০৪. শওকত বলল, হ্যালো, কে অনিকা

শওকত বলল, হ্যালো, কে অনিকা?

আনিকা জড়ানো গলায় বলল, আমার নাম অনিকা না। আমার নাম আনিকা। একটা আকার আছে।

তুমি আজ অফিসে যাও নি?

না।

শরীর খারাপ না-কি?

শরীর ভালো। বেশি রকম ভালো। এই জন্যেই অফিসে যাই নি। ঠিক করেছি— আজ সারাদিন মজা করব। একটা ক্যাব ভাড়া করে ময়নামতি যাব। ছোটবেলায় একবার ময়নামতি যাবার কথা ছিল, যাওয়া হয় নি। হ্যালো শোন, তুমি কি আমার সঙ্গে ময়নামতি যাবে?

আজ তো যেতে পারব না। আজ আমার ছেলে আসবে।

ভুলে গিয়েছিলাম। আজ পাঁচ তারিখ। ঘর গুছিয়ে রেখেছ?

মোটামুটি গুছিয়েছি।

আমাকে কী জন্যে টেলিফোন করেছ? পুত্রের আগমন সংবাদ দিতে, না অন্য কোনো কারণ আছে?

একটা জরুরি ব্যাপার নিয়ে তোমার সঙ্গে আলাপ করতে চাই।

আলাপ করো।

ঘটনাটা হলো কাল সন্ধ্যায় আমি বাসায় ফিরে দেখি, দরজার নিচ দিয়ে কে যেন একটা মুখবন্ধ খাম ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে।

খামে কী আছে? প্রেমপত্র?

খামে পাঁচশ টাকার বিশটা নোট। আচ্ছা শোন, টাকাটা কি তুমি দিয়েছ?

আমি? আমি টাকা দেব কোন দুঃখে?

হঠাৎ করে মনে হলো তুমি কি-না। অনেকদিন পরে ছেলে আসছে, এদিকে আমার হাত খালি। তুমি বিষয়টা জানো বলে…।

জনাব শোনেন, আমি মহিলা হাজী মুহম্মদ মহসিন না। আমি অতি কৃপণ এক মহিলা। যে খেয়ে না-খেয়ে টাকা জমায়। কী জন্যে জমায় জানেন, একদিন সে সংসার করবে। সংসারে টুকটাক খরচ করবে। একটা মাইক্রোওয়েভ অভেন কিনবে, একটা প্রেসারকুকার কিনবে, একটা রাইস কুকার…

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, তোমার শরীর খারাপ। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।

আমি নিজেই জড়িয়ে যাচ্ছি, আমার কথা তো জড়াবেই। কিসে জড়িয়ে যাচ্ছি জিজ্ঞেস করলে না?

কিসে জড়িয়ে যাচ্ছ?

দুঃখজালে জড়িয়ে যাচ্ছি। মানুষ জড়ায় প্রেমজালে, আমি জড়াই দুঃখজালে।

আনিকা, টেলিফোন রাখি?

কেন, এক্ষুণি কি তোমার ছেলেকে আনতে যেতে হবে?

ওকে আনতে যাব বিকেলে।

বিকেল হতে এখনো অনেক দেরি। কিছুক্ষণ কথা বলল।

কী নিয়ে কথা বলব?

কী নিয়ে কথা বলবে তাও আমি বলে দেব? আজকাল দেখি আমার সঙ্গে কথা বলার মতো কোনো টপিকও খুঁজে পাও না। নতুন কোনো অল্পবয়েসীর সঙ্গে কি প্রণয় হয়েছে? তার নাম কী?

তুমি কী সব কথা যে বলো!

অ্যাই শোন, তুমি পঞ্চাশ পৃষ্ঠার বাধানো খাতা জোগাড় কর। সেই খাতায় তুমি এ পর্যন্ত যে কটি মেয়ের প্রেমে পড়েছ, তাদের নাম-ধাম লিখে রাখ। প্রথমে লিখবে নাম। তারপর লিখবে বয়স। তারপর লিখবে কী কারণে প্রেমে পড়লে। সব শেষে লেখা থাকবে কী কারণে প্রেম চলে গেল।

অনিকা আমি রাখি?

আবার অনিকা বলছ? আমার নাম আনিকা। একটা আকার আছে। আচ্ছা ঠিক আছে, এখন থেকে তুমি আমাকে অনিকাই ডাক। অনিকা ডাকার একটা

সুবিধা আছে।

কী সুবিধা?

তুমি তোমার প্রেমিকাদের নাম অ্যালফাব্যাটিলি নিশ্চয় সাজাবে। সেখানে আমার নাম সবার আগে চলে আসবে। আনিকা নাম হলে অনেক পেছনে পরে যাব। প্রথমে স্বরে অ, তারপর স্বরে আ। হ্যালো, টেলিফোন কি রেখে দিলে?

না।

তুমি কতদিন পর আমাকে টেলিফোন করেছ, সেটা জানো?

না জানি না।

ঠিক এক মাস তিন দিন পর। তুমি শেষ টেলিফোন করেছিলে গত মাসের দুতারিখে। আজ পাঁচ তারিখ।

তুমি সব দিন-তারিখ মুখস্থ করে রাখ?

হ্যাঁ রাখি। তোমার সঙ্গে সম্পর্কিত সব কিছু মুখস্থ করে রাখি।

আনিকা শোন, আমি একটা দোকান থেকে টেলিফোন করছি। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলছি, ওরা নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছে।

বিরক্ত হচ্ছে না, ওরা খুশি হচ্ছে। তুমি নিশ্চয়ই ওদের মিনিট হিসেবে টাকা দেবে। তুমি যত বেশি কথা বলো ওদের ততই লাভ। তাছাড়া এখন তোমার কাছে দশ হাজার টাকার বান্ডেল আছে। টাকার সমস্যা নেই। আরো তিন মিনিট কথা বললা। তুমি কি জানো টেলিফোনে তোমার গলার স্বর অদ্ভুত সুন্দর?

জানতাম না। এখন জানলাম।

আমাদের বাসায় গতকাল সন্ধ্যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড হয়েছে।

কী কাণ্ড হয়েছে?

ধুন্ধুমার কাণ্ড। মিতুর স্বামী মিষ্টি, কাপড়-চোপড় নিয়ে উপস্থিত। বাবার জন্য পাঞ্জাবি, আমার এবং মার জন্যে শাড়ি।

মিতুর স্বামী মানে? মিতু কি বিয়ে করেছে না-কি?

হ্যাঁ, ও আগস্ট মাসেই বিয়ে করে ফেলেছে। তার স্বামীর কাঠের দোকান আছে। দোকানের নাম Wood king। মিতুর বর হচ্ছে বনের রাজা।

মিতু গোপনে বিয়ে করে ফেলেছে? আশ্চর্য তো!

আশ্চর্য হবার কী আছে! মিতু আমার মতো না। সাহসী মেয়ে।

তোমাদের বাড়ির সবার রিঅ্যাকশান কী? সবাই মেনে নিয়েছেন?

আমি এবং মা, আমরা দুজন খুশি। মা খুশি, কারণ মিতুর বনের রাজার চেহারা সুন্দর। লম্বা-ফর্সা। সে প্রতিটি বাক্যে তিনবার করে বলছে মা। আমি খুশি, কারণ সে আমার জন্যে যে শাড়িটা এনেছে সেই শাড়িটা সুন্দর। কালো মেয়েদের সব শাড়িতে মানায় না। এই শাড়িতে মানাবে। শাড়িটার রঙ হালকা গোলাপি। গোলাপির উপর রুপালি ফুল। তুমি আর্টিস্ট মানুষ। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ কালোর সঙ্গে হালকা গোলাপি এবং সিলভার কালার খুব ভালো যায়।

বুঝতে পারছি। তোমার বাবা–উনার রিঅ্যাকশান কী?

বাবার রিঅ্যাকশান যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং। ছেলে চলে যাবার পর বাবা আমাকে ডেকে বললেন–ঐ ছেলে যে পাঞ্জাবিটা এনেছে, সেটা বাথরুমে রেখে আয়। আমি বললাম, কেন? বাবা বললেন, আমি ঐ পাঞ্জাবির উপর পিশাব করব, এই জন্যে। হ্যালো শোন, তিন মিনিট পার হয়েছে। এখন তুমি টেলিফোন নামিয়ে রাখতে পার। যে তোমাকে দশ হাজার টাকা পাঠিয়েছে, তার প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ। সে টাকাটা পাঠিয়েছে বলেই তুমি আমাকে টেলিফোন করেছ।

টাকাটা কে দিতে পারে বলো তো? ইমনের মা না তো?

উনি পরিত্যক্ত স্বামীকে টাকা পাঠাবেন কী জন্যে!

সে জানে আমি হতদরিদ্র। ছেলে আসছে আমার সঙ্গে থাকতে। ছেলের যেন কষ্ট না হয়। সরাসরি আমাকে দিতে লজ্জা পাচ্ছিল বলে কাউকে দিয়ে খামে ভরে টাকাটা পাঠিয়েছে।

হতে পারে। সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

আমি কি টাকার ব্যাপারটা তাকে জিজ্ঞেস করব?

জিজ্ঞেস না করাই ভালো। তিনি যদি টাকাটা দিয়ে থাকেন, তাহলে কোনো কোনোভাবে সেটা তিনি তোমাকে জানাবেন।

কেন জানাবে?

জানাবেন কারণ কোনো মানুষ যখন কারোর উপকার করে, তখন তার একটা চেষ্টাই থাকে উপকারের বিষয়টা মনে করিয়ে দেবার। কোনো মানুষই মহাপুরুষ না। এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটা জায়গাতে মহাপুরুষরা বাস করেন। আর কোথাও বাস করেন না।

মহাপুরুষরা কোথায় বাস করেন?

ডিকশনারিতে।

আনিকা টেলিফোন রেখে দিয়ে উঠে বসল। নিজেই কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখল। জ্বর আগের মতোই আছে না-কি কিছুটা কমেছে বোঝা যাচ্ছে না। বালিশের নিচে থার্মোমিটার আছে। ইচ্ছা করলেই জ্বর দেখা যায়। দেখতে ইচ্ছা করছে না। বরং জ্বর নেই— এমন ভাব করে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। সাজতে ইচ্ছা করছে। মিতুর দেয়া শাড়িটা পরে কোনো একটা পার্লারে গিয়ে চুল বেঁধে এলে কেমন হয়? আজকাল সব মেয়েরা ফ্যাসিয়েল করে। এতে না-কি মুখের চামড়া কমনীয় হয়। আনিকা কখনো এই জিনিস করে নি। একবার করে দেখলে হয়। আনিকা গুনগুন করে গাইলো— ওগো সুন্দরী, আজ অপরূপ সাজে সাজো সাজো সাজো। একটি লাইন বলেই চুপ করে গেল। তার খুব সুন্দর গানের গলা ছিল। তাদের স্কুলের গানের টিচার শিবু স্যার বলতেন, তোর গানের গলা প্রতিমার চেয়েও মিষ্টি। তুই গান করলে খুব নাম করবি। গান শিখবি? আমি তোকে গান শেখাব। আমাকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। তুই শুধু ভালো দেখে একটা হারমোনিয়াম কিনবি।

আনিকা বাবাকে হারমোনিয়ামের কথা বলেছিল। মতিয়ুর রহমান অনেকক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, শুধু হারমোনিয়াম? ঘুংঘুর কিনে দেই? বাইজি হয়ে যা। তারপর তোকে পাড়াতে রেখে আসি। গান করবি, নাচ করবি। দুই হাতে টাকা কামাবি।

রেকর্ড শুনে শুনে শেখা একটা গান শিবু স্যার প্রায় জোর করেই তাকে দিয়ে স্কুলের রজতজয়ন্তীতে গাইয়েছিলেন। নজরুলের গান— ওগো মদিনাবাসী প্রেমে ধর হাত মম। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠান শেষে তাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, নাম কী মা তোমার? আনিকা ভয়ে ভয়ে নিজের নাম বলল। শিক্ষামন্ত্রী বললেন, তোমার গান শুনতে শুনতে হঠাৎ চোখে পানি এসে গেল। আমরা রাজনীতি করা ঘাঘু লোক। আমাদের চোখে পানি আনা কঠিন ব্যাপার। খুবই তৃপ্তি পেয়েছি গো মা।

আরো অনেক বড় বিস্ময় আনিকার জন্য অপেক্ষা করছিল। কিছুদিন পর শিল্পকলা একাডেমির ডিজি এক চিঠিতে জানালেন শিশুশিল্পীদের একটা দল তুরস্ক যাবে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য। নজরুলসঙ্গীতের তালিকায় আনিকার নাম আছে। সে যেন আগামী শুক্রবার থেকে রিহার্সেলে আসে।

তুরস্ক যাওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার, ভয়ে এই চিঠির কথা সে তার বাবাকে বলতেই পারে নি। স্কুল থেকে অ্যাসিসটেন্ট হেডমিসট্রেস রাবেয়া আপা এসেছিলেন। মতিয়ুর রহমান তার কাছ থেকে তুরস্ক বিষয়ক সব কথা শুনে গম্ভীর গলায় বললেন, আপনার কি মস্তিষ্কবিকৃতি হয়েছে? আমি আমার মেয়েকে একা একা পাঠাব তুরস্ক?

অ্যাসিসটেন্ট হেডমিসট্রেস বললেন, একা তো যাচ্ছে না, আরো অনেক ছেলেমেয়ে যাচ্ছে।

মতিয়ুর রহমান বললেন, আপনাদের মস্তিষ্ক বিকৃতিরোগ হয়েছে বলে তো আমার হয় নাই। আমার মেয়ে কোথাও যাবে না। মেয়ের যথেষ্ট সাহস হয়ে গেছে। আমাদের কিছু না জানিয়ে স্কুল ফাংশনে গান গায়। গোপনে গোপনে আঙ্গুরবালা। আমি তার বালাগিরি বের করছি।

তার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে কঠিন শাস্তি দেন। মনোয়ারার জন্য পারলেন না। কঠিন গালাগালি দিয়েই তাকে খুশি থাকতে হলো। শেষ পর্যায়ে শুধু বললেন–তোমাকে আর স্কুলে যেতে হবে না। বাসায় থাকবে। মাকে রান্নাবান্নায় সাহায্য করবে। অতি শিগগিরই তোমার বিবাহের ব্যবস্থা করছি। কোনো বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবার আগেই ঘর থেকে আপদ বিদায় করতে হবে। তোমার যা অবস্থা। হঠাৎ কোনো একদিন দেখব পেট বাধিয়ে ঘরে ফিরেছ।

 

মতিয়ুর খুব আগ্রহ নিয়ে টিভিতে রান্নার একটা প্রোগ্রাম দেখছেন। মুরগি মুসাল্লাম যে এত সহজে রান্না করা যায় তাঁর ধারণায় ছিল না। হাতের কাছে কাগজ-কলম থাকলে সুবিধা হতো লিখে রাখতে পারতেন।

আনিকাকে সাজগোজ করে বের হতে দেখে তিনি টিভি থেকে মুখ ফেরালেন যায় নি, সে এখন যাচ্ছে কোথায়? মিতুর বদ জামাইটা যে শাড়ি নিয়ে এসেছে, সেই শাড়িটাই সে পরেছে। দুয়ে-দুয়ে চার মিলানো যাচ্ছে। আনিকার গন্তব্য মিতুর শ্বশুরবাড়ি। অথচ তিনি কঠিন গলায় বলে দিয়েছিলেন— ঐ বাড়িতে যদি কেউ যায়, তাহলে তার ঠ্যাং ভেঙে ফেলা হবে।

তুই যাচ্ছিস কোথায়?

কাজে যাচ্ছি।

কিছুক্ষণ আগেই দেখলাম জ্বরে কে কে করছিস। এখন আবার কাজে যাচ্ছিস। কী এমন কাজ যে পটের রাণী সেজে যেতে হয়?

আনিকা বলল, পটের রাণী সাজি নি বাবা। শুধু নতুন একটা শাড়ি পরেছি।

তুই কি মিতুর শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিস? ঐ বাড়িতে গেলে আমি কিন্তু তোর ঠ্যাং ভেঙে দেব।

আনিকা শান্ত গলায় বলল, ঠ্যাং ভাঙাভাঙি তো অনেক করেছ। এখন এইসব বাদ দাও। টিভি দেখছিলে, টিভি দেখ।

মতিয়ুর রহমান কঠিন গলায় বললেন, তার মানে?

আনিকা বলল, যা বলেছি তার মানে তোমার না বোঝার কথা না।

তুই মিতুর শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস কি যাচ্ছিস না সেটা বল!

আনিকা বলল, হ্যাঁ যাচ্ছি। এখন তুমি কী করবে করো। হাতুড়ি নিয়ে আস। ঠ্যাং ভাঙো।

মতিয়ুর রহমান অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই মেয়ে মুখের উপর এমন ভঙ্গিতে কথা বলতে পারে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি। ঘটনা কী?

আনিকা দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো সে বাবার সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ তর্ক করতে চায়। মতিয়ুর রহমান মিইয়ে গেছেন। মেয়েকে কী বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। টিভিতে নতুন একটা রান্নার কথা বলছে–রাশিয়ান সালাদ। সেদিকেও মন দিতে পারছেন না।

মতিয়ুর রহমান ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশি ঘোরাঘুরি করা ঠিক না। দুদিন পর পর জ্বরজ্বারি হয়– এই লক্ষণও ভালো না। লিভারের কিছু হয়েছে কি-না কে জানে! ভালো একজন ডাক্তার দেখা। সবচে ভালো হলো রেস্টে থাকা।

আনিকা আর কিছু বলল না। বাবার সামনে থেকে বের হলো। তার কোথাও যাবার পরিকল্পনা নেই। এখন মনে হয় মিতুর শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারলে মন্দ হতো না। বাচ্চা একটা মেয়ে বউ সেজে কী করছে দেখে আসা যায়। সমস্যা একটাই—মিতুর শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা তার জানা নেই। রাইফেলস স্কয়ারে নাকি সুন্দর দোকানপাট হয়েছে। এখনো সে যায় নি। সেখানে যাওয়া যেতে পারে। কফির দোকান থাকলে এক কাপ কফি কিনে খাওয়া। সবচে ভালো হয় শওকতের বাসায় চলে যাওয়া। ছেলে তার সঙ্গে থাকতে আসছে, সে কী ব্যবস্থা করেছে দেখে আসা।

সে রিকশা নিল। রিকশায় উঠার পর মনে হলো, কোথাও না গিয়ে কোনো একটা সিনেমাহলে গিয়ে একা একা ছবি দেখলে কেমন হয়! ঠাণ্ডা সিনেমাহলে অনেক লোকের সঙ্গে বসে থাকা। ছবির আজগুবি কাহিনী দেখার মধ্যেও মজা আছে। নায়ক কোনো কারণ ছাড়া গান শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে এক গাদা মেয়ে উপস্থিত হলো। তারাও নাচ শুরু করবে। মন্দ কী? এই সময়ে সিনেমার কোনো শো আছে কি-না তাও আনিকার জানা নেই। রিকশাওয়ালা বলল, আপা, কোথায় যাবেন?

আর্নিকা বলল, এখনো বুঝতে পারছি না কোথায় যাব। আপনি এগুতে থাকুন। আমি ভেবে-চিন্তে বলব।

রিকশা এগুচ্ছে। মাথার উপর কড়া রোদ। অথচ আনিকার শীত লাগছে। বেশ ভালো শীত লাগছে। সে বুঝতে পারছে তার জ্বর আসছে। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসছে। তার উচিত বাসায় ফিরে যাওয়া কিন্তু তার বাসায় ফিরতে ইচ্ছা করছে না। রিকশা চলতে থাকুক। অনন্তকাল ধরে চলতে থাকুক। সে রিকশায় বসেই তার জীবন পার করে দেবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *