০৩. ফরিদার ধারণা সে উল্টা মানুষ

ফরিদার ধারণা সে আর দশজন মানুষের মতো না। সে উল্টা মানুষ। অন্যদের বেলায় যা হয় তার বেলায় উল্টোটা হয়। সবাই জানে দুই শালিক দেখা শুভ। শুধু তার বেলায় দুই শালিক দেখা ভংকর অত। দুই শালিক দেখা মানেই তার ভয়ংকর কিছু ঘটবে।

আজ সকালে বারান্দায় রেলিং-এ ফরিদা দুটা শালিক বসে থাকতে দেখল। তার মনটাই গেল খারাপ হয়ে। বিরাট কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়ে গেল। ফরিদা হুস হুস শব্দ করে শালিক দুটা উড়িয়ে দিতে গেল। শালিকরা নড়ল না। বসেই রইল। ফরিদা জানে শালিক দুটা বসে থাকবে। তার বেলায় উল্টোটা তো হবেই। সে যদি গলায় করে কিন্তু ভাত এনে দিত তাহলে শালিক উড়ে যেত। কারণ সে উল্টো মানবী। দুষ্ট শালিক দুটাকে যত্ন করে ভাত খাওয়াতে ইচ্ছা করছে না। হারামজাদা পাখি থাকুক বসে।

ফরিদার মনে হল সকাল বেলাতেই পাখি দুটাকে দেখা তার জন্যে এক দিকে ভালো হয়েছে। আগে ভাগেই সাবধান হবার সুযোগ পাওয়া গেছে। বাবুকে আজ স্কুলে পাঠানো হবে না। স্কুলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে নিজেও বাইরে বের হলে না। যদিও নিউমার্কেটে তার কিছু জরুরি কেনাকাটা ছিল। কেতলীর হ্যান্ডেল ভেঙে গেছে। একটা কেতলী কিনতে হবে। দুটা চায়ের কাপ কিনতে হবে। ঘরে সাতটা চায়ের কাপ আছে। এর মধ্যে দুটা কাপে বোটা ভাঙা। ভালো চারটা কাপ চার রকমের। এই চারটার মধ্যে দুটার আবার পিরিচ নেই। তবে যেহেতু জোড়া শালিক দেখেছে–নিউমার্কেটের কেনাকাটা বন্ধ। জহিরের সঙ্গেও আজ খুব ভালো ব্যবহার করতে হবে। এমন কিছুই করা যাবে না যেন ঝগড়া বেধে যায়। জহির অন্যায় কিছু করলেও চুপ করে থাকতে হবে।

আল্লাহর কাছে ফরিদা মানতও করে ফেলল, আজকের দিনটা যদি ভালায় ভালোয় পার হয় তাহলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে।

জহির ঘুম থেকে উঠল সকাল নটায়। খবরের কাগজ হাতে বারান্দায় এসে বসতে বসতে বলল, চা দাও তো। ফরিদা খুশি খুশি। গলায় বলল, কফি খাবে?

জহির রাগী গলায় বলল, কফি এল কোত্থেকে?

ফরিদা বলল, এক কৌটা কিনেছি। তুমি কি পছন্দ কর।

আমি আবার কবে থেকে কফি পছন্দ করলাম? টাকা-পয়সার এ রকম টানাটানি এর মধ্যে তুমি কফি কিনে ফেললে? সংসার উচ্ছন্নে যাচ্ছে তোমার জন্যে এটা জান? কফির কৌটার মুখ কি খোলা হয়েছে?

না।

তাহলে কি তি দিয়ে টাকা নিয়ে আসলে।

আচ্ছা।

আচ্ছা ফাচ্চা না। আজই যাবে।

ফরিদা চুপ করে রইল। কফির কৌটা ফেরত দিয়ে টাকা আনা যাবে না। কিছু সমস্যা আছে। কফির কৌটাটা সে দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। কাজটা সে করেছে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে। তার কাঁধে ছিল একটা বাহারি চটের ব্যাগ। সেই ব্যাগে সে কফি কৌটাটা প্রথম ঢুকাল। তারপর নিল একটা টমেটোর সস। সবশেষে দুটা কাপড় ধোয়া সাবান। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলি বেশ বড় বড়। এমনভাবে জিনিসপত্র সাজানো যে এদিক ওদিক তাকিয়ে যে কোনো কিছু উঠিয়ে নেয়া যায়।

ফরিদা চায়ের কাপ জহিরের সামনে রাখতে গিয়ে বলল, বৃহস্পতিবারটা ফ্রি রাখবে।

জহির চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, বৃহস্পতিবারে কি?

চিত্রার এনগেজমেন্ট।

চিত্রা আবার কে?

ফরিদা অবাক হয়ে বলল, চিত্রাকে তুমি জান না? বড় ভাইজানের মেয়ে।

জহির বলল, যারা আমাকে চিনে না আমিও তাদের চিনি না। গরিব থাকবে গরিবের মতো। বড়লোক থাকবে বড়লোকের মতো। আগবাড়ায়ে খাতির জমানোর কোনো দরকার নাই।

ভাইয়ের মেরে এনগেজমেন্টে আমি থাকব না?

না।

তুমি এইসব কি বলছ?

এটা আমার ফাইন্যাল কলা। যারা তোমাকে ভাবে ভাবে সেই বাড়িতে তুমি যাবে?

তারা আমাকে কখন চোর ভাবল?

এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেছ?

ফরিদা আহত গলায় বলল, কি উল্টাপাল্টা কথা বলছ? আমাকে চোর ভাববে কেন?

দুই বছর আগে তুমি তোমার ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলে। এক রাত থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরার পর কি হয়েছিল?

আমি তো জানি না কি হয়েছিল।

সকালবেলা তোমার ভাবি আমাদের বাসায় চলে এলেন। তার একটা গলার হার খুঁজে পাচ্ছেন না। তুমি ভুল করে তোমার হ্যান্ডব্যাগে নিয়ে এসেছ কি-না জানতে এসেছিলেন। তিনি নিজেই তোমার হ্যান্ডব্যাগ উল্টে-পাটে দেখলেন। তোমার মনে নাই?

ফরিদা সহজ ভঙ্গিতে বলল, এটা ভাবী একটা ভুল করেছে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। পরে যখন গয়নাটা পাওয়া গেল ভাবী খুবই লজ্জার মতো পড়ল। আমার কাছে এসে কেঁদে ফেলল।

গয়না পাওয়া গিয়েছিল না-কি?

দুই দিন পরই পাওয়া গেছে। কে যেন তোষকের নিচে রেখে দিয়েছিল।

গয়না পাওয়ার কথা তো আমাকে বল নি।

এটা বলার মতো কিছু না-কি? আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যখন ভাইজানের বাড়িতে যেতে নিষেধ করছ তখন যাব না। তাছাড়া খালি হাতে তো যাওয়াও যায় না। একটা কিছু তো নিয়ে যাওয়া দরকার।

 

দুই শালিক দেখার পর ফরিদা যে সব প্রতিজ্ঞা করেছিল তার কিছুই মনে রইল না। ফরিদা বাবুকে স্কুলে দিয়ে এসে গয়নার দোকানে চলে গেল। বড় ভাবীর গয়নাটা সে ঠিকই নিয়ে এসেছিল। ঘরে এনে এমন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিল যে কিছুদিন পর সে নিজেই ভুলে গিয়েছিল। জহিরের কথায় মনে পড়ল। গয়নাটা বিক্রি করা দরকার। চিত্রার এনগেজমেন্ট উপলক্ষে সে চিত্রার জন্যে একটা শাড়ি কিনবে। আর বিয়েতে দেবার জন্যে ছয়-সাত আনা সোনায় কোনো কানের দুল। সেপ্টেম্বরের ছ তারিখে চিত্রার বিয়ে তখন হাতে টাকা থাকবে কি থাকবে না, তার নেই ঠিক।

চাঁদনি চকের একটা গয়নার দোকানে ফরিদার যাতায়াত আছে। দোকানের এমন কর্মচারীকে ফরিদা মামা ডাকে। গয়নার দোকানে কোনো পাতানো মামা থাকলে গয়না বিক্রি করা সহজ হয়। খুব বিপদে পড়লে এই পাতানো মামার কাছ থেকে সে টাকা ধারও নেয়।

পাতানো মামার ধার ফরিদা সময়ের আগেই শোধ দেয়। নিজে গরজেই দেয়। যে কোনো সময় ধার পাওয়া যায় এমন একটা জায়গা থাকা দরকার। পাতানো মামার নাম রবি হোসেন। লোকটাকে ফরিদার তেমন সুবিধার মনে হয় না। লোকটা প্রায়ই বলে–বাসায় এসে বেড়ায় যাও। সারাদিন থাকবে। খাওয়া দাওয়া করবে। খালি বাড়ি কোনো অসুবিধা নাই।

খালি বাড়ি বলেই তো অসুবিধা। লোকটার বউ থাকলে ঐ বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া কোনো সমস্যা ছিল না। তবে এই কথা ফরিদা বলে না, বরং যতবারই রবি হোসেন ফরিদাকে তার বাড়িতে যেতে বলে ততবারই ফরিদা বলে, জ্বি আচ্ছা যাব। হুট করে একদিন উপস্থিত হব। আপনাকে রান্না করে খাওয়াব। আমি খুব ভালো রান্না জানি।

কবে আসলে বল?

আগে থেকে বলে আসলে তো মজা থাকবে না। কোনো এক ছুটির দিন চলে আসব। মামা আপনার বাসায় ঝুনা নারিকেল আছে? ঝুনা নারিকেল কিনে রাখবেন।

ঝুনা নারিকেল দিয়ে কি হবে?

ঝুনা নারিকেল দিয়ে আমি একটা রান্না জানি খুবই সুস্বাদু। একবার গেলে সারাজীবন ভুলবেন না। কি করতে হয় আমি বলি–প্রথমে নারিকেলটা ফুটা করে পানি ফেলে দেবেন। তারপর মশলা মাথা ছোট ছোট চিংড়ি মাছ এই ফুটা দিয়ে ঢুকিয়ে ময়দা দিয়ে ফুটা বন্ধ করে দেবেন। এখন কয়লার আগুনে নারিকেলটা রেখে তার বাইরেরটা পুড়াবেন। পনেরো বিশ মিনিট আগুনে ঝলসানোর পর নারিকেল ভেঙে চিংড়ি মাছ বের করে গরম ভাত দিয়ে খাবেন। মনে হবে বেহেশতি কোনো খাবার খাচ্ছেন।

ঠিক আছে ঝুনা নারিকেল যোগাড় করে রাখব। তুমি কবে যাবে বল?

যে কোনো একদিন চলে যান। আপনি ম্যাপ  এঁকে বাড়ির ঠিকানা ভালো করে একটা কাগজে লিখে দিন। আমি খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলব।

ঝামেলা করে বাসায় গিয়ে দেখলে আমি নেই। তখন কি হবে?

আরেক দিন খাব।

রবি হোসেন ঠিকানা লিখে কাগজ দিয়েছে। সেই কাগজ ফরিদা তার হ্যান্ডব্যাগে নিয়ে দিয়েছে। সে কখনো বিপত্নীক একটা মানুষের খালি বাড়িতে উপস্থিত হবে না। এই কথাটা তাকে জানানোর দরকার কি। সে আশায় আশায় থাকুক। বিপত্নীক মানুষ যখন তার খালি বাড়িতে কোনো মেয়েকে ডাকে তার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য থাকে। এই উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে না ফরিদা এত বোকা না। তবে লোকটার সঙ্গে সে বোকার ভান করে। মতলববাজ পুরুষ বোকা মেয়ে পছন্দ করে।

রবি হোসেন ফরিদাকে দেখে গম্ভীর গলায় বলল, খবর কি?

ফরিদা বলল, খবর ভালো। একটা গয়না বিক্রি করব। আমার শখের গয়না। দূর সম্পর্কের এক খালা বিয়েতে দিয়েছিলেন।

শখের গয়না বিক্রি করবে কেন?

টাকা দরকার। একটা গয়না বিক্রি করে আরেকটা কিনতে হবে।

রনি হোসেন বিরক্ত গলায় বলল, গয়না কেনা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। মালিকের হুকুম।

ফরিদা বলল, আমাকে বিক্রি করতেই হবে। মামা আপনি ব্যবস্থা করে দিন। আচ্ছা ভালো কথা, আগামী শুক্রবারে কি আপনি বাসায় থাকবেন।

কেন?

বাসায় থাকলে যাব। শুক্রবারে আমার কোনো কাজ নেই। বাবুকে নিয়ে তার বাবা যাবে তার এক দূর সম্পর্কের খালার বাসায়। সারাদিন থাকবে। সারাদিন আমি একা ঘরে বসে থেকে কি করব? ঝুনা নারিকেল যোগাড় করে রাখবেন। লুনা নারিকেল আর কয়লা।

সত্যি যানে?

ও আল্লা সত্যি না তো কি?

ফরিদা যা ভেবেছিল তাই হল। রবি হোসেনের মুখ থেকে গম্ভীর ভাব চলে গিয়ে খুশি খুশি ভাব চলে এল। শুক্রবারের কথা ভেবে এখনই লোকটার চোখ চকচক করা শুরু করেছে। কি হারামজাদা মানুষ।

গয়না বিক্রি করে ফরিদা এক জোড়া কানের টব কিনল। নগদ দুহাজার টাকা পেল। বাড়তি যা পেল সেটাও খারাপ না। কানের টব বাছাই করার ফাঁকে ফরিদা একজোড়া ঝুমকা দুল সরিয়ে ফেলল। সিগারেট খোর লোকরা যেমন পকেটে প্রতিটি সিগারেটের হিসাব রাখে গায়নার দোকানের কর্মচারীও ডিসপ্লে টেবিলের উপর লাগা প্রতিটি গয়নার হিসাব রাখে। রনি হোসেন খুব সম্ভব শুক্রবারের চিন্তায় হিসাব রাখতে পারল না। ফরিদা বলতে গেলে তার চোখের সামনে থেকে কানের টব সরিয়ে ফেলল, লোকটা বুঝতেই পারল না।

দু হাজার টাকা ফরিদা অতি দ্রুত খরচ করে ফেলল। এনগেজমেন্টের দিন চিত্রাকে উপহার দেবার জন্যে সাতশ টাকা দিয়ে হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি কিনল। একটা টি সেট কিনল। জহিরের জন্যে দুটা স্ট্রাইপ দেয়া সার্ট কিনল। বাবুর জন্যে ফুটবল। বাবু কয়েকদিন ধরেই পোলাও খেতে চাচ্ছিল। ফরিদা কাঁচাবাজার থেকে পোলাও-এর চাল, মুরগি, কিনল। তারপরও তার হাতে দেড়শ টাকা রইল। এই টাকাটাও সে খরচ করে ফেলত নিল বাবুর স্কুল ছুটি হয়ে যাবে। তাকে আনতে যেতে হবে।

বিকেল পর্যন্ত ফরিদার সময় খুব ভালো কাটল। সকালবেলা জোড়া শালিক দেখায় তেমন কিছু হল না। ফরিদার মনে হল আজকের দিনটা সে ভালো ভাবেই পার করে দিতে পারবে।

 

জহির অফিস থেকে ফিরল পাঁচটায়। তার মুখ অত্যন্ত গম্ভীর। ভুরু কুঁচকে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে সে রাগ চেপে আছে। বেশিক্ষণ রাগ চেপে রাখলে চোখ লালচে হয়ে থাকে। জহিরের চোখ লাল।

ফরিদা বলল, তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?

জহির বলল, না।

চোখ মুখ শক্ত করে আছি। অফিসে কিছু ঘটেছে?

জহির বলল, না।

ফরিদা চা আনতে গেল। নতুন টি পটে করে চা এনে জহিরের সামনে রাখল। টি পটটা এত সুন্দর যে দেখবে তারই মন ভালো হয়ে যাবে। টি পটের সঙ্গে দুটা কাপ। দুজন এক সঙ্গে বসে চা খাওয়া। ফরিদা বলল, চায়ের সঙ্গে কি খাবে? চিড়া ভেজে দেব?

জহির বলল, চিড়া পদে ভাণ্ডলে। আগে বল তুমি কি আমার কোটের পকেটে হাত দিয়েছিলে?

কোটের পকেটে হাত দেব কেন?

কোটের পকেটে তিনটা পাঁচশ টাকার নোট ছিল। নোট দুটা নেই।

তোমার কাছ থেকে আমি টাকা চুরি করব?

আগে তো অনেকবারই করেছে। আমার পকেট থেকে টাকা নেয়া তো নতুন কিছু না।

আমি তোমার কোটের পকেটে হাত দেই নি। টাকাও নেই নি।

সত্যি কথা বল।

সত্যি কথাই বলছি।

এই টি পটটা নতুন কিনেছ না?

হুঁ।

কবে কিনেছে?

আজ কিনেছি।

টাকা কোথায় পেয়েছ?

আমাণ না কিছু টাকা ছিল। ভাইজান কয়েকদিন আগে শে এসেছিলেন। ইলিশ মাছ নিয়ে তখন দিয়ে গেছেন।

জহির থমথম গলায় বলল, এখনো সময় আছে সত্যি কথা বল।

সত্যি কথাই তো বলছি।

তোমার ভাই এসে হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে গেল। ফাজলামী করছ। দিনের পর দিন ভাইয়ের কোন খোঁজ নাই, সেই ভাই হয়ে গেল হাজী মোহাম্মদ মহসিন?

ভাইজান সম্পর্কে এইভাবে কথা বলবে না।

তোমার ভাইজান সম্পর্কে কি ভাবে বলা বলতে হবে নিল ডাউন হয়ে?

ফরিদার চোখে পানি এসে গেল। জহির কঠিন গলায় বলল, চোখের পানি মুছ। এক্ষুণি মুছ। আর কাপড় পর।

ফরিদা কাঁদতে কাঁদতে বলল, কাপড় পরব কেন?

জহির কঠিন গলায় বলল, হাতেনাতে চোর ধরব। তোমার ভাইজানকে জিজ্ঞেস করব–ইলিশ মাছের সঙ্গে কত টাকা দিয়েছেন? আজ আমি হেস্ত নেস্ত করব। ধান কুটে বের করে ফেলব কত ধানে কত চাল।

ফরিদা হতাশ বোধ করছে। জহিরের কোটের পকেট থেকে সে কোনো টাকা নেয় নি। কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে অপরাধ না করেও অপরাধ স্বীকার করে নেয়াটা মঙ্গলজনক হবে। সে আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলল, তোমার কোটের পকেট থেকে আমি টাকা নিয়েছি। এখন কি করবে? আমাকে মারবে? গায়ে গরম চা ঢেলে দেবে?

হির কিছু বলছে না। চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। তার ভাব ভঙ্গি শান্ত। এই শান্ত ভঙ্গিটাকেই ফরিদার ভয়। ভয়ঙ্কর কিছু করার আগে আগে মানুষ শান্ত হয়ে যায়।

জহির কি করতে পারে ফরিদা দ্রুত চিন্তা করছে। চড় থাপড় দিতে পারে। দিলে খারাপ না, বাবু বাসায় নেই সে দেখবে না। ঘরে কোনো কাজের লোক নেই। কেউ জানবে না। (এই জাতীয় দৃশ্য কাজের লোকদের দেখা মানে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। প্রতিটি ফ্ল্যাটের লোকজন জেনে যাবে।) গায়ে গরম চা ঢেলে দিতে পারে। আগে একবার দিয়েছে। ভাগ্যিস মুখে পড়ে নি। কানে আর বুকে পড়ে ছিল। ফোসকা পড়ে হয়ে বিশ্রী অবস্থা। ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্লাউজ খুলে বুক দেখাতে হয়েছে। চোখ দিয়ে দেখলেই বুঝা যায় কতটুক পুড়েছে–কিন্তু সেই বদ ডাক্তার আবার নানান ভঙ্গিমায় হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছে। ওষুধ দিয়ে বলেছে কাল আবার আসবেন। ড্রেসিং করে দেব। বুকের সেনসেটিভ স্কিন পুড়েছে তো এই জন্যেই চিন্তা। কথা শেষ করে ব্যাটা আবার বুকে হাত দিয়েছে।

জহির যদি আজ গায়ে চা ঢেলে দেয়–তেমন কোনো সমস্যা হবে না। চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। শরীর পুড়ে গেলেও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। আগের বারের মলমটা এখনো আছে। ফরিদা যত্ন করে তুলে রেখেছে। একবার চা ফেলে দিয়েছে, অভ্যাস হয়ে গেছে। আবারো ফেলবে।

জহির তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে। এর আগেও কয়েকবার বের করেছে। বের করে দিলে খুবই খারাপ হবে। ফরিদার ভয়ঙ্কর কষ্ট হবে। বাসা থেকে বের করে দিলেই ফরিদার মনে হয় এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই। তার তখন ইচ্ছা করে কোনো চলন্ত ট্রাকের নিচে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে। সাহসে কুলায় না। তার সাহস খুব কম।

 

রহমান সাহেব বাসায় ফিরলেন রাত আটটায়। ঘরে ঢুকতেই শায়লায় সঙ্গে দেখা। শায়লা গম্ভীর মুখে বললেন, পেছনের বারন্দায় এসো তোমার সঙ্গে কথা আছে।

রহমান সাহেবের বুক ধক করে উঠল। খারাপ কিছু কি ঘটেছে? সময় ভালো না। সবার জন্যে দুগ্নসময়। চারদিকে থান্নাপ থাৱাপ মটন ঘটছে। তার বাড়িতে যে ঘটবে এটা বিচিত্র কিছু না। তার কোনো মেয়ের মুখে কি কেউ এসিড মেরেছে? মাইক্রোবাসে করে একদল যুবক এসে উঠিয়ে নিয়ে গেছে চিত্রাকে? রহমা সাহেবের বুক ধকধক করছে। তিনি ক্ষীণ গলায় বললেন, কি হয়েছে?

শায়লা গলা নামিয়ে বললেন, তোমার বোন বিছানা বালিশ নিয়ে চলে এসেছে। এখন থেকে না-কি আমাদের সঙ্গেই থাকবে।

রহমান সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ও আচ্ছা।

শায়লা বললেন, ও আচ্ছা মানে? তুমি এক্ষুণি তাকে তার বাসায় রেখে আসবে। কাল আমার মেয়ের এনগেজমেন্ট এই সময় আমি বাড়িতে কোনো ঝামেলা রাখব না।

ঝামেলা কেন?

অবশ্যই ঝামেলা। তোমার এই বোনকে আমার খুবই অপছন্দ। শুধু আমার না, বাড়ির সবারই। সে সুযোগ পেলেই জিনিসপত্র সরায়। চিত্রার মামা আমেরিকা থেকে চিত্রার জন্যে ফ্লেক্সিবল কলম পাঠিয়েছিল। চিত্রার কত শখের জিনিস। সেই জিনিস সরিয়ে ফেলল। তোমার বোনের বাসায় যখন সেই কলম পাওয়া গেল, সে বলল চিত্রার কলমটা দেখে তার খুবই পছন্দ হয়েছে। সে গুলশান বনানীর মার্কেট ঘুরে ঘুরে অবিকল চিত্রার কলমের মতো একটা কলম কিনেছে।

রহমান সাহেব বললেন, বিদেশী সব জিনিসই এখন দেশে পাওয়া যায়।

শায়লা কঠিন গলায় বললেন, বোনের পক্ষে কোন ওকালতি করবে না। তোমার বোনকে তুমি চেন না। আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। আমার মুক্তা বসানো গলায় হার সে যে নিয়েছে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।

রহমান সাহেব ক্লান্ত গলায় বললেন, ও থাকতে এসেছে কেন?

সেটা তাকেই জিজ্ঞেস কর। হেন তেন নানান কথা বলছে। তার গায়ে নাকি গরম চা ফেলে দিয়েছে। বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে। কুৎসিত গালাগালি করেছে। মাগী ডেকেছে। সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তাতে নাক গলাব না। তুমি তোমার গুণবতী বোনকে তার বাসায় রেখে আস। তা যদি না পার শেরাটন হোটেলে স্যুট ভাড়া করে সেখানে রাখ। আমার এখানে রাখতে পারবে না।

আচ্ছা দেখি।

আহা দেখি না। এক্ষুণি যাও। রিকশা ডেকে নিয়ে এস। তারপর বোনকে নিয়ে রিকশায় উঠ।

আজকের রাতটা থাকুক। কাল সকালে আমি দিয়ে আসল।

অবশ্যই না। যাও রিকশা আন।

 

রিকশায় উঠতে উঠতে নাদো কাঁদো গলায় বলল, ভাইজান আমরা কোথায় যাচ্ছি?

তোর বাসায় তোকে দিয়ে আসি। জহিরের সঙ্গে মিটমাট করিয়ে দেই। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়–আবার ঝগড়া মিটে যায়।

এ বাড়িতে যাওয়া আমার পক্ষে সকালে না ভাইজান।

ঐ বাড়ি ছাড়া যাবি কোথায়?

তোমার কাছে কয়েকদিন থাকতে পারল না?

রহমান সাহেব চুপ করে রইলেন। ফরিদা বলল, ভাইজান তুমি বুঝতে পারছ না। বাবুর বাবা তোমাকে খুবই অপমান করলে। তুমি সোজা সরল মানুষ। তোমাকে অপমান করলে আমার খারাপ লাগবে।

রহমান সাহেব বোনের পিঠে হাত রেখে নরম গলায় বললেন, আত্মীয়স্বজনে মধ্যে আবার মান অপমান কি? রাগের সময় জহির কিছু উল্টা পাল্টা কাজ করেছে। এখন নিশ্চয়ই রাগ পড়ে গেছে। এখন সে লজ্জিত। দেখবি আমি সব ঠিক ঠিক করে দিয়ে আসব। রাতে তাদের সঙ্গে ভাত খাব। দরকার হলে রাতটা তোদের সঙ্গে থাকব।

ভালো সময়ে কত থাকতে বলেছি–তুমি থাক নি। আজ থাকবে।

তুই কাঁদিস না। বেশি কাঁদা হার্টের জন্যে খারাপ। হার্টে প্রেসার পড়ে। আমি পত্রিকায় পড়েছি। তুই বরং এক কাজ কর, মনে মনে ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে থাক। এতে বিপদ কাটা যায়। আমি নিজেও পড়েছি।

ফরিদা বড়ভাই-এ কথা অনুযায়ী মনে মনে ওয়াস্তাগফিরুল্লাহ পড়ছে এবং তার মনে হচ্ছে এতে কাজ দিবে। বাসায় গিয়ে দেখবে জহিরের রাগ পড়ে গেছে। সে ভালো মানুষের মতো বসে আছে। ফরিদাকে দেখে যেন কিছুই হয়নি। এমন ভঙ্গিতে বললে তাড়াতাড়ি খাবার দাও তো ক্ষিধে লেগেছে। বাবু না খেয়ে বুমিয়ে পড়েছে। ওকে ঘুম থেকে তোল।

মুরগির কোরমা রান্না করাই আছে। পোলাও রেঁধে ফেলতে হবে। ভাইজান খাবে বলেছে তার জন্যে ঝাল তরকারি একটা থাকলে ভালো হত। ঘরে বেগুন আছে। বেগুন ভেজে দিলে হয়। বেগুনটা আজ অন্য রকম ভাবে ভাজি করবে। বেগুন কুচি কুচি করে তার সঙ্গে নারকেল। ভাইজান রাতে থাকবে। বিছানার চাদর আছে কিনা কে জানে। মনে হচ্ছে নেই। বিছানার চাদর ফরিদা নিজে ধুতে পারে না। লন্ড্রিতে ধোয়াতে হয়। লন্ড্রিতে পাঠানোর কাপড়ে সে এ জায়গায় করে রেখেছে। পাঠানো হয় নি। এর পর থেকে গেস্টরুমের জন্যে এক সেট চাদর, বালিশের ওয়ার ধুয়ে তুলে রাখতে হবে।

ভাইজান।

কি রে?

মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তোমার কেমন লাগছে?

কোনো রকম লাগছে না।

আমরি অদ্ভুত লাগছে। মেয়েটা বড় হয়েছে আমার কাছে মনেই হয় না। ছেলেবেলায় ও যে দাড়িওয়ালা মানুষ দেখলেই কাঁদত এটা কি তোমার মনে আছে?

না।

কি আশ্চর্য! তোমার মনে থাকার তো কথা। দাড়িওয়ালা কাউকে দেখলেই ও ভয়ে সিঁটিয়ে যেত। চিৎকার করে কান্না। তখন আমি তাকে বলতাম–দেখিস তোর বিয়ে হবে দাড়িওয়ালা বরের সঙ্গে। ভাইজান শুর বরের কি দাড়ি আছে? আমি সাধারণ দাড়ি কুণা বলছি না, ফ্রেঞ্চকাট টাইপ স্টাইলের দড়ি।

জানি না তো।

সে কি তুমি ওর বরকে এখনো দেখ নি?

না।

ওর বরের নাম কি?

জানি না।

সত্যি জান না।

জানতাম এখন ভুলে গেছি।

তুমি তো ভাইজান খুবই আশ্চর্য মানুষ।

হুঁ।

তুমি অবশ্যি আগে থেকেই আশ্চর্য ছিলে— এখন যত দিন যাচ্ছে ততই বেশি আশ্চর্য মানুষ হচ্ছে। তোমাকে যে ওষুধগুলি খেতে দিয়েছিলাম সেগুলি খাচ্ছ?

হুঁ।

তোমার চেহারা ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছে। চেহারার মধ্যে ভিখিরী ভিখিরী কাল এসে গেছে। মাথার সব চুল পাকা। তোমার পাশে ভাবীকে দেখলে মনে হয় ভাবী তোমার মেয়ে। তুমি চুলে কলপ দিও তো।

আচ্ছা।

তুমি মুখে বললে আচ্ছা। কিন্তু আসলে দেবে না। আমি ব্যবস্থা করব। রাতে তুমি তো আমার এখানে থাকবে–আমি দোকান থেকে বাবুর বাবাকে দিয়ে একটা কলপ আনিয়ে সকালে চুলে কলপ দিয়ে দেন।

আচ্ছা।

ফরিদাদের ফ্ল্যাটে বাতি জ্বলছে। লোকজনের কথা শোনা যাচ্ছে। পাহমান সাহে বললেন, তোর বাসায় মনে হয় অনেক লোকজন। ফরিদা ক্ষীণ গলায় বলল, ওর বন্ধুরা এসেছে। তাস খেলছে। ফরিদা কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছে। বন্ধুদের সামনে জহির নিশ্চই খুব খারাপ ব্যবহার করবে না। তাছাড়া সঙ্গে তার বড়ভাই আছে। বাবুর জন্যেও ফরিদার একটু দুঃশ্চিন্তা হয়। বাবু কি বাসায় আছে? ঘুমিয়ে পড়েছে না-কি জহির বাবুকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছে?

ফরিদা ভয়ে ভয়ে কলিং বেল টিপল। একবার, দুবার তিনবার। চতুর্থবার কলিং বেল টিপতেই জহির বের হয়ে এল। তার পরনে লুঙ্গি। খালি গা। ফরিদার বুক ধক করে উঠল। জহির মদ খেয়েছে। তার চোখ লাল। মদ খেলেই জহিরের চোখ লাল হয়ে যায়। ঠোঁট ফুলে ওঠে। নেশাগ্রস্ত মানুষ কোনো কিছুই ধার ধারে না। সে কি করবে কে জানে। নোংরা গালিগালাজ না করলেই হয়। মদ খেলেই জহিরের মুখ থেকে কুৎসিত সব গালাগালি বের হয়। বস্তির লোকরা যে ভঙ্গিতে বলে–তোর মাকে এই করি। সেও ঠিক তাই বলে। তাদের চেয়েও খারাপ ভালে বলে। ফরিদার হাত-পা কাঁপতে লাগল।

জহির কিছুক্ষণ তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে রহমান সাহেবের দিকে তাকাল। থমথমে গলায় বলল, ভাইজান আপনি এই হারামজাদীকে এখানে নিয়ে এসছেন কেন?

রহমান সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন। জহির বলল, এই কুত্তীকে আমি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে তিন তালাক বলেছি। সে এটা আপনাকে বলে নাই?

রহমান সাহেব কি বললেন বুঝতে পারছেন না। তার সব চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। জহির বলল, একে নিয়ে চলে যান। যদি না যান, তাহলে আপনার সামনেই মাগীর পাছায় এক লাথি মেরে তাণে সিঁড়িতে ফেলে দেব।

রহমান সাহেব কাঁদো কাঁদো গলায় লুললেন, জহির এইসব তুমি কি বলছ?

যা সত্যি তাই বলছি। এক্ষুণি একে নিয়ে বিদায় হন।

রাগের মাথায় তালাক বললে তালাক হয় না।

আপনাকে এতক্ষণ কি বললাম আমি যা বলেছি ঠাণ্ডা মাথায় বলেছি। অনেক বিচার বিবেচনা করে বলেছি। এখন আপনি যান। নয়তো কোনো কারণে আপনি অপমান হবেন।

জহির ঘরে ঢুকে শক্ত করে দরজা বন্ধ করে দিল। রহমান সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছেন না। ফরিদাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরা যাবে না। আত্মীয়স্বজন এমন কেউ নেই যা বাড়িতে তাকে নিয়ে তুলেন।

ফরিদা নিঃশব্দে কাঁদছে। রহমান সাহেবের খুবই মায়া লাগছে। তার চেয়েও বেশি লাগছে ভয়। কুরিদা বলল, ভাইজান এখন কি করব? রহমান সাহেব বললেন, বুঝতে পারছি না।

তোমার কাছে কি টাকা আছে ভাইজান। আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে যাও। রাতটা কাটুক।

সত্তুর টাকা আছে।

তাহলে চল কালাপুর রেল স্টেশনে যাই। রেলস্টেশনে ত্রাতটা কাটাই।

আচ্ছা।

আচ্ছা বলে রহমান সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলেন। ফরিদা বলল, কোথায় যাচ্ছে? রহমান সাহেব বললেন, এক প্যাকেট সিগারেট কিনে আনি। তুই একটু দাঁড়া।

আমার খুব পানির পিপাসা হয়েছে। ভাইজান এক বোতল পানি নিয়ে এসো। গলা কেমন শুকিয়ে গেছে।

আচ্ছা পানি নিয়ে আসব।

 

রহমান সাহেব সিগারেট কিনলেন। সিগারেট ধরালেন। বড় এক বোতল পানি কিনলেন। ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি। তারপর হাঁটতে শুরু করলেন নিজের বাড়ির দিকে। বোনের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। খালি পেটে সিগারেট খাওয়ার জন্যে তার সামান্য মাথা ঘুরছে। বমি বমি আসছে। তিনি পানির বোতলের মুখ খুলে বোতলের পানির অর্ধেকটা এক টানে শেষ করে ফেললেন। বমি ভাব আলো বাড়ল, তুষ্ণা মিটল না। তিনি রাস্তার পাশে বসে বমি করলেন।

 

আগামীকাল মেয়ের এনগেজমেন্ট। সব খাবার দাবারই আসছে বাইনে থেকে। ঘরের কোনো আইটেম না থাকলে খারাপ দেখা যায় বলেই শায়লা কাওনের চালের পায়েস বসিয়েছেন। রান্না বান্নার ঝামেলা আগের রাতেই মিটিয়ে ফেলতে চান। আগামীকাল তিনি রান্না ঘরে ঢুকবেন না। তিনি চিত্রাকে এনে পাশে বসিয়েছেন। চিত্রার দায়িত্ব হল মাঝে মাঝে চামুচ দিয়ে পায়েস নেড়ে দেয়া। পায়েস যেন ধরে না যায়। শায়লা মেয়েকে দিয়ে এই কাজটা ইচ্ছা করেই করাচ্ছেন যাতে যাতে বরপক্ষের লোকদের বলতে পারেন—পায়েস রেঁধেছে চিত্রা। প্রসঙ্গ ছাড়া অবশ্যি কথাটা বলা যাবে না। প্রসঙ্গ উঠলে তবেই বলতে হবে। বর পক্ষের কেউ যদি পায়েস মুখে দিয়ে বলে—বাহ্‌ খেতে ভালো হয়েছে তো তাহলেই তিনি বলবেন, পায়েস বেঁধেছে চিত্রা।

চিত্রা বলল, মা ফুপুকে এত রাতে ফেরত পাঠানো ঠিক হয় নি। বেচারা বিপদে পড়ে তার ভাইয়ের কাছে এসেছে। আমার নিজের কোনো ভাই নেই, তারপরেও আমি বুঝতে পারছি যে কোনো লোনের অধিকার আছে বিপদে পড়লে তার ভাইয়ের কাছে আসা।

শায়লা বিরক্ত মুখে বললেন, এইসব সাজানো বিপদ। দুদিন পর পর বিপদের কথা বলে উপস্থিত হয়। যখন চলে যায় তখন দেখা যায়–আমার গলার হার নেই, তোর কানের দুল নেই। এই যন্ত্রণা আমার আর সহ্য হয় না। তারচেয়েও বড় কথা তোর ফুপু যদি থেকে যায়–এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে উল্টাপাল্টা কথা বলে সর্বনাশ করে দেবে। তোর শ্বশুরকেই হয়তো বলবে— জানেন আমার স্বামী আমাকে মাগী ডেকেছে আর গায়ে গরম চা ঢেলে দিয়েছে।

চিত্রা বলল তা অবশ্যি ঠিক। ফুপু ভয়ঙ্কর বোকা। কখন কি বলা উচিত কাকে কি বলা যায় এর কোনো ধারণাই নেই। আমাকে কি বলছিল জান মা?

কি বলছিল

না থাক।

মার সঙ্গে চিত্রার সব রকম কথা হয়। তারপরেও কিছু কিছু কথা না হওয়াই ভালো।

শায়লা তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তোর ফুপু কি বলছিল?

এমন কোনো জরুরি কথা না। নারী পুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে কিছু কথা যা একজন ফুপু তার ভাইস্তিকে বলতে পারেন না। এবং আমিও তোমাকে বলতে পারব না।

শায়লা রাগী গলায় বললেন, না বলতে চাইলে বলবি না।

চিত্রা বলল, মা তোমার সঙ্গে আরেকটা ব্যাপারে ক্লিয়ার করতে চাই। আমি কিন্তু আগামীকাল গান গাইব না।

তোকে তো গান গাইতে বলছি না।

এখন বলছ না। কিন্তু সময় মতো ঠিকই বলবে। তুমি তবলচিকে খবর দিয়েছ, নিশ্চয়ই দাওয়াত খাবার জন্যে খবর দাও নি।

ওরা শুনতে চাইলে একটা গান করবি। এতে অসুবিধা কি?

না। বিয়ের পর আমি গান ছেড়ে দেব।

কেন?

জানি না কেন? আমার মনে হচ্ছে বিয়ের পর আমার গান করতে ইচ্ছা করবে না।

এ রকম মনে হবার কারণ কি?

জানি না।

শায়লা হঠাৎ বললেন, চিত্রা তোর কি কোনো পছন্দের ছেলে আছে?

চিলা পায়েস নাড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ আছে।

শায়লা হতভম্ব হয়ে গেলেন। চিত্রা বলল, এ রকম হতাশ চোখে তাকাবার মতো কোনো কিছু না মা। আমার পছন্দের ছেলে আছে শুনে তোমাকে নার্ভাস হতে হবে না। বিয়ে করার মতো কোনো ছেলে না।

তার মানে কি?

চিত্রা সহজ গলায় বলল, কিছু ছেলে আছে যাদের পছন্দ করা যায় কিন্তু বিয়ে করা যায় না।

তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। ঐ ছেলে করে কি?

ঐ ছেলেকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না মা। আমি এ ছেলের বিষয়ে তোমাকে কোনো কিছু বলব না।

তোর সঙ্গে পড়ে?

চিত্রা জবাব না দিয়ে পায়েসের হাঁড়িতে চামচ নাড়া শুরু করল। শায়লা চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। চিত্রাকে এখন কেমন যেন অচেনা লাগছে। কঠিন মেয়ে বলে মনে হচ্ছে।

শায়লা খানিকটা হতাশাও বোধ করছেন। তাঁর মেয়ের পছন্দের একজন ছেলে থাকবে তিনি কখনো তা জানতে পারবেন না, তা কেমন করে হয়?

 

মীরা রান্নাঘরে ঢুকেছে। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে যে কোনো কারণেই হোক ভয় পেয়েছে। রাত্রে সে হঠাৎ হঠাৎ ভয় পায়। ভূতের ভয়। ভয় পেলেই ছুটে যেখানে লোকজন আছে সেখানে চলে আসে। শায়লা ছোটমেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হয়েছে?

মীরা বলল, বাবা ফিরেছে মা। কি রকম যেন করছে।

কি রকম করছে মানে?

মনে হচ্ছে, আমাকে চিনতে পারছে না। তুমি একটু আাসতো মা।

শায়লা উঠে দাঁড়ালেন। চিত্রাও উঠে দাঁড়াল। শায়লা চুলা থেকে পায়েসের হাড়ি নামিয়ে রাখলেন। পায়েস যদি পুড়ে যায় তা হলে অলক্ষণ। বিয়ের পায়েস পুড়ে যাওয়া ভালো কথা না।

রহমান সাহেব তার ঘরে খাটেই বসে আছেন। সিগারেট টানছেন। শায়লা ঘরে ঢুকে বললেন, কি হয়েছে?

রহমান সাহেব বললেন, কিছু হয় নি।

শায়লা বললেন, বোনকে তার বাসায় দিয়ে এসেছ?

রহমান সাহেব বললেন, হ্যাঁ।

কোনো সমস্যা হয় নি?

না।

ঘরের মধ্যে সিগারেটের ছাই ফেলছ কি জন্যে? এসট্রে চোখে পড়ছে না?

রহমান সাহেব উঠে টেবিলের উপর থেকে এসট্রে নিলেন। শায়লা বললেন, সিগারেট ফেলে হাত মুখ ধুয়ে এসে ভাত খাও।

রহমান সাহের সঙ্গে সঙ্গে হাতের আধ-খাওয়া সিগারেট ফেলে দিলেন। তাঁর কাজ কর্ম খুবই স্বাভাবিক। মীরা এখন বাবার স্বাভাবিক আচার আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে। অথচ বাবা একটু আগেই খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। কলিং বেল শুনে মীরা দরজা খুলল। রহমান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু গলায় বললেন, ভেতরে আসব?

মীরা বিস্মিত হয়ে বলল, এইসব কি কথা বাবা? ভেতরে আস।

তিনি ভেতরে ঢুকে বললেন, কিছু মনে করবেন না। এই বাড়ির লোকজন সব কোথায়?

মীরা হতভম্ব গলায় বলল, বাবা তুমি কি বলছ?

তিনি শূন্য দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মীরা ছুটে গেল রান্না ঘরে। এখন মনে হচ্ছে সবই স্বাভাবিক।

শায়লা রান্নাঘরের দিকে গেলেন। চিত্রা গেল মায়ের সঙ্গে। মীরা এসে বসল বাবার পাশে। মীরা বলল, বাবা সত্যি করে বল তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ?

রহমান সাহেব বললেন, পারছি।

বলতো আমি কে?

রহমান সাহেব হাসিমুখে বললেন, তুই মীরা।

বাবা তুমি এমন অত ভাবে হাসছ কেন?

কই হাসছিনা তো।

রহমান সাহেব হাসতে শুরু করলেন। প্রথমে নিঃশব্দে। তারপর গা দুলিয়ে সশলে। তার হাসির দমকে খাট পর্যন্ত নড়তে শুরু করেছে। মীরা কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে ডাকল, মা মা।

শাহালা বানু আবার ঘরে ঢুকলেন। বিরক্ত মুখে বললেন, কি হয়েছে?

মীরা বলল, বাবা যেন কি কম করে হাসছে। শায়লা স্বামীর দিকে তাকালেন নাহমান সাহেবের হাসি বন্ধ হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছেন। শায়লা বললেন, বসে আছ কেন? তোমাকে হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসতে বললাম না।

হমান সাহেব বললেন, আসছি।

আসছি না। এখন আস।

রহমান সাহেব বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ালেন। শায়লা বললেন, আগামীকাল বিকেলে তোমার মেরে এনগেজমেন্ট এটা মনে আছে তো?

ড়হমান সাহেব বললেন, কাড় এনগেজমেন্ট?

কার এনগেজমেন্ট মানে? তুমি কি আমার সঙ্গে রসিকতা করার চেষ্টা করছ? আমি নানান যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে আছি। আরর যন্ত্রণা বাড়াবে না। তোমার সমস্যা কি?

মাথা ব্যথা করছে।

ভাত খেয়ে মাথা ব্যথার দুটা ট্যাবলেই খেয়ে ঘুমাতে যাও।

আচ্ছা।

আগামীকাল অফিসে যাবার দরকার নেই। বাড়িতে নানান কাজকর্ম।

আচ্ছা।

বলপক্ষের লোকজনদের সঙ্গে তুমি আগবাড়িয়ে না বলতে যাবে না। চুপচাপ বসে থাকবে।

আচ্ছা।

ওরা কোনো প্রশ্ন করলে অল্প কথায় জবাব দেবে। দুনিয়ার ইতিহাস বলা শুরু করবে না।

আচ্ছা।

তোমায় অফিসের কেউ কি আসবে?

রহমান সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কোথায় আসবে?

শায়লা নানু তীম চোখে তাকিয়ে রইলেন। তিনি অনেক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়তি যন্ত্রণা নিতে পারছেন না। তার খুবই বিরক্ত লাগছে। তিনি বিরক্তি চাপা দিয়ে ভাত বাড়তে গেলেন।

বাবার সঙ্গে চিত্রা খেতে বসেছে। মীরা আগেই খেয়ে নিয়েছে। সে টেলিফোনে কথা বলছে। ঐ টেলিফোনটা এসেছে। মজনু ভাইয়ের টেলিফোন। এখন মীরা গলার স্বরও চিনতে পারছে। মজনু ভাই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার চেষ্ট করছেন। এতে গলার স্বর ঢাকা পড়ছে না।

মীরা তুমি কি করছ?

টেলিফোনে কথা বলছি।

তোমার গলার স্বর এমন গম্ভীর কেন?

ঠাণ্ডা লেগেছে গলা বসে গেছে।

আগামীকাল তোমাদের বাড়িতে উৎসব।

হ্যাঁ উৎসব। আপনি কি করে জানেন?

জানি। কি করে জানি বলা যাবে না।

আচ্ছা শুনুন আমি কি আপনাকে কখনো দেখেছি?

হ্যাঁ দেখেছ।

আমি কি রোজই আপনাকে দেখি?

হ্যাঁ দেখ।

তারপরেও চিনতে পারছি না?

খুব কাছের মানুষকে চেনা যায় না। শোন মীরা, তুমি আমার সঙ্গে আগে তুমি তুমি করে কথা বলতে আজ আপনি করে কথা বলছ কেন?

জানি না কেন বলছি।

মীরা তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছ?

না।

কিন্তু তোমার গলার স্বরে রাগ আছে।

থাকলে কিছু করার নেই।

রামী কেমাতো সিবালভা।

তার মানে কি?

উল্টো করে বললাম, নামী কেমাতো সিলভা মানে হল মীরা তোমাকে ভালবাসি।

ভালো।

বযা রেম লেপে না কেমাতো।

তার মানে কি?

তার মানে হল তোমাকে না পেলে মরে যাব।

শীলার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে–বেকুব টাইপ একটা মানুষ। যার প্রধান কাজ বাজার করা আর ঘন ঝাঁট দেয়া সে কেমন মেয়ে পটানোর খেলা শিখেছে। উল্টা কথা বলার খেলা খেলছে। মাকে এই ব্যাপারটা বলতে হবে। টেলিফোন শেষ করেই মীরা মাকে বলবে। মা যা করার করুক।

 

খাওয়া দাওয়া শেষ করে রহমান সাহেব পান মুখে দিয়ে ঘুমুতে গেলেন। চিত্রা গেল তার বাবার সঙ্গে। সে আজ বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করবে। বাবার মধ্যে সে কেমন যেন দিশাহারা ভাব দেখছে। এটা তার ভালো লাগছে না।

সে নিয়ে ও দিশাহারা বোধ করছে। আগামীকাল যে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সেই ঘটনা সম্পর্কে এই বাড়ির কেউ কিছু জানে না। বাবাকে কি এই ঘটনাটা বলা যায়। কিংবা বাবার কাছে কি পরামর্শ চাওয়া যায়। জটিল সমস্যায় পরামর্শ দেবার ক্ষমতা কি বাবার আছে?

রহমান সাহেব শুয়ে পড়েছেন। চিত্রা বাবার পাশে বসেছে। চিত্রা বলল, বাবা তোমার মাথা ব্যথা কি কমেছে?

হ্যাঁ।

না কমলে বল–আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেব।

রহমান সাহেব খুবই অস্বস্তির সঙ্গে বললেন— না, না লাগবে না।

চিত্রা বলল, তুমি এত অস্বস্তি বোধ করছ কেন? মেয়ে তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে এতে অস্বস্তির কি আছে?

মাথা ব্যাথা নে। যা তুই ঘুমুতে যা।

যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে খানিকক্ষণ গল্প করি। বিয়ের পর তো আর গল্প করার সুযোগ হবে না। না-কি তোমার ঘুম পাচ্ছে।

ঘুম পাচ্ছে না।

চিত্রা নালা দুলাতে বুলাতে বলল–এ বাড়ির কেউ জানে না, কাল কিন্তু শুধু এনগেমেন্ট হবে না। বিয়ে হয়ে যাবে।

ও আচ্ছা।

তুমি এমনভাবে ও আচ্ছা বললে— যেন এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তুমি সে খুবই অল্পত মানুষ এটা বোধহয় তুমি জান না।

রহমান সাহেব হাসলেন। চিত্রা বলল, আহসান টেলিফোনে এই খবরটা আমাকে দিয়েছে। ওরাই কাজি নিয়ে আসবে। এনগেজমেন্টের পর পরই আহসানের বড়চাচা প্রস্তাবটা তুলবেন। বিয়ে হয়ে যাবে। শুধু যে বিয়ে হবে তাই না। বিয়ের পর ওরা সেদিনই আমাকে নিয়ে যাবে।

আহসান কে?

আশ্চর্য কথা বাবা আহসান কে মানে? তুমি জান না আহসান কে?

না।

যার সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে তার নামই আহসান।

ও আচ্ছা।

ঘটনাটা আমি শুধু তোমাকে বললাম। এদিকে আমি গোপনে গোপনে কি করেছি জান?

না।

আমি আমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস স্যুটকেসে ঢুকিয়ে ফেলেছি। এমন ভাবে ঢুকিয়েছি যেন মা কিছু বুঝতে না পারেন। ভালো করেছি না বাবা?

হ্যাঁ ভালো করেছিস।

শ্বশুর বাড়িতে যাব অথচ আমার নিজের একটা তোয়ালে থাকবে না। ওদের তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। এটা ঠিক না। বাবা তোমার মনে হয় ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাও।

আচ্ছা।

বাতি নিভিয়ে দেব বাবা?

হ্যাঁ।

চিত্রা বাতি নিভিয়ে দিল। চলে যাবার আগে সে কিছুক্ষণ বাবার কপালে হাত রাখল। কপাল গরম হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তাঁর জ্বর আসছে। চিত্রা বাবার গায়ে চাদর টেনে দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *