তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : অনডবান
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : অনডবান ইন্দ্ররূপ। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ ]
অনড়া দাধার পৃথিবীমুত দ্যামনড়ান্ দায়রাবন্তরিক্ষম। অনড়ান্ দাধার প্রদিশঃ ষডুবীরনভৃন্ বিশ্বং ভুবনমা বিবেশ ॥১॥ অনড়ানিন্দ্রঃ স পশুভ্যো বি চষ্টে এয়াং ছক্ৰো বি মিমীতে অধ্বনঃ। ভূতং ভবিষ্যদ ভুবনা দুহানঃ সর্বা দেবানাং চরতি ব্ৰতানি। ২। ইন্দ্রো জাতো মনুষ্যেম্বন্তর্ঘর্মস্তপ্তশ্চরতি শশাশুচানঃ। সুপ্রজাঃ সস উদারে ন সর্ষদ যো নাশীয়ানডুহে বিজান ৷ ৩৷৷ অনড়া দুহে সুকৃতস্য লোক ঐনং প্যায়য়তি পবমানঃ পুরস্তাৎ। পর্জন্যো ধারা মরুত ঊধো অস্য যজ্ঞঃ পয়ো দক্ষিণা দোহো অস্য ॥৪॥ যস্য নেশে যজ্ঞপতির্ন যজ্ঞো নাস্য দাতেশে ন প্রতিগ্রহীতা। যো বিশ্বজিত্ বিশ্বভূদ বিশ্বকর্মা ঘর্মং নো ৰূত যতমশ্চতুষ্পৎ ॥৫॥। যেন দেবাঃ স্বরারুরুহুৰ্হিত্বা শরীরমমৃতস্য নাভিম। তেন গেষ্ম সুকৃতস্য লোকং ঘর্মস্য ব্ৰতেন তপসা যশস্যবঃ ॥ ৬৷ ইন্দ্রো রূপেণাগ্নিহেন প্রজাপতিঃ পরমেষ্ঠী বিরাট। বিশ্বানরে অক্ৰমত বৈশ্বানরে অক্ৰমতানডুহ্যক্ৰমত। সোহদৃংহয়ত সোহধারয়ত ॥৭॥ মধ্যমেতদনডুহো যত্ৰৈষ বহ আহিতঃ। এতাবদস্য প্রাচীনং যাবান প্রত্যঙ সমাহিতঃ ॥৮॥ যো বেদানডুহো দোহা সপ্তানুপদস্বতঃ। প্রজাং চ লোকং চাপপাতি তথা সপ্তঋষয়ো বিদুঃ ॥৯॥ পদ্ভিঃ সেদিমবক্ৰামন্নিরাং জঙ্ভিরুৎখিদন। শ্রমোেনড়া কীলালং কীনাশশ্চাভি গচ্ছতঃ ॥১০৷৷ দ্বাদশ বা এ রাত্রীব্ৰত্যা আহুঃ প্রজাপতেঃ। তত্ৰোপ ব্ৰহ্ম যো বেদ তদ বা অনডুহে ব্ৰতম্ ॥১১ দুহে সায়ং দুহে প্রাতর্দুহে মধ্যন্দিনং পরি। দোহা যে অস্য সংযন্তি তা বিদ্যানুপদস্বতঃ ॥১২৷৷
বঙ্গানুবাদ— শকটাকর্ষণকারী বৃষ হাল-চালনায় এবং ভার বহন রূপ কর্মের দ্বারা পৃথিবীর পোষণ করছে। সেই-ই কর্ষণ ইত্যাদির দ্বারা নিষ্পন্ন চরু, পুরোডাশ ইত্যাদির উৎপত্তিতে সহায়ক হয়ে আকাশকে পোষণ করছে। সেই-ই অন্তরিক্ষ, এবং পূর্ব ইত্যাদি মহাদিসমূহকে ধারণ করছে। এইরকমে সেই অনড্রান (বৃষভ) সকল ভুবনে তাদের রক্ষার্থে প্রবিষ্ট হচ্ছে। ১।
এই বৃষভ ইন্দ্র রূপে প্রতীত হয়। যেমন ইন্দ্র বৃষ্টিজলের দ্বারা এই চরাচরাত্মক সংসারকে পালন করছেন, সেইরকমেই এই বৃষভ বীর্য সিঞ্চনের দ্বারা পশুগণের উৎপত্তি সাধন করে, দুগ্ধ দধি ধান্য ইত্যাদি। প্রাপ্ত করিয়ে সংসারকে পোষণ করছে। এই ভাবে এই বৃষভ অতীত, অনাগত ও বর্তমান–এই ত্রিকালব্যাপী সকল সামগ্রীকে উৎপন্ন করছে এবং (যজ্ঞ ইত্যাদি) সকল কর্মানুষ্ঠানকে পূর্ণ করাচ্ছে ॥ ২॥
মনুষ্যগণের নিকট এই বৃষভ ইন্দ্রের তুল্য। এই বৃষভ সূর্য রূপে এই জগৎকে প্রকাশিত করে দিয়ে বিচরণ করছে। আমাদের বৃষভের এই হেন মহিমাকে জ্ঞাতশালী জন সুন্দর সন্তান-সম্পন্ন ই হয়ে থাকে এবং মরণের পর পুনরায় সংসারে প্রত্যাগমন করে না ৷ ৩৷
যজ্ঞ ইত্যাদি কর্মর্জনিত পুণ্যের স্বরূপে এই বৃষভ অক্ষয় ফলের দাতা হয়ে থাকে। সোমযাগে সংস্কৃত সোম আপন রসের দ্বারা বৃষভকে পূর্ণ করে থাকে। বর্ষার কারক (পর্জন্য) দেবতা এরা ধারা রূপ হয় এবং মরুৎ-গণ তার উধরূপ (স্তনরূপ) হয়। এই সম্পূর্ণ যজ্ঞই দোহন যোগ্য দুগ্ধ এবং দক্ষিণা এর দোহন ক্রিয়া হয়ে থাকে। অতএব যজ্ঞরূপী বৃষভকে দোহন-করণই অক্ষয় ফলময় হয়ে যায়। ৪৷৷
যজমান এই বৃষভের অধিস্বামী নন; যজ্ঞ ক্রিয়া, দাতা ও প্রতিগ্রহীতাও এবং নিয়ামক নয়। এ সম্পূর্ণ বিশ্বের বিজেতা; বায়ুরূপে বিশ্বের ভরণ-পোষণকর্তা। সংসারের সকল কর্মই এর অধীন; এই চতুষ্পদশালী বৃষভ আমাদের সূর্যস্বরূপ প্রেরণা প্রদান করে থাকে ॥ ৫॥
যে যজ্ঞরূপী বৃষভের দ্বারা পার্থিব দেহকে ত্যাগ করে এই দেবতাগণ মুক্তিদ্বার স্বর্গে আরোহণ করেছেন, তার দ্বারা আমরা সূর্যের উপাসনা করে সুখের অভিলাষে পুণ্যের ফল লাভ করছি। ৬।
এই বৃষভ ইন্দ্রাকার, অগ্নি রূপ, প্রজাপতি ব্রহ্মার সমান। এই তিন বিশ্বানর ইত্যাদিতে তাদাত্ম রূপে প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছেন ॥ ৭।
অখিল বিশ্বের হিতৈষী বৈশ্বানর অগ্নিতে ব্রহ্মা প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছেন এবং পূর্বোক্ত বৃষভে বিরাট তাদাত্ম রূপের দ্বারা প্রবেশ করে গিয়েছেন; অতএব এই বৃষভ বিরাটের সমান ॥ ৮৷৷
বৃষভের সপ্ত অক্ষয় দোহের জ্ঞাতা পুরুষ পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি সন্তান, এবং শুভ কর্ম সমূহের ফলরূপ স্বর্গ ইত্যাদি লোক-সমুদায়কে লাভ করে থাকে। বৃষভের মহিমা সম্পর্কে এই যা কিছু কথিত হলো, তা সত্যরূপী সপ্ত ঋষিই পরিজ্ঞাত আছেন। ৯।
এই বৃষভ অলক্ষ্মীকে অবোমুখে পাতিত করে তার উপর আরোহন করে; এবং আপন জঙ্ঘার দ্বারা ভূমিকে উভিন্ন করে আপন সম্মুখে আগুয়ান পরিশ্রমী কৃষককে অন্ন প্রদান করছে ॥ ১০
যজ্ঞ সম্বন্ধী প্রজাপতির ব্রতযোগ্য দ্বাদশ রাত্রির কথা বিদ্বানগণ বলে থাকেন। সেই সময়ে এই বৃষভরূপে আগত প্রজাপতিকে যে জানতে পারে, সে-ই এই বৃষভ-ব্রতের (অনডুই-ব্রতের) অধিকার রক্ষা করে থাকে। এই জ্ঞানই প্রজাপতি-সম্বন্ধী অনডুহ নামক অনুষ্ঠান। ১১।
পূর্বোক্ত লক্ষণসম্পন্ন বৃষভকে আমি, সায়ংকালে প্রাতঃকালে এবং মধ্যাহ্নেও দোহন করবো। সকল অনুষ্ঠান করণশালীরও ফলসমূহকে আমি দোহন করবো। এই রকমে এই দোহন কর্মের সাথে যে ফলসমূহ যুক্ত হয়ে থাকে, সেই অক্ষুণ্ণ দোহন-কর্মগুলিকে আমি জ্ঞাত আছি। ১২।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অনড়ান্ দাধার ইতি আদ্যেন সূক্তেন অনডুৎসবে নিরুপ্তহবি রভিমৰ্শনং সম্পাতং দাতৃবাচনং চ কুর্যাৎ। তদ্ আহ কৌশিকঃ।….ইত্যাদি। (৪কা, ৩অ. ১সূ)।
টীকা –এই প্রথম সূক্তের দ্বারা অনডুৎসবে (অনডুহ ব্রতে বা যজ্ঞে) নিরুপ্ত হবির দ্বারা অভিমৰ্শন, সম্পাত ও দাতৃবাচন করণীয়।..ইত্যাদি ॥ (৪কা, ৩অ. ১সূ).।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : রোহণী–বনস্পতি
[ঋষি : ঋভু। দেবতা : রোহিণী বনষ্পতি। ছন্দ : গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, বৃহতী ]
রোহণ্যসি বোহণ্যচ্ছিন্নস্য রোহণী। রোহয়েদমরুন্ধতি ॥ ১৷ যৎ তে রিষ্টং যৎ তে দুমস্তি প্রেষ্ঠং ত আত্মনি। ধাতা তৎ ভদ্রয়া পুনঃ সং দধৎ পরুষা পরুঃ ॥ ২॥ সং তে মজ্জা মজ্ঞা ভবতু সমু তে পরুষা পরু। সং তে মাংসস্য বিস্তং সমস্থ্যপি রোহতু ॥ ৩৷৷ মজ্জা মজ্ঞা সং ধীয়তাং চর্মণা চর্ম রোহতু। অসৃক তে অস্থি রোহতু মাংসং মাংসেন রোহতু। ৪ লোম লোমা সং কল্পয়া ত্বচা সং কল্পয়া ত্বচ। অসৃক তে অস্থি মোহতু ছিন্নং সং ধেহ্যোষধে ॥৫স উৎ তিষ্ঠ প্রেহি প্ৰ দ্ৰব রথঃ সুচক্রঃ সুপবিঃ সুনাভিঃ। প্রতি তিষ্ঠোধ্বঃ ॥ ৬৷৷ যদি কর্তং পতিত্বা সংশশ্রে যদি বাশ্ম প্রহৃত জঘান। ঋভু রথস্যেবাঙ্গানি সং দধৎ পরুষা পরুঃ ॥ ৭৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে রক্তবর্ণশালিনী লাক্ষা! তুমি রোহণী (উৎপত্তিকারিণী)। তুমি মাংসের ক্ষতকে পূরণ করতে সমর্থ, এই নিমিত্ত খঙ্গ ইত্যাদির দ্বারা ছিন্ন অঙ্গ হতে প্রবাহিত রুধিরকে তুমি সেখানেই রেখে দাও। এই বিন্দু বিন্দু রূপে ক্ষরণশীল রক্তকে শরীরেই ব্যাপ্ত করে রাখো। ১।
হে পুরুষ! তোমাকে শস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত (বা আহত) করা হয়েছে এবং তার জন্য ঘটিত বেদনার কারণে তোমার শরীর প্রদাহিত হচ্ছে এবং তোমার শরীর মুরাঘাতে চূর্ণ হয়ে গিয়েছে; তোমার সেই অঙ্গকে বিধাতা জোড়ের সাথে জোড়কে মিলিত করে (অর্থাৎ অঙ্গের একটি ভগ্ন অংশের সাথে অপর ভগ্ন অংশটি যথযথভাবে মিলিয়ে) লাক্ষার দ্বারা যোগ করে দিন। ২।
হে আঘাতপ্রাপ্ত পুরুষ! প্রহারের কারণে তোমার যে মজ্জা পৃথক হয়ে গিয়েছে, অথবা তোমার যে অস্থি ভগ্ন হয়ে গিয়েছে, সেই মজ্জা ও অস্থি সুখের সাথে যুক্ত হোক এবং যে মাংস কর্তিত হয়ে গিয়েছে তা-ও অনায়াসে পূর্বের মতো হয়ে যাক ৷ ৩৷
মজ্জা নামক ধাতু মজ্জা নামক ধাতুর সাথে মিলিত হোক, চর্ম চর্মের সাথে যুক্ত থোক; অস্থির সাথে অস্থির জোড় লাগুক, তোমার শরীর হতে ক্ষারিত রক্ত পুনরায় উৎপন্ন হোক। ৪
হে লাক্ষা! প্রহারের দ্বারা পৃথক হয়ে যাওয়া লোমকে পুনরায় উৎপন্ন লোমের সাথে মিলিয়ে ঠিক করো, ছিন্ন চর্মকে চর্মের সাথে যুক্ত করে দাও; অস্থির উপর রক্ত বাহিত হতে থাকুক। এইভাবে, যে অঙ্গই ভঙ্গ হয়ে গিয়েছে, তাকে ঠিকমতো কর্মের যোগ্য করে তোলো। ৫৷৷
হে পুরুষ! শস্ত্র ইত্যাদির প্রহারে যদি তোমার কোন অঙ্গ পৃথক্ (অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন) হয়ে গিয়ে থাকে, তবে তুমি মন্ত্র ও ঔষধির শক্তিতে ঠিক হয়ে গিয়ে উঠে দণ্ডায়মান হও। রথ যেমন ধাবমান হয়ে কর্মরত হয়ে থাকে, তেমনই তুমিও দৃঢ় শরীরশালী হও এবং উখিত হয়ে বেগের সাথে গমন করো। ৬।
যদি ছেদনকারী কোন শস্ত্র শরীরের উপর পতিত হয়ে তাকে কর্তিত করতে থকে, অথবা অপরের দ্বারা নিক্ষিপ্ত (ছুঁড়ে ফেলা) প্রস্তরের আঘাতে দেহে পীড়া (বা যন্ত্রণা) হতে থাকে তবে সেই আঘাতের দ্বারা বিভগ্ন হয়ে যাওয়া অস্থি এই মন্ত্রবলের দ্বারা যুক্ত হয়ে (জুড়ে) যাক। এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্রষ্টা অঙ্গিরাতনয় ঋভু যেমন রথের বিভিন্ন অঙ্গকে মিলিয়ে এক করে থাকেন, তেমনই এই অথর্ব মন্ত্রও শরীরের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গগুলিকে যথাযথভাবে যে যুক্ত করে (অর্থাৎ ঠিকমতো মিলিয়ে) দিক ॥৭
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— রোহিণ্যসি ইতি সূক্তেন শস্ত্রাদ্যভিঘাতজনিত রুধিরপ্রবাহনিবৃত্তয়ে অস্থ্যাদিভঙ্গনিবৃত্তয়ে চ লাক্ষোদকং কথিতং অভিমন্ত্র ঔষঃকালে ক্ষতপ্রদেশং অবসিঞ্চেৎ। তথা অনেন সূক্তেন ঘৃতদুগ্ধং অভিমন্যু ক্ষতাঙ্গং পুরুষং পায়য়েৎ। তথা, তেনৈব দ্রব্যেণ ক্ষতদেশং অভ্যঞ্জ্যাৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৪কা, ৩অ. ২সূ)।
টীকা –শস্ত্র ইত্যাদির আঘাত জনিত কারণে রুধির প্রবাহের ও অস্থি ইত্যাদি ভঙ্গ নিবৃত্তির নিমিত্ত লাক্ষা মিশ্রিত জলের কথ এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে উষাকালে ক্ষতস্থানে সিঞ্চন করণীয়। এবং এই সূক্তমন্ত্রে ধৃত ও দুগ্ধ অভিমন্ত্রিত করে তা আহত পুরুষকে খাওয়ানো কর্তব্য এবং তার দ্বারা ক্ষঙ্গে প্রলেপ প্রদান করণীয়…ইত্যাদি। (৪কা. ৩অ. ২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : রোগনিবারণম
[ঋষি : শংতাতি। দেবতা : সকল দেবতা। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী ]
উত দেবা অবহিতং দেবা উন্নয়থা পুনঃ। উগশ্চষং দেবা দেবা জীবয়থা পুনঃ ॥ ১৷৷ দ্বাবিমৌ বাতৌ বাত আ সিন্ধোরা পরাবতঃ। দক্ষং তে অন্য আবাতু ব্যন্যো বাতু যদ রপঃ ॥ ২॥ আ বাত বাহি ভেষজং বি বাত বাহি য রপঃ ত্বং হি বিশ্বভেষজ দেবানাং দূত ঈয়সে ৷ ৩৷৷ ত্রায়ন্তামিমং দেবাস্ত্রায়ন্তাং মরুতাং গণাঃ। ত্রায়ন্তাং বিশ্বা ভূতানি যথায়মরপা অসৎ ॥ ৪৷৷ আ জ্বাগমং শন্তাতিভিরথো অরিষ্টতাতিভিঃ। দক্ষং ত উগ্ৰমাভারিষং পরা যক্ষ্মং সুবামি তে ॥ ৫ অয়ং মে হস্তো ভগবানয়ং মে ভগবত্তরঃ। অয়ং মে বিশ্বভেষজোহয়ং শিবাভিমৰ্শনঃ ৬ হস্তাভ্যাং দশশাখাভ্যাং জিহ্বা বাচঃ পুরোগবী। অনাময়িকুভ্যাং হস্তাভ্যাং তাভ্যাং ত্বাভি মৃশামসি ॥ ৭।
বঙ্গানুবাদ –হে দেববৃন্দ! এই উপনীত বালককে ধর্মবিষয়ে প্রমাদ-হীন করো। একে অধ্যয়ন ও জ্ঞান ইত্যাদির ফলে সমৃদ্ধ করো। অজ্ঞান বশে এর দ্বারা অনুষ্ঠিত পাপ হতেও একে রক্ষা করো। যে অপরাধ সমূহের দ্বারা (লোকে) আয়ুহীন হয়ে থাকে, তা হত একে দূরে রক্ষিত করে শতায়ুষ্য করে দাও। ১।
প্রাণ ও অপান এই বায়ুদ্বয় শরীরের মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে স্বেস্থান এবং তারও দূর পর্যন্ত সঞ্চারিত হোক। হে উপনীত! এই বায়ুসমূহে যে প্রাণ আছে, তা তোমাকে বলযুক্ত করুক এবং অপান বায়ু তোমাকে পাপ হতে বিযুক্ত রাখুক। ২।
হে বায়ু সকল রোগের বিনাশকারী ঔষধি নিয়ে আগত হও। রোগের উৎপত্তিকারক পাপকে আমাদের নিকট হতে দূর করে দাও। তুমি সকল রোগকে দূরীকরণে সমর্থ। তুমি দেবতাগণের দূত রূপে বিশ্বজগৎকে রক্ষার্থে বিচরণ করে থাকো এবং ইন্দ্রিয়বর্গকে দূত হয়ে তাদের পোষণ-কর্ম করতে থাকো। ৩।
এই উপনীত বালককে সকল দেবতা রক্ষা করুন। ইন্দ্রিয় সমূহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা এর ইন্দ্রিয়সকলকে কর্ম-সমর্থ করুন! মরুৎ-বর্গের সপ্ত গণ, প্রাণাপানের গণ তথা অন্য সকল প্রাণী এইরকমে একে রক্ষা করুক, যাতে এ পাপে লিপ্ত না হয়। ৪
হে উপনীত বালক! আমি তোমাকে সুখদায়ক মন্ত্র ও কল্যাণময় কর্মের দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি। আমি তোমাকে অতুল বলের প্রাপ্তি সাধিত করেছি। তোমার যক্ষ্মা ইত্যাদি ব্যাধিকেও আমি তোমা হতে বিযুক্ত করছি। ৫৷৷
আমার এই ঋষি হস্ত পরম ভাগ্যশালী; এতে সকল রোগ-শোককে দূরীকরণশালিনী ঔষধিসমূহের প্রভাব বর্তমান। আমার এই প্রকার গুণশালী হস্তের সুখপ্রদানশীল স্পর্শের দ্বারা পূর্ণ হোক৷ ৬ ৷
হে উপনীত; যে প্রজাপতির হস্তের দ্বারা নির্মিত বাণীরূপ ইন্দ্রিয়ের আশ্রয়ভূত জিহ্বা প্রথমেই চলতে (প্রযুক্ত হয়ে) থাকে, সেই প্রজাপতির হস্তের দ্বারা তোমাকে স্পর্শ করছি ॥ ৭ ৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— উত দেবাঃ ইতি সূক্তেন উপনয়নান্তরং আয়ুষ্কামং মাণবকং অভিমৃশ্য অনুমন্ত্রয়েত। সূত্রিতং হি।….ইত্যাদি। (৪কা, ৩অ. ৩সূ)।
টীকা –উপনয়নের পর আয়ুষ্কামী মাণবককে স্পর্শ পূর্বক এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রণ করণীয়।… ইতাদি ৷ (৪কা, ৩অ. ৩সূ)।
.
চতুর্থ সূক্ত : স্বর্জ্যোতিঃপ্রাপ্তি
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : অগ্নি, আজ্য। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, জগতী ]
অজো হ্যগ্নেরজনিষ্ট শোকাৎ সো অপশ্যজ্জনিতারমগ্রে। তেন দেবা দেবতামগ্র আয় তেন রোহান্ রুরুহুর্মেধ্যাসঃ ॥১॥ ক্রমধ্বমগ্নিনা নাকমুখ্যান হস্তেষু বিভ্রতঃ। দিবসৃষ্ঠং স্বর্গত্বা মিশ্রা দেবেভিরাধ্বম্ ॥ ২॥ পৃষ্ঠাৎ পৃথিব্যা অহমন্তরিক্ষমারুহমন্তরিক্ষা দিবমারুহ। দিবো নাকস্য পৃষ্ঠাৎ স্বর্জ্যোতিরগামহম্ ॥ ৩॥ স্বর্যন্তো নাপেক্ষন্ত আ দ্যাং রোহন্তি রোদসী। যজ্ঞং যে বিশ্বততাধরং সুবিঘাংসো বিতেনিরে॥ ৪৷ অগ্নে প্রেহি প্রথমো দেবতানাং চক্ষুর্দোনামুত মানুষাণা। ইয়ক্ষমাণা ভৃগুভিঃ সজোষাঃ স্বর্যন্ত যজমানাঃ স্বস্তি ॥ ৫॥ অজমনজ্ঞি পয়সা ঘৃতেন দিব্যং সুপর্ণং পয়সং বৃহন্ত। তেন গেষ্ম সুকৃতস্য লোকং স্বরারোহন্তো অভি নাকমুত্তমম্ ॥ ৬। পঞ্চৌদনং পঞ্চভিরলিভির্দবোদ্ধর পঞ্চধৈমোদন। প্রাচ্যাং দিশি শিরো অজস্য ধেহি দক্ষিণায়াং দিশি দক্ষিণং ধেহি পার্শ্বম্ ॥ ৭ প্রতীচ্যাং দিশি ভসমস্য ধেহুত্তরস্যাং দিশু্যত্তরং ধেহি পার্শম। ঊর্ধ্বায়াং দিশ্যজস্যান্কং ধেহি দিশি বায়াং ধেহি পাজস্যমন্তরিক্ষে মধ্যতো মধ্যমস্য ॥ ৮ শৃতমজং শৃতয়া পোর্ণহি ত্বচা সর্বৈরঙ্গৈঃ সম্ভতং বিশ্বরূপ। স উৎ তিষ্ঠেতো অভি নামমুত্তমং পশ্চিতুর্ভিঃ প্রতি তিষ্ঠ দিক্ষু ॥ ৯৷
বঙ্গানুবাদ –অজ (ছাগ) পবিত্র অগ্নির তাপ হতে উৎপন্ন হয়েছে। এ (অর্থাৎ সেই ছাগ) সকলের প্রথমে (বা অগ্রে) উৎপাদক প্রজাপতি বা অগ্নিকে দর্শন করতে পেরেছিল। প্রথম রচিত (অর্থাৎ সৃষ্ট) সেই অজের দ্বারা ইন্দ্র ইত্যাদি দেবত্ব লাভ করতে পেরেছিলেন এবং তারই সাধনে (অর্থাৎ সেই অজের দ্বারা যজ্ঞ সাধিত করে) অপর ঋষিগণও উচ্চ লোকসমূহকে লাভ করেছিলেন। এই রকম অজাত্মক যজ্ঞ দেবত্ব ইত্যাদি ফলকে সিদ্ধ করে থাকে। ১।
হে মনুষ্য! অগ্নির দ্বারা যজ্ঞ সাধন করে তুমি স্বর্গ ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ লোকসমূহকে প্রাপ্ত হও। পুনরায় অন্তরিক্ষের পৃষ্ঠের সমান স্বর্গে উপনীত হয়ে (পৌঁছিয়ে) দেবতাগণের মধ্যে স্থান প্রাপ্ত হয়ে তাদের সমানই ঐশ্বর্যশালী হও। ২।
আমি পৃথিবী হতে অন্তরিক্ষে এবং অন্তরিক্ষ হতে স্বর্গলোকে আরোহণ করছি। সেই স্বর্গলোকে দুঃখ নেই। তার উধ্বস্থ সূর্যমণ্ডলের জ্যোতিতে আমি লীন হয়ে যাচ্ছি। ৩।
যজ্ঞফলের দ্বারা স্বর্গলাভকারীগণ সাংসারিক সুখসমূহের কামনা করে না। যে যজমান অভীষ্ট ফলপ্রাপ্তির সাধনভৃত যজ্ঞকে জ্ঞাত ও তাকে সাধন করে থাকেন, তাঁরা অন্তরিক্ষ-স্বর্গ-মর্ত্য এই লোকত্রয়ের উপর বিজয় প্রাপ্ত হয়ে থাকে। ৪
হে অগ্নি! তুমি দেবতাগণের মধ্যে মুখ্য; এই আহ্বান যোগ্য স্থানে আগমন করো। এই অগ্নি ইন্দ্র ইত্যাদি দেববৃন্দের নিকট হবিঃবহনকারী হওয়ায় তাঁদের নেত্রের সমান প্রিয় এবং মনুষ্যকে শ্রেষ্ঠ লোকসমূহ প্রদর্শনকারী হওয়ায় তাদেরও নেত্রের সমতুল্য। অতএব তাঁর প্রকাশে প্রথমে পূজন, তারপর যজ্ঞ-সাধনশীল কর্মের ফলরূপ স্বর্গকে প্রাপ্ত হওয়া যায় ॥ ৫॥
হবিঃ রূপ অজকে দুগ্ধের ন্যায় রসযুক্ত ঘৃতের দ্বারা লিপ্ত করছি। এই অজ যজমানকে স্বর্গে প্রেরণ করতে সমর্থ। এই রকম অজের দ্বারা আমরা শ্রেষ্ঠ স্বর্গলোক লাভ করে পুনরায় সূর্যরূপ পরম জ্যোতিতে একাকার হয়ে যাচ্ছি। ৬।
হে পাবক! পঞ্চ প্রকারে বিভক্ত হওনশীল এই অজকে পঞ্চাঙ্গুলিরূপ দীর সাহায্যে স্থালী হতে উত্তোলিত করে কুশে রক্ষিত পঞ্চভাগে রক্ষিত ওদনে স্থাপিত করো (বা বন্টন করো)। এর পনকৃত শিরোভাগকে পূর্ব দিকে এবং পশ্চাদবর্তী ভাগকে দক্ষিণ দিকে স্থাপন করো। ৭।
কটিদেশের মাংসকে পশ্চিম দিকের ওদনের সাথে উত্তরপার্শ্বস্থ মাংসকে উত্তর দিকের ওদনের সাথে, পৃষ্ঠভাগের মাংসকে ঊর্ধ্ব দিকের ওদনের সাথে, উদরভাগের মাংসকে নিচের দিকের ওদনের সাথে এবং মধ্যভাগের মাংসকে মধ্যবর্তী দিকের ওদনের সাথে স্থাপিত করো ॥ ৮
(এটি অজ অথবা জীবাত্মার আত্মসমর্পণের মন্ত্র, যাতে, কিনা আপন সমস্ত শরীরকে বিশ্ব-হিতের নিমিত্ত সমর্পিত করার ভাবনা ব্যক্ত করা হয়েছে। এই তথ্যকে প্রকট করার নিমিত্ত এই কথা বলা হয়েছে যে, আমার শির পূর্ব দিকের উদ্দেশে অর্পণকৃত হয়েছে–দক্ষিণ দিকের উদ্দেশ্যে আমার দক্ষিণ কক্ষ (বাহুমূল) অর্পিত করা হয়েছে পশ্চিম দিকের উদ্দেশে আমার পশ্চাৎ-ভাগ অর্পিত হয়েছে–উত্তর দিকের উদ্দেশ্যে আমার বাম কক্ষ অর্পণ করা হয়েছে–ইত্যাদি। এই রকমে আমার সম্পূর্ণ শরীর সকল দিকের উদ্দেশ্যে সমর্পিত হয়েছে এবং আমি সকল জগতের নিমিত্ত জীবিত আছি। এইরকমে সম্পূর্ণ জগতের উদ্দেশে আমার আত্মসমর্পণ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে)। এই রকমে সকল অঙ্গে বিশ্বরূপ রূপে পরিপূর্ণ অজ-কে পরমাত্মার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত করো। হে অজ! তুমি এই লোক হতে স্বর্গাভিমুখে উত্থিত হয়ে চারি দিকে ব্যাপ্ত হও। ৯।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অজো হ্যগ্নেঃ ইতি সূক্তেন অজৌদনসবে হবিরভিশনাদিকং কুর্যাৎ.. সোমযাগে উত্তরবেদগ্নি প্রণয়নেপি এষা জপ্যা। …ইত্যাদি। (৪কা, ৩অ. ৪সূ)।
টীকা –এই সূক্তমন্ত্রের দ্বারা অজৌদন-যজ্ঞে হবিঃ-অভিমৰ্শন ইত্যাদি করণীয়। সোমবাগে উত্তরবেদগ্নি প্রণয়নেও এই মন্ত্র জপনীয়।…ইত্যাদি। (৪কা, ৩য়, ৪সূ)।
.
পঞ্চম সূক্ত : বৃষ্টিঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : দিক্ প্রভৃতি। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ্ প্রভৃতি ]
সমুৎপতন্তু প্রদিপশা নভস্বতীঃ সমভ্রাণি বাতজুতানি যন্তু। মহঋষভস্য নদতো নভস্বততা বাত্রা আপঃ পৃথিবীং তৰ্পয়ন্তু ॥১॥ সমীক্ষয়ন্তু তবিষাঃ সুদানবোহপাং রসা ওষধীভিঃ সচন্তাম্। বর্ষস্য সৰ্গা মহয়ন্তু ভূমিং পৃথগ জায়ন্তামোষধয়ো বিশ্বরূপাঃ ॥ ২॥ সমীক্ষয়স্ব গায়তো নংসপাং বেগাসঃ পৃথগুদ বিজন্তাম্। বর্ষস্য সৰ্গা মহয়ন্তু ভূমিং পৃথগ জায়ন্তাং বীরুধো বিশ্বরূপাঃ ॥ ৩ ৷৷ গণাস্ত্রোপ গায়ন্তু মারুতাঃ পর্জন্য ঘোষিণঃ পৃথক। সর্গা বৰ্ষস্য বর্ষতো বর্ষন্তু পৃথিবীমনু ॥৪॥ উদীরয়ত মরুতঃ সমুদ্রতত্ত্বেষো অর্কো নভ উৎ পাতয়াথ। মহঋষভস্য নদতো নভস্বতো বাশ্ৰা আপঃ পৃথিবীং তৰ্পয়ন্তু ॥ ৫॥ অভি ক্ৰন্দ স্তনয়ার্দয়োদধিং ভূমিং পর্জন্য পয়সা সমচ্ছি। ত্বয়া সৃষ্টং বহুলমৈতু বৰ্ষমাশারৈষী কৃশগুরেত্বস্তম্ ॥ ৬৷৷ সং বোহবন্তু সুদানব উৎসা অজগরা উত। মরুদ্ভিঃ প্রচ্যুতা মেঘা বর্ষন্তু পৃথিবীমনু ॥ ৭। আশামাশাং বি দ্যোতং বা বান্তু দিশোদিশঃ। মরূদ্ভিঃ প্রচ্যুতা মেঘাঃ সং যন্তু পৃথিবীমনু ॥ ৮ আপো বিদ্যুদভ্রং বর্ষং সং বোহবন্তু সুদানব উৎসা অজগরা উত। মরুদ্ভিঃ প্রচ্যুতা মেঘাঃ প্রাবন্তু পৃথিবীমনু ॥ ৯৷ অপামগ্নিস্তভিঃ সংবিদানো য ওষধীনামধিপা বভূব। স নো বর্ষং বনুতাং জাতবেদাঃ প্রাণং প্রজাভ্যো অমৃতং দিবম্পরি॥ ১০ প্রজাপতিঃ সলিলাদা সমাদ্রাদাপ ঈর্দয়নুদধিময়াতি। প্র প্যায়তাং বৃষ্ণো অশ্বস্য রেতোহর্বাঙেতেন স্তনয়িতুনেহি ॥১১৷৷ অপো নিষিঞ্চন্নসুরঃ পিতা নঃ শ্বসন্তু গর্গরা অপাং বরুণাব নীচীরপঃ সৃজ। বদন্তু পৃশ্নিবাহবো মণ্ডুকা হরিণানু ॥ ১২৷৷ সংবৎসরং শশয়ানা ব্রাহ্মণ ব্রতচারিণঃ। বাচং পর্জন্যজিন্বিতাং প্র মন্ডুকা অবাদিষুঃ ॥ ১৩৷৷ উপপ্রবদ মঞ্জুকি বর্ষমা বদ তাদুরি। মধ্যে হ্রদস্য প্লবস্ব বিগৃহ্য চতুরঃ পদঃ ॥ ১৪। খন্বখা ই খৈমখা ই মধ্যে তদুরি। বর্ষং বনুধ্বং পিতরো মরুতাং মন ইচ্ছত। ১৫। মহান্তং কোশমুদচাভি ফিঞ্চ সবিদ্যুতং ভবতু বাতু বাতঃ। তন্বতাং যজ্ঞং বহুধা বিসৃষ্টা আনন্দিনীরোষধয়ো ভবন্তু ॥ ১৬
বঙ্গানুবাদ –পূর্ব ইত্যাদি দিমূহ মেঘের সাথে উদয় (বা মিলিত) হোক। জল-বৃষ্টিশালী: মেঘ, বায়ুর দ্বারা প্রেরিত হোক এবং একত্রীভূত হয়ে মহা বৃষভের ন্যায় গর্জন পূর্বক ভূমিকে তৃপ্ত করুক ॥১॥
সুন্দর দানশালী মরুৎ-গণ বৃষ্টিপাত করুক। বপনকৃত যব, ধান্য ইত্যাদির বীজসমূহে বৃষ্টির জল মিলিত হোক। বর্ষার ধারারাশি পৃথিবীর অভিষেক করুক। তাতে অনেক রকমের শস্য ও ঔষধি বিবিধ রূপে উৎপন্ন হোক। ২।
হে মরুৎ-বর্গ! আমাদের স্তুতির দ্বারা প্রেরিত হয়ে তোমরা জলপূর্ণ মেঘগুলিকে প্রদর্শন করাও। জলের প্রবাহ পৃথক পৃথক ভাবে উৎক্ষিপ্ত হয়ে পৃথিবীকে অভিষিক্ত করুক। পুনরায় পৃথিবীতে অনেক রকমর বনস্পতি উৎপন্ন হোক ॥ ৩৷৷
হে বর্ষার অভিমানী পর্জন্যদেব! গর্জনশীল মরুঙ্গণ তোমাদের স্তাবক হোক। তোমরা জলের বিন্দুসমূহের দ্বারা পৃথিবীকেসিক্ত করো। ৪
হে মরুৎ-গণ! বর্ষার জলকে সমুদ্র হতে উপর দিকে প্রেরিত করো। জল-বর্ষণশালী মেঘ, বায়ুর দ্বারা প্রেরিত হোক এবং একত্রীভূত হয়ে মহা বৃষভের ন্যায় গর্জনশীল জলের প্রবাহ ভূমিকে তৃপ্ত করুক। ৫।
হে পর্জন্য দেবতা! তুমি সকল দিক হতে শব্দ ধ্বনিত করো। মেঘের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গর্জন করো। তোমার দ্বারা প্রেরিত মেঘরাশি জলপূর্ণ বৃষ্টিকে আনয়ন করুক। সূর্য আপন কিরণসমূহকে সূক্ষ্ম (ক্ষীণ) করে অদৃশ্য হয়ে যাক ॥ ৬।
হে মনুষ্যগণ! সুন্দর দানশীল মরুৎ-গণ তোমাদের তৃপ্ত করুক। অজগরের তুল্য স্থূল জল-প্রবাহ উৎপন্ন ও হোক এবং প্রেরিত মেঘরাশি পৃথিবীর উপর বর্ষণ করুক। ৭।
প্রতিটি দিকে মেঘকে প্রেরণকারী বায়ুসমূহ সঞ্চারিত হোক। দিকে দিকে বিদ্যুৎ চমকিত হোক এবং বায়ুর প্রেরণায় মেঘের দল পৃথিবীর উপর বৃষ্টিপাতের উদ্দেশ্যে একত্ৰকৃত হোক। ৮।
হে শোভন দানশীল মরুৎ-বর্গ! মেঘে পরিব্যাপ্ত জল, বিদ্যুৎ, জলযুক্ত মেঘ, বৃষ্টির জল তথা অজগর তুল্য স্কুল তোমাদের প্রবাহ সংসারের তৃপ্তিকর হোক। তোমাদের দ্বারা প্রেরিত মেঘ পৃথিবীকে জলে পূর্ণ করে দিক ॥ ৯৷
মেঘের দেহ রূপ জলের দ্বারা প্রকট বিদ্যুৎরূপ অগ্নি উৎপদ্যমান (বা উৎপন্ন-হওনশীল) বনস্পতিসমূহের ঈশ্বরস্বরূপ। সেই জাতবেদা (উৎপন্ন হওনশীল-সকলের জ্ঞাতা) অগ্নি, আমাদের অর্থাৎ প্রাণীগণের প্রাণদায়িনী ও অমৃত প্রাপনশীল বৃষ্টি প্রদান করুক ॥ ১০৷৷
হে সূর্য! তুমি প্রজাপালক; সমুদ্র হতে বৃষ্টি রূপ জলকে প্রেরিত করো। তারা অশ্বের ন্যায় বেগশালী, ব্যাপনশীল বৃষ্টিরূপ মেঘের বীর্য-বর্ধনকে প্রাপ্ত হোক। হে পর্জন্য! এই প্রবৃদ্ধ বীর্যের সাথে তুমি আমাদের সম্মুখে আগত হও ॥ ১১
বৃষ্টির জল প্রদান পূর্বক সূর্য, তির্যক বৃষ্টির দ্বারা প্রাণীগণকে তৃপ্ত করুন। জলের প্রবাহগুলি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠুক। হে বরুণ! জলরাশিকে মেঘসমূহ হতে বিযুক্ত করে ভূমির উপর আনয়ন করো। পুনরায় তৃণহীন ভূমির উপর শ্বেত-বাহুসম্পন্ন মণ্ডুকগণ (রেঙ্গুলি) সুন্দর শব্দ করতে থাকুক ॥ ১২৷৷
ব্রত ও আচার পূর্বক অবস্থানকারী ব্রাহ্মণবর্গের মতো সারাটি বর্ষব্যাপী বায়ু ও সৌরতাপজনিত কষ্ট সহ্য করে শয়নশীল মণ্ডুকগণ বর্ষার জলের দ্বারা জাগ্রত হয়ে মেঘের উদ্দেশে প্রীতিপূর্ণ বাক্য বলে থাকে ॥ ১৩৷৷
হে মকী! তুমি হর্ষিত হও, উৎকৃষ্ট রবে মুখরিত হয়ে ওঠো। হে মণ্ডুক-দুহিতা! তুমি (বা তোমরা) বর্ষার জলে পরিপূর্ণ সরোবরে সন্তরণ পূর্বক বর্ষার ন্যায়ই শব্দ করো ॥ ১৪৷
হে খন্বখা! হে খৈমখা! হে তাদুরী! তোমরা তিন প্রকার মণ্ডুক দল মিলিতভাবে আপন নির্ঘোষে বৃষ্টি প্রদান করো। হে মকগণ! তোমরা মরুৎ-গণের বৃষ্টি করণের কামনাশালী মনে নিজেদের শব্দের দ্বারা বৃষ্টির-প্রেরণা সঞ্চারিত করো। ১৫৷৷
হে পর্জন্য! তুমি সমুদ্র হতে মেঘ উত্তোলিত পূর্বক আনয়ন করো এবং পৃথিবীর সর্ব দিকে সিঞ্চন করো। বায়ু বৃদ্ধির অনুকূল হোক, অন্তরিক্ষ বিদ্যুতে সাথে যুক্ত হোক, জল বহু প্রকারে যজ্ঞ-কর্মকে বিস্তৃত (বা বৃদ্ধি সাধন) করুক। বর্ষার জলে ধান্য যব ইত্যাদি এবং ঔষধি সমূহ পুষ্ট হয়ে উঠুক ॥ ১৬৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সমুৎপতন্তু ইতি সূক্তেন বৃষ্টিকামঃ মরুদ্ভো মান্ত্রবর্ণিকীভ্যো বা দেবতাভ্য আজ্যহোমঃ। কাশদিবিধুবকবেতসাখ্যা ওষধীঃ একস্মিন্ পাত্রে কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্যু জলমধ্যে অধোমুখং নিনয়নং। তাসামেব কাশাদীনাং সম্পাতিতাভিমন্ত্রিতানাং অঙ্গু প্লাবনং। শশিরসো মেষশিরসশ্চ অভিমন্ত্রিতস্য অঙ্গু প্রক্ষেপনং। মানুষকেশজরদুপানহাং বংশাগ্রে বন্ধনং তুষসহিতং আমপাত্র (ম অভি) মন্ত্রিতোদকেন সম্মোক্ষ্য ত্রিপাদে শিক্যে নিধায় অষ্ণু প্রক্ষেপণং চ ইত্যেতানি অভিবর্ষণকর্মাণি কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি।….ইত্যাদি৷ (৪কা, ৩অ. ৫সূ)।
টীকা –সমুৎপতন্তু ইত্যাদি সূক্তের দ্বারা বৃষ্টি কামনা পূর্বক মরুৎ-দেবতাগণের বা মন্ত্রবর্ণিত দেবতাগণের উদ্দেশে আজ্য হোম সাধনীয়। কাশ ইত্যাদি ওষধিসমূহকে একটি পাত্রে গ্রহণ পূর্বক্ত এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করণ ইত্যাদিরূপ হোম-প্রক্রিয়া উপযুক্ত সূক্তস্য বিনিয়োগ অংশে দ্রষ্টব্য ॥ (৪কা, ৩অ. ৫সূ)।