সুখ
সাফল্য চান আপনি। কেন চান?
সাফল্য সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা আছে কিনা তা কখনও খতিয়ে ভেবে দেখেছেন কি? অনেকে মনে করে সাফল্য মানে টাকা, যার প্রচুর টাকা আছে সেই সফল। আসলে কি তাই?
টাকা থাকলেই কিন্তু সুখী হওয়া যায় না। টাকা মানেই সুখ নয়। টাকা মানেই যদি সুখ না হয় তাহলে সাফল্য মানেই টাকা হতে পারে না। কারণ, সাফল্য সুখেরই নামান্তর। যে সুখী সেই সফল। সাফল্যলাভ মানে সুখ লাভ।
আপনি সাফল্যলাভ করতে চান-কারণ কি? কারণ একটিই, আপনি সুখী হতে চান।
সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সুখ শব্দের অর্থ দিচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম, তৃপ্তি, আনন্দ, হর্ষ-সবগুলোই ভালো হলে থাকার অর্থ প্রকাশ করছে।
এমনিতেই মানুষের জীবন অত্যন্ত কষ্টকর। বেঁচে থাকাটা সত্যি কঠিন একটা ব্যাপার। কষ্ট লাঘবের জন্যে আপনাকে আহোরাত্র খাটতে হচ্ছে, প্রাণপণ চেষ্টা করতে হচ্ছে। সংখ্যা সীমাহীন কষ্টগুলোকে দুর করার নামই জীবন-যুদ্ধ।
তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে চায়। যুদ্ধ করার প্রেরণা পায় কোত্থেকে? মানুষের মধ্যে রয়েছে আরাম পাবার ইচ্ছা। তৃপ্তি পাবার সাধ, আনন্দবোধ করার লোভ, হর্ষ লাভ করার শখ। অর্থাৎ, মানুষ সুখ চায়। সুখ পাবার ব্যাকুলতাই তাকে প্রেরণা যোগায়।
সুখ সবাই চায়। কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় এই একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসটি?
ছুটি উপলক্ষে শহরের মানুষ বেড়াতে যায় কক্সবাজারে, রাঙ্গামাটিতে, যেখানে যার ইচ্ছা। যারা শহর ছাড়তে পারে না তারা ছুটির ক’টা দিন সিনেমা দেখে, পার্কে বেড়ায়, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে শহরের আশপাশে পিকনিক করে। কেন মানুষ এসব করে? কেন মানুষ বেড়াতে বের হয়, সিনেমা দেখে, পিকনিক করে? জি একটাই উত্তর, মানুষ এসব করে শুধুমাত্র সুখ খুঁজে পাবার জন্যে। সুখের সন্ধানে মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে। খ্যাপা যেমন পরশপাথর খুঁজে মরে তেমনি সুখকে খুঁজছে মানুষ।
কিন্তু মুশকিল হলো, সুখ কিনতে পাওয়া যায় না, কুড়িয়েও পাওয়া যায় না। এমনকি সুখ ভাড়ায়ও পাওয়া যায় না। হাজার হাজার মাইল দূরে যান সুখের সন্ধানে, লক্ষ-কোটি মাইল দূরে যান-পাবেন না তার সন্ধান, যদি আপনি আপনার সাথে সুখকে সাথী করে নিয়ে না যান। ( সুখকে খুজছেন খামোকা, কারণ তাকে খোঁজার দরকারই নেই, সে তো রয়েছে আপনারই মধ্যে। সুখ আপনার মধ্যেই বসবাস করছে। তাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেটা আপনার দোষ। তাকে যদি দেখতে পেতে চান, দেখা দেবে সে সাথে সাথে। চাইলেই হয়।
সুখের অস্তিত্ব অনুভব করুন নিজের মধ্যে। তাকে স্বীকৃতি দিন।
আপনার সুখ মানুষ বা বস্তুর উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে মানুষ এবং বস্তুর প্রতি আপনার মনোভাবের উপর। উদাহরণস্বরূপ: একই পরিস্থিতিতে একজন হয়তো সন্তুষ্ট এবং খুশি থাকলো, অপরজন হয়তো অনুভব করলো তার বিষণ্ণ হবার যথেষ্ট কারণ বর্তমান রয়েছে। সহজ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থিত করছি।
মিসেস ক এবং মিসেস খ-দুটো চরিত্র। নেপথ্য থেকে অপর এক চরিত্র মিসেস ক এবং মিসেস খ-কে কিছু উপহার পাঠালো। দুটো উপহারের প্যাকেট। প্যাকেট দুটোয় হুবহু একই উপহার সামগ্রী রয়েছে।
মিসেস ক প্যাকেটটি খুলে উপহার সামগ্রী দেখলেন। উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হলেন তিনি। উপহার সামগ্রী তাঁকে অত্যন্ত আনন্দ দান করেছে। সুখী হয়েছেন তিনি।
ওদিকে, মিসেস খ-এর উপহার মিসেস ক-এর উপহারের ডুপ্লিকেট কপি হওয়া সত্ত্বেও মুখ ভার করলেন তিনি মোটেই পছন্দ হয়নি এই উপহার। তার মনে আনন্দের উদ্রেক হলো না মোটেই। অসন্তোষ অনুভব করলেন তিনি, অসুখী বোধ করলেন।
মিসেস ক সুখী হলেন কিন্তু মিসেস খ অসুখী হলেন, একই উপহার পাওয়া সত্ত্বেও…কেন?
গ্রহণ করার মনোভাব এর জন্যে দায়ী। মিসেস ক উপহারটিকে সম্মান এবং প্রীতির প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, উপহারের সামগ্রী তাঁর কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়নি। যে উপহারটি পাঠিয়েছে সে তাকে ভালবাসে, স্নেহ করে-এটা প্রমাণ হয়েছে, এতেই তিনি খুশি এবং আনন্দিত।
ঠিক উল্টোটি ঘটেছে মিসেস খ-এর বেলায়। উপহারটিকে নয়, উপহারের সামগ্রীটিকে তিনি বড় করে দেখছেন। প্যাকেট খোলার পর উপহার সামগ্রী দেখে সামগ্রীর বাজার দর কি হতে পারে, অনুমান করে মন খারাপ হয়ে গেছে তাঁর, ভেবেছেন, এতো সস্তাদরের জিনিস উপহার দেয় কেউ কাউকে!
জিনিস একই গ্রহণ করার মনোভাবের তারতম্য হেতু একই জিনিস পেয়ে একজন সুখী, অপরজন অসুখী। সুখটা জিনিসের মধ্যে নয়-মনের মধ্যে।
মানুষ অসুখী কেন হয়?
বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে অসুখী বলে মনে করে। হয়তো আপনিও নিজেকে সুখী বলে মনে করেন না। অথচ নিজেকে আপনার অসুখী বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।
কেন আপনি নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন? কখনও ভেবেছেন কি?
নিজেকে অসুখী মনে করার নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কয়েকটা কারণ আছে। সেই কারণগুলো কি আপনার জানা আছে? আমার বিশ্বাস, জানা নেই আপনার।
আসুন, কেন আপনি নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন জেনে নেয়া যাক। কারণগুলো জানা থাকলে উপকৃত হবেন, সুখী হবার রাস্তাটা পরিষ্কার করে ফেলতে পারবেন।
নিজেকে অসুখী মনে করার সাধারণ কয়েকটি কারণের কথা এখানে আমি উল্লেখ করছি। আরো অনেক কারণ আছে, সহজেই সেগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবেন আপনি।
কারণ সমূহ: ১) অপরাধবোধ। ২) আত্মগ্লানি। ৩) পরশ্রীকাতরতা। ৪) স্বার্থপরতা। ৫) ভীরুতা। ৬) দুশ্চিন্তা।
এই ছয়টা কারণই প্রধান। আসুন, এক এক করে প্রত্যেকটি কারণ আলোচনা করি। কারণগুলোকে বাধা বলে ধরে নিতে পারি আমরা, সুখী হবার পথে। বাধাগুলোকে দূর করা সম্পর্কে আলোচনা করবো আমরা।
প্রথমে ধরুন, এক নম্বর বাধার্টিকে: অপরাধবোধ।
আপনি জানেন, দেহের যেমন রোগ আছে তেমনি মনেরও নানারকম রোগ আছে। অপরাধবোধ একটি রোগ। মনের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ জড়তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সচেতন বা অচেতনভাবে সে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে যে সুখ জিনিসটা তার জন্যে নয়। সব ভুলে নিজেকে কখনও যদি সে হাসতে আবিষ্কার করে, আচমকা থামিয়ে দেয় সেই হাসি, হাসি-খুশি-আনন্দ-সুখ তার জন্যে নয়, মনে পড়ে যায় কথাটা।
অপরাধবোধ মানুষকে কুরে কুরে খায়। দুর্বল, বিষণ্ণ করে তোলে।
অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবার সহজ দুটি উপায় হলো, এক: যদি সম্ভব হয় যে-কারণে অপরাধবোধ জন্মেছে সেই কারণটাকে সংশোধন বা উৎপাটন করুন। দুই: যে ঘটনা ঘটে যাবার ফলে নিজেকে আপনি অপরাধী বলে মনে করছেন তা যদি সংশোধনের অতীত হয় তাহলে নিজেকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব কম আছে যে তার জীবনে গুরুতর ধরনের কোনো না কোনো অপরাধ করেনি। অপরাধের গুরুত্ত্বও আবার এক একজনের কাছে এক এক রকম। ক্রোধবশত কাউকে প্রচণ্ডভাবে আহত করেও কেউ কেউ অপরাধবোধে ভোগে না, নিজেকে ক্ষমা করে দিতে পারে বলে। এই লোক নিজেকে তো ক্ষমা করেই, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞাও গ্রহণ করে। আসলে প্রথমে সে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে, তারপর নিজেকে ক্ষমা করে দেয়। এই প্রতিজ্ঞাটাই ক্ষমা করতে সাহায্য করে তাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন: যে অপরাধ করে ফেলেছেন তার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ নিজের বিরুদ্ধে যে-সব কঠোর ব্যবস্থা নেবার কথা ভেবেছেন, সব পরিহার করুন। প্রতিজ্ঞা করুন, নিজেকে ক্ষয় হতে দেবেন না, অসুখী হতে দেবেন না, ধ্বংস হতে দেবেন না এবং যে ভুল করেছেন সেটাকে একটা শিক্ষা ধরে নিয়ে তার দ্বারা
ভবিষ্যৎ জীবনে উপকার পাবার চেষ্টা করবেন, নিজেকে গড়ে তুলবেন নিরপরাধ, সুনাগরিক, সুখী একজন মানুষ হিসেবে।
সুখী হবার পথে দু’নম্বর বাধা: আত্মগ্লানি।
যে-লোক করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে আছে সে আত্মগ্লানিতে ভুগছে, বলা যেতে পারে। অনেক সময় কেউ কেউ অকারণে নিজেকে করুণার পাত্র বলে মনে করে।
আপনি যদি আত্মগ্লানিতে ভুগতে না চান, মাথা চাড়া দিয়ে উঠুন, নিজেকে জানিয়ে দিন, আমি কারো দয়া গ্রহণ করছি না। আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি পাবার দুটো উপায় রয়েছে। এক: নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করা। খাটবেন, উপার্জন করবেন, কারো দয়ার দান নেবেন না। দুই: পরিশ্রমের বিনিময়ে বা বুদ্ধি খরচ করে যা পাচ্ছেন তা আপনার প্রাপ্য, কারো দয়ার দান নয় এই কথাটা বিশ্বাস করা।
সহানুভূতির কাঙাল হবেন না। এই কাঙালেপনা সুখী হবার পথে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কখনও যদি বিপদে পড়ে কারো সাহায্য গ্রহণ করার। দরকার পড়ে, গ্রহণ করবেন বৈকি-কিন্তু সে জন্যে আত্মগ্লানিতে ভোগার দরকার। নেই। বিপদে পড়েছেন, তাই সাহায্য নিচ্ছেন, সবাই নেয়। বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার পর সেই সাহায্য ফিরিয়ে দেবেন-পরিশোধ হয়ে যাবে ঋণ। এই রকম সাহায্যকে দয়া বলে মনে করবেন না। মনে করবেন ধার নিচ্ছেন সাহায্য, পরিশোধ করে দেবেন যথাসময়ে।
তিন নম্বর বাধাটি হলো: পরশ্রীকাতরতা।
অন্যের সুখ দেখে আপনি কি ঈর্ষা বোধ করেন? যদি করেন, তাহলে আমি বলবো, বোকামি করেন। কারণ, ঈর্ষা বা হিংসা হলো খুনী, আপনার সুখকে খুন করাই এর প্রধান কাজ।
পরশ্রীকাতরতাও একটা মানসিক ব্যাধি। এই ব্যাধি যদি আপনার মধ্যে থাকে, সুখী হবার কোনো সম্ভাবনাই আপনার নেই, জেনে রাখুন। তাড়াতাড়ি রোগটার হাত থেকে মুক্ত হওয়া দরকার আপনার।
কিভাবে?
উপায়টা সহজ। উপায়টার কথা পরে বলছি। তার আগে আপনাকে জানাতে চাই কেন আপনি পরশ্রীকাতরতায় ভুগছেন।
আপনার চেয়ে ভালো হলে আছে যারা, যারা ভালো খায়-দায়, ভালো রোজগার করে, ভালো কাপড়-চোপড় পরে, গাড়ি চড়ে, বাড়ি কেনে-এরাই কি আপনার ঈর্ষার পাত্র? তা যদি হয়, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। সহজেই ওদেরকে হিংসা না করে থাকতে পারবেন আপনি।
সাফল্য অর্জনের পথে যাত্রী আপনি, অচিরেই আপনি পেতে যাচ্ছেন আর্থিক সচ্ছলতা, গাড়ি-বাড়ি, মানসম্মান, সকলের শ্রদ্ধা, নেতৃত্ব এবং সুখ। আপনার হিংসার পাত্র যারা, তাদেরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন আপনি সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে।
সুখী হবার পথে চার নম্বর বাধা: স্বার্থপরতা।
সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেবার প্রবণতা আছে যার মধ্যে অথচ সে-সব জিনিস ব্যবহার বা কাজে লাগাবার প্রয়োজন নেই তার-এই রকম লোককে স্বার্থপর বলে। স্বার্থপর লোক কারো দিকে তো তাকায়ই না, মূলত সে নিজের দিকেও তাকায় না। কোনো জিনিসের বা বিষয়ের মালিক হওয়াটাই তার কাজ, সে। জিনিসের ব্যবহারটা তার কাছে বড় নয়। ফলে সুখী হবার প্রচুর উপকরণ থাকা সত্ত্বেও সেগুলোকে সে কাজে লাগাবার কথা ভাবে না।
স্বার্থপরতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। স্বার্থপর লোক নিতে পারে, দিতে পারে না। কিন্তু প্রকৃতি শুধু দেয়। বৃক্ষ, ফুল, পাখি, নদী, মাটি, আকাশ-সবাই দাতা। প্রকৃতির দানের সীমা নেই। এ প্রকৃতির নিয়মের সাথে সঙ্গতি রেখে সৃষ্টি হয়েছে বিনিময় প্রথা। তুমি কিছু দাও, বদলে তোমাকে কিছু আমি দেবো-এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। যতো বেশি। দেয়া যায় ততো বেশি পাওয়া সম্ভব। কেউ যদি তার জীবনে খুব বেশি কিছু না। পায়, বুঝে নিতে হবে খুব বেশি কিছু কাউকে সে দিচ্ছেও না। আপনি কি স্বার্থপর কোনো লোককে সুখী হতে দেখেছেন? আমি দেখিনি। প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করা মানে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা। অর্থাৎ স্বার্থপর মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হবে, তার সুখী হওয়া তো পরের কথা।
পাঁচ নম্বর বাধা: ক্ষুদ্রতা বা ভীরুতা।
ক্ষুদ্রতার সাথে স্বার্থপরতার ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে। আত্মবোধ বা বিপরীত ভঙ্গিতে বললে বলতে হয় নিজের সম্পর্কে অতি-সচেতনতাই ক্ষুদ্রতার মূল কারণ। আমরা যদি বিশেষ এক পর্যায়ে উঠে শুধুমাত্র আমাদের সুখ শান্তি সমৃদ্ধির কথা ভাবার বদলে সমাজের সুখ শান্তি সমৃদ্ধির কথা ভাবতে পারি তাহলেই ক্ষুদ্রতার গণ্ডি থেকে স্বাধীনতা এবং উদারতার অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারি।
আমার জন্যে সকলে নয়, সকলের জন্যে আমি-এই রকম একটা মনোভাব গড়ে তুলুন নিজের মধ্যে। তুমি আমার সুখের জন্যে কি করতে পারো’-এর বদলে ভাবুন, তোমার সুখের জতে কি করতে হবে আমাকে?’
আপনাকে মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবে, নিজের স্বার্থ দেখে। এটা মনে রাখলে, মানুষের সাথে মেলামেশা করতে, ওঠাবসা করতে, মানুষের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে কোনোই অসুবিধে হবে
আপনার। মানুষ কি চায় তা আপনি জানেন। সুতরাং, যা চায় তাই করুন। তাকে সাহায্য করুন, সে খুশি হয়ে উঠবে-এবং প্রতিদানও দেবে। মানুষকে আপনি সাহায্য করবেন, কারণ, আপনি তার কাছ থেকে পাবেনও অনেক কিছু।
সুখী হবার পথে ছয় নম্বর বাধা: দুশ্চিন্তা।
দুশ্চিন্তা এবং সুখ পরস্পরের পরম শত্রু। এদের সহাবস্থান সম্ভব নয়। দুশ্চিন্তা যদি সুখের শত্রু হয়, সুখও তেমনি দুশ্চিন্তার শত্রু। আপনি সুখী-এই মনোভাব। নিজের মধ্যে গড়ে তুলুন, দুশ্চিন্তা পালাতে দিশে পাবে না।
দুশ্চিন্তা সময়ের অপব্যয় ঘটায়। দুশ্চিন্তা কিছুই উৎপাদন করে না। দুশ্চিন্তা সমাধান দেবার ক্ষমতাও রাখে না। দুশ্চিন্তার ধর্ম ক্ষয় করা। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে ক্ষয় করে, ক্ষয়রোগে আক্রান্ত সেই মানুষ সুখী হবে কিভাবে?
সুখী হবার উপায় নিজেকে সুখী মনে করা। সুখ সম্পর্কে আলোচনা করুন। মানুষের সাথে। নিজেকে সুখী বলে প্রচার করুন। প্রচুর হাসুন, মানুষকে হাসান। এবং আপনি সুখী একথা ভেবে গর্ব অনুভব করুন-দেখবেন সত্যি সত্যি সুখী। একজন মানুষে পরিণত হয়েছেন আপনি।
যেখানেই যান, সাথে করে সুখী সুখী ভাবটা নিয়ে যান। সুখের ভঙ্গি করা সুখী হবার নামান্তর। সুখ আসলে একটা বিশেষ মনোভঙ্গি মাত্র।
যে সুখী হতে চায় সেই সুখী হতে পারে।