দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : বিষঘ্নম
[ঋষি : গরুত্মান। দেবতা : ব্রাহ্মণ প্রভৃতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
ব্রাহ্মণণা জজ্ঞে প্রথমো দশশীর্ষো দশাস্যঃ। স সোমং প্রথমং পপৌ স চকারারসং বিষম্ ॥১॥ যাবতী দ্যাবাপৃথিবী বরিমণ যাবৎ সপ্ত সিন্ধবো বিতষ্ঠিরে। বাচং বিষস্য দূষণীং তামিতো নিরদিষম্ ॥ ২॥ সুপর্ণা গরুত্মা বিষ প্রথমমাবয়ৎ। নামীমদো নারূরুপ উম্মা অভবঃ পিতুঃ ॥৩॥ যস্ত আস্যৎ পঞ্চাঙ্গুরির্বক্রাচ্চিদধি ধন্বনঃ। অপস্কম্ভস্য শল্যান্নিরবোচমহং বিষম্ ॥৪৷ শল্যাদ বিষং নিরবোচং প্রাঞ্জনাদুত পর্ণধে। অপাষ্ঠাছুঙ্গাৎ কুল্মলানিরবোচমহং বিষম্ ॥ ৫৷৷ অরসস্ত ইমো শল্যোহথো তে অরসং বিষম উতারসস্য বৃক্ষস্য ধনুষ্টে অরসারসম্ ॥ ৬৷৷ যে অপীষ যে অদিহন য আস্য যে অবাসৃজ। সর্বে তে বয়ঃ কৃতা বর্ধির্বিষগিরিঃ কৃতঃ ॥৭॥ বয়স্তে খনিতানো বস্তুমস্যোষধে। বখ্রিঃ স পর্বতো গিরিতে জাতমিদং বিষম৷৷ ৮
বঙ্গানুবাদ –তক্ষক হলো প্রথম ব্রাহ্মণ জাতীয় সর্প; তার দশটি ফণা এবং দশটি মুখ। এ ক্ষত্রিয়-জাতীয় সর্পগণের মধ্যে প্রথম হওয়ার কারণে আকাশস্থ সোমকে পান করেছিল। সেই অমৃতময় সোম পানকারী ব্রাহ্মণ সর্প কল-মূল ফল ইত্যাদি হতে উৎপন্ন এই বিষকে নিঃপ্রভাব করুক ॥১॥
দ্যাবাপৃথিবী যত পরিমিত স্থান ব্যেপে বিস্তৃত আছে, সমুদ্র যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে, ততদূর পর্যন্ত স্থানব্যাপী কলমূল, ফল ইত্যাদি জনিত বিষকে দূরীকরণ শালিনী মন্ত্রযুক্ত বাণীকে প্রযুক্ত করছি। ২।
হে বিষ! বৈনতেয় গরুড় তোমাকে প্রথম ভক্ষণ করেছিল, তাতে তুমি নির্বীর্য হয়ে গিয়েছিলে। এখন এই বিষের দ্বারা পীড়িত পুরুষের জ্ঞানকে নষ্ট করো না। তুমি এর নিমিত্ত অন্নের ন্যায় জীর্ণতা প্রাপ্ত হও৷ ৩৷
পাঁচটি অঙ্গুলীশালী যে হস্ত মুখ-যন্ত্ৰ হতে তোমার (অর্থাৎ পুরুষের) শরীরে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে, সেই বিষ ও বিষ প্রদানকারী হস্তকে আমি ক্ৰমুক অর্থাৎ শুপারি বৃক্ষের খণ্ডের দ্বারা মন্ত্রশক্তির প্রভাবে প্রভাবহীন করে দিচ্ছি। ৪।
বাণের ফলকের দ্বারা যে বিষ তোমার শরীরে প্রবিষ্ট হয়েছে, তাকে আমি মন্ত্রবলে দূর করে দিচ্ছি। প্রলেপ হতে, বিষময় পত্র হতে, শৃঙ্গ হতে এবং মল (বা বিষ্ঠা) ইত্যাদির দ্বারা যে বিষ উৎপন্ন হয়েছে, তাকেও আমি মন্ত্রশক্তির দ্বারা পৃথক করে দিচ্ছি। ৫।
হে বাণ! তোমার বিষযুক্ত ফলক নিবীর্য হোক, তোমার বিষ নিষ্ফল হোক। আরও, তোমার ধনুকও ব্যর্থ হয়ে যাক ৷ ৬ ৷৷
বিষময়ী ঔষধি প্রদানকারী, লেপনের দ্বারা বিষ প্রয়োগশালী, দূর হতে বিষ প্রক্ষেপশালী, নিকটে অবস্থিত থেকে অন্ন ও জলে বিষ মিশ্রণকারী– এই সকল বিষ-দাতৃগণকে এবং বিষের উৎপত্তির কারণ রূপ পর্বত ইত্যাদিকেও আমি নির্বীর্য করে দিয়েছি। ৭
হে বিষযুক্ত ঔষধি! তোমাকে খননকারী জন নিবীর্য হোক; তুমিও মন্ত্রবলের দ্বারা নিষ্প্রভাব হও; যে পর্বতের উপরে এই বিষযুক্ত কন্দ, মূল, ফল ইত্যাদি উৎপন্ন হয়ে থাকে, সেই পর্বতও নির্বীর্য হয়ে যাক ॥ ৮
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ব্রাহ্মণো জজ্ঞে বারিদং ইত্যাভ্যাং কন্দবিষভৈষজ্যার্থং উদকং অভিমন্ত্র বিষাবৃতং পুরুষং পায়য়েৎ। তথাবিষোদকেন প্রোক্ষেৎ। তথা কৃমুকবৃক্ষশকলং সহোদকং অভিমন্ত্র পায়য়েৎ প্রোক্ষেচ্চ। তথা আভ্যাং জীর্ণহরিণচর্মাবজ্বালিতং পতিতমির্জনিকাশকলৈৰ্বা অবজ্বালিতং উদকং আভ্যাং অভিমন্ত্ৰা তেনোদকেন বিষাবৃতঃ অবসিঞ্চেৎ। তথা আভ্যাং সুক্তাভ্যাং উদপাত্রং সম্পত্য অভিমন্ত্র তেন প্লাবয়েৎ। তথা বিষলিপ্তাভ্যাং ঊধ্বফলভ্যাং সমন্থং মথিত্বা অভিমন্ত্র পায়য়েৎ। তথা মদনফলানি প্রত্চং অভিমন্ত্র যথা ছদৰ্ভবতি তথা প্রত্চং ভক্ষয়েৎ। সর্পিষা সহিং হরিদ্রাং অনেনৈবাভিমন্ত্র আবিষ্টবিষং পায়য়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি৷৷ (৪কা, ২অ. ১সূ)৷
টীকা— কন্দবিষের ভৈষজ্যার্থে এই সূক্তের দ্বারা জল অভিমন্ত্রিত করে বিষাবৃত জনকে পান করানো কর্তব্য। তথাবিধ জলের দ্বারা প্রেক্ষণ করণীয়। কৃমুক (বা ক্রমুক অর্থাৎ শুপারী) বৃক্ষের বল্কলখণ্ডের সাথে জল অভিমন্ত্রিত করে পান করানো ও প্রক্ষেপ করানো কর্তব্য। ইত্যাদি আরও নানাভাবে নানারকম বিষক্রিয়ার দূরীকরণে এই সূক্তের বিনিয়োগ উপযুক্ত সূক্তস্য বিনিয়োগঃ অংশে দ্রষ্টব্য ॥ (৪কা, ২অ. ১সূ)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : বিষনাশনম্
[ঋষি : গরুত্মান। দেবতা : বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ]
বারিদং বারয়াতৈ বরণাবত্যামধি। তত্রামৃতস্যাসিক্তং তেনা তে বারয়ে বিষম্ ॥১॥ অরসং প্রাচ্যং বিষমরসং যদুদীচ্য। অথেদমধরাচ্যং করম্ভেণ বি কল্পতে ॥২॥ করম্ভং কৃত্বা তিং পীবর্ম্পকমুদারথি। ক্ষুধা কিল ত্বা দুষ্টনো জক্ষিবান্তস ন রুরুপঃ ॥ ৩৷৷ বি তে মদং মদাবতি শরমিব পাতয়ামসি। প্র ত্বা চরুমিব যেষন্তং বচসা স্থাপয়ামসি ॥ ৪৷৷ পরি গ্রামমিবাচিতং বচসা স্থাপয়ামসি। তিষ্ঠা বৃক্ষ ইব স্থাষ্যভ্রিখাতে ন রূরুপঃ ॥৫॥ পরস্তৈা পৰ্যক্ৰীণন দূর্শেভিরজিনৈরুত। প্রক্রীরসি ত্বমোষধেহভ্রিখাতে ন রূরুপঃ ॥৬॥ অনাপ্তা যে বঃ প্রথমা যানি কর্মাণি চক্রিরে। বীরা নো অত্র মা দভন্ ত ব এতৎ পুরো দধে ॥৭ ৷৷
বঙ্গানুবাদ— বরণ নামক বৃক্ষউৎপন্ন-করণশালিনী বরণাবতীর জল আমাদের বিষকে দূরীভূত করে দিক। এর জলে দ্যুলোকস্থিত অমৃতের স্বরূপ বিদ্যমান রয়েছে। সেই অমৃতময় জলের দ্বারা কন্দ ইত্যাদির দ্বারা উৎপন্ন তোমার বিষকে নিবারণ করছি। ১।
পূর্ব দিকের বিষ নির্বীর্য হোক; উত্তর, দক্ষিণ সকল দিকের বিষ মন্ত্রশক্তির দ্বারা নিবার্য হয়ে যাক। পৃথিবীর নিম্নপ্রদেশে উৎপাদিত বিষ করম্ভ নামক বিষহরি মন্থের দ্বারা নিবীর্য হোক ৷ ২৷৷
হে বিষ! তুমি শরীরকে দূষিত-করণশালী। জেনে করম্ভরূপ মন্থ মনে করে পীড়াজনক তোমাকে এই পুরুষ ভক্ষণ করে ফেলেছে। তুমি একে চেতনা-রহিত করো না ॥ ৩॥
হে চেতনা-বিলোপকারিণী ঔষধি! তোমার বিষকে আমরা ধনু হতে বিক্ষিপ্ত তীরের ন্যায় শরীর হতে দূর করে দিচ্ছি। হে বিষ! গুপ্তভাবে বিচরণশীল দূতের (বা চরের) ন্যায় গোপনরূপে এই বিষোপহত পুরুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থানকারী তোমাকে মন্ত্রশক্তির দ্বারা নিষ্ক্রান্ত করে দূর করে দিচ্ছি। ৪
হে খননের দ্বারা লব্ধ ঔষধি! তুমি বৃক্ষের ন্যায় আপন স্থানে অটল থাকো, এই পুরুষকে মূৰ্ছিত করো না। আমরা তোমার বিষকে মন্ত্ররূপ বাক্যের দ্বারা দূর করে দিচ্ছি ৷৷ ৫
হে বিষাক্ত ঔষধি! মহর্ষিগণ তোমাকে শুদ্ধকরণের নিমিত্ত ক্রয় করেছিলেন। তুমি হরিণচর্মের বিনিময়ে ক্রীত হয়েছিলে। অতএব তুমি ক্রীত হয়ে (আত্মাধিকারহীনের মতো) এই স্থান হতে দূর হও এবং এই পুরুষকে অচেতন করো না। ৬।
হে মনুষ্যগণ! যে শক্রবর্গ যজ্ঞ ইত্যাদি মুখ্য কর্ম সাধন করেছিল, তারা আপন সেই মুখ্য কর্মের দ্বারা আমাদের পুত্র পৌত্র ইত্যাদির যেন নাশক না হতে পারে। এই (বিপদ) হতে রক্ষিত হওয়ার নিমিত্ত আমি চিকিৎসা রূপ কর্মকে প্রস্তুত (বা উপস্থাপিত) করছি ॥৭॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –বারিদং বারয়াতৈ ইতি দ্বিতীয়সূক্তস্য পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ। (৪কা, ২অ. ২সূ)।
টীকা— এই সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তে উক্ত হয়েছে। (৪কা, ২অ. ২সূ)৷৷
.
তৃতীয় সূক্ত : রাজ্যাভিষেকঃ
[ঋযি : অথর্বাঙ্গিরা। দেবতা : রাজ্যাভিষেক, আপ। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ]
ভূত ভূতেষু পয় আ দধাতি স ভুনামধিপতিবর্ভূর্ব। তস্য মৃত্যুশ্চরতি রাজসুয়ং স রাজা রাজ্যমনু মন্যতামিদম্ ॥১॥ অভি প্রেহি মাপ বেন উগ্রশ্চেত্তা সপত্নহা। আ তিষ্ঠ মিত্রবর্ধন তুভ্যং দেবা অধি ব্রুবন্ ॥২॥ আতিষ্ঠন্তং পরি বিশ্বে অভূষংচ্ছ্বিয়ং বসানশ্চরতি স্বরোচিঃ। মহৎ তদ বৃষ্ণো অসুরস্য নামা বিশ্বরূপো অমৃতানি তস্থৌ ॥৩॥ ব্যাঘ্ৰো অধি বৈয়াঘ্ৰে বি ক্রমস্ব দিশো মহীঃ। বিশষ্যা সর্বা বাঞ্ছাপো দিব্যাঃ পয়স্বতীঃ ॥৪॥ যা আপো দিব্যাঃ পয়সা মদন্ত্যন্তরিক্ষ উত বা পৃথিব্যাম। তাসাং ত্বা সর্বাসামপামভি ষিঞ্চামি বৰ্চসা ॥৫॥ অভি ত্বা বৰ্চসাসিচন্নাপো দিব্যাঃ পয়স্বতীঃ। যথাসসা মিত্রবর্ধনস্তথা ত্বা সবিতা করৎ ॥৬॥ এনা ব্যাঘ্রং পরিষস্বজানাঃ সিংহং হিম্বন্তি মহতে সৌভগায়। সমুদ্রং ন সুভুবস্তস্থিবাংসং মজ্যন্তে দ্বীপিনম স্বন্তঃ ॥৭॥
বঙ্গানুবাদ –অভিষিক্ত হওয়ার পর ঐশ্বর্য লাভকারী ও অনুজীবী বা আশ্রিত জনগণকে অন্ন দানশীল রাজাই প্রাণধারীগণের অধিস্বামী হয়ে থাকেন। যমরাজ প্রাণীগণের উপর শাসন-করণে এবং দুষ্টকে দণ্ড দানের নিমিত্তই রাজার দ্বারা রাজসূয় যজ্ঞ অনুষ্ঠিত করিয়ে থাকেন ৷৷ ১।
হে রাজন! তুমি হস্তী, অস্ব, রথ, রাজ্য, সিংহাসন ইত্যাদির প্রতি উদাসীন হয়ো না। তুমি কার্যাকার্যের বিভাবের (অর্থাৎ পরিচয়ের) জ্ঞাতা ও মহাবলী হও। ইন্দ্র ইত্যাদি দেবতাগণ তোমাকে লক্ষ্য করে এই জন আমাদের বলে অধিকরূপে ঘোষণা করুন। ২।
সিংহাসনে আরূঢ় রাজাকে সকলে সেবা করুক এবং রাজাও প্রজাপালনে তৎপর হোন। অভিষেকের দ্বারা উৎপন্ন রাজ্য-তেজ (বা রাজার যশ) দশ দিকে ব্যাপ্ত হোক এবং শত্রুগণ ভয়ত্রস্ত হয়ে পলায়ন করুক। এই রাজা শত্রু, মিত্র, স্ত্রী ইত্যাদিতে বিভিন্ন প্রকার আচরণশীল রূপে দণ্ড, যুদ্ধ ও অধ্যয়ন ইত্যাদি কার্য সাধন-সম্পন্ন হোন ৩
হে রাজন্! তুমি ব্যাঘ্র চর্মের উপর উপবশন পূর্বক পূর্ব ইত্যাদি দিকসমূহকে বিজয় করো। তুমি তেজস্বী হও। তোমাকে এই সকল প্রজা নিজেদের অধিপতি রূপে স্বীকার করুক। তোমার রাজ্যে অনাবৃষ্টি রূপ অকাল যেন না হয় ॥ ৪।
হে রাজন! দ্যুলোকস্থ যে জল প্রাণীগণের তৃপ্তিকারক হয়ে থাকে, যে জল পৃথিবী এবং অন্তরিক্ষে বর্তমান, সেই তিনলোকে ব্যাপ্ত জলরাশির অপরিমিত পরাক্রম সমৃদ্ধ তোমাকে অভিষিক্ত করছি ॥ ৫৷৷
হে রাজ! (সেই) দিব্য জলরাশি আপন তেজের দ্বারা তোমাকে অভিসিঞ্চিত করুক। তুমি আপন মিত্রবর্গকে যে স্থিতিতে বৃদ্ধি করতে আকাঙ্ক্ষা করো, সূর্য সেই রকমে তোমাকে সামর্থ্যবান্ করুন ॥ ৬
বীর রাজাকে জলসমূহ মাতার ন্যায় হর্ষিত করছে এবং তাঁকে সৌভাগ্য প্রাপ্ত করানোর নিমিত্ত বীর্যের দ্বারা তৃপ্ত করছে। নদী রূপ জলরাশি যেমন সমুদ্রকৈ সমৃদ্ধ করে থাকে, তেমনই অভিষেকের সময় এই জলরাশি রাজাকে তৃপ্ত করছে। সেবকবৃন্দ বস্ত্র, মুকুট, অলঙ্কার ইত্যাদির দ্বারা রাজাকে সুশোভিত করছে ॥ ৭
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ভূতো ভূতেষু ইতি তৃতীয়সূক্তেন মহতি লঘৌ বা রাজাভিষেক কর্মণি শান্তু্যদককলশেন উদপাত্রেণ চ অভিষেকং জপং চ পুরোহিতং কুর্যাৎ। তথা সম্পাতিতস্থালীপাকপ্রাশনং অভিমন্ত্রিতং অশ্বং আরোহ্য অপরাজিতদিশং প্রতি গমনং চ কারয়েৎ। সূত্রিতং হি।…ইতাদি। (৪কা, ২অ. ৩সূ)।
টীকা –এই সূক্তের দ্বারা মহতী বা লঘু রাজ্যাভিষেক কর্মে শান্তিজলের কলশ ও জলপাত্র অভিমন্ত্রিত। করে রাজার অভিষেক করণীয় এবং পুরোহিত কর্তৃক এই মন্ত্রগুলি জপনীয়। তথা সম্পাতিত স্থালীপাক প্রাশনে এবং এই সূক্তমন্ত্রে অভিমন্ত্রিত অশ্বে আরোহণ করিয়ে রাজাকে অপরাজিত দিকে প্রেরণ করা হয়।…ইত্যাদি। (৪কা, ২অ. ৩সূ)।
.
চতুর্থ সূক্ত : আঞ্জনম
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : ত্রৈককুদাঞ্জনম। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]
এহি জীবং ত্ৰায়মাণং পর্বতস্যাস্যক্ষ্যম। বিশ্বেতিদেবৈদত্তং পরিধিজীবনায় কম্ ॥১॥ পরিপাণং পুরুষাণাং পরিপাণং গবামসি। অশ্বানামবাং পরিপাণায় তস্থিষে ॥২॥ উতাসি পরিপাণং যাতুজনমাঞ্জন। উমৃতস্য ত্বং বেখাথে অসি জীবভোজনমথো হরিতভেষজম্ ॥৩৷৷ যস্যাঞ্জন প্রসৰ্পস্যঙ্গমঙ্গং পরুষ্পরুঃ। ততো যক্ষ্মং বি বাধস উগ্রো মধ্যমশীরিব ॥৪॥ নৈনং প্রাপপ্লাতি শপথো ন কৃত্যা নাভিশোচন। নৈনং বিষ্কন্ধমতে যা বিভর্তাঞ্জন ॥৫॥ অসন্মন্ত্রাদ দুম্বপ্ন্যাদ দুষ্কৃতাচ্ছমলাদুত। দুহাশ্চক্ষুষো ঘোরাৎ তাস্মান্নঃ পাহ্যাঞ্জন ॥৬॥ ইদং বিদ্বানাঞ্জন সত্যং বক্ষ্যামি নানৃত। সনেয়মশ্বং গামহমাত্মানং তব পুরুষ ॥ ৭৷৷ এয়ো দাসা আঞ্জনস্য তা বলাস আদহিঃ। বর্ষিষ্ঠঃ পর্বর্তানাং ত্রিককুন্নাম তে পিতা ॥ ৮ যদাঞ্জনং ত্রৈককুদং জাতং হিমবতস্পরি। যাংশ্চ সর্বান্ জয়সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ॥৯॥ যদি বাসি ত্রৈককুদং যদি যামুনমুচ্যসে। উভে তে ভদ্রে নাম্নী তাভ্যাং নঃ পাহাঞ্জন ॥১০
বঙ্গানুবাদ –হে অঞ্জনমণি! তুমি ত্রিকূদ (বা ত্রিকূট অর্থাৎ তিনটি শৃঙ্গশালী) নামক পর্বতের চক্ষু স্বরূপ। তুমি জীবধারীগণকে রক্ষা পূর্বক প্রাপ্ত হও। ইন্দ্র ইত্যাদি সকল দেবতা আমাদের রোগরহিত থাকার নিমিত্ত তোমাকে পরিধি (প্রাচীর বা বেষ্ঠন রেখা) রূপে প্রদান করেছিলেন ৷৷ ১।
হে ত্রিদেব অঞ্জন! তুমি মনুষ্য, গে, অশ্ব, ঘোটকী–এদের সকলের রক্ষার নিমিত্ত অবস্থিতিশীল ২
যার দ্বারা নেত্র স্বচ্ছীকৃত হয়, যা রাক্ষস ইত্যাদি-জনিত পীড়াকে বিনাশ করণশালী, এমনই [ হে অঞ্জন! তুমি আকাশে স্থিত অমৃতের জ্ঞাতা এবং জীবিত প্রাণীসমূহের অনিষ্টকে দূরীকরণশালী। এ : তুমি পাণ্ডু ইত্যাদি রোগজনিত নীলপীত বর্ণত্বেরও নিবারক ॥ ৩॥
হে অঞ্জন! তুমি যার শরীরে অঙ্গ ব্যাপ্ত হয়ে থাকো, তার শরীরকে ক্ষয়রহিত করতে ক্ষণকালের মধ্যে মেঘজাল ছিন্নকারী বায়ুর ন্যায় প্রচণ্ড বেগশালী হয়ে থাকো। ৪
হে অঞ্জন! যে পুরুষ তোমাকে ব্যবহৃত (বা ধারণ) করে, তাকে অপরের শাপ প্রাপ্ত হতে হয় না, অন্যের দ্বারা হওয়া অভিচার রূপ কৃত্যা তথা শোক ও বিঘ্ন ইত্যাদি প্রাপ্ত হতে হয় না। ৫
হে অঞ্জনমণি! অভিচারাত্মক অসৎ মন্ত্রাবলী হতে, সেই মন্ত্রসমূহের দ্বারা প্রাপ্ত দুঃখ হতে, দুঃস্বপ্ন বা পাপ হতে উৎপন্ন হওয়া শোক হতে, দূষিত মন ও অপরের ক্রুর দৃষ্টি হতে আমাকে রক্ষা করো। ৬।
হে অঞ্জন! আমি তোমার মহিমা জ্ঞাত আছি; সেই জন্য এই কথা আমি মিথ্যা বলছি না। এই কারণে আমি তোমার সেবকরূপে গে, অশ্ব এবং প্রাণীমাত্রের সেবা লাভ করবো। ৭।
কাঠিন্যের দ্বারা জীবন অতিবাহনশীল জ্বর, সন্নিপাত (ত্রিদোষজ রোগ), সর্প ইত্যাদির বিষ,–এই প্রাণ হরণশীল বিকার অঞ্জনের প্রভাবে নিবারিত হয়। হে অঞ্জন! ত্রিকূদ পর্বত তোমার জনক ॥ ৮
পর্বতশ্রেষ্ঠ হিমালয়ের উপর ত্রিকূদ নামক পর্বতের অঞ্জন রাক্ষসবর্গের বিনাশে তৎপর হয়ে থাকে; এই নিমিত্ত সেই অঞ্জন আমাদের রোগ ইত্যাদি বিকারগুলিকে নষ্ট করুক। ৯
হে অঞ্জন! যদি তুমি ত্রিকূদ হতে উৎপন্ন বলে অথবা যমুনা হতে সৃষ্ট বলে কথিত হতে ইচ্ছা করো; তাহলে ত্রৈককুদ ও যামুন, এই দুটি নামই আমাদের পক্ষে কল্যাণ-সাধনশীল রূপে প্রতিভাত। তুমি তোমার আপন সেই নামদ্বয়ের দ্বারাই আমাদের রক্ষা করো। ১০৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –এহি জীবং ইতি সূক্তেন উপনয়নানন্তরং আয়ুষ্কামস্য মাণবকস্য আঞ্জনমনিং সম্পত্য অভিমন্যু বীয়াৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি। (৪কা, ২অ. ৪সূ)।..
টীকা –উপনয়নের পর আয়ুষ্কামী মাণবককে এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত অঞ্জনমণি ধারণ করানো কর্তব্য।..ইত্যাদি ৷ (৪কা, ২অ. ৪সূ)।
.
পঞ্চম সূক্ত : শঙ্খমণিঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : শঙ্খমণি, কৃশন। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি]
বাতাজ্জাতে অন্তরিক্ষা বিদ্যুতো জ্যোতিষম্পরি। স নো হিরণ্যজাঃ শঙ্ঃ কৃশনঃ পাত্বংসঃ ॥১॥ যো অগ্রতো নোচনানাং সমুদ্ৰাদধি জজ্ঞিষে। শঙ্খেন হত্বা রক্ষাংস্যভ্রিণো বি সহামহে ॥ ২॥ শঙ্খেনামীবামমতিং শঙ্খেনোত সদাম্বাঃ। শঙ্খো নো বিশ্বভেষজঃ কৃশনঃ পাত্বংহসঃ ॥৩৷৷ দিবি জাতঃ সমুদ্রজঃ সিন্ধুতস্পর্ষাভূতঃ। স নো হিরণ্যজাঃ শঙ্খ আয়ুপ্রতরণো মণিঃ ॥৪৷ সমুদ্ৰাজ্জাত মণিবৃত্ৰাজ্জাতে দিবাকরঃ। স অম্মান্তসর্বতঃ পাতু হেত্যা দেবাসুরেভ্যঃ ॥৫ হিরণ্যানামেকোহসি সোমাৎ ত্বমধি জজ্ঞিষে। রথে ত্বমসি দর্শত ইষুধে রোচনং প্ৰণ আয়ুংষি তারিষৎ ॥৬॥.. দেবানামস্থি কৃশনং বভূব তদাত্মম্বচ্চরত্যস্বন্তঃ। তৎ তে বম্যাথুষে বসে বলায় দীর্ঘায়ুত্বায় শতশারদায় কার্শনাভি রক্ষতু ॥৭॥
বঙ্গানুবাদ –বায়ুর দ্বারা অন্তরিক্ষে উৎপন্ন, জ্যোতিমণ্ডলেরও উপরিভাগে জাত এবং সুবর্ণে সৃষ্ট শঙ্খ শত্রুগণকে নির্বল-করণশালী হয়ে থাকে; সেই শঙ্খ আমাদের পাপ হতে রক্ষা করুক। ১।
হে শঙ্খ! যে তুমি প্রকাশিত (ভাস্বর) নক্ষত্র ইত্যাদির সম্মুখ-সমুদ্রের মধ্যে উৎপত্তিশালী; সেই হেন দীপ্তিময় তোমার দ্বারা আমরা রাক্ষসগণকে ও পিশাচবর্গকে বশীভূত করছি। ২৷
মণি রূপে প্রাপ্ত শঙ্খের দ্বারা ব্যাধি ও অজ্ঞানকেও বশীভূত করছি এবং অলক্ষ্মীকেও তিরস্কার করছি। এই সুবর্ণের দ্বারা উৎপন্ন, সন্তাপনাশক শঙ্খমণি আমাদের পাপসমূহ হতে রক্ষা করুক ৷৷ ৩৷৷
শঙ্খ প্রথমে বায়ু হতে উৎপন্ন পুনরায় সমুদ্রে জাত হয়েছিল। নদীর উম স্থান হতে সংগৃহীত বা সুবর্ণ হতে উৎপন্ন শঙ্খের বিকার রূপ মণি আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধি করুক। ৪ ॥
অন্তরিক্ষ হতে বা সমুদ্র হতে উৎপন্ন শঙ্খ, মণির উপাদান রূপ। এটি মেঘ হতে উৎপন্ন বা মেঘ-বিদীর্ণকারী সূর্যের ন্যায় দীপ্যমান। এই শঙ্খের বিকার রূপ মণি দেবতা ও দৈত্যবর্গের উপদ্রব হতে আমাদের রক্ষা করুক ৫
হে শঙ্খ! তুমি সুবর্ণ, রৌপ্য ইত্যাদি উজ্বল সামগ্রীর মধ্যে মুখ্য, কেননা তোমার উৎপত্তি অমৃতময় চন্দ্রমণ্ডল হতে হয়েছিল। তুমি যুদ্ধকালে রথের উপর দর্শন দিয়ে থাকে। এই হেন শঙ্খের বিকার মণি আমাদের আয়ুকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করুক। ৬
শঙ্খের কারণ রূপ সুবর্ণ শঙ্খরূপ দেহের সাথে যুক্ত হয়ে জলে অবস্থান করে। হে যজ্ঞোপবীত-ধারণশালী মাণবক! এই হেন শঙ্খকে তোমার আয়ু, দেহকান্তি এবং বলের নিমিত্ত তোমাকে বন্ধনযুক্ত করে দিচ্ছি। এই মণি তোমাকে শতায়ুষ্য করে রক্ষা করুক ৭
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— বাতাজ্জাতঃ ইতি সূক্তেন উপনয়নানন্তরং আয়ুষ্কামুস্য মাণবকস্য শঙ্খমণিং সম্পত্য অভিমন্যু বধীয়াৎ। তদ্ উক্তং কৌশিকেন।…ইত্যাদি। (৪কা, ২অ. ৫সূ)।
টীকা –উপনয়নের পর আয়ুষ্কামী মানবককে এই সূক্ত মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত শঙ্খমণি ধারণ করানো কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ২অ. ৫সূ)।