০৪. বেচারা আইনস্টাইন

৪. বেচারা আইনস্টাইন

কদিন ধরে রাজু আর রিতু একটু ভয়ে ভয়ে আছে। কারণ হচ্ছে যে বল্টু একটা মোটা বই নিয়ে খুব ব্যস্ত। বইটার নাম থিওরি অব রিলেটিভিটি : বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাজু বইটা ঘেঁটে দেখেছে, বারো বছরের ছেলের সেটা পড়ে কিছু বোঝার কথা না। নানা রকম ইকুয়েশন দিয়ে বইটি বোঝাই। তবে বল্টু হাল ছাড়ল না, সেটার পিছনে লেগে থাকল।

সেদিন বিকেলে নান্টু এসেছে। বল্টু তখন বইটা বন্ধ করে বলল, “বুঝলি নান্টু, আমি শেষ পর্যন্ত থিওরি অব রিলেটিভিটিটা মনে হয় বুঝতে পেরেছি।”

নান্টুকে সেটা নিয়ে খুব উত্তেজিত হতে দেখা গেল না। সে বলল,

বল্টু বলল, “থিওরি অব রিলেটিভিটি খুব ফাটাফাটি জিনিস। এটা দিয়ে অ্যাটম বোমা বানায়!”

নান্টুকে এবার একটু কৌতূহলী দেখা গেল; বলল, “সত্যি?”

“হ্যাঁ। একটা ফর্মুলা আছে, ই ইকুয়েলস টু এমসি স্কয়ার। সেটা কেমন করে বের করেছে বুঝতে পারছি না। অনেক কঠিন অঙ্ক।”

নান্টু বলল, “অ।”

“কিন্তু থিওরিটা বুঝে ফেলেছি। খুব সোজা। তোকে বললে তুইও বুঝবি।”

নান্টুর খুব বোঝার ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু বল্টুর উৎসাহ দেখে সে আর “না” করল না। বল্টু মোটা বইটা বের করে বলল, “এই দেখ। এখানে লেখা আছে। তোকে পড়ে শোনাই।” বল্টু তখন নান্টুকে পড়ে শোনাল, “আইনস্টাইনকে একবার থিওরি অব রিলেটিভিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, গরম চুলার কাছে বসে থাকতে হলে পাঁচ মিনিটকে মনে হয় পাঁচ ঘণ্টার মতো লম্বা। আবার একজন সুন্দরী মেয়ের কাছে বসে থাকলে পাঁচ ঘণ্টাকেও মনে হয় মাত্র পাঁচ মিনিট। এটাই হচ্ছে রিলেটিভিটি!” বল্টু বই বন্ধ করে নান্টুকে জিজ্ঞেস করল, “বুঝেছিস?”

নান্টু মাথা চুলকে বলল, “একটু একটু বুঝেছি।”

বল্টু মুখ গম্ভীর করে বলল, “রিলেটিভিটির থিওরির মাঝে টাইমের সাথে একটা ব্যাপার আছে। রকেটে করে গেলে টাইম স্লো হয়ে যায়। আমি রকেট কই পাব? কিন্তু আইনস্টাইন নিজে বলেছেন রিলেটিভিটির এক্সপেরিমেন্ট করতে রকেট লাগবে না। একটা চুলা আর একটা সুন্দরী মেয়ে পেলেই এক্সপেরিমেন্টটা করা যাবে।”

নান্টু বলল, “সুন্দরী মেয়ে তুমি কই পাবে?”

বল্টু মুখ গম্ভীর করে বলল, “সেটাই সমস্যা।”

নান্টুর সঙ্গে বল্টু কিছুক্ষণ সুন্দরী মেয়ে নিয়ে আলোচনা করল, কিন্তু কোথায় সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যাবে সে এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারল না। রাতের বেলা বল্টু তাই তার মায়ের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করল। রিতুকে ডেকে বলল, “আম্মু, একটা সুন্দরী মেয়ে কোথায় পাওয়া যায়, বলতে পারবে?”।

রিতু চোখ কপালে তুলে বলল, “কী বললি তুই? সুন্দরী মেয়ে?”

হ্যাঁ।”

“তুই সুন্দরী মেয়ে দিয়ে কী করবি?”

বল্টু গম্ভীর হয়ে বলল, “কাজ আছে।”

রিতু তখন গলা উঁচিয়ে রাজুকে ডেকে বলল, “তুমি শুনে যাও। তোমার ছেলে এই বয়সে সুন্দরী মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে!”

রাজু হা হা করে হেসে বলল, “তাই নাকি! আমাদের বল্টুর অনেক উন্নতি হয়েছে তো!”

বল্টু খুব বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমাদের সাথে কখনো কোনো দরকারি জিনিস নিয়ে কথা বলা যায় না।”

রিতু তখন মুখ গম্ভীর করে বলল, “কী করবি তুই সুন্দরী মেয়ে দিয়ে?”

“থিওরি অব রিলেটিভিটির একটা এক্সপেরিমেন্ট করব।”

“সেই এক্সপেরিমেন্টে সুন্দরী মেয়ে লাগবে?” বল্টু মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”

রিতু বলল, “আমাকে দিয়ে হবে না? আমার চেহারা তো অনেক সুন্দর।”

বল্টু একটা অধৈর্য হয়ে বলল, “না আম্মু, তোমাকে দিয়ে হবে না। তুমি সুন্দরী মেয়ে না, তুমি হচ্ছ আম্মু। আম্মুরা সুন্দরী মেয়ে হয় না।”

রিতু বলল, “ও আচ্ছা। তাহলে তোর ফিল্মের নায়িকা দরকার?”

“সেটা আমি জানি না। আমার সুন্দরী মেয়ে দরকার।”

বল্টু দেখতে পেল তার আব্লু-আম্মু দুজনই প্রাণপণে হাসি চাপার চেষ্টা করছে। সে অবশ্যি খুব অবাক হলো না। তার বিজ্ঞানের গবেষণা নিয়ে আবু-আম্মু সব সময়ই হাসি-তামাশা করছে।

পরের দিন নান্টুর সাথে দেখা হওয়ার পর বল্টু বলল, “আমি এক্সপেরিমেন্টটা নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। সুন্দরী মেয়ে নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে। কিন্তু চুলার এক্সপেরিমেন্টটা তো করতেই পারি। পারি না?”

নান্টু কোনো কিছু না বুঝেই বলল, “পারি।”

“আইনস্টাইন বলেছেন, চুলার কাছে থাকলে পাঁচ মিনিটকে মনে হয় পাঁচ ঘণ্টা। তার মানে বুঝতে পারলি?”

নান্টু মাথা নাড়ল, বলল, “না।”

“তার মানে, যে কাজটা কেউ পাঁচ ঘণ্টা লাগিয়ে করে, সে কাজটা যদি চুলার কাছে বসে করে তাহলে সে পাঁচ মিনিটে করে ফেলবে। তার কারণ তখন পাঁচ মিনিটই মনে হবে পাঁচ ঘণ্টা।”

নান্টু কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “কোন কাজটা পাঁচ ঘণ্টা লাগিয়ে করতে হয়?”

বল্টু চিন্তিতভাবে তার ঘরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “সেটাই তো বুঝতে পারছি না!”

হঠাৎ নান্টুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়, সে বল্টুর শার্টের হাতা টেনে ধরে বলল, “বল্টু ভাইয়া!”

“কী হয়েছে?”

“আপু তো সারাদিন টেলিফোনে কথা বলে তাই আম্মু সেদিন আপুকে বলেছে, কী তুই পাঁচ ঘণ্টা ধরে কথা বলিস!”

বল্টু হাতে কিল দিয়ে বলল, “ফার্স্ট ক্লাস! তার মানে মুনিয়া আপুকে দিয়েই এই এক্সপেরিমেন্টটা করা যাবে! মুনিয়া আপু যখন টেলিফোনে কথা বলবে তখন তাকে চুলার কাছে নিয়ে যেতে হবে।”

নান্টু একটু চিন্তিত মুখে বলল, “কেমন করে চুলার কাছে নিয়ে যাবে?” বল্টু মাথা চুলকে বলল, “সেটা চিন্তা করে বের করতে হবে।”

বল্টু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে পারে না, তাই তাকে দেখা গেল সে ঘরের এই মাথা থেকে অন্য মাথায় হেঁটে হেঁটে চিন্তা করতে শুরু করেছে। বল্টু যখন খুব মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করে তখন নান্টু তাকে বিরক্ত করে না। গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে–কাজেই সে গালে হাত দিয়ে বল্টুর দিকে তাকিয়ে রইল। বল্টু কিছুক্ষণ ঘরের এই মাথা থেকে অন্য মাথায় হেঁটে থেমে গিয়ে হাতে কিল দিয়ে বলল, “পেয়েছি!”

নান্টু বলল, “কী পেয়েছ?”

“কেমন করে করতে হবে সেটা পেয়েছি।” বল্টু গম্ভীর মুখে বলল, “আইনস্টাইন যখন বলেছেন চুলার কাছে নিতে হবে, তার মানে আসলে কী?”

নান্টু বলল, “কী?”

“তার মানে আসলে হচ্ছে গরম লাগানো! মুনিয়া আপুকে চুলার কাছে নিতে হবে না, তাকে আমরা গরম লাগাব।”

“কেমন করে গরম লাগাবে?”

“খুব সোজা। একটা লোহার শিক গরম করে ভেঁকা দেব।”

নান্টু আমতা আমতা করে বলল, “তুমি লোহার শিক গরম করে মুনিয়া আপুকে হেঁকা দেবে?”

“হ্যাঁ। কোনো সমস্যা আছে?”

“মুনিয়া আপু খুব ডেঞ্জারাস। তাকে লোহার শিক গরম করে ভেঁকা দিলে সে কিন্তু তোমাকে খুন করে ফেলতে পারে।”

বল্টু বুক ফুলিয়ে বলল, “করতে চাইলে করুক। আমি ভয় পাই নাকি? ঘরের ভেতর পিছলা খাওয়ার জন্যে একবার এক বোতল তেল ঢেলেছিলাম, যা মজা হচ্ছিল! তখন আম্মু পিছলা খেয়ে পড়ে কী রকম রেগেছিল তুই চিন্তাও করতে পারবি না। বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হলে একটু বিপদ। হতেই পারে! সে জন্যে ভয় পাওয়া যাবে না।”

কাজেই কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, নান্টু ও বল্টু একটা লোহার শিক হাতে নিয়ে নান্টুদের বাসায় হাজির হয়েছে। মুনিয়া বিছানায় আধশোয়া হয়ে একটী গল্পের বই পড়ছিল। নান্টু-বল্টুকে দেখে মুখে হাসি এনে বলল, “এই যে নাট-বল্টু, তোমাদের কী খবর?”

বল্টু বলল, “কোনো খবর নাই।”

“তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে, কোনো একটা খবর আছে। তোমার হাতে ওইটা কী?”

বল্টু হাতের শিকটা লুকানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, “না, এটা কিছু না।”

মুনিয়া হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, “হাতের জিনিসটা লুকাতে লুকাতে বলছ এটা কিছু না! ঠিক আছে, তোমরা যখন আমাকে বলতে চাইছ না, আমি জিজ্ঞেস করব না!”

বল্টু মুনিয়ার হাসিটা লক্ষ করতে করতে আবিষ্কার করল, তার চেহারাটা বেশ ভালো, যখন হি হি করে হাসে তখন আরও ভালো দেখায়! সুন্দরী মেয়ের এক্সপেরিমেন্টটা কি মুনিয়া আপুকে দিয়ে করা যায়? একটু সময় চিন্তা করে সে বলল, “মুনিয়া আপু।”

“কী, সায়েন্টিস্ট সাহেব?”

“তুমি কি সুন্দরী মেয়ে?”

মুনিয়া কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে বল্টুর দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর এত জোরে জোরে হাসতে শুরু করল যে আর থামতেই পারে না! বল্টু একটু রেগে বলল, “কী হলো? তোমাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি, তুমি উত্তর দিলে দেবে আর না দিতে চাইলে দেবে না, কিন্তু তুমি এভাবে হাসছ কেন?”

হাসতে হাসতে মুনিয়ার চোখে পানি এসে গেল। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল, “আচ্ছা সায়েন্টিস্ট সাহেব, তুমিই বলো তোমার কী মনে হয়, আমি কি সুন্দরী মেয়ে?”

বল্টু মাথা ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে বলল, “হ্যাঁ, মনে হয় তোমাকে সুন্দরী মেয়ে বলা যায়। তোমার নাকটা মনে হয় একটু বেশি বড়, এটা আরেকটু ছোট হলে ভালো হতো।”

মুনিয়া নাকে হাত দিয়ে বলল, “আই অ্যাম ভেরি সরি যে আমার নাকটা এত বড়! এখন থেকে প্রত্যেক দিন আমি নাকটাকে টিপে টিপে

ছোট করার চেষ্টা করব।”

বল্টু বলল, “না মুনিয়া আপু, তোমার নাক টিপে ছোট করার দরকার নাই।”

“ঠিক আছ তুমি যখন বলছ তাহলে আমি আর টিপাটিপি করব না। এখন বলো, আমি সুন্দরী মেয়ে কি না সেটা জেনে কী করবে?”

বল্টু নান্টুর দিকে আর নান্টু বল্টুর দিকে তাকাল। মুনিয়া বলল, “কী হলো নাট-বল্টু? কোনো সিক্রেট মিশন?”

বল্টু বলল, “উঁহু। একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণা। থিওরি অব রিলেটিভিটি।”

মুনিয়া চোখ কপালে তুলল বলল, “সর্বনাশ! একেবারে থিওরি অব রিলেটিভিটি?”

“হ্যাঁ। খুবই সোজা এক্সপেরিমেন্ট?”

“কী করতে হবে এই এক্সপেরিমেন্টে?”

“তোমাকে কিছু করতে হবে না। তুমি চুপ করে বসে থাকো।”

মুনিয়া তাই বিছানায় পা তুলে চুপ করে বসে পড়ল। বল্টু মুনিয়ার এক পাশে বসল, নান্টু অন্য পাশে। বল্টু তখন তার পকেট থেকে রাজুর ঘড়িটা বের করে হাতে পরে নিল। তারপর বলল, “ওয়ান টু থ্রি!”

মুনিয়া জিজ্ঞেস করল, “এখন কী হবে?”

বল্টু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা এখন পাঁচ মিনিট তোমার পাশে বসে থাকব।”

“ব্যস?”

“হ্যাঁ। বল্টু গম্ভীর হয়ে বলল, “তুমি যদি সুন্দরী মেয়ে হও, তাহলে একটা খুবই মজার জিনিস হবে।”

“সেটা কী?”

“আগে থেকে বলা যাবে না।” বল্টু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুমি চুপ করে বসে থাকো।”

কাজেই মুনিয়া নিঃশ্বাস বন্ধ করে চুপ করে বসে রইল। ঠিক পাঁচ মিনিট পার হওয়ার পর বল্টু বলল, “নান্টু।”

“কী”

“তুই এখন ভেতরের ঘড়িতে দেখে আয় কয়টা বাজে। আমার ঘড়িতে বাজে চারটা পাঁচ। তার মানে ভেতরের ঘড়িতে বাজার কথা নয়টা পাঁচ।”

নান্টু ঘড়ি দেখতে ভেতরে চলে গেল, মুনিয়া অবাক হয়ে বল্টুকে জিজ্ঞেস করল, “কী বললে, সায়েন্টিস্ট সাহেব?”

“আমি বলেছি, এইখানে যখন পাঁচ মিনিট সময় পার হবে, বাইরে তখন পার হবে পাঁচ ঘণ্টা!”

“কেন?”

“আইনস্টাইন বলেছেন, সুন্দরী মেয়ের কাছে পাঁচ ঘণ্টা বসে থাকলেও মনে হয় মাত্র পাঁচ মিনিট বসেছে।”

মুনিয়ার কয়েক সেকেন্ড লাগল কথাটা বুঝতে। তারপর সে যা একটা কাণ্ড করল সেটা আর বলার মতো নয়। গলা ফাটিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগল। নান্টু ঘড়ি দেখে ফিরে এসে মুনিয়াকে এভাবে গড়াগড়ি খেতে দেখে বলল, “আপুর কী হয়েছে, বল্টু ভাইয়া?”

“বুঝতে পারছি না। মুনিয়া আপুর মনে হয় হাসি-রোগ আছে!” নান্টুর দিকে তাকিয়ে বল্লু জিজ্ঞেস করল, “কয়টা বাজে?”

নান্টু বলল, “চারটা পাঁচ। পাঁচ ঘণ্টা হয় নাই।”

বল্টু বলল, “তখনই মনে হচ্ছিল হবে না।”

নান্টু জিজ্ঞেস করল, “মুনিয়া আপা থেকেও বেশি সুন্দরী মেয়ে লাগবে?”

বল্টু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আইনস্টাইন মনে হয় খালি সুন্দরী মেয়ের কথা বলেন নাই। ভালো মেয়ের কথাও বলেছেন! মুনিয়া আপু খালি আমাদের নিয়ে হাসি-তামাশা করে।”

মুনিয়া হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার এটার কথা বলতেই হবে।”

নান্টু জিজ্ঞেস করল, “কাকে বলতে হবে?”

“সাদিয়াকে। এক্ষুণি বলতে হবে।”

মুনিয়া হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। নান্টু তখন বল্টুকে নিচু গলায় বলল, “আপু ফোন করতে যাচ্ছে!”

বলু হাতের শিকটা উঁচু করে ধরে বলল, “এইবার তাহলে অন্য এক্সপেরিমেন্টটা করে ফেলি!”

মুনিয়ার খুবই কপাল ভালো যে বল্টু আর নান্টু লোহার শিকটা চুলোর ওপর ধরে ঠিকমতো গরম করতে পারে নি। শিকটা গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বল্টুর হাতে গরম লাগতে লাগল, তাই সেটা বেশি গরম না করেই চলে এল। বসার ঘরে মুনিয়ার পিছনে সেটা নিয়ে গোপনে যেতে যেতে শিকটা আর সে রকম গরম ছিল না, তার কনুইয়ে তা দিয়ে হেঁকা দেওয়াটা খুব সহজ ছিল না। তা ছাড়া মুনিয়া সেটা দেখে ফেলে সময়মতো হাত সরিয়েও নিয়েছিল। তারপরও মুনিয়া গলা ফাটিয়ে যা একটা চিৎকার দিয়েছিল, তা আর বলার মতো নয়! বাসার সবাই আসতে আসতে অবশ্যি নান্টু আর বল্টু উধাও হয়ে গেল। দুজন যখন ছুটে পালাচ্ছে তখন নান্টু জিজ্ঞেস করল, “বল্টু ভাইয়া, এক্সপেরিমেন্টটা কি হয়েছে?”

“বুঝতে পারলাম না।”

নান্টু বলল, মনে হয় হয়েছে। আপু টেলিফোনটা রেখে দিয়েছে। এমনিতে আপু কয়েক ঘণ্টা টেলিফোন করে।”

সেদিন রাতে নান্টুর বাসায় নান্টুকে আর বল্টুর বাসায় বন্দুকে তাদের আম্মু-আব্বুর কাছ থেকে বিশাল একটা লেকচার শুনতে হলো। বল্টু ভেবেছিল একবার আইনস্টাইনের কথাটা বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বলল না। সে জানে, বলে কোনো লাভ হতো না। তারা বল্টুকে যে রকম বুঝতে পারে না, আইনস্টাইনকেও সে রকম বুঝতে পারে না। মানুষ যখন বড় হয় তখন তাদের বুদ্ধিশুদ্ধি আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *