চোখ মেলতেই প্রিয় দৃশ্যটি দেখা গেল।
জানালার কাছে চায়ের কাপ। একটি চড়ুই পাখি কাঁপের কিনারায় বসে ঠোঁট ডুবিয়ে চা খাচ্ছে। মাঝে-মাঝে তাকাচ্ছে ফিরোজের দিকে। এই ব্যাপারটি প্রথম ঘটে ডিসেম্বর মাসের ১১ তারিখে। চায়ের দোকান থেকে যথারীতি জানালার পাশে গরম চা রেখে ডাক দিয়েছে–স্যার উঠেন। ফিরোজ ঘুম-ঘুম চোখে দেখেছে। হাত বাড়াতে বাড়াতে আবার ঘুম। ঘুম ভাঙল এগারটার দিকে কিচিরমিচির শব্দে। চায়ের কাপ ঘিরে পাঁচ-ছাঁটা পাখি। মহানন্দে কাঁপে ঠোঁট ডুবিয়ে কিচিরমিচির করছে। সেই থেকে রোজ হচ্ছে। পাখিগুলি মনে হয় অপেক্ষা করে থাকে কখন চা আনবে। সেই চা ঠাণ্ডা হবে। রোজ তাদের সে সুযোগ হয় না। বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফিরোজ কাপ টেনে নেয়। চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত। তিক্ত, কষা ও মধু–এই তিন স্বাদের সমাচার। ভোরের প্রথম শারীরিক আনন্দ।
আজ ফিরোজের কোনোই কাজ নেই। কোথাও যেতে হবে না। দেনদরবার করতে হবে না। সাধারণত যে দিন কোনো কাজ থাকে না, সে দিন সূর্য ওঠার আগেই ঘুম ভেঙে যায়। কাজের দিন কিছুতেই ঘুম ভাঙতে চায় না। মনে হয় আরো খানিকক্ষণ শুয়ে থাকি। আজ উল্টো ব্যাপার ঘটল। কোনো কাজকর্ম নেই, তবু বেশ খানিকক্ষণ ঘুমুনো গেল। চড়ুই পাখিটি কৃতজ্ঞ চোখে তাকাচ্ছে।
তার সঙ্গীরা আজ কেউ আসেনি। এলেও চা-পর্ব সমাধা করে চলে গিয়েছে। এই ব্যাটা যাচ্ছে না। হিন্দি ভাষায় ফিরোজ পাখিটির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা চালোল। পশু পাখিরা বাংলা ভাষাটা তেমন বোঝে না।
কেয়া ভাই চিড়িয়া, হালাত কেয়া?
চিকির চিকির চিক।
চিনি উনি সব ঠিক থা?
চিকির চিকির।
আউর এক দফা হোগা কেয়া নেহি?
চিক চিকির চিকির।
ফিরোজের ধারণা, পাখিরা মোর্স কোডে কথা বলে। চিকির এবং চিক এই দু’টি শব্দই নানান পারমুটেশন কম্বিনেশনে বেরিয়ে আসছে। এই বিষয়ে একটা গবেষণা হওয়া উচিত। সময় থাকলে দু’একজন পক্ষী বিশারদের সাথে কথা বলা যেত। পশুপাখিদের ভাষাটা জানা থাকলে নিঃসঙ্গ মানুষদের বড় সুবিধা হত।
ফিরোজ টুথপেস্ট হাতে বারান্দায় এল। তার ঘর দোতলায়। একটি শোবার ঘর। জানালাবিহীন অন্য একটি কামরা একশ ওয়াটের বাতি জ্বালালেও অন্ধকার হয়ে থাকে। সেই ঘরের উল্টো দিকে বাথরুম, যা অন্য এক ভাড়াটে রমিজ সাহেবের সঙ্গে শেয়ার করতে হয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, যখনি ফিরোজের বাথরুমে যাবার দরকার হয়, তখনি রিমিজ সাহেবকে বাথরুমের ভেতর পাওয়া যায়। ভদ্রলোকের ব্যাপার সব অদ্ভুত। বাথরুমে একবার ঢুকলে আর বেরুবেন না। ফিরোজের ধারণা, বসে থাকতে-থাকতে ভদ্রলোক ঘুমিয়ে পড়েন।
এই যে ব্রাদার, অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।
রমিজ সাহেব খুক-খুক করে দুবার কাশলেন।
আজি অফিসে যাননি? এগারটা বাজে, এখনো বাথরুমে বসে আছেন?
আবার খুক-খুক কাশি। নাক ঝাড়ার শব্দ।
বেরিয়ে আসুন ভাই। খানিক্ষণ পর না-হয় নতুন উদ্যমে আবার যাবেন। বাথরুম তো পালিয়ে যাচ্ছে না।
রমিজ সাহেব ভয়ঙ্কর বিরক্ত হয়ে বের হয়ে এলেন। কড়া গলায় বললেন, রোজ রোজ এইসব কী বাজে কথা বলেন?
বাজে কথা কি বললাম?
এইসব আমি পছন্দ করি না। খুবই অপছন্দ করি। দরজায় ধাক্কাধাব্ধি করেন কেন? এইটা কী-ধরনের ভদ্রতা?
আজ কিন্তু ধাক্কা দিইনি।
অভদ্র ছোকরা।
রমিজ সাহেব রাগে গর-গর করতে-করতে নিজের ঘরে গেলেন। ভদ্রলোক সম্ভবত অসুস্থ। গলায় মোটা মাফলার। চোেখ-মুখ ফোলা-ফোলা। অফিসেও যাননি। ফিরোজ কিঞ্চিৎ লজ্জিত বোধ করল। একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রসিকতা করা ঠিক হচ্ছে না। রসিকতার প্রচুর বিষয় আছে।
বেরুতে-বেরুতে সাড়ে চারটা বেজে গেল। একতলার বারান্দায় বাড়িওয়ালা বসে আছেন। আজ তাকে দেখে চট করে সরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি ছিল। গত সপ্তাহেই সেটা দিয়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাড়িওয়ালার ছোট মেয়েটির জন্যে সে একজন পাত্রের খোঁজে আছে, এমনও বলেছে। এটা বলার দরকার ছিল। কারণ বাড়িওয়ালা হাজি আসমত আলি ওপরের দু’জন ভাড়াটোকে উৎখাত করতে চাইছেন। সেখানে নাকি তাঁর বড় জামাই থাকবেন। বড় জামাইয়ের চাকরি নেই। বাড়ি-ভাড়া দিয়ে থাকতে পারছেন না। চাকরিবাকরির কোনো ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন।
ফিরোজ আঁতকে উঠে বলেছে, খাল কেটে লোকজন কুমির আনে, আপনি তো হাঙর আনার ব্যবস্থা করছেন! জামাই এক বার ঢুকলে উপায় আছে?
হাজি আসমত আলি বলেছেন, করব কী তাহলে, ফেলে দেব?
অফকোর্স ফেলে দেবেন। জামাই, শালা এবং ভাগ্নে–এই তিন জিনিসকে কাছে ঘেঁষতে দেবেন না যদি বাঁচতে চান।
আপনি সবসময় বড় আজেবাজে কথা বলেন।
কোন কথাটা আজেবাজে বললাম?
এই নিয়ে আপনার সঙ্গে বক-বক করতে চাই না। আপনি ভাই ডিসেম্বর মাসের ত্ৰিশ তারিখে বাড়ি ছেড়ে দেবেন। এক মাসের নোটিশ দেবার কথা–দিলাম।
আচ্ছা, ছেড়ে দেব। উনত্রিশ তারিখেই ছেড়ে দেব। এক’দিন আগে।
মেয়ে বিয়ের প্রসঙ্গ এর পরপরই ফিরোজকে আনতে হয়েছে। কাল্পনিক এক পাত্র দাঁড় করাতে হয়েছে। এই ব্যাপারে হাজি সাহেব যে আগ্রহ দেখাবেন বলে আশা করা গিয়েছিল, তার চেয়েও বেশি দেখলাম। ফিরোজ যথাযোগ্য গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলল, ছেলে এম.এ পাস করেছে গত বছর। ফাস্ট ক্লাস পাওয়ার কথা ছিল, পায়নি। সেকেন্ড ক্লাস ফোর্থ হয়েছে। একটা পেপার খুবই খারাপ হয়েছে। দেখতে রাজপুত্র নয়, সেটা আগেই বলে দিচ্ছি। চেহারা মোটামুটি, তবে ভাল ফ্যামিলির ছেলে। ঢাকায় নিজের বাড়ি। পুরনো ধরনের বাড়ি। তবে ময়মনসিংহ শহরে বিরাট বাড়ি। চার বোন তিন ভাই। ভাই-বোনের বিয়ে হয়নি। ভাইরা সবাই স্টাব্লিশড।
ছেলে করে কী?
এখনো কিছু করে না। মাত্র তো পাস করল। তবে পারিবারিক অবস্থা যা, কিছু না করলেও হোসে-খেলে দুতিন পুরুষ কেটে যাবে।
ওদের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে?
আমার আপনি ফুপাতো ভাই। আপনি আপনার মেয়ের ছবি দিয়ে দেবেন, বাকি যা করার আমি করব। আরো ছেলে আছে আমার হাতে, নো প্রবলেম। ভাল কথা, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট এবং কালার–দুধরনের ছবিই দেবেন।
আচ্ছা দেব। ছবি দেব। যদি মেয়ে দেখতে চান, কোনো অসুবিধা নাই, যেখানে বলবেন। কালার ছবি ঘরে নেই, স্টুডিওতে তুলতে হবে।
তুলে ফেলুন। কালারের যুগ এখন।
বিয়ের ঐ আলাপ-আলোচনার পর বাড়ি ছাড়ার প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেল। দু মাসের ভাড়াও হাজি সাহেব চাওয়া বন্ধ করলেন। অবশ্যি ভাড়া দিয়ে দেয়া হয়েছে, তবু মনে সন্দেহ, আবার বাড়ি ছাড়ার প্রসঙ্গ ওঠে কি না।
হাজি সাহেব ফিরোজকে বেরুতে দেখেও কিছুই বললেন না। বিষন্ন ভঙ্গিতে বসে রইলেন ফিরোজ এগিয়ে এল, রোদ পোহাচ্ছেন?
জি।
খুব ভাল, শরীরে ভিটামিন সি প্রডিউস হচ্ছে।
ঐ ছেলের ব্যাপারে তো আর কোনো খবর দিলেন না।
ছবি? ছবি চাচ্ছে তো!
ছবি তো তুলে রেখেছি। চান না, তাই…
কী মুশকিল, চাইব না কেন! নিয়ে আসুন। আজ ছেলের বড় ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হবার সম্ভাবনা আছে। দেখা যে হবেই তা বলছি না–একটা প্রবাবিলিটি।
ছবি দেখে ফিরোজের মন উদাস হয়ে গেল। ভারি মিষ্টি চেহারার একটি মেয়ে। চোখ ছল-ছল করছে। হাজি সাহেবের মেয়েগুলি বোরকা পরে। ফিরোজ কখনো এদের মুখ দেখেনি। ভাগ্যিাস দেখেনি। দেখলেই এই বোরখাওয়ালির প্রেমে পড়ে যেতে হত।
আপনার মেয়ে তো খুবই রূপবতী।
হাজি সাহেব কিছুই বললেন না। ফিরোজ বলল, এই রকম একটা মেয়ের বিয়ে নিয়ে কেউ চিন্তা করে? আশ্চর্য!
হাজি সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, অন্য সমস্যা আছে।
কী সমস্যা?
ওর পায়ে একটু দোষ আছে।
কী দোষ?
পোলিও হয়েছিল।
तब्लन् कॅी!
হাঁটা-চলায় কোনো অসুবিধা নাই কিন্তু।
ফিরোজের অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল। তার প্রচণ্ড ইচ্ছে হতে লাগল বলে ফেলে–আমি এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। শেষ পর্যন্ত বলল না। তার আবেগ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
আমি টাকা পয়সা যথেষ্ট খরচ করব। এই মেয়েটা আমার খুব আদরের। যদি একটা ভাল ছেলে দিতে পারেন।
আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
ফিরোজ লম্বা-লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে গেল। যদিও তার খুব মন-খারাপ ছিল, রাস্তায় নেমে মন ভাল হয়ে গেল। কী সুন্দর ঝকঝকে রোদ! ঘন নীল আকাশ! বাতাস কত মধুর! বেঁচে থাকার মত আনন্দ আর কী হতে পারে?
ফিরোজ হাঁটছে ফুর্তির ভঙ্গিতে। কোনো কাজকর্ম নেই, চিন্তা করতেই ভাল লাগছে। যদিও উল্টোটাই হওয়া উচিত ছিল। তার ফুর্তির মূল কারণ হচ্ছে পকেট একেবারে ফাঁকা নয়। আটশ ত্রিশ টাকা আছে। এতগুলো টাকা পকেটে নিয়ে শুধু-শুধু দুশ্চিন্তা করার কোনো মানে হয় না। দুশ্চিন্তা মানেই পেপটিক আলসার, ক্ষুধামন্দা, অনিদ্রা। তারচেয়ে হাসিমুখে ঢাকার রাস্তায় হাঁটা অনেক ভাল।
ঢাকার রাস্তাগুলি এখন বেশ সুন্দর। হেঁটে বেড়ানোর জন্যে এবং ভিক্ষা করবার জন্যে আদর্শ। ফুটপাতে ভিক্ষুকরা কী সুন্দর ঘর-সংসার সাজিয়ে ভিক্ষা করছে!
ফিরোজ এই মুহূর্তে কৌতূহলী হয়ে একটি ভিক্ষুক-পরিবারকে দেখছে। এক বুড়ো তার দুপাশে দু’টি ছোট-ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ভিক্ষা করছে। তাদের একটু পেছনেই ইটের চুলায় রান্না হচ্ছে। ঘোমটা-দেয়া গৃহস্থ প্যাটার্নের একটি মেয়ে মাটির হাঁড়িতে চাল দিচ্ছে। এই পরিবারটির চোখেমুখে দুঃখ-বেদনার কোনো ছাপ নেই। বরং বুড়োর মুখে একটা প্রশান্তির ভাব আছে। বাচ্চা দু’টি একটু পর-পর দাঁত বের তরে হাসছে। ফিরোজ কী মনে করে একটা চকচকে পাঁচ টাকার নোট বুড়োর থালায় ফেলে দিল। ভিখিরিরা এই জাতীয় ঘটনায় আবেগে উদ্বেলিত হয়। এই বুড়ো নিস্পৃহ ভঙ্গিতে নোটটা নিজের বুক-পকেটে রেখে দিল। খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। থালায় একটি নোট থাকলে পয়সাকড়ি পড়বে না। ফিরোজের আফসোসের সীমা রইল না। টাকাটা জলে গেল। দাতা সাজাবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অদূর ভবিষ্যতে তাকে যদি এরকম টিনের থালা নিয়ে বসতে হয় এবং কেউ যদি একটা পাঁচ টাকার নোট ফেলে দেয়, তাহলে সে আনন্দের এমন প্রকাশ দেখাবে যে চারদিকে লোক জমে যাবে। দর্শকদের আনন্দের জন্যে সে বাদার-লাফ দিতেও রাজি আছে।
বাচ্চা দু’টির মধ্যে কী-কারণে যেন মারামারি লেগে গেছে। দু’জনই এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারছে। একজন মনে হচ্ছে খামচিবিশারদ। একেক বার খামচি দিয়ে ছাল চামড়া নিয়ে আসছে। জমাট দৃশ্য। কিন্তু বুড়োর এই দৃশ্যেও কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না। সন্ন্যাসীর নির্লিপ্ততা নিয়ে সে বসে আছে, রন্ধনরতা ঘোমটা-দেয়া মেয়েটিও কিছু বলছে না।
ফিরোজের ইচ্ছে করছে একটু দূরে দাঁড়িয়ে এই পরিবারটিকে দেখে-দেখে দুপুরটা কাটিয়ে দেয়। সেটা করা ঠিক হবে না। লোকে অন্য অর্থ করবে। যে মেয়েটি রাঁধছে। তার বয়স অল্প। মুখে লাবণ্য এখনো খানিকটা আছে। এই মেয়ের আশপাশে দীর্ঘ সময় থাকার একটি মানেই হয়। বুড়ো যে পাঁচটি টাকা পেযেও বিরস মুখে বসে রইল। তার মানেও এই। বুড়ো অন্য কিছু ভেবে বসেছে। ফিরোজ মগবাজারের দিকে লম্বা-লম্বা পা ফেলতে লাগল। এখন সে যাবে তাজিনদের বাসায়। তাজিন তার বড় বোন। মবগাজার ওয়ারলেস কলোনিতে থাকে। ফিরোজের যখন টাকা পয়সার টানাটানি হয় তখন দুপুরে এই বাড়িতে খেতে আসে।
কেমন আছিস রে আপা? তোর পুত্র-কন্যারা কোথায? বাসা একেবারে খালি মনে হচ্ছে!
তাজিন মুখ অন্ধকার করে রাখল।
হয়েছে কী? কথা বলছিস না কেন? কৰ্তার সঙ্গে আবার ফাইটিং?
তাজিন থমথমে গলায় বলল, তুই কি একটা মানুষ, না অন্য কিছু?
কেন?
রুমি এত করে বলে দিল তার জন্মদিনে আসাব জন্যে, তুই আসতে পারলি না? মেয়ে কাঁদতে-কাঁদতে অস্থিবি। বাচ্চাগুলি তোকে এত পছন্দ করে, আব্বা তুই এ-রকম করিস? ভালবাসার দাম দিতে হয় না?
খুব কেঁদেছিল?
জিনিসপত্র ফেলে-ছড়িয়ে একাকার করেছে, শেষে তোর দুলাভাইকে পাঠালাম তোর খোঁজে।
আপা, হয়েছে কি জান…আমাদের এক কলিগ…
চুপ কর, আব্বা মিথ্যা কথা বলতে হবে না। ভাত খেতে এসেছিস, খেয়ে বিদায় হ।
আজ তোদের রান্না কী?
তাজিন জবাব না-দিয়ে টেবিলে ভাত বাড়তে লাগল।
তোদের টেলিফোন ঠিক আছে আপা?
আছে।
তুই রেডি কর সব কিছু, আমি টেলিফোন কবে আসছি। দারুণ একটা খবব আছে। আগামী সপ্তাহে বিযে করছি।
এই দারুণ খবরেও তাজিনকে বিচলিত মনে হল না।
বিশ্বাস হচ্ছে না? এই নে, মেয়ে্র ছবি দেখা। কি, এখন বিশ্বাস হচ্ছে?
ফিরোজ টেলিফোন করতে গেল। বি কবিম সাহেবকে জিজ্ঞেস কবৰে, মতিন কাজটা কবেছে কি না। বি, করিম সাহেবকে পাওযা গেল। তিনি অত্যন্ত উৎসাহেব সঙ্গে বললেন, কে, ফিবোজ সাহেব নাকি?
আমার কি সৌভাগ্য। গলা চিনে ফেলেছেন।
ঠাট্টা করছেন নাকি ভাই?
পাগল হয়েছেন। আপনার সঙ্গে কি আমার ঠাট্টার সম্পর্ক?
আমার চিঠিটা নিয়ে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। বহু কষ্টে ব্যাটার ঠিকানা বের করতে হয়েছে।
কী বলেছেন উনি?
আপনার পারসোনাল টাচওয়াল পেনসিলের চিঠিটা পড়ে মুখ বিকৃত করে বলল বি. করিম এই শালা আবার কে? আমার কাছে পেনসিলে চিঠি লেখে, আস্পর্ধা তো কম নয়।
করিম সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে মেঘস্বরে বললেন, ফিরোজ সাহেব, একটা কথা শুনুন।
বলুন।
কেন সবসময। এ-রকম উল্টোপাল্টা কথা বলেন?
সত্যি কথা বলছি। শুধু-শুধু মিথ্যা বলব কেন?
ঐ ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে। আপনি তার কাছে এখনো যাননি। তিনি ঠিকানা বদলেছেন, এখন থাকেন রামকৃষ্ণ মিশন রোডে।
ও, আচ্ছা।
আপনি গেলেই উনি আপনাকে কাজ দেবেন।
মেনি থ্যাংকস।
ফিরোজ সাহেব।
জি।
আচার-আচরণ সাধারণ মানুষের মত করার চেষ্টা করুন। ইয়ারকি-ফাজলামি তো যথেষ্ট করলেন। বয়স কত আপনার?
পঁয়ত্ৰিশ।
বয়স তো মাশাআল্লাহ কম হয়নি। আরেকটা কথা।
বলুন, শুনছি।
ফখরুদিন সাহেবের বাড়িতে একবার যাবেন।
কেন?
ওনার মেয়ে টেলিফোনে আপনাকে চাচ্ছিল।
বলেন কী! কী-রকম গলায় চাইল?
কী-রকম গলায় মানে! প্রেম-প্ৰেম গলা, না। রাগ-রাগ গলা?
বি. করিম সাহেব তার উত্তর দিলেন না। টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। রাগে তাঁর গা জ্বলে যাচ্ছে। ফিরোজ হৃষ্টচিত্তে খেতে বসল। প্রচুর আয়োজন। টেবিলের দিকে তাকাতেই মন ভরে যায়।
সিরিয়াস এক বড়লোকের মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেছে, বুঝলে আপা। একেবারে লদকালদকি প্ৰেম।
তাজিন কিছু বলল না। একটা বিশাল আকৃতির সরপুঁটি ভাজা ফিরোজের পাতে তুলে দিল।
ঐ মেয়ে আমার খোঁজ দিনে চার বার পাঁচ বার করে অফিসে টেলিফোন করছে। বি. করিম সাহেবের কান ঝালাপালা।
সত্যি-সত্যি বলছিস?
এই যে মাছ হাতে নিয়ে বলছি। বাঙালির ছেলে মাছ হাতে মিথ্যা কথা বলে না।
মেয়েটার নাম কি?
অপালা। বিয়ের পর অপা করে ডাকব। অপালা শব্দটার মানে কী, জানিস নাকি?
জানি না। মেয়েটাকে ছবিতে যে-রকম দেখাচ্ছে আসলেও কি সে-রকম সুন্দর?
ফিরোজ ভাত মাখতে-মাখতে বলল, তুই একটা মিসটেক করে ফেললি রে আপা। ছবির মেয়ে আর ঐ মেয়ে দুই ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। তুই গুবলেট করে ফেলেছিস।
তাজিন রাগ করতে গিয়েও বলতে পারল না। তাদের পাঁচ বোনের পর এই এক ভাই। আদরে-আদরেই ওর মাথা নষ্ট হয়েছে। জীবনে কিছুই করল না। কোনো দিন যে করতে পারবে তাও মনে হচ্ছে না।
ফিরোজ।
বল।
সবটাই কি তোর কাছে একটা খেলা।
খেলা হবে কেন?
তাজিন আর কিছু বলল না। ফিরোজের খাওয়া দেখতে লাগল। কেমন মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে
খাচ্ছে। গালভর্তি দাড়ি। হঠাৎ দাড়ি রাখার সখ হল কি জন্যে কে বলবে? তার হাসি আসে না, রাগ
ধরে যায়। চড় মারতে ইচ্ছে করে।
দাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে রে আপা?
ভাল।
রবীন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথ ভাব চলে এসেছে না?
তাজিন কিছু বলল না। রবীন্দ্রনাথের মুখের গঠনের সাথে আমার মুখের গঠনের অদ্ভুত মিল আছে। চুল-দাড়িগুলি আরেকটু লম্বা হোক, দেখবি।
তখন কী করবি? একটা আলখাল্লা কিনবি?
এটা মন্দ বলিসনি আপা। একটা আলখাল্লা কিনলে হয়। রেডিমেড বোধহয় পাওয়া যায় না।
অর্ডার দিয়ে বানাতে হবে। তারপর সেই আলখাল্লা পরে বাংলা একাডেমির কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে সবাইকে ভড়কে দেব। চারদিকে ফিসফাস শুরু হবে গুরুদেব এসে গেছেন।
চুপ করা দেখি!
সরি, আমার আবার মনেই থাকে না তুই বাংলার ছাত্রী। দে, একটা পান দে; চমনবাহার থাকলে চমনবাহার দিয়ে দেয়।
অপালা যে-বার ক্লাস এইটে বৃত্তি পেল, সে-বার তার বাবা তাকে চমৎকার একটা উপহার দিয়েছিল। লিসবন থেকে কেনা মরক্কো চামড়ায় বাধাই-করা পাঁচশ পাতার বিশাল একটা খাতা। মলাটে একটি স্প্যানিস নর্তকীর ছবি। চামড়ায় এত সুন্দর ছবি কী করে আঁকা হল কে জানে! দেখলে মনে হয় মেয়েটি চামড়া ফাঁড়ে বের হয়ে এসে নাচা শুরু করবে।
ভেতরের পাতাগুলির রঙ মাখনের মতো। কী মসৃণ! প্রতিটি পাতায় অপূর্ব সব জলছাপ। গাছপালা, নদী আকাশের মেঘ।
ফখরুদ্দিন সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, উপহারটি মনে হয়। খুব পছন্দ হয়েছে?
আনন্দে অপালার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সে নিজেকে সামলে গাঢ় গলায় বলল, হ্যাঁ।
এখন থেকে এই খাতায় গল্প, কবিতা, নাটক–এইসব লিখবে।
এইসব তো আমি লিখতে পারি না বাবা।
লিখতে-লিখতেই লেখা হয়। চেষ্টা করবে। ঐ সব না পার, জীবনের বিশেষ বিশেষ ঘটনা লিখে রাখবে। এই যে তুমি বৃত্তি পেলে, এটা তো বেশ একটা বড় ঘটনা। সুন্দর করে এটা লিখবে। তারপর তোমার যখন অনেক বয়স হয়ে যাবে, চুল হবে সাদা, চোখে ছানি পড়বে তখন ঐ খাতাটা বের করে পড়বে, দেখবে কত ভাল লাগে।
আমি কোনোদিন বুড়ো হব না বাবা।
তাই বুঝি?
ফখরুদিন সাহেব ঘর কাঁপিয়ে অনেক্ষণ ধরে হাসলেন। চমৎকার সেই খাতায় প্রথম এক বছর অপালা কিছুই লিখল না। তার অনেক বার লিখতে ইচ্ছে করল, কলম দিয়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুন্দর পাতাগুলি নষ্ট করতে ইচ্ছে করল না। সে খাতা খুলে রেখে মনে মনে পাতার পর পাতা লিখে যেতে লাগল। অনেক লেখা পছন্দ হল না, সেগুলি মনে-মনেই কেটে নতুন করে লিখল।
ক্লাস নাইনে হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষার শেষ দিনে সে প্রথম বারের মত লিখল। সাধু ভাষায় লেখা সেই অংশটিই এই–
আজ আমার পরীক্ষা শেষ হইয়াছে। আমার মনে কোনো আনন্দ হইতেছে না। পরীক্ষা বেশ ভাল হইয়াছে। তবে কেন আমার আনন্দ হইতেছে না? আমি সঠিক জানি না। মাঝে-মাঝে খুব আনন্দের সময় আমার দুঃখ লাগে। আমি কাদিয়া ফেলি। গত বছর আমরা নেপালের পোখরা নামক একটি স্থানে গিয়েছিলাম। চারিদিকে বিশাল পাহাড়। কত সুন্দর দৃশ্য! বাবা এবং মার মনে কত আনন্দ হইল। বাবা ক্যামেরা দিয়া একের পর এক ছবি তুলিতে লাগলেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমার মনে খুব দুঃখ হইল। গলা ভার-ভার হইল। চোখ দিয়া পানি আসিতে লাগল। ভাগ্যিস কেহ দেখিতে পায় নাই।
অপালার খাতাটি ক্রমে ভরে উঠতে লাগল। ক্লাস টেনে উঠে প্রথম গল্প লিখল। বয়সের সঙ্গে তার গল্পটি মিশ খায় না। গল্পের নাম রাজ-নর্তকী। গল্পের বিষয়বস্তু পনের বছরের মেয়ের কলমে ঠিক আসার কথা নয়। শুরুটা এ-রকম :
রাজ-নর্তকী
মহিমগড়ের রাজপ্রসাদে থাকে এক নর্তকী। রাজসভাতে গান করে, নাচে। তার নাচ যে-ই দেখে সে-ই মুগ্ধ হয়। সেই রাজসভায় এক’দিন এলেন ভিনদেশী এক কবি। তিনি নর্তকীর নাচ দেখে মুগ্ধ হলেন। তার হাত জোড় করে বললেন, দেবী, আমি কি আপনার নাম জানতে পারি?
নর্তকী হাসিমুখে বলল, আমার নাম অপালা।
দেবী, আমি কি নিভৃতে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারি?
হ্যাঁ, পারেন। আসুন গোলাপ-বাগানে।
তারা দু’জন গোলাপ-বাগানে গেল। ফুলে-ফুলে চারদিকে আলো হয়ে আছে। রাজ-নর্তকী অপালা বলল, কী আপনার নিবেদন, কবি? আপনি আমার কাছে কী চান?
যা চাই তাই কি আমি পাব? এত বড় সৌভাগ্য সত্যি কি আমার আছে?
তা তো বলতে পারছি না। আগে আমাকে বলতে হবে, আপনি কি চান?
আমি আপনাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখতে চাই।
বেশ তো লিখুন।
আপনার অপূর্ব দেহ-সুষমা নিয়ে একটি কবিতা লিখতে চাই।
বেশ তো।
কিন্তু দেবী, তার জন্যে আপনার দেহটিকে তো আমার দেখতে হবে।
দেখতেই তো পাচ্ছেন। পাচ্ছেন না?
না, পাচ্ছি না। আপনার অপূর্ব দেহটি আড়াল করে রেখেছে কিছু অপ্রয়োজনীয় পোশাক। এইগুলি খুলে ফেলুন। পোশাক আপনার জন্যে বাহুল্য। এত সুন্দর একটি শরীরকে পোশাক ঢেকে রাখবে এটা কিছুতেই আমি মেনে নিতে পারছি না।
সে খানিকক্ষণ ভাবল, তারপর একে-একে খুলে ফেলল সব। শুধু গলায় রইল একটি চন্দ্রহার। সে চন্দ্রহারও খুলে ফেলতে গেল। কিন্তু কবি চেঁচিয়ে উঠলেন, না না, চন্দ্রহার খোলার দরকার নেই। চন্দ্রহার সরিয়ে ফেললে দেহের সমস্ত সৌন্দৰ্য একসঙ্গে আমার চোখে পড়বে। আমি তা সহ্য করতে পারব না।
গলায় শুধুমাত্র চন্দ্রহার পরে সে বাগানে হাঁটতে লাগল। আর রাজকবি একটি গাছের ছায়ায় তাঁর কবিতার খাতা নিয়ে বসলেন। আকাশ ঘন নীল। সূর্য তার হলুদ ফুল ছুড়ে দিচ্ছে চারদিকে। বাতাসে সেই হলুদ ফুলের নেশা-ধরানো গন্ধ। গাছে-গাছে পাখি ডাকছে।
গল্পের শেষ অংশ বেশ নাটকীয়। হঠাৎ বাগানে প্রবেশ করলেন রাজা। এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। রাজ-নর্তকী অপালার মৃত্যুদণ্ড হল। কবির চোখ অন্ধ করে দেয়া হল। অন্ধ কবি পথে-পথে ঘুরে বেড়ান এবং নর্তকীকে নিয়ে গীত রচনা করেন। অপূর্ব সব গীত। তিনি নিজেই তাতে সুর দেন। নিজেই গান। বনের পশু-পাখিরা পর্যন্ত সেই গান শুনে চোখের জল ফেলে।
পরবর্তী কয়েক পৃষ্ঠা জুড়ে কবির লেখা গীত। গীতগুলি গদ্যের মতো সরল নয়। ছেলেমানুষি ছড়া।
এই লেখার পর প্রায় দুবছর আর কিছু লেখা হয়নি। দুবছর পর হঠাৎ লেখা আমার জীবন। গদ্য এখানে অনেক স্বচ্ছ, গতিময়। হাতের লেখাও বদলে গেছে। আগের গোটা গোটা হরফ উধাও হয়েছে। এসেছে প্যাচানো ধরনের অক্ষর; আগের কোনো লেখায় কোনো রকম কাটাকুটি নেই। মনে হয় আগে অন্য কোথাও লিখে পরে খাতায় তোলা হত। আমার জীবন লেখাটিতে প্রচুর কাটাকুটি।
আমার জীবন
আমি কি খুব বুদ্ধিমতী? মনে হয় না। কেউ কোনো হাসির কথা বললে আমি বুঝতে পারি না। আজ বড় খালার বাসায় সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছিল। এটা যে ঠাট্টা, আমি বুঝতে পারিনি। কী নিয়ে কথা হচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। অবাক হয়ে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছি। বড় খালার মেয়ে বিনু হেসে গড়িয়ে পড়ছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না। বড় খালা বললেন, কম বোঝাই তোমার জন্যে ভাল। বেশি বুঝলে বা বুঝতে চাইলে ঝামেলায় পড়বে। আমি এই কথারও মানে বুঝলাম না। মন-খারাপ করে বাসায় চলে এলাম। সারা দুপুর ভাবলাম। তখন একটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার হলআমাকে বাবা এবং মা ছাড়া কেউ পছন্দ করে না। যেমন বড় খালা, তিনি ছোট খালার ছেলেমেয়েকে তুই করে বলেন, মেজো খালার ছেলেমেয়েকে তুই করে বলেন; আমাকে বলেন তুমি করে।
সন্ধ্যাবেল বাবাকে আমি এই কথাটা বললাম। বাবা চট করে খালাদের ওপর রেগে গেলেন এবং বলতে লাগলেন–যাও কেন তাদের বাসায়? আর যাবে না। ওরাও এ-বাড়িতে আসবে না। দারোয়ানকে বলে দেব এলে যেন গেট খোলা না হয়।
বাবার রাগ যেমন চট করে ওঠে তেমনি চট করে নেমে যায়। এইবার তা হল না। কী লজ্জার কাণ্ড! পরদিন সকালবেলা বাবা বড় খালাকে টেলিফোন করে বলেন–আপনি সবাইকে তুইতুই করে বলেন, আমার মেয়েটাকে তুমি করে বলেন কেন?
ভাগ্যিস বাবার এসব কাণ্ডকারখানা মা জানতে পারেননি। জানলে খুব মন-খারাপ করতেন। মার হার্টের অসুখ খুব বেড়েছে। নড়াচড়াই করতে পারেন না। এই অবস্থায় মন-খারাপ করার মত কোনো ঘটনা ঘটতে দেয়া উচিত নয়। কিন্তু বাবা এসব কিছু শুনবেন না। যা তার মনে আসে, করবেন। আমার মাঝে-মাঝে মনে হয় মার এই অসুখের মূল কারণ হয়ত-বা বাবা। কী লিখছি আবোল-তাবোল, হার্টের অসুখের কারণ বাবা হতে যাবেন কেন? তার মত ভাল মানুষ কজন আছে?