০৩. যখন জরুরি মিটিং

৩. যখন রাহেলা খাতুনের পাঁচ নাতি নাত্নী একটা জরুরি মিটিং করতে বসেছে।

চার তালার ছাদে অর্ধসমাপ্ত ঘরটা বাচ্চাদের দখলে, সেখানেই মিটিংটা বসেছে। ঘরের এক কোনায় একটা বইয়ের শেলফ, এক কোনায় টিটনের কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। এছাড়া এই ঘরে আর কোনো ফার্নিচার নাই তাই সবাই মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসেছে। মিটিংটা ঠিক করে চালানোর জন্য রিতুর হাতে দুধের একটা খালি কৌটা এবং একটা বড় চামুচ। রিতু চামুচ দিয়ে কৌটার ওপর ঘটাং ঘটাং করে দুই ঘা মেরে বলল, অর্ডার। অর্ডার।

রিতুর অর্ডার অর্ডার শুনে কোথা থেকে জানি মিঠুন দুই দিকে দুই হাত মেলে প্লেনের ইঞ্জিনের মতো গর্জন করতে করতে ছুটে এসে সবার মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্যাপারটি নিয়ে কেউ অবাক হলো না বরং এরকম কিছু না করলেই সবাই অবাক হতো। শুধু রিতু গম্ভীর গলায় বলল, মিঠুন, আমি যে অর্ডার অর্ডার বলেছি সেই কথাটা কানে যায় না?

মিঠুন উঠে বসে গা ঝাড়া দিয়ে বলল, অর্ডার দাও। আমি কি না করেছি? কী অর্ডার দেবে? পিজা নাকি ফ্রায়েড চিকেন?

ফাজলামো করবি না মিঠুন, ভালো হবে না কিন্তু।

আমি কখন ফাজলামো করলাম? তুমিই না বলেছ অর্ডার, অর্ডার।

অর্ডার মানে হচ্ছে শান্ত হয়ে বসা। গাধা কোথাকার।

রিতুর পাশে টিটন বসেছিল সে রিতুর দিকে তাকিয়ে বলল, আপু, তুমি কেন খামাখা মিঠুনকে শান্ত হয়ে বসতে বলেছ? মিঠুন কোনোদিন শান্ত হয়ে বসতে পারবে? মিঠুন জীবনেও কোনোদিন শান্ত হয়ে বসেছে?

তিতু মিঠুনকে ধরে আদর করে বসাতে বসাতে বলল, মনে নাই মামি বলেছে মিঠুন যখন মামির পেটের ভিতরে ছিল তখনো সে শান্ত হয়ে থাকে নাই। সব সময় পেটের ভিতরে ঢুশ ঢাশ মারতো!

মিঠুন তিতুর পাশে ঠেলাঠেলি করে বসতে বসতে জিব বের করে তিতুর কনুইয়ের খানিকটা চেটে ফেলল। সেটা দেখেও কেউ খুব অবাক হলো না শুধু তিতু বলল, কী করলি তুই? আমাকে চাটলি কেন?

মিঠুন দাঁত বের করে হেসে বলল, তোমার নাম তো তিতু তাই তোমাকে চেটে দেখলাম তুমি কী আসলেই তিতা কী না।

কী দেখলি?

তুমি তিতা না। তুমি হচ্ছ নোতা। তোমার নাম রাখা উচিৎ ছিল নোনতু।

মিঠুনের কথা শুনে টিটনের বৈজ্ঞানিক ভাব চাড়া দিয়ে উঠল। সে বলল, মিঠুন, যে কোনো মানুষকে চাটলে নোনতা লাগবে। তার কারণ সব মানুষ ঘামে আর ঘামের সাথে শরীর থেকে লবণ বের হয়। লবণের টেস্ট হচ্ছে নোনতা। বুঝেছিস?

মিঠুন মাথা নাড়ল, বলল, বুঝেছি।

কী বুঝেছিস?

মানুষের ঘাম হচ্ছে নোতা। আর যাদের ডায়াবেটিস তাদের হিসি হচ্ছে মিষ্টি।

টিটন বলল, আমি মোটেও হিসির কথা বলি নাই-

রিতু মুখ বিকৃত করে তার কৌটায় চামুচ দিয়ে ঘটাং করে মেরে বলল, তোরা এখন চুপ করবি? কী সব নোংরা কথা বলছিস? ঘাম খেতে কেমন, হিসি খেতে কেমন! ছিঃ!

টিটন একটু খানি আপত্তি করে বলল, আমি কিন্তু কোনো নোংরা কথা বলি নাই, আমি শুধু সায়েন্টিফিক কথা বলেছি।

রিতু ধমক দিয়ে বলল, সায়েন্টিফিক কথার খেতা পুড়ি। চুপ করবি এখন?

টিটন চুপ করে গেল। সে আসলে বেশির ভাগ সময় চুপ করে থাকে তবে বৈজ্ঞানিক বিষয় নিয়ে কেউ ভুল কথা বললে সে আপত্তি না করে পারে না। রিতু সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা তাহলে মিটিং শুরু করি?

সবাই বলল, কর। শুধু টিয়া কোনো কথা বলল না। তার কারণ যদিও সে সবার আগে মিটিংয়ে এসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে কিন্তু সে আসলে গভীর মনোযোগ দিয়ে একটা বই পড়ছে। তার আশে পাশে কী হচ্ছে সে জানে পর্যন্ত না। রিতু এবারে গলা উঁচিয়ে রিয়াকে বলল, টিয়া তোর বইটা বন্ধ করবি?

টিয়া মুখ না তুলে বলল, আর মাত্র দশ পৃষ্ঠা আপু!

রিতু কঠিন মুখে বলল, না, আর এক লাইনও না। বই বন্ধ কর।

টিয়া মুখ গোঁজ করে পৃষ্ঠা মুড়ে বই বন্ধ করল। হাত দিয়ে চশমাটাকে ঠেলে ওপরের দিকে তুলে বলল, ঠিক আছে। শুরু কর মিটিং।

রিতু সবার দিকে তাকালো, তারপর মুখটা হাসি হাসি করে বলল, ভাইসব-

টিয়া সাথে সাথে হাত তুলে বলল, দাঁড়াও দাঁড়াও আপু, তোমার বলা উচিৎ ভাইসব এবং বোনসব। এখানে আমিও আছি, আমি মোটেও ভাই না। আমি বোন।

টিটন মাথা নেড়ে বলল, বোন সব বলে কোনো শব্দ নাই।

তিতু বলল, ইংরেজিতে সিবলিং বলে একটা শব্দ আছে। সিবলিং মানে ভাই বোন। বাংলায় সেরকম কোনো শব্দ নাই।

মিঠুন চিৎকার করে বলল, গুলগুলি, গুলগুলি।

রিতু চোখ পাকিয়ে বলল, গুলগুল্লি, আবার কী?

মিঠুন বলল, গুলগুলি মানে ভাই বোন। যেহেতু বাংলায় কোনো শব্দ নাই সেইজন্যে একটা শব্দ তৈরি করে দিলাম। আজকে থেকে গুলগুল্লি মানে ভাইবোন। আপু, তুমি বল, প্রিয় গুগগুলি-

রিতু গরম হয়ে বলল, ফাজলেমি করবি না মিঠুন। আমি বসেছি একটা জরুরি মিটিং করতে আর তোরা সারাক্ষণ বকর বকর করে যাচ্ছিস। চুপ করবি একটু?

মিঠুন বলল, ঠিক আছে চুপ করলাম।

রিতু রাগী রাগী গলায় বলল, আর যদি কেউ একটা কথা বলেছিস তাহলে এই চামুচ দিয়ে মাথার মাঝে দিব একটা বাড়ি।

মিঠুন লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, আমার কাছে দাও আপু, আমি বাড়ি দিয়ে দিই। তুমি খালি বলবে কাকে দিতে হবে আমি দিয়ে দেব।

সবার আগে তোর মাথায় একটা বাড়ি দেওয়া দরকার। চুপ করে বসবি এখন?

ধমক পেয়ে মিঠুন মুখটা বেজার করে বসে পড়ল। রিতু ঠিক যখন কথা বলবে তখন হঠাৎ টিয়া হাত তুলে বলল, আপু তুমি শুরু করার আগে আমি একটা কথা বলতে পারি?

কী কথা?

খুবই জরুরি কথা, অনেকদিন থেকে বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু সবাইকে এক সাথে পাই না। তাই বলতে পারি না। আজকে পেয়ে গেলাম।

ঠিক আছে বল, তাড়াতাড়ি।

টিয়া বলল, এটা শুধু বললে হবে না। এটা সবাইকে দেখাতে

হবে।

দেখা তাহলে।

টিয়া কোনো কথা না বলে পাশে রাখা তার ব্যাগ থেকে একটা খাতা বের করে সেটা খুলে ধরল। টিটন জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী?

পরীক্ষার খাতা।

কী হয়েছে পরীক্ষার খাতায়?

দেখো কত পেয়েছি।

মিঠুন আনন্দে চিৎকার করে বলল, মাত্র তিরিশ পেয়েছ? তার মানে তুমি ফেল! হা হা! ফেল! ফেল! কী মজা।

ভালো করে দেখ গাধা।

সবাই ভালো করে দেখল, কিন্তু আসলেই খাতার ওপরে বড় বড় করে লাল কালিতে তিরিশ লেখা। রিতু ইতস্তত করে বলল, তিরিশই তো পেয়েছিস, এতো কম-

টিয়া মাথা নেড়ে বলল, আপু ভালো করে দেখো!

টিয়া কী দেখতে বলেছে টিটন সেটা প্রথম দেখতে পেল। অবাক হয়ে বলল, মাইনাস তিরিশ?

টিয়া মাথা নাড়লো, বলল, হ্যাঁ। মাইনাস তিরিশ। শূন্য থেকেও তিরিশ কম।

রিতু টিয়ার হাত থেকে খাতাটা নিয়ে দেখে, সেখানে আমার পরিবার নামে একটা রচনা লেখা। টিয়া বেশ সুন্দর করে লিখেছে কিন্তু লেখার মাঝখানে মাঝখানে স্যার লাল কলম দিয়ে দাগ দিয়ে বড় বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে রেখেছেন। রিতু একটু অবাক হয়ে বলল, স্যার তোকে মাইনাস তিরিশ কেন দিয়েছেন? ভালোই তো লিখেছিস।

টিয়া এবারে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, গত সোমবার বাংলা স্যার ক্লাশ এসে বললেন, সবাই আজকে রচনা লিখ। ছেলে মেয়েরা জিজ্ঞেস করল, কীসের ওপর লিখব? নিরক্ষরতার অভিশাপ? স্যার বললেন, না। তখন সবাই জিজ্ঞেস করল, তাহলে কী বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ? স্যার বললেন, না। তখন আরেকজন জিজ্ঞেস করল, তাহলে কী জাতীয় জীবনের শিক্ষার গুরুত্ব? স্যার বললেন, না। তোরা যেগুলো মুখস্ত করে এসেছিস সেগুলো না। নিজে থেকে লিখতে হবে। সবাই রচনা লেখ আমার পরিবারের উপর। যারা মুখস্তের এক্সপার্ট তারা একটু গাঁই ছুঁই করল, তারপর লিখতে শুরু করল। আমিও লিখলাম।

টিয়া এবার একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, পরেরদিন স্যার খাতা দিতে এসেছেন। যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে তাকে প্রথমে দিলেন। তারপরে তার পরের জন, তারপরে তার পরের জন। এইভাবে দিতে দিতে দেখি সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। ক্লাশের দুইজন সবচেয়ে বড় ফাঁকিবাজ ছেলেদের খাতাও দেওয়া হলো, একজন পেয়েছে দুই আরেকজন গোল্লা। শুধু আমার খাতা দেওয়া হয় নাই। আমি দেখলাম স্যারের হাতে তখন মাত্র একটা খাতা বাকি, বুঝতে পারলাম সেইটা নিশ্চয়ই আমার খাতা! চিন্তা করো আমি পুরো ক্লাশে সবচেয়ে লাড্ড গাড্ডা! আমি একেবারে টাশকি মেরে গেলাম।

টাশকি মারার মতোই ব্যাপার, ঘটনাটা ছিল রীতিমতো হৃদয় বিদারক। তার কারণ স্যার সবার খাতা দেয়া শেষ করে টিয়ার খাতাটা হাতে নিয়ে বললেন, ক্লাসে কেউ আশি পেয়েছে কেউ তিরিশ পেয়েছে। খুবই দুঃখের কথা, একজন পেয়েছে দুই আরেকজন শূন্য। কিন্তু সবচেয়ে আজব ব্যাপার হচ্ছে এই খাতাটা- স্যার তখন টিয়ার খাতাটা ওপরে তুলে ধরে বললেন, এই যে খাতাটা আমার কাছে, আমি তাকে শূন্য দিতে পারি নাই। তাকে দিতে হয়েছে শূন্য থেকেও কম। দিয়েছি মাইনাস তিরিশ। ক্লাসে কেউ পাস করেছে কেউ ফেল করেছে, এই মেয়েটার ফেল করা নিয়েও টানাটানি!

টিয়ার তখন মনে হলো লজ্জায় টেবিলের নিচে ঢুকে পড়ে। একজন বলল, কেন স্যার? ফেল করা নিয়েও কেন টানাটানি?

সেটা জানতে চাস? তাহলে আমি একটু পড়ে শোনাই, স্যার তখন টিয়ার খাতাটার মাঝখানে থেকে মাঝখান থেকে পড়ে শোনালেন, আমাদের পরিবারে আমরা পাঁচ ভাই বোন। এখানেই শেষ নয় আছে দুইটা ছাগল একটার রং সবুজ অন্যটার গোলাপি।

স্যার এই টুকুন বলতেই সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠল। স্যার বললেন, এই খানেই শেষ না, আরো শোন। এই মেয়ে লিখেছে, আরও আছে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কিন্তু হলে কী হবে সেটা ডাকে মিউ মিউ মিউ।

আবার পুরো ক্লাস আনন্দে হো হো করে হেসে উঠল। স্যার বললেন, এই খানেই শেষ না। এখানে লেখা আছে তারা পুরো পরিবার একটা বাসায় থাকে, সেই বাসার নাম বক্কিলারে খা! আবার পুরো ক্লাশ হাসিতে ফেটে পড়ল। স্যার নিজেও হাসলেন- হাসতে হাসতে বললেন, এই মেয়ে লিখেছে তাদের বাসার সামনে একটা গর্ত আছে সেইখানে তার দাদি বলেছেন তিনি যখন মারা যাবেন তখন যেন কোনাকুনি ভাবে তাকে সেখানে কবর দিয়ে ফেলে। তারা ঠিক করেছে তাদের দাদি অন্ধকারে ভয় পাবেন বলে সেখানে একটা টিউব লাইট আর মোবাইল ফোন রেখে আসবে! তাদের দাদি তখন মাটির নিচে থেকে মিসকল দিবে!

ক্লাসের সবাই এবারে টেবিলে থাবা দিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়।

কিন্তু মজার জিনিস জানিস?

কী স্যার?

দাদিকে এই মেয়ে মাঝে মাঝে ডাকে মা! এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল।

খাতাটা পুরো ক্লাশকে পড়ে শুনিয়ে স্যার টিয়াকে দাঁড়াতে বললেন। টিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়াল। স্যার বললেন, তুই তো ক্লাশের ভালো ছাত্রীদের একজন। তুই খাতায় পাগলের মতো আবোল তাবোল কেন লিখেছিস?

টিয়া ভাবল একবার বলে, এগুলো আবোল তাবোল না। এগুলো সব। সত্যি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলল না।

স্যার বললেন, আমি চাই তোরা কোনো কিছু মুখস্ত করে নিজের মতো করে লিখতে শেখ। কিন্তু তার মানে এই না খাতায় আবোল তাবোল গাঁজাখুরি জিনিস লিখে বসে থাকবি। এটা তো পরীক্ষার খাতা, এটা তো হাসির গল্প লেখার কম্পিটিশান না। এই পরীক্ষার খাতা দেখে স্যার ম্যাডামরা মার্কস দেবে, সেই মার্কস পেয়ে তোরা পরীক্ষায় পাস করবি। এই সব লিখলে তো পাস হবে না। বুঝেছিস?

টিয়া মাথা নাড়ল, বলল, বুঝেছি।

কথাটা যেন মনে থাকে সেই জন্যে তোকে দিয়েছি মাইনাস তিরিশ। তোর লেখার স্টাইল ভালো, পড়তে ভালো লাগে পড়ে মনে হয় বুঝি সত্যি কথা! কিন্তু খবরদার পরীক্ষার খাতায় উল্টো পাল্টা জিনিস লেখা যাবে না।

টিয়া তার পুরো ক্লাসের বর্ণনা দিয়ে শেষ করার পর সবাই চুপচাপ বসে রইল, শুধু মিঠুন হাতে কিল দিয়ে বিকট স্বরে চিৎকার করে উঠল, জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো।

কে কোথায় আগুন জ্বালবে কেউ সেটা মিঠুনের কাছে জানতে চাইল না, কারণ সবাই জানে জানতে চাইলেই মিঠুন আরো একশ কথা বলতে শুরু করবে। তাকে যত কম উৎসাহ দেওয়া যায় ততই ভালো।

টিটন একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, শুধু টিয়া না, আমাদের সবার এক অবস্থা।

মিঠুন ছাড়া অন্যেরাও মাথা নাড়ল- তাদের সবারই কখনো না কখনো টিয়ার মতো অবস্থা হয়, কখনো সেটা হয় মজার ঘটনা কখনো হয় দুঃখের ঘটনা। মিঠুন দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, টিয়া আপু তুমি একটা পচা ডিম নিয়ে ক্লাশে যাবে, তোমার স্যারের চেয়ারে রাখবে। যেই তোমার স্যার।

টিয়া বলল, আমি খামাখা স্যারকে শাস্তি দিব কেন? স্যার খুবই সুইট মানুষ। আমি অনেক বই পড়ি সেই জন্যে আমাকে খুব আদর করেন। আমাকে নিয়ে শুধু একটু মজা করেছেন।

টিটন বলল, তোর স্যার তো সুইট, আমার ঠিক উল্টা। স্যার পুরা রাজাকার। ক্লাশে আমাকে যা তা ভাবে অপমান করার চেষ্টা করেছে। আমার বন্ধুরা ছিল বলে সুবিধা করতে পারে নাই।

কী করেছে তোর স্যার?

টিটনের স্যার কী করেছে টিটন সেটার বর্ণনা দিল, বর্ণনাটা এরকম :

টিটনের ক্লাশে বাংলা পড়ান যে স্যার সেই স্যার রাজাকার টাইপের। আধুনিক রাজাকারদের মতো শার্টপ্যান্ট পরে, গালে সূক্ষ্ম এক ধরনের দাড়ি। তাদের বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে কবিতাটা আছে সেটা কখনোই পড়ান না। একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ, পয়লা বৈশাখ বা ষোলই ডিসেম্বরের আগে তার খুবই মেজাজ খারাপ থাকে। ক্লাসের কেউ তাকে দুই চোখে দেখতে পারে না, স্যারও কাউকে দুই চোখে দেখতে পারেন না। সেই রাজাকার স্যার একদিন ক্লাশে এসে টিটনের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই ছেলে। তুই নাকি তোর দাদিকে মা ডাকিস?।

কয়েকদিন আগে টিটনের কয়েকজন বন্ধু তার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল, সারাদিন থেকে সবাই খুব মজা করে এসেছে। ক্লাসে সবার মাঝে টিটনদের বাসার ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে তখন কীভাবে কীভাবে জানি রাজাকার স্যারও তাদের বাসার একটা দুইটা ব্যাপার জানতে পেরেছেন। সেইজন্যে রাজাকার স্যার ক্লাশে টিটনকে ধরেছেন। টিটন কী বলবে বুঝতে পারছিল না তখন স্যার আবার খেঁকিয়ে উঠলেন, কথা বলিস না কেন? ডাকিস?

টিটন থতমত খেয়ে বলল, সব সময় ডাকি না, কখনো কখনো ডাকি।

তাহলে তোর মাকে তখন কী ডাকিস? দাদি?

 টিটন বলল, মাকে ডাকি আম্মু।

স্যার মুখ খিঁচিয়ে বললেন, এটা কোন ধরনের ঢং? দাদিকে ডাকিস মা? বাবার স্ত্রী হচ্ছে মা। আর বাবার মা হচ্ছে দাদি। তার মানে তুই তোর বাবার মাকে বলছিস তার স্ত্রী। ছি ছি ছি!

টিটন একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, ছোট থেকে সে দেখে এসেছে তার বাবা মা চাচা চাচি ফুপু ফুপা সবাই রাহেলা খাতুনকে মা ডাকে, তাদের দেখাদেখি তারা সব ভাই বোনই মাঝে মাঝে তাকে মা ডেকে এসেছে এর মাঝে যে কোনো প্যাঁচ আছে সেটা তো সে জানতো না।

টিটনদের ক্লাসে আশিকের খুব সাহস, সে দরকার হলেই রাজাকার স্যারের সাথে মুখে মুখে তর্ক করে। আজকেও সে তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল, বলল, স্যার, নানি আর দাদির ইংরেজি হচ্ছে গ্র্যান্ড মাদার। মাদার মানে হচ্ছে মা। ইংরেজিতে যদি নানি দাদিকে মা ডাকা যায় তাহলে বাংলায় ডাকলে দোষ কী?

রাজাকার স্যার কী বলবেন বুঝতে পারলেন না। যখন তার এরকম অবস্থা হয় তখন স্যার সব সময় যা করেন এবারেও তাই করলেন, বিকট একটা ধমক দিয়ে বললেন, ইংরেজি আর বাংলা কী এক জিনিস? ইংরেজি ভাষার কী কোনো মা বাপ আছে? ছারপোকার ইংরেজি করেছে বাঘ!

আশিকের সাহস আছে, সে শুদ্ধ করে দিয়ে বলল, স্যার বাঘ না, বাগ। বি ইউ জি বাগ।

রাজাকার স্যার হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বললেন, একই কথা!

কেমন করে একই কথা হলো সেটা কেউ বুঝতে পারল না কিন্তু সেটা নিয়ে আর কেউ তর্ক করার সাহস পেল না। তখন সুব্রত দাঁড়িয়ে বলল, স্যার আমরা তো ইংরেজিতে কথা বলি না আমরা তো বাংলায় কথা বলি। আমরা তো দাদি-নানিকে ঠাকুরমা দিদিমা বলি! সেটাও তো মা।

স্যার এমনভাবে সুব্রতের দিকে তাকালেন যেন সে মানুষ না, সে হচ্ছে একটা তেলাপোকা কিংবা কেঁচো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, তোদের কথা আর কী বলব? তোরা তো মাটি দিয়ে একটা মূর্তি বানিয়ে সেটাকেও মা ডাকিস। ডাকিস না?

সুব্রত ভ্যাবেচেকা খেয়ে বসে গেল, টিটন দেখল বেচারা সুব্রতের মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। রাজাকার স্যারের সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে ক্লাসের যে কয়জন হিন্দু ছাত্র আছে তাদেরকে নানাভাবে ধর্ম নিয়ে খোটা দেওয়া। টিটনের তখন একটু রাগ উঠে গেল, বলল, স্যার মা শব্দটা আসলে অন্য রকম। মানুষ যেটাকে ভালোবাসে সেটাকেই মা ডাকে। কাজেই কাকে মা ডাকা যাবে কাকে মা ডাকা যাবে না এরকম কোনো আইন নাই। মানুষ দেশকেও মা ডাকে। ভাষাকেও মা ডাকে।

টিটনদের ক্লাসে আলতাফ একটু কবি টাইপের, কয়দিন আগে সে টিটনদের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে। সে দাঁড়িয়ে দুই হাত নেড়ে চোখ ঢুলুঢুলু করে সুর করে বলল, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী ….

চুপ কর বেকুব। বলে রাজাকার স্যার ধমক দিয়ে আলতাফকে থামিয়ে দিলেন। মুখ বাঁকা করে বললেন, জননী জন্মভূমিশ্চ! হা! তারপর হায়েনার মতো খা খা করে হাসতে লাগলেন। রাজাকার স্যারের মাড়ি কালো রঙের, হাসির সময় ঠোঁটগুলো উপরে উঠে কালো মাঢ়ি বের হয়ে যায় তখন তাকে দেখায়ও হায়েনার মতো। ক্লাসের সবাই এই বীভৎস স্যারের বীভৎস হাসি বসে বসে শুনতে লাগল।

হাসি শেষ করে রাজাকার স্যার আবার টিটনের দিকে তাকালেন, বললেন, তুই যখন তোর দাদিকে মা ডাকিস তখন তোর বাবা মা আপত্তি করে না? আমি হলে তো চাবকে ছাল তুলে দিতাম।

টিটন মুখ শক্ত করে বলল, না স্যার। আপত্তি করে না।

কেন করে না?

টিটন কিছু বলার আগেই তার পাশে বসে থাকা পিয়াস দাঁড়িয়ে উঠে বলল, স্যার ওদের বাসা অন্যরকম। ওদের বাসায় কেউ রাগে না, বকে না ধমক দেয় না। সারা রাত টিভি দেখলেও কেউ না করে না। সবাই দিন রাত মজা করে।

পিয়াস মজার কয়েকটা উদাহরণ দিতে যাচ্ছিল কিন্তু রাজাকার স্যার ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে মুখ খিঁচিয়ে বললেন, মজা করে? দিন রাত মজা করে? ফাজলেমীর জায়গা পাস না?

তারপর রাজাকার স্যার কেন জীবনে কখনো মজা করতে হয় না এবং আনন্দ করতে হয় না এবং করলে কী সর্বনাশ হবে এবং যারা জীবনে খালি মজা করেছে আর আনন্দ করেছে তাদের কী বিপদ হয়েছে তার উপর বিশাল একটা লেকচার দিতে শুরু করলেন।

রাজাকার স্যারের গল্প শেষ করে টিটন ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যখন আরো ছোট ছিলাম তখন বুঝি নাই এখন বুঝতে পারছি আমাদের বাসাটা আসলে অন্য রকম।

মিঠুন হাত ওপরে তুলে চিৎকার করে উঠল, রাজাকারের চামড়া তুলে নিব আমরা।

রিতু ধমক দিয়ে বলল, মিঠুন তুই থামবি। সারাক্ষণ কানের কাছে ভ্যাদর ভ্যাদর করিস।

আমি মোটেই ভ্যাদর ভ্যাদর করছি না আপু।

তাহলে কী করছিস?

স্লোগান দিচ্ছি। মিটিংয়ের মাঝে সব সময় স্লোগান দেয়। তুমি টেলিভিশনে কোনোদিন দেখ নাই? একজন বক্তৃতা দেয় তখন অন্য সবাই স্লোগান দেয়?

এখানে কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে না আর কাউকে স্লোগানও দিতে হবে না।

টিটন বলল, আপু ছেড়ে দাও। টেস্টির সাথে কথা বলে তুমি পারবে না। শুধু শুধু সময় নষ্ট।

মিঠুন বলল, টিটন ভাইয়া, ভালো হবে না কিন্তু। আমাকে টেস্টি ডাকবে না। মিঠুনের চোখে মুখে কিন্তু ভালো না হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না, বরং টেস্টি ডাক শুনে তার চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করে ওঠে।

টিয়া বলল, কেন? তোকে টেস্টি ডাকলে সমস্যা কী? তোর জন্ম হয়েছে টেস্টটিউবের ভিতরে, তোকে টেস্টি ডাকব না তো কী ডাকব? যাদের জন্ম টেস্টটিউবের ভিতরে তারা সবাই হচ্ছে টেস্টি।

মিঠুনের চোখ কৌতূহলে চক চক কার ওঠে, সত্যি সত্যি আমার জন্ম হয়েছিল টেস্টটিউবে? তুমি দেখেছিলে?

দেখব না কেন? আমরা সবাই দেখেছিলাম। ছোট চাচি সিঙ্গাপুর থেকে তোকে এনেছেন। ছোট টেস্টটিউবের ভেতর পানি সেইখানে তুই ব্যাঙাচির মতো সাঁতার কাটছিস।

আর কী করছিলাম টিয়া আপু?

টেস্টটিউবের ভিতরে মিঠুন আরো কী কী দুষ্টুমি করেছিল টিয়া তার বর্ণনা দিতে যাচ্ছিল কিন্তু রিতু দুধের কৌটায় চামুচ দিয়ে ঘটাং করে একটা বাড়ি দিয়ে তাদের থামিয়ে দিল, ধমক দিয়ে বলল, তোরা থামবি? একটা কাজের কথা নিয়ে আলাপ করছি, তার মাঝে সারাক্ষণ শুধু ভ্যাদর ভ্যাদর।

রিতুর ধমক খেয়ে সবাই একটু শান্ত হয়ে নড়ে চড়ে বসে, মিঠুন আরেকটা শ্লোগান দিতে গিয়ে থেমে গেল। রিতু বলল, একটু আগে টিটন ঠিকই বলেছে, সে আমাদের বাসার মানুষগুলো একটু অন্যরকম।

মিঠুন জানতে চাইল, সেটা কী ভালো বা খারাপ?

কোনো কোনো সময় ভালো, কোনো কোনো সময় খারাপ। যেমন মনে কর আমার যখন পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করতে হবে তখন সেখানে আমার ঠিকানা লিখতে হবে। সেই ঠিকানায় যদি বাসায় নাম লিখি খা খা খা বক্কিলারে খা তাহলে সবাই নিশ্চয়ই ভাববে আমি পাগল।

মিঠুন ছাড়া অন্য সবাই মাথা নাড়ল। মিঠুন জিজ্ঞেস করল, কেন? পাগল কেন ভাববে?

কেউ তার প্রশ্নর উত্তর দিল না। তার কারণ উত্তর দেওয়ার কিছু নেই। রিতু বলল, ভালোই হলো আমি আজকে যে জন্যে মিটিং ডেকেছি সেটা নিয়ে কথা বলার আগে এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়ে গেল। আমরা সবাই স্বীকার করে নিলাম আমাদের বাসাটা হচ্ছে অন্য রকম। সবার থেকে আলাদা।

টিয়া মাথা নাড়ল, ভালো না খারাপ জানি না, কিন্তু অবশ্যই আলাদা।

হ্যাঁ, অবশ্যই আলাদা। কাজেই আমরা যেটাই করতে চাই সেটা হতে হবে আলাদা। সেটা হতে হবে আজিব!

আজিব বলে কোনো শব্দ নেই কিন্তু কেউ সেটা রিতুকে মনে করিয়ে দিত না। তিতু জিজ্ঞেস করল, আমরা কী করতে চাই আপু?

বলছি। সেটা বলার জন্যেই এই মিটিং ডেকেছি।

সবাই এবার নড়ে চড়ে বসল। মিঠুন যে মিঠুন সেও নড়াচড়া বন্ধ করে এই প্রথম শান্ত হয়ে বসল।

রিতু বলল, সামনের নভেম্বর মাসের একুশ তারিখ আমাদের নানির জন্মদিন।

মিঠুন হাততালি দিয়ে বলল, কী মজা! কী মজা!

রিতু মিঠুনের হাততালি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল তারপর বলল, নানির এই জন্মদিনটা অনেক স্পেশাল।

টিটন জিজ্ঞেস করল, কেন এটা স্পেশাল, আপু?

এটা হচ্ছে নানির ষাট নম্বর জন্মদিন। যার মানে এটা হচ্ছে ডায়মন্ড জুবিলি। হীরক জয়ন্তী।

সবাই ছোট বড় কিংবা মাঝারি বিস্ময়ের শব্দ করল। মিঠুন মুখ শুকনা করে বলল, মায়ের বয়স ষাট বছর হয়ে যাবে? সেটা তো থুরথুরে বুড়ি। মরে যাবে এখন?

রিয়া ধমক দিল, বলল, ধুর থুরথুরে বুড়ি কেন হবে? ষাট বছর কোনো বয়সই না। আমি সেই দিন দেখেছি একজন ষাট বছর বয়সে বিয়ে করেছে।

এবারে মিঠুনকে আরো দুশ্চিন্তিত দেখালো, বলল, তাহলে দাদি কী আবার বিয়ে করবে?

সবাই হাসতে শুরু করল। টিটন মিঠুনের মাথায় চাটি দিয়ে বলল, ধুর গাধা! তুই তো দেখি এক নম্বর বেকুব।

মিঠুন বুঝতে পারল কথাটা একটু বেকুবের মতো হয়ে গেছে তাই আপাতত কিছুক্ষণের জন্যে সে চুপ করল।

রিতু বলল, যেহেতু এটা নানির ষাট নম্বর জন্মদিন তাই সেটা ঠিক করে করতে হবে। যাকে বলে ফাটাফাটি।

সবাই মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, ফাটাফাটি।

তাই আমি মিটিং ডেকেছি, কীভাবে জন্মদিনটা করা যায় সেইটা আলোচনা করার জন্য।

মিঠুন বলল, ষাট কেজি কেক, তার মাঝে ষাটটা মোমবাতি।

রিতু বলল, গুড।

টিয়া বলল, ডায়মন্ড জুবিলি হলে দাদির জন্য কিনতে হয়ে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস।

রিতু নিশ্বাস ফেলে বলল, ডায়মন্ডের অনেক দাম। আমরা এত টাকা কই পাব?

টিটন বলল, আজকাল নতুন মোবাইল ফোন বের হয়েছে সেগুলো দিয়ে অনেক সুন্দর ফটো তোলা যায়।

তিতু অবাক হয়ে বলল, সত্যি? ফোন দিয়ে ফটো তোলা যায়? আজিব।

রিতু বলল, এইগুলোরও অনেক দাম হবে। তাছাড়া এই সব ফোন ক্যামেরা এই গুলোতে নানির কোনো উৎসাহ নাই।

টিয়া বলল, বই, আমরা ভালো বই দিতে পারি।

রিতু মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, বই একটা ভালো গিফট। কিন্তু আমি আরো স্পেশাল কিছু ভাবছিলাম। যেটা আমাদের আজব ফেমিলির সাথে মিলবে।

তিতু বলল, নানিকে নিয়ে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যেতে পারি।

হ্যাঁ। রিতু মাথা নাড়ল। এটাও একটা ভালো গিফট হতে পারে। দেখি আর কোনো আইডিয়া আছে কী না।

রিতু একটা কাগজ আর কলম নিয়ে বসল, এবং যে যেটা বলছিল সেটাই লিখে ফেলল। সব মিলিয়ে তেরোটা আইডিয়া পাওয়া গেল সে গুলো এরকম :

১. ষাট কেজি কেক, তার মাঝে ষাটটা মোমবাতি।

 ২. ডায়মন্ডের নেকলেস।

৩. ফটো তোলা যায় এ রকম মোবাইল ফোন।

৪. বই।

 ৫. সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া।

 ৬. ষাটটা কলম।

 ৭. ষাটটা সন্দেশ না হলে চমচম।

 ৮. দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাইকে নিয়ে ডিনার।

৯. জন্মদিন উপলক্ষে একটা ওয়াল ম্যাগাজিন।

১০. জম্মদিন উপলক্ষে একটা নাটক লিখে নিজেরা নিজেরা অভিনয় করে দেখানো।

১১. জামদানি শাড়ি।

১২. জন্মদিন উপলক্ষে মিঠুনের ষাট দিন কোনো দুষ্টুমি না করা।

১৩. জন্মদিন উপলক্ষে সবাই মিলে ষাটটা রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্ত করা।

মিটিং শেষে ঠিক করা হলো তারা সবাই মিলে এটা নিয়ে আরো চিন্তা করবে, নতুন নতুন আইডিয়া বের করার চেষ্টা করবে, তার মাঝে যেটা সবচেয়ে ভালো হবে সেটাই হবে মায়ের কিংবা নানির কিংবা দাদির ষাট নম্বর জন্মদিনের উপহার।

.

রাত্রিবেলা তিতু বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাহেলা খাতুনের জন্মদিনে তাঁকে কী দেওয়া যায় সেটা চিন্তা করছিল। চিন্তা করতে করতে সে প্রায় ঘুমিয়েই গিয়েছিল হঠাৎ করে তার মাথায় ঝিলিক করে একটা চিন্তা খেলে গেল। সে লাফ দিয়ে উঠে বসল, রাহেলা খাতুনের জন্মদিনে তাকে সবচেয়ে ভালো কী উপহার দেওয়া যায় সেটা তার মাথায় এসেছে। তাদের নানির জন্যে এর চাইতে ভালো আর কোনো গিফট হতে পারে না। সে প্রায় চিৎকার করে উঠল, আপু?

পাশের বিছানায় রিতু শুয়েছিল সে প্রায়ে ঘুমিয়েই গিয়েছিল, চমকে উঠে বলল, কী হয়েছে?

পেয়েছি!

কী পেয়েছিস?

নানিকে জন্মদিনে আমরা কী গিফট দিতে পারি!

 কী?

এখন বলব না।

কখন বলবি?

 সবাইকে এক সাথে বলব।

এক সাথে বলবি?

তিতু মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। নানি যে কী খুশি হবে চিন্তাও করতে পারবে না।

কী জিনিস, বলে ফেল।

উঁহু। সবাইকে এক সাথে বলব।

রিতু একটু রেগে বলল, যদি আমাকে এখন বলবি না তাহলে ঘুম থেকে ডেকে তুললি কেন?

তিতু কাচুমাচু হয়ে বলল, সরি আপু সরি। বুঝতে পারি নাই তুমি ঘুমিয়ে গেছ। রিতু নরম গলায় বলল, ঠিক আছে। ঘুমা এখন। রিতু নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করল, তিতুর ওপর রাগ করা খুবই কঠিন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *