জানি। মেয়েটা কে বলো তো!

কেউ একজন হবে। অত ভাবছ কেন?

আমার চেয়ে ফরসা?

জানি না।

জানো। বলতে চাও না। বললে দোষ কী? এই তো বললে ভয় পাও না।

তোমার চেয়ে ফরসা নয়।

কেমন দেখতে?

এইসব ভেবেই বোধহয় তোমার ঘুম আসছে না?

মেয়েটাকে কবে দেখাবে গো?

দেখলে কি খুশি হবে? খুশি কি হওয়া যায়?

তা হলে দেখতে চাইছ কেন?

আমার বর কেমন পাত্রী পছন্দ করল, সে আমার চেয়ে কত গুণ সুন্দর এসব জানার কৌতূহল হয় না?

রেমি, ব্যাপারটা খুব সরল অঙ্ক নয়। তুমি বোকা, ঠিক বুঝবেও না। তবে জেনে রেখো, এখনও ধ্রুব চৌধুরী মেয়েবাজ নয়।

তাই কি বলেছি।

তবে অত জেলাস কেন?

জেলাসি বোধহয় আমার একটু হওয়ার কথা।

কেন হবে? তুমিও তো অন্য একজনের সঙ্গে বম্বেতে ঘর বাঁধতে যাচ্ছ।

ঘর ভাঙতেই যাচ্ছি। কিন্তু সে তো তোমার জন্যই। আমি কি যেতে চেয়েছি?

কিন্তু যখন যাচ্ছ তখন সর্বান্তঃকরণেই যাও। পিছুটান রেখো না।

তোমাকেও একটা কথা বলি?

আবার কী কথা?

যাকে নিয়ে থাকবে বলে ঠিক করেছ তাকে একটু ভালবেসো, একটু মূল্য দিয়ে। আমার মতো হেলাফেলা কোরো না।

উপদেশের জন্য ধন্যবাদ। তবে সে তোমার মতো ছিচকাঁদুনে নয়। আমি কেমন সে জানে। তাই সে বেশি এক্সপেক্টও করে না।

লিবারেটেড মহিলা নাকি?

ধরো তাই।

রেমি একটু ভেবে বলে, তোমার সঙ্গে এরকমই কাউকে মানাবে।

ধ্রুব একটু হেসে বলে, তা হলে পাত্রী পছন্দ!

আগে একবার চোখের দেখা দেখি।

ধ্রুব আচমকা কাছে এসে দুহাতে রেমিকে ধরে তুলল। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, তুমি আমাকে ভালবাসো আমি জানি। একটা কাজ করতে পারো? ফর মাই সেক?

রেমির শরীর এই আকস্মিক স্পর্শে ঝংকার দিয়ে উঠল। ভিতরে ভিতরে মৃদু বিদ্যুতের তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে। বিহুল হতভম্ব চোখে সে ধ্রুবর মুখের দিকে কিছুক্ষণ বাক্যহারা চেয়ে রইল। তার ভিতরে একটি প্রার্থনা নীরবে মাথা কুটছিল। আমাকে জড়িয়ে ধরো, ভীষণ জোরে। এত জোরে যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। যেন ভেঙে গুঁড়িয়ে যাই আমি।

স্খলিত কণ্ঠে সে জিজ্ঞেস করল, কী গো? তোমার জন্য আমি সব পারি।

আমাকে ডিভোর্স দাও। ক্লিন ডিভোর্স।

তারপর?

কিছুদিন বাপের বাড়ি গিয়ে থাকো।

তারপর?

তারপর আমি তোমাকে নিয়ে কোথাও একসঙ্গে থাকব। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নয়।

একটুও না ভেবে রেমি ধ্রুবর বুকের মধ্যে মাথাখানা ক্লান্তভাবে রেখে বলল, যা বলবে করব, যদি তাতে ভাল হয়।

ভালর জন্য নয়, রেমি। আমি প্রথা ভাঙতে চাই।

কেন যে তুমি এরকম পাগল!

তুমি বম্বে যেয়ো না, রেমি। পারবে না।

কে যেতে চেয়েছে?

গেলেও তুমি সহ্য করতে পারবে না বেশিদিন। আমি তোমাকে জানি।

রেমি মুখ তুলল। ধ্রুব তার সুন্দর টুলটুলে মুখখানার দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর যা সে কদাচিৎ করে তাই করল আজ। খুব নিবিড়ভাবে চুমু খেল রেমিকে। বিছানায় তারা যখন ঘনিষ্ঠ হচ্ছিল তখন ধ্রুব বলল, আর হুইস্কি খেয়ো না।

রেমি বলল, মেয়েটাকে দেখাবে তো! ঠিক?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *