০৪. ফাইভ হানড্রেড লেভেলের একটি ক্লাস

ফাইভ হানড্রেড লেভেলের একটি ক্লাস ছিল সাড়ে দশটায়। আনিস ক্লাসে ঢুকে দেখল, চেয়ারম্যান ড. হিন্ডারবেন্ট পেছনের দিকে বসে আছে। হিন্ডারবেন্ট একা নয়, অরগ্যানিক কেমিস্ট্রির ড. বায়ারও কফির পেয়ালা হাতে বসে আছে। হিন্ডারবেন্ট বলল, আমরা তোমার ক্লাসে বসতে পারি তো?

আনিস বলল, নিশ্চয়ই।

কোনো প্রশ্ন-টশ্ন আবার জিজ্ঞেস করো না, হা হা হা।

আনিস অস্বস্তিবোধ করতে লাগল। হঠাৎ করে তার ক্লাসে এসে বসার কারণ বোঝা যাচ্ছে না। তবে এরা তাকে পছন্দ করছে না, এটুকু পরিষ্কার বোঝা যায়। পছন্দ না হবার কারণ তার জানা নেই। কোনো কারণ থাকার কথাও নয়।

আনিস বক্তৃতা শুরু করল। ড. বায়ার কিছু শুনছে বলে মনে হল না। নিচু গলায় ফিসফিস করে কী-যেন বলছে হিন্ডারবেন্টকে। এক বার দু জনেই সশব্দে হেসে উঠল। হিন্ডারবেন্ট আনিসের দিকে তাকিয়ে বলল, সরি আনিস, তুমি চালিয়ে যাও। আনিস যেতে পারল না। ড. বায়ার হঠাৎ করে বললেন, তোমার ইংরেজি কথা আমি ঠিক ধরতে পারছি না, আনিস। তুমি কি আরেকটু স্লো যাবে?

তুমি তো নিজেই কথা বলছ, বায়ার। আমি স্নো বললেও কিছু যাবে-আসবে না!

দু-একটি ছেলে হেসে উঠল। হিন্ডারবেন্ট বলল, চালিয়ে যাও। তুমি চালিয়ে যাও!

আনিস দশ মিনিট আগে ক্লাস শেষ করে দিল। হিন্ডারবেন্ট উঠতে যাচ্ছিল, আনিস বলল, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে হিন্ডারবেন্ট।

বল!

আজকে হঠাৎ আমার ক্লাসে এসে বসলে কেন? পলিমার রিওলজিতে তোমার কোনো উৎসাহ আছে বলে তো শুনি নি।

হিন্ডারবেন্ট খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমরা বসেছি একটা জিনিস দেখতে। তোমার সম্পর্কে উীনের অফিসে একটা রিপোর্ট হয়েছে। বলা হয়েছে তোমার উচ্চারণ কেউ বুঝতে পারছে না।

রিপোর্ট কি ছাত্ররা করেছে?

তা জানি না। তুমি ডীনকে জিজ্ঞেস করতে পার। আমি অবশ্যি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তোমার কথা বুঝতে না পারার কোনো কারণ নেই।

ধন্যবাদ।

আনিস কফি খেতে গেল মেমোরিয়াল ইউনিয়নে। ড. এণ্ডারসন খাতা পত্র নিয়ে একটি টেবিল দখল করে বসেছিল। আনিসকে দেখেই গম্ভীর মুখে বলল তোমাদের বাংলাদেশের স্টল দেখে এলাম।

কী দেখে এলে?

লাইব্রেরিতে আন্তর্জাতিক একটা মেলা হচ্ছে। সেখানে তোমাদেরও একটা স্টল দেখলাম।

আনিসের মনে হল ড. এণ্ডারসন যেন হাসি গোপন করবার চেষ্টা করল।

তুমি কফি শেষ করেই যাও।

স্টলের ব্যাপারটি মিথ্যা নয়।

একটি প্রকাণ্ড টেবিল নিয়ে শফিক বসে আছে। শফিকের গায়ে একটি হাতাকাটা স্যাণ্ডো গেঞ্জি এবং পরনে সবুজ রঙের একটি লুঙ্গি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পোশাক। টেবিলে একটি ময়লা পাঁচ টাকার নোট, দুটি দশ পয়সা। আরেক পাশে একটি বড় ফুলস্কেপ কাগজে হলুদ মার্কার দিয়ে অ আ লেখা। আনিস স্তম্ভিত।

ব্যাপার কী শফিক?

আরো আনিস ভাই, আজকে ফর্মেসি ডিপার্টমেন্টে একটা চাকরির খোঁজে এসেছিলাম। শুনি ইন্টারন্যাশনাল উইকি হচ্ছে, বাংলাদেশের একটা কিছু না থাকলে দেশের বেইজ্জতী। আমার নিজের কাছে যা ছিল নিয়ে চলে এসেছি।

বল কী!

জিনিস কম থাকায় সুবিধা হয়েছে। দেশটা কোথায়, কী এইসব সবাই জানতে চাচ্ছে। হা হা হা। নামটা তো জানল, কী বলেন?

খালি টেবিল নিয়ে সাত দিন বসে থাকবে বুঝি?

আরে না। আজ বিকালেই রুনকিদের বাড়ি থেকে একগাদা জিনিসপত্র নিয়ে আসব দেখবেন। হুলস্থূল কারবার করব। এক মালয়েশিয়ান আমার স্টলের সামনে এসে দাঁত বের করে হাসছিল। শালার অবস্থাটা কী হয় কালকে দেখবেন। রুনকিকে নিয়ে আসব। দেশের ইজতের একটা ব্যাপার।

আনিস হাসিমুখে বলল, তোমার চাকরির কী ব্যবস্থা হবে? এই সাত দিন আর যাচ্ছে না। সেখানে?

আরে ভাই, রাখেন চাকরি। মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা এখন।

লোকজন কেউ কেউ এসে দাঁড়াচ্ছেও ঈলের সামনে। কেউ কেউ বিস্মিত হয়ে বলছে, কোন দেশের স্টল এটি?

বাংলাদেশের

কোথায় সেটি? প্যাসিফিক আইল্যাণ্ড?

না, এশিয়া মহাদেশে।

কত বড়ো দেশ সেটি? কত স্কয়ার মাইল?

কালকে বলতে পারব। কাল আসবেন।

লোকসংখ্যা কত?

আগামীকাল জানতে পারবেন। সব লিখে টাঙিয়ে দেওয়া হবে।

আনিস দূর থেকে দেখল, লোকজন আসছে না। শফিকের ষ্টলে। তবে বুড়োবুড়িরা কিছু কিছু আসছে। তারা আবার দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শফিকের বক্তৃতা শুনছে।

দেশটা অত্যন্ত সুন্দর। সবুজ। গাঢ় সবুজ। সমুদ্র আর নদী। বনে ঘুরে বেড়ায় ইয়া ইয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আগামী কাল যদি আসেন, তবে সেই রয়েল বেঙ্গলের ছবিও দেখতে পাবেন! দয়া করে আসবেন। ভুলবেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *