1 of 3

০৪।৬ চতুর্থ কাণ্ড : ষষ্ঠ অনুবাক

ষষ্ঠ অনুবাক
প্রথম
সূক্ত : পাপমোচনম
[ঋষি : মৃগার দেবতা : দ্যাবাপৃথিবী ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

 মন্তে বাং দ্যাবাপৃথিবী সুভোজসৌ সচেতসৌ যে অপ্রথেমমিতা যোজনানি। প্রতিষ্ঠে হ্যভবতং বসূনাং তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ১৷৷ প্রতিষ্ঠে হ্যভবতং বসূনাং প্রবৃদ্ধে দেবী সুভগে উরুচী। দ্যাবাপৃথিবী ভবতং মে স্যোনে তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ২. অসন্তাপে সুতপসৌ হুবেংহমুর্বী গম্ভীরে কবিভিনর্মস্যে। দ্যাবাপৃথিবী ভবতং মে স্যোনে তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৩ যে অমৃতং বিভৃথো যে হবীংষি যে স্রোত্যা বিভৃথো যে মনুষ্যান্। দ্যাবাপৃথিবী ভবতং মে স্যোনে তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৪৷৷ যে উস্রিয়া বিভৃথো যে বনস্পতী যয়োর্বাং বিশ্ব ভুবনানন্তঃ। দ্যাপৃথিবী ভবতং মে সস্যানে তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৫॥ যে কীলালেন তৰ্পয়থো যে ঘৃতেন যাভ্যামৃতে ন কিং চন শকুবন্তি। দ্যাবাপৃথিবী ভবতং মে স্যোনে তে নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৬৷৷ যন্মেদমভিশোচতি যেনযেন বা কৃতং পৌরুষেয়ান্ন দৈবাৎ। স্তোমি দ্যাবাপৃথিবী নাথিতো জোহবীমি তে নো মুঞ্চতমংহসঃ। ৭

বঙ্গানুবাদ –হে সুন্দর ভোগ-সম্পন্ন, সমান চিত্তশালী আকাশ-পৃথিবী (অর্থাৎ দ্যাবাপৃথিবী)! আমি তোমাদের মহিমাকে পরিজ্ঞাত হয়ে স্তুতি করছি। তোমরা দুজনে অপরিমিত মার্গশালী, এমন বিস্তৃত হয়ে আছো। তোমরা দেব ও মনুষ্য উভয়ের ঐশ্বর্যের নিমিত্ত-রূপী। তোমরা সকল পাপ হতে আমাদের রক্ষা করো ॥১॥

হে দ্যাবাপৃথিবী। তোমরা ধনসমূহকে প্রতিষ্ঠিত করণশালী, সকল টি প্রাণীর অধিষ্ঠান রূপ, দান ইত্যাদি গুণসমূহের দারা সম্পন্ন এবং সকল প্রকার মঙ্গলের সাথে যুক্ত। তোমরা আমার সুখের নিমিত্ত স্বরূপ হও এবং সকল পাপ হতে আমাদের মুক্ত করো ॥ ২॥

সকল প্রাণীর দুঃখ দূরীকরণশালী, গম্ভীর, বিস্তৃত, ঋষিবৃন্দের নমস্কার যোগ্য–এমনই দ্যাবাপৃথিবীকে আহ্বান করছি; তারা আমাকে সুখ প্রদানশালী হোন এবং সকল পাপ হতে আমাদের রক্ষা করুন ৩

হে দ্যাবাপৃথিবী! তোমরা সকল প্রাণীর মধ্যে অমৃতত্বকে স্থাপনা করে থাকো। চরু পুরোশ ইত্যাদি হবিসমূহকে ধারণ করে থাকো। তোমরা নদীসমূহকে ধারণশালী হয়ে থাকো। তোমরা; আমার সুখের নিমিত্তভাগী হও এবং আমাদের পাপ হতে রক্ষা করো ৷৷ ৪।

 হে দ্যাবাপৃথিবী! তোমরা গো-গণকে পুষ্ট করে থাকো, বনস্পতিসমূহকে পোষণ করে থাকো। তোমাদের মধ্যে যে প্রাণী নিবাস করে, তারা তোমাদের দুজনের সাথে আমাদের নিমিত্ত সুখের হেতু ভূত হোক এবং আমাকে পাপ হতে মুক্ত করুক ॥ ৫৷৷

 হে আকাশ-পৃথিবী! তোমরা জগৎসংসারকে অন্নের দ্বারা। পোষণ করছে এবং প্রাণীগণকে জলের দ্বারা তৃপ্ত করছো। তোমাদের ব্যাতিরেকে মনুষ্য কোনো কর্ম করতে সক্ষম হয় না। তোমরা দুজনে সুখের কারণস্বরূপ হও এবং আমাকে পাপ হতে মুক্ত করো। ৬।

যে মনুষ্যকৃত বা দৈবকৃত পাপের ফল আমাকে দগ্ধ করে চলেছে, এবং যে যে কারণে আমি অন্য পাপ করেছি, সেই সমুদায় পাপকে তাদের ফলের সাথে পৃথক করার নিমিত্ত আমি দ্যাবাপৃথিবীর অভিমানী দেবতাদ্বয়ের উদ্দেশে স্তুতি পূর্বক আহুতি প্রদান করছি। তারা আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করে দিন ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ষষ্ঠেনুবাকে পঞ্চ সূক্তনি। তত্র মন্ধে বা ইতি আদ্যস্য সূক্তস্য পূর্ববৎ বিনিয়োগ। তথা সোমযাগে মন্ধে বাম ইতি ঔদুম্বা আজ্যহোমস্য অনুমনন্ত্রণং কুর্যাৎ। উক্তং বৈতানে। …ইত্যাদি। (৪কা, ৬অ. ১সূ)।

টীকা— ষষ্ঠ অনুবাকের পাঁচটি সূক্তের মধ্যে এই প্রথম সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তের মতো। তথা সোম্যগে উদুম্বরীর দ্বারা আজ্যহোমে এই সূক্তের দ্বারা অনুমন্ত্রণ করণীয়।..ইত্যাদি। (৪কা, ৬অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : মৃগার দেবতা : মরুত ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 মরুতাং মন্তে অধি মে ব্রুবন্তু প্রেমং বাজং বাজসাতে অবন্তু। আশূনিব সুয়মানহু উতয়ে তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥১॥ উৎসমক্ষিতং ব্যচন্তি যে সদা য আসিঞ্চন্তি রসমোষধীষু। পুরো দধে মরুতঃ পৃশ্নিমাতৃংস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ২॥ পয়ো ধেনুনাং রসমোষধীনাং জবমর্তাং কবয়ো য ইন্বথ। শর্গা ভভন্তু মরুততা নঃ স্যোনাস্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৩॥ অপঃ সমুদ্ৰাদ দিবমুদ বহন্তি দিবম্পৃথিবীমভি যে সৃজন্তি। যে অদ্ভিরীশানা মরুভশ্চরন্তি তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৪৷ যে কীলালেন তপয়ন্তি যে ঘৃতেন যে বা বয়ো মেদসা সংসৃজন্তি। যে অদ্ভিরীশানা মরুততা বৰ্ষয়ন্তি তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥৫৷৷ যদীদিদং মরুতো মারুতেন যদি দেবা দৈব্যেনেগার। যুয়মীশিধ্বে বসবস্তস্য নিস্কৃতেন্তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৬৷ তিস্মমনীকং বিদিতং সহস্বন্মারুতং শর্ধঃ পৃতনাসূগ্রম। স্তৌমি মরুতো নাথিতো জোহবীমি তে নো মুঞ্চংহসঃ ॥ ৭৷

বঙ্গানুবাদ –আমি মরুৎগণের মহিমাকে জ্ঞাত আছি। তারা আমাকে আপন বলে স্বীকার করে নিন এবং আমাদের নিমিত্ত অন্নকে রক্ষা করুন। তাঁরা রণক্ষেত্রে আমাদের কুশলে রাখুন। আমি রক্ষার নিমিত্ত তাদের আহ্বান জ্ঞাপন করছি; তাঁরা আমাকে পাপ হতে রক্ষা করুন ৷ ১।

যে মরুৎ-বর্গ মেঘকে অন্তরিক্ষে বিস্তৃত করে থাকেন এবং অন্ন, বৃক্ষ, ঔষধিতে বৃষ্টির জল (বা রস) সিঞ্চন করে থাকেন, আমরা সেই মরুৎসমূহকে আরাধিত করছি। তারা আমাকে পাপ হতে রক্ষা করুন। ২।

হে মরুৎ-বর্গ! তোমরা গাভীর দুগ্ধকে সর্ব শরীরে ব্যাপ্ত করে থাকো, ঔষধির রসকেও দেহের মধ্যে গতিশীল করে থাকো। এই রকমে তোমরা আমাকে সুখ প্রদান করো এবং পাপ হতে মুক্ত করো। ৩

যে মরুৎসঙ্ অন্তরিক্ষে মেঘসমূহকে প্রেরণ করতে এবং সমুদ্রে জলরাশিকে সমুপস্থিত করতে থাকেন, সেই জলের অধিপতি (বা নিয়ামক) মরুৎ-বর্গ আমাদের পাপসমূহ হতে মুক্ত করুন। ৪

যে মরুৎ-বর্গ পক্ষিগণকে মেদের দ্বারা রচিত করে থাকেন (অথরা বয়স্থ জনের মধ্যে মেদ-বর্ধন সংঘটিত করে থাকেন), এবং মনুষ্যগণকে অন্নের দ্বারা তৃপ্ত করে থাকেন; যে মরুৎ-গণ মেঘ-স্থিত জলের অধিস্বামী হওয়ায় সর্বত্র বর্ষণ করে থাকেন; তাঁরা আমাদের সকল পাপ হতে রক্ষা করুন ৷৷ ৫৷

 এই অনুভব-প্রাপ্ত পাপ মরুৎ-সম্পর্কিত অপরাধ হতে সংঘটিত হয়ে থাকে, সেই দুঃখ দূরীকরণের নিমিত্ত মরুৎ-বৰ্গই সামর্থ্যবান্। হে মরুৎ-সমুদায়! তোমরা আমাদের পাপসমূহ হতে মুক্ত করো ৷ ৬ ৷

সপ্ত গণের রূপধারী সেনার সমান, অত্যন্ত বিকরাল, প্রসিদ্ধ মরুতাত্মক বল রণক্ষেত্রে দুঃসহ হয়ে থাকে। আমি এই হেন মরুৎ-গণের উদ্দেশে স্তুতিবাক্য উচ্চারণ পূর্বক তাদের আহ্বান করছি। তাঁরা আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করুন। ৭ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –মরুতাং মন্বে ইতি সূক্তস্য পূর্ববৎ গণপ্ৰযুক্তো বিনিয়োগঃ।…ইত্যাদি। (৪কা, ৬অ. ২সূ)।

টীকা— এই সূক্তের বিনিয়োগ পূর্বের ন্যায়।…ইত্যাদি। (৪কা, ৬অ. ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পাপমোচনম

[ঋষি : মৃগার দেবতা : ভব শর্ব ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

 ভবাশবৌ মম্বে বাং তস্য বিত্তং যয়োর্বামিদং প্রদিশি যদ বিরোচতে। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥১॥ যয়োরভ্যধু উত যদ দূরে চি যৌ বিদিতাবিষুভূতামসিষ্ঠে। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ২॥ সহস্রাক্ষেী বৃত্ৰহণা হুবেহহং দূরেগন্যূতী স্তুবন্নেমুগ্রেী। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥৩॥ যাবারেভাথে বহু সামগ্রে প্র চেদম্রাষ্ট্রমভিভাং জনেষু। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তেী নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৪৷ যয়োর্বধান্নাপপদ্যতে কশ্চনান্তর্দেবেষ্কৃত মানুষেষু। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৫৷ যঃ কৃত্যাকৃম্মুলকৃদ যাতুনো নি তস্মিন্ ধং বজ্রমুগ্রেী। যাবস্যেশাথে দ্বিপদো যৌ চতুষ্পদন্তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৬৷৷ অধি নো ব্রতং পৃতনাসূগ্রেী সং বজ্রেণ সৃজতং যঃ কিমীদী। স্তোমি ভবাশবৌ নাথিতো জোহবীমি তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৭৷

বঙ্গানুবাদ— জগৎসংসারের উৎপত্তি-করণশালী হে ভবদেব! জগৎসংসারের সংহার করণশালী হে শর্বদেবতা! আমি তোমাদের উভয়ের মহিমা জ্ঞাত আছি। তোমরা দ্বিপদাবিশিষ্ট মনুষ্য এবং চতুষ্পদশালী পশু ইত্যাদির সৃষ্টির ঈশ্বর। সম্পূর্ণ বিশ্বজগৎ তোমাদের আজ্ঞাধীনে চালিত। হে শিবের রূপদ্বয়! তোমরা আমাদের সকল অনর্থের মূলীভূত পাপ হতে মুক্ত করো ॥১॥

যে ভব ও শর্ব নামধারী দেবতাদ্বয়ের নিকটে বা দূরবর্তী দেশে যা কিছু বর্তমান, তার সবই যাঁদের অধিকারভূক্ত; যাঁরা ধনুতে বাণ সংযোজন ও নিক্ষেপণের নিমিত্ত প্রসিদ্ধ; সেই দ্বিপদ ও চতুষ্পদ প্রাণীসমূহের অধিস্বামীদ্বয় আমাদের পাপ হতে মুক্ত করুন। ২

সহস্রাক্ষ, বৃত্ৰ সংহারক, গোচারণ ভূমি হতে দূরে অবস্থানকারী, ভব ও শর্বদেবরূপী শিবকে আমি আহ্বান করছি ৷৩৷৷

হে ভব ও শর্ব! তোমরা দুজনেসৃষ্টির প্রারম্ভে অনেক প্রাণীকে উৎপন্ন করেছিলে; সেই মনুষ্যগণের মধ্যে শত্রুভাব ও তাদের পাপের অনুসারে অভিদীপ্তিকে তোমরাই সৃষ্টি করেছিলে। তোমরা দ্বিপদ ও চতুষ্পদ প্রাণীসমূহের অধিস্বামী। তোমরা আমাদের পাপ হতে মুক্ত করো। ৪

যে ভব ও শর্বের হিংসাময় শস্ত্র (অর্থাৎ আয়ুধ) হতে কেউই রক্ষা পায় না, যিনি দ্বিপদ ও চতুষ্পদ প্রাণীসমূহের অধিস্বামী, তিনি আমাদের সকল অনর্থের মূলীভূত পাপ হতে মুক্ত করুন ॥ ৫৷

সে শক্র কৃত্যা কর্মানুষ্ঠানের দ্বারা অনিষ্ট সাধন করে থাকে এবং যে আমাদের বংশবৃদ্ধিশীল সন্তানগণকে বিনাশ করে থাকে, সেই উভয় প্রকার শত্রুর উপর ভব ও শর্বদেব বজ্র প্রহার করুন। সেই দ্বিপদ ও চতুষ্পদ প্রাণীসমূহের অধিস্বামী দেবদ্বয় আমাদের সকল পাপ হতে রক্ষা করুন। ৬

হে ভব ও শর্ব! তোমরা আমাদের শত্রুগণকে শস্ত্রের সাথে আলিঙ্গন করাও (অর্থাৎ তাদের উপর অস্ত্রাঘাত করো); হিংসক রাক্ষসদের প্রতিও এমনই করো। আমাদের পক্ষে কথা বলো (অর্থাৎ আমরা যে তোমাদেরই কৃপানুকুল্যে আছি, তা ঘোষণা করো)। আমরা তোমাদের স্তুতি পূর্বক আহ্বান জ্ঞাপন করছি। তোমরা আমাকে পাপ হতে মুক্ত করো। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ভবাশবৌ মন্তে বাং ইতি সূক্তস্য গণবিনিয়োগঃ উক্ত। তথা ॥ সর্বব্যাধিভৈষজ্যকর্মণি চ উদকপূর্ণান্ সপ্ত কাস্পীলপুটা প্রত্যুচং সম্পত্য অভিমন্ত্র্য ব্যাধিতং অবসিঞ্চেৎ। ত উক্তং কৌশিকেন। … ইত্যাদি ৷ (৪কা, ৬অ. ৩সূ)।

টীকা –এই সূক্তের গণবিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। তথা সকল ব্যাধির ভৈষজ্যকর্মে জলপূর্ণ সপ্তসংখ্যক কাম্পীলপুট প্রতিটি ঋষ্মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে ব্যাধিগ্রস্তের অবসিঞ্চন কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ৬অ. ৩সূ)।

.

চতুর্থ সূক্ত : পাপমোচনম

 [ঋষি : মৃগার দেবতা : মিত্র বরুণ ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

 মবে ৰাং মিত্রাবরুণাবৃতাবৃধৌ সচেতসৌ দ্রুণণা যৌ নুদেথে। প্র সত্যাবানমবথো ভরেষু তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥১॥ সচেতসৌ দ্রুহুণো যৌ নুদেথে প্র সত্যাবানমবথো ভরেষু। যৌ গচ্ছঘো নৃচক্ষসৌ বভ্রণা সুতং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ২॥ যাবঙ্গিরসমবথো যাবগস্তিং মিত্রাবরুণা জমদগ্নিমত্রিম। যৌ কশ্যপমবথো যৌ বসিষ্ঠং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৩॥ যৌ শ্যাবাশ্বমবয়ো বশ্বং মিত্রাবরুণা পুরমীঢ়মত্রিম। যৌ বিমদমবথঃ সপ্তবপ্রিং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৪যৌ ভরদ্বাজমবথো যৌ গবিষ্ঠিরং বিশ্বামিত্রং বরুণ মিত্র কুৎস। যৌ কক্ষীবন্তমবথঃ পোত কম্বং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৫৷৷ যৌ মেধাতিথিমবথো যৌ ত্রিশোকং মিত্রাবরুণাবুশনাং কাব্যং যৌ। যৌ গোমমবথঃ পোত মুগলং তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৬৷ যয়ো রথঃ সত্যবৰ্জুরশ্মির্মিথুয়া চরন্তমভিয়াতি দূষয়। স্তোমি মিত্রাবরুণৌ নাথিত জোহবীমি তৌ নো মুঞ্চতমংহসঃ ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ –হে মিত্র ও বরুণ! তোমরা সত্য, জল ও যজ্ঞের বৃদ্ধি-সাধনকারী। আমি তোমাদের মহিমা-গান করছি। তোমরা শত্রুগণকে স্থানচ্যুত করে থাকো এবং সত্যনিষ্ঠ জনদের রক্ষা করে থাকো। তোমরা আমাদের অনিষ্টের মূলীভূত পাপ হতে মুক্ত করো ॥১॥

হে মিত্রাবরুণ! তোমরা সমান জ্ঞানী ও সমান প্রয়োজনশালী। তোমরা বৈরিগণকে স্থানচ্যুত করে থাকো এবং সত্য-প্রতিজ্ঞ জনদের রক্ষা করে থাকো। তোমরা রাত্রি ও দিনের অভিমানী দেবতা, অতএব প্রাণীবর্গের সকল কর্ম জ্ঞাত আছো। তোমরা অভিযুত সোমকে প্রাপ্তকরণশালী হয়ে থাকো। তোমরা আমাদের সকল পাপ হতে মুক্ত করো। ২।

হে মিত্রাবরুণ! তোমরা অঙ্গিরা ঋষিকে রক্ষা করেছিলে। অগস্ত্য, জমদগ্নি, অত্রি, কশ্যপ ও বশিষ্ঠ নামক ঋষিদেরও রক্ষক হয়েছিলে। অতএব তোমরা সকল পাপ হতে আমাদেরও রক্ষা করো ॥ ৩॥

হে মিত্রাবরুণ! তোমরা শ্যাবাশ্ব, বশ্ব, পুরুমীঢ়, বিমদ, অত্রি ও সপ্ত ঋষির রক্ষক। তোমরা আমাদের সকল পাপ হতে রক্ষা করো। ৪

হে মিত্রাবরুণ! তোমরা ভরদ্বাজ, গবিষ্ঠির, বিশ্বামিত্র, কুৎস, কক্ষীবান ও কথ নামক ঋষিবৃন্দকে রক্ষা করেছিলে। তোমরা আমাদের সকল পাপ হতে রক্ষা করো ॥ ৫

হে মিত্র ও বরুণ! তোমরা মেধাতিথি, ত্রিলোক, উশনা, গৌতম ও মুল নামক ঋষিবৃন্দকে রক্ষা করেছিলে। অতএব তোমরা আমাকে আমার পাপ হতে রক্ষা করো ॥ ৬৷৷

মিথ্যাপথে ভ্রমণশীল পুরুষগণের বাধাস্বরূপ, মিত্রাবরুণের যে সত্যমার্গাবলম্বী রথ সম্মুখভাবে আগমন করছে, আমি সেই দেবদ্বয়কে স্তোত্রের দ্বারা আহ্বান করছি। তারা আমাকে সকল পাপ হতে রক্ষা করুন ॥৭॥

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –মন্বে বাং মিত্রাবরুণৌ ইতি সূক্তস্য উক্তো বিনিয়োগঃ।..ইত্যাদি৷৷ (৪কা, ৬অ. ৪সূ)।

টীকা –এই সূক্তের বিনিয়োগ পূর্বসূক্তে উক্ত হয়েছে ॥ (৪কা, ৬অ. ৪সূ)।

.

পঞ্চম সূক্ত : পাপমোচনম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : সর্বরূপা সর্বাত্মিকা সর্বদেবময়ী বাক ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, জগতী ]

অহং রুদ্রেভিসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যেরুত বিশ্বদেবৈঃ। অহং মিত্রাবরুণোভা বিভহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা ॥১॥ অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানা। তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্ৰা ভূরিস্থাত্ৰাং ভূর্যাবেশয়ন্তঃ ॥ ২॥ অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবানামুত মানুষাণা। যং কাময়ে তং তমুগ্ৰং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষিং তং সুমেধা ॥ ৩॥ ময়া সোহন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণতি য ঈং শৃণোত্যুক্ত। অমন্তবো মাং ত উপ ক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধেয়ং তে বদামি। ৪। অহং রুদ্রায় ধনুরা তনোমি ব্ৰহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ। অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আ বিবেশ। ৫। অহং সোমমাহনসং বিভৰ্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম। অহং দধামি দ্রবিণা হবিষ্মতে সুপ্রাব্যা যজমানায় সুন্বতে ৷ ৬ ৷ অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্ মম যোনিরস্বন্তঃ সমুদ্রে। ততো বি তিষ্ঠে ভুবনানি বিশ্বেতামূং দ্যাং বৰ্মণোপ স্পশামি। ৭। অহমেব বাত ইর প্র বাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা। পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈবতী মহিয়া সং বভুব ॥৮॥

বঙ্গানুবাদ –আমি (ব্রহ্মবাদিনী বাকদেবী) একাদশ রুদ্র ও অষ্ট বসুর রূপ ধারণ করে বিচরণ চ করছি, আমি ধাতা ইত্যাদি দ্বাদশ আদিত্য ও বিশ্বদেবগণের রূপ ধারণ করে বিচরণ করছি। আমি? ব্রহ্মবাদিনী পরমাত্মিকা। আমি মিত্রাবরুণকে ভরণ করি, ইন্দ্রাগ্নি ও অশ্বিদ্বয়কে ধারণ করে থাকি ৷৷ ১।

 আমি ব্রহ্মত্মিকা স্বরূপশালিনীরূপে সমগ্র বিশ্বের অধীশ্বরী; এই নিমিত্ত আমি আরাধককে ঐশ্বর্যপ্রাপ্ত করিয়ে থাকি। আমি পরব্রহ্মের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, এই নিমিত্ত যজ্ঞযোগ্য দেবতাগণের মধ্যে আমি মুখ্যা। এই হেন আমাকে, ফলদাতা দেবতাগণ বহু স্থানে আমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই ভাবেই, দেবগণ যা কিছু করে থাকেন, সেই সবই আমার নিমিত্তই হয়ে থাকে। ২।

 আমি স্বয়ং আত্মরূপা। আমি ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতা ও মনুষ্যগণকেও প্রিয় ব্রহ্মাত্মক বস্তুর উপদেশ প্রদান করছি। আমি যাকে যাকে রক্ষা করতে ইচ্ছা করি, তাকে তাকে প্রবল (অর্থাৎ দুঙ্খধর্ষ) করে তুলি। আমি তাদের ঈশ্বর, স্রষ্টা ও ঋষিরূপে রচিত করে শোভন বুদ্ধির দ্বারা সমৃদ্ধ করে থাকি ৷ ৩৷

অন্ন-ভক্ষণকারী ভোক্তা আমার দ্বারাই ভক্ষণ করে থাকে; যারা যা কিছু দর্শন করে, তা আমার দ্বারাই করে থাকে; যারা যা কিছু শ্রবণ করে, তা আমার দ্বারাই শ্রবণ করে থাকে; যারা শ্বাস গ্রহণ ইত্যাদি করে, তা আমার দ্বারাই সম্পাদিত করে থাকে; (অর্থাৎ এই সকল কর্ম আমার দ্বারা কৃত হয়ে থাকে)। আমি এই প্রকার অন্তর্যামী রূপের দ্বারা ব্যাপ্ত আছি। যে আমাকে জানে না, সে উপক্ষীণ হয়ে যায়। হে মিত্র! এই ভক্তি করণের যোগ্য (অর্থাৎ পরতত্ত্বের স্বরূপ সম্পর্কিত) যা কিছু আমি বলছি, তা মন দিয়ে শ্রবণ করো। ৪

ত্রিপুরাসুরকে জয় করার নিমিত্ত আমিই ধনুঃ উত্তোলন করেছি (অর্থাৎ আমিই ত্রিপুরারি রপে আবির্ভূত হয়েছি) এবং (রক্ষাপ্রার্থী) স্তোতৃগণের নিমিত্ত যুদ্ধ করেছি। আমি দ্যুলোকে ও ভূলোকে অদৃশ্য রূপে ব্যাপ্ত হয়ে আছি ৷৷ ৫৷

শত্রুগণের যেস্থানে বিনাশ ঘটে থাকে, এমন সেই স্বর্গলোকে নিবাসকারী দেবতাগণের সাথে সম্বন্ধিত সোমকে আমি পোষণ করি; ত্বষ্টা, পূষা ও ভগ দেবতাকেও আমিই পোষণ করি এবং আমিই হবিদাতা যজমানকেও যজ্ঞের ফলস্বরূপ ঐশ্বর্য প্রদান করি। ৬।

 এই পরিদৃশ্যমান লোকের শিরঃ-স্বরূপ সত্যলোকে নিবাস-করণশীল বিধাতাকে আমিই উৎপন্ন করেছি। এই সংসারের আমিই কারণরূপিণী; ব্রহ্মচৈতন্যের নিমিত্তস্বরূপও আমি। সমুদ্রের মধ্যস্থায়ী বড়বানল ও বিদ্যুৎ-রূপ তেজও আমারই। আমি সকল প্রাণীকে প্রকট করে থাকি; স্বর্গে ও ব্রহ্মলোকে অধ্যস্ত বিকারসমূহকে মায়াত্মক দেহের দ্বারা আমি স্পর্শ করে থাকি; আমি পৃথিবীর উপর পিতারূপ দ্যুলোককে প্রেরিত করে থাকি এবং অন্তরিক্ষস্থ জলের বিকাররূপ দেবগণের মধ্যে যে ব্রহ্ম ব্যাপ্ত হয়ে আছেন তার দ্বারা আমি সকলকে স্পর্শ করে থাকি। ৭৷

আমি অপর কারও সহায়তা ব্যতিরেকেই সকল প্রাণীকে উৎপন্ন করে বায়ুর ন্যায়, স্বেচ্ছায় প্রবৃত্ত হয়ে থাকি। দ্যুলোক, ভূলোক ও সম্পূর্ণ বিকার-রহিত ব্রহ্মচৈতন্য-রূপশালিণী আমি নিজেরই মাহাত্মে এমনই শক্তিশালিনী হয়ে গিয়েছি৷ ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অহং রুদ্রেভিঃ ইতি সূক্তেন জাতকর্মণি শঙ্খপুষ্পিকাগন্ধ-পুষ্পিকে পিন্থা অভিমন্ত্র হিরণ্যশকলেন প্রাশয়েৎ। তথা তত্রৈব কর্মণি অনেন সূক্তেন শঙ্খনাভিং পিপলীং চ পিষ্টা অভিমন্যু হিরণশকলেন প্রাশয়েৎ। তথা মেধাজানোর্থং প্রথমং বাথ্যবহারং কুর্তঃ শিশোমাতুরুৎসঙ্গে বিহিতস্য অনেন সূক্তেন আজ্যং হুত্বা তালুনি সম্পাতা আনয়েৎ। তথা দধিমধুনী একত্র কৃত্বা অনেন সম্পাত্য অভিমন্ত্র শিশুং প্রাশয়েৎ। তথা উপনয়নকর্মাণি দণ্ডপ্রদানানন্তরং এতং সূক্তং মাণবকং বাচয়েৎ। তথা আয়ুষ্কামোপি শঙ্খপুষ্পগন্ধপুষ্প-প্রাশনাদীনুক্তানি পঞ্চকর্মাণি কুর্যাৎ। তথা চ কৌশিকং সূত্র। …ইত্যাদি ৷ (৪কা, ৬অ. ৫সূ)।

টীকা –এই সূক্তের দ্বারা জাতকর্মে শঙ্খপুষ্পিকা ও গন্ধপুস্পিকাকে পিষ্ট করে অভিমন্ত্রিত পূর্বক হিরণ্যখণ্ডের দ্বারা অর্থাৎ স্বর্ণ বা রৌপ্যের চমসে খাওয়ানো কর্তব্য। তথা এই কর্মে শঙ্খনাভি ও পিপলী পিষ্ঠ করে এই সূক্তের দ্বারা অভিমন্ত্রিত পূর্বক হিরণ্যখণ্ডের দ্বারা খাওয়ানো কর্তব্য। তথা মেধাজননের নিমিত্ত শিশুর প্রথম বাক্-ব্যবহার কালে (অর্থাৎ কথা বলার কালে) মাতৃক্রোড়স্থায়ী শিশুর বিহিতে এই সূক্তের দ্বারা আজ্যাতি প্রদান পূর্বক তালুগুলি সম্পাতিত করতে হয়। তথা দধি ও মধু একত্র করে এই সূক্তের দ্বারা অভিমন্ত্রিত পূর্বক শিশুকে খাওয়ানো কর্তব্য। তথা উপনয়ন কর্মে দণ্ডপ্রদানের পর এই সূক্তটি মাণবককে বলাতে হয়। তথা আয়ুষ্কামী জনেরও শঙ্খপুষ্পগন্ধপুষ্প প্রাশন ইত্যাদি ঐ পঞ্চকর্ম করণীয়।.. ইত্যাদি।(৪কা. ৬অ.৫সূ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *