০৩. পারুল রান্না বসিয়েছে

পারুল রান্না বসিয়েছে। যেহেতু সে স্টোভে রান্না করে তার রান্নাঘর চলমান। একেক সময় একেক জায়গায় থাকে। এখন সে রান্না করছে বারান্দায়। খোলামেলা বারান্দা, একদিকে গ্রীল দেয়া। বাতাস আসছে–স্টোভের আগুন ছড়িয়ে যাচ্ছে। রান্না হতে দেরি হবে। হোক। তার এমন কোন কাজকার্য নেই। সারাদিনে একবেলা রান্না। রান্নাটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই বরং তার সমস্যা–বাকি সময় কাটবে কিভাবে?

তাহের সকাল বেলা ঢাকা চলে গেছে। মেসবাউল করিম সাহেবের অফিসে যাবে। তিনি ঠিক কবে আসবেন, কোন প্লেনে আসবেন জেনে আসবে। তাঁর ঢাকা এসে উপস্থিত হবার আগেই পারুলকে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।

এত বড় একটা বাড়িতে পারুল একা। বাড়ির বাইরে চারটি প্রাণী আছে–তিনটা এলসেসিয়ান কুকুর, একজন কুকুরের সর্দার। কুকুর তিনটার নাম আছে নিকি, মাইক, ফিবো। এর মধ্যে নিকি হল মেয়ে কুকুর। নিকির নাকে শাদা ফুটকি। মাইক এবং ফিবো দেখতে অবিকল এক রকম। কামরুল নামের কুকুরের সর্দার এদের আলাদা করে কি করে, সেই জানে। পারুলের ধারণা গন্ধ শুঁকে শুঁকে। কুকুরের সঙ্গে থেকে থেকে তারও নিশ্চয়ই ঘ্রাণশক্তি বেড়েছে।

রান্না করতে করতে পারুল দেখল, কুকুরের সর্দারটা এখন কুকুর তিনটাকে খেলা দিচ্ছে। ক্রিকেট বলের মত একটা চামড়ার বল ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে। দুটা কুকুর সেই বল নিয়ে খুব নাচানাচি করছে কিন্তু তিন নম্বর কুকুরটা করছে না। সে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। যে দূরে দাঁড়িয়ে, তাকে বল খেলায় আকৃষ্ট করার অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে, লাভ হচ্ছে না। আদুরে গলায় কামরুল বলছে–যাও নিকি, যাও। খেলটু কর, খেলটু।

নিকি খেলটু করার দিকে আগ্রহী নয়, বরং তাকে দেখে মনে হচ্ছে অন্য দুজনের ছেলেমানুষী খেলা দেখে নিকি বিরক্ত। সে খুব ধীর লয়ে লেজ নাড়ছে। কুকুর তার বেশিরভাগ কথাই নাকি লেজ মারফত বলে। সাইন ল্যাংগুয়েজ। ধীরে ধীরে লেজ নাড়ার অর্থ কি কুকুরের সর্দার জানে? পারুল মনে মনে একটা অর্থ করল–ধীর গতিতে লেজ নাড়ার অর্থ আমি বিরক্ত হচ্ছি, আমি খুব বিরক্ত হচ্ছি। পারুল নিজের অজান্তেই ডাকল–নিকি, এই নিকি।

নিকির লেজ নাড়ানো বন্ধ হয়ে গেল। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অন্য দুজনও খেলা বন্ধ করে তাকালো। কুকুরের চোখের ভাষা পড়া যায় না। পড়া গেলেও এতদূর থেকে নিশ্চয়ই যায় না। পারুল বলল, এই নিকি, কাছে আয়।

বলমাত্র পারুলকে বিস্মিত করে নিকি ছুটে এল। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে মুখ খানিকটা বের করে দিল। পারুলের ইচ্ছা হল–ও মাগো বলে বিকট একটা চিৎকার দেয়। নিজেকে সে চট করে সামলালো–যত ভয়ংকর কুকুরই হোক, গ্রীল ভেঙে নিশ্চয়ই আসতে পারবে না।

কিরে নিকি, তুই খেলাট করছিস না কেন? লেটু করতে ভাল লাগে না?

নিকি জবাব দিল না। মুখে তো কিছু বললই না, লেজ নেড়েও না। নিকির লেজ এখন স্থির হয়ে আছে। মাইক এবং ফিবো এসে দাঁড়াল নিকির কাছে। পারুলের মনে হল, অভিজাত কুকুরেরও আত্মসম্মানবোধ তেমন তীব্র না। এদের ডাকা হয়নি। তারপরেও এরা উপস্থিত হয়েছে।

পারুল বলল, তারপর তোদের খবর কি? তোর এমন ভয়ংকর চেহারা করে রেগেছিস কেন? ভয় দেখাতে ভাল লাগে?

ফিবি ও মাইক স্থির হয়ে আছে কিন্তু নিকি তার লেজ সামান্য নাড়ল। সাইন ল্যাংগুয়েজে এই সামান্য লেজ নাড়ার অর্থ কি?

কামরুল দূর থেকে ডাকল–কাম অন, কাম অন। নিকি, মাইক, ফিবো কাম অন প্লে টাইম। প্লে টাইম।

এরা ফিরেও তাকাল না। কামরুল বিরক্ত মুখে এগিয়ে আসছে। গ্রীলের কাছে এসে থু করে একদলা থুথু ফেলল। খুব সবটা পড়ল না, খানিকটা তার ঠোঁটের কাছে ঝুলে রইল। সে পারুলের দিকে তাকিয়ে চাপা সর্দি-বসা গলায় বলল, এদেরে ডাকলা কেন? কেন ডাকলা?

পারুল লোকটির দুঃসাহসে অবাক হয়ে গেল। দারোয়ান শ্রেণীর একটা মানুষ, কুকুরের সর্দার, অথচ কত অবলীলায় পারুলকে সে তুমি করে বলছে। যে পারুল এবার জিওগ্রাফীতে অনার্স পরীক্ষা দিয়েছে, উপরের দিকে সেকেন্ড ক্লাস থাকার কথা। ফোর্থ পেপারটা ভাল হলে সে ফাস্ট ক্লাসের স্বপ্ন দেখতে পারত। ফোর্থ পেপারটা একেবারে যাচ্ছেতাই হয়ে গেল। ক্র্যাশ করলেও করতে পারে। ক্র্যাশ করুক বা না করুক, ইউনিভার্সিটিতে পড়া একটা মেয়েকে কি অবলীলায় লোকটা তুমি ডাকল। এই সাহস তাকে কে দিয়েছে? কুকর তিনটা, না-কি তাহেরের কারণে সে তাকে তুমি বলছে? দারোয়ান-টাইপ একজন মানুষের স্ত্রী, তাকে তো তুমি বলাই যায়।

কামরুল বলল, খবর্দার, এদের ডাকাডাকি করব না।

পারুল খুব দ্রুত চিন্তা করল–লোকটাকে তুমি বলার জন্যে প্রথমেই কড়া একটা ধমক দেবে কি না। যাকে বলে ডাইরেক্ট কনফ্রন্টেশান। অবশ্যি অনেকের অভ্যাস থাকে সবাইকে তুমি বলার। লোকটা হয়ত মেসবাউল করিমকেও তুমি বলে। কুকুর নিয়ে যার কাজ তার বোধ, জ্ঞান কুকুরের কাছাকাছি থাকারই কথা। তাই যদি হয় তাহলে তুমি বলার জন্যে তার উপর রাগ করা যায় না। পারুল রাগ মুছে ফেলে প্রায় হাসিমুখে বলল, কুকুরকে ডাকা কি নিষেধ?

হ নিষেধ।

কুকুর তিনটার নাম আছে। নাম দেয়া হয় ডাকার জন্য। কাজেই আমার মনে হয়। এদের ডাকা নিষেধ না।

তুমি তোমার কাজ করা, কুকুর ডাকাডাকি করবা না।

কামরুল আবার থুথু ফেলল এবং আবারও থুথুর খানিকটা ঠোঁটের কাছে ঝুলে রইল। পারুলের মনে হল লোকটার জিব খানিকটা বাঁকা এই জন্যে থুথু সরাসরি ফেলতে পারে না, বাঁকা করে ফেলে, বাঁকা করে ফেলার জন্যে খানিকটা ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকে।

কামরুল চলে যাচ্ছে। আগের জায়গায় গিয়ে চামড়ার বলটা হাতে নিয়ে বলল, কাম অন বেবী। কাম অন। প্লে টাইম।

কুকুর তিনটা নড়ল না। গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। পারুল ফিস ফিস করে বলল, তোরা নড়িস না, দাঁড়িয়ে থাক। তোরা দাঁড়িয়ে থাকলে লোকটার একটা উচিত শিক্ষা হবে। তুই বলায় আবার রাগ করছিস না তো? তোদের সর্দার আমাকে তুমি বলায় আমি রাগ করিনি। কাজেই তোদেরও রাগ করা উচিত না।

পারুলের এই কথায় ফিবো খুব লেজ নাড়তে লাগল। ফিবোর দেখাদেখি অন্য দুজনও লেজ নাড়া শুরু করল। ব্যাপারটা স্নায়ুযুদ্ধের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। একদিকে কুকুরের সর্দার, অন্যদিকে সে, মাঝখানে তিনটা ভয়াবহ দর্শন গ্রে হাউন্ড।

পারুল বলল, কিরে, তোরা কিছু খাবি? চাল খাবি, চাল?

কুকুর কি চাল খায়? গরু ভেড়া এরা খায়। মুঠি ভর্তি চাল ধরলে খুব আগ্রহ করে খায়। পারুল কুকুরকে কখনো চাল খেতে দেখেনি তবে ভাত খেতে দেখেছে। চাল আর ভাতে তফাৎ তো তেমন নেই। দেবে না কি খানিকটা চাল?

কামরুল আবার ডাকল–কাম অন। কাম অন।

এরা তিনজন নড়ল না। পারুল মুঠি ভর্তি চাল এদের সামনে ধরল। তিনজনই একসঙ্গে চাল শুঁকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেল। মনে হচ্ছে এরা চাল খায় না।

কিরে ভাত খাবি? ভাত খেলে অপেক্ষা করতে হবে। এখন গোশত রান্না হচ্ছে। ও কোত্থেকে হাফ কেজি গরুর গোশত নিয়ে এসেছে। খুবই এক্সপেরিয়েন্সড বুড়ো গরুর গোশত বলে সিদ্ধ হচ্ছে না। গোশত নেমে গেলেই ভাত চড়াব। তখন তোদের গরম গরম খেতে দেব।

মাইক ঘরঘর ধরনের শব্দ করল। কুকুরের ভাষায় কিছু বলল। পারুলের ধারণা, মাইক বলল, আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা অপেক্ষা করছি। রান্না হোক, তারপর গরম গরম খাব।

আধা সেদ্ধ গোশত খানিকটা খাবি না কি? খেতে চাইলে তিনজনকে তিন টুকরা দিতে পারি। তোদের সর্দার আবার রাগ না করলে হয়। কি বিশ্রী করে সে তাকাচ্ছে। তোদের সঙ্গে গল্প করছি তো, ওর সহ্য হচ্ছে না।

পারুল তিন টুকরা গোশত বের করল। পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করল। মেঝেতে ফেলে দিলে ওরা হয়ত খাবে না। সাহেব কুকুর–এদের খাবার দিতে হবে প্লেটে করে, আদবের সঙ্গে। পলি গোশত হাতে করেই ওদের সামনে ধরল। একজনের জন্য এক টুকরা। সবার প্রথম মাইক। মাইকের সামনে ধরতেই সে একটু পিছিয়ে গেল। পারুল বলল, কিরে খাবি না? না কি এখন তোদের লাঞ্চ টাইম না? মাইক এগিয়ে এল। গোশতের টুকরা মুখে নিয়ে নিল। নিকি এবং ফিবো কোন আপত্তি করল না।

কামরুল আসছে। তার মুখ থমথম করছে। রাগের কারণেই কুঁজো হয়ে গেছে। বেশি রেগে গেলে মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। খানিকটা কুঁজো হয়ে পড়ে।

তুমি এরারে কি খাওয়াইতেছ?

গরুর গোশত। বী।

তুমি পাইছ কি? এরর খাওয়ার নিয়ম আছে, তুমি জান না?

না জানি না। আমি তো আর কুকুরের সর্দার না।

তুমি এই বাড়িতে থাকতে পারবা না।

সে তো আর বলে দিতে হবে না। আমি জানি থাকতে পারব না। বাড়ি তো আর আমার না।

আইজ দিনে দিনে বিদায় হইবা।

পারুল অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, রাণে মানুষটা কাঁপছে। থর থর করে কাঁপছে, মুখে ফেনা জমে গেছে–একটা মানুষ এত দ্রুত এতটা রাগতে পারে?

তোমার কত বড় সাহস। কুকুর নষ্ট কর। দাম জান? এই কুকুরগুলার দাম জান?

না, দাম জানি না। শুধু মরা হাতির দাম জানি। মরা হাতির দাম হচ্ছে লাখ টাকা। মরা কুকুরের দাম কত?

চুপ, চুপ। চুপ বললাম…

পারুল লক্ষ্য করল লোকটা আরো কিছু কঠিন কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ নিজেকে সামলাল।  মুহূর্তের মধ্যে তার চেহারা পাল্টে গেল। তার রাগী মুখ মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গেল ভীত সংকুচিত একজন মানুষের মুখ। এখনো সে কাঁপছে তবে রাগে নয়, আতংকে। হঠাৎ লোকটা এত ভয় পেল কেন?

কারণটা পারুলের কাছে স্পষ্ট হল। সে অবাক হয়ে দেখল, তিনটি কুকুরই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কামরুলের দিকে। তাদের শরীর স্থির হয়ে আছে। তিনজনেরই লেজ নামানো এবং তিনজনেই এক ধরনের গম্ভীর শব্দ করছে। কামরুল নামের মানুষটা আতংকে শাদা হয়ে গেছে কুকুরের এই মূর্তি দেখে। সে এদের জানে। জানে বলেই ভয় পাচ্ছে। পারুল ভেবে পেল না, সামান্য তিন টুকরা মাংস দিয়ে সে কি কুকুরগুলির কর্তৃত্ব তার হাতে নিয়ে নিয়েছে্রর? তাকে অপমান করা হচ্ছে এটা বুঝতে পেরে কুকুর তিনটা রুদ্র মূর্তি ধরেছে। আশ্চর্য তো!

কামরুল অস্পষ্ট গলায় কি বলতে গিয়েও থেমে গেল। কয়েক পা পিছিয়ে গেল। তার ভয় দেখে পারুলেরই এখন মায়া লাগছে। সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্যে সহজ গলায় কুকুরদের ডাকল–ফিবো, নিকি, মাইক। তিনজন চট করে ফিরল তার দিকে। পারুল হাসল। কুকুররা কি হাসি বুঝতে পারে?

তোরা মানুষদের ভয় দেখাস কেন? যে তোদের এত দিন আদর-যত্ন করে বড় করল তাকেই ভয় দেখাচ্ছিস–এটা কোন কাজের কথা হল? দেখি গলাটা আরেকটু লম্বা কর–আদর করে দি।

পারুল রেলিঙের ভেতর দিয়ে হাত চালিয়ে ফিবোর গায়ে রাখল। না, পারুলের মোটেই ভয় লাগছে না। এদের খুব আপন লাগছে। আদর করা হচ্ছে একজনকে কিন্তু তিনজনই প্রবল বেগে লেজ নাড়ছে। কামরুল দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। তার চোঙ্গভতি বিস্ময়।

 

তাহেরের দুপুরের আগেই চলে আসার কথা। সে ফিরলে দুজন এক সঙ্গে খেতে বসবে। খাবার সময় গল্পগুজব করে খেতে পারুলের ভাল লাগে। তাহের অবশ্যি নিঃশব্দে খায়। প্লেট থেকে চোখ পর্যন্ত তুলে না। কথা না বলার পারুল একাই বলে। কথা বলার জন্যেও তো কাউকে দরকার।

দুপুর গড়িয়ে গেল, তাহের এল না। একা একা ভাত নিয়ে বসতে পারুলের ইচ্ছা করছে না। যদিও সময় মত তার খেতে বসা দরকার। তার নিজের জন্যে না, যে শিশুটি তার শরীরে বড় হচ্ছে তার জন্যে।

পারুল বিছানায় শুয়ে আছে। খিদে ভালই লেগেছিল–এখন খিদে মরে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে আসা রোদের দিকে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেই বকেল হয়ে যাবে। বিকেলে তাহের যদি ফিরে তখন কি করবে? অবেলায় খাবে? না কি কয়েকটা লুচি ভেজে দেবে? তাহের লুচি খুব পছন্দ করে। ঘরে ময়দা আছে, ডালডা আছে। লুচির জন্যে ময়দা ছেনে রাখা উচিত–পারুলের বিছানা ছেড়ে নামতে ইচ্ছা করছে না। ক্লান্ত লাগছে। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।

একা একা শুয়ে থাকতে ভাল লাগে না। কথা বলার জন্যে একজন কেউ যদি থাকত, কোন প্রিয় বান্ধবী। পারুল মনে মনে তার শিশুটির সঙ্গেই কথা বলা শুরু করল।

 

কিরে, তুই কি করছিস? তোর কি খিদে লেগেছে। আমার খিদে লাগলে কি তোরও খিদে লাগে? না কি আমার খিদের সঙ্গে তোর খিদের সম্পর্ক নেই? আমি তোর বাবার জন্যে অপেক্ষা করছি। সে এলেই খেতে বসব।

আচ্ছা বড় হয়ে তুই কাকে বেশি পছন্দ করবি? আমাকে, না তোর বাবাকে? আমার মনে হয় তোর বাবাকেই তুই বেশি পছন্দ করবি। বোকা হলেও মানটা পছন্দ কবার মত। বাবাকে বোকা বলায় রাগ করিসনি তো? মে বোকা তাকে তো আর জোর করে বুদ্ধিমান বলা যায় না। বলা উচিত না।

যত দিন যাচ্ছে তোর বাবার বোকা ভাব ততই বাড়ছে। কেন বল তো? অভাবের কারণে। তুই দেখবি বোকা লোক বেশির ভাগই অভাবী। বোকার সঙ্গে টাকাপয়সার একটা সম্পর্ক আছে। হঠাৎ কোন কারণে আমরা যদি কোটি কোটি টাকা পেয়ে যাই তখন দেখবি তোর বাবাকে আর বোকা বোকা লাগছে না, বরং বেশ বুদ্ধিমান মনে হবে।

না না শোন, তোর বাবা কিন্তু বোকা না। ও চুপচাপ থাকে। নিজের মত করে ভাবে বলে একে বোকা লাগে।

আচ্ছা, তুই ছেলে না মেয়ে বল তো? আমার ধারণা, মেয়ে। এবং আমার ধারণা তুই অসম্ভব বুদ্ধিমতী হবি। মেয়েদের বেশি বুদ্ধি না হওয়াই ভাল। মেয়েদের বেশি বুদ্ধি হলে পদে পদে সমস্যা। বুদ্ধিমতী মেয়ে কখনোই জীবনে সুখী হয় না। কেন হয় না? এখন না, তুই বড় হ, তখন তোকে বুঝিয়ে দেব। অবশ্যি ততদিন যদি আমি টিকে থাকি তবেই। আমার মন বলছে, তোকে জন্ম দিতে গিয়েই আমি মারা যাব। আমার আবার এক ধরনের ক্ষমতা আছে। আমি আগে ভাগে সব কিছু বুঝতে পারি। আমার মনে হচ্ছে, তোর জন্ম হবে এই বাড়িতে। কেন এ রকম মনে হচ্ছে তা বলতে পারছি না। মনে হবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। মেসবাউল করিম সাহেব, যার এই বাড়ি, তিনি যে কোনদিন চলে আসবেন। তোর বাবা গেছে কবে আসবেন তাই জানতে। তিনি এলেই আমাদের এ বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। তখন আমরা কোথায় যাব কিছুই জানি না। আমাদের যাবার জায়গা নেই, বুঝলি? ঘর নেই, বাড়ি নেই, তোর বাবার চাকরি নেই–কিছুই নেই। থাক, এসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই থাক তোর মত। গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাক আমার পেটে। তোর ঘরটা তো খুব সুন্দর। এয়ার কন্ডিশান্ড ঘর। এই ঘরের তাপ বাড়ে না, কমেও না। তোর বিছানাও তো খুব মজার। পানির ওপর ভাসছে–এমন বিছনা। মেসবাউল করিম সাহেবের ওয়াটার বেডের চেয়েও ভাল।

পারুল মুমিয়ে পড়ল। তার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যায়। ঘরের ভেতর কেমন ছমছমে অন্ধকার। জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে–শরীরে কাঁপন লাগছে। পারুল ঘর ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল, দেখল–গেটের ফোকর দিয়ে তাহের ঢুকছে। অন্ধকার পরিষ্কার কিছু দেখা যাচ্ছে না, তবু তাহেরের মুখটা মনে হচ্ছে ভয়ে ও আতংকে এতটুকু হয়ে আছে। গেটের পাশে কামরুল দাঁড়িয়ে। তাহের তাকে ফিস ফিস করে কি বলল। কামরুল মাথা নাড়ছে। কুকুর তিনটা কোথায়? এদের কি চেইন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। তাহের ক্লান্ত পায়ে এগুচ্ছে। তার হাতে পলিথিনের একটা প্যাকেট। পারুল দরজা খুলে দাঁড়াল।

পারুল বলল এত দেরি করলে যে?

তাহের ফ্যাকাসে ভঙ্গিতে হাসল।

দুপুরে কিছু খেয়েছ?

একটা সিঙ্গারা খেয়েছি।

শুধু সিঙ্গারা?

একটা সিঙ্গারা আর এক কাপ চা।

এখন কিছু খাবে? লুচি ভেজে দেব? লছি আর ডিম।

দাও, খুব খিদে লেগেছে।

হাত-মুখ ধুয়ে আস–লুচি ভেজে দিচ্ছি। এত দেরি হল কেন?

তাহের কিছু বলল না। হাত-মুখ ধুতে গেল। পারুল লুচি বেলতে বসল। তাহেরের মস্যাটা সে ধরতে পারছে না। খুব বড় কোন সমস্যা না। যারা সারাক্ষণ সমস্যার ভতর বাস করে তাদের ভেতর এক সময় না এক সময় এক ধরনের নির্বিকার ভঙ্গি চলে আসে। তাহেরের ভেতরও এসেছে। তাকে সব সময় মোটামুটি নির্বিকারই মনে হয়। তবে আজ তাকে কেমন যেন চিন্তিত মনে হচ্ছে।

লুচির সঙ্গে ডিম ভেজে দেয়া গেল না। একটাই ডিম ছিল, সেটা পচা বেরুল। পারুল বলল, কুকুরের সর্দারকে বল না চট করে দোকান থেকে একটা ডিম নিয়ে আসুক। ওকে টাকা দিয়ে দাও।

তাহের বিস্মিত হয়ে বলল, কুকুরের সর্দার আবার কে?

কামরুল নামের লোকটা।

ওকে ডিম আনতে বললে ও শুনবে কেন? উল্টা ধমকধামক দেবে। আর শোন, কুকুরের সর্দার-ফর্দার এইসব বলার দরকার নেই—শুনে-টুনে ফেলবে।

শুনে ফেললে কি করবে? আমাকে মারবে?

আহা, কি দরকার।

তাহের শুধু লুচি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। খাওয়া দেখেই মনে হচ্ছে সে খুব ক্ষুধার্ত।

শুধু শুধু লুচি খাচ্ছ কেন? চিনি দেই? চিনি দিয়ে খাও। দেব?

দাও।

চায়ের পানি চাপাতে চাপাতে পারুল বলল, তোমার মন-টন খারাপ কেন? কোন দুঃসংবাদ আছে?

হুঁ।

দুঃসংবাদটা কি?

করিম সাহেব পরশু আসছেন। কালকের মধ্যে তোমাকে চলে যেতে হবে।

পরশু এসেই তো তিনি এই বাড়িতে ছুটে আসবেন না। কাজেই তোমার এত চিন্তিত হবার কিছু নেই। এখনো আমাদের হাতে কয়েক দিন সময় আছে। তাছাড়া আমার মনে হয় না তিনি পরশুই আসবেন। আমরা অনেকদিন থাকতে পারব। অহনা না আসা পর্যন্ত আমাদের নাড়তে হবে না।

অহনা কে?

অহনা হচ্ছে আমাদের মেয়ের নাম।

তোমার কথাবার্তা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

বুঝতে না পারার মত জটিল করে তো কিছু বলছি না। আমার ধারণা এই বাড়িতে আমরা অনেক দিন থাকতে পারব। আমার ইনট্যুইশন তাই বলছে।

ম্যানেজার সাহেবের কাছে ফ্যাক্স এসেছে, পরশু সন্ধ্যা সাতটা তিরিশ মিনিটে বৃটিশ এয়ারওয়েজে আসছেন।

আসলে আসুক। তোমার এত চিন্তিত হবার কিছু নেই।

তোমাকে নিয়ে তুলব কোথায়?

কোথাও তুলতে হবে না–আমি এই বাড়িরই কোন এক ফাঁক-ফোকরে লুকিয়ে থাকব। খাটের নিচে কিংবা আলমারির ভেতর…হি হি হি।

তাহের বিষণ্ণ মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। পারুলের সঙ্গে তর্কে-বিতকে যাওয়া অর্থহীন। বলুক তার যা ইচ্ছা। যে মেয়ে নিজের সমস্যা বুঝে না, হি হি করে হাসে, তাকে তো জোর করে কিছু বুঝানো যাবে না। পারুল বলল, আরেক কাপ চা দেব?

তাহের বিরক্ত গলায় বলল, এই তো খেলাম এক কাপ। আরেক কাপ কেন?

প্রথম কাপটা তাড়াহুড়া করে খেয়েছ। দ্বিতীয় কাশটা আরাম করে খাও। আমি করে চা খেতে খেতে হাসিমুখে কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে গল্প কর।

তাহের তাকিয়ে আছে–পারুল মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল, এত চিন্তা করে তো কিছু হবে না। আমরা বাস করি বর্তমানে। আমরা বর্তমানটাই দেখব। ভবিষ্যতে কি হবে বা না হবে তা নিয়ে মাথা ঘামাব না। বর্তমানে আমি কোন সমস্যা দেখছি না। অন্তত আগামী পরশু পর্যন্ত আমাদের কোন সমস্যা নেই। বানাব চা?

বানাও।

চায়ের কাপে চিনি ঢালতে ঢালতে পারুল বলল, একটা মজা দেখবে?

কি মজা?

দেখবে কি না বল।

তাহের মজা দেখবে কি না সে বিষয়ে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মজা দেখাতে গিয়ে পারুল কি করে কে জানে। উদ্ভট কিছু করে বসবে, বলাই বাহুল্য। তখন মজা আর মজা থাকবে না।

কি, কথা বলছ না কেন? দেখবে?

হুঁ।

পারুল তাহেরের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল। হেসেই ঠোঁট সরু করে ডাকল–মিকি, নিকি, কিবো।

তৎক্ষণাৎ তিনটি গ্রে হাউন্ড ছুটে এসে গ্রীলের ভেতর দিয়ে তাদের সরু মুখ বের করে দিল। তাহের এমন আঁতকে উঠল যে, তার চায়ের কাপ থেকে চা ছলকে গায়ে পড়ে গেল।

পারুল হাত বাড়িয়ে কুকুরগুলির গলায় হাত বুলাচ্ছে। তারা প্রবল বেগে লেজ নাড়ছে। তাহেরের বিস্ময়ের কোন সীমা রইল না। পারুল খুশি খুশি গলায় বলল, এদের আমি পুরোপুরি কনট্রোলে নিয়ে এসেছি। ইচ্ছা করলে তুমি এখন অমিকে কুকুরের দারুনী ডাকতে পার।

তাহের ক্ষীণ স্বরে বলল, এদের বশ করলে কি করে?

আমাকে কিছু করতে হয়নি, ওরা নিজে নিজেই বশ হয়েছে। নিম্নস্তরের বুদ্ধিবৃত্তির প্রাণীদের বশ করতে আমার নিজের কিছু করতে হয় না। তোমাকে বশ করতে কি আমার কিছু করতে হয়েছে?

তাহের তাকিয়ে আছে। পারুল বলল, আমার কথায় রাগ করনি তো?

রাগ করব কেন?

তোমাকে নিম্নস্তরের বুদ্ধিবৃত্তির প্রাণী বললাম এই জন্যে…

তোমার অদ্ভুত অদ্ভুত কথায় আমি অভ্যস্ত। অভ্যস্ত না হলে রাগ করতাম। তবে কুকুরের সঙ্গে তুলনা দেয়াটা ঠিক হয়নি। এটা অভদ্রতা।

সরি।

থাক, সরি বলতে হবে না। ওদের বিদেয় কর। বিদেয় করে সাবান দিয়ে হাত ধোও। ভাল করে ধুবে। কুকুর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি আমার পছন্দ না।

আমারও পছন্দ না। বাধ্য হয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি।

বাধ্য হয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করচ্ছ মানে?

পারুল চাপা গলায় বলল, এই কুকুরগুলি নিয়ে আমার একটা পরিকল্পনা আছে।

কি পরিকল্পনা?

এখন কিছুই বলব না। যথাসময়ে জানবে।

পারুল কুকুরের গা থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে। ওরা চলে যাচ্ছে না। আগে জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।

কামরুল দূর থেকে কয়েকবার ডাকল, কাম অন, কাম অন। ওরা নড়ল না। তারা তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পারুলের দিকে। তাহেরও তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে গভীর বিস্ময়।

 

ঘুমুতে যাবার আগে দিনের শেষ সিগারেট ধরালো তাহেরের অনেক দিনের অভ্যাস। সিগারেট শেষ করে সে এক গ্লাস পানি খাবে। পানি খাবার পর পর বিশ্রী ভঙ্গিতে কয়েকবার হাই তুলে বিছানায় যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘুম। অভাবী মানুষেরা চট করে ঘুমুতে পারে না। বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে। তাহেরের সেই সমস্যা নেই।

তাহের দিনের শেষ সিগারেট ধরিয়েছে, তবে তেমন মজা পাচ্ছে না। ঠিক তার সামনেই পারুল বসে আছে। পারুল তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলবে। কিন্তু কিছু বলছে না। যতবারই পারুলের দিকে চোখ যাচ্ছে ততবারই তাহের অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে উঠছে।

কিছু বলবে পারুল?

পারুল না-সূচক মাথা নাড়ল। মাথার সঙ্গে সঙ্গে হাতও নাড়ল। হাতের কাচের চুড়ি ঝনঝন করে শব্দ করল। তাহের চমকে উঠল শব্দ শুনে, যদিও চমকানোর কোন কারণ নেই। তাহের সিগারেট শেষ করে বলল, পানি দাও।

উহুঁ।

উই মানে, পানি খাব না?

খাবে, তবে এখানে না। আজ আমরা এ ঘরে ঘুমুব না।

কোথায় ঘুমুব?

মাস্টার বেডরুমে।

তাহের চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। পারুল তার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এসে স্বাভাবিক গলায় বলল, এ বাড়ির মাস্টার বেডরুমের তালা আমি খুলে ফেলেছি। তুমি দুপুরে এলে না। আমার কিছু করার ছিল না। তখনি কাজটা করলাম। চুলের কাটা দিয়ে খুললাম।

মাস্টার বেডরুমের তালা খুলে ফেলেছ?

হুঁ।

কেন?

ওখানে ঘুমুব। ওয়াটার বেডে শুয়ে দেখি কেমন লাগে। বাড়ি তো কাল ছেড়েই দিতে হবে—শখ মিটিয়ে যাই।

তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে পারুল।

মাথা মোটেই খারাপ হয়নি। আমার মাথা ঠিক আছে।

উহুঁ। তুমি যে সব কাণ্ডকারখানা করছ–কোন সুস্থ মানুষ তা করবে না–অন্যের ঘর, অন্যের বাড়ি…

অন্যের বাড়ি খানিকক্ষণের জন্যে নিজের হয়ে যায়। তাতে দোষের হয় না। মেসবাউল করিম সাহেব এই বাড়ি দেখাশোনার জন্যে যখন তোমার কাছে দিয়েছেন তখন নিশ্চয়ই বলেছেন, নিজের বাড়ি মনে করে এই বাড়ির যত্ন করবে। বলেননি?

হুঁ।

কাজেই আমরা এক রাতের জন্যে এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি মনে করছি।

তাহের চিন্তিত গলায় বলল, কামরুল স্যারের কাছে লাগাবে।

লাগালে লাগবে। স্যার কি করবেন? তোমাকে মারধোর করবেন? ভদ্রলোকরা কখনো মারধোর করেন না। বকাঝকা হয়ত করবেন। বকাঝকায় কি যায় আসে? তুমি এসো তো আমার সঙ্গে।

তাহের যন্ত্রের মত উঠে দাঁড়াল। পারুল দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল, আমার ভাল কোন শাড়ি নেই। ভাল শাড়ি থাকলে সুন্দর করে সাজতাম। তাহের বলল, হুঁ। পারুল বলল, তুমি শুকনো গলায় বললে, হুঁ। পৃথিবীর অন্য যে কোন স্বামী হলে কি করত জান? বলত–না সাজলেও তোমাকে পরীর মত লাগে।

তাহের বিড় বিড় করে বলল, কাৰ্জিটা ঠিক হচ্ছে না পারুল, অন্যায় হচ্ছে।

অন্যায় হলে হোক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো আমাদের অন্যায় করতে বলে গেছেন।

অন্যায় করতে বলেছেন!

অবশ্যই বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন–ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে, শুধু তোমারে জানি।

পারুল মাস্টার বেডরুমের দরজা খুলে বাতি জ্বালাল–বিশাল রুম, চারদিক আলোয় আলোয় ঝলমল করে উঠল। পারুল বলল, দেখলে কত সুন্দর।

তাহের হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখে পলক পড়ছে না। বিশাল ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা খাট। ঘরের মেঝে ধবধবে শাদা। খাটটা কুচকুচে কালো রঙের। মনে হচ্ছে–শাদা মেঘের উপর কালো গোলাপ ফুটে আছে। খাটের দুপাশের সাইড টেবিলে দুটি টেবিল ল্যাম্প। স্বচ্ছ শাদা কাচের টেবিল ল্যাম্প। ঘরে আর কোন আসবাব নেই। চারপাশের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর পেইন্টিং। পারুল বলল, মাস্টার বেডরুমের সঙ্গের বাথরুমটা কত সুন্দর দেখতে চাও?

না।

মাস্টার বেডরুমের সঙ্গের বারান্দাটায় একটু অস। আমার ধারণা, ঐ বারান্দা পৃথিবীর সবচে সুন্দর বারান্দা। এসো, বারান্দায় একটু দাঁড়াই।

না।

কথায় কথায় না বলবে না। এসো।

পারুল তাহেরের হাত ধরে প্রায় টেনে বারান্দায় নিয়ে গেলে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আতংকে তাহের প্রায় জমে গেল। কারণ লনে কামরুল দাঁড়িয়ে আছে। সে তাকিয়ে আছে তাদের দিকেই। কামরুলের পাশে তিনটা কুকুর। এরাও কৌতূহলী চোখে দেখছে। চাঁদের আলোয় কুকুর তিনটার চোখ জ্বল জ্বল করছে। মনে হচ্ছে ছটি আগুনের ফুলকি।

পারুল খিলখিল করে হাসছে। তাহের বিরক্ত গলায় বলল, হাসছ কেন? পারুল হাসতে হাসতে বলল, কুকুরের সর্দার কি রকম অবাক হচ্ছে এই ভেবে হাসছি। তুমিও একটু হাস তো। দুজনে মিলে হাসলে ও পুরোপুরি ভড়কে মাবে। হি হি হি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *