৩১.
এক্স থার্টি থ্রি আবার উঠে এল। রোমের আকাশে।
গত পনের মিনিট ধরে পরিস্থিতি ব্যাখ্য করে এসেছে ল্যাঙডন ভিট্টোরিয়ার কাছে।
কী করছি আমি? একই সাথে ভাবে সে, সুযোগ পাবার সাথে সাথে চাট্টিবাট্টি গোল করে আমার ঘরে ফিরে যাবার কথা।
কিন্তু একই সাথে টের পায় সে, কাজটা আদৌ সম্ভব নয়। অজান্তেই জড়িয়ে গেছে সে। বোস্টনে ফিরে যাবার চেষ্টা এখন পুরোদস্তুর স্বার্থপরতা। ইলুমিনেটির কাজের ধারা বোঝা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, পাশে বসা মেয়েটার সঙ্গ দরকার। এ পরিস্থিতিতেও দরকার তাকে।
আরো একটা ব্যাপার তাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। ভ্যাটিকান সিটিতে এন্টিম্যাটারের উপস্থিতি শুধু মানুষের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে না। ধ্বংস করে দিবে পৃথিবীর মূল্যবান কিছু জিনিসকে।
আর্ট।
পৃথিবীর সবচে বড় আর্ট কালেকশন এখন এক বিধ্বংসী টাইম বোমার উপর বসে আছে। ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে ষাট হাজারেরও বেশি শিল্পকর্ম আছে। আছে এক হাজার চারশো সাতটা রুমে।
মাইকেলেঞ্জেলো, দা ভিঞ্চি, বার্নিনি, বত্তিচেল্লি।
বারবার তার মনে একটা ব্যাপার ব্যাথা দিচ্ছে। প্রয়োজনে সবটাকে কি বের করে আনা সম্ভব? অসম্ভব।
তার উপর দেয়ালকর্মও কম নেই পুরো ভ্যাটিকান জুড়ে। সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা, সিস্টিন চ্যাপেল, মাইকেলেঞ্জেলোর ফ্রেম করা কাজ, মুসিয়ো ভ্যাটিকানো…
মানুষের সৃষ্টিশীলতার নিদর্শন। বহুমূল্য নয়, অমূল্য।
আসার জন্যে ধন্যবাদ। বলল ভিট্টোরিয়া।
দিবানিদ্রা ভেঙে গেল ল্যাঙডনের। তাকাল সে সুন্দর মেয়েটার দিকে। গভীরভাবে শ্বাস নিচ্ছে, আবেগ থামিয়ে রাখার চেষ্টা হিসাবে। মেয়ের ভালবাসা দেখা যাচ্ছে তার চোখে।
শর্টস বদলানোর কোন সুযোগ ছিল না ভিট্টোরিয়ার। এখনো পরে আছে স্লিভলেস টপ। শীতে কাঁপছে মেয়েটা।
সাথে সাথে জ্যাকেট খুলে এগিয়ে দিল ল্যাঙডন।
আমেরিকান ভদ্রতা? বলল কটাক্ষ করে ভিট্টোরিয়া, তার চোখে ধন্যবাদ।
ঝাঁকি খেল প্লেন, সাথে সাথে ল্যাঙডন কল্পনা করার চেষ্টা করল, কোন বদ্ধ কেবিনে নেই সে। আছে খোলা মাঠে।
যখন ব্যাপারটা ঘটে, সে ঠিকই খোলা মাঠে ছিল। তারপর অন্ধকার… প্রাচীণত্ব…
আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, মিস্টার ল্যাঙডন?
আমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি?
বেকায়দায় ফেলে দিল মেয়েটা প্রশ্ন করে।
বছরের পর বছর ধরে ধর্ম নিয়ে ইতিউতি কাজ করেও ল্যাঙডন কোন ধার্মিকে পরিণত হতে পারেনি।
আমি বিশ্বাস করতে চাই।
তাহলে, কেন নয়?
এবার হাসল ল্যাঙডন, মুচকে, আসলে ব্যাপারটা তত সরল নয়। বিশ্বাসের সাথে আরো বেশ কিছু ব্যাপার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মিরাকল, স্বর্গ, নরক, অদৃষ্টবাদ, ভাগ্য… বাইবেল, কোরান, বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো… সবগুলোতেই একই কথা, একই সুর প্রতিভাত হয়। সবখানে বলা আছে, না মানলে আমার কপালে নরক যন্ত্রণা। এমনভাবে শাসন করা কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাসে আসে না আমার।
এমন নির্লজ্জভাবে নিশ্চই ছাত্রদেরও বলেন না আপনি?
কী?
মিস্টার ল্যাঙডন, আমি সাধারণ মানুষ ঈশ্বর বলতে যা বোঝায় সেটায় বিশ্বাসের কথা বলছি না। আপনি আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে অপার্থিবকে দেখতে পান কি? অনুভব করেন কি, তার সাথে আছেন আপনি?
অনেকক্ষণ ধরে বুঝল ব্যাপারটা ল্যাঙডন।
আমি সীমা ছাড়িয়ে গেছি। বলল ভিট্টোরিয়া।
না। আমি আসলে…
ক্লাসে নিশ্চই আপনি বিশ্বাস নিয়ে শোরগোল পাকান?
অশেষ।
আর আপনি সেখানে শয়তানের ঝান্ডা বহন করেন। যদ্দূর মনে হয়।
হাসল ল্যাঙডন, আপনিও নিশ্চই একজন শিক্ষক!
না। কিন্তু আমি একজন শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। মুক্ত মানুষ।
হাসল ল্যঙডন আবারো। একটা প্রশ্ন করতে পারি, মিস ভেট্রা?
ভিট্টোরিয়া ডাকুন আমাকে। মিসেস ট্রো বুড়ি বুড়ি শোনায়।
ভিট্টোরিয়া, আমি রবার্ট।
তোমার একটা প্রশ্ন ছিল।
হ্যাঁ। একজন সায়েন্টিস্ট আর প্রিস্টের কন্যা হিসাবে ধর্ম সম্পর্কে তোমার মনোভাব কী?
ধর্মটা ভাষা বা পোশাকের মত। মূল ব্যাপার হল, যেখান থেকে জন্মেছি, সেই জড়তেই ফিরে যাব আমরা। শুধু যিনি সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।
তুমি বলতে চাও যে খ্রিস্টান হও আর মুসলিম, কোথায় জন্মাচ্ছ তার উপর নির্ভর করছে?
এটাই কি হবার কথা নয়? পৃথিবীর দিতে তাকাও।
তারমানে বিশ্বাস একটা গড পড়তা ব্যাপার?
মোটামুটি। বিশ্বাস সার্বজনীন। আমাদের কেউ কেউ যিশুর কাছে প্রার্থনা করে, কেউ যায় মক্কায়, কেউ কেউ স্টাডি করে সাব এটমিক পার্টিকেল। সবশেষে দেখা যায় আমাদের সবাই একটা ব্যাপারের জন্য ঘুরে ফিরছি। বিশ্বাস। সত্য।
বিষম খেল ল্যাঙডন এত সুন্দরভাবে সে কেন নিজেকে উপস্থাপিত করতে পারল না?
আর ঈশ্বর? তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর?
বিজ্ঞান বলে ঈশ্বর অবশ্যই আছেন। আমার মন বলে আমি ঈশ্বরকে বুঝতে পারি। আর হৃদয় বলে, এসব ভাবার কথা নয়।
তার মানে তুমি বিশ্বাস কর ঈশ্বর বাস্তব, কিন্তু তাকে, সেই পুরুষকে, আমরা কখনো বুঝতে পারব না?
সেই মহিলাকে, হেসে বলল ভিট্টোরিয়া, তোমাদের নেটিভ আমেরিকানরা ভালই মনে করে।
মাদার আর্থ!
গায়া। পুরো গ্রহটা এক জ্যান্ত প্রাণী। আর আমরা সবাই আলাদা আলাদা কাজে লাগা কোষ। আর তার পরও, আমরা একে অপরের সাথে যুক্ত। সেবা করছি পুরোটার।
যে পরিশুদ্ধতা দেখতে পাচ্ছে ল্যাঙডন তা বলার নয়।
মিস্টার ল্যাঙডন, আরো একটা প্রশ্ন করতে দাও…
রবার্ট।
মিস্টার ল্যাঙডন বুড়োটে শোনায়। আমি বুড়ো।
যদি কিছু মনে না কর, রবার্ট, কী করে তুমি ইলুমিনেটির ব্যাপারে আকৃষ্ট হলে?
আসলে, টাকা।
টাকা? কনসাল্টিং?
না। টাকা। আমি প্রথম কাল্টটার ব্যাপারে উৎসুক হয়ে উঠি এ কথা জানতে পারার পর যে আমেরিকান ডলারে এই ভাতৃসঙ্রে প্রতীক আছে।
ঠাট্টা করছে নাতো লোকটা?
একটা এক ডলারের নোট বের করল ল্যাঙডন। পিছনে তাকাও। বামের গ্রেট সিলটা দেখতে পাচ্ছ? পিরামিডটা?
পিরামিড। তুমি কি জান, আমেরিকান ইতিহাসের সাথে শিরামিডের কী সম্পর্ক আছে?
শ্রাগ করল ভিট্টোরিয়া।
কোন সম্পর্ক নেই।
তাহলে আপনাদের গ্রেট সিলের কেন্দ্রে কেন এটা?।
এর সাথে ইলুমিনেটির সম্পর্ক আছে। পিরামিড চূড়ায় পৌঁছার প্রতীক। আর এর উপরের চিহ্নটা দেখতে পাচ্ছ কি?
একটা ত্রিকোণের ভিতরে রাখা চোখ।
এর নাম ট্রিক্রিয়া। আর কোথাও সেই ত্রিকোণাবৃত চোখ দেখেছ তুমি?
আসলে… হ্যাঁ। কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না…
সারা দুনিয়ার মেসনিক প্রতীক এটা।
সিম্বলটা মেসনিক?
আসলে, না। এটা ইলুমিনেটির। একে তারা দৈব ডেল্টা নামে ডাকে। এই ত্রিকোণটা আলোময়তার প্রতিনিধিত্ব করছে। আর এই ত্রিকোণটা গ্লিক অক্ষর ডেল্টা যা প্রতিনিধিত্ব করে–
পরিবর্তনের।
হাসল ল্যাঙডন, ভুলেই গিয়েছিলাম, কথা বলছি একজন বিজ্ঞানীর সাথে।
জিজ্ঞাসা করল ভিট্টোরিয়া, তার মানে তুমি বলতে চাও যে যুক্তরাষ্ট্রের সিলটা আসলে সর্বব্যাপী আলোকিত করার আহ্বান?
একে কেউ কেউ নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার নামে অভিহিত করে।
পিরামিডের নিচে লেখা আছে… নোভাস অর্ডো…
নোভাস অর্ডো সেক্লোরাম। বলল ল্যাঙডন, এর মানে নূতন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা।
ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা?
অধার্মিক। এতে ইলুমিনেটি অবজেকটিভ শুধু প্রকাশিত হয় না। একই সাথে এর ভিতরের লেখাটাকে সন্দেহে ফেলে দেয়।
ইন গড উই ট্রাস্ট?
ঠিক সেটাই।
কিন্তু এই সিম্বলজি কী করে পৃথিবীর সবচে প্রভাবশালী টাকার উপর অঙ্কিত হল?
ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ওয়ালেসের কারসাজি মনে করে বেশিরভাগ মানুষ। তিনি মেসনের উপরের ধাপের লোক ছিলেন। কোন সন্দেহ নেই, ইলুমিনেটির সাথেও ছিল তার দহরম মহরম। কীভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছেছিল তাও একটা রহস্য।
কী করে? কেন প্রেসিডেন্ট–
প্রেসিডেন্টের নাম ছিল ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। ওয়ালেস তাকে বলেছিলেন যে নোভাস অর্ডো সেক্লোরাম মানে নতুন কাজ।
আর রুজভেল্ট কাউকে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে বলেনি?
কোন প্রয়োজন নেই। সে আর ওয়ালেস যেন ভাই ভাই।
ভাই ভাই?
হিস্টোরির বই দেখ। ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ছিল পুরোদস্তুর একজন মেসন।
৩২.
রোমের বাতাসে যখন শীষ কেটে নেমে আসছে এক্স থার্টি থ্রি, শ্বাস বন্ধ করল ল্যাঙডন। ক্র্যাফট নামল নিচে। ট্যাক্সিইং করে চলে গেল একটা প্রাইভেট হ্যাঙ্গারে।
ধীর ফ্লাইটের জন্য দুঃখিত। বলল পাইলট, জনপ্রিয় এলাকাগুলোর উপর দিয়ে আস্তে উড়ে যেতে হয়।
মাত্র তেত্রিশ মিনিট তারা আকাশে ছিল।
হাতের কাগজ সরাল পাইলট, কেউ কি আমাকে বলবে কী হচ্ছে এখানে?
কেউ জবাব দিল না। ফা
ইন। আমি ককপিটে মিউজিক নিয়ে বসে থাকব।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নিল ভিট্টোরিয়া।
ঘামতে ঘামতে ভাবল ল্যাঙডন, মেডিটেরানিয়ান্স!
কার্টুনের তুলনায় একটু বেশি বয়স হয়ে গেছে, তাই না? জিজ্ঞেস করল ভিট্টেরিয়া।
মানে?
তোমার রিস্টওয়াচ। প্লেনে দেখেছিলাম।
কালেক্টরস এডিশন মিকি মাউসের ঘড়িটা সে পেয়েছিল ছেলেবেলায়। ঘড়িটা আর নষ্ট হয়নি। তারও গরজ হয়নি এটাকে ছেড়ে দেয়ার। ওয়াটারপ্রুফ, অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে। আর কী চাই!
ছটা বাজে। বলল ল্যাঙডন।
মাথা নাড়ল ভিট্টোরিয়া। বলল, আমাদের নিতে এসে পড়েছে।
ঠিকই, দূরে দেখা যাচ্চে হেলিকপ্টার। পাপাল হেলিকপ্টার। সাদা। ভ্যাটিকানের সিল লাগানো। তারা মনে করেছিল ভ্যাটিকান, একটা কার পাঠাবে।
তা নয়।
সোজা মাথার উপর একটু ভেসে থেকে, পাপাল ক্রাউনের সিল সহ নেমে এল চপার তাদের সামনে।
হোলি চপার!
ভাবল ল্যাঙডন।
পোপের যাতায়তের জন্য একটা চপার তাদের আছে, আগে জানত না ল্যাঙডন। থাকাই অস্বাভাবিক। একটা গাড়ি হলেই বরং ভাল লাগত তার।
এবার ধাক্কা খাবার পালা ভিট্টোরিয়ার, এই আমাদের পাইলট?
উদ্বেগটা শেয়ার করে নিল ল্যাঙডনও, উড়ব কি উড়ব না ভাবতে হবে এখনি।
যেন শেক্সপিয়রিয় নাটকের জন্য পোশাক পরেছে পাইলট। অত্যুজ্জ্বল নীল আর সোনালি দিয়ে স্ট্রাইপ করা তার পোশাক। তার সাথে আছে ম্যাট করা প্যান্টলুন। সবার উপরে, একটা কালো ফেল্ট ব্যারেট লাগিয়েছে সে মাথায়।
সুইস গার্ডের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বলল ল্যাঙডন। ডিজাইন করেছিলেন স্বয়ং মাইকেলেঞ্জেলো। আমি মনে করি এটা মাইকেলেঞ্জেলোর কীর্তিগুলোর মধ্যে জায়গা পাবার যোগ্যতা রাখে না।
ইউ এস মেরিনের মত চালে এবং কায়দায় এগিয়ে আসছে সুইস গার্ড পাইলট। এলিট সুইস গার্ড হবার জন্য যে কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেটার কথা অনেকবার পড়েছে ল্যাঙউন। সুইজারল্যান্ডের চার ক্যাথলিক ক্যান্টনের কাছে সুইস গার্ড হবার জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই উনিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সী পুরুষ হতে হবে। কমপক্ষে পাঁচফুট ছ ইঞ্চি। সুইস আর্মির সবচে সাবধানী পরীক্ষায় উতরে যেতে হবে। নিতে হবে কঠিন প্রশিক্ষণ। সারা দুনিয়ার তাবৎ এলিট বাহিনী এই দলটাকে হিংসা করে।
আপনারা সার্ন থেকে এসেছেন? পাথুরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল গার্ড।
ইয়েস। স্যার। বলল ল্যাঙডন।
আপনারা অনেক আগে চলে এসেছেন, এক্স থার্টি থ্রির দিকে ভাবলেশহীন চোখে তাকাল সে। যেন এমন যান সব সময় দেখে আসছে।
ম্যাম, আপনার আর কোন বস্ত্র নেই?
বেগ ইউর পারডন?
ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে শর্ট প্যান্ট অনুমোদিত নয়।
এই আছে আমার। আমরা সময় পাইনি পোশাক বদলে নেয়ার।
আপনারা কোন অস্ত্র বহন করছেন কি?
অস্ত্র? বিষম খেল ল্যাঙডন। এই একটা জিনিস সে মোটেও পছন্দ করে না।
না।
এগিয়ে এল অফিসার। নির্লিপ্ত তার চোখ। পা থেকে শুরু করল সার্চ। মোজা, প্যান্ট, কুঁচকি, পেট, বুক, পিঠ, কাঁধ।
ফিরল সে ভিট্টোরিয়ার দিকে।
একথা কল্পনাও করবেন না। বলল সে।
তাকিয়ে থাকল গার্ড। তার কোন ইচ্ছা নেই এ মহিলাকে সার্চ করার।
তাক করল আঙুল ভিট্টোরিয়ার প্যান্টের পকেটে। কী ওটা?
সেলফোন।
বের করতে হল জিনিসটাকে। তারপর দেখা হলে আবার পাথুরে কষ্ঠ বলে উঠল, ঘুরে দাঁড়ান, প্লিজ।
গার্ড তারপর ভাল করে দেখল।
থ্যাঙ্ক ইউ। এপথে, প্লিজ!
প্রথমে উঠল ভিট্টোরিয়া। ল্যাঙডনের দেরি হয় একটু।
একটা গাড়ি পাবার কোন সুযোগ নেই? হাঁকল ল্যাঙডন জোরেসোরে।
জবাব দেয় না পাইলট।
রোমের ম্যানিয়াকরা যেভাবে পথে পথে গাড়ি হাঁকায় তাতে আকাশপথে ভ্রমণ করা অনেক ভাল মনে করে ল্যাঙডন উঠে বসল চপারে।
আপনারা কি ক্যানিস্টারটাকে চিহ্নিত করেছেন?
কী চিহ্নিত করব?
ক্যানিস্টার। আপনারা সার্নকে একটা ক্যানিস্টারের জন্য কল করেছেন না?
জানি না কী বলছেন আপনি। আজকে আমরা মহাব্যস্ত। কমান্ডার আপনাদের তুলে আনতে বলেছে। হুকুম তামিল করছি আমি। ব্যস।
একটু বীতশ্রদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল ভিট্টোরিয়া ল্যাঙডনের দিকে।
বাকল আপ প্লিজ। বলল পাইলট।
নিচে রোম। মোহময়ী নোম। রোম ইজ নট বিল্ড ইন এ ডে। একদিনে রোম তৈরি হয়নি। কত উত্থান, কত পতন! আধুনিক যে সভ্যতা বয়ে চলেছে সারা দুনিয়ায়, তার সূতিকাগার এই রোম। এককালে সিজার এখানে দাপড়ে বেরিয়েছে। এখানেই যিশুর বড় সহচর সেন্ট পিটারকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। আর এর গভীরে, একটা বোমা টিকটিক করছে।
৩৩.
আকাশ থেকে রোম দেখতে একেবারে অকল্পনীয় গোলকধাঁধা। পুরনো রোমের গলি ঘুপচি, ছোটবড় বিল্ডিং, সব উপর থেকে বিচিত্র দেখা যায়।
নিচে তাকিয়ে আছে ল্যাংডন, চপারটা নিচু হয়ে উড়ে যাবার সময়। সেখানে সাইটসিয়িং এরিয়া, বড় বড় চত্বর, তাতে প্রাচীণ রোমান দেবদেবীর মূর্তি, খ্রিস্টবাদের কীর্তি, ভিড়, ফিয়াট-সেডানের চারদিকে ছুটে চলা।
সাম্য থেকে জীবন।
কিছু বলল না ভিট্টোরিয়া।
জোরে ঝাঁকি খেল উড়ন্ত ঘাসফড়িঙটা।
সামনে দেখা যাচ্ছে রোমান কলোসিয়াম। দ্য কলোসিয়াম। যেটা মানব ইতিহাসের সবচে বড় একটা নিদর্শন বলা চলে। মানব সভ্যতার দোলনা এই এলাকা, আর এর কেন্দ্রবিন্দু এ স্টেডিয়াম! কিন্তু এখানে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে মানুষ কুর আর অসভ্য কাজগুলো করেছে। হয়েছে বীভৎসভাবে মানুষ খুন।
উত্তরের পথ ধরার পর তারা রোমান ফোরাম দেখতে পেল। খ্রিস্টপূর্ব রোমের প্রাণকেন্দ্র। ক্ষয়ে যেতে থাকা কলামগুলো পুরনোদিনের ঐতিহ্যকে সগর্বে প্রকাশ করে।
পশ্চিমে টাইবার নদীর চওড়া বেসিন দেখা যায়। দেখা যায় তার কাকচক্ষু পানি। বুঝতে পারে ল্যাঙডন, এর গভীরতা ভয় দেখিয়ে দেয়ার মত।
সরাসরি সামনে। চপার নিয়ে উঠে আসতে আসতে বলল পাইলট।
সাথে সাথে তাকাল ভিট্টোরিয়া আর ল্যাঙডন। মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়া পর্বতের মত হঠাৎ করে উদিত হল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার শ্বেত শুভ্র, অনিন্দ্যসুন্দর, কাপন তোলা, ঐতিহাসিক গম্বুজ। এখানে, ইতিহাস ঝলসে ওঠে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতকে আকড়ে ধরে।
এখন, সেটা, বলল ল্যাঙডন ভিট্টোরিয়ার দিকে ফিরে, হল এমন এক কাজ, যার জন্য মাইকেলেঞ্জেলোকে স্মরণ করা যায়।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকাকে আকাশ থেকে কখনো দেখেনি ল্যাঙডন। বিকালের পড়ন্ত আলোয় ঝলসে উঠছে তার গা। দুটা ফুটবল মাঠের মত চওড়া এবং ছটার মত লম্বা এই বিশাল ভবনে একশো চল্লিশজন প্রেরিতপুরুষ, এ্যাঞ্জেল, শহীদের মূর্তি আছে। আছে ষাট হাজারেরও অধিক প্রার্থনাকারীর জন্য স্থান। ভ্যাটিকান সিটির মোট জনসংখ্যার একশো গুণ।
এগিয়ে আসছে ভ্যাটিকান সিটি, পৃথিবীর সবচে ছোট রাষ্ট্র।
সামনে আছে সেন্ট পিটার্স স্কয়ার। ব্যাসিলিকার চেয়েও বড় এলাকা। ভোলা। সেখানে, বিশালত্বের মধ্যে শতাধিক উঁচু স্তম্ভ এক অনির্বচনীয় উচ্চতার অনুভূতি এনে, দেয়।
এখন যদি মাথা নিচের দিকে আর পা উপরের দিকে দিয়ে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা সেন্ট পিটার এই বিশালত্ব দেখতে পেতেন, কী ভাবতেন তিনি? এই ডোমের ঠিক নিচে, এই জায়গাতেই, ভ্যাটিকান হিলে, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। আর এখানেই, মাটির পাঁচতলা নিচে, পৃথিবীর সবচে জটিল আর রহস্যময়, গোপনীয় গোলকধাঁধায় ভরা কবরখানায় তার সমাধি রয়ে গেছে।
ভ্যাটিকান সিটি। খুব একটা উষ্ণতা ঝরল না পাইলটের কণ্ঠে।
ক্ষমতা আর রহস্যে আবৃত এক প্রাচীণ নগরী দেখতে দেখতে বিভোর ল্যাঙডন।
দেখ! বলল ভিট্টোরিয়া।
তাকাল ল্যাঙডন নিচে।
এদিকে! বলল মেয়েটা।
তাকাল ল্যাঙডন। কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের একপালে, ছায়াতে অনেকগুলো ভ্যান। সম্ভবত মিডিয়াভ্যান। ছাদে তাদের লেখা:
টেলিভিজর ইউরোপিয়া
ভিডিও ইতালিয়া
বিবিসি
ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল
সাথে সাথে বিভ্রান্তিতে পড়ে গেল ল্যাভন। এখনি খবরটা চাউর করে দিয়ে ভাল করল কি ভ্যাটিকান?
প্রেস এখানে কেন? কী হচ্ছে?
কী হচ্ছে? আপনারা জানেন না কী হচ্ছে?
না।
এল কনক্লেভ। এক ঘণ্টার মধ্যে সারা দুনিয়া দেখবে, বন্ধ হয়ে যারে কনক্লেডের দুয়ার।
***
এল কনক্লেভ
কথাটা অনেকক্ষণ ল্যাঙডনের পেটের ভিতর পাক খেল।
এল কনক্লেভ! দ্য ভ্যাটিকান কনক্লেভ।
কীভাবে সে ভুলে গেল? এতো সাম্প্রতিক ঘটনা।
পনের দিন আগে, পোপ, অসম্ভব জনপ্রিয়তার বারো বছর কাটিয়ে, মারা গেছেন। এক রাতে, হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যেই প্রচন্ড স্ট্রোকে তিনি মারা যান। ব্যাপারটাকে কেউ কেউ সন্দেহের চোখেও দেখে। সারা পৃথিবীর সংবাদপত্রে সেদিন একই হেডলাইন এসেছিল।
এখন ঐতিহ্য অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর পনেরদিন পরে, ভ্যাটিকান সিটিতে এল কনক্লেভ বসছে। সারা পৃথিবীর একশো পয়ষট্টিজন কার্ডিনাল গোপন সভায় বসবেন। তাবৎ দুনিয়ার খ্রিস্টবাদের লোকগুলো তাদের গোপন শলা পরামর্শ আর ভোটাভুটির পর নির্বাচিত করবেন নতুন পোপ।
এখন এখানে সারা পৃথিবীর সব কার্ডিনাল আছেন… ভাবল ল্যাঙডন; আর তারা বেরুতে পারবেন না নতুন পোপ নির্বাচিত করার আগে। বাইরে থেকে তাদের তালা দিয়ে দেয়া হবে। পুরো রোমান ক্যাথলিক চার্চ, শুধু ভ্যাটিকান সিটি নয়, বসে আছে একটা টাইম বোমার উপর।
৩৪.
কার্ডিনাল মাটি সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদের দিতে তাকিয়ে আছে। চারদিক থেকে আসা কার্ডিনালদের গুঞ্জনে ভরে আছে ভিতরটা। কথা বলছেন তারা ইংরেজিতে, ইতালিয়ানে, স্প্যানিশে।
তাকাল মর্টাটি ছাদের দিকে। সেখানে মাইকেলেঞ্জেলোর ফ্রেস্কো শোভা পাচ্ছে।
সিস্টিন চ্যাপেলের ভিতরে স্বর্গীয় আবহে আসে আলো। যেন স্বর্গ থেকেই আসে পাটে বসতে যাওয়া সূর্যের বাঁকা রশ্মি। সিস্টিনের উঁচু ঘরের কাচঘেরা ছিদ্রগুলো দিয়ে।
কিন্তু আজ তেমন কিছু হচ্ছে না।
নিয়মানুযায়ী, কার্লো ভেলভেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে সব জানালা। কেউ যেন। বাইরে থেকে ভিতরে উঁকি দিতে না পারে। যেন ভিতর থেকেও বাইরে তাকাতে না পারে।
আলো আসছে ভিতর থেকেই। মোমের নরম আলো।
আশি বছরের বেশি বয়সী কার্ডিনালরা এখানে আসতে পারেন না তাদের বার্ধক্যের সীমার জন্য। এখানটায় মর্টাটিই সবচে প্রবীণ। উনআশি বছর বয়স তার।
সন্ধ্যা সাতটার আলাপচরিতা শেষ করে কনক্লেভের দু ঘণ্টা আগেই এখানে হাজির হয় কার্ডিনালরা।
মৃত পোপের চ্যাম্বারলেইন এখানে আসবে। প্রার্থনা করবে। উদ্বোধিত হবে কনক্লেভ। তারপর সারা চ্যাপেলের সব দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিবে সুইস গার্ড। প্রহরায় থাকবে। কার্ডিনালরা একটা সিদ্ধান্তে আসার আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবে। সবাই।
কনক্লেভ আসলে এসেছে কন ক্লেভ থেকে। এর অর্থ চাবির ভিতরে আটকানো। ফোনকল আসতে পারবে না। পারবে না মেসেজ আসতে। দরজায় দাড়িয়ে কেউ। ফিসফিস করতে পারবে না। তাদের চোখের সামনে থাকবেন কেবল মহান স্রষ্টা।
সারা দুনিয়ার একশো কোটিরও বেশি রোমান ক্যাথলিকের নেতা নির্বাচিত হবেন একেবারে গোপনীয়তায়। এই দেয়ালের ভিতরের কাহিনী সব সময় মহিমান্বিত হয় না। কখনো কখনো বচসা বেঁধে যায়। এমনকি হত্যাকান্ডও ঘটে এখানে।
এসবই পুরনোদিনের কাহিনী। এ কনক্লেভ হবে শান্ত, আশীর্বাদপ্রাপ্ত, নির্বিঘ্ন। অনেককাল ধরে এমনটাই হয়ে আসছে।
এখনো একটা চিন্তা পীড়া দিচ্ছেন কার্ডিনাল মর্টাটিকে। চারজন কার্ডিনাল এখানে গড হাজির। কিন্তু আর এক ঘণ্টাও নেই শুরু হতে। তারা এসে পড়বে। হয়ত কোন কাজে আটকে পড়েছে। বাইরে যাবার উপায় নেই। ভ্যাটিকান সুরক্ষিত।
তাদের ছাড়া কনক্লেভ হতেও পারবে না। তারা সেই কার্ডিনাল। দ্য চুজেন ফোর।
কার্ডিনালদের অনুপস্থিতির কথা মর্টাটি পৌঁছে দিয়েছেন সুইস গার্ডের কাছে। এরই মধ্যে একটু কানাকানি শোনা যাচ্ছে। অস্থির হয়ে পড়ছে কার্ডিনালরা। তাদের ছাড়া কনক্লেভ শুরুও হবে না। আবার দেরিও করা যাবে না।
কী করবে বুঝতে পারছে না মাটি।
৩৫.
ভ্যাটিকানের হেলিপ্যাড।
টেরা ফার্মা। বলল পাইলট।
ল্যাঙডন নেমে এল। নেমে এল ভিট্টোরিয়া।
বিশালাকায় এক কার্ট আছে হেলিপ্যাডের পাশে। আর তার পাশেই এক পঞ্চাশ ফুট উঁচু, ট্যাঙ্কের আঘাত সয়ে যাবার মত শক্ত দেয়াল। এটাই ঘিরে রেখেছে ভ্যাটিকানকে।
পঞ্চাশ মিটার দূরে দূরে দাঁড়িয়ে আছে একজন করে সুইস গার্ড। একেবারে সাবধান। এ্যাটেনশন ভঙ্গিতে।
কার্ট চলতে শুরু করল।
চারপাশে নানা দিক নির্দেশক।
পালাজ্জো গভরেন্টারাটো
কলেজ্জো ইথিওপিয়ানা
ব্যালিসিকা স্যান পিয়েত্রো
চ্যাপেলা সিস্টিনা
রেডিও ভ্যাটিকানা লেখা ভবনের পাশ দিয়ে তাদের গতি বেড়ে গেল। এখানেই পৃথিবীতে সবচে বেশি শোনা রেডিও স্টেশনটা। রেডিও ভ্যাটিকানা।
এ্যাটেঞ্জিয়োনে বলে একটা তীক্ষ্ণ্ণ বাক নিল তাদের পাইলট। গাড়িটা চলে এল জিয়ার্দিনি ভ্যাটিকানিতে। ভ্যাটিকান সিটির হৃদপিন্ড। সোজা সামনে উদিত হল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পশ্চাৎপট। এ দৃশ্য সাধারণ মানুষ দেখতে পায় না। বামে আছে প্যালেস অব দ্য ট্রিবুনাল। আছে বিশালবপু গভর্নমেন্ট বিল্ডিং। সামনে আছে ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের চারকোণা অবয়ব। এ যাত্রা মিউজিয়ামে যে যাওয়া যাবে না তা ল্যাঙডন ভাল করেই জানে।
কোথায় সবাই? অবশেষে জিজ্ঞেস করল ভিট্টোরিয়া।
একটা মিলিটারি সুলভ দৃষ্টি হানল পাইলট। বিরক্ত।
কার্ডিনালদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সিস্টিন চ্যাপেলে। এক ঘণ্টাও বাকি নেই কনক্লেভের।
তার আগে কার্ডিনালরা তাদের পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করে। মেতে ওঠে আড়ায়। মত বিনিময় করে।
কিন্তু রেসিডেন্টরা?
নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কনক্লেভ শেষ হলে তারা ফিরবে।
কখন শেষ হবে?
একমাত্র ঈশ্বর জানেন।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ঠিক পিছনে থামল কার্ট। ত্রিকোণ একটা কান্ট্রিইয়ার্ড পেরিয়ে তারা এগিয়ে গেল। ভায়া বেলভেড্রে পেরিয়ে ঘন সন্নিবিষ্ট ইমারতগুলোর কাছে গেল তারা। এখানেই আছে ভ্যাটিকান প্রিন্টিং অফিস, ট্যাপেস্ট্রি স্টোরেশন ল্যাব, পোস্ট অফিস, চার্চ অব সেন্ট এ্যান।
তারা আরো একটা মোড় ঘুরল। তারপর হাজির হল গন্তব্যে।
সুইস গার্ডের অফিসের সামনে।
পাথুরে ভবনটার সামনে পাথুরে মুখ করে পাথুরে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে দুজন গার্ড।
কোনক্রমে নিজেকে বোঝাল ল্যাঙডন, তাদের হাস্যকর দেখাচ্ছে না। হাতে তাদের ঐতিহ্যবাহী লঙ সোর্ড। যে বর্শা দিয়ে অনেক অনেক মুসলিম ধর্মযোদ্ধার প্রাণনাশ করা হয়েছিল ক্রুসেডের সময়।
কোথায় যাবেন?
কমান্ডান্টের মেহমান।
সরে দাঁড়াল গার্ডরা। থেমে গেল পাইলট সেখানেই।
ভিতরের বাতাস শিতল। এটা দেখতে কোন বাহিনীর অফিসের মত নয়। ভিতরে অনেক অনেক পেইন্টিং শোভা পাচ্ছে। দেয়ালে দেয়ালে। যে কোন মিউজিয়াম এগুলোকে পেলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যাবে।
নেমে গেল তারা নিচে।
সামনে অনেক অনেক মূর্তি। পাথরে কুঁদে দেয়া। অথবা শুধু পাথুরে। সব মূর্তির লজ্জাস্থান একটা করে পাতায় মোড়া। পাতাগুলো একই রঙের হলেও বোঝা যায়, কৃত্রিম।
আঠারোশ সাতান্নতে পোপ পিউস নাইন সিদ্ধান্ত নেন, ভ্যাটিকানের মত পবিত্র জায়গায় কোন নগ্ন দেহ থাকবে না। দেখা যাবে না যৌনাঙ্গ। সুতরাং, ভেঙে ফেলা হল হাজার মূর্তির লিঙ্গ।সরিয়ে দেয়া হল চোখের সামনে থেকে। তারপর একই রঙের পাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া হল।
এ ভ্যাটিকানের কোন না কোন কোণায় লিঙ্গের একটা স্তুপ পাওয়া যাবে। জানে ল্যাঙডন।
মাইকেলেঞ্জেলো, ব্রামান্তে আর বার্নিনির মত যুগশ্রেষ্ঠ, সর্বকালের মেধাবী শিল্পীর কর্ম নষ্ট হয়ে যায়।
এখানে। বলল সাথে আসা গার্ড।
একটা কোড ঢোকায় গার্ড। তারপর খুলে যায় সামনের লোহার দরজা।
ভিতরে পুরো অন্য জগত।
৩৬.
সুইস গার্ডের অফিস।
এখানে প্রাচীণত্ব আর নূতনত্ব একত্র হয়ে গেছে। শেলফ ভর্তি বই, ওরিয়েন্টাল কার্পেট, দেয়ালচিত্র, হাইটেক গিয়ার, কম্পিউটার, টেলিভিশন সেট, আছে সবই।
এখানে অপেক্ষা করুন। বলল গার্ড।
গভীর নীল সামরিক ইউনিফর্ম পরা একজন অনেক লম্বা লোকের দেখা পেল তারা ভিতরে। সেলফোনে কথা বলতে বলতে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে ফিরে।
এগিয়ে গেল গার্ড। বলল কিছু। ফিরল লোকটা। তারপর একটা নড় করেই আবার ফিরে গেল আগের অবস্থানে। কথায়।
এক মিনিটের মধ্যেই কমান্ডার ওলিভেট্টি আপনাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন। থ্যাঙ্ক ইউ। ফিরে গেল গার্ড তার আগের জায়গায়। সিঁড়ির ধাপে।
সারা ঘরে একটা সাজ সাজ রব। ইউনিফর্ম পরা লোকজন চিৎকার করে আদেশ দিচ্ছে। কাজ চলছে কম্পিউটারে।
লক্ষ্য করল ল্যাঙডন কমান্ডার ওলিভেটিকে। এ লোক একটা দেশের সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ।
কথা চলছে সারা ঘরে।
কন্টিনিউয়া এ সার্চে!
হা প্রোভোতে হাল মিউসো?
খুব বেশি ইতালিয় জানতে হয় না, এখান থেকে যে একটা সার্চ চালানো হচ্ছে তা বোঝার জন্য। বুঝল ল্যাঙডন। একটু তৃপ্ত হল সে।
তুমি ঠিক আছতো? জিজ্ঞাসা করল সে ভিট্টোরিয়াকে।
শ্রাগ করল ভিট্টোরিয়া। চেষ্টা করল একটা কষ্টার্জিত হাসি দেয়ার।
এগিয়ে আসছে কমান্ডার ওলিভেট্টি ফোনকল শেষ করে। প্রতি ধাপে তাকে আরো আরো উঁচু মনে হয়। চেহারা তার কঠিন। চোয়াল শক্ত। বছরের পর বছর ধরে সামরিক কায়দায় চলতে চলতে এ হাল হয় লোকের।
চমৎকার ইংরেজিতে তাদের সম্ভাষণ জানাল কমান্ডার।
গুড আফটারনুন। আমি কমান্ডার ওলিভেট্টি-সুইস গার্ডের কমান্ডান্টে প্রিন্সিপালে। আপনাদের ডিরেক্টরকে আমিই ফোন করেছিলাম।
ভিট্টোরিয়া ধন্যবাদ জানাল, থ্যাঙ্ক ইউ ফর সিয়িং আস, স্যার।
এগিয়ে গেল সে তাদের সঙ্গে নিয়ে। একটা কাচের দরজার গায়ে ঠেস দিয়ে বলল, ঢুকুন।
একটা অন্ধকার রুমে প্রবেশ করল তারা যেখানে সাদাকালো ক্যামেরায় সারা ভ্যাটিকানের চারদিক দেখা যাচ্ছে। অনেক স্ক্রিন।
ফিউরি! বলল কমান্ডার গার্ডের দিকে তাকিয়ে।
গার্ড গুছিয়ে নিয়ে উঠে গেল।
এ ছবিটা, দেখাল সে একটা চিত্র, ভ্যাটিকানের কোন এক গোপন ক্যামেরা থেকে আসছে। রিমোট ক্যামেরা থেকে। আমি একটা ব্যাখ্যা চাই।
কোন সন্দেহ নেই সার্নের ক্যানিস্টার। এর লেড দেখাচ্ছে কাউন্ট ডাউন। সার্ন লেখা ক্যানিস্টারটার গায়ে। আর স্ক্রিনে লেখা: লাইভ ফিড-ক্যামেরা নাম্বার ছিয়াশি।
তাকাল ভিট্টোরিয়া ক্যামেরার দিকে, ছ ঘণ্টাও নেই!
হিসাব কষল ল্যাঙডন, তার মানে আমাদের হাতে সময় আছে–
মাঝরাত পর্যন্ত।
ওলিভেট্টির কথা ফুটল, এ ক্যানিস্টার কি আপনাদের ফ্যাসিলিটির?
নড করল ভিট্টোরিয়া, অস্থির হয়ে আছে সে, হ্যাঁ। চুরি গেছে। এর ভিতরে এক অত্যন্ত বিস্ফোরণোন্মুখ পদার্থ আছে। নাম প্রতিবস্তু।
আমি বিস্ফোরকের ব্যাপারে ভাল করেই জানি, মিস স্ট্রো, কখনো এন্টিম্যাটারের নাম শুনিনি।
টেকনোলজিটা নূতন। এটাকে তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করে ভ্যাটিকান সিটিকে খালি করতে হবে আমাদের। যত দ্রুত সম্ভব।
খালি করা? আপনার কি কোন ধারণা আছে আজ রাতে কী হচ্ছে এখানে?
ইয়েস, স্যার। আর আপনাদের কার্ডিনালরা প্রচন্ড হুমকির মুখে বাস করছে।
হাতে ছ ঘণ্টা সময়ও নেই। ক্যানিস্টারের লোকেশনের জন্য কোন কিছু কি করেছেন। আপনি?
খোঁজা শুরু করিনি।
কী? আমরা তো শুনলাম আপনার গার্ডরা সার্চ করছে—
সার্চ করছে, সত্যি। আপনাদের ক্যানিস্টারের জন্য নয়। আমরা অন্য কিছুর খোঁজ করছি। আপনার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।
আপনারা এখনো ক্যানিস্টারের খোঁজ শুরু করেননি!
অনেক ভাল ব্যবহার করেছে ওলিভেট্টি, তাই নাকি, মিস ভেট্রা? একটা ব্যাপার ব্যাখ্যা করতে দিন। আপনাদের ডিরেক্টর ফোনে কোন কথা বলেননি। শুধু বলেছেন যে এটাকে খুঁজে বের করতে হবে খুব দ্রুত। আর আমরা ব্যস্ত। আপনাদের সাথে ভালমত কথা না বলে কাজে নামিয়ে দিতে পারি না, সেই বিলাসের সুযোগ নেই আমার কাছে।
হাতে ছ ঘণ্টাও সময় নেই। এ ক্যানিস্টারটা পুরো কমপ্লেক্স বাষ্পের মত উবিয়ে দিবে।
মিস ভেট্রা, আপনাকে জানানোর মত কিছু ব্যাপার আছে। ভ্যাটিকান সিটিতে, প্রতিটা প্রবেশপথে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে, প্রত্যেককে চেক করে ঢোকানো হয়েছে। যে কোন বিস্ফোরককে আমরা মুহূর্তে চিনে ফেলব। রেডিও এ্যাকটিভ আইসোটোপ স্ক্যানার আছে, অলফ্যাক্টরি ফিল্টার আছে, কেমিক্যালের বিন্দুমাত্র ছোয়া বুঝে ফেলার যন্ত্র আছে, আছে সর্বাধুনিক মেটাল ডিটেক্টর, আছে এক্স রে স্ক্যানার।
খুব ভাল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলতে হয়, প্রতিবস্তুর তেজস্ক্রিয়তা নেই, নেই কেমিক্যাল পরিচয়, ভিতরে যা আছে তা খাঁটি হাইড্রোজেনের প্রতিনিধিত্ব করে। উল্টো। ক্যানিস্টারটা প্লাস্টিকের। আপনার কোন ডিভাইস সেটাকে ধরতে পারবে না।
কিন্তু ডিভাইসের একটা এনার্জি সোর্স আছে। নিকেল-ক্যাডমিয়ামের ক্ষীণতর চিহ্ন–
ব্যাটারিগুলোও প্লাস্টিকের।
প্লাস্টিক ব্যাটারি?
পলিমার জেল ইলেক্ট্রোলাইট উইথ টেফলন।
সিনা, ভ্যাটিকান প্রতি মাসে কয়েক ডজন বোমা হামলার হুমকি পায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রত্যেক সুইস গার্ডকে অত্যাধুনিক বিস্ফোরকের ব্যাপারে ট্রেনিং দিই। আমি ভাল করেই জানি যে পৃথিবীতে এমন কোন পাওয়ার নেই যা আপনি বলছেন তা করার মত। যে পর্যন্ত না একটা বেসবলের সমান ওয়্যারহেড সহ নিউক্লিয়ার বোম্ব থাকছে।
প্রকৃতির এখনো অনেক অজানা রহস্য রয়ে গেছে।
আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি আপনি সার্নে কোন পজিশনে আছেন?
আমি রিসার্চ স্টাফের একজন সিনিয়র মেম্বার। এবং ভ্যাটিকানে এই ক্রাইসিস মোকাবিলা করার জন্য পাঠানো প্রতিনিধি।
কঠিন হওয়ায় আমাকে ক্ষমা করবেন। যদি সত্যি সত্যি এটা ক্রাইসিস হয়, আমি কেন আপনার ডিরেক্টরের সাথে কথা বলছি না? আর আপনি কী করে ভ্যাটিকান সিটিতে একটা শর্ট প্যান্ট পরে আসার মত ধৃষ্টতা দেখান?
কমান্ডার ওলিভেট্টি, আমি রবার্ট ল্যাঙডন। আমি আমেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিয়াস স্টাডির অধ্যাপক। আমি এন্টিম্যাটার এক্সপ্লোশন দেখেছি। এবং মিস ট্রো যা বলছেন তা যে সত্যি তা দাবি করছি। আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট–কারণ আছে যে বোমাটা কোন এক গুপ্ত সংস্থা ভ্যাটিকানকে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য কনক্লেভের সময়ে এখানে স্থাপন করেছে।
আমার সামনে শর্ট প্যান্ট পরা এক মহিলা বলছেন যে এক ফোঁটা বস্তু পুরো ভ্যাটিকান সিটিকে উড়িয়ে দিবে। আর একজন আমেরিকান প্রফেসরকে পেয়েছি যিনি বলছেন যে কোন এক ধর্মদ্বেষী সংস্থা ভ্যাটিকানকে শেষ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
ক্যানিস্টারটা খুঁজে বের করুন। বলল ভিট্টোরিয়া, ধৈর্য হারিয়ে, এখুনি।
অসম্ভব! জিনিসটা যে কোন জায়গায় থাকতে পারে। ভ্যাটিকান সিটি কোন খুপরি নয়।
আপনাদের ক্যামেরায় জিপিএস লোকেটর নেই?
সাধারণত তারা চুরি যায় না। এই হারানো ক্যামেরা খুঁজে বের করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যাবে।
আমাদের হাতে দিনের হিসাবে সময় নেই। বলছে ভিট্টোরিয়া, হাতে আছে কয়েক ঘণ্টা।
কী হতে কয়েক ঘণ্টা, মিস ট্রো? উচ্চ থেকে উচ্চগ্রামে উঠে গেল হঠাৎ ওলিভেট্টির কণ্ঠ, এই লেড কাউন্ট ডাউন শেষ হতে? ভ্যাটিকান সিটি হাওয়ায় উবে যেতে? বিশ্বাস করুন, আমার সিকিউরিটি সিস্টেমের উপর একহাত নেয়া লোকদের ভাল চোখে দেখি না কখনো। আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়াটাই আমার কাজ। কিন্তু যা আপনি বলছেন, মেনে নেয়া দুষ্কর।
ল্যাঙউন কথা বলে উঠল, আপনি কি কখনো ইলুমিনেটির নাম শুনেছেন?
এসব বাজে বকার সময় আমার হাতে নেই, সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের।
তার মানে আপনি ইলুমিনেটির কথা জানেন?
আমি ক্যাথলিক চার্চের একজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রক্ষক। দ্য ইলুমিনেটির কথা আমি ভাল ভাবেই শুনেছি। অনেক দশক ধরে তাদের মাথার টিকিটারও সন্ধান নেই।
লিওনার্দো ট্রোর সেই ছবিটা চলে গেল ওলিভেট্টির হাতে।
আমি একজন ইলুমিনেটি স্কলার। তারা এখনো টিকে আছে, কথাটা মেনে নিতে আমার কম কষ্ট হয়নি। কিন্তু এই পরিস্থিতি দেখে বিশ্বাস না করে পারছি না।
কম্পিউটারে করা কারসাজি।
কারসাজি? একবার মিলের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দেখুন এর এ্যাম্বিগ্রামটার উপর, চোখ বুলিয়ে নিন।
হয়ত মিস ট্রো বলেননি আপনাকে, কিন্তু সার্ন বছরের পর বছর ধরে ভ্যাটিকানের নাক নিয়ে টানাটানি করছে। মনে হয় কী? গ্যালিলিও আর কোপার্নিকাসের জন্য চার্চকে তিতিবিরক্ত করে ছাড়ছে তারা। এখন এ চাল চেলেছে, পাঠিয়েছে প্রথমে একটা ক্যানিস্টার। তারপর আপনাদের।
ঐ ছবিটা আমার বাবার। আমার খুন হয়ে যাওয়া বাবার। কী মনে হয়, আমি তাকে নিয়ে তামাশা করছি আপনার সাথে?
আমি জানি না মিস ট্রো। শুধু এটুকু জানি, আগে আমার হাতে শক্ত প্রমাণ আসতে হবে। এটুকু দেখে আমার পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়। এখানকার ধর্মীয় কাজগুলো যেন ঠিকমত হয় সেটা জানাই আমার কাজ। সেটা দেখাই আমার কাজ।
ল্যাঙডনের কথায় এবার মিনতি ঝরে পড়ল, অন্তত ব্যাপারটা নিয়ে ভাবুন। বিবেচনায় নিন!
বিবেচনায় নেয়া? কনক্লেভ মোটেও আমেরিকান বেসবল খেলা নয় যে চাইলেই বৃষ্টির ছুতোয় বন্ধ করে দেয়া যাবে। এর কঠিন নিয়ম কানুন আছে। এক বিলিয়ন ক্যাথলিক তাদের নতুন নেতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রটোকল পবিত্র। অপরিবর্তনীয়। এগারোশো উনআশি থেকে কনক্লেভ টিকে গেছে ভূমিকম্প, আগুন এমনকি প্লেগের হাত থেকেও। বিশ্বাস করুন, একজন খুন হয়ে যাওয়া বিজ্ঞানী আর এক ফোঁটা ঈশ্বর জানে কীর জন্য কখনোই কনক্লেভ বন্ধ করা যাবে না।
ইন চার্জে যিনি আছেন তার কাছে নিয়ে চলুন আমাকে। বলল ভিট্টোরিয়া।
আপনি এরই মধ্যে তাকে পেয়ে গেছেন।
না। যাজকদের একজন।
যাজক চলে গেছেন। সুইস গার্ড ব্যতীত ভ্যাটিকানে আছেন শুধু কার্ডিনালরা। আর কলেজ অব কার্ডিনাল চলে গেছেন কনক্লেভে। সিস্টিন চ্যাপেলে।
চ্যাম্বারলেইনের ব্যাপারে কী বলবেন? জিজ্ঞাসা করল ল্যাঙডন।
কে?
বিগত পোপের চ্যাম্বারলেইন। আশা করছে ল্যাংডন, তার জানা ভুল নয়। পোপের মৃত্যুর পর তার চ্যাম্বারলেইন সমস্ত দায়িত্ব পায়। পোপের ব্যক্তিগত সহকারি চালায় ভ্যাটিকানকে, তার মৃত্যুর পর। আমার বিশ্বাস চ্যাম্বারলেইন এখানকার দায়িত্বে আছেন।
এল ক্যামারলেনগো? ক্যামারলেনগো এখানে একজন প্রিস্ট। সামান্য প্রিস্ট। সে পোপের হাতের কাছের সার্ভেন্ট।
কিন্তু সে এখানে আছে। আর আপনি তার কাছেই জবাবদিহি করেন।
কথা সত্যি, মিস্টার ল্যাঙডন, পোপের মৃত্যুর পর ভ্যাটিকানের কনক্লেভের দায়িত্ব তার ক্যামারলেনগার হাতেই বর্তায়। ব্যাপারটা এমন, আপনাদের প্রেসিডেন্ট অক্কা পেলেন আর তার ব্যক্তিগত সহকারি ওভাল অফিস জুড়ে বসল। ক্যামারলেনগো তরুণ, আর সিকিউরিটি বা অন্য যে কোন ব্যাপারে তার জ্ঞান একেবারে সামান্য। এ ব্যাপারে, এখানে আমিই ইন চার্জ।
তার কাছে নিয়ে চলুন আমাদের। বলল জেদের সুরে ভিট্টোরিয়া।
অসম্ভব। চল্লিশ মিনিটের মধ্যে কনক্লেভ শুরু হতে যাচ্ছে। পোপের অফিসে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যামারলেনগো। নিরাপত্তার ব্যাপারে তার মনোযোগ আকর্ষণ করার কোন ইচ্ছা নেই আমার।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিল ভিট্টোরিয়া এমন সময় একজন প্রহরী এগিয়ে এল।
ইলোরা, কমান্টে!
হাতের ঘড়ি চেক করল ওলিভেট্টি। নড করল।
আমার সাথে সাথে আসুন… এটা আমার অফিস… আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি, ততক্ষণে আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কীভাবে কী করবেন।
চরকির মত ঘুরল ভিট্টোরিয়া, আপনি চলে যেতে পারেন না! ক্যানিস্টারটা
আমার হাতে কথা বলার মত সময় নেই। কনক্লেভ শেষ হওয়া পর্যন্ত আপনারা এখানেই থাকছেন। তারপর কথা বলব।
সিনর! যুক্তি দেখাল গার্ড, স্প্যাজ্জারে লা ক্যাপেলা।
আপনি চ্যাপেল ঝাড় দিতে যাচ্ছেন? তেতে উঠল ভিট্টোরিয়া।
আমরা ঝাড় দেই ইলেক্ট্রনিক বাগের আশায়। ব্যাপারটা আপনি বুঝবেন না মিস।
মোটা কাচের দরজার ওপাশে চলে গেল সে। লাগিয়ে দিল তালা।
আবার চিৎকার করল ভিট্টোরিয়া, ইডিয়ট! আপনি আমাদের এখানে বন্দি করে রাখতে পারবেন না।
কিছু একটা বলল ওলিভেট্টি গার্ডকে।
নড করল গার্ড। তারপর তাদের দিকে ফিরে দাঁড়াল। বুকে হাত দুট ক্রস করা। * পা ফাঁক করে দাঁড়ানো।
পারফেক্ট! ভাবল ল্যাঙডন, একেবারে পারফেক্ট!
৩৭.
একদৃষ্টে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে গার্ড। তার পরনে সুইস গার্ডের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
পাজামা পরা এক লোকের হাতে গান দিয়ে জিম্মি করে রাখা! ভাল!
ভাবল ভিট্টোরিয়া।
ল্যাঙডন একেবারে চুপসে গেছে। আর ভিট্টোরিয়া আশা করছে তার হার্ভার্ড ব্রেন দিয়ে এখান থেকে বেরুনোর কোন না কোন উপায় বের হবে।
কিন্তু বেচারার চোখের দৃষ্টি দেখে করুণা হল তার। আহারে! বেচারাকে শুধু শুধু এখানে আনা হল টেনে।
প্রথমেই মনে হল সেলফোন বের করে সবটা জানায় কোহলারকে। তাতে লাভের লাভ কিছু হবে না। গার্ড সোজা ভিতরে ঢুকে ফোনটা কেড়ে নিতে পারে। আর যদি তা নাও করে, কোহলারের অসুস্থতা কাটেনি, কাটার কথা নয় এত দ্রুত।
ভেবে বের কর! এ নরক থেকে বেরুনোর পথ ভেবে বের কর!
বৌদ্ধ ফিলোসফারদের পদ্ধতি হল এই ভেবে বের করাটা। সে ধর্মে বলা হয়, প্রত্যেকে সব জানে। সুতরাং সেটাকে ভেবে বের কারাটাই বাকি থাকে।
ফল হল না বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায়।
তার এখন কাউকে জানাতে হবে। এখানকার দায়িত্বে থাকা কাউকে। কীভাবে? কাকে? ক্যামারলেনগো পদের মানুষটাকে? কীভাবে? তারা এখন একটা গ্লাসবক্সে আটকে আছে যেখান থেকে কোন মুক্তি নেই।
যন্ত্রপাতি! ভাবল সে, সব সময় আশপাশ যন্ত্রপাতি থাকে। এখানেও আছে। খুঁজে বের কর।
চোখ বন্ধ করল সে। ঝুলিয়ে দিল কাঁধ। মাথা থেকে সমস্ত চিন্তাকে সরিয়ে দিল। এখানে কিছু না কিছু পজিটিভ আছেই! কী সেটা?
আরো মনোনিবেশ করল সে। আরো। তারপর টের পেল কী করতে পারে।
আমি একটা ফোনকল করছি।
আমি তোমাকে বলতাম কোহলারকে ফোন করার কথা। কিন্তু—
কোহলারকে না। অন্য কাউকে।
কাকে?
ক্যামারলেনগো।
তুমি চ্যাম্বারলেইনকে কল করবে? কীভাবে?
ওলিভেট্টি বলেছিল ক্যামারলেনগো পোপের অফিসে আছে।
ওকে। তুমি পোপের প্রাইভেট নাম্বার জান?
না। কিন্তু আমি আমার ফোন থেকে কল করছি না। সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা লোকটার নিশ্চই পোপের সাথে সরাসরি কথা বলার একটা পথ আছে।
তার একজন ভারোত্তোলকও আছে, ছফিট সামনে। হাতে গান।
আর আমরা ভিতরে ইদুরের মত বন্দি হয়ে আছি।
আমি ভাল করেই তা জানতাম।
আমি বলছি, গার্ড আসলে বাইরে তালাবদ্ধ হয়ে আছে। এটা ওলিভেট্টির প্রাইভেট অফিস। আর আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, অন্যদের হাতে আর একটা চাবি নাও থাকতে পারে।
এটা একেবারেই পাতলা গ্লাস। আর তার হাতে একেবারেই বড় একটা গান আছে।
কী করবে সে? ফোন ব্যবহার করার অপরাধে গুলি করে বসবে?
কে জানে? এ জায়গা বড়ই অদ্ভুত। আর পরিস্থিতি যা-
তাতে বোঝা যায় সব এভাবেই চলবে এবং আমি বাকি পাঁচ ঘণ্টা বেয়াল্লিশ মিনিট এখানে তালাবদ্ধ হয়ে থাকব তোমার সাথে। যখন প্রতিবস্তু বিস্ফোরিত হবে, আমরা বসে থাকব সামনের সারিতে।
কিন্তু গার্ড তোমার ফোন তোলার সাথে সাথে ওলিভেট্টির সাথে যোগাযোগ করবে। সবগুলো ফোন নিয়ে চেষ্টা করবে তুমি?
নোপ! মাত্র একবার! বলল ভিট্টোরিয়া। তারপর তুলল ফোনটা। ডায়াল করল সবার উপরের বাটনটায়।
বাইরে উশখুশ করে উঠল গার্ড। তাকাল অগ্নিচুতে।
পরিস্থিতি সুবিধার মনে হেছ না। ভাবল ল্যাঙডন।
না! এতে রেকর্ডিং!
রেকর্ডিং? পোপের আনস্যরিং মেশিন আছে?
পোপের অফিস নয়। ভ্যাটিকান কমিশারির মেনু।
ল্যাঙডন কোনক্রমে একটা ম্লান, মিইয়ে পড়া হাসি দিল যখন বাইরের গার্ড অস্ত্র কক করেও সেটাকে নামিয়ে রেখে ওয়াকিটকি বের করে ওলিভেট্টির সাথে যোগাযোগ করল।
৩৮.
ভ্যাটিকান সুইচবোর্ড অবস্থিত উফিসিও ডি কমিউনিকেঞ্জিয়োতে। ভ্যাটিকান পোস্ট অফিসের পিছনে। একশো একচল্লিশটা সুইচবোর্ড বসানো এ ঘরটা তুলনামূলকভাবে ছোট। অফিসে দিনে দু হাজারের বেশি কল আসে। তার বেশিরভাগই রেকর্ড করা জবাব শুনতে পায়।
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ এককাপ চা নিয়ে বসে ছিল কমিউনিকেশন্স অপারেটর। চুমুক দিচ্ছিল আয়েশ করে ধূমায়িত কাপে।
গত কয়েক বছর ধরে ভ্যাটিকানে আসা কলের মাত্রা অনেক কমে গেছে। এমনকি মিডিয়ার লোকজন আর ফ্যানরাও আগের মত এত জ্বালাতন করে না।
ভ্যাটিকানের প্রতি আগ্রহ কমে এসেছে দুনিয়ার। স্বাভাবিক। আধুনিক জীবনযাত্রা আস্তে আস্তে ধর্মীয় ভাব থেকে সরিয়ে আনছে মানুষকে। যদিও বাইরের স্কয়ার মিডিয়া ভ্যানে পূর্ণ, সেখানে বেশিরভাগই ইতালিয়। খুব বেশি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা আসেনি কনক্লেভ কাভার করতে।
হাতের কাপটা নামিয়ে রেখে ভাবে অপারেটর, আর কতক্ষণ লাগবে আজ রাতটা পেরিয়ে যেতে।
কনক্লেভ আর আগের মত নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলে না। আঠারোশো একত্রিশ সালের কনক্লেভ তিপ্পান্ন দিন ধরে চলেছিল। এবার আর তা হবার যো নেই।
মাত্র একটা ধোয়াশার মত কেটে যাবে কনক্লেভের সময়।
একটা বোর্ডে আলো দেখে অবাক হল সে।
ভিতরে থেকে, লাইন জিরো থেকে কে অপারেটরের সাহায্য চাইতে পারে? আজকের দিনে ভিতরে আছেইবা কে?
সিটা ডেল ভ্যাটিকানো, প্রেগো? তুলল অপারেটর ফোন।
দ্রুতলয়ে বলে গেল ওপাশের কণ্ঠ। ইতালিয়তে। এ আর যেই হোক, সুইস গার্ড নয়।
মহিলা কণ্ঠ শুনে ভড়কে গেল অপারেটর। তার চা ছলকে পড়ল সাথে সাথে।
ভিতর থেকে? এই রাতে? মহিলার কন্ঠ?
মহিলা ঝড়ের গতিতে কথা বলে যাচ্ছে। অপারেটর কম সময় কাটায়নি এখানে। সে ভাল করেই জানে কারা ভুল করছে, ফাজলামি করছে, আর কারা সত্যি কথা বলছে। মহিলা উত্তেজিত, কিন্তু কণ্ঠে তার ছোয়া আছে সামান্য। কণ্ঠে ঝরে পড়ছে মিনতি।
এল ক্যামারলেনগো? আমি হয়ত পারব না লাইন দিতে… হ্যাঁ, আমি জানি তিনি পোপের অফিসে আছেন, কিন্তু… কে বলছিলেন? আবার বলুন প্লিজ… আর আপনি তাকে সাবধান করে দিতে চান… সে শুনল। আরো আরো মনোযোগ দিয়ে। সবাই বিপদে আছে… কীভাবে? আমার হয়ত সুইস গার্ডের সাথে… আপনি বললেন কোথায় আছেন? কোথায়?
শুনল অপারেটর। তারপর বলল, হোল্ড প্লিজ।
তুলল সে কমান্ডার ওলিভেট্টির নাম্বার।
ওপাশ থেকে সেই কণ্ঠই বলে উঠল, ঈশ্বরের নামে বলছি, প্লিজ, কলটা!
কমান্ডার ওলিভেট্রি আরো কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এল। তাকাল ফোন ধরে রাখা মহিলার দিকে। সে কথা বলছে কমান্ডারের প্রাইভেট লাইনে।
এগিয়ে এল কমান্ডার।
কী করছেন আপনি?
হ্যাঁ… আর আমার আরো সতর্ক করে দিতে হচ্ছে যে…
কেড়ে নিল ওলিভেট্টি, কোন চুলা থেকে কে বলছে?
তারপর থেমে গেল সে। দমে গেল একদম। মিইয়ে গেল ভিজানো মুড়ির মত। ইয়েস, ক্যামারলেনগো, বলছে সে, সত্যি, সিনর, কিন্তু নিরাপত্তার ব্যাপারটা… অবশ্যই নয়… আমি তাকে এখানে ধরে রেখেছি কারণ… অবশ্যই, কিন্তু… একটু অস্বস্তিতে পড়ল ওলিভেট্টি, ইয়েস, স্যার! বলল সে, আমি তাদের নিয়ে এখনি আসছি।
৩৯.
এ্যাপোস্টোলিক প্রাসাদ বিভিন্ন ভবনের জটলার মধ্যে, সিস্টিন চ্যাপেলের পিছনে। সেন্ট পিটার্স স্কয়ার থেকে বেশ ভাল একটা ভিউ পাওয়া যায়। এ ইমারতেই পোপের অফিস আর এ্যাপার্টমেন্ট।
লম্বা রোকোকো করিডোর ধরে তাদের নিয়ে যাচ্ছে কমান্ডার ওলিভেট্টি। রাগে তার ঘাড়ের পেশিগুলো আড়ষ্ট হয়ে আছে। সিঁড়ির ধাপ পড়ল সামনে। তার পরই একটা হাল্কা আলোয় ভরা হলওয়ে। চওড়া।
দেয়ালের শিল্পকর্মগুলোর দিকে তাকিয়ে স্রেফ আঁৎকে উঠল ল্যাঙডন। লাখ লাখ ডলার মূল্য এগুলোর।
এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল কমান্ডার।
উফিসিও ডেল পাপা! ঘোষণা করল সে। তাকিয়ে রইল ভিট্টোরিয়ার দিকে। কটমট করে। পাত্তা দিল না ভিট্টোরিয়া মোটেও। দরজায় জোরে করাঘাত করল সে।
অফিস অব দ্য পোপ! আবার শিউরে উঠল ল্যাঙডন। বিশ্বের ধর্মগুলোর মধ্যে সবচে ক্ষমাতবান লোকটার কার্যালয়।
আভান্তি! ভিতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল।
দরজা খুলে যাবার সাথে সাথে ল্যাঙডনের চোখ ঢেকে ফেলতে ইচ্ছা হল। সূর্যের আলো পড়ছে সরাসরি চোখে। আস্তে আস্তে তার সামনের ইমেজ স্পষ্ট হয়ে এল।
অফিসটা অফিসের মত লাগছে না। লাগছে বলরুমের মত। লাল মার্বেলের মেঝে, চারদেয়ালে বিচিত্র দেয়ালচিত্র। অসাধারণ। সামনে সূর্যের আলোয় ভেসে যাওয়া সেন্ট পিটার্স স্কয়ার।
মাই গড! এ ঘরটায় জানালা আছে।
সামনের বিশাল ডেস্কের পিছনে একজন বসে আছে। আভান্তি! বলল সে। হাতের কলম নামিয়ে রেখে।
সামনে এগিয়ে গেল ওলিভেটি। তার হাবভাব সামরিক। সিনর, ক্ষমা প্রার্থনার সুরে, নন হো পটেউটো
লোকটা তার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিল।
ভ্যাটিকানে ঘুরতে ঘুরতে যে রকম মানুষের কথা মনে আসে ল্যাঙডনের, ক্যামারলেনগো মোটেও তেমন নয়। তার গলায় কোন পেন্টেন্ট নেই। নেই বাড়তি কোন সাজসজ্জা। নেই যোব। একটা সাধারণ ক্যাসক তার পরনে। তা থেকেই ভিতরের মানুষটার পরিচয় পাওয়া যায়।
বয়স তার ত্রিশের কোটার শেষদিকে। ভ্যাটিকানের হিসাবে দুগ্ধপোষ্য শিশু। ধূসর চুল তার। মুখ অত্যন্ত সুন্দর। এগিয়ে যেতে যেতে তার মধ্যে ক্লান্তি দেখতে পায় ল্যাঙডন। পনের দিনের ঝড় শেষ হয়েছে তার। এখন বিশ্রামের সময় এগিয়ে আসবে।
আমি কার্লো ভেন্ট্রেস্কা। বলল সে, ইংরেজি একেবারে পাকা, বিগত পোপের ক্যামারলেনগো। তার কণ্ঠ দয়ার্দ্র।
ভিট্টোরিয়া ভেট্রা, এগিয়ে গেল মেয়েটা, বাড়িয়ে দিল হাত। আমাদের দেখা দেয়ায় আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ক্যামারলেনগো হ্যান্ডশেক করাতে হতবাক হয়ে গেল ওলিভেট্টি।
ইনি রবার্ট ল্যাঙডন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রিলিজিয়াস হিস্টোরির প্রফেসর।
পাদ্রে! যথা সম্ভব ইতালিয় টানে বলার চেষ্টা করল ল্যাঙডন। হাত বাড়াল। বাড়িয়ে দেয়া হাতের সামনে নিচু করল মাথা।
না-না! বলল ক্যামারলেনগো, হিজ হোলিনেসের অফিস আমাকে পবিত্র করেনি। আমি সামান্য এক প্রিস্ট। একজন ক্যামারলেনগো যে সময় মত সার্ভিস দেয়।
দাঁড়িয়ে রইল ল্যাঙডন।
প্লিজ! বলল ক্যামারলেনগো, প্রত্যেকে বসুন। ডেস্কের সামনে কয়েকটা চেয়ার একত্র করার চেষ্টা করল।
ওলিভেট্টি দাঁড়িয়ে থাকাকেই শ্রেয় বলে মনে করল।
ক্যামারলেনগো বসল তার ডেস্কে। হাত ভাঁজ করল। ছোট্ট করে ফেলল একটা শ্বাস। তারপর তাকাল ভিজিটরদের দিকে।
সিনর! বলল ওলিভেষ্টি, মহিলার ধৃষ্টতা আমার ভুল। আমি-
তার ধৃষ্টতা আমাকে ভাবিত করছে না। জবাব দিল ক্যামারলেনগো সাথে সাথে, যখন অপারেটর আমাকে কনক্লেভের আধঘণ্টা আগে ফোন করে জানায় যে একজন মহিলা আপনার অফিস থেকে ফোন করে আমাকে চাচ্ছে কোন এক বড় দুর্ঘটনার ব্যাপার জানাতে যার কথা আমি জানি না সেটাই ভাবিত করছে আমাকে।
একেবারে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল ওলিভেট্টি।
ক্যামারলেনগোর উপস্থিতিতে মোহাবিষ্ট অনুভব করল ল্যাঙডন। তরুণ, উদ্দীপিত, অনেকটা পুরাণের মহানায়কের মত।
সিনর! বলল অবশেষে ওলিভেট্টি, এখনো তার কণ্ঠে তা, সেই সাথে একটু ঔদ্ধত্য, সিকিউরিটির ব্যাপারে আপনাকে চিন্তিত না হলেও চলবে। অন্য অনেক কাজের চাপ আপনাকে সামলে নিতে হয়।
কাজের চাপ সম্পর্কে আমি পুরোপুরি ওয়াকিফহাল। আমি আরো জানি যে ডিরেট্রেলরা ইন্টারমিডিয়াররা অনুসারে, আমার উপর কনক্লেভ যেন নিরাপদে ঘটে সেটা নিয়েও দায়িত্ব বর্তায়। কী হচ্ছে এখানে?
পরিস্থিতি আমার আয়ত্তে।
দেখাই যাচ্ছে, তা নয়।
ফাদার, এবার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল ওলিভেট্টির, প্লিজ!
এগিয়ে গেল ওলিভেট্টি, ফাদার। এ নিয়ে আপনি ভাববেন না। এসব ব্যাপার।
ক্যামারলেনগো ফ্যাক্সটা হাতে নিল। ওলিভেট্টিকে অনেক সময় ধরে অবজ্ঞা করে। সেখানে মৃত বিজ্ঞানীর ছবি। সেখানে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থেকে সে বলল, এ কী!
তিনি আমার বাবা। বলল আগ বাড়িয়ে ভিট্টোরিয়া, কষ্টে তার আবেগ, তিনি ছিলেন একজন প্রিস্ট। একই সাথে বিজ্ঞানের লোক। গত রাতে তিনি খুন হন।
সাথে সাথে নরম হয়ে গেল ক্যামারলেনগোর মুখাবয়ব। চোখ তুলে তাকাল সে মেয়েটার দিকে। মাই ডিয়ার চাইল্ড, আই এ্যাম সো স্যরি!
ক্রস করল নিজেকে ক্যামারলেনগো। তারপর তাকাল ফ্যাক্সের দিকে। তার চোখের কোণায় টলটল করছে অশ্রু। কে… আর তার বুকের এই পোড়া চিহ্ন…।
এখানে লেখা আছে ইলুমিনেটি, ব্যাখ্যা করল ল্যাঙডন, আপনি যে নামটা চেনেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
একটা বিচিত্র ভাব খেলে গেল ক্যামারলেনগোর চোখে। কী যেন মিলছে না। আমি নামটার সাথে ভালভাবেই পরিচিত, কিন্তু…
ইলুমিনেটি লিওনার্দো ভেট্রাকে খুন করে কারণ তিনি এমন এক নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন যা
সিনর! বাধা দিল ওলিভেট্টি, এর কোন মানে হয় না। ইলুমিনেটি? তারা অনেক আগেই গাপ হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে–
কথা শুনছে না ক্যামারলেনগো। তাকিয়ে রইল সে ফ্যাক্সের দিকে বেশ কিছুক্ষণ। মিস্টার ল্যাঙডন, আমি ক্যাথলিক চার্চের জন্য আমার সারা জীবন ব্যায় করেছি। ইলুমিনেটির ব্যাপারে আমি পুরোপুরি সজাগ। তাদের ব্র্যান্ডিং করার ঐতিহ্য সম্পর্কেও। কিন্তু আমি বর্তমান কালের লোক। খ্রিস্টবাদের অনেক বর্তমান শত্রু আছে, ভূতরা ছাড়াও…
এই চিহ্নটা একেবারে নিখুঁত। বলল সে। এগিয়ে গেল ফ্যাক্সটা ক্যামারলেনগোর হাত থেকে নেয়ার জন্য।
ক্যামারলেনগো অবাহ হয়ে গেল দ্বিমুখীতা দেখে।
এমনকি আধুনিক কম্পিউটারও, বলছে সে, এমন একটা এ্যাম্বিগ্রাম তৈরি করতে পারে না।
অনেকক্ষণ ধরে চুপ থাকল ক্যামারলেনগো। তারপর বলল, এখন ইলুমিনেটির কোন অস্তিত্ব নেই। অনেক আগেই তারা হাপিস হয়ে গেছে।
নড করল ল্যাঙডন, গতকালও আমি আপনার সাথে একমত হতাম।
গতকাল?
আজকের ঘটনাক্রমের আগে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইলুমিনেটি ফিরে এসেছে। তাদের অপূর্ণ স্বাদ পূর্ণ করার জন্য। পথ পূর্ণ করার জন্য।
মাফ করবেন। আমি ঠিক জানি না। কোন পথ?
ভ্যাটিকান সিটির ধ্বংস এবং এর পথ।
ভ্যাটিকান সিটি ধ্বংস? ভয়েরচে বিস্ময় বেশি উঁকি দিচ্ছে ক্যামারলেনগোর কণ্ঠে। কিন্তু তা অসম্ভব হবার কথা।
মাথা নাড়ল, ভিট্টোরিয়া, আসলে আমাদের হাতে আরো বড় কিছু দুঃসংবাদ আছে।
৪০.
এ কথা কি সত্যি? বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছে ক্যামারলেনগো। তাকাচ্ছে ওলিভেটির দিকে।
সিনর, আশ্বস্ত করে ওলিভেট্টি, আমি মানছি যে এখানে কোন প্রকারের ডিভাইস আছে। সিকিউরিটি মনিটরে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মিস ভেট্রার দাবি অনুযায়ী, এর ক্ষমতা অকল্পনীয়। এমন কোন সম্ভাবনা
এক মিনিট, তেতে উঠছে এবার ক্যামারলেনগো, আপনারা সেটাকে দেখতে পাচ্ছেন?
জ্বি, সিনর, ক্যামেরা নম্বর ছিয়াশিতে।
তাহলে সেটাকে উদ্ধার করেননি কেন? এবার ক্যামারলেনগোর কণ্ঠে ধরা দিল উত্তেজনা।
খুবই কঠিন, সিনর। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, ওলিভেট্রি। বর্ণনা করল পরিস্থিতি।
ক্যামারলেনগো শুনল মন দিয়ে। তারপর তাকাল সবার দিকে। আপনারা কি নিশ্চিত এটা ভ্যাটিকানের ভিতরেই আছে? কেউ হয়ত সেটাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ট্রান্সমিট করছে।
অসম্ভব। বলল ওলিভেট্টি, আমাদের বাইরের দেয়ালগুলো ইলেক্ট্রিক্যালি প্রতিহত করে বাইরের সিগন্যাল, যেন ভিতরের সম্প্রচার বিষয়ক কোন ব্যাপারে অসুবিধা না হয়।
তাহলে আমার মনে হয় আপনি এখন মিসিং ক্যামেরাটার জন্য নেমে পড়েছেন?
মাথা নাড়ল ওলিভেট্টি, না, সিনর। সেটাকে বের করতে শত শত মানব-ঘণ্টা লেগে যাবে। আমাদের কাজ এখন সবচে বেশি। লোকবলের পুরোটাকেই নানা কাজে লাগিয়ে দিতে হয়েছে। আর মিস স্ট্রোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই জানাতে চাই সেই বিন্দুটা খুবই ছোট।
এবারও সতেজে বলল ভিট্টোরিয়া, সেই ফোঁটাই ভ্যাটিকানকে বাস্প করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। আমি যা বলছি তার প্রতি একবারও কি কান দিয়েছেন আপনি?
ম্যাম, বিস্ফোরকের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা অনেক।
এখানে আপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে না। আমি পৃথিবীর সবচে বড় সাব এটমিক রিসার্চ ফ্যাসিলিটির একজন সিনিয়র সদস্য। ব্যক্তিগতভাবে আমিই সেই জিনিটার ধারকের ডিজাইন করেছি। এমনকি অনেকবার অতি ক্ষুদ্র পরিমাণ নিয়ে বিস্ফোরণের মহড়া দিয়েছি। সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাকে, আগামী ছ ঘণ্টার মধ্যে সেটাকে বের করতে না পারলে অনর্থ ঘটে যাবে। আপনার গার্ডরা আর কিছুকেই রক্ষা করার জন্য পাহারা দিবে না। শুধু থাকবে মাটিতে একটা বড় গর্ত।
এবার রগচটা ওলিভেট্টি তাকাল ক্যামারলেনগোর দিকে ঝট করে, সিনর, এই কথোপকথন আমি আর চালাতে চাচ্ছি না। আপনার সময় নষ্ট হচ্ছে পাঙ্কস্টারদের কারণে। ইলুমিনেটি? এমন একটা ফোঁটা যা আমাদের সবাইকে ধ্বসিয়ে দিবে?
বাস্তা! ঘোষণা করল ক্যামারলেনগে। সে স্পষ্ট শব্দটী উচ্চারণ করেছে এবং তা। ঘরের ভিতরে ধ্বণিত প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। ধ্বংসাত্মক হোক আর না হোক, ইলুমিনেটি থাক আর না থাক… ব্যাপারটা ঘটছে ভ্যাটিকান সিটির ভিতরে। কনক্লেভের সময়। আমি এটাকে পাওয়া অবস্থায় দেখতে চাই। নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পেতে চাই। খুব দ্রুত একটা সার্চের ব্যবস্থা করুন।
সিনর, আমরা যদি এখন আমাদের পুরো লোকবল দিয়েও সার্চ চালাই, তবু ক্যামেরাটা পেতে কয়েক দিন লেগে যাবে। মিস ট্রোর কথা শোনার পর আমি আমাদের একজনকে এই এন্টিম্যাটার বিষয়ে আলোচনা পাবার জন্য আমাদের সবচে। অগ্রসর ব্যালিস্টিক গাইড ঘাটতে পাঠিয়েছি। আমি কোথাও এর কোন বর্ণনা দেখিনি। কোথাও না।
বোকার হদ্দ! ভাবছে ভিট্টোরিয়া, ব্যালিস্টিক গাইড! তুমি কি কোন এনসাইক্লোপিডিয়া ঘেঁটেছ? এ শব্দের উপর?
কথা বলছিল ওলিভেট্টি, সিনর, যদি আপনি ভোলা চোখে পুরো ভ্যাটিকান সিটি চষে ফেলতে বলেন তাহলে আমাকে অবশ্যই সে কথার প্রতিবাদ করতে হবে।
কমান্ডার, তীক্ষ্ণ্ণতর হল এবার ক্যামারলেনগোর স্বর, একটা কথা কি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে যখন আপনি আমাকে এ্যাড্রেস করছেন, আপনি এ্যাড্রেস করছেন এই অফিসকে? আমি টের পাচ্ছি আপনি আমার পদটাকে ঠিকভাবে নিচ্ছেন না। আমি আছি ভ্যাটিকানের দায়িত্বে। আমার কোন ভুল না হয়ে থাকলে, কার্ডিনালরা এর মধ্যেই সিস্টিন চ্যাপেলে চলে গেছেন। আর কনক্লেভ ভাঙা পর্যন্ত আপনার নিরাপত্তা বলয়ের এলাকা অনেক কমে যাচ্ছে। ভেবে পাচ্ছি না আপনি কেন এই ডিভাইসটার খোঁজ করতে গড়িমসি করছেন। আমার ভুল না হয়ে থাকলে বলতে হয়, আপনি এ কনক্লেভকে আন্তর্জাতিক দুর্ঘটনার মুখে পতিত হতে দিচ্ছেন।
এবার যেন ফুলকি ছুটল ওলিভেট্টির মুখ দিয়ে, কত বড় সাহস তোমার! আমি তোমার পোপকে বারো বছর ধরে সেবা দিয়েছি। তার আগের পোপকে চৌদ্দ বছর! চৌদ্দশ আটত্রিশ থেকে সুইস গার্ড
এমন সময় তার ওয়াকিটকি সজিব হয়ে উঠল, কমান্ডান্টে?
মুখের কাছে তুলল ওলিভেট্টি জিনিসটাকে, সোনো অকুপাটো! কোসা ভুওই!
স্কোসি, রেডিওর সুইস গার্ড বলল, কমিউনিকেশন্স হিয়ার। আমি মনে করেছি আপনি জানেন যে আমরা একটা বোমা হামলার হুমকির মুখে পড়েছি।
তাহলে ব্যাপারটাকে হ্যান্ডেল কর! স্বাভাবিক ট্রেস চালাও। সমূলে বের করে দাও ব্যাটাকে।
আমরা করেছি, স্যার। কিন্তু কলার… থামল গার্ড একটু, আমি আপনাকে বিরক্ত করব না বেশি কথা বলে। কলার যা বলল সেটা আপনার একটু আগে বলা শব্দ।
এন্টিম্যাটার!
সারা ঘরে নেমে এল পিনপতন নিরবতা। তাকিয়ে আছে সবাই।
সে কী বলেছে?
এন্টিম্যাটার, স্যার। কলের ট্রেস বের করার চেষ্টা যখন করছি আমরা তখন তার দাবির উপরে আরো কিছু কাজ করি আমি। এন্টিম্যাটার নিয়ে যে তথ্য আছে… সেটা… আসলেই খুব সমস্যার। বড় সমস্যার।
আমি মনে করেছি তুমি বলেছ যে ব্যালিস্টিক গাইডে সেটার নাম-নিশানাও নেই।
অন লাইনে পেয়েছি ব্যাপারটা।
এ্যালিলুইয়া! ভাবল ভিট্টোরিয়া।
জিনিসটা খুবই বিস্ফোরক। কথাটা কতটা সত্যি তা জানি না, তবে সেখানে লেখা আছে যে এন্টিম্যাটারের এক পাউন্ড পে লোড সে পরিমাণ পারমাণবিক ওয়্যারহেডের চেয়ে শতগুণ বেশি কর্মক্ষম!–থমকে গেল ওলিভেট্টি। যেন কোন পাহাড় দেখতে পাচ্ছে সে গোড়ায় বসে থেকে।
ক্যামারলেনগোর চেহারায় আতঙ্ক দেখে ভিট্টোরিয়ার উল্লাস হাপিস হয়ে গেল।
তুমি কি কলটা ট্রেস করেছ? জিজ্ঞাসা করল ওলিভেট্টি।
ভাগ্য মন্দ। ভারি এলাকা থেকে সেলুলারে কল এসেছে। স্যাট লাইনগুলো জ্যাম, একের উপর আরেকটা পড়ে যাচ্ছে। আই এফ সিগন্যাল এটুকু জানাচ্ছে যে সে রোমেই কোথাও আছে। কিন্তু তাকে আবার পাবার কোন উপায় নেই।
সে কি কোন দাবি করেছে? শান্ত কণ্ঠে বলল ওলিভেট্টি।
না, স্যার। শুধু আমাদের জানিয়েছে যে কমপ্লেক্সের ভিতরে এন্টিম্যাটার লুকানো আছে। তাকে কেন যেন সারপ্রাইজড বলে মনে হল। জিজ্ঞাসা করল এখনো আমি সেটাকে দেখেছি কিনা। আপনি আমাতে এন্টিম্যাটার বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, সব জেনে তারপর আপনাকে জানাব।
ঠিক কাজই করেছ। নেমে আসছি এক মিনিটের মধ্যে। আবার কল করলে আমাকে জানিও।
একটু সময় ধরে নিরবতা দেখা দিল লাইনে। সে এখনো লাইনে আছে, স্যার।
যেন ধাক্কা খেল ওলিভেন্তি, সে এখনো লাইনে আছে?
জি, স্যার। দশ মিনিট ধরে তাকে ট্রেস করার চেষ্টা করছি। সে জানে তাকে পাব না আমরা। তাই নাছোড়বান্দার মত ক্যামারলেনগোর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত লাইন কাটতে রাজি হচ্ছে না।
পাঠিয়ে দাও তার লাইন! বলল ক্যামারলেনগো, এখনি।
ফাদার! না! ওলিভেট্টি বাধা দিল ট্রেইল্ড সুইস গার্ড নেগোশিয়েটর অনেক বেশি দক্ষ, তাকে দিয়ে অনেক সুবিধা আদায় করা সম্ভব।
এখনি!
ওলিভেট্টি আদেশ দিল।
এক মুহূর্ত পরেই ক্যামারলেনগোর একটা ফোন বেজে উঠল। ক্যামারলেনগো আঙুল এগিয়ে দিল স্পিকার-ফোন বাটনে, ঈশ্বরের নামে জিজ্ঞেস করছি, নিজেকে কে মনে করছেন আপনি?