০৪.
সময় চলে যাচ্ছে। এমনকি যখন মনে হচ্ছে এটা অসম্ভব। যখন, নাড়ীর স্পন্দনের প্রতিটি টিক টিক ধ্বনি বয়ে যাচ্ছে। সময় যাচ্ছিল ঘটনাহীনভাবে। অদ্ভুত গতিহীনতায় এবং শান্ত বস্তায়। সময় কিন্তু ঠিকই চলে যাচ্ছিল। এমনকি আমার কাছেও।
.
চার্লির ঘুষি টেবিলের উপর নেমে এল। এটাই আমার সিদ্ধান্ত বেলা, আমি তোমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমি খাওয়া থেকে মুখ তুললাম। আমি খাওয়ার চেয়ে বেশি নষ্ট করছিলাম। চার্লির দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। আমি সেই কথোপকথনে অংশ নেই নি। আমি এমনকি এ বিষয়ে সচেতন ছিলাম না যে আমরা এখন একটা কথোপকথনের মধ্যে আছি। আমি নিশ্চিত নই তিনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন।
আমি বাড়িতেই আছি। আমি বিড়বিড় করে বললাম। খানিকটা দ্বিধান্বিত।
আমি তোমাকে রেনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। জ্যাকসনভিলে। তিনি পরিষ্কার করলেন ব্যাপারটা।
চার্লি নিঃশ্বাস চেপে রাখলেন। আমি ধীরে ধীরে কথাটার অর্থ বুঝতে পারলাম।
আমি কি করেছি? আমি অনুভব করলাম আমার মুখের জড়তা। এটা মোটেই ভাল ব্যাপার নয়। আমার আচরণ বিগত চার মাসে কোন রকম আবেদন জানানোর উর্ধ্বে উঠে গিয়েছিল। প্রথম সপ্তার পর, যেটা আমরা কেউ উল্লেখ করলাম না। আমি একটা দিনও স্কুল অথবা কাজ কোনটাতে অনুপস্থিত ছিলাম না। আমার গ্রেড ভাল ছিল। আমি কখনও কার্টু ভঙ্গ করিনি। আমি কখনও এমন জায়গায় অপেক্ষা করেনি যেটা কার্টু ভঙ্গের প্রথম স্থান। আমি খুব কমই বাইরে বেরিয়েছি।
চার্লি গোমড়ামুখে বসেছিলেন।
তুমি কোন কিছুই করোনি। সেটাই সমস্যা। তুমি কখনই কোন কিছু করো না।
তুমি আমাকে সমস্যার মধ্যে পাঠাতে চাও? আমি বিস্মিত হলাম। বিস্ময়ে আমার → কপালে উঠে গেল। আমি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলাম। যদিও এটা মোটেও সহজ ছিল না। সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমার কানে কোন কিছুই ঢুকছিল না।
কোন রকম সমস্যায় থাকা বরং এর চেয়ে অনেক বেশি ভাল…এই রকম নিস্তেজভাবে থাকার চেয়ে।
কথাগুলো যেন আমাকে আহত করল। আমি চেষ্টা করছিলাম সবধরনের জড়তা কাটিয়ে উঠতে। নিস্তেজ ভাবও কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিলাম।
আমি সবসময় নিস্তেজ হয়ে থাকি না।
ভুল কথা। তিনি রাগী স্বরে বললেন। নিস্তেজতাও এর চেয়ে ভাল- সেটাও অন্তত কিছু একটা করার মধ্যে পড়ে। তুমি শুধুই…প্রাণহীন বেলা। মনে হয় এটাই উপযুক্ত শব্দ যেটা আমি তোমাকে বলতে চেয়েছি।
এই অপবাদ আমাকে নিঃস্তব্দ করে রাখল। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
আমি দুঃখিত বাবা। আমার ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিটা যেন চাটুকারিতার মত। এমনকি এটা আমার কাছেও। আমি ভেবেছিলাম তাকে বোকা বানাতে পারব। চার্লির সমস্ত অনুভূতি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে পারব।
আমি তোমার ক্ষমা প্রার্থনা চাই না।
আমি জোরে শ্বাস নিলাম। তাহলে আমাকে বল তুমি আমাকে নিয়ে কি করতে চাও?
বেলা, তিনি দ্বিধায় ভূগতে লাগলেন। বোধহয় আমার প্রতিক্রিয়া বুঝে দেখার চেষ্টা করছেন। সোনা, তুমিই প্রথম মানুষ নও যে এই জাতীয় জিনিসের ভেতর দিয়ে গেছ। তুমি তা জানো।
আমি তা জানি। আমার সম্মতিসূচক অনুমোদন নিষ্প্রভ।
শোন সোনা, আমি মনে করি- তোমার কিছু সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
সাহায্য?
তিনি থেমে গেলেন। আবার কথা বলার জন্য শব্দ হাতড়াচ্ছেন।
যখন তোমার মা আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তিনি ভ্রু কুঁচকে শুরু করেন এবং তোমাকে তার সাথে নিয়ে গেল। তিনি গভীরভাবে শ্বাস নিলেন। বেশ, সেটা সত্যি আমার জন্য একটা খারাপ সময় ছিল।
আমি জানি বাবা।
কিন্তু আমি এটা সামলেছি। তিনি নির্দিষ্ট বিষয়ে এলেন। সোনা, তুমি এটা সামলাওনি। আমি অপেক্ষা করেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম এটা আরো ভাল কিছু হবে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিলেন। আমি মনে করি আমরা দুজনেই জানি এটা ভাল কিছু হয়নি।
আমি ভাল আছি।
তিনি আমাকে উপেক্ষা করলেন। হতে পারে, বেশ, হতে পারে। যদি তুমি এই বিষয়টা নিয়ে কারোর সাথে আলাপ করো। পেশাগত কারোর সাথে।
তুমি চাইছ আমি নিজের ভেতর আরো কুঁকড়ে যাই? আমার কণ্ঠস্বর এত বেশি তীক্ষ্ম হয়ে উঠল যে আমি বুঝতে পারলাম তিনি উঠে যাবেন।
হতে পারে এটা তোমাকে সাহায্য করবে।
এবং হতে পারে এটা আমাকে সামান্যতম সাহায্য করবে না।
মনোবিশ্লেয়ণ সম্বন্ধে আমার ধারণা ভাল ছিল না। কিন্তু আমি কিছুটা নিশ্চিত ছিলাম এটা আমার উপর কাজ করবে না যতক্ষণ না এ বিষয়টাতে আমি সত্য প্রকাশ করব। নিশ্চিত, এটাতে সত্য বলতে হবে। যদি আমি আমার বাকি জীবনটা একটা আরামদায়ক কক্ষে কাটাতে চাই।
তিনি আমার অনুভূতিটা পরীক্ষা করলেন। তারপর আমাকে অন্যভাবে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন।
এটা এখন আমার উপর বেলা। হতে পারে তোমার মা…
দেখ, আমি নিস্তরঙ্গ গলায় বললাম আমি আজ রাতে বাইরে যাব। যদি তুমি চাও। আমি জেস অথবা এঞ্জেলাকে ডাকব।
তোমার বাইরে যাওয়াটাই সব নয়, আমি যা চাচ্ছি। তিনি তর্ক করলেন। হতাশাগ্রস্ত। আমি মনে করি না তুমি কষ্ট করে এসব করছ দেখে আমি জীবনযাপন করব। আমি কখনও কাউকে এত কষ্ট করতে দেখিনি। এটা দেখাও যন্ত্রণার মত।
আমি কঠিন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিনি টেবিলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি বুঝতে পারছি না, বাবা। প্রথমে তুমি পাগল হয়ে গেছে, কারণ আমি কিছুই করছি না। এবং তারপর তুমি বলছ তুমি আমাকে বাইরে যেতে দিতে চাইছ না।
আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই। না সেটাই সবকিছু নয়। আমি শুধু চাই যে তুমি কোন কষ্টের মধ্যে না থাক। আমি মনে করি তোমার জন্য এটা একটা ভাল সুযোগ যদি তুমি ফর্কের বাইরে কোথাও যাও।
আমার চোখজোড়া নেচে উঠল।
আমি এখান থেকে যাচ্ছি না। আমি বললাম।
কেন নয়? তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
আমি আমার স্কুলের শেষ সেমিস্টারে। এটা আমার সবকিছু ওলোটপালোট করে দেবে।
তুমি একজন ভাল ছাত্রী। তুমি এটাতে উতরে যাবে।
আমি মা এবং ফিলের কোন ঝামেলা করতে চাই না।
তোমার মা তোমাকে ফেরত পাওয়ার জন্য মরতে বসেছে।
ফ্লোরিডা অনেক বেশি গরম।
তার মুষ্টি আবার টেবিলের উপর নেমে এল। আমরা দুজনেই জানি প্রকৃতপক্ষে এখানে কি ঘটে চলেছে, বেলা। এবং এটা তোমার জন্য মোটেই ভাল কিছু নয়। তিনি গভীরভাবে শ্বাস নিলেন। কয়েক মাস কেটে গেছে। কোন কল নেই। কোন চিঠি নেই। কোন যোগাযোগ নেই। তুমি আর তার জন্য অপেক্ষা করতে পার না।
আমি দৃষ্টি দিয়ে তাকে ভস্মীভূত করতে চাইলাম। সেই উত্তাপ যেন আমার মুখে লাগতে লাগল। আমি চোখের পলক না ফেলে অনেক সময় তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
গোটা বিষয়টাই যেন নিষিদ্ধ বিষয়। যেটা সম্বন্ধে আমরা দুজনেই সচেতন।
আমি কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি না। আমি কোন কিছু আশাও করছি না। আমি নিম্ন স্বরে বললাম।
বেলা–চার্লি শুরু করলেন। তার কণ্ঠস্বর কষ্ট জড়ানো।
আমাকে স্কুলে যেতে হবে, আমি কথার মাঝখানে বাধা দিলাম। উঠে দাঁড়ালাম এবং আমার না খাওয়া নাস্তা নিয়ে উঠে পড়লাম। এটা নিয়ে আর্বজনার পাত্রে ফেলে আমার প্লেট ধুয়ে ফেললাম। আমি আর কোন কথোপকথনের সুযোগ দিতে চাই না।
আমি জেসিকার সাথে একটা পরিকল্পনা করেছি। আমি কাঁধে স্কুল ব্যাগের স্ট্রাইপ বাঁধতে বাঁধতে বললাম। তার চোখের দিকে তাকালাম না। মনে হয় আমি ডিনারের জন্য নাও ফিরতে পারি। আমরা পোর্ট এ্যাঞ্জেলসে যাব এবং সেখানে একটা মুভি দেখব।
তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই আমি দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম।
চার্লির সামনে থেকে বেরিয়ে স্কুলে এসে দেখি আমিই সবার আগেই স্কুলে এসেছি। এটার ভাল দিক হচ্ছে আমি খুব ভাল একটা পার্কিং লট পেয়েছি। তাছাড়া আমার হাতে এখন অনেক বেশি অবসর সময় আছে। আমি অবসর সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করলাম।
আমি চার্লির কথাগুলো ভাবার আগেই ব্যাগ থেকে ক্যালকুলাস বই টেনে বের করলাম। যে অধ্যায় আজ শুরু হয়েছে সেই অধ্যায় পাতা উল্টিয়ে বের করলাম। চেষ্টা করলাম এই সম্বন্ধে কিছু একটা বুঝতে। বাবার কথা শোনার চেয়ে ম্যাথ পড়ার চেষ্টা করা আরো খারাপ। কিন্তু আমি সেটাতেই ভাল বোধ করতে থাকলাম। শেষ কয়মাস, আমি দশগুন বেশি সময় ক্যালকুলাসের পেছনে ব্যয় করেছি। ফলাফলে আমি এ ক্যাটাগরি রাখতে সমর্থ হয়েছি। আমি জানি মিস্টার ভার্নার আমার এই উন্নতিতে তার সবচেয়ে ভাল শিক্ষণীয় মেথড প্রয়োগ করেছেন। যদি এটাই তাকে খুশি করে তাহলে আমি তাকে কোন রকম সমস্যায় ফেলতে চাই না।
আমি পার্কিং লট পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটা পড়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। শেষ হলে আমি ইংরেজি বই টেনে বের করলাম। আমরা এখন এ্যানিম্যাল ফার্ম নিয়ে কাজ করছিলাম। সহজ বিষয়। আমি ক্যুনিজমের ব্যাপারে কিছু মনে করি না। আমার কাছে এটা স্বাগতমই মনে হয়। এই সমাজের রীতিনীতি পরিবর্তনকে। ক্লাসে আমার সিটে যেয়ে বসলাম। মি বার্টির লেকচার শোনায় মনোযোগ দিলাম।
স্কুলে থাকলে আমার সময় শান্তভাবেই কেটে যায়। সবগুলো ঘণ্টা বেশ তাড়াতাড়িই কেটে গেল। আমি ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম।
বেলা?
আমি মাইকের কণ্ঠস্বর চিনতে পারলাম। আমি জানি তার পরের কথাগুলো কি হবে?
তুমি কি আগামীকাল কাজ করবে?
আমি তাকালাম। সে উদ্বিগ্নভাবে আমার দিকে তাকাল। প্রতি শুক্রবার সে আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। কিছু মনে না করলে আমি এখনও অসুস্থতার জন্য তেমন বেশি ছুটি নেয়নি। বেশ, একটা ব্যতিক্রম ছাড়া। কয়েক মাস আগে। কিন্তু আমার দিকে এমন উদ্বিগ্নর দৃষ্টিতে তাকানোর কোন কারণ নেই। আমি একজন আদর্শ চাকুরিজীবী।
আগামীকাল শনিবার, তাই নয় কি? আমি বললাম। ঠিক যেভাবে আমি চার্লির সাথে কথা বলি। আমি বুঝতে পারলাম আমার কণ্ঠস্বর কত বেশি প্রাণহীন শোনায়।
ইয়ে.. .. তাই। সে একমত হলো। স্পানিশ ক্লাসে তোমার সাথে দেখা হবে। সে তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে চলে গেল। সে আর আমাকে ক্লাসে কখনও বিরক্ত করবে না।
আমি ক্যালকুলাস ক্লাসে গোমড়ামুখে ঢুকলাম। এই ক্লাসে আমি জেসিকার পাশে বসি।
সপ্তাহ বা মাসখানিক আগেও জেসিকার পাশ দিয়ে গেলে সে আনন্দসূচক শব্দ করত। আমি জানি আমি প্রায় সময় আমার আভিজাত্যপূর্ণ আচরণ দিয়ে তাকে এড়িয়ে যাই। সে মুখভারী করে থাকে। এখন তার সাথে কথা বলা অতোটা সহজ নয়। বিশেষতঃ কিছু একটা করার জন্য।
আমি কোন একটা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের রিপোর্ট না করে চার্লির মুখোমুখি হতে চাচ্ছি না। আমি জানি আমি মিথ্যে বলতে পারব না। যদিও আমার পোর্ট এ্যাঞ্জেলসে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। একা একা ফিরে আসার ব্যাপারেও ভাবছি। আমার গাড়ির রিফ্লেকটরে মাইলের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। যদি বাবা কোনভাবে চেক করে দেখেন। খুবই রাগান্বিত হবেন। জেসিকার মা এই শহরের সবচেয়ে বড় গপ্পোবাজ। আর বাবা আগে হোক পরে হোক মিসেস স্টানলির সাথে দেখা করবেন। বাবা দেখা করলে জেসিকার সাথে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মিথ্যে বেরিয়ে আসবে।
আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দরজা খুললাম।
মিস্টার ভানার আমার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি এর মধ্যেই লেকচার শুরু করেছেন। আমি তাড়াতাড়ি আমার সিটে গিয়ে বসলাম। জেসিকা মোটেই দেখল না। যে আমি তার পাশে গিয়ে বসেছি। আমি খুশি আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতির জন্য কমপক্ষে মিনিট পনেরো সময় পাব।
এই ক্লাসটা ইংরেজি ক্লাসের চেয়ে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। আজ সকালে মোটরলরিতে বসে আমার টুকিটাকি প্রস্তুতি বেশ কাজ দিল।
মিস্টার ভার্নার পাঁচ মিনিট আগে ক্লাস শেষ করে দিলে আমি হাসলাম। আমাদের ভাল থাকতে বলে তিনিও হাসলেন।
জেস? আমি অস্বস্তিবোধ করতে লাগলাম। সে আমার দিকে ঘুরবে এজন্য অপেক্ষা করছিলাম।
সে তার সিটে বসেই আমার দিকে ঘুরল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল, তুমি কি আমার সাথে কথা বলছে, বেলা?
অবশ্যই। আমি সরলভাবে চোখ বড় বড় করলাম।
কি? তোমার কি ক্যালকুলাসে কোন সাহায্য দরকার? তার কণ্ঠস্বরে তিক্ততার আভাস।
না। আমি দুদিকে মাথা নাড়লাম। প্রকৃতপক্ষে, আমি আসলে জানতে চেয়েছি যদি তুমি… আমার সাথে আজ রাতে ছবি দেখতে যাবে কিনা? আমার আজ রাতে বাইরে যাওয়ার জন্য একজন সঙ্গী দরকার। একজন বান্ধবীর। কথাগুলো বেশ কঠোর শোনাল। যেন খারাপ কিছু বলে ফেললাম। সে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল।
কেন তুমি আমাকে বলছ? সে অবন্ধুসুলভভাবে বলল।
তুমিই প্রথম মেয়ে আমি যার কথা ভাবি যখন আমার কোন মেয়ের সঙ্গ দরকার হয়। আমি হাসলাম। আশা করলাম আমার হাসিটা খাঁটি হাসির মতই হবে। হাসিটা বোধ হয় ভালই হলো। জেসিকাই একমাত্র ব্যক্তি যখন আমি চার্লিকে এড়ানোর জন্য কারোর কথা ভাবি। এটা আমার কাছে সবসময় একই জিনিস মনে হয়।
তাকে দেখে খোসামুদে কিছুটা কাজ ধরেছে মনে হলো বেশ, আমি জানি না।
তোমার কোন পরিকল্পনা আছে?
না.. আমি ধারনা করছি আমি তোমার সাথে যাব। তুমি কি ছবি দেখতে চাও? আমি নিশ্চিত নই এখন কি চলছে। আমি দ্বিধান্বিত। এটা তাকে কাছে টানার কৌশল। আমি কোন একটা সূত্রের জন্য মগজ খাটাতে লাগলাম। সম্প্রতি কোন ছবি নিয়ে লোকজনের কথোপকথন কি আমি শুনিনে? পোস্টারও কি দেখিনি? সেই মহিলা প্রেসিডেন্টেরটা দেখলে কেমন হয়?
সে আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকাল। বেলা, সেটা থিয়েটার থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে।
ওহ! আমি ভ্রু কুঁচকালাম। এমন কিছু কি আছে যেটা তুমি দেখতে পছন্দ কর?
জেসিকার স্বভাবগত কথোপকথনের বুদবুদের ফোয়ারা বের হতে লাগল। সে বিষয়টা নিয়ে ভাবছিল। বেশ, সেখানে নতুন একটা রোমান্টিক কমেটির বেশ কয়েকটা রিভিউ আছে। আমি সেটাই দেখতে চাই। আমার বাবা সেটা সম্প্রতি শেষ দৃশ্য পর্যন্ত দেখেছে। বাবা এটা সত্যিই বেশ পছন্দ করেছে।
আমি তার কথায় মুখে আনন্দের ভাব ধরলাম। সেইটা কি সম্বন্ধে?
জম্বি অথবা এই জাতীয় কিছু একটা। তিনি বলেছেন এটা এত ভয়াবহ ছবি তিনি সম্প্রতি বছরগুলোতে আর দেখেননি।
বেশ, ভালোই তো শোনাচ্ছে। আমি একটা রোমান্টিক ছবির চেয়ে একটা সত্যিকারের জম্বি ছবি পছন্দ করব।
ঠিক আছে। আমি এক কথায় রাজি হয়ে যাওয়ায় সে বিস্মিত হলো। আমি মনে করার চেষ্টা করলাম সত্যি আমি জম্বি মুভি পছন্দ করি না কিন্তু আমি নিশ্চিত নই। তুমি কি স্কুল শেষে আমাকে তুলে নেবে? সে অফার করল।
অবশ্যই,
জেসিকা আমার দিকে তাকিয়ে বন্ধুত্বের হাসি দিল। আমার হাসি ফেরত দিতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। কিন্তু আমি ভাবলাম সে এটা দেখেছে। সে চলে গেল।
বাকি দিনটা বেশ দ্রুতই কেটে গেল। আমি আজ রাতের জন্য পরিকল্পনা করতে লাগলাম। জেসিকার সাথে কথা বলার পরপরই বুঝলাম তার ব্যাপারে আমাকে সাড়া দিতে হবে। অন্ততপক্ষে সামান্যতম হলেও।
কোন একটা ব্যাপার আমার মাথার মধ্যে এলোমেলো করে দিচ্ছিল। রুমে এসে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমার পুরোপুরি মনে নেই কখন আমি স্কুল থেকে ড্রাইভ করে বাসায় চলে এসেছি। অথবা কীভাবে দরজা খুলেছি। কিন্তু সেটা কোন ব্যাপার নয়। সময়ের এইসব অদ্ভুত ব্যাপার আমার জীবনের জিজ্ঞাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি এটা নিয়ে খুব একটা ভাবলাম না। আমি ক্লজেটের কাছে গেলাম। এরকম অবশকারী অবস্থাকে পাত্তা দেয়ার কিছু নেই। আমি ক্লজেটের কাপড়চোপড়ের স্তূপ একপাশে সরিয়ে রাখলাম। সেই সব পোশাক সরালাম যেগুলো আমি কখনও পরি না।
আমি সরাসরি আবর্জনার ব্যাগের দিকে তাকালাম না। সেখানে উপহারটা আছে, যেটা আমি গত জন্মদিনে পেয়েছি। কালো প্লাস্টিকের ভেতরের স্টেরিওটার দিকেও আমি তাকালাম না।
আমি যে পোশাকটা খুব কমই পরি সেটাই নিলাম। তারপর বেশ জোরে ক্লজিটের দরজা লাগিয়ে দিলাম।
ঠিক তার পরপরই হর্ণ বাজার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি স্কুলব্যাগ থেকে ওয়ালেটটা বের করে আমার পার্সে রাখলাম। আমি ব্যস্ততা লাগলাম। আজ রাতটা যেভাবেই হোক খুব দ্রুত কেটে যাবে।
আমি হলঘরের আয়নায় এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে দেখে নিলাম। তারপর দরজা খুললাম। মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করলাম। চেষ্টা করলাম হাসিটা ধরে রাখতে।
আজ রাতে আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমি প্যাসেঞ্জারের সিটে বসতে বসতে বললাম। আমার কণ্ঠস্বরে কৃতজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করলাম। বাবাকে যখন বলেছি তখন থেকেই এটা কাজ করছিল। জেস বেশ কঠিন। কোনটা তার খাঁটি আবেগ আর কোনটা মেকি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
নিশ্চয়। তো কি তোমাকে এমনভাবে বাইরে বের করল? জেস বিস্মিত। সে আমাদের রাস্তা ছেড়ে বেরিয়ে বড় রাস্তায় পড়ল।
বের করে এনেছে মানে?
কেন তুমি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলে… বাইরে যাওয়ার? এটা এমন শোনাল যেন সে তার প্রশ্নের মোড় অর্ধেক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।
আমি কাঁধ ঝাঁকালাম শুধু একটু পরিবর্তনের জন্য।
আমি রেডিওতে বাজতে থাকা গানটা চিনতে পারলাম। আমরা আবার কথা শুরু করলাম। তুমি কিছু মনে করেছ নাকি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
না। বলে যাও।
আমি রেডিও স্টেশনটা একবার দেখে নিলাম। বুঝলাম সেটা ক্ষতিকর নয়। জেস রেডিওর নতুন মিউজিকের দিকে মনোযোগী হলো।
তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তুমি কখন থেকে র্যাপ গান শুনতে শুরু করলে?
আমি জানি না। আমি বললাম এই মুহূর্তেই।
তুমি এটা পছন্দ করো? সে সন্দিহানভাবে জিজ্ঞেস করল।
অবশ্যই।
সাধারণ অবস্থায় জেসিকার সাথে কথোপকথন খুব কঠিন ব্যাপার। যদি মিউজিক নিয়ে কথা বলি তবেই সেটা সহজ হয়ে যায়। আমি মাথা ঝাঁকালাম। আশা করছি আমি তার তালে তাল দিচ্ছি।
ঠিক আছে… সে চোখ বড়বড় করে জানালার বাইরে তাকাল।
তো আজকের দিনে তোমার ও মাইকের মধ্যে কি ঘটেছে? আমি তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম।
তুমি তাকেই বেশি দেখ যতটা না আমি।
প্রশ্নটা তার কথার ভঙ্গিতে বোঝা গেল আমি যেভাবে বলতে চাইলাম সে সেভাবে নেয়নি।
কাজের সময় কথা বলা কঠিন। আমি বিড়বিড় করে বললাম। তারপর আবার বললাম তুমি কি সম্প্রতি কারোর সাথে বাইরে গিয়েছো?
তেমনভাবে না। আমি কনারের সাথে মাঝে মধ্যে বাইরে যাই। আমি এরিকের সাথে দুই সপ্তাহ আগে বাইরে গিয়েছিলাম। সে তার চোখ ঘোরাল। আমি সেখানে বড় একটা গল্প দেখতে পেলাম। আমি সুযোগটা খুঁজছিলাম।
এরিক ইয়োর্কি? কে কাকে বলেছিল?
সে গুঙিয়ে উঠল। কথা বলতে গিয়ে মুর্তির মত হয়ে গেল সেই বলেছিল অবশ্যই। আমি না বলার মত কোন উপযুক্ত পথ খুঁজে পাই নি।
সে তোমাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল? আমি জানতে চাইলাম। জানতাম সে আমার আগ্রহের মধ্যে আসবেই। আমাকে এটা সম্বন্ধে সবকিছু বলো?
সে তার গল্প বলা শুরু করল। আমি সিটে ভালভাবে বসলাম। আগের চেয়ে আরামদায়কভাবে। আমি তার গল্পে গভীর মনোযোগ দিলাম। সহানুভূতি দেখালাম। ভয়ে আতকে উঠলাম। সে এরিকের গল্প শেষ করে কোনরকম বিরতি ছাড়াই কনারের গল্প শুরু করল।
মুভিটা একটু আগেই শুরু হয়েছে। কাজেই জেস ভাবছে সে গোধুলির শোটা দেখবে। তারপর খেতে যাবে। সে যেখানে যেতে চায় বা যা করতে চায় আমি তাতেই রাজি। মোটের উপর আমি এসব কিছু বাবাকে দেখাতে চাচ্ছিলাম।
আমি জেসকে প্রিভিউর ব্যাপারে কথা বলায় ব্যস্ত রাখলাম। সুতরাং আমি সেগুলোকে আরো বেশি অবহেলা করতে পারলাম। কিন্তু ছবি শুরু হলে আমি নার্ভাস হয়ে পড়লাম। একজোড়া নব দম্পত্তি একাকী সমুদ্র সৈকত ধরে হাঁটছে। তাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা নিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে আলোচনা করছে। আমি তাদের তর্ক শুনতে প্রবুদ্ধ হলাম না। গুনগুন করা শুরু করলাম। আমি কোন প্রেমানুভূতির মধ্যে নেই।
আমি ভেবেছিলাম আমরা কোন জম্বি মুভি দেখছি। আমি ফিসফিস করে জেসিকাকে বললাম।
এটাই সেই জম্বি মুভি।
তাহলে কেউ কাউকে খাচ্ছে না কেন? আমি উদ্বতভাবে জিজ্ঞেস করলাম।
সে চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকাল যেন সেখানে কোন সতর্ক সংকেত। আমি নিশ্চিত সেই অংশ আসবে। সেও ফিসফিস করে বলল।
আমি পপকর্ণ আনতে যাচ্ছি। তুমি কি চাও? বললাম আমি।
না। ধন্যবাদ।
কেউ একজন আমাদের পিছন থেকে শশশ শব্দ করে চুপ থাকতে বলল।
আমি মূল্য ছাড় কাউন্টারে সময় কাটাতে লাগলাম। ঘড়ি দেখতে লাগলাম। এবং বির্তক করতে লাগলাম একটা নব্বই মিনিটের ছবিতে প্রেমের দৃশ্যের কি দরকার এটা নিয়ে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম দশ মিনিটের বেশি বাইরে কাটাব না। সেটাই যথেষ্ট। কিন্তু আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থমকে গেলাম। আমি ভেতর থেকে স্পিকারে ভেসে আসা ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। সুতরাং আমি বুঝলাম আর দেরি করা চলে না।
তুমি সব কিছুই মিস করেছ। আমি সিটে ফিরে আসতেই জেস বিড়বিড় করে বলল। এখন এর ভেতরের সবকিছুই জম্বিকেন্দ্রিক।
লম্বা সময়। আমি তাকে পপকর্ণ অফার করলাম। সে মুঠো ভর্তি করে নিল।
ছবির বাকি অংশটুকু ভয়াবহ ধরনের জম্বি আক্রমণে ভরা। ভয়ার্ত চিৎকারের ভেতর দিয়ে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মাত্র জীবিত আছে। তাদের সংখ্যাও খুব দ্রুতই কমে আসছে। আমার মনে হলো সেখানে আমাকে বিরক্ত করার মত কিছুই নেই। কিন্তু আমি অস্বস্তি বোধ করতে লাগলাম। প্রথমে আমি বুঝতে পারলাম না কেন।
শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম। যখন দেখলাম একজন জম্বি শেষ জনের পিছু নিয়েছে। ভয়ে কাঁপতে থাকা মানুষটির পিছু নিয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম সমস্যাটা কোথায়। দৃশ্যটা ছিল নায়িকার ভয়ার্ত মুখ এবং অনুসরণকারীর আবেগহীন মৃত মুখ। দুজনের দূরত্ব এই কাছে, এই দূরে।
আমি বুঝতে পারলাম কোন অংশটা আমার সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ মনে হচ্ছে।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
তুমি কোথায় যাচ্ছ? আর মাত্র দুই মিনিটের মত ছবি বাকি আছে। জেস ফিসফিস করে বলল।
আমার পানীয়ের দরকার। আমি বাইরের দরজার দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বললাম।
থিয়েটারের দরজার বাইরের বেঞ্চে বসে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছিল। এটা খুবই অমানবিক। সবকিছুই বিবেচনার যোগ্য। শেষ পর্যন্ত আমি একজন জম্বির ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আমি দেখিনি যে সেটা আসছে।
ব্যাপারটা এরকম নয় যে আমি একটা জম্বিকে অনুসরণ করতে দেখেছি। একটা আবেগহীন মৃতদেহ। এই চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে মাথা নাড়লাম। আমি কিছুটা ভয় পেয়েছি। যেটা নিয়ে আমি একদিন স্বপ্ন দেখেছি সেই ভাবনায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই।
এটা খুবই হতাশাজনক আমি আর সেই নায়িকা নই। আমার সেই গল্প শেষ হয়ে গেছে।
জেসিকা থিয়েটারের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল। দ্বিধান্বিত। সম্ভবত আমাকে খোঁজার জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গার দিকে তাকাচ্ছে। তাকে স্বস্তিতে ফিরতে দেখলাম। কিন্তু মাত্র এক মুহূর্তের জন্য। তারপর তাকে বেশ বিরক্ত দেখাল।
ছবিটা কি তোমার জন্য খুব বেশি ভয়ের ছিল? সে বিস্মিত।
হা। আমি সম্মত হলাম আমার মনে হয় আমি একটু বেশি ভীতু।
সেটা মজার। সে ভ্রু কুঁচকাল। আমি মনে হয় না তুমি ভয় পেয়েছে- আমি সর্বক্ষণ ভয়ে চিৎকার দিচ্ছিলাম কিন্তু আমি তোমাকে একবারও ভয়ে চিৎকার দিতে শুনলাম না। সুতরাং আমি জানি না কেন তুমি চলে এলে।
আমি কাঁধ ঝাঁকালাম শুধুই ভয়ে।
সে কিছুটা স্বস্তিবোধ করল। এটা এতটাই ভয়ের ছবি! আমি মনে করি না এর আগে আমি এমন কিছু দেখেছি। আমি তোমার সাথে বাজি ধরতে পারি আজ রাতে তুমি দুঃস্বপ্ন দেখবে।
সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আমি বললাম। চেষ্টা করছিলাম আমার গলার স্বর স্বাভাবিক রাখতে। এটা সাক্ষ্যাতীতভাবে প্রমাণিত আমি দুঃস্বপ্ন দেখব। কিন্তু সেটা জম্বি সম্বন্ধনীয় কিছু হবে না। তার চোখ আমার দিকে চেয়েছিল। পরে সে চোখ ফিরিয়ে নিল। হতে পারে আমি স্বাভাবিক স্বরে কথা বলতে ব্যর্থ হয়েছি।
তুমি কোথায় খেতে চাও?
যেকোন জায়গায় হলেই হয়। আমার তেমন কোন পছন্দ নেই।
ঠিক আছে।
হাঁটতে হাঁটতে জেস ছবিতে দেখা পুরুষটাকে নিয়ে কথা বলতে লাগল। আমি মাথা আঁকালাম যখন সে পুরুষটার পৌরুষত্ত নিয়ে এবং মানুষটার কোন জম্বি মুভিতে ছাড়া অভিনয়ের কথা মনে করার চেষ্টা করল।
জেসিকা আমায় কোথায় নিয়ে চলেছিল আমি দেখছিলাম না। শুধু এটুকু সচেতন ছিলাম এখন পুরোপুরি অন্ধকার, শীত আর নিস্তব্ধতা। এখানে কেন এত নিস্তব্ধতা তা পুরোপুরি বুঝতে আমার বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল। জেসিকা তার বকবকানি বন্ধ করল। আমি তার দিয়ে ক্ষমার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। আশা করছি তাকে আমি কোনভাবে আঘাত দেয়নি।
জেসিকা আমার দিকে তাকাচ্ছিল না। তার মুখের রেখায় দুশ্চিন্তা। সে সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে জোরে হাঁটছিল। যেমনটি আমি দেখছিলাম, তার চোখ দ্রুত ডানদিকে ঘুরে গেল। রাস্তার উল্টোদিকে তাকাল। আবার আমার দিকে ফিরে এল।
আমি প্রথমবারের মত আমার চারিদিকে তাকালাম।
আমরা এখন একটা ছোট রাস্তায়। আজ রাতের জন্য রাস্তার দুপাশের ছোট ছোট দোকানগুলো সব বন্ধ। জানালাগুলো কালো। অর্ধেক ব্লক আগে রাস্তার আলোগুলো আবার শুরু হলো। আমি দেখতে পেলাম আরো নিচের দিকে ম্যাকডোনাল্ডের দোকানের দিকে সে এগিয়ে চলেছে।
রাস্তার ওপাশে অন্যরকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভেতর থেকে জানালার পর্দা টানা। নিওন সাইন জ্বলছে। বিভিন্ন ব্রান্ডের বিয়ারের এডভ্যাটাইজ। যেগুলো আলোকিত হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় সাইনটা যেটা খুবই সবুজ বারের নাম লেখা-একচোখা পেটির আমি বিস্মিত সেখানে কোন জলদুস্যের থিম বাইরে না থাকায়। ধাতব দরজাটা কিছুটা খোলা। এর ভেতরে মৃদু আলো জ্বলছে। সেখানে নিচু গলার অনেকগুলো গলার গুনগুন। বরফ টুকরো করার শব্দ ভেসে আসছে। দরজার পাশে সেখানে চারজন পুরুষ মানুষ।
আমি চকিতে পিছন ফিরে জেসিকার দিকে তাকালাম। তার চোখ সরাসরি ভেতরের পথের দিকে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তাকে দেখে ভীত মনে হচ্ছে না- কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। চেষ্টা করছে তার প্রতি কারো মনোযোগ যাতে আর্কষিত না হয়।
কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই আমি থমকে দাঁড়ালাম। পেছনে তাকিয়ে সেই চারজন মানুষকে দেখলাম। এটা অন্য জায়গা, অন্য আরেকটি রাত, কিন্তু দৃশ্যটা এতটাই একই রকম। এদের মধ্যেও একজন এমনকি খাটো এবং কালো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে ঘুরে গেলাম। সেই লোকটা আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকাল।
আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
বেলা? জেসিকা ফিসফিস করে বলল তুমি কি করছ?
আমি মাথা নাড়লাম, যদিও আমি নিশ্চিত নই আমার মনে হয় আমি তাদেরকে চিনি…আমি বিড়বিড় করে বললাম।
এ আমি কি করছি? আমার সেই স্মৃতি থেকে যত তাড়াতাড়ি যত দূরে যাওয়া সম্ভব চলে যাওয়া উচিত। আমার মন থেকে সেই চারজন মানুষের স্মৃতি মুছে ফেলতে হবে। আমি সেসবের কিছুই করতে পারলাম না। কেন আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম?
জেসিকার সাথে আমার এখন পোর্ট এ্যাঞ্জেলসে যাওয়া উচিত। অন্ধকার নেমে আসার পরও। আমার চোখ খাটো লোকটার উপরে। চেষ্টা করছি আমার স্মৃতির সাথে তাকে মেলাতে। এক বছর আগে যে লোকটা সেই রাতে আমাকে হুমকি দিয়েছিল। আমি বিস্মিত যদি সেখানে কোন উপায় থাকতো যে আমি লোকটাকে চিনতে পারতাম। যদি সত্যি সেই লোকটা হয়। সেই সন্ধ্যায় সেই অংশটকু আমার কাছে ঝাপসামত। আমার শরীর আমার মনের চেয়ে এটা বেশি মনে করতে পারে। আমার পা ভারী হয়ে আসছিল। আমি দৌড়ে যাব অথবা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকব। আমার মুখের ভেতরটা শুকিয়ে আসছিল যখন আমি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল যখন কালো চুলের লোকটা আমাকে ডাকল হাই হানি…।
একটা ব্যাপারে আমি আশান্বিত ছিলাম মানুষগুলো সেই রাতের মত আমাকে কিছু করবে না। মানুষগুলো অপরিচিত, এটাই আশার কথা। এখানে গাঢ় অন্ধকার। তারা আমাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি। এর চেয়ে বেশি আর কিছু ছিল না। কিন্তু এটাই যথেষ্ট জেসিকার কণ্ঠস্বর আমার ভয় ভাঙ্গাল। সে আমার নাম ধরে ডাকল।
বেলা, চলে এসো।
আমি তাকে উপেক্ষা করলাম। আস্তে আস্তে সামনে এমনভাবে এগিয়ে যেতে থাকলাম যেন কি করতে যাচ্ছি তা আমি ভালভাবেই জানি। আমি বুঝতে পারলাম না কেন। কিন্তু মানুষগুলো তাদের দিকে আমাকে আকর্ষণ করছিল। এটা একটা চেতনাহীন অনুভূতি। কিন্তু আমি কখনও এত বেশি সময় ধরে এই ধরনের অনুভূতি লালন করিনি… আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম।
অপরিচিত কিছু একটা আমার শিরার ভেতর আঘাত করছিল। এড্রেনালিন। আমি বুঝতে পারছিলাম। আমার সিস্টেমে কাজ করছে। আমার নাড়ীর স্পন্দন দ্রুততর হচ্ছে। এটা অদ্ভুত ব্যাপার- যেখানে কোন ভয় নেই সেখানে কেন এড্রেনালিন প্রবাহিত হচ্ছে? এটা প্রায় এমনটিই যেন এটা গতবারের প্রতিধ্বনি। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। পোর্ট এ্যাঞ্জেলসের অন্ধকার রাস্তায় অপরিচিত লোকের সাথে।
আমি ভয়ের কোন কারণ দেখলাম না। আমি এই জগতে কোন কিছুই ম্যানেজ করতে পারি না যেটার উপর ভয় নির্ভর করে। শারীরিকভাবে তো নয়ই। সবকিছু হারানোর কিছুটা সুবিধে তো আছেই।
আমি রাস্তার অর্ধেকটা পেরুতেই জেসিকা এসে আমাকে ধরে ফেলল। আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে লাগল।
বেলা! তুমি বারের মধ্যে যেতে পার না! সে হিসহিসিয়ে বলল।
আমি ভেতরে যাচ্ছি না। আমি অন্যমনস্কভাবে বললাম। তার হাত ঝাঁকি দিয়ে ছাড়িয়ে নিলাম আমি শুধু একটা কিছু দেখতে যাচ্ছি…
তুমি কি পাগল হলে? সে ফিসফিস করে বলল তুমি কি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছ?
প্রশ্নটা আমার মনোযোগ কাড়ল। আমি তার দিকে তাকালাম।
না। তা নয়। আমার কণ্ঠস্বর অন্যরকম শোনাল। কিন্তু সেটা সত্য। এটা আত্মহত্যা নয়। এমনকি শুরুতেও না, যখন মৃত্যু প্রশ্নাতীতভাবেই স্বস্তিদায়ক কাজ করবে। আমি সেটাকে এড়াতে পারব না। আমি চার্লির কাছে অনেক দিক থেকে ঋণী। আমি রেনের জন্য অনেক বেশি দায়িত্ববোধ করি। আমাকে তাদের কথা ভাবতে হবে।
আমি এমন একটা প্রতিজ্ঞা করেছি যে আমি এমন কিছু করব না যেটা বোকাম বা কাণ্ডজ্ঞানহীন। এইসব কারণেই আমি এখন দুনিয়ার বুকে শ্বাস নিচ্ছি।
সেই প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করে নিজেকে দোষী মনে হলো। কিন্তু এখন আমি যেটা করছি সেটা সত্যিই কোন কাজের মধ্যে পড়ে না। এটা এমন নয় যে আমি কব্জিতে একটা ব্লেড চালাতে যাচ্ছি।
জেসের চোখ ঘুরে গেল। তার মুখ খোলা। তার আত্মহত্যা বিষয়ক প্রশ্ন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। আমি সেটা অনেক পরে বুঝলাম।
চল খেতে যাই। আমি তাকে উৎসাহিত করলাম। ফাস্ট ফুডের দোকানের দিকে এগিয়ে গেলাম। সে যেভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিল সেটা আমার পছন্দ হলো না। আমি তোমাকে এক মিনিটের মধ্যে ধরে ফেলব।
আমি তার থেকে ঘুরে গেলাম। সেই মানুষগুলোর দিকে গেলাম যারা বিস্মিত চোখে আমাদের দেখছিল।
বেলা, এই মুহূর্তে এসব বন্ধ কর।
আমার মাংসপেশী শক্ত হয়ে গেল। যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে জমে গেলাম। কারণ এটা জেসিকার কণ্ঠস্বর ছিল না, যে আমাকে বকাবকি করছিল। এটা একটা ভীতিকর কণ্ঠস্বর, পরিচিত কণ্ঠস্বর, একটা মধুর কণ্ঠস্বর- এতটাই কোমল যেন ভেলভেটের মত, যেটা আমাকে উত্তেজিত করার জন্য যথেষ্ট।
এটা তার কণ্ঠস্বর। আমি অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে তার নাম মনে করতে চাই না। কণ্ঠস্বরের শব্দটা আমার হাঁটুতে আঘাত করে ফেলে দিচ্ছে না। এটা আমাকে কুঁকড়ে দিচ্ছে না। সেখানে কোন ব্যথা নেই। একটুও না।
তক্ষণি আমি তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। সবকিছু খুবই পরিষ্কার। স্পষ্ট। যেন আমার মাথা কোন অন্ধকার পুলের ভেতর থেকে পানির উপরে ভেসে উঠেছে। আমি সবকিছুর ব্যাপারে খুবই সচেতন। আশেপাশের দৃশ্যাবলি, শব্দ, শীতল হাওয়ার পরশ। শীতল পরশ আমার মুখের উপর দিয়ে শিরশিরানির মত বয়ে যাচ্ছিল। গন্ধটা বারের খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল।
আমি যেন এক ধরনের ধাক্কার মধ্যে পড়ে গেলাম।
জেসিকার কাছে ফিরে যাও। মধুর কণ্ঠস্বরটি আদেশ করল। কণ্ঠস্বরটি এখনও রাগান্বিত। তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে- বোকার মত কিছু করবে না।
আমি একাকী ছিলাম। জেসিকা আমার থেকে কয়েক ফিট দূরে দাঁড়িয়েছিল। আমার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে ছিল। দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত লোকগুলোকে দেখছিল। দ্বিধান্বিত। আমি কি করছি সেটা ভেবে বিস্মিত। রাস্তার মাঝখানে আমি স্থাণুর মত দাঁড়িয়ে পড়লাম।
আমি মাথা নাড়লাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম। আমি জানতাম সে সেখানে নেই। এখনও নেই। সে সম্ভবত খুব কাছাকাছি আছে। তেমনটি অনুভূত হচ্ছে। প্রথমবারের মত কাছাকাছি। যখন এমনটি… শেষবার। তার কণ্ঠস্বরের রাগ সম্বন্ধে সে সচেতন। সেই রাগ যেটা আমার কাছে খুবই পরিচিত। এমন কিছু আমি আমার সারা জীবনে শুনিনি।
তোমার প্রতিজ্ঞা রাখ। কণ্ঠস্বর সরে সরে যাচ্ছিল, যেন রেডিও ভলিউম ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছিল।
আমি ধারণা করতে শুরু করলাম আমার এক প্রকার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই, স্মৃতি শক্তিতে অদ্ভুত পরিচিত পরিস্থিতিতে এমনটি হচ্ছে।
সম্ভবনাগুলো মাথা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলাম।
প্রথম কথা আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছি। উত্তেজিত অবস্থায় নাকি মানুষ মাথার ভেতরে অন্যের কণ্ঠস্বর শুনতে পায়।
সেটা সম্ভব।
দ্বিতীয় কথা, আমার অর্ধসচেতন মন আমি যেটা ভাবছিলাম সেটা এনে দিচ্ছে। এটা উইশফুল থিংকিং। এক মুহূর্তের জন্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটা অযৌক্তিক ধারণাকে সঙ্গী করে নেয়া। আমি যেখানে থাকি না কেন, জীবত অথবা মৃত সে আমাকে রক্ষা করবে। এই দিকটা বিবেচনা করলে সে আমাকে এটা বলতে পারে। আমার উপর খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে দেখে সে আমাকে সর্তক করছে।
সেই সম্ভবনাও আছে।
আমি কোন তিন নম্বর অপশন দেখতে পেলাম না। সুতরাং আমি আশা করেছিলাম। এটা সেই দ্বিতীয় অপশন এবং এটা শুধু আমার অর্ধসচেতন মনের ব্যাপার। এমন কিছু যেটা আমার জন্য প্রযোজ্য।
আমার প্রতিক্রিয়া মোটেই সুস্থ মানুষের মত ছিল না। যদিও আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তার কণ্ঠস্বর এমন কিছু যেটা আমি হারানোর ভয় পাচ্ছিলাম। হারানোর চেয়ে বেশি কিছু। আমি খুবই কৃতজ্ঞবোধ করলাম, আমার অচেতন মন সচেতন মনের চেয়ে শব্দটা অনেক বেশি ধারণ করে রেখেছে।
তার ব্যাপারে ভাবতে মনের থেকে সায় পাচ্ছিলাম না। আমি এ ব্যাপারে খুব কঠিন হওয়ার চেষ্টা করলাম। আমি চাচ্ছি সেটাকে এড়িয়ে যেতে। আমি একজন মানুষ। আমি সুস্থবোধ করছিলাম। দিনের এই সময়ের জন্য যন্ত্রণাটা এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সেখানে অনবরত অবশ ভাব ঘিরে আছে। যন্ত্রণা এবং শুণ্যতার মধ্যে তার অবস্থান।
আমি যন্ত্রণার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি অবশ বোধ করছিলাম না। আমার অনুভূতিগুলো কয়েকমাস পরে অস্বস্তিদায়ক ছিল। একটা যন্ত্রণাই পাচ্ছিলাম। তার কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছিল।
সেখানে আরেকটা অপশন ছিল।
সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ পথ হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে চলে যাওয়া। সেটা হ্যালুসিনেশনকে বাধাগ্রস্ত করবে।
কিন্তু তার কণ্ঠস্বর মিলিয়ে যাচ্ছিল।
আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ব্যাপারটা পরীক্ষা করার জন্য।
বেলা ঘুরে দাঁড়াও। সে গুঙিয়ে উঠল।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তার রাগটাই আমি শুনতে চাচ্ছিলাম। তার এই মিথ্যে রাগের ব্যাপারে সে খুবই যত্মবান। আমার অবচেতন মনের কাছ থেকে এটা একটা উপহার।
মাত্র কয়েক মুহূর্ত পরে আমি অনুভব করলাম সেটা চলে গেছে। কতিপয় দর্শক আমাকে দেখছিল। উৎসাহী। এটা দেখে হয়তো এমনটি মনে হচ্ছিল যে আমি তাদের দিকে যাচ্ছি অথবা যাচ্ছি না। তারা কীভাবে বুঝবে যে আমি এখানে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম এক ধরনের পাগলামীকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য?
হাই। তাদের ভেতর থেকে একজন ডাকল। তার কণ্ঠস্বর একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসী এবং কিছুটা ব্যঙ্গাত্বক। সে সাদা চামড়ার। তার মাথার চুলও সাদা। সে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যেন তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি বলতে পারলাম না কোথায় সে ছিল অথবা ছিল না।
কণ্ঠস্বরটা আমার মাথার মধ্যে ঢুকে গেল। আমি হাসলাম। আমার হাসি দেখে আত্মবিশ্বাসী মানুষটা উৎসাহর ভঙ্গি মনে করল।
আমি কি তোমাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারি? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে হারিয়ে গেছে। সে দাঁত খিঁচিয়ে বলল।
আমি খুব সাবধানে এগিয়ে যেতে লাগলাম। নর্দমাটা লাফ দিয়ে পেরুলাম। নর্দমাটার নিচ দিয়ে কালো পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
না, আমি হারিয়ে যাইনি।
এখন আমি তাদের অনেক কাছাকাছি। আমি ভরসা হারা দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালাম। আমি সেই খাটো কালো মুখের মানুষটাকে দেখতে পেলাম। তাকে এখন আর কোনভাবে আমার পরিচিত মনে হচ্ছে না। আমি এক ধরনের কৌতূহলী আবেগ নিয়ে হতাশ হলাম। সেই লোকটা কোন ভয়ংকর লোক ছিল না যে এক বছর আগে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করেছিল। আমার মাথার মধ্য থেকে সেই কণ্ঠস্বর পুরোপুরি দুর হয়েছে।
খাটো লোকটা আমার একদৃষ্টিতে তাকানো লক্ষ্য করছিল। আমি কি তোমার জন্য একটা ড্রিংক কিনতে পারি? সে অফার করল, নার্ভাস, কিছুটা চাটুকারিতার স্বরে, যেহেতু আমি শুধু তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।
আমি খুবই ইয়াং। আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দিলাম।
সে কিছুটা বিস্মিত। কেন আমি তাদের দিকে এভাবে এসেছি। আমি ব্যাখ্যা করার জন্য বাধ্যকতা অনুভব করলাম।
রাস্তার ওপার থেকে আপনাকে এমন দেখাচ্ছিল যেন আপনাকে আমি চিনি। দুঃখিত। আমার ভুল হয়েছে।
রাস্তার ওপাশ থেকে আসা সর্তক সংকেত বুঝতে পারছিলাম। তারা তেমন ক্ষতিকর মানুষ ছিল না যেমনটি আমি ভাবছিলাম। সম্ভবত তারা বেশ ভাল লোক। নিরাপদ। আমি আগ্রহ হারালাম।
ঠিক আছে। বিশ্বাসী ফর্সা লোকটা বলল আমাদের সাথে থাকো এবং পান করো।
অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমি সেটা সম্ভব না। জেসিকা দ্বিধাগ্রস্তভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ রাগে বড় বড় হয়ে যাচ্ছিল। সে আমার বিশ্বাসঘাতকায় অবাক হয়ে গিয়েছিল।
ওহ, সেটা মাত্র কয়েক মুহূর্ত।
আমি মাথা নাড়লাম এবং জেসিকার সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালাম।
এখন চলো আমরা খেতে যাই। আমি উপদেশ দিলাম। তার দিকে তাকাচ্ছিলাম না। যদিও দেখে মনে হচ্ছিল সেই মুহূর্ত থেকে জম্বির ধারণা থেকে আমি মুক্ত। আমি এখন অনেক দূরে। আমার মন আগের ঘটনায় পরিপূর্ণ। অসাঢ় মৃতদেহগুলো ফিরে আসতে পারবে না। আমি প্রতিটি মুহূর্ত তাদের ফিরে আসার ব্যাপারে আরো অনেক উদ্বিগ্নতার মধ্যে কাটাচ্ছিলাম।
তুমি কী কী ভাবছিলে? জেসিকা ধমক দিল। তুমি তাদের চেনোও না- তারা তো কোন ধরনের সাইকোপ্যাথিস্ট হতে পারত।
আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। আশা করছি সে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে না। আমি শুধু ভেবেছিলাম আমি তাদের ভেতর থেকে একজনকে চিনি।
তুমি এতটাই অদ্ভুত বেলা সোয়ান। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তোমাকে চিনি না।
দুঃখিত। আমি জানতাম না এর জবাবে আর কী বলতে হয়।
আমরা নিঃশব্দে হেঁটে মাকডোনাল্ডে পৌঁছুলাম। আমি বাজি ধরতে পারি সে আশা করছিল হাঁটার পরিবর্তে এই ছোট দূরত্বটুকুও তার গাড়ি নেব। যাতে সে ড্রাইভের জায়গা চিনে রাখতে পারে। যখন থেকে আমি এমনটি শুরু করেছি, তখন থেকে সে এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে খুব করে চাচ্ছিল- এই সন্ধ্যে যাতে এটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়।
আমি চেষ্টা করছিলাম খাওয়ার সময় কথা বলতে। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু জেসিকা তাতে সাড়া দেয়নি। আমি সত্যিই তাকে আঘাত করেছি।
যখন আমরা গাড়িতে করে ফিরে চললাম সে তার স্টেরিওতে তার প্রিয় স্টেশনে টিউন করল। এতটাই জোরে সাউন্ড বাড়িয়ে দিল যাতে সহজে কোন কথোপকথন শুরু করা না যায়।
আমি এই মিউজিকটাকে অবহেলা করার কোনরকম চেষ্টা করলাম না। আমি এই গানের লিরিকগুলো শোনার জন্য খুব বেশি মনোযোগ দিলাম।
আমি আবার অবশকারী অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অথবা যন্ত্রণার জন্য। কারণ ব্যথাটা অবশ্যই আসবে। আমি আমার ব্যক্তিগত নিয়মকানুন ভেঙেছি। পরিবর্তে আমার স্মৃতিশক্তিকে উসকে দিয়েছি। আমি তাদের দিকে এগিয়ে গেছি এবং তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছি। আমি তার কণ্ঠস্বর শুনেছি। সেটা আমার মাথার মধ্যে খুবই স্পষ্টই। সেটার মূল্য আমাকে দিতে হবে। আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত। বিশেষত যদি আমি নিজেকে আমার এর থেকে রক্ষা করতে না পারি। আমি খুব সতর্ক অবস্থা অনুভব করলাম। সেটাই আমাকে ভীত করে তুলল।
কিন্তু স্বস্তিটা আমার শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী আবেগ হয়ে দেখা দিল। স্বস্তি যেটা আমার মনের একান্ত গভীর থেকে বেরিয়ে আসছিল।
যতই আমি যুদ্ধ করছিলাম তার বিষয়ে না ভাবতে, আমি ভুলে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করে পারছিলাম না। আমি শেষ রাতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। ক্লান্তির কারণে ঘুমের ভেতর আমার প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে যাবে। এটার পুরোটাই চলে যাবে। আমার মন একটা বীজক্ষেত্র। আমি তার চোখের রঙের এমন কাউকে স্মরণ করতে চাই না। তার শীতল ত্বকের স্পর্শের অথবা তার কণ্ঠস্বরের গঠনের। আমি সেগুলো সম্বন্ধে ভাবতে চাই না। কিন্তু আমি অবশ্যই সেগুলো মনে পড়বে।
কারণ সেখানে মাত্র একটা জিনিস যেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, বেঁচে থাকার সামথ্য অর্জন করতে হলে। আমি জানি যে তার অস্তিত্ব আছে। সেটাই সবকিছু। বাকি সবকিছু সহ্য করতে হবে। যতদিন তার অস্তিত্ব থাকবে।
সে কারণেই আমি ফর্কে আটকা পড়েছি, ফাঁদে আটকা পড়ার মত। কেন আমি চার্লির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করলাম যখন তিনি আমাকে পরিবর্তনের জন্য অন্যত্র পাঠাচ্ছিলেন। সত্যি বলতে, এটা কোন ব্যাপারই নয়। কেউ এখানে আর কখনও ফিরে আসবে না।
কিন্তু যদি আমি জ্যাকসনভিলে যাই। অথবা যে কোন জায়গায় যেখানে আরো প্রাণবন্ত এবং অপরিচিত। তাহলে আমি কীভাবে নিশ্চিত হব যে সে প্রকৃত? এমন একটা জায়গায় যেখানে আমি কখনও তাকে কল্পনাও করতে পারব না। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে…এবং সে কারণেই আমি বাঁচতে পারব না।
তাকে স্মরণ করা নিষেধ থাকা সত্বেও, ভুলে যাওয়াটা ভয়ংকর। এটা একটা কঠিন পথ।
জেসিকা গাড়িটা আমার বাড়ির সামনে থামালে আমি বিস্মিত হলাম। পথটা খুব বেশি সময় নেয়নি। কিন্তু খুব একটা কম পথও মনে হলো না। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না। জেসিকা এতটা পথ কোন রকম কথাবার্তা ছাড়াই কীভাবে চলে এসেছে।
আমার সাথে বাইরে বেরুনোর জন্য ধন্যবাদ, জেস। আমি দরজা খুলতে খুলতে বললাম পুরো ব্যাপারটাই ছিল…বেশ মজার। আমি আশা করি যে মজাটাই উপযুক্ত শব্দ।
নিশ্চয়। সে বিড়বিড় করে বলল।
আমি দুঃখিত ওই… মুভির পরের ব্যাপারটায়।
যাই হোক না কেন, বেলা। সে এক পলকের জন্য জানালার ভেতর দিয়ে তাকাল আমার দিকে। তাকে দেখে মনে হলো ভেতরে ভেতরে রেগে উঠছে।
সোমবারে দেখা হবে।
ও হ্যাঁ। বিদায়।
আমি ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। সে আমার দিকে কোনরকম না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল।
চার্লি হলের মাঝামাঝি অপেক্ষা করছিলেন। তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা ছিল।
ওহো, বাবা। আমি অন্যমনস্কভাবে চার্লির দিকে ফিরলাম। সিঁড়ির ভেতর দিয়ে চলছিলাম। আমি তাকে নিয়ে অনেক বেশি ভাবছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম তিনি আমাকে ধরে ফেলার আগেই উপরে উঠে যেতে।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
আমি বাবার দিকে তাকালাম। বিস্মিত আমি জেসিকার সাথে পোর্ট এ্যাঞ্জেলসে একটা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম। তোমাকে তো আজ সকালে সেটা বললাম।
হুম। তিনি গম্ভীরভাবে শব্দ করলেন।
সব ঠিক আছে?
তিনি আমার মুখ দেখে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করছিলেন। তার চোখ জোড়া বড় হচ্ছিল যেন আশা করেননি এমন কিছু দেখেছেন। হ্যাঁ। এটা তো ভালই। তুমি মজা পেয়েছো?
নিশ্চয়। আমি বললাম আমরা দেখলাম জষিরা মানুষ খেয়ে ফেলছে। এটা ছিল মজার।
তার চোখ ছোট হয়ে গেল।
শুভরাত্রি বাবা।
তিনি আমাকে যেতে দিলেন। আমি তাড়াতাড়ি আমার রুমে চলে এলাম।
কয়েক মিনিট পরে আমার বিছানায় গেলাম। ব্যথাটা শেষ পর্যন্ত চলে আসবে আমি জানি।
এটা যেন হামাগুড়ি দেয়া জিনিসের মত ব্যথাটা চলে এল। যেন আমার বুকের ভেতরে একটা বিশাল গর্ত। গর্তটা বুকের ভেতর ফুটো করে দিয়েছে। আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বের করে নিয়ে আসছে। সেটা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। সেই ক্ষত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে, আমি জানতাম আমার ফুসফুস এখনও অকেজো। যদিও আমি বাতাসে শ্বাস নিচ্ছিলাম। আমার মাথা ঘুরছিল যেন ব্যাপারটা কোন কিছুই না। আমার হৃৎপিণ্ড খুব দ্রুত গতিতে বাড়ি খাচ্ছিল। কিন্তু আমি নাড়ীর স্পন্দনের কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমার হাত ঠাণ্ডায় জমে নীল হয়ে যাচ্ছিল। আমি হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগুলাম। আমার পাজরার হাড়গুলো যেন একত্রে জড়ো হয়ে গেছে। আমি এই অবশ অবস্থার জন্য চিৎকার দিলাম। কিন্তু এটা কোন শব্দই করল না।
এখন আমি আবিষ্কার করলাম আমি বেঁচে যেতে পারি। আমি সর্তক ছিলাম। আমি যন্ত্রণাটা অনুভব করছিলাম। যে যন্ত্রণাটা আমার বুকের ভেতর থেকে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। আমার হাতে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। ছড়িয়ে পড়ছিল মস্তিষ্কে। কিন্তু এটা সহ্য করা যায়। আমি এটা নিয়েও বেঁচে থাকতে পারি। এটা এমন নয় যন্ত্রণার অনুভূতি সারাক্ষণ আমাকে দুর্বল করে রাখবে। আমি এটার জন্য অনেক বেশি শক্তপোক্তভাবে বেড়ে উঠছি।
যাই হোক, আজ রাতে যাই ঘটুক না কেন–এবং যেখানেই জম্বিরা থাকুক না কেন, এড্রেনালিন অথবা হ্যালুসিনেশন যেটাই হোক, বেশ সচেতনভাবে আমাকে জাগিয়ে রাখবে।
এই প্রথমবারের মত, দীর্ঘ সময় পর, আমি জানতাম না পরের দিন সকালে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে।