০৪. এলিতা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছল

এলিতা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছল ডিসেম্বর মাসের চার তারিখ। বুধবার সময় সকাল ন’টা। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি, জেট লেগ, অপরিচিত নতুন দেশে প্ৰথম পা দেয়ার শংকায় সে খানিকটা বিপর্যন্ত।

সে ছেলে সেজে আসে নি। মেয়ে সেজেই এসেছে। কালো টপের সঙ্গে লাল, হলুদ, সবুজ রঙের স্কার্ট। রঙগুলি একটির গায়ে একটি মিশে সাইকাডেলিক আবহ তৈরি করেছে। আমার সঙ্গে কাদের। সে বিড় বিড় করে বলল, কেমুন সুন্দর মেয়ে দেখছেন ভাইজান? সাক্ষাৎ হুর।

কাদোরের হাতে প্ল্যাকার্ড ধরা। সেখানে বাংলায় লেখা মি. এলিত। এলিতার আকার বাদ দেয়া হয়েছে নামের মধ্যে পুরুষ ভাব আনার জন্য।

এলিতা এগিয়ে এল।

আমি বললাম, তোমার না পুরুষ সেজে আসার কথা।

এলিতা বলল, পাসপোর্টে লেখা আমি মেয়ে, পুরুষ সেজে আসব কিভাবে?

মাজেদা খালা বলেছিলেন, এলিতা টিচার রেখে বাংলা শিখে এসেছে। তার বাংলার নমুনায় আমি চমৎকৃত। সে বলল, ‘আইচা টিক চে’। আমি বললাম, এর মানে কি? ? এলিতা বলল, এর অর্থ হয়। It’s ok. তখন বুঝা গেল। সে বলছে ‘আচ্ছা ঠিক আছে’। তার অদ্ভুত বাংলায় আচ্ছা ঠিক আছে হয়ে গেল ‘আইচা টিক চে।’

তার আরো কিছু বাংলা,

উষন লগা চে : উষ্ণ লাগছে। অর্থাৎ গরম লাগছে।

খাইদ ভাল চে : খাদ্য ভাল লাগছে।

কিনিত বিরাকত : কিঞ্চিৎ বিরক্ত।

পাঠকদের সুবিধার জন্যে তার সঙ্গে কথোপকথন সহজ বাংলায় লেখা হবে। তবে দু’একটা বিশেষ ধরনের বাংলা ব্যবহার করা হবে। কাদেরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার পর এলিতা অবাক হয়ে বলল, “বালকের চশখু পবিত্রতা হয়।” অর্থাৎ এই বালকের চোখের মধ্যে পবিত্রতা আছে।

ইয়েলো ক্যাব নিয়ে আমরা ঢাকার দিকে যাচ্ছি। সে আগ্রহ নিয়ে ঢাকা শহর দেখছে। তার চোখে খানিকটা বিস্ময় বোধ। সে বলল, তোমাদের শহরতো যথেষ্ট পরিষ্কার।

তুমি কি ভেবেছিলে? নোংরা ঘিঞ্চি শহর দেখবে?

হুঁ। আমাকে তাই বলা হয়েছে। রাস্তায় এত দামী দামী গাড়ি দেখেও অবাক হচ্ছি। রিকশা কোথায়? আমি শুনেছি। ঢাকা রিকশার শহর। গায়ে গায়ে রিকশা লেগে থাকে। ফুটপাত দিয়ে কেউ হাঁটতে পারে না। রিকশার উপর দিয়ে হাঁটতে হয়।

রিকশা প্রচুর দেখবে। এটা ভিআইপি রোড এই রোডে রিকশা চলাচল করে না।

আমি যে বাড়িতে পেইং গেস্ট থাকব। সেখানে কি যাচ্ছি?

মাজেদা খালার বাসায় তোমাকে রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। সেটা ঠিক হবে না। তিনি তাঁর স্বামীর গায়ে এসিড ছুড়ে মারার জন্যে আলমারিতে এক বোতল এসিড লুকিয়ে রেখেছেন। এসিড ছোড়াছুড়ির মধ্যে উপস্থিত থাকা কোনো কাজের কথা না।

এসিড ছুড়ে মারা মানে?

এসিড ছুড়ে মুখ ঝলসে দেয়া এ দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। মনে কর কোনো ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতে চাইল। মেয়ে রাজি না হলেই মুখে এসিড।

Oh God.

আমি যদি তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেই সঙ্গে সঙ্গে না বলবে না। কায়দা করে এড়িয়ে যাবে।

না বললে আমার মুখে এসিড মারবে?

সম্ভাবনা আছে। আমি তো এই দেশেই বাস করি।

লেগপুলিং করবে না। আমি কোথায় থাকব। সেই ব্যবস্থা কর।

তোমাকে হোটেলেই থাকতে হবে। পেইং গেষ্ট হিসেবে কেউ তোমাকে রাখতে রাজি হবে না।

কেন রাজি হবে না?

রজি না হবার অনেক কারণ আছে। মূল কারণ একটাই। মূল কারণ কেউ তোমাকে বলবে না। আমি বলে দেই?

দাও।

মূল কারণ হল তুমি পরীর মত রূপবতী একটি মেয়ে। এমন রূপবতী একজনকে কোনো গৃহকর্ত্রী বাড়িতে জায়গা দেবে না। তাদের স্বামী তোমার প্রেমে পড়ে যেতে পারে এই আশংকায়।

এলিতা শব্দ করে হাসছে। তার হাসি দেখতে এবং হাসির শব্দ শুনতে ভাল লাগছে। বাংলাদেশের কিশোরীরা শব্দ করে হাসে। একটু বয়স হলেই হাসির শব্দ গিলে ফেলে হাসার চেষ্টা করে। চেষ্টাতে সাফল্য আসে। এক সময় হাসির শব্দ পুরোপুরি গিলে ফেলতে শিখে যায়। হারিয়ে ফেলে চমৎকার একটি জিনিস।

এলিতা বলল, প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।

ঘুমিয়ে পর। যথাসময়ে জাগিয়ে দিব।

একবার ঘুমিয়ে পড়লে কেউ আমাকে জাগাতে পারে না।

চিন্তা নেই, ঘুমন্ত অবস্থাতেই ধরাধরি করে তোমাকে হোটেলের রুমে নিয়ে তুলব।

তুমি যে বাড়িতে থাক সেখানে আমাকে নিয়ে যাও।

আমি কোনো বাড়িতে থাকি না। মেসে থাকি। সেখানে তোমাকে নেয়া যাবে না।

কেন?

মোস হচ্ছে পায়রার খুপড়ির মত ছোট ছোট কিছু রুম। সেই সব রুমে আলো বাতাস ঢোকা নিষিদ্ধ। কমন বাথরুম। বাথরুম ব্যবহার করতে হলে লাইনে দাঁড়াতে হয়। মেসের মালিক মশা, মাছি, তেলাপোকা এইসব পুষেন।

বল কি। কোন পুষেন?

যারা মেসে থাকে তাদের জীবন অতিষ্ঠ করার জন্যে পুষেন।

তুমি ঠাট্টা করছ?

না।

আমি প্রথম তোমার মেসে যাব তারপর অবস্থা দেখে ডিসিসান নেব।

তা করতে পার।

আমি এখন ঘুমিয়ে পড়ব।

এমনি এমনি ঘুমিয়ে পড়বে? না-কি আমাকে ঘুম পাড়ানি গান গাইতে হবে?

তুমি ঘুমপাড়ানি গান জান?

জানি। তবে আমাদের দেশে পুরুষদের ঘুম পাড়ানি গান গাওয়া নিষিদ্ধ। ঘুম পাড়ানি গান শুধু মা গাইবেন।

আশ্চর্য তো।

আশ্চর্যের সবে শুরু। তুমি আরো অনেক আশ্চর্যের সন্ধান পাবে।

প্লীজ একটা ঘুম পাড়ানি গান গাও। আমি গাইলাম,

খুকু ঘুমালো
পাড়া জুড়ালো
বর্গি এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?

এলিতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তুৰ্গেনিভের এক উপন্যাস পড়েছিলাম, “যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থাতে সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত রূপবতী।” এলিতাকে প্রকৃত রূপবতী বলা যেতে পারে। রবীন্দ্ৰনাথ ইয়েলো ক্যাবে উপস্থিত থাকলে বিড় বিড় করে বলতেন–

দেখিানু তারে উপমা নাহি জানি
ঘুমের দেশে স্বপন একখানি,
পালঙ্কেতে মগন রাজবালা,
আপন ভরা লাবণ্যে নিরালা।

পকেটে মোবাইল বাজছে। মাজেদা খালা ধার হিসেবে আমাকে এই মোবাইল দিয়েছেন। যত দিন এলিতা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন মোবাইল আমার সঙ্গে থাকবে যাতে আমি সব সময় খালার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি।

হিমু এলিতা কি এসেছে?

হুঁ।

তার অবস্থা কি?

সে গোঁফ কমিয়ে মেয়ে হয়ে গেছে।

ফোনটা এলিতার কাছে দে কথা বলি। তোকে কিছু জিজ্ঞেস করা অর্থহীন।

এলিতা ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে তাকে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়েছি। এখন সে আছে গভীর ঘুমে। এই মুহুর্তে স্বপ্ন দেখছে।

বুঝলি কি করে স্বপ্ন দেখছে?

REM হচ্ছে। তাই দেখে বুঝছি?

REM আবার কি?

Rapid eye movement. চোখের পাতা দ্রুত কাঁপছে। সুন্দর কোনো স্বপ্ন দেখার সময় এই ঘটনা ঘটে। যখন ভয়ংকর স্বপ্ন কেউ দেখে তখন চোখের পাতার সঙ্গে ঠোঁটও কাঁপে।

আমার সঙ্গে চালাবাজি করবি না।

আচ্চা যাও করব মা।

এলিতা উঠবে কোথায়?

এখনো বুঝতে পারিছ না ঘুম ভাঙ্গুক তারপর ডিসিসান হবে।

ও তোর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে না কি?

না।

এক কাজ কর আস্তে করে মেয়েটার মাথা তোর কাঁধে এনে ফেল। ও যেন বুঝতে না পারে।

লাভ কি?

ঘুম ভেঙ্গে এলিতা দেখবে তোর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তাতে লজ্জা পাবে। লজ্জা থেকে প্ৰেম।

লজ্জা থেকে প্রেম হয় এটা জানা ছিল না।

খালা বললেন, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, অপমান থেকে প্রেম হয়, লজ্জা থেকে হয়।

আমি বললাম, তোমার কথায় মনে হচ্ছে সব কিছু থেকে প্রেম হয়। হয় না কি থেকে সেটা বল।

তুইতো বিপদে ফেললি।

খালা সুসংবাদ আছে এলিতা নিজে থেকেই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।

ভেরি গুড। একটা ছবি তুলতে পারবি?

ছবি কিভাবে তুলব?

তোকে যে মোবাইলটা ধার দিয়েছি সেখানে ছবি তোলার অপসান আছে। অপসানে যা। এক হাতে মোবাইলটা তোদের দু’জনের মুখের কাছে এনে বাটনে টিপ দে।

আমি ছবি তুললাম না। এলিতার নিদ্রাভঙ্গের অপেক্ষায় থাকলাম।

 

এলিতা এখনো ঘুমুচ্ছে। মেসে আমার বিছানায় বাচ্চাদের মত কুকড়িমুকড়ি ঘুম। এই ঘরে দিনের বেলাতেও কিছু ড্রাকুলা মশাকে দেখা যায়। ড্রাকুলা মশাদের বিশেষত্ব হচ্ছে এরা কানের কাছে ভন ভন করে না। সরাসরি রক্তপান। ধর তক্তা মার পেরেক টাইপ। ড্রাকুলা মশাদের হাত থেকে এলিতাকে বাচানোর জন্যে তার বিছানায় আলম মশারি খাটিয়ে দিয়েছেন।

ঘুম ভাঙ্গলেই এলিতার ক্ষিধে পাবে। সেই ব্যবস্থাও আলম করে রেখেছেন। গফরগায়ের গোল বেগুনের চাক্তি হলুদ লবণ মাখিয়ে রাখা হয়েছে। নতুন আলু কুচি কুচি করে লবণ পানিতে ভেজানো। দেশি মুরগির ডিমে সামান্য দুধ দিয়ে প্রবলভাবে ফেটানো হয়েছে। কালিজিরা চাল এনে রাখা হয়েছে। দশ মিনিটের নোটিসে খাবার দেয়া হবে।

আমি আলমের ঘরে বসে আছি। বালক হাজতি কাদের নেই। কোথায় গেছে কখন ফিরবে কিছুই বলে যায় নি।

আলম বলল, হিমু ভাই আমি চিন্তা করে একটা বিষয় পেয়েছি।

কি পেয়েছেন?

একটা রহস্যের সমাধান পেয়েছি।

এখন বলা যাবে না। অন্য কোনো সময় বলব।

আপনার যখন বলতে ইচ্ছা করবে, বলবেন।

আমি যে দিনরাত দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকি, খামাখা বসে थकेि नीं। छिा कझिं।

এখন কি নিয়ে চিন্তা করছেন?

আজ কোনো চিন্তা শুরু করতে পারি নাই। গতকাল চিন্তা করেছি, মশা নিয়ে।

মশা নিয়ে কি চিন্তা?

দুপুরবেলা মশা গালে কামড় দিয়েছে। গাল ফুলে গেছে তখন শুরু করলাম মশা নিয়ে চিন্তা। মানুষের যেমন শেষ বিচারের দিনে হিসাব নেয়া হবে মশারও কি হবে? আমাদের যেমন দোজখ বেহেশত আছে মশাদের কি আছে? দুষ্ট মশাদের আল্লাহপাক কি দোজখের আগুনে পুড়াবেন?

আপনার কি মনে হয়?

আমার মনে হয় পুড়াবেন না। অতি তুচ্ছ মশা মাছিকে শাস্তি দেয়ার কিছু নাই।

আমি বললাম, আল্লাহর কাছে মানুষতো মশা মাছির মতই তুচ্ছ। মানুষকে তিনি কেন শাস্তি দিবেন?

আলম গভীর হয়ে বলল, এটাও একটা বিবেচনার কথা। এটা নিয়ে আলাদা ভাবে চিন্তা করতে হবে।

 

এলিতার ঘুম ভাঙ্গল রাত আটটা বাজার কিছু আগে। লোডশেডিং হচ্ছে বলে বাতি জুলছে না। টেবিলের উপর দুটা মোমবাতি জ্বলছে। মশারির ভেতর এলিতা অবাক হয়ে বসে আছে। ঘরে আলো আধারের খেলা। এলিতা বিম্মিত গলায় বলল, আমি কোথায়?

আমি বললাম, তুমি আমাদের মেস বাড়ির একটা ঘরে।

আমার মাথার উপরে জালের মত এই তাবুটা কি?

একে বলে মশারি। ঘুমের মধ্যে যেন মশা বা মাছি তোমাকে বিরক্ত না করে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা।

আমি ভেবেছিলাম মারা গেছি। মৃত্যুর পর আমার আত্মাকে আটকে রাখা হয়েছে। কি যে ভয় পেয়েছিলাম।

ভয় কেটেছে?

হ্যাঁ। প্রচণ্ড ক্ষিধে পেয়েছে।

দশ মিনিটের মধ্যে তোমার খাবার ব্যবস্থা হবে। আজ আমরা যা দিব তাই খাবে। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে তোমাকে হোটেলে পৌঁছে দেব। এখানকার টয়লেটগুলির অবস্থা খুবই খারাপ তারপরেও একটা পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। একটা মোমবাতি হাতে নিয়ে আমার পেছনে পেছনে আসা আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

এলিতা বলল, আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার ভয় কেটেছে, আসলে কাটে নি। আমার এখনো মনে হচ্ছে। আমি মৃত আমার ‘soul’ তোমার সঙ্গে ঘুরছে।

আমি বললাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি আলো ঝলমল ফাইভস্টার হোটেলে যাবে তখন আর নিজেকে মৃত মনে হবে না।

খেতে বসে এলিতা বলল, কাঁটাচামচ কোথায়? আমিতো হাত দিয়ে খেতে পারি না।

আমি বললাম, বাংলাদেশের খাবার হাত দিয়ে স্পর্শ করে তারপর মুখে দিতে হয়। এটাই নিয়ম। একবেলা আমাদের মত খেয়ে দেখ।

এলিতা খাওয়া শেষ করল গম্ভীর মুখে। খাবার তার পছন্দ হচ্ছে কি না তা তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ভু্রু কুচকাচ্ছে তা দেখে মনে হয়। খাবার ভাল লাগছে না।

এলিতা খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, আমি আমার জীবনে ভাল যত খাবার খেয়েছি আজকেরটা তার মধ্যে আছে। আমি ‘Food’ শিরোনামে যে সব ছবি তুলব। সেখানে এই খাবারের ছবিও থাকবে। গরম ভাত থেকে ধোঁয়া উড়ছে। গরম ভাত একজন হাত দিয়ে স্পর্শ করছে।

আজকের খাবারের শেফ কে?

আমি আলমকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। এলিতা অবাক হয়ে বলল, আপনার চোখে পানি কেন?

আলম বলল, সামান্য খানা বিষয়ে এত ভাল কথা বলেছেন এই জন্যে চোখে পানি এসেছে। সিস্টার আমি ক্ষমা চাই।

এলিতা বলল, আপনার চোখের পানি দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। আপনি কি ফুল টাইম শেফ? কোন রেক্টরেন্টে কাজ করেন?

আলমের চোখে পানির পরিমাণ আরো বাড়ল। তার চরিত্রে যে এমন স্যাঁত স্যাঁতে ব্যাপার আছে তা এই প্রথম জানলাম। আমি এলিতাকে বললাম, আলম কোনো প্রফেশনাল কুক না। তিনি নিজের খাবার নিজে রেধে খান। দরজা জানালা বন্ধ করে দিন রাত চিন্তা করেন।

এলিতা বিস্মিত গলায় বলল, কি চিন্তা করেন?

জটিল সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে যেমন–গতকাল চিন্তা করছেন মশাদের soul আছে কি-না তা নিয়ে–

বল কি?

তোমার যদি চিন্তার কোনো সাবজেক্ট থাকে, আলমকে বললেই তিনি চিন্তা শুরু করে দেবেন।

চিন্তার জন্যে তিনি কি কোন ফিস নেন?

না।

আমরা এলিতাকে সোনারগাঁ হোটেলে নামিয়ে দিয়ে এলাম। আলম বললেন, সিস্টার যাই? এই দু’টি শব্দ বলতে গিয়ে তার গলা ভেঙ্গে গেল এবং চোখ ছলছল করতে লাগল। এলিতা অবাক হয়ে বলল, Oh God! what a strange man.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *