1 of 3

০৪।১ চতুর্থ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতাচতুর্থ কাণ্ড
প্রথম
অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ব্রহ্মবিদ্যা

[ঋষি : বেন দেবতা : বৃহস্পতি, আদিত্য ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

ব্ৰহ্ম জজ্ঞানং প্রথমং পুরস্তাদ বি সীমতঃ সুরুচো বেন আবঃ। স বুধ্যা উপমা অস্য বিষ্ঠাঃ সতশ্চ যোনিমসতশ্চ বি বঃ ॥ ১৷৷ ইয়ং পিত্রা রাষ্ট্রেত্বগ্রে প্রথমায় জনুষে ভুবনেষ্ঠাঃ। তস্মা এতং সুরুং হৃরমহ্যং ঘর্মং শ্ৰীণন্তু প্রথমায় ধাস্যবে ॥ ২ প্র যো জজ্ঞে বিদ্বানস্য বন্ধুর্বিশ্বা দেবানাং জনিমা বিবক্তি। ব্রহ্ম ব্ৰহ্মণ উজ্জভার মধ্যান্নীচৈরুচ্চৈঃ স্বধা অভি প্র তন্থেী ॥ ৩৷৷ স হি দিবঃ স পৃথিব্যা ঋতস্থা মহী ক্ষেমং রোদসী অস্কয়ৎ। মহান্ মহী অস্কভায় বি জাত দ্যাং সদ্ম পার্থিবং চ রজঃ। ৪। স বু্যাদাষ্ট্র জনুমোহভ্যগ্রং বৃহস্পতিদেবতা তস্য সম্রাট। অহচ্ছুক্রং জ্যোতিষো জনিষ্টাথ দ্যুমন্তো বি বসন্তু বিপ্রাঃ ॥ ৫৷৷ নূনং তদস্য কাব্যো হিনোতি মহো দেবস্য পূর্বস্য ধাম। এষ জজ্ঞে বহুভিঃ সাকমিখা পূর্বে অর্ধে বিষিতে সসন্ নু ॥ ৬৷৷ যোহথবাণং পিতরং দেববন্ধুং বৃহস্পতিং নমসাব চ গচ্ছা। ত্বং বিশ্বেষাং জনিতা যথাসঃ কবিৰ্দেবো ন দোয়ৎ স্বধাবান্ ॥ ৭

বঙ্গানুবাদ— সৎ-চিৎ-সুখাত্মক (আনন্দময়), সকল জগৎসংসারের কারণভূত ঈশ্বর সৃষ্টির প্রারম্ভে হিরণ্যগর্ভরূপ সূর্যে প্রকট হয়েছিলেন। পূর্ব দিকে উদয়শীল সেই সূর্য্যাত্মক তেজবা দেবতা সৎ ও অসতের উৎপত্তি-স্থানের জ্ঞানকে প্রকট করণশালীরূপে বিদ্যমান। ১।

 অখিল বিশ্বের উৎপত্তিকর্তা প্রজাপতি পিতা বলে কথিত হন। সেই পিতা হতে প্রাপ্ত, নাদরূপে ব্যাপ্তিশালিনী বাণী জগৎসংসারের সকল ব্যবহারের অধীশ্বরী। তিনি প্রথম শব্দ বাচ্য সূর্যাত্মক ব্রহ্মের সমক্ষে স্তুতিরূপে ব্যাপ্ত হোন। ২।

 এই প্রপঞ্চ (সংসার) জগৎকে বন্ধন করে বন্ধুর ন্যায় এর হিতসাধনকারী, নিরাবণ জ্ঞানের দ্বারা জগৎসংসারের জ্ঞাতা যে দেব প্রথম উৎপন্ন হয়েছেন, তিনি সূর্য, ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণের উৎপত্তি সম্পর্কে অপরকে বলে থাকেন। সেই সূর্য বেদরূপ পরব্রহ্মকে উপর ও মধ্যভাগ হতে উদ্ধার করেছিলেন। তার পরে হবিঃরূপ অন্ন দেবগণের মিলেছিল। ৩।

 এই পরব্রহ্ম সূর্যরূপ হতে প্রথম উৎপন্ন হয়ে আকাশের কারণরূপ তথা পৃথিবী সম্বন্ধীয় সত্যস্বরূপে স্থিত হয়ে দ্যারা-পৃথিবীতে বিনাশহীনতা স্থাপিত করছেন ॥ ৪

সূর্যরূপে উৎপন্ন পরব্রহ্ম রসাতল ইত্যাদি লোকে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন। দান ইত্যাদি গুণযুক্ত বৃহস্পতি দেবতা সেই লোকের অধিস্বামী। যখন সূর্যের দ্বারা দিন উৎপন্ন হয়, তখন ঋত্বিগণ হবিদানের দ্বারা দেবতাগণের পূজা করেন। ৫

ঋত্বিকগণ-সম্বন্ধী যজ্ঞ সূর্যের তেজ-মণ্ডলকে উদয়াচলের উপর প্রেরিত করছে। পূর্ব দিকে স্থিত দেশসমূহে এই সূর্য-দেবতা হবিরম্নকে লাভ করবার উদ্দেশে শীঘ্রই প্রকট হচ্ছেন ॥ ৬।

দেবগণের বন্ধু বৃহস্পতি বা দেবগণের উৎপাদক প্রজাপতিকে (বা অথবা নামক মহর্ষিকে) নমস্কার জ্ঞাপন করছি। আপনি যেমন সকল প্রাণীর উৎপত্তি করণশালী হয়ে বিরাজমান, তেমন ভাবেই অন্নযুক্ত হোন। তিনি (অর্থাৎ বৃহস্পতি দেব) অন্নের দ্বারা সম্পন্ন বা সমৃদ্ধ হয়ে সকলের উপর কৃপা করে থাকেন ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগ –চতুর্থে কাণ্ডে অষ্টানুবাকা। তত্র প্রথমেনুবাকে পঞ্চ সূক্তানি। তত্র ব্রহ্ম জজ্ঞানং ইতি আদ্যং সূক্তং বেদকল্পাদ্যধ্যয়নাদৌ বিঘুশমনার্থং শাস্ত্রবাদাদৌ প্রতিবাদিজয়ার্থং চ জপেৎ….তথা গোপুষ্টিকর্মণি গবাং রোগশমনে চ অনেন সূক্তেন লবণং অভিমন্ত্র গাঃ পায়য়েৎ। তথা অনেনৈব প্রপাতটাকাদিস্থং উদকং অভিমন্ত্র গাঃ পায়য়েৎ।…ব্রহ্ম জজ্ঞানং ইতি আদ্যা বৃহঙ্গণে পঠিতা। …তথা বিবাহে চতুর্থিকাকর্মণি ব্রহ্ম জজ্ঞানং ইত্যনয়া বরঃ অঙ্গুষ্ঠেন প্রজননদেশং তুদতি।..ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ১সূ.)

টীকা— এই সূক্তটি বেদ কল্প ইত্যাদি অধ্যয়নের পূর্বে বিঘ্নবিনাশের নিমিত্ত এবং শাস্ত্ৰবিচারে প্রতিবাদীগণকে জয়ের নিমিত্ত জপ করণীয়।….গো-পুষ্টি কর্মে এবং গোসমূহের রোগবিনাশের নিমিত্ত এই সূক্তের মন্ত্রের দ্বারা লবণ অভিমন্ত্রিত করে গাভীকে খাওয়াতে হয়। বিবাহের চতুর্থিকা কর্মেও এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে।..ইত্যাদি। দ্বিতীয় মন্ত্রোক্ত রাষ্ট্রী পদ সম্পর্কে সায়ণাচার্যের উক্তি–ইয়ং পরিদৃশ্যমানা শব্দব্রহ্মাত্মিকা বান্দেবতা রাষ্ট্রী ॥(৪কা, ১অ. ১সূ)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : আত্মবিদ্যা

[ঋষি : বেন দেবতা : আত্মা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ ]

 য আত্মদা বলদা যস্য বিশ্ব উপিসতে প্রশিষং যস্য দেবাঃ। যোহস্যেশে দ্বিপদো যশ্চতুষ্পদঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥১॥ যঃ প্রাণততা নিমিষতো মহিত্বৈকো রাজা জগতত বভূব। যস্য ছায়ামৃতং যস্য মৃত্যুঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। ২। যং ক্রন্দসী অবতশ্চস্কভানে ভিয়সানে রোদসী অহুয়েথাম। যস্যাসৌ পন্থা রজসো বিমানঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥ ৩॥ যস্য দৌরুবী পৃথিবী চ মহী যস্যাদ উর্বন্তরিক্ষম। যস্যাসৌ সূরো বিততে মহিত্বা কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম। ৪। যস্য বিশ্বে হিমবন্তো মহিত্বা সমুদ্রে যস্য রসামিদাহুঃ। ইমাশ্চ প্রদিশো যস্য বাহু কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥ ৫৷৷ আপো অগ্রে বিশ্বমাবন গর্ভং দধনা অমৃতা ঋতজ্ঞাঃ। যাসু দেবীদ্বধি দেব আসীৎ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ৬৷৷ হিরণ্যগর্ভঃ সমবর্তগ্রে ভূতস্য জাতঃ পতিরেক আসীৎ। স দাধার পৃথিবীমুত দ্যাং কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥৭॥ আপো বত্সং জনয়ন্তীৰ্গৰ্ভমগ্রে সমৈরয়। তস্যোত জায়মানস্যো আসীদ্ধিরণ্যয়ঃ কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম ॥ ৮৷৷

বঙ্গানুবাদ –প্রজাপতি সকল পদার্থে (প্রাণীবর্গে) শক্তি দানশালী; তাঁর শাসনাধীন থেকে দেবগণও তাঁর পূজা করে থাকেন। তিনি দেবতা ও মনুষ্য-সকলের শাসক। আমরা সেই প্রজাপতিকে হবিঃ দ্বারা পূজা করছি। ১।

 শ্বাস-উচ্ছ্বাসের কারণ রূপ, সকল প্রাণীর অধিস্বামী, মৃত্যু-নাশের সাধন স্বরূপ, যাঁর অধীনে (বা বশে) সকল প্রাণীর মৃত্যু হয়ে থাকে (অর্থাৎ যিনি মৃত্যুরও অধীশ্বর), আমরা সেই প্রজাপতি দেবকে হবিঃ দ্বারা পূজা করছি। ২৷৷

ক্রন্দনশীল প্রাণীবর্গের আশ্রয়ভূত ক্রন্দসী নামে দেবতা আছেন, যাঁর প্রভাবে দ্যাবা-পৃথবী অধঃপাতিত হতে পারে না। তারা নিম্নে পতনের ভয়ে প্রজাপতির নিকট রোদন করেছিল; বলে, তারা রোদসী নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এই দ্যাব-পৃথিবী আপন রক্ষার নিমিত্ত যে প্রজাপতিকে আহ্বান করেছিল, তাঁর উদ্দেশে আমরা হবিঃ প্রদান করছি ৷ ৩৷৷

যাঁর মহিমায় আকাশ-পৃথিবী এবং অন্তরিক্ষের বিস্তার হয়েছিল, তথা এই সূর্য প্রত্যক্ষীভূত হয়েছিল, সেই প্রজাপতি দেবকে আমরা হবির দ্বারা পরিচর‍্যা (বা পূজা) করছি ॥ ৪

 যাঁর মহিমায় এই পর্বত উৎপন্ন হয়েছে, নদী সমুদ্রের অন্তর্ভূত হয়েছে, চারিটি দিক্‌ যাঁর বাহু স্বরূপ, আমরা সেই প্রজাপতি দেবের উদ্দেশে হবিঃ সমর্পণ পূর্বক পূজা করছি ॥ ৫৷৷

জলসমূহ সৃষ্টির আদিতে প্রকট হয়ে জগৎসংসারকে রক্ষা করেছিল। হিরণ্যগর্ভকে এরা ধারণ করেছিল এবং জগৎসংসারের কারণ রূপ ব্রহ্মকে জ্ঞাত হয়ে (অর্থাৎ ঋতজ্ঞ হয়ে) এরা জগৎসংসারকে রক্ষা করেছিল। সেই জলের গর্ভভূত প্রজাপতি দেবকে হবিদানে সন্তুষ্ট করছি। ৬।

হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি সৃষ্টির প্রথমে প্রকট হয়ে জগৎসংসারের অধীশ্বরত্ব লাভ করেছিলেন। তিনিই পৃথিবী ও আকাশকে ধারণ করেছিলেন। সেই প্রজাপতিকে আমরা হবির দ্বারা পূজা করছি। ৭৷৷

 ঈশ্বরের দ্বারা প্রথম উৎপন্ন হয়ে জলসমূহ ভাবী-স্রষ্টা প্রজাপতির উদ্ভবের নিমিত্ত ঈশ্বর প্রদত্ত বীর্যকে গর্ভাশয়ে স্থাপন করেছিল, সেই গৰ্ভরূপ হিরণ্যগর্ভের অণ্ডও (গর্ভাশয়ও) হিরন্ময় ছিল। সেই প্রজাপতি দেবকে আমরা উপাসনা (বা পরিচর্যা) করছি। ৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –য আত্মদা ইতি সূক্তং বশাশমনকর্মণি শান্তুদকে অনুযোজয়েৎ।…তথা সংজ্ঞপ্তায়া বশায়া যদি গর্ভো দৃশ্যেত ত্বং গর্ভং অঙ্কলৌ গৃহীত্ব। সূক্তোক্তপ্রকারেণ অনেন সুক্তেন জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি।…ইত্যাদি৷ (৪কা, ১অ. ২সূ)।

টীকা –এই সূক্তটি বশাশমন কর্মে, শান্তিজলে বিনিযুক্ত হয়।…ইত্যাদি৷৷ (৪কা, ১অ, ২সূ)।

.

তৃতীয় সূক্ত : শত্রুনাশনম্

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ব্যাঘ্র ছন্দ : পংক্তি, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী ]

উদিতয়ো অক্রম ব্যাঘ্রঃ পুরুষো বৃকঃ। হিরুন্ধি যন্তি সিন্ধবো হিরুগ দেবো বনস্পতিহিরুনমন্তু শত্ৰবঃ ॥১॥ পরণৈতু পথা বৃকঃ পরমেশোত তস্করঃ। পরেণ দত্বতী রজ্জ্বঃ পরেণাঘায়ুরতু ॥ ২॥ অক্ষৌ চ তে মুখং চ তে ব্যাঘ্র জম্ভয়ামসি। আৎ সর্বান্ বিংশতিং নখান্ ॥ ৩॥ ব্যাঘ্রং দত্বতাং বয়ং প্রথমং জম্ভয়ামসি। আদু ষ্টেনমহো অহিং যাতুধানমথো বৃকম্ ॥ ৪৷৷ যো অদ্য স্তেন আয়তি স সংপিষ্টো অপায়তি। পথামপধ্বংসেনৈত্বিন্দ্রো বজ্রেণ হন্তু তম্ ॥ ৫মূর্ণা মৃগস্য দন্তা অপিশীর্ণা উ পৃষ্টয়ঃ। মিম্বু তে গোধা ভবতু নীচায়চ্ছশয়ুমৃগঃ ॥ ৬৷৷ যৎ সংযমোন বি যমো বি যমো ষন্ন সংযমঃ। ইন্দ্রজাঃ সোমজা আথর্বণমসি ব্যাঘ্ৰজনম্ ॥ ৭৷

 বঙ্গানুবাদ— গুঢ়াশয়শালিনী নদীসমূহ যেমন অন্তর্হিত হয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে, বনস্পতি দেবতা যেমন বনে অন্তর্হিত হয়ে অবস্থান করে থাকে, সেই রকমে ব্যাঘ্র, চোর, বৃক–এই তিনই এই স্থান ত্যাগ করে চলে যাক। এদের শত্রুরাও এদের অন্তর্হিত করে বিবশ করে দিক। ১।

 যে পথে আমরা গমনাগমন করে থাকি, সেই পথ হতে বন্য কুকুর, বৃক ই্যতদি না চলাচল করে। চোরও সেই পথ হতে দূর দিয়ে গমন করুক। সর্প এবং অপরকে হিংসাকারী শত্রু এবং অন্য হিংস্র প্রাণী এই পথে গমনাগমন না করে অন্য মার্গগামী তোক ॥ ২

হে ব্যাঘ্র! আমি তোমার নেত্র ও মুখকে নষ্ট করে দেব এবং তোমার চারিটি পদের মোট বিংশতি নখরকেও উৎপাটিত করে দেব। ॥ ৩॥

দণ্ডযুক্ত হিংসক পশুগণের মধ্যে ব্যাঘ্রকে আমি প্রথমে বিনাশ করছি। তারপর চোর, সর্প, রাক্ষস ও বৃক ইত্যাদিকে বিনাশ করছি। ৪

এই সময়ে এই দিকে আগমনশীল চোর প্রহৃত হয়ে পলায়ন করুক এবং যে কষ্টদ পথ ধরে সে গমন করবে সেই পথের উপর ইন্দ্র তাকে আপন বজ্রের দ্বারা চূর্ণ করে দিন। ৫।

ব্যাঘ্র ইত্যাদির দন্ত অশক্ত হয়ে যাক, শৃঙ্গশালী প্রাণীর শৃঙ্গগুলি বিনষ্ট হয়ে যাক এবং তাদের অস্থিপঞ্জরগুলিও বিচূর্ণ হয়ে যাক। হে যাত্রী! গোধা নামক জীব তোমাকে যেন দেখা না দেয় (কারণ যাত্রাকালে গোধার দর্শন অশুভ), এবং শয়নের স্বভাব-সম্পন্ন শশয়ু নামক হরিণও যেন অন্য পথ দিয়ে চলে যায়। ৬।

ইন্দ্র হতে ও সোম হতে উৎপন্ন সংযমন নামক মন্ত্র কখনও ব্যর্থ হয় না। হে ক্রিয়াকলাপ! তুমি অথবা মহর্ষির দ্বারা দৃষ্ট হয়েছে; তুমি নিশ্চয়ই ব্যাঘ্র ইত্যাদি ভয়ঙ্কর প্রাণীবগর্কে বিনাশ করে দিয়ে থাকো। ৭।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— উদিতস্ৰয়ো অক্রমন ইতি সূক্তেন গবাদিনাং ব্যাঘ্ৰচোরাদিভয়-নিবৃক্ত্যর্থং খাদিরং শঙ্কুং সম্পত্য অভিমন্ত্র তেন গোসঞ্চারভূমিং লিখন গা অনুব্রজেৎ। তথা অনেন উদঘটং অভিমন্ত্র গোপ্রচারদেশে নিয়েৎ। তথা পাৎসুকূটং তত্র কৃত্বা অর্ধং দক্ষিণহস্তেন বিক্ষিপেৎ। এবমেব। অনেন সূক্তেন সারূপবৎসং ওদনং ইন্দ্রায় ত্রিজুয়াৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ৩সূ)।

টীকা –এই সূক্ত-মন্ত্রের দ্বারা গো-ইত্যাদি পশুগণের ব্যাঘ্র, চোর ইত্যাদির ভয় নিবৃত্তির নিমিত্ত খাদির শঙ্কু অভিমন্ত্রিত পূর্বক তার দ্বারা গো-সঞ্চার ভূমি রেখ-চিহ্নিত করে সেখানে গো-গণকে চারণ করণীয়। এবং এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত জল-কলস গোপ্রচার স্থানে নয়ন কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : বাজীকরণম

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : বনস্পতি ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

যাং ত্বা গন্ধর্বো অখনদ বরুণায় মৃতভ্রজে। তাং ত্বা বয়ং খনামস্যোষধিং শেপহর্ষণীম্ ॥ ১৷ উদুষা উদু সূর্য উদিদং মামকং বচঃ উদেজতু প্রজাপতিবৃর্ষা শুষ্মেণ বাজিনা ॥ ২॥ যথা স্ম তে বিবোহতোহভিতপ্তমিবানতি। ততস্তে শুম্মবত্তরমিয়ং কৃপোতোষধিঃ ॥ ৩॥ উচ্ছুষ্মৌষধীনাং সার ঋষভাণা। সং পুংসামিন্দ্র বৃষ্ণ্যমস্মিন্ ধেহি তন্বশি। ৪। অপাং রসঃ প্রথমজোহথো বনম্পতীনা। উত সোমস্য ভাতাস্যুতাশমসি বৃষ্ণ্যম্ ॥ ৫৷৷ অদ্যাগ্নে অদ্য সবিতরদ্য দেবি সরস্বতি। অদ্যাস্য ব্ৰহ্মণম্পতে ধনুরিবা তানয়া পসঃ ॥ ৬৷৷ আহং তনোমি তে পসো অধি জ্যামিব ধন্বনি। ক্রমস্বৰ্শ ইব রোহিতমনবল্পায়তা সদা ॥ ৭৷৷ অশ্বস্যাশ্বতরস্যাজস্য পেত্বস্য চ। অথ ঋষভস্য যে বাজাস্তানস্মিন্ ধেহি তন্বশি। ৮৷৷

 বঙ্গানুবাদ –বরুণের পৌরুষ নষ্ট হওয়ার পর পুনঃ বীর্য-প্রাপ্তির নিমিত্ত তুমি হেন যাকে গন্ধর্ব খনন পূর্বক লাভ করেছিল, হে কপিথ! আমরা তোমা হেন সেই শক্তিবর্ধক ঔষধিকে খনন করছি ॥১॥

সূর্য তোমাকে শ্রেষ্ঠ বীর্য সম্পন্ন করুন এবং তাঁর পত্নী ঊষা তোমাকে বীর্যের দ্বারা উদ্বৃত্ত করুন। আমার এই মন্ত্র বীর্যের দ্বারা সম্পন্ন (বা সমৃদ্ধ) করণশীল। প্রজাপতিদেব বীর্যের দ্বারা যুক্ত কামেন্দ্রিয়কে সশক্ত করুন ৷৷ ২৷৷

 হে বীর্যকামী পুরুষ! তোমার পুত্র-পৌত্র ইত্যাদির কারণ রূপ পুংব্যাঞ্জক যাতে নাগের ফণার ন্যায় কম্পিত হতে (বা কার্যকরী হতে চেষ্টা করতে) পারে, সেই নিমিত্ত এই ঔষধি তোমাকে অতুল বীর্যে সমৃদ্ধ করুক ৩

এই ঔষধি অত্যন্ত বীর্যশালিনী এবং সেচনসমর্থ বৃষভদের মধ্যেও সাররূপে অবস্থিত। এই ঔষধি এই পুরুষকে বীর্যের সার্থে যুক্ত করুক। হে ইন্দ্র! তুমি এই পুরুষের শরীরকে বীর্যধারণক্ষম করে দাও ৪

হে কপিখের মূল! তুমি জলের মন্থন-কালে উৎপন্ন হয়ে অমৃতময় হয়েছিলে এবং সোম তোমার সজাতীয় হয়েছিল। তুমি অঙ্গিরা ঋষিবর্গের মন্ত্রবলের দ্বারা স্বয়ং বীর্যরূপ হয়ে গিয়েছো ॥৫॥৷

 হে অগ্নি! এই বীর্যাভিলাষী পুরুষের শরীরাঙ্গকে বীর্যমুক্ত করে শক্তি প্রদান করো। হে সূর্য! হে সরস্বতী! হে মন্ত্ৰাধিপ ব্রাহ্মণস্পতি! তোমরা এই বীর্যকামী ব্যক্তির অঙ্গকে নীরোগ করে দাও ॥৬॥

হে বীর্যের। কামনাশালী পুরুষ! আমি তোমার অঙ্গকে (বা পুরুষাঙ্গকে) বীর্যের দ্বারা যুক্ত (বা পূর্ণ) করে দিচ্ছি; অতএব তুমি সেচনসমর্থ বৃষভের ন্যায় নৃত্য করতে করতে মনের মতো (উপযুক্ত) আপন পত্নীকে প্রাপ্ত হও (অর্থাৎ সঙ্গমরত হও) ॥৭॥

 হে ঔষধি! অশ্ব, অশ্বতর, বৃষভ, মেষ ইত্যাদি পশুসমূহে যে বীর্য আছে, তেমনই বীর্য তোমরা এই পুরুষের শরীরে স্থাপিত করো ॥৮

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— যাং বা গন্ধর্বো ইতি সূক্তেন পুরুষস্য বীর্যকরণকর্মণি কপিখমূলং ওষধিবৎ খাত্বা দুগ্ধে শ্ৰপায়িত্বা অভিমন্যু অধিজ্যং ধনুঃ উৎসঙ্গে কৃত্বা বীৰ্ষকামঃ পুরুষঃ পিবেৎ। এবমেব কীলকে. মুসলে বা উপবিশ্য পূর্বব অভিমন্যু পিবেৎ। সূত্রিতং হি।..ইত্যাদি৷৷ (৪কা, ১অ. ৪সূ)৷৷

টীকা –পুরুষের বীর্যকরণকর্মে কপিন্থ-মূল (কয়েতবেল গাছের মূল) ঔষধির মতো খনন (মাড়াই) পূর্বক দুগ্ধে শ্রপিত (পক্ক) করে এই সূক্ত-মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত করে যখন বীর্যকামী পুরুষকে খাওয়ানো হয়, তখন তার ক্রোড়ে এই মন্ত্রে অভিমন্ত্রিত ধনু রাখতে হয়। এইরকমে কীলকে বা মুসলে উপবেশন করিয়ে পূর্বের মতো অভিমন্ত্রিত ঔষধি পান করানো কর্তব্য।…ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত : স্বাপন

 [ঋষি : ব্রহ্মা দেবতা : বৃষভ, স্বাপনম ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ ]

সহস্ৰশৃঙ্গো বৃষভো যঃ সমুদ্ৰাদুদাচরৎ। তেনা সহস্যেনা বয়ং নিজনান্তস্বাপয়ামসি ॥১॥ ন ভূমিং বাতো অতি বাতি নাতি পশ্যতি কশ্চন। স্ক্রিয়শ্চ সর্বাঃ স্বাপয় শুনশ্চেন্দ্ৰসখা চর ॥২॥ পোষ্ঠেশয়াস্তল্পেশয়া নারীর‍্যা বহ্যশীবরীঃ। স্ক্রিয়ো যাঃ পুণ্যগন্ধয়স্তাঃ সর্বাঃ স্বাপয়ামসি ॥৩॥ এজদেজদজভং চক্ষুঃ প্রাণমজগ্রভ। অঙ্গান্যজগ্রভং সর্বা রাত্রীণামতিশৰ্বরে ॥৪॥ য আস্তে ষশ্চরতি যশ্চ তিষ্ঠ বিপশ্যতি। তেষাং সং দম্মো অক্ষীণি যথেদং হর্সং তথা ॥৫॥ স্বপ্ত মাতা স্বপ্ত পিতা স্বপ্ শ্বা স্বস্তু বিষ্পতিঃ। স্বপস্যৈ জ্ঞাতয়ঃ স্বয়মভিতো জনঃ ॥৬৷৷ স্বপ্ন স্বপ্নভিকরণেন সর্বং নি স্বাপয়া জন। ওসূর্যমন্যান্তস্বাপয়াঝুষং জাগৃতাদহমিন্দ্র ইরিষ্টো অক্ষিতঃ ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –কামনাসমূহকে জলের ন্যায় বর্ষণশালী, সহস্ররশ্মিসম্পন্ন সূর্য আকাশে উদয় হয়ে থাকে। শত্রুকে বশ-করণশালী সেই সূর্যের দ্বারাই আমরা উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে নিদ্রাযুক্ত করে দিচ্ছি। ১।

বায়ু যেন অধিক বেগে প্রবাহিত হয়ে মানুষের নিদ্রাভঙ্গ না করে, কোন মনুষ্য যেন (আমার রতিকর্ম) না দেখে ফেলে; হে বায়ু! তুমি ইন্দ্রের মিত্র। সকল স্ত্রী ও কুকুরদেরও নিদ্রাকে বশীভূত করো। (কারণ স্ত্রীলোকের স্বভাবই লুকিয়ে দেখা এবং কুকুরদের চিৎকারে মানুষের নিদ্রাভঙ্গের আশঙ্কা)। ২৷৷

 যে স্ত্রীসকল পালঙ্কের উপর বা অঙ্গনে শায়িত হয়ে আছে, যে রমণীগণ দোলনায় দোলায়িত হয়ে আছে, যে সকল রমণীকে পুণ্যগন্ধা বলা হয়ে থাকে, এমন সকল স্ত্রীলোককে আমি নিদ্রাঘোরে অবশ করে দিচ্ছি। ৩।

 সকল জঙ্গমাত্মক প্রাণীসমূহকে আমি নিদ্রাভিভূত করে দিয়েছি, তাদের দর্শন-শক্তি আমি গ্রহণ করে নিয়েছি; তাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়ও আমার দ্বারা অধিকৃত হয়ে গিয়েছে। তাদের হস্ত পদ ইত্যাদি সকল অঙ্গকে অর্ধরাত্রের মধ্যেই আপন বশীভূত করে নিয়েছি। ৪

আমাদের অভিসারে যাওয়ার সময় যে পুরুষ বিচরণ করে, ইতস্ততঃ দেখতে থাকে,–যেমন এই ঘর বা গৃহ দর্শনশক্তি রহিত হয়ে আছে, সেইভাবে আমরা সেই সকলের নেত্রকে নিমীলিত করে দিচ্ছি ॥ ৫॥

 যে স্ত্রীকে আমরা নিদ্রার দ্বারা বশীভূত করতে অভিলাষী, তার মাতা, পিতা, গৃহরক্ষক কুকুর, গৃহস্বামী এবং তার কুটুম্বী সকলেই নিদ্রামগ্ন হোক। ৬।

 হে স্বপ্নের আভিমানী দেব! এদের সকলকে আগামী সূর্যোদয় পর্যন্ত নিদ্রামগ্ন রাখো। সকলের শয়নের পর আমি কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে যে ইন্দ্রের ন্যায় সম্ভোগপ্রাপ্ত হয়ে ঊষাকাল পর্যন্ত জাগ্রত থাকি। ৭

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সহস্ৰশৃঙ্গঃ ইতি সূক্তেন স্ত্রাভিগমনে তস্যাস্তৎ পরিসরর্তিনাং চ স্বাপনার্থং উদপাত্রং সম্পত্য অভিমন্ত্র তেন শয়নশালাং লোক্ষ্য শেষং অভ্যন্তরদ্বারে নিনয়েৎ। তথা নগ্নঃ সন অনেনৈব উনূখলং অভিমন্ত্রয়েত। তথা গৃহস্যোত্তরং শ্ৰক্তিং স্ত্রীখব্বায়া দক্ষিণং পাদং রঞ্জুং বা অভিমন্ত্ৰয়েত।…ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ৫সূ)৷৷

টীকা— স্ত্রী-অভিগমন কালে পার্শ্ববর্তী সকলকে নিদ্রাভিভূত করণের উদ্দেশে এই সূক্তমন্ত্রে জলপাত্র। অভিমন্ত্রিত করে শয়নশালায় প্রেক্ষণ করণীয় এবং অবশিষ্ট জল গৃহের দ্বারে নয়নীয়। নগ্ন হয়ে এই মন্ত্রের দ্বারা উল্খল অভিমন্ত্রিত করতে হয়। তথা, গৃহের উত্তর দিকে স্ত্রীর খট্রের দক্ষিণ পায়ায় এই মন্ত্রে। অভিমন্ত্রিত রঞ্জুবন্ধন করণীয়।…ইত্যাদি। (৪কা, ১অ. ৫সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *