০৩. মায়া লজের দোতলার বারান্দা

মনজু মায়া লজের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। যার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিনি যে ছোট সাহেবের মা, এই বাড়ির কত্রী– তা কেউ না বলে দিলেও বোঝা যায়। ভদ্রমহিলার মুখটা ছোট এবং নিখুঁত গোলাকার বলেই মুখে বিড়াল বিড়াল ভাব চলে এসেছে। পরেছেন কালো সিস্কের শাড়ি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে একটা সাদা-কালো বিড়াল বসে ফোস ফোস করছে। তার সামনে একটা টেবিল। টেবিলের ওপাশে একটা চেয়ার আছে। মনজু খালি চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে বসতে বলা হয় নি। তাকে বসতে বলা হবে এমন কোনো সম্ভাবনাও সে দেখছে না। ভদ্রমহিলা তাকে চাকরিবোকর হিসেবেই দেখছেন।

তোমার নাম কী বললে?

মনজু!

মনজু না মজনু? স্পষ্ট করে বলো। বিড়বিড় করছি কেন?

ম্যাডাম আমার নাম মনজু।

জাহানারা টেবিলে রাখা চশমা চোখে দিলেন। পরীক্ষকের ভঙ্গিতে তাকালেন। তাকে দেখে মনে হলো না মনজুকে তার পছন্দ হয়েছে।

দেশের বাড়ি কোথায়?

নেত্রকোনা।

জাহানারা হতাশ গলায় বললেন, বুঝেছি— আইছুন খাইছুনের দেশ। শোন ছেলে, শুভ্রর সঙ্গে এ জাতীয় ভাষা ব্যবহার করবে না। পরে দেখা যাবে সেও আইছুন খাইছুন শুরু করেছে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবে, বুঝেছ?

জি আচ্ছা ম্যাডাম।

আজ আমার শরীরটা খারাপ বলে তোমাকে উপরে ডেকে পাঠিয়েছি। তোমার জায়গা হচ্ছে একতলা। সেখানেই থাকবে, উপরে আসবে না। শুভ্রর ঘরে তোমার যাবার দরকার নেই। বুঝেছ?

জি।

তুমি সবসময় একটা হ্যান্ডব্যাগ ক্যারি করবে। সেখানে শুভ্রর জন্যে বাড়তি চশমা রাখবে। শুভ্রর চোখ খারাপ জানো তো?

জি জানি।

শেভ কর নি কেন? প্রতিদিন সকালে শেভ করবে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে ঘুরবে না।

জি আচ্ছা।

বয়স কত?

চব্বিশ।

চব্বিশ বলে তো মনে হয় না। আমার কাছে সাতাশ আঠাশ মনে হচ্ছে। বয়স কমাও কেন? বয়স কমাবার কী আছে? শুভ্রর বয়স চব্বিশ, তাকে দেখে আঠার উনিশের বেশি মনে হয় না। যাই হোক, শুভ্ৰকে তুমি ভাইজান ডাকবে। আপনি আপনি করে কথা বলবে। মাথার মধ্যে রাখবে যে তুমি তার ইয়ার বন্ধু না।

জি আচ্ছা।

একটা মোটা খাতা কিনবে। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে শুভ্র সারাদিন কী করল না-করল গুছিয়ে লিখে রাখবে। আমি যে-কোনোদিন দেখতে চাইব। কি বলছি মনে থাকবে?

জি।

শুভ্রর সঙ্গে দেখা হয়েছে?

জি-না।

যাও দেখা করে আস। হ্যান্ডব্যাগ আর খাতা কেনার টাকা রহমতুল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে নিও। রহমতুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে না? কেয়ারটেকার।

মনজু হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়তে নাড়তে মনে মনে বলল, তুই যে শুধু দেখতেই বিড়ালের মতো তা-না। তুই বিড়ালের মতো মিউমিউ করে কথা বলিস। তোর উচিত ছিল মানুষ বিয়ে না করে একটা হুলো বিড়াল বিয়ে করা। এখনো সময় আছে। দেশের বাড়ি থেকে তোর জন্যে একটা বিড়াল আনব?

জাহানারা বললেন, ঠিক আছে এখন যাও। বারান্দা ধরে সোজা হাঁট, শেষ মাথায় শুভ্রর ঘর। শুভ্ৰকে তোমার কথা বলা আছে। আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। — গাড়িতে করে যখন যাবে তুমি সবসময় বসবে ড্রাইভারের পাশের সিটে। শুভ্রর সঙ্গে বসবে না। ড্রাইভার কত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে লক্ষ রাখবে। স্পিড কখনো যেন চল্লিশ কিলোমিটারের বেশি না হয়। ড্রাইভার যেন কখনো কোনো গাড়ি ওভারটেক না করে। আচ্ছা তুমি এখন যাও।

মনজু শুভ্রর ঘরের দিকে রওনা হয়েছে। পেছনে না ফিরেও সে বুঝতে পারছে বিড়ালনি তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে শুভ্ৰ নামক জিনিসটার ঘরে না ঢোকা পর্যন্ত তাকিয়েই থাকবে। মনজু ঘর থেকে যখন বের হবে তখনো দেখবে বিড়ালনি তার জায়গায় বসে আছে। তাকে দেখতে পেয়েই হাত ইশারায় ডাকবে। সে যখন বিড়ালনির কাছে এসে দাঁড়াবে তখন বলবে, এই ছেলে তোমার নাম যেন কী? নামটা ভুলে গেছি। (বিড়ালনির নাম ঠিকই মনে আছে। তারপরেও নাম ভুলে গেছি বলবে তাকে তুচ্ছ করার জন্যে।) কঠিন কোনো গালি এই মহিলাকে দিতে পারলে মন শান্তি হতো।

শুভ্ৰ নামক জিনিসটার ঘরে ঢুকবে এই নিয়ে টেনশান হচ্ছে। বিড়ালনি যেমন সারাক্ষণ তাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন শুভ্ৰ ছাগলটাও তাই করবে। ছাগলটাকে শুরুতে সে কী বলবে- স্যার, আমি এসেছি। না, স্যার বলা যাবে না— বলতে হবে ভাইজান। চাকর-বাকরের মুখে ভাইজান মানায়। অন্য কিছু মানায় না। সে যদি ঘরে ঢুকে ছাগলটার পা ছয়ে সালাম করে বলতে পারত— ভাইজান গো! আমি আইছি। অখন কী করমুকন। শ‍ইল্যে তেল মালিশ কইরা দেই? হবে না। গেরাইম্যা ভাষা বলা যাবে না। শান্তি নিকেতনের গুরুদেবের ভাষা বলতে হবে— ভাইজান, আমি এসেচি। (এসেছি চলবে না— ছ বাতিল, শুধুই চ) আমি আপনার সেবক। আপনার সোনার অঙ্গে তেল ডলে দেব খন।

শুভ্রর হাতে ফুটখানিক লম্বা একটা দড়ি। সে দড়ি দিয়ে গিন্টুর মতো কী একটা বানিয়ে গভীর মনোযোগে গিটুর দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এটা কোনো গিন্টু না, মহৎ কোনো শিল্পকর্ম। মনজু দরজার ওপাশ থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বিড়ালনির গর্ভে এ কী জিনিস? এমন সুন্দর কোনো পুরুষ মানুষ তো সে আগে কখনো দেখে নি। শুধু যে দেখতেই সুন্দর তা-না। চেহারার মধ্যে মায়া মায়া ভাব। যেন অসম্ভব রূপবান একজন যুবক বালক বালক চেহারা নিয়ে বসে আছে।

মনজু বলল, ভাইজান, আমি আসব?

শুভ্র গিন্টু থেকে চোখ না সরিয়ে বলল, এসো। মা তোমার কথা আমাকে বলেছেন। তুমি মনজু। চট করে বাথরুমে ঢুকে বাথরুমের বেসিন থেকে একটা কাঁচি নিয়ে এসো। তোমাকে খুবই মজার একটা জিনিস দেখাব।

মনজু বাথরুম থেকে কাঁচি নিয়ে এলো। খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার, শুভ্র নামের জিনিসটা তার সঙ্গে অতি পরিচিতজনের মতো কথা বলছে। বিড়ালনি অতি ভদ্র একটা ছেলে পয়দা করেছে।

কাঁচি এনেছ?

জি।

এখন খুব সাবধানে গিট্টুটা কাট।

মনজু গিট্টু কাটল। শুভ্র বলল, আমি তোমাকে এখন খুবই বিস্ময়কর একটা ব্যাপার দেখাব। কাটা দড়িটা তোমার চোখের সামনে জোড়া লাগিয়ে দেব।

মনজু তাকিয়ে আছে। কাটা দড়ি কীভাবে জোড়া লাগবে সে বুঝতে পারছে না। দড়িটা যে দু টুকরা হয়েছে এটা বুঝা যাচ্ছে। দড়ির চারটা মাথা বের হয়ে আছে।

মনজু!

জি ভাইজান।

শুভ্র বলল, দেখ আমি কী করছি— দুটা দড়ি হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম। হাতের মুঠো খুলব, দেখবে দড়ি জোড়া লেগে গেছে। আমাকে কিছুক্ষণ হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে থাকতে হবে। কারণ কাটা দড়ি জোড়া লাগানোর সময় দিতে হবে। এক কাজ করা যােক- তুমি বরং হাত মুঠো কর, তোমার হাতে দিয়ে দেই। কাটা দড়ি হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে থাক। আমি না বলা পর্যন্ত হাতের মুঠো খুলবে না। ভালো কথা— তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? বসে। সামনের চেয়ারটায় বসো।

মনজু বসল। তার হাতের মুঠোয় কাটা দড়ি। শুভ্ৰ হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। কিশোরের সহজ-সরল হাসি। নেত্রকোনার ভাষায় এই হাসির নামঅন্তরি হাসি। অন্তর থেকে যে হাসি আসে। সেই হাসি।

মনজু!

জি ভাইজান।

শুভ্র মনজুর দিকে ঝুঁকে এসে বলল, তুমি যদি শুভ্র হতে আর তোমার বাবা যদি তোমার জন্যে একজন অ্যাসিসটেন্ট ভাড়া করে নিয়ে আসত, যে অ্যাসিসটেন্টের কাজ হচ্ছে তোমাকে পাহারা দেয়া— তুমি রাগ করতে না?

করতাম।

আমিও রাগ করেছি। খুবই রাগ করেছি। আমি অথর্ব কেউ না। আমার বুদ্ধিবৃত্তিও নিম্ন পর্যায়ের তা না। আমার সঙ্গে একজন চড়নদার কেন লাগবে? বাবা তোমাকে চড়নদারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছেন। মা কী করবেন জানো? মা চেষ্টা করবেন গোপনে তোমাকে স্পাই বানিয়ে ফেলতে। তোমার কাজ হবে। আমি কোথায় যাচ্ছি, কার কাছে যাচ্ছি, কী কথা বলছি। সব মাকে জানানো। আমার ধারণা ইতিমধ্যেই এই দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয়েছে। হয় নি?

উনি বলেছেন প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার সময় আপনি কোথায় যান, কী করেন সব একটা খাতায় লিখে রাখতে।

বাহ ভালো তো। Written report. মজার ব্যাপার হচ্ছে। আমি ঘর থেকেই বের হই না। দিনের পর দিন এই ঘরে বসে থাকি। বই পড়ি। কম্পিউটার নিয়ে ঘটঘট করি। ইন্টারনেটে অপরিচিত সব মানুষদের সঙ্গে গল্প করি।

মনজু বলল, ভাইজান, দড়ি কি জোড়া লেগেছে?

না, এখনো লাগে নি। হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে থাক। যখন লাগবে আমি বলব। মনজু শোন, তুমি যে আমার প্রথম চড়নদার তা কিন্তু না। তোমার আগে আরো চারজন ছিল। ওদের প্রত্যেককেই আমার পছন্দ হয়েছিল। কেউ বেশিদিন থাকে না। বড়জোর তিন মাস, তারপরই এদের চাকরি চলে যায়। কী জন্যে চলে যায় আমি নিজেও জানি না। তোমার ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটবে। কাজেই তোমার উচিত হবে গোপনে চাকরি খোজা।

মনজু হঠাৎ আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল, ভাইজান, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।

শুভ্র বলল, আমাকে পছন্দ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি খুবই ভালোমানুষ। মন্দ হবার জন্যে মন্দ মানুষদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে হয়। আমি তা করি না। আচ্ছা তুমি এখন যাও।

হাতের মুঠ খুলব ভাইজান?

নিজের ঘরে গিয়ে খোল।

মনজু শুভ্রর ঘর থেকে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েই থমকে গেল। জাহানারা ঠিকই আগের জায়গায় বসে আছেন। তাকিয়ে আছেন তার দিকে। তবে তিনি তাকে ডাকলেন না। মনজু নিজের ঘরে ঢুকে হাতের মুঠা খুলল— সত্যি সত্যি দড়ি জোড়া লেগেছে। মনজু বুঝতে পারছে দড়ি জোড়া লাগার ঘটনা ঘটেছে অনেক আগেই, যখন তার হাতে দড়ি দেয়া হয়েছে তখনই। শুভ্ৰ নামের মানুষটা এতক্ষণ শুধু শুধু তাকে মুঠো বন্ধ করে রেখেছে। সে তার সঙ্গে মজার একটা খেলা খেলেছে।

 

মনজুকে যে ঘরে থাকতে দেয়া হয়েছে সেই ঘরটা বেশ বড়। দুটা সিঙ্গেল খাট পাতা আছে। একটাতে সে বিছানা করেছে, অন্যটা খালি। ঘরে দুটা চেয়ার আছে, একটা টেবিল আছে। বেশ বড় একটা ওয়ারড্রোব আছে। আলনা আছে। কালো রঙের বিশাল একটা ট্রাংক আছে। ট্রাংক তালাবন্ধ। ছোট্ট পিচকা তালা, চাপ দিলেই খুলে যাবে। ট্রাংকটার দিকে তাকালেই মনজুর ইচ্ছা করে তালা ভেঙে দেখতে ভেতরে কী আছে।

এই বাড়ির দোতলাটা যেমন ফাঁকা একতলা ফাঁকা না। অনেক লোকজন বাস। করে। মনজুর পাশের ঘরেই থাকেন রহমতুল্লাহ। শুভ্রলোকের বয়স যাটের মতো। তিনি এ বাড়ির ম্যানেজার। শক্ত সমর্থ চেহারা। সারাদিনই ছোটাছুটির মধ্যে আছেন। তার প্রধান ডিউটি প্রতিদিন সকালে বাজার করা। তার একজন অ্যাসিসটেন্ট আছে, ছাগীর নাম। তার ডিউটি কী বোঝা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়। সে বারান্দার বেঞ্চিতে কুজো হয়ে বসে আছে। এই সময় যেই বারান্দায় থাকে ছগীর সরু চোখে তার দিকেই তাকিয়ে থাকে। প্রথমবার এই দৃশ্য দেখে শঙ্কিত হয়ে মনজু জিজ্ঞেস করেছিল— কিছু বলবেন? ছগীর না-সূচক মাথা নেড়েছে কিন্তু দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় নি।

ড্রাইভার আছে তিনজন, দারোয়ান চারজন। তারা পাশাপাশি ঘরে থাকে এবং সারাক্ষণই ক্যারাম খেলে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যারামের ঘুটির খটাস খটাস শব্দ হতে থাকে। সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ঘরে টিভি চালু হয়। তখন শুরু হয় তাস খেলা। তাস খেলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। একদিকে তাস খেলা চলছে। অন্যদিকে চলছে টিভি। মনজুর মনে হয়। এরাই এ বাড়ির সবচে সুখী মানুষ।

রান্না করা এবং কোটাবাছার লোক সব মিলিয়ে কয়জন মনজু এখনো জানে না। তারা থাকে একতলার ভেতরের দিকে। খানিকটা খোলা বারান্দা পার হয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। তবে ভেতরের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ। রহমতুল্লাহ প্রথম দিনেই নিয়মকানুন বলে দিয়েছেন। গলাখ্যাকারি দিয়ে বলেছেন (তিনি প্রতিটি বাক্য গলাখাকারি দিয়ে শুরু করেন)— মনজু শোন, ভিতরের বাড়িতে যাওয়া নিষেধ। মেয়েছেলেরা কাজ করে। কাজের সময় তাদের কাপড়াচোপড় ঠিক থাকে না, বুঝেছ? মাথা নাড়লে হবে না। মুখে বলো— বুঝেছ।

মনজু বলল, বুঝেছি।

তিনবেলা খাওয়া তোমার ঘরের সামনে টিফিন ক্যারিয়ারে দিয়ে যাবে। খাওয়ার পরে টিফিন ক্যারিয়ার ধোয়ামোছা করে ঘরের সামনে রেখে দিতে হবে। এই ব্যবস্থা করা হয়েছে, কার কখন ডিউটি তার নাই ঠিক। বুঝেছ?

জি বুঝেছি।

ধর সকালে টিফিন ক্যারিয়ারে তোমারে নাশতা দেয়া হলো। তুমি নাশতা খেলে না। নাশতা ভরা টিফিন ক্যারিয়ার তোমার ঘরের সামনে পড়ে রইল। তখন কিন্তু তোমাকে দুপুরের খাবার দেওয়া হবে না। নাশতা যদি নাও খাও— টিফিন ক্যারিয়ার ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। বুঝেছ?

জি বুঝেছি।

মাসে একদিন প্রথম বিষু্যদবার সন্ধ্যায় ফিস্ট হয়। সেদিন আমরা চেষ্টা করি সবাই মিলে একত্রে খাওয়াদাওয়া করতে। পোলাও রোস্ট, খাসির মাংসের কালিয়া আর দৈ মিষ্টি। যেদিন দৈ মিষ্টি থাকে না সেদিন থাকে কোক ফান্টা। তোমার আর কিছু জিজ্ঞাস করার আছে?

জি-না।

বাড়ির চারদিকে বিরাট বাগান আছে। বাগানে ঘুরতে চাইলে ঘুরতে পার, শুধু রাত বারটার পরে না। রাত বারটার পরে কুত্তা ছেড়ে দেয়া হয়। স্যারের দুটা কুত্তা আছে- সরাইলের কুত্তা। ভয়ঙ্কর। কুত্তার সঙ্গে তোমাকে পরিচয় করানো হয়েছে?

জি-না।

যাও গার্ডের কাছে যাও, সে পরিচয় করায়ে দেবে। তোমার গায়ের গন্ধ শুকাবে। কুকুরের স্মৃতিশক্তি ভালো। একবার কারোর গায়ের গন্ধ শুকলে বাকি জীবন মনে রাখে। তারপরেও প্রথম এক সপ্তাহ রোজ তোমার গায়ের গন্ধ শুকায়ে আসবে। এদের নামও মনে রাখবে। একজনের নাম টুং, আরেকজনের নাম টাং।

কুকুরের নাম টুং টাং?

ছোট সাহেব নাম রেখেছেন। কুকুর দুটাই নিজেদের নাম খুব ভালো মতো চেনে। টুং ডাকলে টুং ছুটে আসে, টাং ডাকলে টাং ছুটে আসে। তোমার কি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?

জি-না।

আমাদের এইখানের নিয়মে মাসে দুই দিন ছুটি। ছুটি কবে নিতে হবে সেটা আগেই বলে দিতে হবে। ইচ্ছা করলে ছুটি জমাতে পার। কোনো মাসে যদি ছুটি না নাও তাহলে পরের মাসে চারদিন ছুটি পাবে। এই বাড়িতে চাকরির আরাম আছে। ভালো আরাম।

মনজু বলল, আপনাকে কী ডাকব?

রহমুতুল্লাহ বললেন, যা ইচ্ছা হয় ডাকবে, শুধু স্যার ডাকবে না। আমরা এখানে শুধু বড় সাহেবকে স্যার ডাকি।

চাচাজি ডাকব?

ডাকতে পার। ও আচ্ছা, আরেকটা কথা তো বলতে ভুলে গেছি। মাসে এক দুই দিন আমার শরাব খাওয়ার অভ্যাস আছে। সবাই জানে। বড় স্যারও জানেন। মাতাল অবস্থায় একদিন উনার সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। উনি কিছু বলেন নাই। যাই হোক আসল কথা হচ্ছে— ফিস্টের রাতে একতলার লোকজন চান্দা তুলে আমাকে একটা বোতল কিনে দেয়। বোতল কেনার চান্দা তুমিও দিবে। তোমার ভাগে ত্ৰিশ চল্লিশ টাকার বেশি পড়বে না।

মনজু বলল, জ্বি আচ্ছা।

তোমার কি এইসব অভ্যাস আছে?

জি-না।

না থাকাই ভালো। অতি বদঅভ্যাস। আমি হজু করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হজ্বের পর তওবা করে এইসব ছেড়ে দেব।

 

জাহানারা ছেলের ঘরে এসে বসেছেন। শুভ্ৰ হাসিমুখে মার দিকে তাকিয়ে আছে, তবে সে মাকে দেখতে পাচ্ছে না। কারণ তার চোখে চশমা নেই। সে দেখছে। নাক-মুখবিহীন ফর্সা একটা গোলাকার মুখ। শুভ্র বলল, মা, তুমি কেমন আছ?

জাহানারা বললেন, আমি কেমন আছি তা দিয়ে তো তোর কোনো দরকার নেই। আমাকে ছাড়াই তো তুই সুখে আছিস। আমি একবার পনেরো ঘণ্টা তোর সঙ্গে কথা বলি নি। তুই বুঝতেই পারিস নি।

শুভ্র বলল, বুঝতে পারব না কেন। ঠিকই বুঝেছি। আমি ভাবলাম কোনো কারণে তুমি কারো সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না। একা একা থাকতে চাচ্ছি। তাই তোমাকে বিরক্ত করি নি।

ছেলেটাকে কেমন দেখলি?

কোন ছেলেটা?

ঐ যে তোর সঙ্গে সঙ্গে যে ঘুরবে। তোর টেক কেয়ার করবে। মিজান না। কী যেন নাম।

ও, মনজুর কথা বলছ? ভালো ছেলে। বুদ্ধিমান, সরল সোজা।

তোর কাছে তো সবাই বুদ্ধিমান। সবাই সরল সোজা। ও তোর কাছ থেকে হাতে মুঠো করে কী নিয়ে যাচ্ছিল?

দড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। জাহানারা অবাক হয়ে বললেন, দড়ি নিয়ে যাচ্ছিল মানে কী?

মানে হলো মা, আমি ওকে একটা ম্যাজিক দেখাচ্ছিলাম। চায়নিজ রোপ ট্রিক। একটা দড়ি কেটে দু টুকরা করে তার হাতে দিয়েছি। দশ মিনিট মুঠো বন্ধ করে রাখলে কাটা দড়ি জোড়া লেগে যায়। এই ট্ৰিক।

জোড়া লেগেছে?

জানি না জোড়া লেগেছে কি-না। তার সঙ্গে পরে আমার আর দেখা হয় নি।

তুই দুনিয়ার সবাইকে ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াচ্ছিস, কই আমাকে তো এখনো দেখালি না।

এইসব ব্যাপারে তোমার আগ্রহ নেই, সেই জন্যে তোমাকে দেখাই নি।

আগ্রহ নেই তোকে কে বলল? ছোটবেলায় কত ম্যাজিক দেখেছি। আমি নিজেও একটা ম্যাজিক পারতাম- রাবারব্যান্ড দিয়ে করতে হয়। এখন অবশ্যি ভুলে গেছি। দেখি তুই আমাকে একটা ম্যাজিক দেখা। ঐ ছোড়াটাকে যেটা দেখিয়েছিস সেটা না। অন্য কিছু।

অন্য কিছু তো মা পারব না। আমি একটাই ভালোমতো শিখেছি। কাটা দড়ি জোড়া লাগানো। এটা দেখাব?

আচ্ছা দেখা।

তাহলে মা তুমি চট করে বাথরুমে যাও। কাঁচিটা নিয়ে আস। জাহানারা ছেলের বাথরুমে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেলেন। বাথরুমের আয়নায় বড় বড় করে একটা ইংরেজি কবিতা লেখা। কবিতাটা লেখা হয়েছে লাল লিপস্টিক দিয়ে। শুভ্ৰ লিপস্টিক পাবে কোথায়? তিনি কয়েকবার কবিতাটা পড়লেন। যে লিপস্টিক দিয়ে কবিতাটা লেখা হয়েছে সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন। লিপস্টিক পাওয়া গেল না।

বাথরুমের আয়নায় লেখা

I often see flowers from a passing car
That are gone before I can tell what they are.
Heaven gives its glimpses only to those
Not in position to look too close.

জাহানারা কাঁচি হাতে ছেলের সামনে বসলেন। ম্যাজিকে এখন তার মন নেই। তার মাথায় ঘুরছে বাথরুমের আয়নায় লেখা কবিতা। যে লিপস্টিক দিয়ে কবিতাটা লেখা হয়েছে সেই লিপষ্টিক।

জাহানারা বললেন, বাথরুমের আয়নায় হাবিজাবি এইসব কী লিখেছিস?

শুভ্র বলল, রবার্ট ফ্রস্টের একটা কবিতার প্রথম দু লাইন এবং শেষ দু লাইন।

মানে কী?

শুভ্র বলল, মানে হচ্ছে যে মানুষ গভীর আগ্রহে কিছু দেখতে চায় প্রকৃতি তাকে দেখায়, তবে খুব সামান্যই দেখায়।

জাহানারা বললেন, কিছুই তো বুঝলাম না। আচ্ছা বাদ দে। আমার কবিতা বোঝার দরকার নেই। তুই কী দেখাবি দেখা।

শুভ্র বলল, এই দেখ মা, দেড় ফুট লম্বা একটা দড়ি। তুমি মাঝখান দিয়ে কেটে দাও। এখন বলো— দুটুকরা হয়েছে না? এখন এই দুটা টুকরা হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের ঘরে যাও। ঘড়ি দেখে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে মুঠো খুলবে। দেখবে দড়ি জোড়া লেগে গেছে।

সেটা কী করে সম্ভব?

ম্যাজিক মানেই তো অসম্ভবকে সম্ভব করা।

জাহানারা মুঠোয় করে দড়ি নিয়ে এলেন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে মুঠো খুললেন। দড়ি জোড়া লাগে নি। যেমন ছিল তেমনি আছে।

শুভ্ৰ কি তার সঙ্গে ফাজলামি করেছে? ম্যাজিকই তাকে দেখায় নি? দড়ি কেটে তার হাতে দিয়ে দিয়েছে? হয়তো সে এই ম্যাজিক জানে না। মজা করেছে। মিজান না। ফিজন নামের ছেলেটার সঙ্গেও হয়তো তাই করেছে। তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করার কোনো মানে হয় না। চাকরিবোকর শ্রেণীর মানুষদের লাই দিতে নাই। লাই দিলেই এর চেষ্টা করে কোলে বসে পড়তে।

জাহানারা সকিনাকে ডেকে পাঠালেন। ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়ানো যদি শুভ্ৰর বর্তমান খেলা হয় তাহলে সে সকিনাকেও ম্যাজিক দেখিয়েছে। সেও নিশ্চয়ই কাটা ছিল সে-রকম কাটাই আছে। এপ্ৰিল ফুল হয়েছে।

সকিনা!

জি মা।

শুভ্ৰ কি তোমাকে কোনো ম্যাজিক দেখিয়েছে?

জি।

দড়ি কাটার ম্যাজিক?

জি। উনি আমার সামনে একটা দড়ি কেটে দুভাগ করলেন। আমাকে বললেন মুঠি বন্ধ করে পাঁচ মিনিট রাখতে। আমি রাখলাম। তারপর দড়ি জোড়া লেগে গেল। মা, আমি যে কী অবাক হয়েছি।

জাহানারা গম্ভীর গলায় বললেন, তুমি যখন-তখন তার ঘরে যাও কেন?

সকিনা ভীত গলায় বলল, আমি তো যখন-তখন যাই না। ঘর ঝাঁট দেবার জন্যে সকালে একবার যাই, বিকালে একবার যাই।

আর যাবে না।

জি আচ্ছা।

জাহানারা থমথমে গলায় বললেন, অল্পবয়েসি মেয়ের শরীরের গন্ধ খুব খারাপ। এই গন্ধে মহাপুরুষরাও অন্যরকম হয়ে যান। তুমি যখন-তখন ঝাড়ু দেবার নাম করে আমার ছেলের ঘরে ঢুকবে, শরীরের গন্ধ ছড়াবে। ঝাড়ু দেবার জন্যে কায়দা করে মাথা নিচু করবে যাতে বুক দেখা যায়। এতে যদি আমার ছেলের কোনো সমস্যা হয় তখন? পেট বাধালে তোমাদের কিছু যায় আসে না। তোমাদের পেট বাঁধিয়ে অভ্যাস আছে। আজকে পেট বাধাবে, কাল ফেলে দেবে। কাঁদছ কী জন্যে? এইসব মরাকান্না আমার সামনে কাঁদবে না। যাও সামনে থেকে।

সকিনা প্ৰায় দৌড়ে ঘর থেকে বের হলো। জাহানারা নিজেই তার ঘরের পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করলেন। তিনি বুঝতে পারছেন কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হবে। তার জন্যে প্রস্তুতি দরকার।

তারও আগো জানা দরকার শুভ্ৰ লিপষ্টিক কোথেকে পেয়েছে। সকিনার কাছ থেকে নিয়েছে? কটকটা লালরঙের লিপস্টিক চাকরানী টাইপ মেয়েদের কাছেই থাকে। মেয়েটাকে যখন শুভ্র ম্যাজিক দেখাচ্ছিল তখনই হয়তো শুভ্র বলেছে— তোমার কাছে লাল লিপস্টিক আছে? নিয়ে এসো। তাতেই সকিনা মনের আনন্দে লাফাতে লাফাতে লিপষ্টিক আনতে গেছে। হারামজাদী ভেবেছে- ভাইজানের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেছে।

জাহানারা উঠে দাঁড়ালেন। লিপষ্টিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। শুভ্ৰকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে হবে। সন্দেহ নিয়ে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।

শুভ্ৰর ঘরের সব বাতি নেভানো। তবে সে জেগে আছে। কম্পিউটারের সামনে বসে আছে। কম্পিউটারের পর্দার হালকা সবুজ আলো পড়েছে তার চোখেমুখে। কী সুন্দর লাগছে। জাহানারা জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছেন। শুভ্র গভীর মনোযোগ কী যেন টাইপ করছে। জাহানারার ছেলের মনোযোগ নষ্ট করার ইচ্ছা করল না।

 

শুভ্র ইন্টারনেটে একজনের সঙ্গে শব্দহীন কথা বলাবলি করছে। সেই একজনের নাম আত্রলিতা। শুভ্রর ধারণা নামটা আসল না। ছদ্মনাম। ইন্টারনেটে গল্পগুজবের সময় বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই ছদ্মনাম ব্যবহার করে।

আত্রলিতার বাড়ি নরওয়েতে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকলজির ছাত্রী। বয়স উনিশ। শুভ্রর সঙ্গে সে মাঝে মধ্যেই গল্প করে।

শুভ্ৰ কম্পিউটার কী-বোর্ডে দ্রুত লিখল- কেমন আছ আত্রলিতা?

আত্রলিতা জবাব দিল- ভালো না।

ভালো না কেন?

আমার মন ভালো নেই।

মন ভালো নেই কেন?

আমার বয়ফ্রেন্ড আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে।

বকা দিয়েছে?

না, বকা দেয় নি। হাসি হাসি মুখে বলেছে— তোমার সঙ্গে আমার মিশ খাচ্ছে না। তুমি দক্ষিণ মেরুর মেয়ে আর আমি উত্তর মেরুর ছেলে। দুই মেরুর দুজন একসঙ্গে কনসার্টে বাজনা বাজাতে পারে না।

তোমার বয়ফ্রেন্ড তো খুব গুছিয়ে কথা বলে!

সে মোটেই গুছিয়ে কথা বলে না। তার কিছু মুখস্ত কথা আছে। আমাকে সে যে কথাগুলি বলেছে এরকম কথা সে আগেও তার অন্য বান্ধবীদের বলেছে।

তাহলে তো এমন একজনের সঙ্গে কনসাটে বাজনা বাজানোই উচিত না। তুমি বরং একাই বাজনা বাজাও।

একা একা কি কনসার্ট হয়?

হ্যাঁ হয়। একটা বাজনা তুমি সত্যি সত্যি বাজাবে। অন্য বাজনাগুলি কল্পনা করে নেবে।

শুভ্ৰ, তুমি কিন্তু খুব গুছিয়ে কথা বলো। তুমি কেমন আছ?

ভালো আছি।

তোমার চোখের অবস্থা কী?

এখনো দেখতে পাচ্ছি।

আজ সারাদিনে সবচে সুন্দর দৃশ্য কী দেখেছ?

আজ সারাদিনের সবচে সুন্দর দৃশ্যটি এখন দেখছি।

এখন কীভাবে দেখবে? এখন তো তুমি কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে বসে আছে।

দাঁড়িয়ে আছেন। মাঝে মাঝে তিনি এই কাজটা করেন— জানালার পাশে এসে দাঁড়ান। আমি কী করছি আড়াল থেকে দেখেন।

বাহ ভালো তো! তুমি একটা কাজ কর। কম্পিউটার অফ করে তোমার মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প কর।

ঠিক আছে, তাই করব। আচ্ছা আত্রলিতা, এটা কি তোমার সত্যি নাম?

অবশ্যই সত্যি নাম। আমি মিথ্যা বলি না।

মিথ্যা বলো না কেন?

প্রয়োজন হয় না বলে বলি না।

প্রয়োজন হলে কি বলতে?

না।

আত্রলিতা! বিদায়।

বিদায়।

শুভ্ৰ কম্পিউটার বন্ধ করে চেয়ার ঘুরিয়ে মার দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছে মা?

জাহানারা হকচাকিয়ে গেলেন। শুভ্র বলল, কী দেখছিলে?

জাহানারা বললেন, তোকে দেখছিলাম। এত রাত পর্যন্ত জেগে থাকিস কেন?

এখন ঘুমিয়ে পড়ব। ভেতরে এসো মা। গল্প করি।

গল্প করতে হবে না। ঘুমুতে যা। আচ্ছা শুভ্ৰ, তুই আয়নায় যে কবিতাটা লিখেছিস সেটা যেন কার লেখা?

রবার্ট ফ্রাষ্টের।

যে লিপস্টিক দিয়ে কবিতাটা লিখেছিস সেটা কোথায়?

শুভ্র বলল, লিপষ্টিক দিয়ে লিখি নি তো মা! ক্ৰেয়ন দিয়ে লিখেছি। কেন বলে তো?

আমাকে দিস তো! আমিও মাঝে মাঝে আয়নায় লিখব।

এসো, নিয়ে যাও।

জাহানারা চাররঙের চারটা ক্ৰেয়ন নিয়ে নিজের ঘরে ফিরলেন। সবুজ রঙ দিয়ে আয়নায় লিখলেন— শুভ্ৰ, তুই এত ভালো কেন?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *