০৪. আখলাক সাহেব রাত ঠিক নটায় ভাত খান

আখলাক সাহেব রাত ঠিক নটায় ভাত খান। রাতে আমিষ খান না। সামান্য ভাত, একটা ভাজি আর ডাল। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমিষের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয় বলে কোথায় যেন পড়েছিলেন। তিনি তা মেনে চলছেন।

মোতালেব ভাত নিয়ে এসে অবাক হয়ে দেখল আখলাক সাহেব বিছানার উপর চারপায়ে ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়ে আছেন। ঘোড়া যেভাবে কোমর নাড়ায় তিনিও মাঝে মাঝে সেভাবেই কোমর নাড়াচ্ছেন।

মোতালেব বলল, আফনের কী হইছে?

কিছু হয় নি।

আফনে ঘোড়া হইছেন ক্যান?

আখলাক সাহেব ঠিক হয়ে বিছানায় বসলেন। তিনি যে হামাগুড়িব মতো কবছিলেন নিজেও বুঝতে পারেন নি। ব্যাপারটা ঠিক হয় নি। নিজের উপরই রাগ লাগছে। মোতালেব আবার বলল, আফনের কী হইছে?

বললাম তো কিছু হয় নি। এটা হচ্ছে এক ধরনের ব্যায়াম। চিন্তা শক্তি বাড়াবার ব্যায়াম!

ো আইচ্ছা।

এখন থেকে এই ব্যায়াম তুইও কববি। রোজ দুঘণ্টা করে।

মোতালেবের মুখ হা হয়ে গেল। আখলাক সাহেব উৎসাহিত গলায় বললেন–তোর ব্রেইন বলে তো কোনো পদার্থ নেই। এক বৎসর চেষ্টা করে অক্ষর জ্ঞান করাতে পারলাম না। এই ব্যায়ামের পরে দেখবি ফটাফট অক্ষর শিখে ফেলবি। আজ থেকেই শুরু কর।

মোতালেবকে খুব আগ্রহী মনে হলো না। বরং তাকে চিন্তিত মনে হলো। তবে আখলাক সাহেব খুবই আগ্রহ বোধ করছেন। ভূত যা বলছে তা সত্যি কিনা তা পরীক্ষা করার একটা সুযোগ পাওয়া গেল।

মোতালেব!

জি খালুজান।

সকালে এক ঘণ্টা আর সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা দুঘণ্টা চারপায়ে থাকবি।

জি আইচ্ছা।

আখলাক সাহেব খেতে বসেছেন। আরাম করে খাচ্ছেন। মোতালেব বিমর্ষ মুখে তাঁর খাওয়া দেখছে। আখলাক সাহেব বললেন, চারপায়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। ইচ্ছা করলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবি। চারপায়ে যাবি।

মাইনষে পাগল কইব।

আখলাক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, পাগল বলবে কেন? এর মধ্যে পাগল বলার কী আছে?

উলট পালটা কাম করলে লোকে পাগল কয়।

আখলাক সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, উলটা পালটা কাজ মানে কী?

এই ধরেন। ভাত খাওনেব সমুয়া পাগল করে কী–আগে বেবাক তরকারি খাইয়া ফেলে। পরে হুঁদা ভাত কপকপাইযা খায।

আখলাক সাহেব অস্বস্তির সঙ্গে লক্ষ করলেন তিনি নিজেও ভাজি আগে খেয়ে ফেলেছেন। ভাতে এখনো হাত দেন নি। ব্যাপারটা অন্যমনস্কতার জন্যে হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তবুও খানিকটা অস্বস্তি লেগেই রইল। তাঁর ক্ষিধে নষ্ট হয়ে গেল। তিনি এক চুমুকে ডালেব বাটি শেষ করে ফেললেন। তাঁর অস্বস্তি আরো বাড়ল। ভাত রেখে ডাল, ভাজি সব খেয়ে ফেলেছেন–এব। মানে কী? তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। তিনি কি পাগল হয়ে যাচ্ছেন? মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে? ভূত বলে যাকে দেখছেন সে কি তার উত্তপ্ত এলোমেলো মস্তিষ্কের কল্পনা?

মোতালেব।

জ্বে খালুজান।

তুই কি ভূত বিশ্বাস করিস?

অবশ্যই করি। না করনেব কী আছে? চাইরিদিক কিলবিল করতাছে ভূতে।

বলিস কী?

মানুষ যেমুন আছে নানান পদের, ভূতও আছে নানান পদের। বাড়ির কোণাতে থাকে এক ভূত, তারে কয় কুনি-ভূত। দরজার চিপাত থাকে এক-কিসিমের ভূত, তার নাম চিপাভূত। আছে কন্দ কাটা, আছে মেছো ভূত…

চুপ কর।

জ্বে আইচ্ছা চুপ করলাম।

ভূত বলে জগতে কিছু নাই। বুঝলি?

জ্বে বুঝছি।

যা এখন থালাবাসন নিয়ে সামনে থেকে যা।

জ্বে আইচ্ছা।

মোতালেব বিমর্ষ মুখে সরে গেল। সে খুবই চিন্তিত বোধ করছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *