চতুর্থ অধিবেশন
গত সভা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। আমার একটু তাড়া ছিল। কেন ছিল তাও আমি অকপটে ব্যক্ত করছি। আমার গৃহিনী নাইট শোয় সিনেমা যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন।
কি সিনেমা? বাংলা না হিন্দি, ধর্মীয় না সামাজিক।
সম্পাদক হাসি-হাসি মুখে প্রশ্নকারীর দিকে তাকালেন, হিন্দি সিনেমা অবশ্যই কারণ ওই বস্তুটিই একমাত্র ফরমূলা যাতে প্রেম আছে, সংগীত আছে, আকাশ আছে, বাতাস আছে, জরা আছে, যৌবন আছে, প্রাচুর্য আছে, দরিদ্র আছে, সবার ওপরে আছে অধর্মের পরাজয়, ধর্মের জয়।
কি বই, কোন হল?
বইয়ের নাম ডোন্ট নো, জানি না। হল নয় প্রতিবেশীর বাড়ি, টি.ভি.-র ছবি।
আপনার ভূমিকা?
আমার ভূমিকা বাড়ি পাহারা দেওয়া এবং বেবি সিটিং।
এখনও আপনার বেবি? বিলম্বে বিবাহ অথবা…।
কোনটাই নয়। আমার নাতি, গ্র্যান্ড সান।
কেন, পুত্রবধূ কি উদাসীন?
না, তিনি শশ্রুমাতার অনুগামী। এই একটি ব্যাপারে দুজনের অদ্ভুত মিল। রতনে রতন। চেনে ভাল্লুকে চেনে শাঁকালু।
স্ত্রী এবং পুত্রবধু দুজনকেই কি আপনি ভাল্লুক বলতে চাইছেন?
আজ্ঞে না, দুজনেই রত্ন। স্ত্রী রত্ন। কিন্তু এ সবই হল সভাবহির্ভূত প্রসঙ্গ। সভার কাজে ফিরে আসা যাক।
সম্পাদক, সম্পাদক কোথায়?
এই তো এসে গেছেন। সুদীর্ঘ পরমায়ু।
কি হে বিলম্বের হেতু! তোমার আঙুলে ব্যান্ডেজ কেন? আঙুলহাড়া?
সম্পাদক বসতে-বসতে বললেন, আঙুলহাড়া নয়, আঙুলের খোসা ছাড়িয়ে ফেলেছি।
সে আবার কি! আলুরই তো খোসা ছাড়ায়, তোমার আঙুলটা আলু না কি হে।
ধরেছেন ঠিক, আলুর খোসাই ছাড়াতে গেসলুম, গিয়ে আঙুলের খোসা ছাড়িয়ে ফেলেছি।
গৃহিনী কি ধর্মঘট করেছেন?
আজ্ঞে না, তিনি হেড মিসট্রেস হয়েছেন।
হাইলি ইন্টারেস্টিং। কারুর স্ত্রী হেড মিসট্রেস হলে তাকে কি আলু ছাড়াতে হয়!
তাহলে খুলে বলি। ব্যাপারটা হল এইরকম। আমার একার রোজগারে সংসার চলে না, আমার স্ত্রী ফরচুনেটলি একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। সকালে স্কুল। ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি বেরিয়ে যান। আমি চা করে দি, ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দি। কোলের ছেলেটাকে খাঁচায় ভরে, তার ওপরেরটাকে পাহারায় রেখে বাজারে যাই। ফিরে এসে দ্রুত কুটনো কেটে বাটনা বেটে, দুধ জ্বাল দিয়ে, ডিমের ডালনা ভাত ইত্যাদি রাঁধি। দাড়ি কামাই, দুধ খাওয়াই। মাছের লোভ, কাটতে জানি না। তাই নেমন্তন্ন বাড়িতে চেয়ে-চেয়ে ছ-সাত পিস মাছ খাই। খেয়ে পরের দিন কাত হই। তার পরের দিন অফিসে যাই। দিস ইজ মাই লাইফ।
অ্যান্ড লাইফ ইজ লাইক দ্যাট।
দুঃখ করো না যদু, রাম শ্যাম যদু মধু, টম ডিক হ্যারি সকলের জীবনেই এমনি কিছু কাটা খোঁচা মেরে আছে। লাইফ ইজ নট এ বেড অফ রোজেস। গোলাপের সঙ্গেই কাটা থাকে। গালিব সাহাবকে স্মরণ করুন।
কয়দে হায়াৎ ও বন্দে গম, আসল মে দোনো এক হ্যায়।
মওৎ সে পহলে আদমি, গম মে নেজাৎ
পায়ে কিউ।
কিস্যু বোঝা গেল না।
বাংলা করলেই বুঝবেন–জীবনের বন্ধন আর দুঃখবন্ধন, দুটোই এক। মরার আগে দুঃখ থেকে পার পাওয়ার উপায় নেই দাদা, চিতাতেই চরম শান্তি। এই দেখুন আমার দুটো হাত, বাম। হস্ত আর দক্ষিণ হস্ত।
বক্তা জামার আস্তিন গুটিয়ে দুটো হাত সভার সামনে তুলে ধরলেন। এগজিবিট নাম্বার ওয়ান, নাম্বার টু। সকলেই সমস্বরে প্রশ্ন করলেন, হাতে আবার কি হল মশাই, মাশুল না হস্তশুল?
ভালো করে দেখুন, দেখে বলুন, এনি ডিফারেন্স? ইয়েস দেয়ার ইজ এ ডিফারেন্স। বাঁ হাতের চেয়ে ডান হাতটা মোটা।
হ্যাঁ, তাই তো, ঠিকই তো। কেন এমন হল? আপনার বাঁ-হাতের কারবার কি তেমন চলে না, উৎকোচ ইত্যাদি?
দিস ইজ অ্যানাদার স্টোরি। তাহলে শুনুন। নাইনটিন ফিফটিতে আই গট ম্যারেড।
লাভ অর নেগোসিয়েটেড?
বর্ণে না অসবর্ণে?
নর্মাল, নর্মাল। নর্মাল ডেলিভারির মতো নর্মাল ম্যারেজ। কিন্তু আনফরচুনেটলি ছানা কেটে গেল।
সে কি মশাই, বিবাহ কি দুগ্ধ, বাসী হলেই ছানা কেটে যাবে! না হরিণঘাটা, ছানা কেটেই আসবে!
প্রেশার, প্রেশার। প্রেশার কুকারের মতো ভালভ খুললেই তিন-তিনবার সিটি। বউয়ের ঠোঁট ফাঁক হলেই ফ্যাসস, বাড়ি মাত। সবেতেই তেনার অসন্তোষ।
তা অমন প্রেশার কুকারের মতো বউ বিয়ে করলেন কেন?
এ ব্যাপারে এক-এক এক্সপার্টের এক-এক মত। আহা বিয়ের পরেই তো প্রেশার কুকারের মতো হয়ে গেল। শাশুড়ী বলেন, মেয়ে তো আমার অমন ছিল না বাবা, একটু রাগী ছিল, সামান্য বায়না-টায়না করত, কোনও জিনিস মনে না ধরলে ঠুকে-ঠুকে খানিক কেঁদে সারাদিন ঘাড় কাত করে গো হয়ে বসে থাকত, সেইসময় অবশ্য তালে তাল রেখে না চলতে পারলে খামচে-টামচে দিত, কাপডিশ ছুড়ত। তা সে রেগে গেলে কে না অমন করে! খোঁচাখুঁচি করলে মরা বাঘও হালুম করে ওঠে। আর হবে নাই বা কেন, আমার হাই, বাপের হাই, বংশটাই হাই, হাই ফ্যামেলির হাই হই ব্যাপার।
তাহলে দেখছেন, বিবাহের পূর্বে কত কি দেখা উচিত, ফ্যামিলি হিসট্রি, হেরিডিটি, প্রেশার, সুগার, দাঁত চোখ নাক কান ব্লাড ইউরিন সুটাম স্টুল মান্টু এক্সরে ইসিজি।
তার মানে মেডিক্যাল বোর্ড বসানো উচিত।
অফ কোর্স। ব্যাপারটা যখন সারা জীবনের তখন মাল টেস্ট করে নেওয়াই উচিত। এই তো আমার ফার্মে যেসব মাল কেনা হয় সব স্যাম্পেল আগে ল্যাবরেটারিতে টেস্ট করে রিপোর্ট দেখে তারপর কেনা হয়।
থামুন। ওসব টেস্ট-মেস্ট আমাকে দেখবেন না। আমার এক জানা কেমিস্টের কলকাতায় দুটো বাড়ি হয়ে গেল। টু বিগ হাউসেস। সেরেফ সাপ্লায়ারের পয়সায়। একটা করে বড় পাত্তি ছেড়ে দিলেই অচল মাল সচল।
যেমন প্রেমে। প্রেম হল আঁধি। ব্লাইন্ডিং এফেক্ট অফ লাভ। প্রেমিকের চোখে ঘেঁটু ফ্লাওয়ারও লোটাস।
আহা, এনার তো প্রেম নয়, ফিফটিতে প্রেম তো এমন বুবনিক প্লেগের মতো ঘরে-ঘরে, মনে-মনে, জনে-জনে ছড়িয়ে পড়েনি। প্লেগও গলায়, প্রেমও গলায়। প্রেমের ফঁস পরেছি গলে, এখন আড়াই হাত জিভ সামনে পড়েছে ঝুলে।
আই থিংক।
কী থিংক!
আমার মনে হয় হোমিওপ্যাথি ক্যান সলভ দি প্রবলেম।
আমার বউকে আমি বিশাল হোমিওপ্যাথি দেখিয়েছি। এক-এক চোটে সিক্সটি ফোর।
না-না আমি তা বলছি না। হোয়াট আই মিন টু সে, বিয়ের আগেই বিফোর ম্যারেজ, একটা ডোজ…।
সে আবার কি? অসুখ না জেনেই ওষুধ! রাম না জন্মাতেই রামায়ণ!
আহা পুরোটা না শুনেই উত্তেজিত হন কেন! শুনুন প্রকৃত অভিজ্ঞ ডাক্তার মানুষের মুখ দেখেই মাল চিনে ফেলেন। ডক্টর রায়ের কথা মনে নেই। দশ হাত দূর থেকেই রোগ ধরে ফেলতেন। চেম্বারে রুগি ঢুকছে না তো রোগ ঢুকছে। আড়চোখে অ্যানাটমিটা একবার দেখে নিলেন। ইয়েস, লিভার ঝুলে কুঁচকির তলায় লতর-পতর করছে। গলব্লাডার থেবড়ে গেছে কি হার্ট ফানুসের মতো ফুলে উঠেছে, হাড়ে হাড়ে আর্থারাইটিস ঘুণ পোকার মতো কট্টর মটর করছে, ব্রেন একবগগা হয়ে গেছে।
ডক্টর রায়ের মতো ডাক্তার এ-যুগে পাচ্ছেন কোথায়? পেলেও বাবা তারকনাথের মতো অবস্থা। চেম্বারে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে, ভোলেবাবা পার লাগাও।
সেই জন্যেই তো হোমিওপ্যাথি। হোমোইয়স মিনস লাইফ। প্যাথস মিনস ফিলিং। তার মানে একাকার অনুভূতি। একজন হোমিওপ্যাথের চোখে মানুষ হল সোরা, যেমন ঋষির চোখে মানুষ হল কামিনী কাঞ্চনের দাস, ব্যবসায়ীর চোখে গলায় চাকু চালাবার মুরগি। পলিটিশিয়ানের চোখে ব্যালট পেপার। সেইরকম সব মানুষই সোরা, না হয়…।
হোয়াট ইজ সোরা? সোরা, গন্ধক আর কাঠ-কয়লা, বাজির মশলা। সোরা মিনস একত্সপ্লোসিভ। তার মানে মানব হল সোরা, মানবী হল গন্ধক, দুয়ে মিলে গানপাউডার।
আজ্ঞে না, সে সোরা নয়। মানুষের নেচার, মানুষের অসুখ কনট্রোল করছে তার হেরিডিটি। বংশানুক্রমে বিষাক্ত রক্ত লক্ষ-লক্ষ রুগি তৈরি করে চলেছে। ফর একজামপল ইওর টাক, রেসপনসিবল সোরা। আমার রাতকানা চোখ, সোরা, সম্পাদকের ব্লাড প্রেশার সোরা, সভাপতির হাঁপানি সেই সোরা।
কি তখন থেকে সোরা-সোরা করছেন, কবরেজ মশাই আমাকে বলেছেন, দেয়ার আর ওনলি থ্রি থিংস, জানবা। তিনটি মাত্র জিনিস, বায়ু পিত্ত আর কফ। মধ্যমা, অনামিকা আর তর্জনি পাশাপাশি নাড়ির ওপর স্থাপন করিয়া কায়মনে অনুভব করো। কোন নাড়ি বেগবান, বায়ুর কি পিত্তের, কি কফের।
ও হল ভৌতিক চিকিৎসা, বার্ধক্যে সান্ত্বনা। হোমিওপ্যাথির রুট চলে গেছে ইতিহাসে, শিল্পে, অলঙ্কার শাস্ত্রে। আমরা পেট থেকে স্ট্রেট নেমে আসছি এক-একটি সিমটমের আকারে। ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা নয়, ঘুমিয়ে আছে অসুখের অঙ্কুর সব মানুষের রক্তে।।
রূপভেদা প্রমাণানি ভাব-লাবণ্য-যোজনম।
সাদৃশ্যম বর্ণিকাভঙ্গম ইতি চিত্রং
ষড়ঙ্গকম।
যা বাব্বা! ঘুরে ফিরে সেই সংস্কৃত চলে এল? মানুষ হয়ে জন্মাবার মহা জ্বালা তো। এর চেয়ে আমার বেদান্ত ফার বেটার। এক খুঁয়ে সব উড়িয়ে দিয়েছে। তুমি নেই আমি নেই, কেউ নেই, কেউ নেই। হে মায়া প্রপঞ্চময়, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা।
সভাপতির বোধহয় একটু ঘুম-ঘুম এসে গিয়েছিল, তিনি একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, আপনাদের আলোচনা আমি হাফ শুনেছি, হাফ শুনিনি। এটা মনুষ্যক্লেশ নিবারণী সভা না আত্মোন্নতি বিধায়িনী সভা? সম্পাদক, সম্পাদক গেলেন কোথায়?
এই তো পাশেই আছি।
তোমাকে আমি বারবার বলছি সকলের চোখের সামনে একটা নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দাও, মনুষ্য ক্লেশ চোখে পড়ুক, তা না হলে এই আবোল-তাবোলই চলবে। নাও এখন তোলো, টেনে তোলো।
কাকে তুলব?
আমূর্খ! ডিরেইলড আলোচনাকে টেনে লাইনে তোলো! আমি তুলে দিচ্ছি।
না, আপনি আবার হোমিওপ্যাথিতে চলে যাবেন।
গেলেও সিমিলিরাস সিমিলিরাস কিওরেনটুর, বিষে বিষে বিষক্ষয়। উফ্ কি যে একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে না! ধরুন আমি বিয়ে করব।
এখনও করেননি?
হ্যাঁ-হ্যাঁ সে ভুল আমি অনেক আগেই করে বসে আছি। সাপোজ, সাপোজ আমি বিয়ে করব, এখন কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে আমার মেয়ে দেখার কোনও অধিকার নেই। প্রথমে আমার এলডার্সরা দফায়-দফায় যাবেন আসবেন। অনেকটা বাজার করার কায়দা। টিপেটাপে, উলটে-পালটে, দরদস্তুর করে পছন্দ। একবার অবশ্য আমাকে শুনিয়ে-শুনিয়ে বলা হবে, এইবার তাহলে ছেলে একবার মেয়েকে দেখে আসুক অর্থাৎ আমাদের পছন্দটাকে ডিটো মেরে আসুক। এই যে মেয়ে বাছাই হচ্ছে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞদের দিয়ে, মোস্ট আনসায়েন্টিফিক ওয়েতে। ইয়েস, চুল ঠিক আছে, ট্যারা নয়, হাসলে গালে টোল পড়ে না, খুব লম্বাও না, খুব বেঁটেও না, হাতে-পায়ে লোম নেই, পায়ের আঙুল ফঁক। নয়, কপাল উঁচু নয়, চিরুনদাতী নয়, সব ঠিক আছে লেকিন…
এর পরও লেকিন?
ইয়েস লেকিন। নো অ্যাস্ট্রোলজার। ফাঁইনাল দেখা দেখবেন ছেলের পক্ষে একজন হোমিওপ্যাথ। চৌষট্টি হোক, একশো আঠাশ হোক লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। মেয়ের বাবা নগদের সঙ্গে এই টাকাটা ধরে দেবেন। ওটাই হবে স্টেক মানি। ছেলে হল ঘোড়া, বাজী, বাজী, বাবাজি। হড়কে গেল তো সামান্য টাকাতেই গেল, ধরা পড়ল তো মেয়ের আস্তাবলে সারাজীবন বাঁধা রইল বাহন হয়ে। পক্ষিরাজের পক্ষসাতন। মুখে লাগাম, পিঠে জিন, তার ওপর কন্যা আরোহী, সারাজীবন, টগবগ, বগাবগ।
লেকিন হোমিওপ্যাথি কি দেখবেন, ভেতরটা? জিভ গলা চোখের তলা, কানের ভেতর, নাকে পেনসিল টর্চ ইত্যাদি?
ধুর, ওসব অ্যালোপ্যাথিক অভদ্রতা। হোমিও হল আর্টফ্যাকালটি–ভাবলাবণ্য যোজনম। খাজুরাহোর মূর্তি সাধারণ মানুষের চোখে একরকম, পুরাতত্ত্ববিদের চোখে আর-এক রকম। আমাদের চোখে পাত্র-পাত্রী, সুন্দর, অসুন্দর, বহিরঙ্গ বিচার, অন্তরঙ্গ বিচার হোমিওপ্যাথের হাতে। তিনি হিস্ট্রি নেবেন ছাপার ফর্মে–মানসিক ভাবসমূহ এবং সর্বাঙ্গীন তাবত লক্ষণচয়। তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ। মেয়ের বসার ধরন, মুখের ভাব, কপালের ভাঁজ, কানের লতি, নাকের ডগা, চোখের পাতা, চুলের গোড়া, দাঁতের পাটি। এরই মাঝে সার্চিং আইস ঘুরছে চারপাশে, আত্মীয়স্বজন, তাদের চেহারা, কণ্ঠস্বর, হাসির শব্দ, হাসতে গেলে কাশি আসে কিনা। দেওয়ালে পূর্বপুরুষদের ছবি। দেখছেন আর নোট করছেন, বর্তমান থেকে অতীতে, পূর্বপুরুষ, তার পূর্বপুরুষ, পিতা, পিতামহ, বৃদ্ধপিতামহ, বৃদ্ধ প্রপিতামহ, বংশের ডালে-ডালে পাতায়-পাতায় বিচরণ, লক্ষণ সেন, বল্লাল সেন, শেরশাহ, ঔরঙ্গজীব, আকবর, বাবর, মহম্মদ ঘোরী, ভায়া খাইবার পাশ, বোলান পাশ, কাবুল, গজনি, কান্দাহার, ইরান, ইরাক…
সে কি মশাই, আমাদের বউরা সব অতদূর থেকে রোল করতে করতে, রোল করতে করতে এসেছে নাকি?
হ্যাঁ-হ্যাঁ বাব্বা, ইসকো বোলতা হ্যায় এথনোলজি। সামনে পাত্রী, তার দেহলক্ষণ ফুঁড়ে দৃষ্টি চলেছে রক্তের ধারা অনুসরণ করে কচ্ছু বিষের সন্ধানে।
হোয়াট ইজ কচ্ছু? ইজ ইট বিচ্ছু?
বিচ্ছুর চেয়েও সাংঘাতিক হল কচ্ছু, কচ্ছু মিনস…যা লোডশেডিং হয়ে গেল মোশা।
অন্ধকারে সভাপতি হাই তুলিলেন এবং সভা এইখানেই বিপর্যস্ত হইল।